তোকে চাই❤(সিজন-২)পর্ব:৪+৫+৬+৭
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 4
.
.
?
.
গাড়িতে বসে আছি।পাশে বসে আছেন ওই লোকটি অর্থাৎ মামু।।উদ্দেশ্য আমাদের বাসা।।আমাদের বাসায় কি এমন আছে যার জন্য উনি ইম্পোর্টেন্ট একটা মিটিং ক্যান্সেল করে দিলেন সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।।উনার ব্যবহারগুলোও আমার কাছে বেশ অদ্ভূত ঠেকছে।।কিন্তু কেন যেনো খারাপ লাগছে না।।উনি একহাতে আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন।যেনো ছাড়লেই হারিয়ে যাবো।আমার অস্বস্তি লাগার কথা।এমন একটা পরিস্থিতিতে যেকোনো মেয়েরই অস্বস্তি লাগবে বলে আমার ধারনা।।উনিশ বছরের কোনো যুবতিকে কোনো অপরিচিত ভদ্রলোক জড়িয়ে ধরে বসে আছেন তা নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর।। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো আমার অস্বস্তি লাগছে না।।আমার কাছে মনে হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক।।উনার জড়িয়ে ধরার মধ্যে অন্যরকম একটা স্নেহ খুঁজে পাচ্ছি যেমনটা বাবার ছোঁয়ায় পাই।।কিছুক্ষণ পর উনি নড়েচড়ে বলে উঠলেন-
.
রোদ মা?তোকে তুই করে বলছি বলে কি তুই রাগ করছিস?
.
আমার রাগ করার উচিত হলেও কেনো যেনো এই মুহূর্তে রাগটা লাগছে না।।আপনি আমায় তুই করেই বলতে পারেন।(মুচকি হেসে)
.
আপনি কি রে?তুমি করে বল।।নয়তো কেমন পর পর লাগে।।তুই জানিসও না তুই আমার জন্য কতোটা ইম্পোর্টেন্ট।
.
আমি মামুর মুখের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম।।উনার চোখ দুটো বলছে উনি সত্যি বলছেন কিন্তু এই অল্প সময়েই কেউ কারো কাছে ইম্পোর্টেন্ট হয়ে যেতে পারে নাকি?আজব তো!! উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে পকেট থেকে ওয়ালেটটা বের করে তার থেকে একটা পুরোনো ফটো বের করে আমার সামনে ধরলেন।আমি ফটোটা হাতে নিয়ে একটু খেয়াল করে দেখেই অবাক হলাম,ওমা এটা আমি,,,কিন্তু আমি বুঝতে পারছি এটা আমি না।।মেয়েটার চেহারাটা ঠিক আমার মতো কিন্তু স্টাইল আর ড্রেসাপ দেখে বুঝা যাচ্ছে ওটা আমি নই।।অনেক বছর পুরোনো একটা ছবি।।আমি অবাক চোখে মামুর দিকে তাকাতেই উনি বলে উঠলেন….
.
বুঝলি না তো?ওটা তোর মা।তোর বয়সে ঠিক তোর মতোই ছিলো।।এটা যখন ওকে প্রথম দিন কলেজে ভর্তি করে দিই সেদিনকার ছবি।।পাশেরটা তোর বাবা রাদিব আহমেদ।।
.
তুমি আমার বাবাকে চিনো?(অবাক চোখে)
.
হ্যা চিনি।আমার বন্ধু ছিলো ও।অরিকে ভালোবাসতো। তোর মা-বাবার লাভ ম্যারেজ হয় জানিস তো?
.
হুম(মাথা নেড়ে)
.
বাবা অরির বিয়েটা অন্য জায়গায় ঠিক করে ফেলে। রাবিদ তখন মাত্র মাস্টার্স করছে আর অরি অনার্স ফার্স্ট ইয়ার।বেকার ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিবে না বাবা।এদিকে অরি মুখ কালো করে বসে আছে।।আর যায় হোক আমি ওর মুখ ভার দেখতে পারতাম না কখনো।।ওর চোখের এক ফোঁটা জলেও আমার আত্মাটা ফেঁটে যেতো।।মা ছাড়া বোনটাকে ছোট থেকেই বুকে আগলে রেখেছিলাম।এদিকে বন্ধুও আমার মর মর অবস্থা আমার বোনকে না পেলে সে দেবদাস হবে বলে ডিসিশান নিয়েছে নয়তো হবে চিরকুমার।।শেষমেষ বিয়ের দিন বরের গাড়ি রাস্তায় আসতেই কয়েকজন বন্ধু মিলে তাকে বেদরাম পেটালাম।।আমিও বেশ ব্যাথা পেয়েছিলাম কিন্তু তার তোয়াক্কা করি নি।।আমার উদ্দেশ্য ছিলো বিয়েটা লোক সম্মুখে কিছুটা সিনক্রিয়েট করে ভেঙে দেওয়া।।তখন বাবার কাছে অন্যকোনো অপশন থাকবে না মানসম্মান বাঁচাতে মেয়েকে যেকোনো ছেলের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত থাকবেন উনি আর প্ল্যানটা কাজেও লেগে গেলো।।তোর বাবার সাথে বিয়েটা সেদিনই হয়ে গেলো।।আমি জানতাম এতোকিছুর পর বাবা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন।।মানুষিক ভাবে আমি প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলাম।।বাবা বলেছিলো আমি নাকি আমার বোনের সুখ চাই না।।আমার জন্য আমার বোনটা নদীতে ভেসে গেলো।।সেদিন যদি বাবাকে বুকের শান্তিটা দেখাতে পারতাম!! বিয়ের আগের দিন বোনটা আমার কান্নামাখা চোখে বলেছিলো…”ভাইয়া?” তাতেই বুঝেছিলাম ওর কি চায়।।বোনের সুখের কাছে আমার এসব ত্যাগ বড্ড ছোট।।কিন্তু আমার পিচ্চি বোনটাকে তা বুঝাতে পারি নি আমি।।বাড়ির গেইটে পা রাখতেই ভাইয়া বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলো সে।।পেছনে তাকিয়ে দেখি ঞ্জান হারিয়েছে আর রাবিদ ওকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে।রাবিদের চোখেও জল ছিলো কৃতজ্ঞতার,, আর আমার চোখে ছিলো শান্তি।।বাবার মধ্যে যে চিন্তা বাসা বেঁধেছিলো তা আমার মাঝে ছিলো না।।আমার বিশ্বাস ছিলো রাবিদ অরিকে নিজের সবটা দিয়ে ভালো রাখবে।।সেই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই চলে আসি।।আজ ২৮ টা বছর কেটে গেছে ভাবতেই অবাক লাগে(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
.
ওহ মাই গড।।তারমানে তুমি সত্যি সত্যি আমার মামু??এটা তো পুরোই সিনেমার কাহিনী হয়ে গেলো।।এজন্যই হয়তো বাবা-মার ম্যারেজ ডে কখনো সেলিব্রিট করা হয় না।।এই দিনটাতে মার রুমের দরজা বন্ধ থাকে।।বাবারও প্রবেশ অধিকার থাকে না সেইদিন।।আমি খুবই এক্সাইটেড মামু।।মা কতো বড় সারপ্রাইজ পাবে ভাবতে পারছো??এখন না আমার ওই সাদা বিলাইকে ধরে একটা টাইট কিস করে দিতে ইচ্ছে করছে।।(এক্সাইটেড হয়ে)
.
আমার কথায় মামু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো-“সাদা বিলাই?এটা কি তোর পালিত বিড়াল??” মামুর কথায় আমি হুহা করে হেসে উঠলাম মামু তৃপ্তিমাখা চোখে তাকিয়ে আছে।। আমি কোনোরকম হাসি থামিয়ে বললাম….”না গো মামু ওটা কোনো বিড়াল নয় মানুষ।।আমাদের ভার্সিটির বড় ভাইয়া।। উনার সাথে একটু উলটপালট কিছু হওয়ায় ক্লাস রেখেই চলে এসেছি আর তাইতো তোমার সাথে দেখা।তাহলে ক্রেডিট টা তো উনাকেই দেওয়া উচিত তাই না??
.
তা ঠিক।কিন্তু তুই তাকে সাদা বিলাই ডাকার কারণ কি??চোখ-মুখে কি একটা বিলাই বিলাই ভাব আছে নাকি??
.
মামুর কথায় আবারও হেসে উঠলাম আমি।।এখন কেন জানি মনে হচ্ছে মামু আমার বেস্টফ্রেন্ড হতে বেশি দেরি হবে না।।হাসিটা ঠোঁটে ঝুলিয়েই বলে উঠলাম…
.
ছেলেটা বেশ কিউট।।বলতে গেলে একদম স্টবেরি আইসক্রিমের মতো।। ছেলেটা আমার থেকেও দ্বিগুন ফর্সা।।আর সাদা বিড়ালগুলো কত্তো কিউট হয়।।সেও যেহেতু কিউট + সাদা।।তাই নাম দিয়েছি সাদা বিলাই।।লজিকটা বুঝলে মামু??
.
হুমম এবার বুঝলাম।।ওই ছেলের প্রেমে পড়েছিস নাকি??(মুচকি হেসে)
.
মামু?কি যে বলো না?আচ্ছা আগে বলো তো, তখন তুমি ওভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে কেন??যখন আমি হাসছিলাম।
.
তুই ঠিক তোর মার মতো।।তাই তোর সবকিছুর মাঝেই আমি অরিকে খুঁজে পাই।।কতোদিন ওকে দেখি না তাই দেখছিলাম।।মন ভরে দেখছিলাম।।(প্রশান্তির হাসি দিয়ে)
.
.
?
.
.
দুই ঘন্টা যাবৎ বাসায় এসেছি।।এই দুইঘন্টায় মা দুইবার সেন্স হারিয়েছে।।দরজা খুলে মামুকে দেখেই একবার সেন্সলেস হয়েছে তো একবার মামুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে।।এখনও মা মামুর বুকে গুটিশুটি মেরে চুপটি করে বসে আছে।।আর মামুও কি সুন্দর দু’হাতে আগলে রেখেছে মাকে।।যেনো পিচ্চি একটা বাচ্চা ভয় পেয়েছে আর তার ভাই তাকে বুকে জরিয়ে সেই ভয় থেকে আগলে রেখেছে।।মা কে এই মুহূর্তে কি কিউটই না লাগছে,,ইশশশ আমার মা এত্তো কিউট??সবাই খাবার খাচ্ছিলাম মামু আজ মাকে খাইয়ে দিচ্ছে।।আগে নাকি রোজ মামুই খাইয়ে দিতো মাকে।।মা হঠাৎই বলে উঠলো…
.
ভাইয়া?তুমি অনেক কিছু মিস করে ফেলেছো।।তোমার বোনের বড় হওয়াটা মিস করেছো।।ওকে মা হতে দেখতে মিস করেছো।।তোমার পিচ্চি বোন থেকে সংসারী হতে দেখাটা মিস করেছ।।
.
মামু আম্মুর কথায় মুচকি হেসে বলে উঠলেন…
.
তা করেছি।।কিন্তু সেসব পুষিয়ে নিতে পারবো বলে তেমন আপসোস হচ্ছে না।
.
মানে??(অবাক হয়ে)
.
ওই তো দেখ(আমাকে ইশারা করে) আমার ছোট অরি ওখানেই বসে আছে।।ওকে বড় হতে দেখবো এবার।।তোর যা যা মিস করেছি সবকিছু রোদকে দেখে পুষিয়ে নিবো।।ও যে ঠিক তোর মতো হয়েছে তা কি তুই জানিস??একদম এক,,কিভাবে সম্ভব?
.
আমার থেকেও মিষ্টি হয়েছে ও ভাইয়া।।
.
তা ঠিক।।রোদ মা,,এদিকে আয় আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি।।আর শোন…আমি যখনই এখানে আসবো তখনই তোকে খাইয়ে দিবো।।আয় আয়….
.
আমি উঠে যেতেই ভাইয়া নাকি সুরে বলে উঠলো…
.
মামু?আমি আর রুহি কি দোষ করেছি??
.
কিছু দোষ করো নি তোমরা কিন্তু বাবা রোদ যে আমার চোখের তারা সেটা আমি তোমাদের সান্ত্বনা দিতে গিয়েও অস্বীকার করতে পারবো না।।আমার বোনকে যা দিতে পারি না সব এনে দেবো ওকে,,সবকিছু।।
.
আমি খাচ্ছি আর ভাবছি বাহ! মার মতো হওয়ার কতো সুবিধা।।
.
.
?
.
.
ক্যান্টিনে বসে বাইরের দিকে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছি।।আসলে শুভ্র ভাইয়াকে খুঁজছি।।উনার ওই চুমু যে আমার জন্য লাকি চার্ম আগে জানলে প্রতিদিনই একটা করে চুমু খেয়ে যেতাম।।ছিহ্ ছিহ্ নির্লজ্জর মতো কি সব ভাবছি।।তবে হ্যা! উনাকে একটা কিউট থেংক্স তো দেওয়ায় যায় হাজার হলেও উনার জন্যই মামুকে পেলাম।।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম চিত্রা আমার দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে আছে।।ওর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে স্ট্রেট হয়ে বসে বলে উঠলাম….
.
এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??
.
আগে তুই বল যে,তুই এভাবে উঁকিঝুঁকি মারছিস কেন??তোর কি পেট খারাপ হয়েছে ওয়াশরুম যাবি নাকি কাউকে খুঁজছিস,,কোনটা?(ভ্রু কুচকে)
.
আব..ককাকে খুঁজবো?ভার্সিটি দেখছিলাম।।এনিওয়ে দোস্ত তুই কখনো চুমু থেরাপির কথা শুনেছিস??যে চুমু পেলেই সব ম্যাজিকের মতো হয়ে যায় দেটস টাইপ।।(ভ্রু নাচিয়ে)
.
পাগল হয়ে গেছিস তুই?এসব কি আজেবাজে বকছিস।।এমন কোনো থেরাপি হয় না।।তাহলে সব ছেলেরা চুমু থেরাপিস্টই হতো আর সুন্দরী সুন্দরী মেয়েদের ধরে চুমু দিয়ে দিতো আ…
.
চিত্রার কথার মাঝপথেই শুভ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম…ব্রাউন কালার একটা শার্ট,, ব্লু জিন্স।।ডানহাতে ঘড়ি। বামহাতে সিল্ক স্ট্রেট চুলগুলো ঠিক করতে করতে মাঠের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।।আশেপাশে উনার হারামি বন্ধুগুলোকে দেখতে না পেয়ে বেশ খুশি হলাম।।চিত্রাকে রেখেই ক্যান্টিন থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলাম।।চিত্রা যে হা করে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে তা আমি ওর দিকে না তাকিয়েই বুঝতে পারছি।।ও “হা ” করে থাকুক বা হা করে উল্টে পড়ে যাক তাতে আপাতত আমার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।।এই মুহূর্তে আমার একমাত্র মাথাব্যাথা হলো শুভ্র ভাইয়া।।দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে উনার সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাৎ হুট করে এভাবে উনার সামনে দাঁড়ানোতে উনি বেশ হকচকিয়ে গেলেন বলেই মনে হলো।। অবাক চোখে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলেন…
.
আর ইউ ওকে??(ভ্রু কুচঁকে)
.
ইইইয়াহহ(জোড়ে শ্বাস নিতে নিতে)
.
দেখে তো মনে হচ্ছে না।।তুমি এমন ভাবে হাঁপাচ্ছো দেখে মনে হচ্ছে কোনো কুকুর তাড়া করেছিলো।।এভাবে হাঁপাচ্ছো কেন??(অবাক হয়ে)
.
আপনার জন্য!!
.
এমন কিছু বলতে না চাইলেও ফট করে কথাটা বেরিয়ে গেলো মুখ থেকে আমার কথায় তিনি কিছুটা অপ্রস্তুত ফিল করলেন বলেই মনে হলো।।এদিকে ওদিক তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো…
.
আমার জন্য মানে??
.
ননা মমমানে…
.
কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না হঠাৎ করেই বলে উঠলাম,,”আপনার চুমুতে যে ম্যাজিক্যাল পাওয়ার আছে সেটা কি আপনি জানেন?” কথাটা বলেই মুখ চেপে ধরলাম।।ছি ছি কি বলে ফেললাম।।উনি হতভম্ব হয়ে বলে উঠলেন…”সরি??”
.
.
#চলবে?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 5
.
.
?
.
সরি?
.
মমমাননে… এএএক্চুয়েলি আআমি না সব গুলিয়ে ফেলছি।।যা ববলতে চাচ্ছি না ততাই বলে ফেলছি।।আর যা বলতে চাচ্ছি সেগুলো সেগুলো কি বলবো ভুলে গেছি(অসহায় মুখ করে)
.
তা তোমার কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে।।নয়তো এমন উদ্ভট সব কথাবার্তা কোনো স্বাভাবিক সেন্সের মানুষের দ্বারা পসিবল না।চুমু?লাইক সিরিয়াসলি?(বিরবির করে)
.
জি কিছু বললেন?
.
নাহ.. বলছিলাম এভাবে হাঁপাতে হাঁপাতে এলে কিছু বলবে??(মুচকি হেসে)
.
জি মানে… থেংকিউ!!
.
কেনো?(ভ্রু কুঁচকে) চুমু দেওয়ার জন্য?(শয়তানী হাসি দিয়ে)
.
উনার লাস্ট কথায় আমি একদম থতমত খেয়ে গেলাম।ব্যাটা তো দেখি মিসকা শয়তান ইচ্ছে করে আমায় লজ্জায় ফেলতে চাইছে।।অসভ্য একটা।।আমি কোনোরকম মুখ কাঁচুমাচু করে বলে উঠলাম।।
.
না না… আপনার জন্য আমার ২৮ বছরের হারিয়ে যাওয়া মামাকে খুঁজে পেয়েছি।।সো থেংক্স।
.
তোমার মামার বয়স মাত্র ২৮?(অবাক চোখে)
.
এমা ২৮ হতে যাবে কেন??৫০ /৫৫ বছর হবে।।
.
তাহলে ২৮ বছরের মামা বলছো কেন??এনিওয়ে আমার জানা মতে আমি কোনো মামা টামাকে চিনি না তাহলে আমার মাধ্যমে পেলে কিভাবে??খুবই অদ্ভুত বিষয়।।নাকি চুমুর জোড়ে পেয়ে গেছো??কোনটা??(ভ্রু নাচিয়ে,,মুখ টিপে হেসে)
.
উনার কথা শুনে আমি বিষম খেলাম।।ব্যাটা লুইচ্চা লজ্জা শরমের বালাই নেই এরমধ্যে।।কেমন বেশরমের মতো কথা বলছে।।লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে আমার।।কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।।কি বলা যায়,,কি বলা যায়,,এমনটায় ভাবছিলাম ঠিক তখনই উনি বলে উঠলেন….
.
তো পিচ্চি??পথটা কি ছাড়বে? আমার তো যেতে হবে খুকি নাকি আরেকটা চুমু চায়??চাইলে আসো দিয়ে দিই তবু পথ ছাড়ো।।
.
কথাটা বলে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই দিলাম এক দৌড়।।আল্লাহ বাঁচিয়েছে।।কি ভয়ঙ্কর ছেলেরে বাবা!!প্রথমে ভেবেছিলাম ব্যাটা একটু লাজুক টাইপ হবে।।কিন্তু এর মধ্যে লাজুকলতার শাখা পর্যন্তও নেই।।বেশরমের কোনো এওয়ার্ড থাকলে এই ব্যাটাই ফার্স্ট প্রাইজ পেতো।।সুন্দর ছেলেদের যে ক্যারেক্টারে সমস্যা থাকে সেটা আজ প্রোভড।।এই চিত্রার বাচ্চাকে দেখানো উচিত ছিলো এর লুইচ্চামো।।শুভ্র ভাইয়া,,শুভ্র ভাইয়া করে তো অঞ্জান।।হুহ বদ মেয়ে।।নিজের মনে বিরবির করে হাটছিলাম তখনই পেছন থেকে কেউ একজন বলে উঠলো…
.
কেমন আছো সানশাইন??
.
বিরক্তি নিয়ে পেছন ফিরে তাকালাম।।এই ব্যাটায় আবার কই থেকে এলো আল্লাহ জানে।।ইচ্ছে করছে ঘুষি দিয়ে উড়িয়ে দিই।ব্যাটা আমি কেমন আছি তোকে কেন বলতে যাবো??তোর বন্ধু তো এখনই আমার আত্মা উড়িয়ে দিয়েছিলো।।এখন আরেকজন আসছে ম্যা ম্যা করতে।।কোনোরকম মনের বিরক্তি দমন করে মুখটা হাসি হাসি করে বলে উঠলাম…
.
আলহামদুলিল্লাহ সুবহানাল্লাহ ভালো আছি।।আপনি ভালো আছেন তো ভাইয়া??
.
হ্যা ভালো আছি।।এক্চুয়েলি তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।।(সাহেল)
.
বলে ফেলুন।(বিরক্তি নিয়ে)
.
এখানে?তারচেয়ে ক্যান্টিনে বসে বলি?(সাহেল)
.
জি না।।এখন ক্যান্টিনে বসা যাবে না।।আপনি বরং কথাটা কাল বলেন আজ আমি আসি।
.
কথাটা বলেই কেটে পড়লাম।।কে জানে এই হারামিগুলো মিলে আবার কোন প্ল্যান বানিয়েছে।।করিডোরে পা রাখতেই দেখি ছেলে মেয়েদের ভীর তারমধ্যে থেকে চিত্রা ছুটে এসে বললো।।
.
দোস্ত?ওরিন্টেশনে ফাস্ট ইয়ারদেরও পার্ফোম করতে হবে।।নোটিশ বোর্ডে যার যার ক্যাটাগরি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।।নিজেরে সিলেক্ট করার কোনো চান্স নেই।।আমাকে গানের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে আর তুই নাচে।।(মুখ কাচুমাচু করে)
.
কিহহহহ্(চিৎকার করে)
.
চিত্রার কথা শুনে দিলাম এক চিৎকার সবাই চমকে আমাদের দিকে তাকালো।।কিন্তু সেদিকে আমার খেয়াল নেই।।ওর কথায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো আমার।।বলে কি?আমি আর নাচ?ইম্পোসিবল!! এই ভার্সিটিটাই আমার জন্য অলক্ষুণে সব উলটপালট হচ্ছে এখানে এডমিট হওয়ার পর থেকে।।চিত্রা আবারও বলে উঠলো….
.
আমার রিহার্সাল কাল থেকে আর তোরটা আজ থেকেই।।আধাঘন্টা পরই তোর রিহার্সাল অডিটরিয়ামে চলে যা।।শুভ্র ভাইয়ার পুরো গ্যাং ই নাচের ক্যাটাগরিতে আছে।।
.
চিত্রার কথায় গলা শুকিয়ে গেল আমার।।আবার সেই শুভ্র ভাইয়া।।উফফ কি ঝামেলা রে বাবা!! এই বুড়ো বুড়ো ছেলে নাচবে নাকি??কি আশ্চর্যের ব্যাপার।
.
আচ্ছা উনারে নাচবে?
.
না হয়তো ওরা শুধু রিহার্সাল করাবে।।একটা দুটো নাচে থাকলেও থাকতে পারে ঠিক বলতে পারছি না।।তো তুই যা আমি বরং বাসায় যাই।। অল দ্যা বেস্ট বেস্টি।
.
চিত্রা দাঁত কেলিয়ে চলে গেলো।।ওর দাঁত কেলানোর কোনো কারনই আমি খুঁজে পেলাম না।।খুঁজার চেষ্টাও করলাম না।।একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অডিটোরিয়ামের দিকে হাঁটা দিলাম কথায় আছে না?যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।।তিনতলায় অডিটোরিয়াম।। দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিতেই শুভ্র ভাইয়াকে দেখতে পেলাম।। শুভ্র ভাইয়ারা সব ফ্রেন্ড মিলে আড্ডা দিচ্ছেন।কিছু জুনিয়রও আছে ওরা ডান্স প্রেকটিস করছে।।এদের সাথে আমার ডান্স করতে হবে ভাবতেই বিরক্ত লাগছে।।সব ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে ভেতরে ঢুকে টেবিলের উপর ব্যাগটা রাখতেই পেছন থেকে শুভ্র ভাইয়া বলে উঠলো…
.
এই মেয়ে তুমি এখানে কেন?(ভ্রু কুচঁকে)
.
শুভ্র ভাইয়ার কথায় পেছন ফিরে বলে উঠলাম-
.
ডান্স প্রেকটিস করতে আসেছি ভাইয়া।।
.
ডান্স??ডান্সের “ডি” জানো যে ডান্স করতে আসছো??
.
কি বলতে চান আপনি??
.
জাস্ট একটা কথায় বলতে চাই,, গেট লস্ট।।সাব্বির?কিসব ফাউল পোলাপানদের সিলেক্ট করেছিস??তোদের দিয়ে আসলেই কিছু হবে না।।অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব আমাদের উপর আর তুই কি চাচ্ছিস এদের সিলেক্ট করে আমার ইমেজ নষ্ট হোক??(রাগী গলায়)
.
শুভ্র ভাইয়া যে আমাকে অপমান করছে তা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।।উনার প্রত্যেকটা কথায় মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার।।খাটাস একটা!!নিজেকে অনেক শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে বলেই উঠলাম-
.
এইযে মিস্টার নিজেকে কি মনে করেন হ্যা?? কারো এভিলিটি না জেনে কথা শুনানো কোনো ভদ্রলোকের কাজ নয়।।সো ডোন্ট আন্ডারেস্টিমেট মি।।(রাগী চোখে)
.
ওহ রিয়েলি?এক্চুয়েলি আমি তোমার সাথে কোনো কথায় বলতে চাচ্ছি না।।জাস্ট গো বেক অন ইউর পজিশন।।
.
রাগে গা জ্বলছে আমার।।আমাকে পজিশান দেখাচ্ছে।।ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট হয়ে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি??বললেই হলো গো বেক??ডান্স তো আমি করবোই।।আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাহা নামের মেয়েটা এসে গাল চেপে ধরলো আমার।।মনে হচ্ছিলো গালের হারটাই ভেঙে ফেলতে চাইছে এই মেয়ে।।এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না।।মেয়েটার হাতটা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলাম-
.
ডোন্ট টাচ মি…. নয়তো হাতটা কেটে রেখে দিবো।।এন্ড মিষ্টার সাদা বিলাই… ভার্সিটি কি আপনার শশুড়ের নাকি??যে যা বলবেন তাই হবে?যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি হয়েছি এখানে কারো দয়ায় নয়।।ভার্সিটির সব কারিকোলামে পার্টিসিপেট করার অধিকার আমার আছে সো মিষ্টার শুভ্র আবরার অর আবরার শুভ্র হোয়াটএভার,,এটাকে নিজের শশুড়ের প্রোপার্টি ভাববেন না মাইন্ড ইট(চোখ রাঙিয়ে)
.
তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলার?আমি যখন বলেছি তুমি রিজেক্টেট দেট মিনস্ তুমি রিজেক্টেট।।
.
শুভ্র ভাইয়া যদি ভালোভাবে বলতো তাহলে হয়তো খুশি মনে সরে আসতাম বাট ব্যাটার এই এটিটিউট দেখার পর পৃথিবী উল্টে গেলেও ডান্স আমায় করতেই হবে নয়তো রাতে ঘুম হবে কি না সন্দেহ।।অবশেষে আমাদের গন্ডগোলের অবসান ঘটালেন রাজ্জাক স্যার।।আমার পার্ফোমেন্স দেখা হলো।।সবার পছন্দ হলেও আমায় রিজেক্ট হতে হলো শুভ্র ভাইয়ার জন্য।। তিনি স্যারকে বুঝালেন আমি সিনিয়রদের সাথে বেয়াদপি করেছি।।আর স্যারও নাচতে নাচতে উনার কথা বিশ্বাস করে আমাকে রিজেক্ট করে দিলেন।।।ইচ্ছে করছিলো এই স্যার সহ সব কটাকে উষ্টা মেরে উগান্ডা পাঠিয়ে দিই।।এই সাদা বিলাইকে তো আমি দেখে নিবো।।আমাকে অপমান করার মজা তুমি এবার হারে হারে টের পাবে বাচ্চু জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।।
.
.
?
.
.
চোখের পানি আটকে রাখার তুমুল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু সফল হতে পারছি বলে মনে হচ্ছে না।।আমার এই এক সমস্যা অতিরিক্ত রেগে গেলেই নাকের জল চোখের জল এক হয়ে যায়।।আমারও এখন ঠিক এক অবস্থা।।একহাতে চুল ঠিক করছি তো অন্যহাতে চোখের পানি মুছতে মুছতে করিডোর দিয়ে হাঁটছি উদ্দেশ্য বাসায় যাওয়া।।কিন্তু হঠাৎই একটা ফাঁকা ক্লাসের মাঝ থেকে একজোড়া হাত আমার চোখ মুখ চেপে ধরে ভেতরে টেনে নিলো আমায়।।আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে কিছু একটা দিয়ে আমার চোখ বেঁধে হাত দিয়ে আমার দুইহাত পেছনের দিকে চেপে ধরলো সে।চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার দেখছি।।নিজেকে ছাড়ানোর হাজারও চেষ্টা করে চলেছি ক্রমাগত কিন্তু সামনে দাঁড়ানো শক্তির সাথে পেড়ে উঠছি না।।বেশকিছুক্ষন এভাবে থাকার পর গালে কারো ঠোঁটের স্পর্শ পেলাম।।অজানা ভয়ে গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো আমার।।আবারও শুরু করলাম ছুটাছুটি কিন্তু সামনের শক্তিটাকে বিন্দুমাত্র নাড়াতে পারলাম বলে মনে হলো না।।সে নিজের মতোই গাল ছেড়ে নেমে এলো গলায়।।সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিলো আমার।।গলায় একটা কামড় দিয়েই হাতদুটো ছেড়ে দিলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি।।ভয়ে রীতিমতো কাঁপছিলাম আমি।।শুকনো গলায় বারবার ঢোক গিলছিলাম,,কাঁপা কাঁপা হাতে চোখের কাপড়টি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেখলাম একটা ফাঁকা ক্লাসে আমি একা দাঁড়িয়ে আছি।।দৌঁড়ে দরজার কাছে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিয়েও কাউকে খুঁজে পেলাম না।। রাগ, ভয়, বিরক্তি সব কিছু নিয়ে অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছিলো আমার।।হঠাৎ হাতের কাপড়টার উপর চোখ পড়লো।।সাদা কাপড়টাতে লাল কালিতে কিছু লেখা।।কৌতূহল নিয়ে কাপড়টা চোখের সামনে মেলে ধরতেই অবাক হলাম আমি….
.
#চলবে…?
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 6
.
.
?
.
“তোমার রাগী ফেসের ওই রক্তিম আভায় খুন হয়েছি আমি।তোমার গলার ওই কালো তিলটা বড্ড জ্বালায় আমায়।ওকে বলে দিও..আমাকে আবার এভাবে পুড়ালে আবারও শাস্তি পেতে হবে তাকে”- লেখাটা পড়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম আমি।কে হতে পারে এই ব্যক্তি?গলার চিনচিনে ব্যাথায় ভাবনা কাটলো আমার।।ভার্সিটির ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়াতেই চোখ আটকে গেলো আমার।।গলার নিচের দিকে কামড়টা স্পষ্ট।তিলের জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে গেছে একদম।।রাক্ষস নাকি লোকটা।একবার হাতে পেলে খুন করে ফেলবো তাকে।।ভীতুর ডিম কোথাকার।এখন এই দাগের কি করবো? বাসায় গেলেই কতো প্রশ্নে জর্জরিত হতে হবে আমায়।।ওড়নাটা গলায় ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে চুল গুলোও ছড়িয়ে দিলাম কাঁধে,, এখন শেষ রক্ষা হলেই হলো।
.
.
গেইটের কাছে আসতেই শুভ্র ভাইয়ার গাড়িটা চোখে পড়লো।সকালে একবার দেখেছিলাম উনাকে এই গাড়িতে।উনার কথা মনে পড়তেই রাগটা মাথায় চাড়া দিয়ে উঠলো।ব্যাগ থেকে পানি আর জুসের বোতল বের করে ড্রাইবিং সিটে ঢেলে দিলাম পুরোটা।। এখন বুঝো ঠেলা।।হুহ!!আমার সাথে পাঙ্গা!! কাজটা কমপ্লিট করে পিছে তাকিয়ে দেখি উনারা আসছেন কোনোরকম দৌড়ে সরে এলাম সেখান থেকে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে হাঁফাচ্ছি।হঠাৎ খেয়াল করলাম লাল রং এর একটা গাড়িতে বসে থাকা একটা ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।ব্যাটার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই মনে পড়লো…” ও মোর আল্লাহ্,, এই ছেলেই সেই কামড়ে দেওয়া ছেলে নয় তো?” ইচ্ছে তো করছিলো গিয়ে শার্টের কলার টা ধরে দিই কয়েকটা থাপ্পড় কিন্ত আশেপাশে মানুষ না থাকায় সাহসে কুলাতে পারলাম না।।যদি কিডন্যাপ করে নেই আমায়??মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে চারদিকে তাকাচ্ছিলাম যদি একটা রিক্সা পেয়ে যাই।।কিন্তু রোদ বিপদে পড়েছে আর রিক্সা এসে হাজির হয়েছে তা কখনোই পসিবল নয়।।আমার লাইফে রিক্সা হলো বাংলা সিনেমার পুলিশদের মতো ওলওয়েজ লেইট।।ছেলেটাকে আড়চোখে দেখলাম,, সে এখনো আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।।কি অসভ্য ছেলেরে বাবা।আর রিস্ক নেওয়া ঠিক হবে না ভেবে উল্টো পথে হাঁটা দিলাম।ওমা!!!একি?এই ছেলে তো আমার পেছন পেছনই গাড়ি ছুটিয়ে আসছে।।হাঁটার গতি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলাম কিন্তু কাজে লাগলো না গাড়িটা একদম আমার সামনে এসে থামলো।।কি করবো ভাবছিলাম,,আমার কাছে বডিস্প্রে টাইপও কিছু নেই যে নাটকের নায়িকার মতো চোখে মেরে দৌড়ে পালাব।।ছেলেটাকে দেখে হাই সোসাইটির বলেই মনে হচ্ছে যথেষ্ট স্মার্ট।ছেলেদের গায়ের রং যেমন হওয়া উচিত ঠিক তেমন তার গায়ের রং ওই সাদা বিলাইয়ের মতো সাদা তো একদম নয়,,উজ্জল শ্যামা।।মাথা ভর্তি হালকা কুঁকড়ানো চুল।।গায়ে ফুল ফরমাল গেটাপ।।এমন একটা ছেলে আমার পেছনে কেন লেগেছি বুঝতে পারছি না।।হাতটা ব্যাগে ঢুকিয়ে কিছু একটা খুঁজছি যদি বাঁচার উপায় কিছু একটা পেয়ে যাই….হঠাৎই হাতে বাজলো আপুর জন্য প্যাক করে নেওয়া কোল্ড কফি আর বার্গার।।এই দুটোই এবার শেষ ভরসা আমার।ছেলেটা হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই কোল্ড কফিটা ছুড়ে মারলাম তার মুখে।।আচমকা এমনটাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো সে।এই সুযোগে বার্ডারের চিজ সাথে থাকা ক্যাচাপ সবকিছুই ঘষে দিলাম তার মুখে।।ক্যাচাপটা যে উনার চোখে চলে গেছে বুঝতে পারলাম।।বারবার চোখ ডলছেন উনি।।উনার মুখটা চেনার উপায় নেই পুরাই জোকারদের মতো লাগছিলো তাকে।।ইচ্ছে করছিলো হুহা করে হেসে দিই।কিন্তু তার আগেই পেছন থেকে একজন বলে উঠলো…
.
এসব কি করছো সানশাইন?কে এটা?
.
পেছনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র, সাহেল ও সাব্বির ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।।সাহেল ভাইয়ার কথায় বিরক্তি হলেও বলে উঠলাম…
.
আমার বয়ফ্রেন্ড, কোনো সমস্যা??(মুচকি হেসে)
.
এটা সিরিয়াসলি তোমার বিএফ??(অবাক হয়ে)
.
জি হ্যা।আমি আপনাকে মিথ্যা কেন বলবো বলুন তো?
.
উনার মুখে এসব কি?কেউ বিএফের সাথে এমন বিহেভ করে নাকি??(ভ্রু কুচঁকে)
.
কেউ করে না আমি করি।আর এসবে ও অভ্যস্ত এটাই আমার ভালোবাসা।।এবার আপনারা যেতে পারেন।।
.
শুভ্র ভাইয়া ফোনে কার সার্ভিসের সাথে কথা বলছিলেন।।আমার মুখে “বয়ফ্রেন্ড” কথাটা শুনে ফোনটা কেটে পকেটে পুড়ে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে।।তারপর আমার দিকে ক্ষিপ্ত নজরে তাকিয়েই দ্রুতবেগে হাঁটা দিলো সেখান থেকে।।তারসাথে সাহেল আর সাব্বির ভাইয়াও দৌড় লাগালো।।এবার আমি ভ্রু কুঁচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম….
.
চোখ জ্বলছে আপনার?
.
হুম অঅননেক..
.
বেশ হয়েছে।আমাকে ফলো করতে আসলে এমনই হবে।অসভ্য ছেলে!!সাহস কি করে হয় আপনার আমাকে ফলো করার??(কমোড়ে হাত রেখে)
.
রোদ?আমি তোমায় ফলো করছিলাম না বোন।আমি অভ্র!!!
.
আপনি অভ্র হোন আর আকাশ পাতাল সব হোন আমার কোনো যায় আসে না।।আমার হাতে ক্যাচাপের বোতল থাকলে পুরোটাই ঢেলে দিতাম আপনার চোখে।।লুচু ছেলে কোথাকার!!!বাড়িতে মা-বোন নাই??
.
মা আছে।।বোন আছে একটা সে আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।।রোদ আমি তোমার মামুর ছেলে,,তোমার অভ্র ভাইয়া।।
.
কথাটা শুনেই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলাম আমি।।ওমা!! এটা মামুর ছেলে?সর্বনাশ করেছে।এখন কি হবে??
.
সসরি ভভাইয়া।আমি আসলে বুঝতে পারি নি।।সরি সরি।
.
সরি পরে বলো বোন আগে পানি দাও।চোখ জ্বলছে তো।
.
ওহ হ্যা।
.
ব্যাগ থেকে বোতল বের করেই হতাশ হলাম।বোতল খালি। সব তো শুভ্র ভাইয়ার গাড়িতে ঢেলে রেখে আসছি।।এখন উপায়??অভ্র ভাইয়ার হাত ধরে একটু হেঁটে চা এর দোকান থেকে পানি নিয়ে উনার হাতে দিলাম।।শেষমেষ উনার চোখ ঠিক হলো।।আমি অপরাধীর মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি।উনি চোখ মুছে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টিও হেসে বললো…
.
বোন রে তুমি তো খুবই ভয়ংকর।
.
সরি..(কিউট করে)আপনি আগে বললেই তো হতো যে, আপনি মামুর ছেলে!!না বলে ওভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন??(মুখ ফুলিয়ে)
.
আরে ওটা অনেক কাহিনী…বাবা আমাকে ফুপ্পির পিক দেখিয়ে বললো এটা দেখলেই নাকি আমি তোমাকে চিনে নিবো।।আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।।ত্রিশ বছর আগের পিক দেখে কাউকে কিভাবে চিনা সম্ভব তাও ছবিটা তার নিজের না তার মার….এটা নিয়ে বাজি ধরে অফিস থেকে সোজা এখানে চলে আসলাম।।এতোক্ষণ তোমাকে খেয়াল করে দেখছিলাম কিছু বলতাম তার আগেই তো এতো কান্ড করে ফেললে।।
.
আমি আবারও অপরাধী দৃষ্টিতে বললাম, “সরি” ভাইয়া মুচকি হেসে বলে উঠলেন-
.
ইটস ওকে…চলো এবার?
.
কোথায়?
.
তোমায় পৌছে দিই।তুমি নাকি আইসক্রিম অনেক পছন্দ করো,, বাবা বললো।।চলো তোমায় আইসক্রিম খাওয়াবো..
.
সত্যি?
.
হুমমম…
.
ওকে চলুন।।যাওয়ার সময় আপুর জন্য কোল্ড কফি আর বার্ডারও নিতে হবে।।আগের গুলো তো আপনার মুখে..(হাত দিয়ে ইশারা করে উনার মুখ দেখাতেই দুজনই ফিক করে হেসে দিলাম)
.
.
.
কাল রাতে অভ্র ভাইয়াকে নিয়ে আপুর সাথে এতো এতো গল্প করতে করতে ঘুমাতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে।।যার ফলাফল প্রথম ক্লাস মিস।।তাড়াহুড়ো করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম।। তিন তলায় লাইব্রেরী চারতলায় আমাদের ডিপার্টমেন্ট।। তিনতলা পেরিয়ে যখনই চারতলায় উঠবো কেউ একজন টেনে লাইব্রেরীর এক কোনার দেয়ালে চেপে দাঁড় করিয়ে দিলো আমায়।।লাইব্রেরি পুরোটা ফাঁকা আজ।গা ছমছম পরিবেশ।সামনের মানুষটা আরও বেশি ভয়ংকর।।
.
.
#চলবে?
#তোকে চাই❤
………(সিজন -২)
#writer : নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part: 7
.
.
?
.
ডান হাতটা আমার কাঁধের উপর দিয়ে সেল্ফের উপর রেখে বাম হাতটা পকেটে গুঁজে আমার দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছেন শুভ্র ভাইয়া।।চোখে রাগ স্পষ্ট।সাহস আমার অনেক আছে কিন্তু কোনো ছেলে এতেটা কাছে দাঁড়িয়ে থাকলে সাহসরাও হতাশ হতে বাধ্য ।কোন রকম ঢোক গিলে বলে উঠলাম….
.
আআপনি?
.
শুভ্র ভাইয়া ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন।।উনার এই হাসিতেই আমার কাঁপা কাপি অবস্থা।শুভ্র ভাইয়ার কাঁধের উপর দিয়ে চোখ যেতেই দেখি উনার পুরো গ্যাং পেছনে দাঁড়িয়ে।। উনি বাঁকা হাসি দিয়ে আমার সামনের একটা টেবিলে বসে চেয়ারে পা রাখলেন।সিল্ক চুলগুলোতে আঙ্গুল চালিয়ে ঠিক করে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন…
.
তোমার সাহস দেখে আমি হতবাক।আমার গাড়ি নষ্ট করার মতো দুঃসাহস তোমার হলো কি করে??
.
উনার কথায় কেঁপে উঠলাম,,এই যাহ!! বুঝে গেলো?কিন্তু কিভাবে বুঝলো??এরা কি এখন আমায় দুলাই দেবে নাকি?কাঁপা কাঁপা হাতে ওড়না ঠিক করতে করতে এদিক ওদিক তাকালাম..একটা ঢোক গিলে নিয়ে উনার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম…
.
আপনার গাড়ি আমি কেনো নষ্ট করতে যাবো.?আর আমি করেছি তার কোনো প্রমান আছে আপনার কাছে??
.
আমার কথায় হুহা করে হেসে উঠলেন উনি।আবারও আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন…
.
তোমার কি মনে হয়?আমি পলিটিক্যাল লিডার হয়েছি এমনি এমনি?তোমার এই ছোট খাটো কূটনীতি আমার জন্য দুধ ভাত।।গেইটের পাশে যে একটা সিসি টিভি ক্যামেরা আছে খেয়াল করেছো??(ভ্রু নাচিয়ে,শয়তানী হাসি দিয়ে)
.
উনার কথার কোনো উত্তর আমার কাছে নেই।।আমি যে এভাবে ফেঁসে যাবো ভাবতেও পারি নি।তবুও জোড় গলায় বলার চেষ্টা করলাম….
.
দদদেখুন…
.
উনি হঠাৎ আরো একটু এগিয়ে এসে মুখের সামনে মুখ এনে বলে উঠলেন, “হোয়াট?” উনার এভাবে কাছে আসায় ভয় পেয়ে গেলেও একটা বিষয়ে বেশ অবাক হলাম আমি। উনি আমার এতোটা কাছে দাঁড়িয়ে থেকেও একটাবারও আমায় টাচ করেন নি।।উনার হাতের একটু স্পর্শও আমার গায়ে লাগছে না।।উনি ফু দিয়ে আমার সামনের চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে আবারও চেয়ারে বসে পড়লেন।।ঠোঁটে ভয়ংকর হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলেন…
.
তোমাকে খুব কঠিন শাস্তি পেতে হবে রোদেলা।আমার সাথে পাঙ্গা নিতে আসলে