#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০৮❤
#Writer_Safan_Aara
দুজনে বাড়ির গেইটের সামনে পৌছতেই দুজনের ফোনই একসাথে বেজে উঠলো। অনন বাইক থামালো। দুজনে কল তুলে কথা বলে মুখ কালো করে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। কারণ কলটা ছিলো তাদের মায়ের। তারা বলেছেন তারা শপিং করতে বেড়িয়েছেন। আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। অননকে বলা হয়েছে অদিতির সাথে ওদের ফ্ল্যাটে যেতে। ওকে রান্নায় সাহায্য করতে। ওখানে নীড় আর রায়হান খেলছে একসাথে। আর অদিতিকে বলা হয়েছে নিজের জন্য আর অনন ও নীড়-রায়হানের জন্য রান্না করতে।
দুজনেই একসাথে বলে উঠলো –
-“কি একটা অবস্থা!”
বলে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো একটা।অনন বাইক রেখে এসে অদিতির সাথে লিফটে উঠলো। আজ তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া অথবা মারামারি হচ্ছে না। সবই যেন অদ্ভুত লাগছে ওদের। তবুও কেউ আর আগ বাড়িয়ে কথা বললো না। লিফট থেকে বেড়িয়ে দুজনেই অদিতিদের ফ্ল্যাটে ঢুকলো। নীড় আর রায়হান টিভিতে কার্টুন দেখছে আর রিমোট নিয়ে মারামারি করছে। ওদের অবস্থা দেখে অদিতির আর অননের নিজেদের কথা মনে পড়ে গেলো। কিছুক্ষণ আগে ওরাও তো এমনই করেছে। নীড় রায়হান তো বাচ্চা। ওরা মারামারি করবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অদিতি আর অনন! ওরা তো ছোট না! তাই হয়তো মায়েরা ওদের দেখে হেসেছিলো। মনে মনে ভাবছিলো দুজনই।ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে অদিতি নিজের রুমে যাচ্ছিলো গোসল করতে। অনন ডাকলো অদিতিকে।
-“মিস অদিতি! কোথায় যাচ্ছেন?”
-“আমার রুমে যাচ্ছি।”
বলেই মুখ বাকালো অদিতি। অনন বুঝতে পারলো অদিতি বিরক্ত হচ্ছে।
-“নীড়। চলো আমরা আমাদের ফ্ল্যাটে চলে যাই। আমাদের জন্য অনেকেই এখানে বিরক্তি বোধ করছে।”
নীড়কে বললো অনন।
-“কিন্তু ভাইয়া। আম্মু তো কিছু রান্না করে নি। বলেছে অদিপু রান্না করে খাওয়াবে।”
-“না। কারো রান্না খাওয়া লাগবে না। চলো আজ রেস্টুরেন্টে খাবো।”
-“নীড়! তুমি কোত্থাও যাবে না। আজ তুমি আমার হাতের রান্না খাবে।যার ইচ্ছা নেই সে চলে যেতে পারে।”
বললো অদিতি।
-“আচ্ছা আপু।”
বলে আবারো টিভি দেখতে শুরু করলো নীড়।অনন বললো-
-” আচ্ছা আমি তাহলে যাই। আমার গোসল করতে হবে।”
-“না ভাইয়া। আম্মু বলেছে তোমাকে এখানেই গোসল করতে।”
বলেই একটা ব্যাগ দিলো অননের হাতে।
-“নাও। তোমার ড্রেস। গোসল করে পরে নিতে বলেছে আম্মু।”
-“কিন্তু……!”
-“কোনো কিন্তু না ভাইয়া।তুমি আমার রুমেরটায় গোসল করতে পারো।”
বলল রায়হান।
অনন রায়হানের রুমে আর অদিতি নিজের রুমে চলে গেলো। গোসল করে দুজনেই একসাথে বেড়িয়ে এলো।তাদের একইসাথে যাওয়া আর একইসাথে আসা দেখে অবাক হলো নীড় রায়হান। কিছুক্ষণ দুজনের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মুচকি হেসে আবার টিভি দেখায় মন দিলো। অদিতি রান্না ঘরে চলে গেলো। তার পিছু পিছু অনন। অদিতি কোমরে ওড়না বেধে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। অনন দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে। সদ্য গোসল করেছে বলে হাতখোপা করা চুলগুলো থেকে পানি পড়ে পড়ে ভিজে যাচ্ছে তার পিঠ! অননের সেদিকে চোখ পড়তেই আবারও চোখ ফিরিয়ে নিলো সে অন্য দিকে। তবুও চোখ যেন তার বাধ মানছে না। শুধু অদিতির ভেজা পিঠ দেখতে চাইছে সে। নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করছে অনন।কোনোভাবেই সে সেদিকে তাকাবে না। অদিতিরও তারাতারি রান্না করতে হবে বলে চুলগুলো শুকিয়ে নেয়ার সময় হয় নি। অননের ঘোর কাটলো অদিতির ডাকে।
-“এই যে মিস্টার অনন! আপনাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে বলা হয় নি। আমাকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে।”
-“কি করতে পারি আপনার জন্য মিসেস অনন!”
নিজের অজান্তেই বলে ফেললো অনন। বলেই নিজের জিভে কামড় লাগালো সে।
-“হোয়াট!”
চাচিয়ে উঠলো অদিতি।
-“না না! কিছু না ভুলে বলে ফেলছি। সরি। বলুন মিস অদিতি। কি করতে হবে আমায়!”
-“নিন পেয়াজ গুলো কেটে দিন।”
অনন অবাক হয়ে পেয়াজের পাত্র আর ছুরি নিলো। কি করবে এখন সে। জীবনেও তো পেয়াজ কাটে নি সে। এসব ব্যাপারে যে বড়ই অদক্ষ সে।অনন টেবিলে বসে একটা পেয়াজ নিয়ে ওটার খোসা না ফেলেই কাটতে শুরু করলো। অদিতি তা দেখে ফুক করে হেসে দিলো।
-“ওটা ওভাবে কাটে না। দিন আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
অদিতি একটা কেটে অননকে দেখিয়ে দিলো। অননও কাটতে লাগলো সেভাবেই। কাটতে কাটতে অননের চোখ দিয়ে এমন ভাবে পানি পড়তে লাগলো যেন মনে হচ্ছে সে সত্যি সত্যি কান্না করছে।অদিতি অননের এমন অবস্থা দেখে মুচকি হাসলো শুধু। কিছু বললে লজ্জা পাবে তাই বলে নি কিছু।
-“মিস্টার অনন!”
-“হ্যা বলুন।”
-“একটু তেলের বোতলটা দেবেন?”
-“অবশ্যই”
বলে তেলের বোতলটা নিয়ে এগিয়ে যেতে নিতেই কিছুটা তেল মেঝেতে ফেলো দিলো অনন। কোনো একটা কাজও সে ঠিক মতো করতে পারে না ভেবে খুবই বিরক্ত হলো অদিতি। নিজের এমন অকর্মা অবস্থা দেখে নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হলো অনন। অদিতি অননের কাছ থেকে তেল নিয়ে বিরক্তির সাথে রান্নাবান্না শেষ করলো।
রান্না শেষ করে খাবার টেবিলে সব গুছিয়ে নিল অদিতি। অননও একাজে ভালো ভাবেউ সাহায্য করলো অদিতিকে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো শেষে। ফ্লোরে পড়ে থাকা তেলের কথা কারোরই মনে ছিলো না। টেবিলে রাখা জগ গুলোর মধ্যে একটা খালি ছিলো। সেটা ভরে আনতে গিয়েছিলো অদিতি। অনন ও আসছিলো বাইরের দিকে। অদিতি বেখেয়ালি হয়ে হাটছিলো। তেলের উপর পা লাগতেই পিছলে গেলো সে। হাত থেকে পানির কাচের জগ পড়ে উল্টা পাল্টে ভেঙে চুরমার। আর অদিতি! সে তো সোজা অননের উপর। অনন টাল সামলাতে না পেরে ধুপ করে পড়ে গেলো। আর এক্সিডেন্টলি দুজনের ঠোট এক হয়ে গেলো।
-“ইইইইইইইইইইই! তোমরা এখানে প্রেম প্রেম খেলছো! রান্নাঘরের দড়জা টা লাগিয়ে নিলেই তো পারতে।”
বলে উঠলো নীড়। নীড় রায়হান কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে দৌড়ে রান্নাঘরের দিকে এসেছিলো। নীড়ের এমন পাকামুতে লজ্জা পেলো অনন অদিতি দুজনেই।
চলবে……..❤।