#তোকে_ভালোবেসে_খুব
#পার্ট_১৫(শেষ)
Writer:#সারা_মেহেক
আয়ান শার্টের হাতাটা ঠিক করে টাই টা গলায় দিয়ে নিলো।টাইটা সম্পূর্ণ লাগালো না।গলার কাছে এসে থামিয়ে নিলো টাইয়ের নটটা।আয়নার সামনে থেকে গিয়ে সে বেডের সামনে দু হাঁটু গেড়ে বসে পরলো।নিজের টাইটা এগিয়ে দিলো মাহির হাতে।মাহি হাসিমুখে আয়ানের গলার কাছে টাইয়ের নটটা জোরে করে টেনে টাইটা গলার সাথে লাগিয়ে দিলো।
আয়ান সোজা হয়ে দাঁড়ীয়ে মাহিকে জিজ্ঞাস করলো,
—“তোমার পাপা কে কেমন লাগছে?”
মাহি একটা ফ্লাইং কিস দিয়ে বললো,
—“হ্যান্ডসাম হ্যান্ডসাম এন্ড হ্যান্ডসাম। দুনিয়ার সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পাপার এওয়ার্ড দেওয়া উচিত তোমাকে পাপা।”
আয়ান গর্বে বুক ফুলিয়ে বললো,
—“দেখতে হবে না…আমি কার পাপা।”বলে মুচকি হাসলো আয়ান।সে নিজের অফিসের ব্যাগটা আর মাহির স্কুল ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,
—“রেডি মা টা আমার??”
মাহি কোমড়ে দুহাত রেখে বললো,
—“ইয়েস পাপা।”বলে মাহি আয়ানের হাত ধরে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।সে তার দাদি,দাদা,আর অহনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আয়ানের সাথে গাড়ীতে চড়ে বসলো।
আয়ান ব্যাগ দুটো পিছনের সিটে রেখে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।তার পাশের সিটে বসলো মাহি।সে বসার সাথে সাথে আয়ান সিট বেল্টটা লাগিয়ে দিয়ে গাড়ী স্টার্ট করলো।
আয়ান বেশ মনযোগ সহকারেই গাড়ী চালাচ্ছে।তার মনযোগের ইতি ঘটলো মাহির ডাকে।মাহি একপ্রকার চাপা কষ্ট বুকের মধ্যে নিয়ে আয়ানকে বললো,
—“আচ্ছা পাপা?আম্মু কি আমাকে খুব ভালোবাসতো?”
হঠাৎ মেয়ের মুখে এ প্রশ্ন শুনে আয়ান মনটা কেমন যেনো মুচড়ে উঠে।গাড়ীর গতি আগের চেয়ে বেশ ধীর হয়ে যায়।আয়ানের মন থেকে আবারো সেই চাপা কষ্টটা বের হতে লাগলো।তবে মেয়ের সামনে বলে সে সেই কষ্টটাকে মনের ভিতরে ঠেলে দিলো।নিজেকে সামলে নিয়ে সে বললো,
—“হঠাৎ এ প্রশ্ন কেনো মাহি?”
মাহি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাত দুটো বুকের কাছে গুঁজে নিয়ে অভিমানি সুরে বললো,
—“পাপা,তুমি সবসময় এমন করো।আমার প্রশ্নের সোজা সোজা এন্সার দাওনা।সবসময় উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করো।”
আয়ান তার মেয়ের এমন কান্ডে মৃদু হেসে বললো,
—“আচ্ছা আর কোয়েশ্চন করবো না।”
—“প্রশ্নটা যেহেতু করেই ফেলেছো, সো জবাবটা দিয়েই দেই।
কিছুক্ষন আগে দেখলাম,পিচ্চি একটা মেয়ে হাঁটতে হাঁটতে পরে ব্যাথা পেলো।ওর আম্মু ওকে তাড়াতাড়ি কোলে নিয়ে খুব আদর করলো।
আচ্ছা পাপা?আমি এমন করে পরে গেলেও কি আমার আম্মু আমাকে এভাবে আদর করতো?”
মোড়টা নিয়ে মাহির স্কুলের সামনে গাড়ীটা থামিয়ে পিছনের সিট থেকে মাহির ব্যাগ নিয়ে মাহির কাছে দিতে দিতে বললো,
—“অবশ্য আদর করতো।আর এটা জেনে নাও মা,তোমার আম্মু তোমাকে অনেক ভালোবাসে।আগেও ভালোবাসতো আর এখনও ভালোবাসে।”
বাবার কথা শুনে মাহি মুচকি হেসে গাড়ী থেকে বের হয়ে স্কুল গেট দিয়ে ঢুকে সোজা নিজের ক্লাসরুমে চলে গেলো।গেট থেকে ক্লাস অব্দি সে মাথা নিচু করে আশেপাশে না তাকিয়ে হেঁটেছিলো।কারন সে মাথা তুলে বাকি বাচ্চােদর দেখতে চায় না,যাদের মা আছে।অন্যের মা কে দেখলেই তার ভেতর থেকে চাপা কষ্টটা কান্না আকারে বেড়িয়ে আসতে চায়।কিন্তু সে আসতে দেয়না।কারন সে চায় না যে সবাই তাকে কাঁদুনে স্বভাবের বলুক।
প্রথম প্রথম স্কুলে এসে সে তার ক্লাসমেটদের মা দেরকে দেখে কেঁদে দিতো সে।বেঞ্চে বসে মাথা নিচু করে অঝোর ধারায় কাঁদতো সে।মাঝে মাঝে কান্না করতে করতে ক্লাসেই সে ঘুমিয়ে পরতো।তখন তার ক্লাস টিচার আয়ানকে ডেকে নিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে যেতে বলতো।
এখন অবশ্য সে কাঁদে না তেমন।ছোট্ট মেয়েটাও পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে কঠোর হয়ে গিয়েছে। তবুও তার মাঝে একটু কোমলতা আছে,যার দরুন এখনও মায়ের কথা মনে আসলে সে চুপিসারে কেঁদে দেয়।কাউকে দেখতে দেয়না সে চোখের পানি।এমনকি তার বাবাকেও না।
————–
অফিসের চেয়ারে ধপ করে বসে পরলো আয়ান।আজকে হুট করে মৌ কে বড্ড মনে পরছে তার।মৌ এর স্মৃতিগুলো খুব করে নাড়া দিয়ে উঠছে আজ।এমনিতেই সকাল থেকে মৌ এর কথা মনে পরছিলো তার।গাড়ীতে মাহির কথায় সেই মনে পরাটাও আবারো নড়েচড়ে বসলো আয়ানের মনে।
বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালাতে লাগলো আয়ান।তবে সে ব্যর্থ হলো।নিজেকে শান্ত করতে না পেরে অফিসের কেবিন থেকে সোজা বেড়িয়ে গাড়ীতে উঠে পরলো সে।গাড়ী ড্রাইভ করে সে সোজা তাদের পারিবারিক কবরস্থানের সামনে এসে থামালো।পাশের টিউবওয়েল থেকে ওযু করে নিলো সে।এরপর চারপাশটা একটু চোখ বুলিয়ে সে সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।মৌ আর তার ৪মাসের বাচ্চাটার কবরের সামনে এসে ধপ করে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো আয়ান।সকাল ১০টা বাজে।রোদের তেজ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। বসন্তকালের দরুন মাথার উপরে থাকা গাছগাছালি থেকে শুকনো দু একটা পাতা পরতে লাগলো।সকালের মিষ্টি রোদটা এসে মৌ আর তার অনগত বাচ্চার কবরের উপর আছড়ে পরছে।হয়তো তাদরকে সামান্য আরামের রোদ দিচ্ছে।
এতোক্ষন নির্বাক থাকলেও হুট করে আয়ান কেঁদে দিলো।একদম বাচ্চাদের মতো জোরে জোরে কেঁদে দিলো।আজকে তার এ কান্না থামাবার মানুষটা তার পাশে নেই।অদূরে চলে গিয়েছে সে।সাথে নিয়ে গিয়েছে পরিবারের সবটা সুখ।
অনেকক্ষন কাঁদার পর আয়ান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখেরজল মুছে অভিযোগের সুরে বললো,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
—“তুই এতো খারাপ কেনো রে মৌ?খুব কি দরকার ছিলো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার?আমি কি এতোটাই খারাপ? আমার সাথে সংসার করতে কি খুব কষ্ট হচ্ছিলো?এমনটা হলে বলতি।আমি তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিতাম।কিন্তু আমাকে ছেড়ে চিরদিনের মত পরপারে যাবার কি দরকার ছিলো?আচ্ছা?আমার কথা নাহয় চিন্তা নাই করলি।আমাদের মাহির কথা তো চিন্তা করতি।মা ছাড়া কি করে বেঁচে আছে ৮ বছরের একটা মেয়ে সেটা দেখছিস কি তুই?আর হ্যাঁ, তুই সাথে আমাদের বাবুটাকেও নিয়ে গেলি??ও কি দোষ করেছিলো?মাত্র ৪মাস ই তো বয়স হয়েছিলো ওর।পৃথিবীর আলো দেখার আগেই ওকে নিজের সাথে নিয়ে গেলি কেনো মৌ?
মৌ… এই মৌ…মৌ রে….আমার ডাকে সাড়া দিস না কেনো রে?তোর এই মিস্টার মিররটা যে তোকে ছাড়া একটুও ভালো নেই এটা কি দেখছিস না?নাকি তুই খুব নিষ্ঠুর বলো আমার আর আমার মেয়ের কান্না দেখছিস না?
হুম।তুই নিষ্ঠুর। খুব নিষ্ঠুর। তাই বলেই তো চলে গেলি অসময়ে।আমাদের খুশি থাকার কারনটাও তুই নিয়ে চলে গেলি।
জানিস মৌ?আমাদের মাহিটাও না খুব কাঁদে।আমাকে দেখায়না ও।কিন্তু ও কাঁদে। কখন কাঁদে জানিস?যখন আমি ঘুমিয়ে পরি।রাতের আঁধারে ও ওর চোখেরজল ফেলে।সকালে ঘুম থেকে উঠার পর ও ফোলা চোখগুলো দেখেই বুঝতে পারি যে ও রাতে কতোটা কেঁদেছে।সব তোর জন্য।আমার মেয়েটা কেঁদে ভাসিয়ে দেয় আর তুই এখানে আরাম করে শুয়ে আছিস!!”বলে আবারো কেঁদে দেয় আয়ান।কান্না করতে করতে এবার সে ফুঁপাতে থাকে।কিছুক্ষন পর সে মৌ এর পাশে থাকা ছোট্ট কবরটার দিকে তাকিয়ে বললো,
—-“বাবাটা আমার….তুমি জানো?তোমার বড় একটা আপু আছে?সে না খুব ভালো।সে তোমাকে অনেক ভালোবাসতো।কিন্তু তার আগেই তো তুমি….”বলে হু হু করে কেঁদে দেয় আয়ান।ভিতরটা তার দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে তার এ অবস্থাটা কাউকে দেখাতে পারছে না।মাহির সামনে তে সে ভুলেও কাঁদে না।কারন সে যদি কেঁদে দেয়,সে যদি দূর্বল হয়ে পরে তবে মাহিকে কে সামলাবে।মাহির কষ্টটা কে বুঝবে।
৫বছর আগের রোড এক্সিডেন্টটা কেড়ে নিয়েছিলো আয়ানের সব সুখ।সুখের বদলে এনে দিয়েছিলো অগণিত দুঃখ,কষ্ট।যে দুঃখ,কষ্টের সাথে চাইলেও টক্কর দেওয়া সম্ভব না।
মাহির বয়স যখন ৩ তখন মৌ আবারো কন্সিভ করছিলো।সবাই খুব খুশি ছিলো।আয়ান আর মৌ এর খুশির যেনো কোনো সীমানা ছিলো না।কিন্তু এ সীমনাহীন খুশিই যে একসময়ে সীমনাহীন কষ্টের কারন হয়ে যাবে,কে জানতো সেটা।
মাহির অবুঝ মনটা একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছিলো যে তার চেয়েও ছোটো একটা সদস্য এ পরিবারে আসতে চলেছে।যে তার খেলার সাথী হবে।কবে আসবে সে ছোট্ট সদস্য,এ প্রশ্ন করে করে পুরো বাসা মাথায় তুলতো সে।মাঝে মাঝে তো মায়ের পেটের কাছে কান পেতে বসে থাকতো।মৌ ও এসব ব্যাপার খুব উপভোগ করতো।
সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু সেদিনের পর থেকে সবই অগোছালো হয়ে গেলো।৪ মাসের বাচ্চাকে পেটে নিয়ে তাকে সহ মৌ চলে গেলো না ফেরার দেশে।হসপিটাল থেকে ফিরে আসার সময় আয়ানে গাড়ীটা এক্সিডেন্ট করে।মাহিও ছিলো সাথে।মাহি আর আয়ানের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি তবে হয়েছিলো মৌ এর।গাড়ী থেকে পরার সাথে সাথে একটা গাড়ী এসে পিষে দিয়ে যায় মৌ কে।গলা থেকে নিচ অংশের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।আয়ান তো সেখানেই কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে বসে ছিলো।আশেপাশে মানুষদের চিৎকার শুনে তার ধ্যান ফিরে।মৌ আর মাহিকে নিয়ে সে দ্রুত হসপিটালে চলে যায়।
মৌ আর আয়ানের অনাগত নিষ্পাপ শিশুটা আগেই মারা যায়।আর মৌ ৬ ঘন্টা মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করে মারা যায়।তার মৃত্যু হয়েছিলো ইন্টার্নাল ইনজুরির কারনে।
মৌ এর মৃতদেহ দেখে ছোট্ট মাহিটা পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলো।সে জানতো না মৃত্যু মানে কি।সে শুধু জানতো তার মা আর নেই।আর কখনো আসবে না সে।কেঁদে কেঁদে বার কয়েক অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো সে।ছোট্ট শরীরটা নিস্তেজ প্রায় হয়ে পরেছিলো।আয়ান যে ছোট্ট মাহিটার খেয়াল রাখবে সে পরিস্থিতিতে ছিলো না সে।মৌ এর শোকে একদম অনুভুতিশূন্য হয়ে পরেছিলো সে।কারোর সাথে কোনোরূপ কথা বলতো না সে।সারাদিন রুমে আটকে রাখতো নিজেকে।মাঝে মাঝে নিজের ফোনে থাকা মৌ এর ছবির সাথে কথা বলতো সে।অভিযোগ জানাতো।
এ ট্রমা থেকে বের হতে আয়ানের অনেক মাস সময় লেগেছিলো।সে পরিপূর্ণ ঠিক হয়ে গেলো মাহির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজে নিয়ে নেয়।মাহির প্রতি ভালোবাসা,দায়িত্ব কিছুরই কমতি রাখেনি সে।তবে বলে না…মায়ের জায়গা কেউ নিতে পারে না।মাহির ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিলো।
প্রায় ২ ঘন্টা পর আয়ান উঠে সোজা অফিসে চলে আসে।অফিসের কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে সে।বাসায় ফেরার সাথে সাথে মাহির দুঃখী চেহারাটা দেখে আয়ানের বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।সে তাড়াতাড়ি মাহিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।আয়ানের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।সে বিচলিত সুরে মাহিকে জিজ্ঞাস করলো,
—“আমার মা টার কি হয়েছে?কেউ বকা দিয়েছে?”
মাহি কিছু না বলো চুপচাপ রইলো।আয়ান আবারো একই প্রশ্ন জিজ্ঞাস করলো।উত্তরও পেলো। তবে মাহির কাছ থেকে নয়,তার মায়ের কাছ থেকে।
আয়ানের মা রান্নাঘর থেকে আসতে আসতে বললেন,
—“তোর মেয়ের পড়ালেখার অবস্থা দেখেছিস?”
আয়ান মাহিকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
—“মাহি তুমি রুমে গিয়ে পড়তে বসো।”
বাবার কথা শোনার সাথে সাথে মাহি দৌড়ে রুমে চলে গেলো।মাহি চলে যাওয়ার পর আয়ান দাঁড়ীয়ে তার মায়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,
—“কেনো কি হয়েছে আম্মু?ও পড়ালেখা ঠিকমতো করছে না?”
—“মোটেও না।পড়ালেখার অবস্থা করুন করে ফেলেছে ও।আজকে ওর টিচার কমপ্লেইন করেছে ওর।আমি বুড়ো মানুষ,কতোদিন আর ওর পড়া দেখবো?বাসায় টিচার রাখবি,সেটাও রাখতে দেয়না মাহি।অহনা থাকলে এক কথা হতো।কিন্তু ওর ও তো সংসার আছে।”
আয়ান দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
—“আজ থেকে আমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে ওকে পড়াতে বসবো।”বলে আয়ান অফিসের ব্যাগ নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো।সিঁড়ির কাছাকাছি যেতেই আয়ানের মা আয়ানকে ডাক দিলেন।মায়ের আওয়াজে পিছে ফিরে তাকালো আয়ান।
আয়ানের মা বেশ ইতস্তত নিয়ে বললেন,
—“আমি বলছি কি…তুই নাহয় এবার বিয়েটা করেই ফেল।কতোদিন আর এভাবে থাকবি?বয়স যে তোর খুব বেশি তা তো না।তুই বিয়েটা করলে আমার ঘরের কাজও কম করতে হবে।আর মাহির দেখভাল করার মতোও একজন থাকবে।তোর নিজেরও তো একজনকে লাগবে তাইনা?কতদিন এভাবে থাকবি?তুই বিয়েটা করলে মাহির মায়ের খালি জায়গাটা পূরন হবে।বিয়ে করে নে বাবা।তোর জন্য খুব চিন্তা হয় আমার।”
মায়ের কথা শুনে আয়ান ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,
—“যতদিন জীবিত আছি।এভাবেই থাকবো।আর আমার জন্য তোমার চিন্তা করাটা স্বাভাবিক আম্মু।তবে আমি বলবো চিন্তা না করাই ভালো। আমি তো এভাবে অসুখি নেই।জীবনে শুধু একটা মানুষেরই কমতি আছে।সেটা হলো মৌ।”বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে আবারো বললো,
—“দরকার হলো বাসায় আরো কাজের লোক রাখবো। আর মাহিকে দেখভাল করার জন্যও একজন মানুষ রাখবো।কালকে থেকেই খোঁজখবর নিবো।
আর হ্যাঁ আম্মু।আজকে তুমি দ্বিতীয় বিয়ের কথা বললে।আশা করছি পরেরবার এমনটা বলবে না।”
বলে আয়ান প্রতিউত্তরের আশায় না থেকে নিজের রুমে চলে আসলো।
রুমে আসার সাথে সাথেই মাহি আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।আয়ান সাথে সাথে হাঁটু গেড়ে বসে মাহিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
—“আমার মাহি মা টা কান্না করছে কেনো?”
মাহি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে লাগলো,
—“পাপা,আমি এখন থেকে খুব করে পড়ালেখা করবো।দাদির আর তোমার সব কথা শুনবো।কিন্তু তুমি নতুন আম্মু এনো না পাপা।প্লিজ পাপা প্লিজ।আমি আম্মু চাই,কিন্তু নতুন আম্মু না।আমার আম্মুকে চাই।”
মেয়ের কথায় বুকের ভেতরটা কষ্টে মোচড় দিয়ে উঠলো আয়ানের।চোখ দিয়ে পানি পরতে চাইছে,কিন্তু তবুও নিজেকে সামলে নিলো সে।মাহিকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মাহির চোখেরজল মুছে বললো,
—“আমি কি একবারো বলেছি,আমি তোমার জন্য নতুন আম্মু আনবো?”
মাহি মাথা নাড়িয়ে না সূচক জবাব দিলো।
আয়ান আবারো বললো,
—“তাহলে এমন কেনো বলছো যে নতুন আম্মু চাইনা?আমি তো বিয়েই করবো না।তো নতুন আম্মু কোথা থেকে আসবো?তুমি একদম নিশ্চিত থাকো মা মণি।তোমার পাপাই তোমার জন্য যথেষ্ঠ।”
মাহি আয়ানের কথা শুনে খুশিতে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো।কিছুক্ষন পর আয়ান নিজের থেকে মাহিকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,
—“যাও,তাড়াতাড়ি।হোমওয়ার্ক টা করে নাও।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
মাহি একটা মুচকি হাসি দিয়ে পড়তে চলে গেলো।আর আয়ান ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
—————–
রাতের হালকা শীতল বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে রুম জুড়ে।হালকা বাতাসে জানালার পর্দাগুলোও এলোমেলো ভাবে উড়ছে।চারদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে নিস্তব্ধ রাতটা শোরগোলময় করে তুলছে।এদিকে অবশ্য আয়ানের খেয়াল নেই।সে তাকিয়ে আছে আকাশে বিরাজমান চাঁদটার দিকে।খানিকক্ষণ পর সে করুন সুরে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,
—“দেখেছো চাঁদ?তোমার আর আমার মিল কতো!!তুমিও একা।আমিও একা।যদিও আমার একটা মেয়ে আছে।তোমার সেটা নেই।এদিক দিয়ে আমি খুব সৌভাগ্যবান।”বলে ছোট্ট এক নিঃশ্বাস ছাড়লো আয়ান।
মাহিকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে সে জানালার কাছে দাঁড়ীয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে সে চারপাশের শীতল হাওয়াটা নিজের মধ্যে সমাহিত হতে দিলো।হাতে হাত গুঁজে তার চারপাশে মৌ এর উপস্থিতি কল্পনা করতে লাগলো।কল্পনা করতে লাগলো অপূর্ণ এক পরিবারের ছবি।যে পরিবার পূর্ন হতে গিয়েও হলো না।আয়ান কল্পনা করতে লাগলো সে,মৌ,মাহি আর তাদের এ পরিবারের সবচেয়ে ছোট্ট সদস্য একসাথে হেসেখেলে বেড়াচ্ছে।সবার মুখেই হাসি।সবাই খুশি।তবে সবটাই কল্পনার খুশি। কল্পনার পরিবার।
??????সমাপ্ত??????
Nibe Vai