তোকে চাই❤(সিজন-২)part:63+64+65
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
?
সাহেল ভাইয়ার কন্ঠে ঘাড় ফিরিয়ে দরজার দিকে ফিরে তাকালাম আমি। আমি তাকাতেই মুচকি হাসলেন উনি। উনার পেছন থেকে বেরিয়ে এলেন একটি মেয়ে। নিঃসন্দেহে অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে। মেয়েটির সাথে চেহারায় কোনো মিল নেই আমার কিন্তু কোথায় একটা খুব মিল। আমি অবাক চোখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। মেয়েটি ধীর পায়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েই বলে উঠলো,
— রোদ! রাইট?
আমি মাথা নাড়লাম। মেয়েটি মিষ্টি করে হাসলো। মাথা দুলিয়ে বলে উঠলো,
— সাহেল না বললেও আমি চিনে ফেলতাম তোমায়। এই কয়েকমাস সাহেলের থেকে তোমার এতো ডেসক্রিপশন শুনেছি যে “রোদ” নামক মানুষটা এখন পুরো মুখস্ত আমার। এর পরেও যদি না চিনতে পারি তাহলে সেটা আমার ব্যার্থতা। (একটু থেমে) তুমি আসলেই অনেক কিউট। সাহেল যেমনটা বলেছিলো তার থেকেও বেশি কিউট!
আমি হাসলাম। হাসিমুখেই বলে উঠলাম,
— আপনি আমার থেকে আরো বেশি কিউট আপু।
আমার কথায় আবারও হাসলেন উনি। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— শুভ্র? তোর বউয়ের কথাগুলোও কি মিষ্টি রে।
শুভ্রকে “তুই” করে সম্বোধন করায় অবাক হলাম আমি। চোখ বড় বড় করে শুভ্রর দিকে তাকাতেই মুচকি হাসলেন উনি। হাসিমুখেই বলে উঠলেন,
— আমি কিন্তু খুব অবাক হয়েছি। তুই এতোদিন পর? হঠাৎ হারিয়ে গিয়েছিলি আবার হঠাৎই উদয় হলি। তাও এক্কেবারে এই ছাগলটার বউ হয়ে। তারমানে তুই আমার ভাবি? ওহ মাই গড।
আবারও হাসলো মেয়েটি।৷ এই মেয়ে কি হাসি ছাড়া কথা বলতে পারে না নাকি? মেয়েটা হাসিমুখেই বলে উঠলেন,
— হুট করে বাবার পোষ্টিং হয় কোলকাতায় তাই হুট করেই ওখানে চলে যাই। কাউকে বলার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। এতোবছর পর দেখা হবে ভাবতেও পারি নি। একদিন হঠাৎ করেই এয়ারপোর্টে এই হিরোর সাথে দেখা হলো। বিয়ের বয়সটাও হয়ে গেছে ছেলেও মাশআল্লাহ ফিট খাওয়ার মতো তাই ভাবলাম বিয়েটা করেই নিই।
ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলাম উনাদের পুরোনো পরিচিতি। শুভ্র হয়তো আরো কিছু বলতেন তার আগেই সাহেল ভাইয়া আপুটাকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলেন,,
— হয়েছে ম্যাডাম। বাকি গল্প করার জন্য অনেক সময় আছে এখন ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিন। শরীরের নাই ঠিক আর এসেই গল্প শুরু করে দিয়েছে।সানশাইন? আমাদের জন্য কোন রুম? আসলে এতো লম্বা জার্নি করে এসেছি।৷আমারটা বাদ দিলেও নাবিলার রেস্ট দরকার খুব।
— জি ভাইয়া। ওপরের তলায় আমাদের পাশের রুমটায়।
— ওহ থেংক্স। কিন্তু বাকি সবাই কোথায়?
— ভাইয়া আর মামু অফিসে। আপু রুমে রেস্ট নিচ্ছে। দিদা আর মামানি একটু বাইরে গেছেন।(এক নিঃশ্বাস)
আমার কথা শেষ হতেই হেসে উঠলেন সবাই। শুভ্র আমার দু’কাঁধে হাত রেখে মুখে হাসি টেনে বলে উঠলেন,
— একটু নিঃশ্বাস নাও মহারানী। দম ফুরিয়ে যাবে তো। এই সাহেল? তোরা যা…রেস্ট নে।
— ওকে।
?
রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। ঠিক তখনই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলেন শুভ্র। হাত থেকে রিমোটটা ছিনিয়ে নিয়ে টিভিটা অফ করে দিলেন উনি। আমি রাগী চোখে তাকাতেই মিষ্টি হেসে বিছানায় শুয়ে পড়লেন । ডানহাতে আমাকে টেনে বুকের উপর ফেলে শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলেন,
— টিভিতে কি দেখো? এতো সুন্দর একটা হাজবেন্ড থাকতে কেউ টিভি দেখে? তার থেকে আমাকে দেখো।
আমি নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা চালালাম। উনি আমাকে আরো জোড়ে শক্ত করে চেপে ধরলেন। কিছুক্ষণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে চুপ করে শুয়ে রইলাম আমি। ধীর কন্ঠে বলে উঠলাম,
— সাহেল ভাইয়ার বউকে কেমন লাগলো আপনার?
— ভালো।
— শুধু ভালো? আর কিছু না?
— বলার মতো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। তবে তুমি আর নাবিলা একদম বিপরীত দুটো ক্যারেক্টার তবুও অদ্ভুতভাবে তোমাদের দু’জনের মধ্যে বেশ মিল আছে।
উনার কথায় ভ্রু কুঁচকালাম আমি।
— যেমন?
— তোমাদের স্কিনটোন সেইম। গায়ের রঙের সাথে আরেকটা জিনিস মিলে তা হলো গলায় ওই তিল। আর সবচেয়ে মিল যে জায়গাটা তা হলো হাসি। একদম একরকমভাবে হাসো তোমরা দু’জন। চেহারা মিল না থাকলেও হাসলে কেমন যেন একরকম লাগে দু’জনকে।
— আর অমিল কোনগুলো?
— নাবিলা আমার রোদপাখির মতো এতো রাগী না। একদমই চুপচাপ। আমার বউয়ের মতো এতো বকবক আর শয়তানী বুদ্ধি ওর মাথায় নেই। আমার জানা মতে, আজ যেটুকু কথা বললো সেটাই ওর জন্য সবচেয়ে বেশি কথা বলা। আর আমার বউয়ের ক্ষেত্রে আজকেই তার সর্বনিম্ন কথা বলা। নাবিলা খুবই বুদ্ধিমতি একজন মেয়ে। ভাবনা-চিন্তা এবং ঠান্ডা মাথার মানুষ সে। আর তুমি তো…
— থাক! আর বলতে হবে না। দিন দিন আপনার ঝুলিতে আমাকে নিয়ে প্রবলেমগুলো বেড়ে যাচ্ছে। আমি সত্যিই ফাউল একটা মেয়ে। সেদিক এক্সিডেন্টলি বিয়েটা হওয়ার ফলে লাইফটায় নষ্ট হয়ে গেছে আপনার। ছাড়ুন প্লিজ…!
— কি বলছো এসব রোদ?
— ছাড়ুন আমায়।
— আরে বাবা! হঠাৎ করে কি হলো বলবে তো।
— কিছুই হয় নি। ছাড়ুন আমায়। আসলেই আপনার নাবিলা আপুর মতো বউ দরকার ছিলো। ব্যাপার না, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি সেটা গ্রেন্টেড বলে আমার পর ওমন গোছালো টাইপ মেয়ে বিয়ে করে নিয়েন। এবার আমি তাড়াতাড়ি মরে…
এটুকু বলতেই আবারও গালে পড়লো শক্ত হাতের এক চড়। আমাকে বুক থেকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে পাশের টেবিল ল্যাম্পটা ছুঁড়ে মারলেন দেয়ালে। মুহূর্তেই ঝনঝন শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো আমার। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। ল্যাম্পের পাশে রাখা কাঁচের জগটাও ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেললেন উনি। ঠিক তখনই দরজার ওপাশ থেকে সাহেল ভাইয়ার কন্ঠ ভেসে এলো,
— শুভ্র? কি হয়েছে?
সাহেল ভাইয়ার কন্ঠ কানে আসতেই জোড়ে নিঃশ্বাস ফেললেন শুভ্র। নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে উঠলেন,
— নাথিং ইয়ার। হাত লেগে ল্যাম্পটা পড়ে গেছে। তোরা রেস্ট নে।
— সিউর?
— ইয়াহ!
সাহেল ভাইয়া দরজা থেকে সরে যেতেই আমার দিকে ফিরে তাকালো শুভ্র। আমি মাথা নিচু করে বসে আছি চুপচাপ। উনি আবারও আমার কাছে এসে বসলেন। হাত টেনে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,
— মেরেছি বলে রাগ করেছো?
আমি মাথা নাড়লাম। যার অর্থ, আমি রাগ করি নি। উনি অবাক হয়ে বললেন,
— তবে কি মন খারাপ করেছো?
— উহুম।
— সত্যি রাগ করো নি? কেন রাগ করো নি?কতো জোড়ে মারলাম তোমায়। সরি!
— ইটস ওকে। আমি রাগ করি নি তবে গালে ব্যাথা লাগছে খুব। এতো জোড়ে কেউ মারে? একটু আস্তে মারলেই তো হতো।
আমার কথায় হেসে উঠলেন শুভ্র। হাসি মুখটা হঠাৎই গম্ভীর করে বলে উঠলেন,
— এমন কথা কেনো বলো যে কথায় হার্ট হই আমি। এই কথাটা যদি আমি বলতাম তাহলে কি তোমার ভালো লাগতো বলো? তুমি জানো আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি। তারপরও এমন কথা কেন বলো। তোমার চঞ্চলতা, রাগ,অভিমান এই সব মিলিয়েই তুমি আর এই তুমিটাকেই ভালোবাসি আমি রোদপাখি । আমার ভালোবাসায় কোনো সেকেন্ড অপশন নেই । ফাস্ট এন্ড লাস্ট অপশন দুটোই তুমি। আর আসছে নাবিলার কথা আমি তো জাস্ট তোমাদের মধ্যেকার পার্থক্যটা বলছিলাম রোদপাখি। আর কিছুই না। এখন গাল দেখি…ইশশ একদম লাল হয়ে গেছে। সো সরি! আর হবে না।
কথাটা বলে আমার গালে চুমু দিতে নিতেই সরে গেলাম আমি। শুভ্র অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,
— কি হলো?
— আমি আপনার সাথে রেগে আছি।
— কিন্তু মাত্রই তো বললে যে রেগে নেই।
— এই রাগ চড়ের জন্য নয়। ওটা তো চাইলে আবারও মারতে পারেন। আমাকে চড় মারার অধিকার আপনারই সবচেয়ে বেশি বাট রাগ আমার সে জায়গায় নয় অন্য জায়গায়। সো দূরে থাকুন। আপনার সাথে কথা বন্ধ।
— আরেহ্! কারণটা তো বলবে। নয়তো বুঝবো কিভাবে?
— বুঝতে হবে না।
কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি। পেছন থেকে শুভ্রর কন্ঠ কানে এলো,
— রোদ? এই রোদ? শুনো না….
রুম থেকে বেরুতেই সাহেল ভাইয়ার সাথে দেখা। আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন উনি। হাসিমুখেই বললেন,
— শুভ্র কোথায়? ওকে একটু দরকা…
এটুকু বলতেই হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলেন শুভ্র। দরজার সামনে সাহেল ভাইয়াকে দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত হলেন উনি। জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
— আরে, সাহেল? তুই এখানে?
— তোর কাছেই এসেছিলাম। চল বাইরে যাবো। সাব্বিররা ক্যাম্পাসে এসেছে দেখা করে আসি।
— আচ্ছা বাট…
— কোনো কিন্তু নয় চল (আমার দিকে তাকিয়ে) আর সানশাইন? নাবিলার দিকে একটু খেয়াল রেখো প্লিজ। এসেও দু’বার বমি করেছে শরীরটা খুবই দুর্বল। রুমে একা আছে অপরিচিত জায়গা একটু চেইক করো, কেমন?
— ওকে ভাইয়া। চিন্তা করবেন না। খেয়াল রাখবো।
সাহেল ভাইয়া শুভ্রকে টেনেটুনে বের করে নিয়ে যেতেই নাবিলা আপুর ঘরে উঁকি দিলাম আমি। আপু বই পড়ছিলেন। আমাকে উঁকি দিতে দেখেই বলে উঠলেন,
— ভেতরে চলে এসো রোদ।
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হলাম। মুখ কাঁচুমাচু করে ভেতরে ঢুকে গেলাম আমি। আমার দৃষ্টি উনার গলায়। শুভ্র উনার গলার তিলটাও খেয়াল করেছে? কথাটা ভেবেই শুভ্রর সবকটা চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার। নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বিছানায় গিয়ে বসলাম আমি। আপু বইটা পাশে রেখে সোজা হয়ে বসলেন। বালিশটা কোলে নিয়ে হাসিমুখে বলে উঠলেন,
— এসেছো বেশ করেছো। একা একা বোর হচ্ছিলাম খুব। সাহেল বলেছিলো তুমি নাকি খুব বেশি কথা বলো। কই আমার সাথে তো বলছো না। আমাকে পছন্দ হয় নি তোমার?
— ছি ছি। কি বলছেন আপু? পছন্দ হবে না কেন? আপনি তো অনেক কিউট।
আমার কথায় হাসলেন উনি। আমি আমতা আমতা করে বলে উঠলাম,
— আপু? আপনি প্রেগনেন্ট? কতদিন হলো?
— প্রায় চারমাস।
— ওহ! গ্রেট। আমার মনে হয় মেয়ে হবে। আপনার কি মনে হয় আপু?
— জানি না। তবে আমি আর সাহেল চাই ছেলে হোক। তাহলে তোমার মেয়েকে নিয়ে যেতে পারবো আমাদের বাসায়।
কথাটা শুনেই হেসে উঠলাম আমি।
— আমার যদি ছেলে হয় তখন?
— তাহলে এক বালতি আফসোস তবে আমার মনে হয় তোমার মেয়েই হবে।
কথাটা বলেই থামলেন উনি। কিছুক্ষণ চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,
— শুভ্রকে কতোটুকু ভালোবাসো রোদ?
উনার প্রশ্নে খানিকটা অপ্রস্তুত হলাম আমি।
— জানি না। তবে এটুকু জানি উনাকে ছাড়া শ্বাস নিতে পারবো না।
আমার কথায় হালকা হাসলেন নাবিলা আপু। আমার ডান হাতটা নিজের হাতে নিয়ে একটু চাপ দিয়ে ধরে বলে উঠলেন,
— শুভ্রকে ভালোবাসার জন্য থেংক্স রোদ।
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।বিস্মিত গলায় বললাম,
— মানে?
— তুমি শুভ্রকে ভালোবাসো বলেই সাহেলকে পেয়েছি আমি। তুমি হয়তো জানো না সাহেল তোমাকে কতোটা ভালোবাসে । হয়তো এখনও বাসে। এতে কোনো অভিযোগ নেই আমার কারণ আমি জানি ও আমাকেও প্রচন্ডরকম ভালোবাসে। একটা ছেলে তখনই কাউকে হারানোর ভয় পায় যখন সে কাউকে প্রচন্ডরকম ভালোবাসে আর সাহেলের মনে আমাকে হারানোর ভয়টা প্রবল। তবু আমার কষ্ট হয়,ভীষণ কষ্ট হয়। এই কষ্টটা আমার জন্য নয় কষ্টটা সাহেলের জন্য।আমাদের বিয়ের আগের দিন ওর বলা প্রতিটি কথায় আমার কানে বাজে রোদ। ও বলেছিলো,
” নাবু? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্টটা কি জানো? পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো কাঁদতে না পারার কষ্ট। আর এই কষ্টটাকে হাসির পেছনে ঢেকে রাখাটা আরো বেশি কষ্টের। এই পৃথিবীতে তারাই সবচেয়ে বেশি অসহায় যারা কাঁদতে পারে না আর আমার তো কাঁদার অধিকারটুকুও নেই নাবু। কিভাবে কাঁদবো বলো? নিজের বেস্টফ্রেন্ডের সুখের পরিবর্তে কি কাঁদা যায়? ওর সামনে ভেজা চোখে কিভাবে দাঁড়াবো আমি? কিন্তু বিশ্বাস করো নাবু, আমারও কাঁদতে ইচ্ছে করে, চিৎকার করে কেঁদে পুরো পৃথিবীকে বলতে ইচ্ছে করে আমারও কষ্ট হচ্ছে, আমিও পুড়ছি, জ্বলছি,শেষ হয়ে যাচ্ছি। জানো নাবু? সানশাইন আর শুভ্রকে একসাথে দেখলে মাঝেমাঝে সানশাইনকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করতো। নয়তো নিজে মরে যেতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু তা কি সম্ভব বলো? নিজেকে শেষ করার ক্ষমতা আমার নেই আর সানশাইনকে শেষ করার ক্ষমতা আমার আরো নেই। যে মেয়ের চোখের একফোঁটা জলেই শরীর অস্থির করে আসে তাকে কি করে মারা যায় বলো? আমি তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটা যেমন সত্য ঠিক তেমনই সত্য হলো আমি সানশাইনকেও ভালোবাসি। তোমাদের দুজনকে এক পাল্লায় মাপতে পারবো না আমি। তুমি তো তুমিই নাবু। আমার সবটা জুড়েই আছো কিন্তু ওকেই ভুলে যেতে পারছি না আমি। ভুলে যাওয়া কি এতো সহজ বলো? আমি চেষ্টা করছি নাবু, আমাকে একটু সময় দাও। জানি না পারবো কিনা তবু… চেষ্টা করছি। জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিলো ও।প্রথম অনুভূতি। সে যদি আমার স্মৃতি হিসেবে থেকে যায় তোমার কি খুব কষ্ট হবে নাবু? আমার সবটা তো তোমারই….তবু…”
সেদিন আমি বলেছিলাম, না, হবে না। ও আমাকে ভালোবাসে এটাই আমার জন্য বেশি ইম্পোর্টেন্ট। মানুষ যে বলে,ভুল বলে রোদ। সত্যিটা হলো, ভালোবাসা ভুলা যায় না। মনের কোথাও না কোথাও থেকেই যায় সেই অনুভূতি। আমি হ্যাপি যে সাহেল তার জীবনটাকেই আমার সামনে তুলে ধরেছে। কিচ্ছু লুকাইনি। কিচ্ছু না।
নাবিলা আপুর কথায় আমি চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম। কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমার অস্বস্তি হয়তো বুঝতে পারছিলেন উনি। তাই একটু হালকা হেসে বলে উঠলেন,
— এই যা, তোমাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিলাম। সরি বোন। তবে তোমার সাথে কিন্তু আমার বেশ মিল আছে। সেটা কি খেয়াল করেছো?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই সাহেল ভাইয়া রুমে ঢুকলেন। হাসিমুখে বলে উঠলেন,
— হেই গার্লস, কি করা হয়?
আমরা দু’জনেই মুচকি হাসলাম। নাবিলা আপু বললেন,
— গল্প করা হয়।
সাহেল ভাইয়া হেসে নাবিলা আপুর কপালে হাত রেখে জ্বর চেক করতে করতে বলে উঠলেন,
— বাহ! এখানে এসে সানশাইনের হাওয়া লেগেছে তোমার। বোবার মুখে কথা ফুটেছে।
উনার কথায় হেসে উঠলাম আমি। নাবিলা আপু রাগী চোখে তাকালেন। সাহেল ভাইয়া সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বললেন,
— বমি হয়েছে আরো? শরীর খারাপ লাগছে?
— উহুম। রোদের সাথে গল্প করতে করতে শরীর খারাপের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এনিওয়ে, তুমি এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে যে?
— বউয়ের আদেশ শিরধার্য। বউ যখন বলেছে দশটার আগে রুমে থাকা চাই তো বাইরে কি করে থাকি? এনিওয়ে থেংক্স সানশাইন, নাবিলার…
সাহেল ভাইয়ার কথার মাঝেই দরজায় টোকা পড়লো। তিনজনেই ঘাড় ঘুরিয়ে দরজায় তাকাতেই শুভ্রকে চোখে পড়লো।উনার মুখে মিষ্টি হাসি। আমরা তাকাতেই বলে উঠলেন,
— আসতে পারি?
— আয়। তুই জীবনে নক দিয়ে রুমে ঢুকেছিলি?
— তখন আর এখনের মাঝে পার্থক্য আছে না? এখন আমাদের নাব্বু বেবি আমার ভাবি বলে কথা…প্রাইভেসি আছে না?
শুভ্রর কথায় চোখ গরম করে তাকালেন নাবিলা আপু। রাগী গলায় বললেন,
— চড় না খেতে চাইলে চুপ কর। তুই আমার দেবর সো সাবধানে কথা বল নয়তো কান মলা।
উনার কথার মাঝেই উঠে দাঁড়ালাম আমি। দরজার দিকে হাঁটা দিতেই আমার হাত ধরে ফেললেন শুভ্র। অবাক হয়ে বললেন,
— কোথায় যাও?
আমি হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে আবারও হাত চেপে ধরলেন উনি। সাহেল ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
— তোরা রেস্ট নে। পিচ্চিটা রাগ করেছে আগে রাগ ভাঙাই। বাই গাইস।
কথাটা বলে উনাদের সামনেই কোলে তুলে নিলেন আমায়। পাশাপাশি রুম হওয়ায় দ্রুত ঢুকে গেলেন রুমে। বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললেন,
— এখনো রেগে আছো?
আমি কিছু না বলে বিছানা থেকে বালিশটা নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম চুপচাপ। উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলে উঠলেন,
— আজব! এটা কি হলো? আরে এতো রাগ কেনো? কি করেছি আমি? না বললে বুঝবো কিভাবে?
#চলবে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 64
?
— আজব! এটা কি হলো? আরে এতো রাগ কেনো? কি করেছি আমি? না বললে বুঝবো কিভাবে?
আমার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন উনি৷ হুট করে ওঠে দাঁড়িয়ে সোফার কাছে এসে দাঁড়ালেন ৷ আমি উনার উপস্থিতিটা প্রবলভাবে উপলব্ধি করতে পারলেও চোখ মেলে তাকালাম না। উনার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছেও আপাতত নেই আমার। এখন এই ছোট্ট বুকটাতে বিন্দু বিন্দু অভিমানগুলো পাহাড়ের মতো বৃহৎ আকার ধারন করেছে।। উনি কিছু না বলেই কোলে তুলে নিলেন আমায়৷ খুব সাবধানে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লেন উনিও। কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
— আমি জানি জেগে আছো তুমি। কি হয়েছে বলো না? কি করেছি আমি? কি করলে ক্ষমা মিলবে আমার? কিছু তো বলো? এবার কিন্তু টর্চার করবো আমি…রোদদ…
উনার কথায় কোনো হেলদুল হলো না আমার। আমি এখনও আগের মতোই নিশ্চুপ। গলায় উষ্ণ ছোঁয়ার পাশাপাশি একটা তীক্ষ্ণ ব্যাথাও অনুভব করলাম। বুঝতে পারলাম উনার ভাষায় “টর্চার” নামক জিনিসটা এখনই এপ্লাই করতে চলেছেন উনি। আমি চোখ-মুখ খিঁচে ঘুমোনোর চেষ্টা করছি ক্রমাগত। আজকে কিছুতেই হারবো না আমি। কিছুতেই না। এতো এতো অভিমান গলানো কি এতোই সহজ? মোটেও না!
সকাল ৮ টা। আধো আধো ঘুমে চোখ মেলে তাকালাম আমি। কাঁচের জানালা ভেদ করে সকালের সোনালী রোদ খেলা করছে আমার চোখে মুখে। আড়মোড়া ভেঙে বিছানায় উঠে বসলাম । লম্বা চুলগুলো হাত খোঁপা করতে করতে চোখ ফিরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম —– ৮ঃ১০। আশেপাশে শুভ্রকে চোখে পড়লো না। অলস ভঙ্গিতে পা’দুটো মাটিতে রাখতেই শরীরের দুর্বলতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো ৷ মাথাটাও ভারি ভারি লাগছে খুব। কোনোরকম ওঠে দাঁড়িয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে ভাবতে লাগলাম, “আচ্ছা? আমি কি অসুস্থ?হঠাৎ হঠাৎ শারীরিক দুর্বলতার মানে কি? শুভ্রকে কি বলবো?” এমন সাত-পাঁচ চিন্তা করতে করতেই ফ্রেশ হয়ে একদম নিচে চলে গেলাম আমি। ড্রয়িংরুমে আজ গমগমে ভাব। সাহেল ভাইয়া আর নাবিলা আপুকে পেয়ে সবাই যেন গল্পে মেতে উঠেছে আজ। আমাকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখেই আমার দিকে চোখ তুলে তাকালেন সাহেল ভাইয়া। নাবিলা আপুও মিষ্টি করে হাসলেন। উনার হাসির উত্তরে আমিও এক টুৃকরো হাসি ফিরিয়ে দিতেই পাশ থেকে সাহেল ভাইয়া বললেন,
— গুড মর্নিং সানশাইন?
— গুড মর্নিং ভাইয়া।
মামু আমাকে পেয়েই তার বিরাট পরিকল্পনার সারমর্ম শুনিয়ে দিলেন আমায়। এখন অব্দি এই বাড়িতে আমিই সবচেয়ে ছোট প্রাণী৷ শশুড়বাড়ির সবাই আমায় বউ কম বাড়ির বাচ্চায় বেশি মনে করেন। তাই আমাকে পুরো পরিকল্পনাটা শুনিয়ে চমকে দেওয়াটা মামুর কাছে খুবই উপভোগ্যকর বিষয়। আমি মামুর কথা বেশ মনোযোগ সহকারে শুনলাম এবং চমকানোর চেষ্টাও করে চললাম ক্রমাগত৷ মামু আজ বিকেলে ফ্যামেলি গেট টুগেদারের ব্যবস্থা করেছেন। শুভ্র আর সাহেল ভাইয়ার বন্ধুরা,আমার ফ্যামিলি,মামানির আত্মীয় স্বজন আর সাহেল ভাইয়ার বাবা-মা এই কয়েকজন নিয়েই এই আয়োজন। মামুর ধারনা ব্যাপারটা দারুন হবে। অনেকদিন পর বাড়িতে একটা পিকনিক পিকনিক ভাব চলে আসবে। আমিও মাথা হেলিয়ে স্মিত হেসে সায় জানালাম। এমন সময় কোথা থেকে শুভ্র এসে ধপ করে বসে পড়লেন আমার পাশে। আমার ওড়নার আঁচল টেনে নিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে মামুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— বাবা? যা যা আনতে বলেছিলে সব রেডি। পুরোদস্তুর বাজার করেছি আজ। গিয়ে চেইক করে নাও। এব্রিথিং ইজ ওকে ওর নট!
মামু উৎফুল্ল মুখে উঠে যেতেই সবার দৃষ্টির অগোচরে কোমর চেপে ধরলেন উনি। কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে বলে উঠলেন,
— গুড মর্নিং রোদপাখি।
আমি ফ্রিজড হয়ে বসে আছি। এতোগুলো মানুষের সামনে এমন একটা ব্যবহার একমাত্র উনার পক্ষেই সম্ভব। অভ্র ভাইয়া আর সাহেল ভাইয়া মিটিমিটি হাসছেন। কিছুক্ষণের মাঝে নাবিলা আপুও যোগ দিলেন তাতে। রাগে গা টা জ্বলে যাচ্ছিলো আমার। অভ্র ভাইয়া নিশ্চয় কোনো বেফাঁস কথা বলার জন্যই রেডি হচ্ছেন এবার? দুই ভাই তো এক টাইপ —— মুখ ফাঁটা!
কথাটা ভেবে নড়েচড়ে উনার হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে যেতেই সোফায় গা এলিয়ে দিলেন উনি। ওরনার একপাঁশটা আকঁড়ে ধরেও এদিক ওদিক তাকিয়ে ছেড়ে দিয়ে আমতা আমতা করে বললেন,
— এক কাপ কফি দিও রোদপাখি, প্লিজ!
আমি চুপচাপ রান্নাঘর থেকে এক কাপ কফি এনে উনার সামনের টেবিলে রাখলাম। উনি খেয়াল করলে বুঝতে পারতেন আমি উনার সাথে কাল রাত থেকে কথা বলছি না। আচ্ছা? ব্যাপারটা কি উনি খেয়াল করেছেন? হয়তো না, উনার মুখ দেখে তো আপাতত তাই মনে হচ্ছে আমার। সবাই বিকেলের দিকে আসার কথা হলেও ১২ টার মাঝেই রোহুন-সাব্বির ভাইয়ারা এসে হাজির। ১ টার দিকে চিত্রা আর শিশির স্যারও চলে এলেন চুপচাপ। শুভ্রর বড় খালা,উনার মামু, আদিব ভাইয়া আরো কিছু কাজিন এসে জুটলো দুপুর দুটোর দিকে। বিকেল চারটার মধ্যে সারা বাড়ি হৈ-হুল্লোড়ে ভরে উঠলো। এমনিই শরীরটা খারাপ তারওপর এতো মানুষের চেঁচামেচিতে কিছুক্ষণেই অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম আমি। তবুও হাসিমুখে থাকতে হলো সারাটাক্ষন। সন্ধ্যার দিকে সবার নাস্তার ব্যবস্থা করতে মামানিকে হেল্প করছিলাম। আপু অসুস্থ না থাকলে রান্না ঘরে আসার প্রয়োজনই পড়তো না আমার কিন্তু এখন সিচুয়েশনটায় ভিন্ন। রান্না ঘরের এককোণে দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্রর বড় খালা। আমি শুভ্রর বউ ব্যাপারটা উনার ঠিক হজম হচ্ছে না। শারীরিক অসুস্থতা, শুভ্রর খালার ঝাঁঝালো কথায় মানসিক চাপ সবদিক থেকে যেন ফাঁপড়ে পড়ছিলাম আমি। বাসায় থাকলে কেঁদে কেঁটে বিশ্রী অবস্থা করা আমি আজ কতোটা শান্ত কথাটা ভেবে খানিকটা চমকালাম আমি। শুভ্রর বড় খালার কথার তোড়ের মাঝেই রান্নাঘরে ঢুকলেন শুভ্র। চুলগুলো থেকে টুপটাপ পানি পড়ে চলেছে হয়তো শাওয়ার নিয়েছেন। শুভ্র রান্না ঘরে ঢুকতেই বড়খালা গদগদ কন্ঠে বলে উঠলেন,
— আরে শুভ্র? তুই রান্নাঘরে কি করছিস বাবা? কিছু লাগবে?
— হ্যাঁ লাগবে।
— তা কিছু লাগলে তো তোর বউকেই বলতে পারতিস। বউ কি সাজিয়ে রাখার জন্য এনেছিস নাকি? বউ থাকতে আমাদের ছেলেটাকে কেন রান্নাঘরে আসতে হবে শুনি? আজকালকার মেয়েদের মধ্যে কোনো আক্কেল আছে নাকি? আচ্ছা, ওসব থাক। কি লাগবে তোর?
— বউ লাগবে। বউ নিতে এসেছি। এভাবে তাকে রান্নাঘরে আটকে রাখলে তো তোমাদের ছেলেদের রান্নাঘরে আসতেই হবে খালামণি। রোদপাখি? রুমে চলো। আমার ব্ল্যাক টি-শার্ট খুঁজে পাচ্ছি না। ঘড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। চলো তো….
আমি উনার দিকে তাকালাম না। সবজি কাটার ছুঁড়িটা পাশে রেখে রান্নাঘরের দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম। পা’দুটো কেমন একটা টলছে আমার৷ শরীরটা যে কেন এমন ভারি লাগছে কে জানে? একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামনের দিকে এগুতেই পেছন থেকে খালার তাচ্ছিল্যভরা কন্ঠ কানে এলো,
— বলি কি রেনু্, ছেলে তো তোর বউয়ের আঁচল ধরে ফেলেছে রে। কিছু একটা কর পরে দেখা যাবে তোর ছেলে অন্যের মেয়ের হাতের মুঠোয় বন্ধী হয়ে গেছে।
— আপা? রোদ ওর বউ। আর আমি ওর মা। এই দুটো সম্পর্কের গভীরতা আমার ছেলে বুঝে। আমাদের দু’জনের স্থান এক জায়গায় নয় যে আমাদের মাঝে প্রতিযোগীতা হবে। আমরা প্রতিদ্বন্দি নয় আপা। আমা..
মামানীর কথাগুলো আর কানে এলো না আমার। চুপচাপ রুমে ঢুকে আলমারি থেকে উনার টি-শার্ট বের করে দিলাম। উনি টি-শার্টের সাথে থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পড়ে আছেন। আমি শুধু শীতল দৃষ্টিতে দেখলাম কিছু বললাম না। সারা বাড়িতে মেহমানে ভর্তি আর উনি থ্রি-কোয়াটার পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমার কাজ শেষ করে রুম থেকে বের হতে নিতেই আমার হাতটা চেপে ধরলেন উনি। করুণ গলায় বললেন,
— তুমি ঠিক আছো তো রোদ? তোমাকে কেমন যেন ফ্যাকাশে লাগছে।
আমি উনার দিকে ফিরে তাকালাম। ঘন কালো চোখ-দুটোতে ছোট বাচ্চাদের মতো একরাশ অভিমান। আমি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে হাতটা ছাড়িয়ে নিচে নেমে এলাম।পেছনে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি মুখ ফুলিয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন উনি। এমন চাইল্ডিশ চাহনী দেখে কি রেগে থাকা যায়?রাত আটটার দিকেই সাব্বির ভাইয়ারা ছাদে গদি বিছাতে শুরু করলেন। আজকের রাতটা ছাদেই কাটাবে সবাই। বড়রা নয় শুধু ছোটদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ছাদ। সোফায় বসে বসে উনাদের কর্মকান্ড দেখছিলাম আমি আর নাবিলা আপু। এরা সব বন্ধুরা একসাথে থাকলে মনে হয় সবকটা উঠতি বয়সের কিশোর অথচ সবাই-ই এখন সাবলম্বী। নাবিলা আপু সেদিকে তাকিয়ে একটু হেসে নিয়েই বলে উঠলেন,
— তোমার বর হয়তো ঠিকমতো ইঞ্জয় করতে পারছে না। বারবার তোমার দিকে তাকাচ্ছে। মান- অভিমান চলছে নাকি তোমাদের?
আমি হালকা হাসলাম। নাবিলা আপু এই হাসির অর্থ বুঝলেন কি না জানি না। উনিও মিষ্টি করে হেসে বলে উঠলেন,
— শুভ্রর চঞ্চলতা একফোঁটাও কমে নি। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম তখনও শুভ্র এমনই চঞ্চল ছিলো। ক্লাসের সবার সাথেই সখ্যতা ছিলো তার শুধু মেয়েরা বাদে। কারণ কোনো মেয়ের সাথেই তেমন একটা কথা বলতে দেখি নি আমি। তবে যার সঙ্গেই কথা বলতো মনে হতো কতোদিনের চেনা। এনিওয়ে, তোমাকে একটা মজার ঘটনা বলি। একবার,ক্লাস টেনে স্কুল থেকে আমাদের ট্যুরে নিয়ে গেলো। ট্যুরটা ছিলো সিলেটে। চা বাগান দেখা শেষ করে পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠছি ঠিক তখনই শুকনোর মধ্যে পা পিছলে ধাম করে পড়ে গেলাম আমি। তখন তো বাচ্চা ছিলাম, দিলাম ভ্যা করে কেঁদে। যদিও ব্যাথার জন্য নয় লজ্জায় কেঁদে উঠেছিলাম সেদিন। শুভ্র আর সাব্বির ছিলো আমার ঠিক পেছনে। আমাকে কাঁদতে দেখেই শুভ্র ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
— এই? বাচ্চাদের মতো কাঁদছিস কেন?
আমাকে বলা ওটায় ছিলো তার প্রথম কথা। তবু এমনভাবে বলেছিলো যেন কতো বছরের বন্ধু আমার। সেদিন আমিও মুখ ফুলিয়ে হেঁচকি তুলতে তুলতে বলেছিলাম,
— আমি তো বাচ্চায়। তোর মতো বুড়ো নাকি যে কাঁদবো না।
সেই থেকেই শুরু হলো। শুভ্র হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
— ও আচ্ছা,তুই তো নাব্বু বেবি। ইশশ রে, ওই ওই তোদের মধ্যে এই বেবিটা কার রে? তুলে নিয়ে যা তো। এমনি একটা বেবিকে কেউ ফেলে যায়? নাব্বু বেবি? ওঠে পড়ো, ওঠে পড়ো।
সেদিন থেকেই পুরো স্কুলে আমি হয়ে গেলাম “নাব্বু বেবি”। হা হা হা
উনার কথায় হেসে উঠলাম আমি। হাসিমুখেই বলে উঠলাম,
— সাহেল ভাইয়াকে কি তখন থেকেই চিনেন?
— আরেহ না। আমি শুভ্রর সাথে শুধু নাইন আর টেন এই দু’বছর পড়েছি। এই দু’বছর সাহেল আমাদের সাথে ছিলো না। কোনো একটা কারণে অন্য কোনো স্কুলে ট্রান্সফার হয়েছিলো সে। তবে আমি ওকে দূর থেকে দেখেছিলাম। শুভ্রর সাথে প্রায়ই রাস্তাঘাটে দেখতাম ওকে। দু’জনের ড্রেস আপ প্রায় সময়ই সেইম হতো। আমি তো ভেবেছিলাম ওরা টুইন। পরে শুনি ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড। আর সাহেল আমাকে এয়ারপোর্টেই প্রথম দেখে। শুভ্রর উপর সব মেয়েরাই ক্রাশড ছিলো বাট আমার তো শুভ্রকে দেখেই ভয় লাগতো কি পরিমাণ দুষ্ট ছিলো বাবা! ওকে সামলাও কিভাবে বলো তো? আমি সাহেলের উপর ক্রাশড ছিলাম। যদিও ওর নামটাও জানতাম না। পরবর্তীতে যখন কোলকাতায় চলে যাই তখন ফেসবুকে স্ক্রুল করতে করতে একদিন সাহেলের আইডি চোখে পড়ে তখনই নামটা জেনেছিলাম আমি। তারপর হুট করেই এতোবছর পর এয়ারপোর্টে ওর সাথে দেখা। আমি দৌড়ে গিয়ে বলেছিলাম,
— ” এক্সকিউজ মি? আপনি সাহেল রাইট?”
আমার কথায় কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো সাহেল আর আমি বোকার মতো হাসছিলাম। সাহেল আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালো করে দেখে নিয়ে বলেছিলো,
— ” সরি! আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। তবে আপনার কিছু কোয়ালিটি আমার খুবই পরিচিত। আপনাকে কি আমি চিনি?”
সাহেলের কথায় থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম আমি। ওর কথার আগা মাথা কিছু না বুঝেই একটা হাসি দিয়ে বলেছিলাম,
— ” আমি নাবিলা আহসান। শুভ্রর ওল্ড ফ্রেন্ড। আপনি তো শুভ্রর বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না?”
আমার কথায় সাহেল গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলে গম্ভীর মুখে বলে উঠেছিলো,
— “প্লিজ স্টপ লাফিং। এই হাসির জ্বালা মেটাতেই এতোদূর এসেছি। প্লিজ হাসবেন না।”
আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম,
— মানে?
— মানেটা সিম্পল, বিয়ে করবেন আমায়? উইল ইউ মেরি মি?
আমি তো জাস্ট তব্দা লেগে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন কোনো সিচুয়েশনে পড়ার কথা কখনো কল্পনাতেও ভাবি নি। তখন মাথায় কি ঢুকেছিলো কে জানে? বোবার মতো দাঁড়িয়ে মাথা নেড়েছিলাম শুধু। যার অর্থ, আমি আপনাকে বিয়ে করবো।
এটুকু বলেই হেসে উঠলেন নাবিলা আপু। উনার সাথে তাল মেলালাম আমিও৷ কৌতুহলী হয়ে বলে উঠলাম,
— ওয়াও, সো এক্সাইটিং। তারপর কি হয়েছিলো?
— তারপর? আমার মাথা নাড়ানো দেখে আরো গম্ভীর হয়ে এলো সাহেলের মুখ। আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
” কিন্তু আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। ”
সাহেলের কথায় আবারও অবাক হয়েছিলাম আমি। অন্য কাউকে ভালোবাসলে আমাকে বিয়ে করতে চাওয়ার মানে টা কি? অদ্ভুত! আমার মনের ভাব হয়তো সাহেল বুঝতে পেরেছিলো। ঠান্ডা গলায় বলেছিলো,
“যাকে ভালোবাসি সে আরেকজনের বউ। ব্যাপারটা খুবই কমপ্লিকেটড। তুমি কি শুনবে? শুনার পর যদি তোমার মনে হয় আমি ভুল তাহলে ঠিক আছে। আর যদি মনে হয় আমি ঠিক তাহলে তুমি রাজি না হলেও আমি তোমাকেই বিয়ে করবো। সরি টু ছে, দরকার পড়লে জোড় করেই বিয়ে করবো।”
বিশ্বাস করো রোদ, সেদিন আমি শুধু “হা” করে তাকিয়েই ছিলাম। একটা অপরিচিত মেয়েকে সে জোড় করে বিয়ে করার কথা বলছে। অদ্ভুত!!
নাবিলা আপুর বিয়ের গল্প শুনে যেন শরীর খারাপ ভাবটায় চলে গেলো আমার। খুশি হয়ে বলে উঠলাম,
— তারপর? তারপর?
নাবিলা আপু হেসে উঠলেন। আমার নাক টেনে বললেন,
— যেমন বর তার তেমন বউ। দু’জনেই কেমন বাচ্চা বাচ্চা। (হালকা হেসে) তারপর আর কি? দু’জনে একটা কফি শপে বসলাম। টানা দু’ঘন্টায় সে সবকিছুই খুলে বললো আমায়। সত্যি বলতে আগে তো শুধু দেখে প্রেমে পড়েছিলাম কিন্তু এবার ওর কথা বলার ভঙ্গি, ওর বলা কাহিনী সব মিলিয়ে রীতিমতো প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতে লাগলাম আমি। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিলো এই ছেলের দশটা বউ থাকলেও আমি শুধু এই ছেলেকেই বিয়ে করবো। হা হা হা। ওর সোজাসাপ্টা কথাগুলোই আরো বেশি পাগল পাগল করে তুলেছিলো আমায়। কথা শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে যখন বলেছিলো,” বিয়ে করবা আমায়? নাকি কিডন্যাপ করে বিয়ে করবো? দেখো, এবার আর ছাড় দিবো না আমি। ডিরেক্ট কোর্টে গিয়ে আমায় বিয়ে করবা তারপর বাসায় যাবা নয়তো এখানেই বসে থাকতে হবে আমার সামনে। গট ইট?” তখনই আমি ডিসিশন নিয়েছিলাম এই ছেলে হাজার মেয়েকে ভালোবাসলেও ওকেই আমার চাই। চাইই চাই। একটা মজার ব্যাপার কি খেয়াল করছো রোদ?
আমি জিগ্যেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
— কি আপু?
— শুভ্র আর সাহেল দু’জন কিন্তু অনেকটাই এক টাইপ। হাই এন্ড লো। একজনের মেজাজ অলওয়েজ হাই থাকে তো আরেকজনের মেজাজ অলওয়েজ লো। আমাদের দু’জনের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সেইম৷ হাই এন্ড লো। তুমি অলওয়েজ হাই আর আমি অলওয়েজ লো। এক্চুয়েলি আমি না রাগই করতে পারি না। রাগটা আমার আসেই না। কেন যে কে জানে?
কথাটা বলে ঠোঁট উল্টালেন উনি। দু’জনে দু’জনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকেই হুট করে গলা ছেড়ে হেসে উঠলাম। আমাদের দু’জনের হাসির শব্দে সবাই আমাদের দিকে ফিরে তাকালো। সবার চোখেই মুগ্ধতা। আর আমাদের চোখ-মুখে আনন্দ। একঝলক সুখময় আনন্দ।
#চলবে…
#তোকে চাই❤
……. (সিজন-২)
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 65
?
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছি, আমার ঠিক সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছেন শুভ্র। সোফার দু’পাশের হাতলে হাত রেখে আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন উনি। থেকে থেকে ঢোক গিলে আশেপাশে তাকাচ্ছি আমি। চারপাশে সবাই হাসি-ঠাট্টা আর খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আমাদেরকে খেয়াল করছে না বললেই চলে। তবুও অদ্ভুত রকম অস্বস্তি নাড়া দিচ্ছে মনে। আমাকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে শান্ত গলায় বলে উঠলেন উনি,
— আমার দিকে তাকাও।
উনার কথায় মুখ কাঁচুমাচু করে মাথা নিচু করে বসে রইলাম আমি। উঠে যাওয়ারও কোনো পরিস্থিতি রাখেন নি উনি।
— কি হয়েছে তোমার? কোনো সমস্যা থাকলে বলো আমাকে। কাল রাত থেকে কথা বলছো না এর কারণ কি রোদপাখি? চোখ-মুখটাও ফ্যাকাশে লাগছে, তুমি কি অসুস্থ ফিল করছো রোদ? বলো আমাকে?
আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকালাম। উনার দৃষ্টি আমার চোখের দিকেই। চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিলাম দ্রুত। উনার কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে ইচ্ছে করছে না আমার। উনি এবার আমার দু’হাত নিজের হাতে নিয়ে নরম গলায় বললেন,
— সকালে খেয়েছো? সবাই লাঞ্চ করছে। খাবে, চলো।
উনার কথায় চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে চিত্রাকে দেখতে পেয়েই ডাকলাম তাকে। ও কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই বলে উঠলাম,
— চিত্রা? বলছিলাম কি তো…
আমার কথা শেষ না হতেই রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেন শুভ্র। গম্ভীর গলায় চিত্রাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,
— কিছুই বলছিলো না। তুমি যাও চিত্রা।
— এই না, যাবি না তুই৷ শোন আমি কি বলি…
— আমি তোমাকে যেতে বলেছি চিত্রা।
চিত্রার মুখটা মুহূর্তেই রক্তশূণ্য হয়ে গেলো। বেচারী কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। আমার কথাও ফেলতে পারছে না আবার শুভ্রর ভয়ে এখানে দাঁড়িয়েও থাকতে পারছে না। তাই মাথা নিচু করে বিরবির করে বলে উঠলো,
— ভভভাইয়া? ম মমানে বলছিলাম কি? রররোদ…
চিত্রা এটুকু বলতেই ধমকে উঠলেন শুভ্র,
— আমি যেতে বলেছি তোমায়।
চিত্রার দৌঁড়ে পালানোর জন্য শুভ্রর এই একটা ধমকই যথেষ্ট। ধমক শুনে চমকে উঠে উপরের দিকে তাকাতেই চিত্রা হাওয়া! চিত্রা যাওয়ার পর চোখ বন্ধ করে জোড়ে শ্বাস নিলেন শুভ্র। আমার দিকে লাল চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— পাঁচ মিনিটের মধ্যে ডাইনিং- এ যেনো দেখতে পাই তোমায়। জাস্ট পাঁচ মিনিট….নয়তো খবর খারাপ হয়ে যাবে তোমার।
কথাটা বলেই ওঠে ডাইনিং-এর দিকে চলে গেলেন উনি। এতোক্ষণ যেনো শ্বাস আটকে বসে ছিলাম আমি। উনি সরে যেতেই বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিলাম আমি। শ্বাস টেনে নিয়ে চোখদুটো খুলতেই চমকে উঠলাম আমি। চিত্রা আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে চলেছে। ওকে হাসতে দেখে ভ্রু কুঁচকালাম আমি,
— কি সমস্যা? হাসছিস কেন?
চিত্রা তাড়াহুড়ো করে আমার পাশে সোফার হাতলে বসে বলে উঠলো,
— কাহিনী কি দোস্ত? ভাইয়া আর তোর মাঝে ফাইট চলছে নাকি?
— হু।
— কেনো, কেনো?
— তোকে বলবো কেনো? বেশি কথা না বলে আমায় ধর তো…ডাইনিং-এ যাবো। মাথাটা ঘুরছে, দাঁড়াতে পারছি না।
আমার কথায় চোখ বড়বড় করে তাকালো চিত্রা। তুমুল উৎসাহ নিয়ে আমাকে ধরে দাঁড় করালো সে। হাঁটতে হাঁটতে কানের কাছে ফিসফিস ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
— ব্রেকফাস্ট করেছিলি?
— না। করি নি। খেতে ইচ্ছে করছিলো না।
— এখনও খেতে ইচ্ছে করছে না?
— না। কেনো বল তো?(ভ্রু কুঁচকে)
— আচার খাবি?
— খালি পেটে আচার খেতে যাবো কেন? তবে ঝাল ঝাল হলে খাওয়া যেতেই পারে।কেন, তুই খাওয়াবি নাকি?
— না। আমি তো চেক করছিলাম। মনে হয় বাবু আসছে। আচার আচার করছিস,, মাথাও ঘুরছে… উহুম উহুম।
চিত্রার কথায় দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। পিঠে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে বলে উঠলাম,
— তুই আসলেই একটা গবেট। গাধী কোথাকার। আচার খেলেই মানুষ প্রেগনেন্ট হয়ে যায়? বাংলা ছবি পাইছিস এটা? ননসেন্স।
আমার কথায় মুখটা কালো হয়ে গেলো চিত্রার। এই টপিকে কথা বলা তার জন্য বিপদজনক হয়ে উঠবে ভেবে। টপিক চেঞ্জ করে চাপা স্বরে বলে উঠলো সে,
— এই? ভাইয়ার সাথে রাগ করেছিস কেন রে?
চিত্রার প্রশ্নে ওর দিকে তাকালাম আমি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও হাঁটা দিলাম। হালকা গলায় বললাম,
— তিলের জন্য।
— তিল? কিসের তিল? ভাইয়াকে তিলের তেল টেল আনতে বলেছিলি নাকি? আনে নি বলে রাগ করেছিস?
চিত্রার কথায় ভ্রু কুঁচকালাম আমি। বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম,
— আমি গলার তিলের কথা বলছি, ডাফার!
আমার কথায় অবাক চোখে তাকালো চিত্রা। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করলো সে। কয়েক সেকেন্ড পর ঠোঁট উল্টিয়ে করুন স্বরে বলে উঠলো,
— দোস্ত? যুক্তিবিদ্যার মতো পেঁচিয়ে কথা বলছিস কেন?বিশ্বাস কর দোস্ত, তোর কথা আমার কাছে বায়োলজির থেকেও কঠিন লাগছে। একটু এক্সপ্লেনেশন দে না, প্লিজ!
— তোর ভাইয়া একটা মেয়ের গলার তিল দেখে এসে আমাকে বলেছে তার তিল নাকি আমার তিলের সাথে মিলে যায়। ভাবতে পারছিস? সে এখন মেয়েদের গলার তিল গবেষণা করতে লেগে গেছে। এরপরও রাগ করবো না আমি?
আমার কথায় চোখ বড় বড় করে তাকালো চিত্রা। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে উঠলো,
— ভাইয়া কি পরকীয়া করছে নাকি? (আমি রেগে তাকাতেই) উপস্ সরি সরি। আমি বোঝাতে চাচ্ছিলাম… ভাইয়া কাজটা ঠিক করে নি। তোর রেগে থাকাটা জায়েজ। এনিওয়ে, ভাইয়াকে কিছু বলিস নি তুই?
— কি বলবো?
— কি বলবি মানে? কিছুই বলবি না? সামনে গিয়ে শার্টের কলার ধরে বলবি, “সমস্যা কি তোর? অন্য মেয়ের গলার দিকে এতো নজর যায় কেন? চোখদুটো তুলে নিবো একদম।”
— পাগল তুই? আমি উনাকে তুই করে বলবো? মরে গেলেও না।
— সামান্য তুই করে বলার জন্য তোকে মরে যেতে হবে? আজব!
— আমি উনাকে তুই করে ডাকতে পারবো না। ফাস্টলি উনি আমার বড়। সেকেন্ডলি উনি আমার হাজবেন্ড আর থার্ডলি আই রেসপেক্ট হিম।
আমার কথায় চিত্রা বেশ বিরক্ত হলো বলেই মনে হলো।চোখ-মুখ কুঁচকে বলে উঠলো,
— ওকে ফাইন! আমি যে ডায়লগটা বললাম সেটাতে “তুই” এর জায়গায় “আপনি” লাগিয়ে দিস। সামান্য একটু তুই করে বলতেই ঘাম ছুটে যাচ্ছে তোর আমি হলে তো ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দিতাম। এক চড়েই কাজ খতম। তুই কিন্তু ট্রাই করতে পারিস…
— চড় খেতে না চাইলে চুপ যা। উনার গায়ে আমি হাত তুলবো? পাগল তুই? জীবন থাকতে এ দিনটা যেন কখনো না আসে।
— এহহ! বিয়ের আগে তো কথায় কথায় চড় মারতি তাও আবার পুরো ভার্সিটির সামনে।বিয়ে হওয়ার পর ধোয়া তুলশীপাতা হয়ে গেলি?
— বিয়ের আগে উনি শুধুই একজন ছেলে ছিলেন আমার কাছে। বিয়ের পর স্বামী। দুটোর মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ।
আমার কথা শেষ না হতেই মামানির ডাক পড়লো। দু’জনেই এগিয়ে গেলাম ডাইনিং-এর দিকে। চিত্রা চেয়ার টেনে বসে পড়লোও আমি দাঁড়িয়ে রইলাম চুপচাপ। মামানি অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— কি রে? দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বসে পড়। খাবি না?
— এখন না মামানি। ওরা খেয়ে নিক তারপর। আমি বরং খাবার সার্ভ করে দিই?
— খাবার সার্ভ করার মানুষের অভাব আছে নাকি? বস চুপচাপ।
— প্লিজ মামানি। এখন খেতে পারবো না। খাবার দেখেই পেট ফুলে যাচ্ছে আমার। আমি পরে খাই?
কথাটা বলে ডালের বাটিটা নিয়ে কিচেনের দিকে পা বাড়াতেই দুনিয়া ঘুরে এলো আমার। হাতের বাটিটা পড়লো আমার পায়ে। আমিও পড়ে যেতে নিতেই কেউ একজন ধরে ফেললো আমায়। কয়েক সেকেন্ড পরই চেয়ারে বসিয়ে দেওয়া হলো আমায়। চোখ বন্ধ রেখেও বুঝতে পারছি সবাই ঘিরে রেখেছে আমায়। চারপাশের শব্দগুলোও কানে আসছে স্পষ্ট। কিন্তু চোখটা খোলারই শক্তি পাচ্ছি না আমি। পাশ থেকে কারো ফিসফিসানোর আওয়াজ এলো কানে। বুঝতে পারলাম মানুষটি শুভ্রর বড় খালা,
— এই শুভ্র? তোর বউ প্রেগনেন্ট নাকি রে? যেভাবে চকড়া চকড়ি পারছে আমার তো তাই মনে হয়।
বড় খালামণির কথায় শুভ্র যেনো চরম বিরক্ত এমন ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
— বড় খালামণি? এটা কি বাংলা সিনেমা পেয়েছো নাকি? মাথা চক্কর দিলেই প্রেগনেন্ট! আজাইরা। মানুষের বিভিন্ন কারণে মাথা চক্কর দিতে পারে। তাই আজগুবি চিন্তা বাদ দাও তো…বাবা? ডক্টর আংকেলকে একটু আসতে বলো না, প্লিজ।
এরপর আবারও নীরবতা। মাথাটা সোজা করে বসতে পারছি না আমি ঢলে পড়ছে বারবার। কোনোরকম চোখ পিটপিট করে তাকালাম আমি। ডানপাশে তাকিয়ে দেখলাম সাহেল আর অভ্র ভাই দাঁড়িয়ে আছেন আর বাম পাশে শুভ্র। শুভ্রকে দেখা মাত্রই শুভ্রর গায়ে ঢলে পড়লাম আমি। তারপর,আর কিছুই মনে নেই আমার। যখন চোখ খুলি তখন আমি বিছানায় শুয়ে, হাতে স্যালাইনের নল লাগানো। রুমের এখানে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে ডক্টরের কন্ঠে ডানদিকে ফিরে তাকালাম আমি,
— না শুভ্র। তেমন কোনো সমস্যা নেই। প্রেশাল ফল করার জন্যই সেন্স হারিয়েছিলো। বাচ্চা একটা মেয়ের প্রেশার এতো লো হয়ে গেলো কিভাবে? খাওয়া-দাওয়া করে না নাকি? শরীরও বেশ দুর্বল। খাওয়া-দাওয়ার দিকে নজর দিও। মেডিসিনের মাঝে শুধু দুটো টেবলেট দিচ্ছি একটা প্রেশারের আরেকটা খাবারের রুচি হওয়ার জন্য।
কথাগুলো বলেই ফিরে তাকালেন উনি। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন,
— কি মামনি? উঠে গেছো? কেমন লাগছে এখন?
উত্তরে মিষ্টি করে হাসলাম আমি। ডক্টর কোনো একটা আর্জেন্ট কাজে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন৷ বাকি সবাই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। রুমের এক কোনে বাবা, মা আর ভাইয়াকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। নীরবতা ভেঙে আমার পাশে বসেই ধমকে উঠলেন শুভ্র।
— দেই একটা কানের নিচে লাগিয়ে? দিবো? বেয়াদপ মেয়ে। বেশি আদর দিয়ে ফেলছি তাই কথা গায়ে লাগে না। এখন থেকে নো আদর শুধু মাইর চলবে।
উনার কথায় অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আমি। সবার সামনে কিভাবে বকছেন আমায়। বিছানার এককোণে সাহেল ভাইয়া দাঁড়িয়ে ছিলেন। শুভ্রর ধমকে আমতা আমতা করে বলে উঠলেন,
— আহ! শুভ্র, মেয়েটাকে এভাবে বকছিস কেন? এমনি অসুস্থ। বাদ দে না।
সাহেল ভাইয়ার কথায় তাল মিলিয়ে মামুও বলে উঠলেন,
— তাইতো শুভ্র। এভাবে বকছিস কেন ওকে? এই অসুস্থ অবস্থায় কেউ বকে?
— তোমরা চুপ করো বাবা। একটা কথাও বলবে না আজ। তোমাদের আস্কারা পেয়েই বিছানায় শুয়ে আছে আজ। সাহেল? খুব তো ওর সাইড নিয়ে কথা বলছিস, তোর কোনো ধারণা আছে কি করে ও? ভার্সিটিতে ক্লাস নিয়ে পুরো ভার্সিটি খুঁজে ওকে বের করে জোর করে ক্যান্টিনে নিয়ে খাওয়াতে হয়। আর যদি সেই টাইমে আমার ক্লাস থাকে তাহলে তো কথায় নেই। আমি ফোন দিয়ে ওকে খেতে যেতে বলি আর উনি? ফোনে ভদ্রভাবে বলে “হ্যা!খাবো।” এমন একটা ভাব যেনো এক্ষুনি খেতে বসে যাচ্ছে অথচ পরে দেখা যাবে খায়ই নি। আমি অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাতেও না খেয়েই ঘুম। আমি খেতে বললে সুন্দর করে বলেবে “আমি খেয়েছি।” অথচ সকালে উঠে শুনি বউ আমার রাতে খায় নি। তাহলে বল, রাগটা উঠবে না? অলওয়েজ বাচ্চামো…অলওয়েজ! বাচ্চার বাপ না হয়েও ফুপ্পির রেডিমেড বাচ্চা পালতেছি আমি, রিডিকিউলাস।
উনার কথায় রাগ স্পষ্ট। আর উনার রাগের তেজে সবাই নিস্তব্ধ।কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন উনি,
— ফুপ্পি? যাওয়ার সময় তোমার মেয়েকে সাথে করে নিয়ে যাবে। ওর এখানে থাকার কোনো দরকার নেই।
উনার কথায় মামু অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
— কি বলছিস শুভ্র?
— খুব সুন্দর একটা কথা বলছি। তোমার ভাগ্নীকে যেমন এনেছিলে ওমনি রেখে আসো। নয়তো আমাদের সবার একসাথে জেলের ঘানি টানতে হবে। কি দরকার? দরকার আছে কোনো? ফুপ্পি? যাওয়ার সময় ওকে নিয়ে যেও। একদম পার্মানেন্টলি নিয়ে যাবে।
উনার কথায় মিনমিন করে বলে উঠলাম,
— আমি যাবো না কোথাও।
— যাবো না বললে তো হবে না। যেতে হবে। মামুর বাড়ি আসছো থাকো বাট আমার রুমে থাকা চলবে না। এই মাধবী? রেহেলা?
উনার ডাকে মাধুবী আর রেহেলা দরজার ধার থেকে উঁকি দিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বলে উঠলো,
— জি ছোট ভাইজান?
— তোমাদের ছোট ভাবির লাগেজ প্যাক করে দাও তো। উপস্ সরি, ছোটভাবি না আপামনি। আগে যেমন আপামনি ডাকতে এখনও আপামনিই ডাকবে। ভাবি ডাকার প্রয়োজন নেই। এখন ঝটপট তোমাদের আপামনির ব্যাগ গুছিয়ে দাও। সব জিনিস গোছাবে…ওর একটা জিনিসও আমার ঘরে যেনো না থাকে? বুঝেছো?
— আম্মু…..(কাঁদো কাঁদো হয়ে)
— আম্মু আম্মু করলে তো কিছু হবে না। ডিসিশন ফাইনাল। এই তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? গোছাও…
— মামু? দেখো আমায় তাড়িয়ে দিচ্ছে। আমি যাবো না….যাবো না।
— শুভ্র? বাড়াবাড়ি করছিস তুই? আমার মা টাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে চাইছিস। মাইর দিবো একটা।
— মারলে মারো৷ যা ইচ্ছে করো। যেতে তো ওকে হবেই। ফুপ্পি? নিয়ে যাবা না তোমার মেয়েকে?
— অবশ্যই নিয়ে যাবো। আমার ভাতিজাটাকে এভাবে জ্বালানোর পরও রেখে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আহা! ছেলেটার মুখ-চোখ শুকিয়ে গেছে একদম।
আম্মুর কথায় শক খাওয়ার মতো তাকিয়ে রইলাম আমি। এই তার মেয়ের প্রতি ভালোবাসা? মেয়ের থেকে ভাতিজার প্রতিই দরদ বেশি তার। এতো আদর তো কোলে নিয়ে বসে থাকলেই তো হয়। যত্তসব আদিক্ষেতা! মনে মনে একগাদা বকা দিয়ে কান্নামাখা গলায় বলে উঠলাম আমি,
— আম্মু তুমিও?
আম্মু কিছু বললেন না। মুখ টিপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। এবার কাঁদতে বসলাম আমি। সত্যিই কি আমাকে পাঠিয়ে দিবেন শুভ্র? আমি যখন মুখ ফুলিয়ে কাঁদছি তখনই একে একে বেরিয়ে গেলো সবাই। সবাই বেরিয়ে যেতেই দরজা লাগিয়ে হুট করেই আমার উপরে এসে পড়লেন শুভ্র। উনার এমন কান্ডে চমকে ওঠে কান্না থেমে গেলো মুহূর্তেই। চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছি আমি। উনি আধ শুয়া হয়ে হয়ে দুই বাহু চেপে ধরে বললেন,
— কাঁদো কেন? ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করো? কাজ হবে না।
আমি ঠোঁট উল্টিয়ে আগের মতোই চুপচাপ তাকিয়ে রইলাম উনার মুখে। আমাকে চুপ থাকতে দেখে হাতটা আরো জোড়ে চেপে ধরে ঠোঁটে ছোট্ট করে কামড় দিয়ে বলে উঠলেন,
— কথা বল নয়তো এক্ষুনি বাপের বাড়ি দিয়ে আসবো তোকে…কি দিয়ে আসবো?
— আমি যাবো না।
— যাবে না তো কথা শুনো না কেন আমার? আবার কাঁদছো কেন?
কথাটা বলে চোখের পাতায় চুমু দিয়ে দিলেন উনি। মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
— এই মেয়ে?কাঁদলেই পাঠিয়ে দিনো বাপের বাড়ি। আমার সামনে থাকলে কাঁদা যাবে না। বুঝো না কেন? ভালোবাসি তো..বুকে ব্যাথা লাগে।
উনার কথায় মুচকি হাসলাম আমি। অভিমানী গলায় বলে উঠলাম,
— চিত্রার মুখে একটা তিল আছে,খেয়াল করেছেন?
— না তো। কেনো বলো তো।
— শ্রেয়ার মুখেও একটা তিল আছে। বলুন তো কোথায়?
— আজব তো৷ আমি কিভাবে জানবো?
— জানবেন না কেন? সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করে দেখতে পান না?
— আমি ওভাবে খেয়াল করেছি নাকি? তুমি হঠাৎ তিল নিয়ে পড়লে কেন বলো তো?
— তাদের খেয়াল না করলে নাবিলা আপুকে কেন খেয়াল করেছেন শুনি? কাহিনী কি?তলে তলে কি চলে হুম?? সরুন… সরুন আমার উপর থেকে।
আমার কথায় হাসলেন উনি। গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলেন,
— সরি! নাবিলাকে খেয়াল করার কারণ হলো সাহেল। নাবিলার আচরণগুলো তোমার সাথে মেলাচ্ছিলাম জাস্ট। আর তাছাড়া তিলটা আমি ইচ্ছে করে দেখি নি। তোমার সামনে এসে যখন দাঁড়ালো তখন সরাসরিই তিলটাই চোখে পড়ে গিয়েছিলো আমার। ব্যস এটুকুই। তো? আমার মিসেস এই জন্যই মন খারাপ রেখেছিলো বুঝি? পাগলি!(নাক টেনে)
#চলবে….
(ছোট হওয়ার জন্য,সরি। গ্রামে আছি তো, ব্যাপক ঝামেলায় আছি। পোলাপানে ঘিরে রাখে অলওয়েজ। লেখতে বসার টাইমই পাচ্ছি না।)