#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#শেষ_পর্ব
#Writer_Safan_Aara❤
-“কিন্তু এটা কি করে সম্ভব অনন! অদিতি তোর বোনের মতো!”
-“মা! বোনের মতো! বোন তো আর না!”
বলেই ঠোট বাকালো অনন।
-“তুই চল আমাদের সাথে।”
♣
-“অদি! পাগল হলি তুই? অনন তোর বড় ভাইয়ার মতো!”
-“তো? কি হইছে? ভাইয়ার মতো ভাইয়া তো আর না!”
-“মেয়েটার মাথা পুরাই গেছে!”
নিজের মাথায় হাত দিয়ে বললেন অদিতির আব্বু।
-“তুই চলতো আমার সাথে!”
বলে মিসেস রোকেয়া অদিতির হাত ধরে ওকে নিয়ে হাটতে শুরু করলো।
♣
কিছুদূর এগোতেই দুই ফ্যামিলি একসাথে হলো।
-“অনন কি বলছে শুনবি তোরা?”
-“কি বলছে?”
-“তুই ই বল অনন।”
অনন চুপই রইলো। কিছুই বললো না।
-“আরে ওরটা বাদ দে। ও বলবে না। অদিতি কি পাগলের মতো কথা বলছে তুই জানিস! মনে হচ্ছে মাথার সব ঘিলু আজ নিজের রুমেই ফেলে এসেছে!”
-“কি বলিস এসব? কি বলছে ও?”
-” কি রে অদি! বল!”
অদিতিও কিছুই বলল না। মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো সে।
-“থাক তোদের দুজনের কাউকেই বলতে হবে না। আমরাই বলছি!”
এটুকু শুনতেই অনন আর অদিতি চোখ তুলে একে অপরের দিকে তাকায়।এমন সময় সবাই একসাথে বলে উঠলো-“এরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে!” কথাটা শুনে দুজনেই একদম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো! হা করে কতক্ষণ নিজেদের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার একে অপরের পরিবারের দিকে তাকালো।
-“আমরা তো আগে থেকেই জানতান যে তোদের মধ্যে কিছু তো হচ্ছে! তোরা একজন অন্যজনকে নিয়ে কিছু তো অন্যরকম ফিল করিস। কিন্তু নিজেরা বুঝতে পারছিস না।”
-“অথবা বলা যায় বুঝতেই চাচ্ছিস না!”
-“অথবা এমনও হতে পারে বুঝেও না বুঝার ভান করে বসে আছিস!”
-“আজ তোদেরই এনগেজমেন্ট। কণা আবির তো আমাদের নাটকে জাস্ট আমাদের সাহায্য করেছিল।”
অনন অদিতি কি আর বলবে। আব্বু আম্মুর এমন সব উদ্ভট কথায় দুজনেই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে গেলো।
কিছুক্ষণ পর অনন অদিতিকে স্টেজে নেয়া হলো। অনন অদিতিকে রিং পরিয়ে দিলো। আর অননের পর অদিতি অননকে পরিয়ে দিলো। ওইদিনই ওদের বিয়ের তারিখও ফিক্স করা হলো। আগামী মাসে অননের ফাইনাল এক্সাম। এক্সামের পর পরই ওদের বিয়ে।
.
.
?
.
.
সে দিনের পর দেখতে দেখতে আজ অননের এক্সাম শেষ হলো। আজও অনন অদিতি ঝগড়া করেছে আর অদিতি এখনো ওর উপর রাগ করে আছে।
-“হ্যালো!”
এক্সাম হল থেকে বেড়িয়ে অনন বাড়ি ফেরার আগেই অদিতিকে কল দিলো।
-“কি?”
-“এভাবে বলছো কেন বাবু? রাগ এখনো ভাঙে নি?”
-“না!”
-“কি করলে রাগ ভাঙবে?”
-“জানি না!”
-“আচ্ছা একটা কথা শোনো। পাঁচ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গেট খুলে বাইরে দাড়াবা।”
-“কেন?”
-“বলবো না। বের হইও।”
-“পারবো না।”
বলে ঠোট বাকালো অদিতি।
-“তুমি ঠিকই বের হয়ে দাড়াবে। আর তাও পাঁচ মিনিট পর না ওখনই। আমি জানি। বাই।”
বলেই অনন কলটা কেটে দিলো। অনন বাইকের স্পীড বাড়িয়ে তারাতাড়ি বাড়ি পৌছে গেলো। ৭ম তলায় লিফট খুলতেই দেখলো অদিতি দাড়িয়ে আছে ওর অপেক্ষায়। অনন নিজের হাতের বড় গিফট বক্স টা অদিতির হাতে দিয়ে কিছু না বলেই আবার চলে গেলো। অদিতিও কিছুই বললো না। গিফট নিয়ে ভেতরে গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বক্সটা খুলে দেখলো। একটা নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, আর শাড়ির সাথে প্রয়োজনীয় কিছু অর্ণামেন্টস আর অনেকগুলো চকলেট দিয়েছে অনন। অদিতি খুবই খুশি হলো গিফটটা পেয়ে। সব রেখে একটা কাগজ দেখতে পেলো। ছোটখাটো হলুদ কাগজের একটা চিরকুট। চিরকুট টা পড়লো অদিতি।
“হেই মাই লাভ!
আমি জানি তুমি যখন আমার লেখাটা পড়ছো তখন তুমি অবশ্যই মুচকি মুচকি হাসছো। তোমার ওই হাসিটাই তো আমি বার বার দেখতে চাই।
বাই দ্যা ওয়ে, বিকেলে শাড়িটা পড়ে রেডি থেকো। ঘুরতে বের হবো তোমাকে নিয়ে।
লাভ ইউ মেরি জান।”
চিরকুট টা বুকের সাথে মিশিয়ে রেখে অদিতি বললো-
-“আই লাভ ইউ টু অনন। খুব ভালোবাসি অনন। #তোমাকেই_ভালোবাসি।”
♣
বিকেলে অদিতি রেডি হয়ে বসে আছে অননের মেসেজের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর অনন মেসেজ দিলো ওকে নিচে চলে যেতে। অদিতি শেষবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলো। তারপর নিচে চলে গেলো। অনন আজ একটা হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে। আর অদিতি নীল শাড়ি। দুজনকে আজ হিমু রুপা লাগছে।
-“অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে।”
-“তাই নাকি!”
-“হুম। দেখতে হবে না বউটা কার!”
-“হুম। তা তো ঠিক।”
বলে দুজনেই হেসে দিলো। অনন বাইক নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো। অদিতি বলল সে আজ বাইকে ঘুরবে না। রিকশায় ঘুরবে। অননও বাধা দেয় নি।
ওরা পুরো বিকেল একসাথে রিকশায় ঘুরেছে। সন্ধ্যার সময় একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিয়ে বের হয়েছে। আশিককে ফোন করে ওর বাইকটা আনিয়ে নিয়েছিলো। রাতের সময় রিকশায় নয় অদিতির বাইকে ঘুরতেই বেশি ভালো লাগে এটা সে জানে।
.
.
বাড়ির দুকে রওয়ানা দিয়েছে তারা। অনন বাইক চালাচ্ছে। আর অদিতি ওকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আশেপাশের দৃশ্য দেখায় মগ্ন। একটা ব্রিজের উপর দিয়ে যাচ্ছে তারা।
-“অদিতি!”
-“হুম!”
-“কিছু নোটিশ করনি এখনো?”
-“কি নোটিশ করবো?”
-“তোমাকে আজ কার মতো দেখাচ্ছে?”
-“ওহ এই কথা! আমি বলতে চেয়েছিলাম। ভুলে গেছি। আজ হঠাৎ এভাবে হিমু-রুপার সাজ নিলাম আমরা! ব্যাপার কি?”
-” তোমার আরেকটা ইচ্ছা পূরণ করলাম।”
-“তোমার এখনো মনে আছে? আমারই তো মনে ছিলো না।”
-“হুম। তো? আমার মনে থাকবে না তো কার মনে থাকবে। আমার একমাত্র বউয়ের ইচ্ছা কি আমি ভুলতে পারি!”
-“খুব ভালোবাসো আমাকে?”
-“হুম! এই জীবনে শুধুমাত্র #তোমাকেই_ভালোবাসি। আল্লাহ চাইলে তোমার সব ইচ্ছা আমি পূরণ করবো।”
-” আমি অনেক ভালোবাসি তোমাকে অনন। আগে কখনও বলা হয় নি। কিন্তু আজ বলবো। খুব খুব খুব বেশি ভালোবাসি অনন। তো………..!”
আর কিছুই বলতে পারলো না অদিতি। অননের বাইক একটা বড় বাসের সাথে ধাক্কা খেলো।বাইকসহ অদিতি আর অনন ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে গেলো।
.
.
?
.
.
♣
-“অনন রেডি হয়েছিস বাবা?”
-“হ্যা মা আসছি।”
-“আয়।”
নিজের রুম থেকে বেড়িয়ে এলো অনন। বয়স অনেকটাই বেড়ে গেছে তার। মায়েরও বয়স অনেক হয়েছে। তাই এখন আর একা কোথাও যায় না। অনন অথবা নীড় কে সাথে নিয়ে যায়। আজ বিয়ের শপিংএ যাচ্ছে তারা।নীড়ের৷ ইয়ের শপিং। হ্যা, নীড়ের বিয়ে হতে যাচ্ছে। বর অন্যকেউ না। রায়হান! তারা এখন অনেক বড় হয়ে গেছে।আর অনন-অদিতির বিচ্ছেদেরও অনেক বছর হয়ে গেছে।
-“চলো মা। নীড়! চল।”
-“হুম।ভাইউ, চলো।”
গাড়িতে উঠে বসেছে অনন। মা আর বোনকে নিয়ে সে যাচ্ছে বিয়ের শপিং-এ। সেদিন অদিতি আর অননের আসতে দেরি হলে সবাই খুব চিন্তায় পড়ে যায়। অনেক অপেক্ষা করে যখন রাত অনেক বেড়ে তখন তারা আর বসে থাকে না। খুজতে বের হয় ওদের। অনেক খোজাখুজির পরও ওদের পাচ্ছিলো না কেউ। পরে আকাশ কে ফোন দেয় মিসেস সালেহা। কিন্তু সেও বলে যে সে জানে না। শেষে আশিক কে কল দিলে ও তাদের জানায় ওরা কোন রেস্টুরেন্টে ছিলো। সেই রেস্টুরেন্টে যাইয়ার পথে যে ব্রিজটা পড়ে ওখানে তারা দেখতে পায় অনেক মানুষ জড়ো হয়ে ব্রিজের নিচে কি যেন দেখছে।তারা গাড়ি থেকে নেমে ভিরের ভেতর ঢুকে ব্রিজের নিচে তাকিয়ে দেখল হলুদ পাঞ্জাবি পরা কাউকে দেখা যাচ্ছে। বাইকটা তার পাশেই পড়ে ছিলো। উনাদের আর চিনতে দেরি হলো না এটা কে।
কিছুক্ষণ পর হেল্পিং ফোর্স চলে আসে আর সবাই ব্রিজের নিচে নেমে অননকে খুজে পায়।মাথায় পাথরের আঘাত লাগায় সে জ্ঞান হারিয়েছে। ডাক্তার ওকে ওখানেই চেকআপ করে দেখেন ও সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। তেমন গুরুতর কিছু হয় নি। কিন্তু অনেক্ষণ খুজেও অদিতিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই নদীতে কুমির আছে বলেও শোনা যায়।
অননকে ফার্স্ট এইড দেয়া হলে কিছুক্ষণ পর ওর জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই ও অদিতির কোথায় তা জানতে চায়। কিন্তু যখিন জানলো যে অদিতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। পাগলের মত চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করল সে। বার বার নদীতে ঝাপ দিতে চেয়েছে সে। নিজের অদিকে সে নিজেই খুজে নিবে ভেবে। আকাশ আর আশিক খুব কষ্টে ওকে ধড়ে রেখেছিলো। পুষ্পিতা আর মনিকাও সেদিন খুব কেদেছে। মিসেস রোকেয়াকে তারাই সামলিয়েছে সেদিন। সেদিন পুরো রাত খুজেও ওকে পাওয়া যায় নি।
আজ অনেক বছর কেটে গেছে সেই ঘটনার। কিন্তু অনন আজও অদিতিকে ভুলতে পারে নি। নিজে বিয়েও করে নি। বাকিটা জীবন অদিতির স্মৃতিগুলো নিয়েই বেচে থাকবে সে।
-“এসে গেছি মা। চলো।”
-“হুম চল।”
শপিং মলে একটা শাড়ির শোরুমে আছে তারা। নীড়ের জন্য শাড়ি কিনছে তারা। হঠাৎ শোরমটার বড় আয়নায় চোখ পড়লো অনিনের। সেই নীল শাড়িটা যেটা অন।অদিতিকে দিয়েছিল সেটা পড়ে কেউ একজন দাড়িয়ে আছে। অননপিছনে ঘুরে তাকাতেই দেখলো হুবহু অদিতির মতোই দেখতে একটা মেয়ে ওই নীল শাড়িটাই পড়ে আছে। আর অন্যান্য শাড়িগুলো দেখছে।অনন নিজের চোখকে বিশ্বাস কর্যে পারছে না। হা করে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কারো তুড়ি বাজানো শব্দে ঘোর কাটলো তার।
-“এই যে মিস্টার! কি দেখছেন এভাবে? হু?”
বলেই অদিতির মত করেই ঠোট বাকালো সে।অনন বুঝতে পারছে এ কি অন্য কেউ নাকি ওরই অদিতি।
-“কি অসভ্য লোকরে বাবা! এসব ‘গুন্ডা টাইপ অসভ্য ছেলে’দের আমি একদমই পছন্দ করি না।”
বলে মেয়েটির সাথে যে মেয়েগুলো এসেছিলো ওদের সাথে নিয়ে চলে গেলো। আর অনন এখনো হা করে ওয়া যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছে। একটা মানুষের সাথে অন্য একটা মানুষের এতো মিল কি করে হতে পারে! শুধু চেহারাই নয় কথাবার্তা, কাজকর্ম সবই মিলে যায়। একি তাহলে অননের অদিতিই? নাকি অন্য কেউ!মেয়েটার পেছন পেছন দৌড়ে সেও বাইরে গিয়েছিলো। কিন্তু আর খুজে পেলো না তাকে।
~সমাপ্ত~