#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_১১❤
#Writer_Safan_Aara❤
-“তাহলে কি মা আমাকে মিথ্যা বললো?”
-“আমাকেও…..?”
-“বাই দ্যা ওয়ে! আমার এনগেজমেন্ট হচ্ছে বলে আপনি এতো খুশি ছিলেন?”
-“আমি খুশি ছিলাম? কে বললো আপনাকে?”
-“খুশি ছিলেন না?”
-“উহু!”
-“কেন?”
অদিতির প্রশ্নে চমকে গেলো অনন। কি বলে ফেললো সে। নিজের বোকামিতে নিজের প্রতি নিজেই বিরক্ত হলো সে। প্রসঙ্গ পাল্টে বললো-
-” সে কথা বাদ দেন। আপনার মুখ ওইরকম ছিলো কেন, মিস অদিতি?”
-“কি রকম?”
-“ওইরকম গোমোড়া!আমার বিয়ে হবে বলে বুঝি!”
-“উহ! একদম না!”
-“তাহলে?”
-“বলবো না!”
-” কেন?”
-“আমার ইচ্ছা!”
-“বুঝেছি!”
-“কি বুঝেছন?”
-“আপনাকে বলবো কেন?”
-“বলবেন না কেন?”
-“আমার ইচ্ছা!”
-“আমার ডায়লগ আমাকেই শোনানো হচ্ছে?”
-“হ্যা, হচ্ছে!”
বলে হাটতে শুরু করলো অনন। অদিতিও ওর সাথেই লিফটে উঠলো।
-“ভালো!”
-“কি ভালো? আপনি আমাকে বলছেন না কেন?”
-“দেখুন, আমি আবার মিথ্যা টিথ্যা বলতে পারি না।”
-“তাহলে সত্যিটাই বলুন মিস অদিতি।”
-“আসলে! আমি……. ”
-“আসলে আপনি……..কি?”
-“আমি ভেবেছিলাম আপনি বিয়ের পরে আমার সাথে আর ঝগড়া করবেন না।তাই……!”
মাথা নিচু করে বললো অদিতি। অদিতির কথায় ফিক করে হেসে ফেললো অনন।
-“এভাবে হাসছেন কেন আপনি?”
-“লাইক সিরিয়াসলি!?মিস অদিতি। আপনি ঝগড়া করতে পারবেন না বলে আপনার মন খারাপ ছিলো!”
-” হয়েছে আপনার? এখন বলেন আপনার মন খারাপ ছিলো কেন?”
কথাটা বলে শেষ করতেই লিফটের দড়জা খুলে গেলো।
-“সেটা আপনার জানতে হবে না।”
বলে দৌড়ে চলে গেলো অনন। অদিতি আর কিছুই বললো না। লিফট ৫ম ফ্লোর থেকে ৭ম ফ্লোরে পৌছে খুলে গেলো। অদিতি নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।
♣
রাতে ডিনার করতে বসেছে আহমেদ পরিবার।
-“মা, তুমি আমায় মিথ্যা বললে কেন?”
-” কি মিথ্যা বললাম আমি?”
-“অদিতির এনগেজমেন্ট?”
-“হ্যা! অদিতির এনগেজমেন্ট। তোরও একইদিনে এনগেজমেন্ট।”
-“অদিতির সাথে?”
ঠোটের কোণে ফুটে উঠলো তার বিশ্বজয়ের হাসি। কিন্তু মায়ের উত্তর শুনে আবার চুপসে গেলো তার মুখ। যেন ফোলানো বেলুন কেউ ফুস করে ফাটিয়ে দিয়েছে।
-“নাহ! অদিতির সাথে কেন হবে! অদিতির এনগেজমেন্ট তো আবিরের সাথে!”
-“৬ষ্ঠ ফ্লোরের আবির?”
-“হ্যা! আর তোর এনগেজমেন্ট ৬ষ্ঠ ফ্লোরেরই কণার সাথে!”
-“হোয়াট দ্যা……….! কি বলছো মা! ওই কণা! নো নো। একদম ইম্পসিবল! ওই মেয়েকে আমার একদমই সহ্য হয় না। না আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না!”
-“তাহলে কাকে বিয়ে করবি?”
অনন সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অননের বাবা-মা অননের এ কাজে খুবই কষ্ট পেলো। তাদের পছন্দ করা মেয়েটাকে কি না অনন বিয়ে করতে চায় না। একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো তাদের বুক চিরে।
♣
-“আমি তোমার কাছে কখনই এমনটা আশা করি নি, মা!”
বলেই ঠোট বাকালো অদিতি। রাতে ডিনারের পর টেলিভিশন দেখতে বসেছিলেন মিসেস রোকেয়া। অদিতি পড়তে বসেছিলো।হঠাৎ মনে পড়তেই সে কলম হাতে নিয়েই মায়ের কাছে দৌড়ে চলে গেলো।
-“কি আশা করিস নি?”
-“তুমি আমাকে মিথ্যা বলবে আমি এটা কখনো ভাবি নি! হুহ!”
-“কি মিথ্যা বললাম আমি?”
-“অনন ভাইয়ার এনগেজমেন্ট?”
-“হুম তো?”
-“সে তো বললো তার নয় আমার এনগেজমেন্ট!”
-“হ্যা। তোরও এনগেজমেন্ট।”
-“মানে? আমার এনগেজমেন্ট মানে? কবে? কার সাথে?”
-“অননের যেদিন সেদিনই।তোর বিয়ে আবিরের সাথে। আর অননের বিয়ে কণার সাথে।”
-“আবির তো ওই ৬ষ্ঠ ফ্লোরের কোকিলা মোদি আন্টির ছেলে। তাই না?”
-“হ্যা!”
আবির হচ্ছে মিসেস আমেনার ছেলে।আর কণা আবিরের ছোট বোন। তারা অদিতিদের বিল্ডিংয়েই থাকে। মিসেস আমেনা স্টার প্লাসের একটি সিরিয়ালের একজন ক্যারেক্টার ‘কোকিলা মোদির’ মতো মোটা মোটা গহনা, শাড়ি পড়ে থাকেন।তার মতোই সেজে থাকেন। তাই তাকে অদিতি কোকিলা মোদি বলে ডাকে।
-” কি বলছো মা!”
-“সেই কোকিলা মোদির ঘরের বউ আমি হবো! জীবনেও না!”
-“তাহলে কার ঘরের বউ হবি তুই?”
রেগে বললেন মিসেস রোকেয়া।
-“জানি না!”
বলে নিজের রুমে চলে গেলো অদিতি।
?
সকালে অনন মুড অফ করে বাইক নিয়ে অদিতির জন্য দাড়িয়ে আছে। অদিতি মুড অফ করে কোকিলা মোদি নামক মহিলাটিকে মনে মনে হাজারো গালি দিতে অননের বাইকে উঠলো।
-“কংগ্রাচুলেশনস!”
-“আপনাকেও!”
-“হুহ!”
-“হুহ!”
দুজনেরই মুড আজ ৭ম আকাশ চুম্বি!
পুরো রাস্তা কেউ কোনো কথা বলে নি একে অপরের সাথে। ভার্সিটি পৌছে অদিতি চলে গেলো নিজের ক্লাসে।অননও নিজের ক্লাসে চলে গেলো।
♣
ভার্সিটি ছুটির পর অনন অদিতি একসাথেই বাড়ি ফিরলো। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো কথাই হলো না। লিফটে উঠতেই দেখলো আজ আবির আর কণা লিফটে। রোজ এই সময় লিফট খালিই থাকে।আজ আবার এই মানুষ দুটো কোত্থেকে এলো! দুজনের হাতেই দেখছি অনেকগুলা শপিং ব্যাগ। বিয়ের শপিং বোধহয় একাই করে এসেছে।
-“হাই অদিতি! কেমন আছো তুমি?”
অদিতিকে দেখে চেচিয়ে উঠলো কণা। দুই হাত দিয়ে ঝাপটে ধরলো ওকে।কিন্তু অদিতির ওকে একদমই সহ্য হচ্ছে না। যত্তসব ইরিটেটিং পিপল!
-” ভালো। তুমি?”
-“ভালো!”
পরবর্তী সময়টুকুতে অদিতি আর কিছুই বললো না। আর কণা নিজের মক্র একাই বক বক করতেই রইলো। আর আবির অননকে “হাই ব্রো” বলে হ্যান্ডশেক করেছিল। অনন উত্তরে হাইও বলে নি তাই তাদের মাঝে আর কোনো কথা হয় নি। ৫ম তলায় অননের নামার কথা থাকলেও সে নামে নি। কেন যেন অদিতিকে একা আবির আর কণার সাথে রেখে যেতে তার মন মানছিলো না। তাই ৬ষ্ঠ তলায় আবির কণা নামার পর অননও সেখানে নেমে গেলো। অননের এ কাজে অদিতি অবাকই হলো। পরে ভাবলো হয়তো কণার সাথে কথা বলার জন্য নেমেছে। তাই এ বিষয়ে আর না ভেবে সে নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেলো।
?
এক, দুই, তিন, গুনতে গুনতে অবশেষে চলে এলো সেই দিন! আর অনন আর অদিতির একই স্টেজে দুটি ভিন্ন মানুষের সাথে এনগেজমেন্ট। এই কয়েকদিনে অনন আর অদিতি বাড়িতে সবাইকে অনেক বুঝিয়েছে যে তারা এই বিয়েটা করতে চায় না।কিন্তু বাবা-মায়েরা তাদের কথায় অটল। তাই বাধ্য হয়ে আজ দুজনেই রেডি হয়ে বিল্ডিংয়ের কম্পাউন্ডে এসেছে। সেখানেই প্যান্ডেল করা হয়েছে।
আজ অদিতি একটা হোয়াইট কালারের লেহেঙ্গা পরেছে। লেহেঙ্গা গোল্ডেন স্টোন দিয়ে সাজানো। কোমর পর্যন্ত চুল তার। সেগুলো ছেড়ে দেয়া আছে। আর চুলে লাগানো আছে এক গুচ্ছ রজনীগন্ধা। অসম্ভব সুন্দর লাগছে আজ ওকে। অনন ওকে দেখছে আর ভাবচগে আজ অদিতি সত্যিই অন্য কারো হয়ে যাবে। এই দৃশ্য সে দেখবে কি করে। আর নিজের গলায় ঝোলাতে হবে ওই ইরিটেটিং কণাকে! অসহ্য!
আজ অনন পড়েছে হোয়াইট এন্ড গোল্ডেন মিক্সড কালারের পাঞ্জাবি। কালো ঘন চুলগুলোও আজ অসাধারণ লাগছে দেখতে। কালো ঘন চুলে যে শুধু মেয়েদেরকেই নয় ছেলেদেরকেও মানায় তা ওকে দেখলেই বোঝা যায়।অদিতি ওকে দেখছে আর কণার সাথে হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে। মেয়েটার কত্তোবড় সাহস অননকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাচ্ছে। ওর ছোট্ট ছোট্ট চুলগুলোয় আগুন ধড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করছে অদিতির। আজ আগেই রেডি হয়ে এসে বসে আছে সে।
.
.
প্যান্ডেলের দুদিক থেকে ভেতরে ঢুকেছিলো অনন আর অদিতি। নিজের বরাবরে দাড়িয়ে ছিলো তারা। একে অপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছিলো তারা দুজন।
চলবে……………………….❤।
(কেমন চলছে অনন অদিতির কেমিস্ট্রি?)