তোকে চাই❤পর্ব:৬+৭
#writer: রোদেলা❤
#part:6
।
।
উনার কথাটা শুনে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।।যে মানুষটা আমাকে এক মিনিটের জন্য সহ্য করতে পারে না সে কিনা আমাকে তার সাথে ঘুরতে যেতে বলছে,,,ব্যাপারটা হজম করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে,,,,
।
যাবা রোদ???প্লিজজ,,,আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে রোদ,,,(করুন চোখে)
।
উনার কথায় কি রিয়েকশন দিবো বুঝতে পারছি না।।মস্তিষ্ক বলছে কোথাও গন্ডগোল আছে,,,নো রোদ ডোন্ট গো।।।কিন্তু মনটা তো নাছোড়বান্দা,,,তাই মনটাকে জয়ী করে রাজি হয়েই গেলাম।।।।
।
গাড়িতে বসে আছি আর উনি ড্রাইভ করছেন।জানি না কোথায় যাচ্ছি,,,কেনো যাচ্ছি?মনের মধ্যে নানা কথা উঁকি দিচ্ছে।।আচ্ছা,, উনি যদি নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে আমাকে মেরে ফেলেন??এসব ভেবে ভয়ে কেঁপে উঠছি কিন্তু ওই যে মন,,যে সবর্দা মস্তিষ্কের বিপরীতে হাঁটে সে বড্ড নিশ্চিন্তে বসে আছে।।কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনার সাথে থাকলে কোনো বিপদ আমায় ছুঁতেই পারবে না।।হঠাৎ করে ব্রেক কষাতে ভাবনার সুতো কাটলো।।উনি আমাকে নামতে বলে সামনের দিকে চলে গেলেন।।।একটা নির্জন জায়গায় গাড়ি থামিয়েছেন তিনি।।পরিবেশটাতে বেশ শান্তি শান্তি ভাব আছে,,,,মন ভালো হয়ে যাবার মতো পরিবেশ।।উনার দিকে এগিয়ে গেলাম,,, ঘাসের উপর মাথা নিচু করে বসে আছেন তিনি।।।একদিনেই মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।।বড্ড মায়া লাগছে,,,,মনে হচ্ছে উনি ভেতরে ভেতরে গুমরে মরছেন।।জানি না কি ভেবে হঠাৎ উনার কাঁধে হাত রাখলাম।।তিনি যদি একঝটকায় আমার হাতটা কাঁধ থেকে সরিয়ে দিতেন তাহলে হয়তো তা আমার জন্য স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হতো,, কিন্তু তিনি যা করলেন তার জন্য আমি কোনো কালেই প্রস্তুত ছিলাম না।।।উনার কাঁধে হাত রাখতেই উনি বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে উঠলেন।।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।।এমন কিছু হতে পারে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি।।এই মানুষটাকে হাসতে দেখেছি,,রাগতে দেখেছি,,ধমকাতে দেখেছি কিন্তু কাঁদতে?? দেখি নি কখনো।।এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়ি নি,,কি বলে সান্ত্বনা দেওয়া যেতে পারে তাও জানা নেই,,,,তারউপর উনার এমন অদ্ভূত বিহেভিয়ারের কারণটাও জানি না,,,,তাই চুপ করে রইলাম,,কিছু বললাম না।।এই অসীম নীরবতায় শুধু উনার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে,,,আমার ভেতরটাও দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,,হঠাৎ উনি আমার হাত উনার বুকে রেখে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলেন,,,
।
এইখানটাই খুব কষ্ট হচ্ছে রোদ,,,আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না রোদ,,,আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।।বড্ড ভালোবাসি আমি নীলিকে বড্ড ভালোবাসি।।।ওকে ছাড়া আমি বেঁচে থাকতে পারছি না,,,,মরে যাচ্ছি আমি,,মরে যাচ্ছি।।(অঝোরে কাদঁছেন তিনি)জানো রোদ??ভালোবাসার পাল্লায় আমি সবসময় নীলির কাছে হেরে যেতাম।।আমার থেকেও বেশি ভালোবাসতো ও আমায়,,,তবু ধরে রাখতে পারলাম না,,,দেখো এই হাতটা আজ ফাঁকা,,,ও বলছিল কখনো ছাড়ঁবে না এই হাত কিন্তু ও কথা রাখে নি,,,ধোঁকা দিয়েছে আমায়,,,ধোঁকা,,,,,
।
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না,,,,উনার কষ্টগুলো আজ বেরিয়ে আসছে সাথে আমাকেও কাঁদিয়ে মারছে।।একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলেন তিনি,,,
।
ওকে আমার চাই রোদ,,,,এনে দিবে ওকে?দাও না এনে,,,প্লিজ এনে দাও না,,প্লিজজজজ(বাচ্চাদের মতো আবদার করে)
।
বাচ্চাদের মতো আবদার করে যাচ্ছেন তিনি,,,কিন্তু উনাকে আমি কি করে বুঝাবো,,এটা যে আমার সাধ্যের মধ্যে নেই।। আমিও অঝরে কেঁদে চলেছি,,উনার চোখের জল যে বড্ড পোড়াচ্ছে আমায়,,,,
।
রোদ,,এই রোদ,,,বলো এনে দিবা??কিছু বলছো না কেন???জানো ওর শেষ কথা কি ছিলো??ও বলেছিলো,,শুভি একটা মিষ্টি মেয়ে দেখে বিয়ে করে নেবে কথা দাও।।।ওর কথা আমি রেখেছি,,ওর পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করেছি।।।তোমাকে খুব ভালোবাসতো নীলি,,,সবসময় বলতো তোমার কাজিনটা বড্ড মিষ্টি শুভি।।।কিন্তু ও আমার কথা রাখেনি,,চলে গেছে,,আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।।।(হেঁচকি দিতে দিতে)আমি বড্ড বাজে রোদ,,,বড্ড বাজে।।।তুমি কাল ঠিকই বলেছিলে,,আমি খুব নিচ একটা মানুষ,, এতটাই নীচ যে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকেও ধরে রাখতে পারি নি।।।তোমার জীবনটাও নষ্ট করে দিয়েছি রোদ,,,সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছি,,,,আমি বাঁচতে চাই রোদ,,,,আমি নীলিকে চাই,,,নীলি,,কে,,,
।
বলতে বলতেই উনি আমার কাঁধে ঢলে পড়লেন,,,গাঁয়ে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে শরীরে পুড়ে যাচ্ছে।।অনেক ডাকার পরও যখন উনার সাড়া পেলাম না,,তখন আমি রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলাম,,,এই নির্জন জায়গায় আমি কার কাছে সাহায্য চাইবো??হঠাৎ ফোনে বেজে উঠলো,,স্কিনে ভাইয়ার নাম ভাসতেই জানে পানি এলো যেনো,,,,দ্রুত ফোন পিক করে,,,ভাইয়াকে উনার অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা বললাম,,,কিন্তু ঠিকানা??আমি তো নিজেই জানি না কোথায় আছি এই মুহূর্তে,, কি করবো এখন??আর কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা নেমে আসবে,,ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার।।ভাইয়া হঠাৎ বলে উঠলেন আমি যেনো ফোনের লোকেশন অন রাখি,,,উনারা ট্রেস করে চলে আসবেন।।কথাটা শুনে কিছুটা হলেও শান্তি পেলাম,,,একটা আশার কিরন উঁকি দিয়ে গেল মনে।।।উনার গাঁয়ে হাত দিয়ে দেখলাম,,জ্বর বাড়ছে।।নিজেই তো একটা বাচ্চা আমি,,, মাত্র ১৭ বছর বয়স,,কতই আর বড় হয়েছি??ভয়ে হাত পা কাঁপছে,,, চারপাশে কারো সাড়াশব্দ নেই।।এই সময় আমার সাথে খারাপ কিছু হয়ে গেলে??কে বাঁচাবে আমায়??তারওপর উনি।।কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।।উনার মাথায় পট্টি দেওয়া উচিত,,কিন্তু এখানে কিভাবে??গাড়ি চেক করে একটা ওয়াটার পট পেলাম,,তাতে পানিও ছিলো,,,কিন্তু কাপড়??বাংলা সিনেমার দরদী নায়িকা সাবানার মতো অনেক চেষ্টা করেও শাড়ির আঁচল ছিড়তে পারলাম না,,,,মেজাজটাই বিগরে গেলো,,, ধেৎ,, সামান্য একটা শাড়ির আঁচল ছিড়তে পারি না আমি??শুভ্র ঠিকই বলে আমি আসলেই একটা মগা।।শুভ্রর পাশে বসে একমনে এসব ভাবছিলাম,,,হঠাৎ কি যেনো ভেবে,,উনার পকেটে হাত দিলাম,,অনেক খুজেঁ একটা রুমালও পেলাম,,,ব্যস হয়ে গেলো।।।রুমাল ভিজিয়ে উনার কপালে রেখে,, উনার বলা কথাগুলোই ভাবছিলাম,,,একটা মানুষ এতটা ভালো কি করে বাসতে পারে??নীলিমা আপু বড্ড লাকি,,তাকে ভালোবাসার মতো একটা মানুষ আছে,,যে তাকে পাগলের মতো ভালবাসে।।নীলিমা আপু আর শুভ্রকে দেখে আমারও বড্ড ইচ্ছে হতো শুভ্র ভাইয়ার মতো আমাকেও কেউ এমন করেই যদি ভালোবাসতো।।কিন্তু কে জানতো,,,যে আমি শুভ্র ভাইয়াকেই পাবো,,,আর শুভ্র ভাইয়া হারাবে তার ভালোবাসাকে।।।নিয়তি এতো নিষ্ঠুর কেনো??আমার এখনো সেই দিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে,,,কতো হাসি-খুশি ছিলো সবাই।।কিন্তু একটা ঝড় এসে,,, আনন্দমাখা দিনগুলোকে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেলো,,,,স্বপ্নগুলোকে করে দিলো তছনছ,,,,কি ভয়ঙ্কর ছিলো সেই দিনটা,,,
।
ফ্ল্যাসব্যাক……
।
পরীক্ষা দিয়ে বের হতেই দেখি শুভ্র ভাইয়া গেটে দাঁড়িয়ে আছে।।উনাকে আমার কলেজের সামনে দেখে অবাক হলাম।।।উনি এখানে কেন???
।
#চলবে
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#তোকে চাই❤
#writer: রোদেলা❤
#part: 7
।
।
উনাকে আমার কলেজের সামনে দেখে অবাক হলাম,,,উনি এখানে কেন??কোনো কাজে এসেছেন কি??আমাকে দেখা মাত্রই উনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন।।আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।।।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।।উনাকে আমি কোনো কালেই বুঝতে পারি নি আর আজ কি বুঝবো,,,তাই নিজের মাথায় খিচুড়ি না পাকিয়ে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,
।
ভাইয়া??আমরা কোথায় যাচ্ছি???
।
………………………….….
।
ভাইয়া??বলুন না, কোথায় যাচ্ছি??আর কেনই বা যাচ্ছি??মা কি জানে??
।
………………………………….
।
পুরো রাস্তা আমি এমন করেই হাজারো প্রশ্ন করে গেছি,,আর উত্তর হিসেবে পেয়েছি একঝাঁক নিস্তব্ধতা।। প্রায় আধা ঘন্টা পর,, একটা প্রকান্ড বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে নেমে গেলেন উনি,,,যাওয়ার সময় শুধু বললেন,,, “চলো আমার সাথে”।।। আমি আর কি করতাম??বাধ্য মেয়ের মতো উনার সাথে বাড়িটাতে ঢুকলাম।।ড্রয়িংরুমের সোফায় কিছু ভাইয়া বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন।।আমরা ঢুকতেই একনজর তাকিয়ে আবার আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।।। আমি খুবই অস্বস্তি ফিল করছিলাম তবু শুভ্র ভাইয়ার পিছু পিছু সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলাম।।।শুভ্র ভাইয়া একটা রুমের দরজা খুলে আমাকে ভিতরে যেতে বললেন,,আমিও একরাশ ভয় নিয়ে রুমের ভিতরে পা রাখলাম।।।রুমে ডুকে অবাক হওয়ার মাত্রা যেনো আরো বেড়ে গেলো।।বেডের উপর বিয়ের জন্য মেয়েদের যা যা লাগে প্রায় সব জিনিসই সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।।আচ্ছা শুভ্র ভাইয়া আমাকে কারো সাথে বিয়ে টিয়ে দিয়ে দেবে না তে??ব্যাপারটা চিন্তা করতেই ভয়ে শরীর কাঁপতে লাগলো।।কি বলবো কিছু ভেবে না পেয়ে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম।।উনি আমার দিকে এক নজর তাকিয়েই আলমারি খুলে একটা পেকেট আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন।।আমি তখনো একইভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।।পকেট টা হাতে ধরিয়ে দিয়েই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।।যাওয়ার সময় শুধু বললেন,,,” ড্রেসটা চেন্স করে নাও “,,,,,,আমার সাথে কি হচ্ছে আর ঠিক কি হতে চলেছে,, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।।প্যাকেটটা খুলে দেখলাম,,, একটা পিংক কালারের ড্রেস।।বার্থ ডে গার্লরা সাধারনত এমন ড্রেস পড়ে,,,কিন্তু আমাকে এই ড্রেস দেওয়ার কারন কি??উনি কি তাহলে আমাকে কোনো বার্থডে পার্টিতে নিয়ে যাবেন??যদি তাই হয়,,তাহলে এভাবে আনার কি দরকার ছিলো??আর এসব বিয়ের কাপড়-চোপড়েরই বা রহস্য কি??চারদিকে শুধু প্রশ্ন প্রশ্ন আর প্রশ্ন।।।বুঝে উঠতে পারছি না ড্রেসটা পড়বো নাকি রেখে দিবো??রেখে দেওয়াটাই বেটার হবে,,,আবার যদি উনি রেগে যান??তারচেয়ে বরং পড়েই নিই,,,কি হবে,সেটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে।।ড্রেসটা চেন্স করে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই উনি হুরমুর করে রুমে ঢুকে পড়লেন।।।আবারো সেই আগের স্টাইলে টানাহ্যাঁচড়া করে গাড়িতে বসালেন আমাকে।।।নিজেকে আমার পুতুল বলে বোধ হচ্ছে,,উনার যেমন ইচ্ছা উনি আমাকে সেভাবেই চালাচ্ছেন,,,প্রশ্নের উত্তর দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করছেন না।।।নেহাত উনি আমার মামুর ছেলে নয়তো চিৎকার চেঁচামেচি করে গণদোলাই খাওয়াতাম,,,হুহ।।।আজিব জনগন,,, আরে ভাই নিয়ে যাচ্ছিস নিয়ে যা,,,,আমি কি মানা করেছি??করিনি তো??তাহলে উত্তর দিতে সমস্যাটা কই??যত্তসব।।
নিজের মনেই বকবক করছিলাম,, হঠাৎ ই গাড়ি থেমে গেলো।।বিরক্ত হয়ে উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলাম,,,,,কি ব্যাপার থামালেন কেনো??উনি আমার প্রশ্নটাকে দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললেন,,,ভিতরে যাও।।।এতোক্ষণে আমি সামনের দিকে তাকালাম,,,,একি??এ তো নীলিমা আপুদের বাড়ি।।কিন্তু উনি আমাকে এখানে আনলেন কেনো??আবারো উনার দিকে প্রশ্নমাখা চোখে তাকালাম।।উনি আমার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠলেন,,,
।
ভিতরে গিয়ে নীলির বাবাকে বলবে,,,আজ তোমার জন্মদিন।।আর নীলিকে ছাড়া তুমি কেক কাটবা না।।তাই তুমি নীলিকে নিতে আসছো,,,বাবা-মা সহ সবাই ওয়েট করছে তোমার পথ চেয়ে,,,যেহেতু তুমি নীলির সাথে ওদের বাসায় কয়েকবার আসছো আর নীলি তোমাকে ওর স্যারের মেয়ে বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সো ওর বাবা,, মানা করবে না।।সহজেই রাজি হয়ে যাবে আর নীলিকে নিয়ে তুমি বেরিয়ে আসবে,,,আমি এখানে ওয়েট করছি,,, গো নাও।।
।
উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে “হা ” করে তাকিয়ে আছি।।এসবের মানে কি??আমার ভাবনার মাঝেই উনি ধমক দিয়ে উঠলেন,,,,
কি হলো??যাও…..
।
ক,,,কিন্তু এতো বণিতা করার কি দরকার,,আর এতো ন,,নাটকই বা কেনো??(অবাক চোখে)
।
তোমাকে যেতে বলছি(দাঁতে দাঁত চেপে)
।
আমিও আর কিছু বললাম না।।রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ভিতরে চলে গেলাম।।।নীলামা আপুর বাবা কোনো এক অজানা কারনে খুব ভালোবাসে আমায়।।সেই ভালোবাসাকে ব্যবহার করছি ভেবে খারাপ লাগছে।।কিন্তু আমার কিছুই করার নেই।।ভেতরে গিয়ে আংকেল কে ভালো-মন্দ জিগ্যেস করে,,শুভ্র ভাইয়ার শিখিয়ে দেওয়া বুলি আওড়ালাম।।।কাজ হয়েও গেলো।।নীলি আপুর রুমে গিয়ে দেখলাম সে একদম তৈরি হয়ে বসে আছে,,,,আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না,,,সবকিছুই প্রি-প্লেইনড।।।একমাত্র আমিই এক আহাম্মক যে কিছুই জানি না।।নীলিমা আপুকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।।শুভ্র ভাইয়া গাড়িতে ওয়েট করছিলো,,,আমরা বসতেই গাড়ি স্টার্ট দিলেন তিনি।।পনেরো মিনিটের মাথায় আবারো গাড়ি থামলো,,,বাইরে তাকিয়ে দেখলাম,,কাজি অফিসের সামনে গাড়ি দাড়ঁ করানো হয়েছে।।এবার কিছু কিছু বুঝতে পারছিলাম।।আমরা নামতেই উনার বাকি ফ্রেন্ডদের দেখতে পেলাম যারা ড্রয়িং রুমে বসে ছিলো।।।তাদের মধ্যে একজন কিছু শপিংব্যাগ এনে আপুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,,
।
সব রেডি আছে তৈরি হয়ে নাও,,,,হবু ভাবি(দাঁত কেলিয়ে)রোদ তোমাকে হেল্প করবে।।
।
আপু ওয়াশরুমে গিয়ে ড্রেস চেন্স করে নিলেন।।।তারপর হালকা সাজগোজ।। আপুকে এত্তো সুন্দর লাগছিলো কি বলবো।।ছেলে হলে হয়তো প্রেমেই পড়ে যেতাম।।আপুকে সাজাতে গিয়ে যা জানতে পারলাম তার সারাংশ এই,,,আপুর হঠাৎ করেই কাল বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে,,তাই এই গোপন বিয়ের আয়োজন।।।বাবা অনেক হার্ড,, লাভ মেরেজ মেনে নিবেন না,,তাই এই কান্ড যেনো ছেলেকে কাবিন নামা দেখিয়ে ভাগানো যায়।।আধাঘন্টার মধ্যেই আপুর সাঁজ কমপ্লিট।।আপুকে নিয়ে বেড়িয়ে আসতেই চোখ আটকে গেলো,,,,শুভ্র ভাইয়া অফ হোয়াইট শেরওয়ানি আর নীল পাগড়ী পড়েছে।।অসম্ভব সুন্দর লাগছে উনাকে।।চরম রকম ক্রাশ খেলাম,,,চোখ সড়ানোর ইচ্ছা না থাকলেও সড়ালাম।।হাজার হলেও অন্যের বর বলে কথা।।এদিকে শুভ্র ভাইয়া,, হা করে নীলিমা আপুকে দেখছে,,,এই নিয়ে উনার ফ্রেন্ডরা কি মজায় না করছে।।।অবশেষে বিয়ে পর্ব শেষ হলো,,আপু আবার ড্রেস চেঞ্জ করে নিলেন,,,এই অবস্থায় বাসায় গেলে আংকেল নির্ঘাত সন্দেহ করবেন।।।আমরা সবাই কাজী অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি,,,শুভ্র ভাইয়াকে সবাই মিলে পিন্চ করে চলেছে,,,আমিও সেসব ইনজয় করছি।। হঠাৎ নীলি আপুর কথা মনে পড়তেই দেখি উনি পাশে নেই।।আশেপাশে তাকাতেই যা দেখলাম তাতে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো,,,,একটা পিচ্চি রাস্তায় বসে কাঁদছে,, আর আপু তাকেই তুলতে গেছে,,,কিন্তু একটা ট্রাক যে তার দিকেই ধেয়ে আসছে,,তা হয়তো তার খেয়ালই নেয়।।ভয়ের চোটে আমার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।।হাত-পা গুলো অবশ হয়ে আসছে।।আমি যেই না সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিতে যাবো ওমনি এক প্রকান্ড শব্দে আমরা সবাই স্থির হয়ে গেলাম।।।শুভ্র ভাইয়া, দুই মিনিট স্থির দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থেকেই নীলি বলে গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে ছুটে গেলেন,,সাথে সবাই।।কিন্তু আমি নড়ার ন্যূনতম শক্তি পর্যন্ত পাচ্ছি না।।নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো,,,,এর আগে এমন কোনো পরিস্থিতির সম্মুখিন হয় নি আমি।।নীলি আপুকে আমি নিজের বোনের মতো ভালোবাসতাম,,,তাই চোখের সামনে প্রিয় মানুষটির রক্তাক্ত শরীর দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি,,,কিছু বলার বা করার শক্তি আমার নেই।।।
।
নীলি আপু দুইদিন যাবৎ আইসিইউ তে লাইফ সাপোর্টে আছেন।।।উনার বাবা-মা খবর পেয়ে তৎক্ষনাৎ ছুটে এসেছেন।।।উনাদের বিয়ের কথাটা বলার সাহস বা পরিস্থিতি কোনটাই ছিলো না,,,তাই আর বলা হয়ে উঠে নি।।একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে আন্টি তো পাগল প্রায়,,,আংকেলও বার বার সেন্স হারাচ্ছেন।।কলিজার টুকরা বলে কথা।।আমি আমার নিঃশ্বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে দোয়া করছিলাম যেনো আপু ভালো হয়ে যায়।।সবার মুখে চিন্তার ছাপ,,,হঠাৎ ডাক্তার এসে বললো,,নীলি আপুর ঞ্জান ফিরছে,,, কথাটা শুনে এতো খুশি লাগছে কি বলবো।।।এবার সব ঠিক হয়ে যাবে,,,কিন্তু না আমি ভুল ছিলাম।।।নীলি আপু মাত্র পাঁচমিনিটের মাথায় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।।আমি চিৎকার করে কাঁদছি,,,একটা অপরাধবোধ আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে,,,কেন গেলাম নীলি আপুকে আনতে??কেনো??আমি না গেলে না উনি আসতেন,,না এভাবে হারিয়ে যেতেন।।সবাই কান্না করছে কিন্তু শুভ্র ভাইয়া??না, উনি কান্না করছেন না,, ,,একদম শক্ত হয়ে বসে আছেন যেনো এখনও একটা ঘোরের মধ্যে আছেন তিনি।।নীলি আপুর চলে যাওয়া উনি মেনে নিতে পারেন নি,,পারার কথাও না,,,আমি খুব করে চাচ্ছি উনি কাঁদুক,, কেঁদে নিজেকে হাল্কা করুক।।কিন্তু না উনি এক ফোঁটা চোখের জল ফেললেন না,,শুধু নিস্তেজ হয়ে বসে রইলেন।।সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়ে যায়,,,কিন্তু শুভ্র ভাইয়া স্বাভাবিক হোন নি,,,এরপর তাকে আর হাসতে দেখা যায় নি।।আমিও পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি,,সামনে এইচএসসি এক্সাম মাত্র তিনমাস বাকি।।।ব্যস্ততার মধ্যে সময় যে কিভাবে যায়,, বোঝায় যায় না,,তাইতো দেখতে দেখতে কিভাবে যে তিনমাস কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না,,সাথে এইচএসসি এক্সামও শেষ হলো।।।এর মধ্যে একবার শুধু উনাকে দেখেছিলাম,,,উশকো-খুশকো চুল,,,গালের খোঁচা দাঁড়ি গুলো বড় হয়ে জঙ্গলে রূপ নিয়েছে,,,চোখদুটো লাল আর হাতে সিগারেট।।উনার চোখে মুখে রাত জাগার স্পষ্ট চিন্হ দেখতে পেয়েছিলাম সেদিন,,,বুকের কোথাও একটা বড্ড কষ্টও হয়েছিলো।।তারপর এলো আমাদের বিয়ের দিন,,,আমার এক্সামের পরের দিনই আপুর বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হলো।।।শুভ্র ভাইয়ার এই অবস্থায় কেউ আর ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করার মোডে ছিলো না,,তাই ঘরোয়া ভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হয়।।আপুর কাবিন হওয়ার কিছুক্ষণ পর মামু হঠাৎ আব্বু আম্মুকে রুমে ডেকে নিলেন,,,,তার কিছুক্ষণ পর মা একটা শাড়ি আর কিছু গহনা নিয়ে আমার রুমে ঢুকলেন,,,,তারপর যা হলো তাতে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম,,,মা শুধু বলেছিলেন,,,মামুর কাছে মা ঋনি আর এই ঋনটা আমাকে শোধ করতে হবে,,শুভ্রকে বিয়ে করার মাধ্যমে।।। কথাটা শুনে আমি শুধু মার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম,,,কি বলছে মা এসব??আমাকে তার ঋন পূরনে বলি দিয়ে দিচ্ছে মা??চোখ ফেটে কান্না পাচ্ছিলো সেদিন,,,আরে আমারও তো কিছু স্বপ্ন আছে,,আশা আছে,,,সেগুলোর কি কোনো গুরুত্ব নেই??আমি জানতাম শুভ্র ভাইয়া নীলি আপুকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে,,,,আর আমাকে যে কোনোদিন মেনে নিবে না তাও জানতাম,,,,,সব জানার পর কেনো নিজের স্বপ্নগুলোকে জলাঞ্জলি দিবো?? কেনো??কিন্তু মার চোখের পানির সামনে আমার চোখের পানিটাকে ডাকতে হলো আর বসতে হলো বিয়ের পিড়িতে,,,,,,,
।
।
হঠাৎ কিছুর তীব্র আলো চোখে পড়ায় আমার ভাবনার ঘোর কাটলো,,,,
।
।
#চলবে