তোকে চাই❤পর্ব:২১+২২+২৩

0
4011

তোকে চাই❤পর্ব:২১+২২+২৩
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:21


উনাদের দুজনকে এই অবস্থায় দেখে ভেতরটা বড্ড জ্বলছে,,তারসাথে পাল্লা দিয়ে জ্বলছে আমার চোখদুটো।।চোখের পলক পড়লেই ঝরে পড়বে একরাশ অবহেলা মাখানো বৃষ্টি।।নীলিমা আপুকে উনি ভালোবাসেন,,কথাটা শুনলে এখন আর খারাপ লাগে না,,,ওটা আমার জানা কথা।।।আর প্রথম ভালোবাসাকে মানুষ এতো ইজিলি ভুলতে পারলে ভালোবাসা নামক জিনিসটা এতো কষ্টের হতো না,,,না হতো এতো আবেগময়।।সত্যি বলতে,, আমি নিজেও কখনোই চাই না উনি নীলিমা আপুকে ভুলে যাক।।।নীলিমা আপু থাকুক তার মনে,, অনুভূতি আর স্মৃতির পাতায়,,,কিন্তু তারপাশে আমারও যে ঠাঁই চাই,,,,একটুকু ঠাঁই।।আমি উনাদের দিকে টলমল চোখে,,, তাকিয়ে আছি,,শুভ্র আমার চোখের দিকে একপলক তাকিয়েই,,,মেয়েটাকে ঝটপট নিজের থেকে ছাড়িয়ে একটু ডিস্টেন্সে দাঁড় করিয়ে দিলেন।।।হয়তো আমার চোখের আকুতি উনি বুঝতে পেড়েছিলেন।।মেয়েটি এখনও কেঁদেই চলেছে,,,বিরতিহীন কান্না যাকে বলে,,,আমি ভ্রু কুচঁকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষন করছি।।কেমন ফাজিল মেয়ে,,অন্যের বরের গায়ে এমনভাবে ঢলে পড়ছে যেনো বরটা আমার না ওর নিজেরই।।।ইচ্ছে করছে,,মেয়েটার প্রতিটি চুল টেনে টেনে ছিঁড়ি।।। অসভ্য,,,

এই মেয়ে,,এভাবে কাঁদিস না প্লিজজ।।দেখ সব ঠিক হয়ে যাবে।।এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে বল??(মেয়েটির কাঁধে হাত রেখে)

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


আরে,,মেয়েটা ভেঙে পড়ুক,, ইচ্ছা হলে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাক তাতে তোর কি রে???আবার কাঁধে হাত রাখা হচ্ছে,,,ইচ্ছা করছে এই খাটাস টার হাত,, এই মাইয়ার কাঁধের সাথে স্টেপলার দিয়ে লাগিয়ে দিই হুহ।।।মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে,,,অতিরিক্ত রেগে গেলেই আমার মাথায় যন্ত্রনাটা তাদের অস্তিত্বের জানান দেয়।।এখনোই তাই হচ্ছে,,,

কি ঠিক হয়ে যাবে শুভি??কিভাবে ঠিক হবে??ইজ ইট পসিবল??নো শুভি,,,নট পসিবল

কিহহহ্,,,শুভি??হায়রে প্রেমের ডাক,,,শুভি মাই ফুট।।।আল্লাহ এই দিনটা দেখানোর জন্য আমাকে বাঁচায় রাখছো??ক্যারেক্টারলেস হাজবেন্ড আমার।।।নীলি আপু,,তুমি মরে গিয়ে বেঁচে গেছো,,,নয়তো এই কাহিনী দেখে হার্ট আট্যাক করতে।।।(বিরবির করে)

দেখ,,জানি তোর সাথে যা হয়েছে,,তা কোনোভাবেই সুধরানো যাবে না,,, কিন্তু জানিস তো,, যা হয় ভালোর জন্যই হয়।।এটাও হয়তো ভালোর জন্যই হয়েছে,,,নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিস।।

বলাটা কতো সহজ শুভি,,,আচ্ছা তুই পেরেছিস মেনে নিতে??

উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ঠোঁটে শুকনো হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠলেন,,

এইতো বেঁচে আছি,,,মানতে না পারলে হয়তো বাঁচতেও পারতাম না।।

আমার তো সব শেষ হয়ে গেলো রে,,সব স্বপ্ন,, আশা,,আকাঙ্খা সব।।বাবা আজ জিতে গেলো,,,আর আমি বরাবরের মতো পরাজিত।।।নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে,,,বাবা-মাকে দেওয়া কষ্ট আর অপমানকে পুঁজি করে সুখের ঠিকানায় ছুটেছিলাম,,,,কিন্তু দেখ,,, শাস্তিটাও পেয়ে গেলাম

ভুল যা করেছিস,,তো করেছিস।।সেটা শুধরাতে পারবি না,,,,কিন্তু নিজেকে একটা সুযোগ দে।।আর কান্নাটা থামা।।।কাল আমার অফিসে আয়,,আমি সব ঠিক করে রেখেছি,,একদম টেনশন নিস না।।আমি তো আছি,,ডাফার।।।এখন এবার একটু হেসে দেখা।।(চোখ মুছে দিয়ে)

মেয়েটি শুকনো একটা হাসি দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে আমাকে ইশারা করে বলে উঠলো,,,

ও কে??

ও রোদ,,(মুচকি হেসে)

রোদ??বাহ,,দেখতে তো বেশ মিষ্টি।।।নীলি ঠিকই বলতো,,,একদম পুতুলের মতো।।

আমি শুকনো একটা হাসি দিলাম,,,উনিও মুচকি হাসলেন।।এমা,, এটা কি হলো??এই মেয়েটা আমাকে চিনে??

তোদের দুজনকে কিন্তু বেশ মানিয়েছে,,,নীলিকে সেকেন্ড চয়েজ দেওয়া হলে,,নীলিও হয়তো তোর জন্য রোদকেই সিলেক্ট করতো।।।

উনি অনেকটা জোর করেই একটা হাসি দিলেন ,,,হয়তো নীলি আপুর নামটা বুকে আঘাত করছে বারবার,,,

এইযে রোদ,,,তোমার বর তো পরিচয় করিয়ে দেবেই না,, আমি নিজেই ইন্ট্রোডাকশনটা শেষ করে নিই,,কি বলো??,(হালকা হেসে)আমি মিথিলা,,,শুভ্রর ফ্রেন্ড

আমিও হালকা হাসলাম,,,”আমি রোদ,,আই মিন রোদেলা”

শুভ্রর বউ তাই তো??

আমি মাথা নিচু করে নিলাম,,,উনার মুখে,,”শুভ্রর বউ” কথাটা একদম বুকে গিয়ে লাগলো।।।

আচ্ছা,,মিথি,, এবার আমাদের যেতে হবে।।।কাল অফিসে চলে আসিস,, বাকি কথা ওখানেই কমপ্লিট করবো,,ওকে??

কথাটা বলেই আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেলেন।।।আমিও মুখ ফুলিয়ে বসে আছি,,,দুজনেই চুপচাপ।।হঠাৎ নীরবতা ভেঙে উনিই বলে উঠলেন,,,,

কি ব্যাপার??এভাবে মুখ ফুলিয়ে বসে আছো কেন??এমনিতে তো মুখে খই ফুঁটে।।(ভ্রু কুচঁকে)

আমি কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম,,,

কি হলো??কথা বলছো না কেন??

ভাবছি,,,(দাঁতে দাঁত চেপে)

লাইক সিরিয়াসলি?? তুমি ভাবছো??

তো??(ভ্রু কুচকে)

না,,,তুমিও ভাবো??শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না,,,(বাঁকা হাসি দিয়ে)তো কি ভাবছিলে??

এক্সকিউজ মি?,আপনাকে বলতে হবে কেন শুনি??

না,,মিসেস নৌশিন আবরার,,,কি ভাবছে,,জানার খুব কিউরিওসিটি হচ্ছে,,,জানিয়ে ধন্য করবেন প্লিজ??

হুহ,,,ভাবছি,,আমি কার পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম যে,,, আল্লাহ আমার জন্য এমন ক্যারেক্টারলেস হাজবেন্ড চুজ করলো?? ভাবনার বিষয়,,তাই না??

হোয়াট???আমি ক্যারেক্টারলেস???(রাগী চোখে)

তো??এতে কি কোনো সন্দেহ আছে??আমার তো নাই।।।আপনার বয়স কতো??মাত্র ২৫, তাইতো??এই ২৫ বছরে অলরেডি দুই বিয়ে করে ফেলছেন,,,আর একজনের সাথে পার্কের কোনে দাঁড়িয়ে মাখামাখি করছেন,,,এরপর আর কোনো প্রমানের প্রয়োজন আছে কি??

উনি আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,যেনো এখনি গিলে খেয়ে ফেলবেন।।।আমিও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে রইলাম,,,

আমি মাখামাখি করছিলাম??এমন বাচ্চা মেয়ের মুখে এসব ফালতু ওয়ার্ড আসে কই থেকে??(গাড়ি থামিয়ে)

বাচ্চা মেয়ের বুইড়া হাজবেন্ড যখন এসব অসামাজিক কর্মকান্ড করে বেড়াই তখন এসব ওয়ার্ড অটোমেটিক চলে আসে বুঝলেন??

আমি অসামাজিক কর্মকান্ড করছিলাম??(চোখ গরম করে)

তা নয়তো কি??এমনভাবে মেয়েটার সাথে চিপকে ছিলেন দেখে তো মনে হচ্ছিলো হানিমুন করতে গেছেন।।হুহ

হোয়াট??লাইক সিরিয়াসলি?? এসব বাজে চিন্তা শুধু তোমার মাথায়ই আসতে পারে,,,রিডিকিউলাস রোদ,,মিথি আমার জাস্ট ফ্রেন্ড,,

হুহ,,জাস্ট ফ্রেন্ড??জাস্ট ফ্রেন্ড হলেই গলায় ঝুলে পড়তে হবে নাকি??আজিব,,,,তাহলে আমিও কাল কোচিং এ গিয়ে আসিফের গলায় ঝুলে পড়বো,,আসিফও তো আমার জাস্ট ফ্রেন্ড,,হুহ

হোয়াট??ঠাডিয়ে দিবো একটা,,,আমার সাথে তোমার তুলনা??

#চলবে,,,
#তোকে চাই❤
#writer:নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:22


তুলনা কেন হবে না??অবশ্যই হবে।।মামার বাড়ির আবদার নাকি??পাবলিক প্লেসে অন্য মেয়ের সাথে জড়াজড়ি করবেন আর আমি মেনে নিবো বুঝি??কখনো না,,,হুহ

আমি মোটেও জড়াজড়ি করছিলাম না।।সো মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ,,স্টুপিড গার্ল(দাঁত চেপে)।।ওয়েট,,ওয়েট,,আর ইউ জেলাস রোদ??(ভ্রু কুঁচকে)

অবিয়েসলি,, আম জেলাস ফিল করছি,,,এটা এতো মোড নিয়ে বলার কি আছে বুঝলাম না।।মেয়েরা তার স্বামীকে ভালোবাসোক বা না বাসোক।।পছন্দ করুক বা না করুক,,,তবুও তারা জেলাসি ফিল করবেই।।।এটা বাঙ্গালী মেয়েদের নেচার।।কবুল বলার সাথে সাথে তাদের মধ্যে জেলাসির প্রকাশ ঘটে।।।সেই হিসেবে আমার জেলাস ফিল করাটা স্বাভাবিক,,,, এটা আকাশ থেকে পড়ার মতো আহামরি কিছু নয়।।।আর শুধু মেয়েরা কেন??আপনি,,মিষ্টার আবরার শুভ্র,,যে আমাকে দু’চোখে দেখতে পায় না,,সেই আপনিও সাহেল ভাইয়ার,সাথে আমাকে দেখলে তো,, জ্বলে ছাড়খার হয়ে যান,,,হুহ।।।

ক,,,কে বললো তোমায়,, আমি জেলাসি ফিল করি??জেলাসি আর তোমার জন্য,, ইম্পসিবল।।। (মোড নিয়ে)

ওহ,,তাই নাকি??ওকে।। সাহেল ভাইয়া কাল উনার সাথে লং ড্রাইবে যাওয়ার জন্য রিকুয়েষ্ট করেছিলো ,,,ভাবছি কালকে রাজি হয়ে যাবো।।।সাহেল ভাইয়ার মতো ড্যাশিং এন্ড কেয়ারিং একটা ছেলের সাথে লং ড্রাইভ!!! ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে।।।(ডাহা মিথ্যা কথা)

পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো,,এতো শখ লং ড্রাইভে যাওয়ার??(দাঁতে দাঁত চেপে)

পা চাইলে ভাঙতে পারেন,,,আমার জন্য আরো সুবিধা হবে,,,(খুশি খুশি গলায়).।

মানে???(অবাক হয়ে)

সুবিধায় তো,,সাহেল ভাইয়া আমাকে কোলে নিয়ে হেঁটে যাবে,,,একদম বুকের সাথে লাগিয়ে,,উনার শরীরের মাতাল করা গ্রান আমার নাকে আসবে,,আমি উনার শার্ট,,,,,

শাট আপ।।।।(চিৎকার করে)

আরে শুনুন তো,,

আই সেইড,,,জাস্ট শাট আপ।।নো মোর ওয়ার্ডস্।।

কেন কেন??কি সমস্যা??আপনি ওই মিথিলা,,তিথিলার সাথে ওসব প্রাকটিক্যালি করতে পারবেন আর আমি বলতেও পারবো না??আমিও,,,

চুপপ,,,তুমি দেখো নি,,,মিথি কিভাবে কাঁদছিলো।।মেয়েটা কতোটা মানসিক চাপে আছে তোমার ধারনা আছে???মেয়েটার ডিবোর্স হয়ে গেছে,,আর….

ওহহো,,,কেমন চিপ গার্ল,,,নিজের ডিবোর্স হয়ে গেছে তো এসে গেছে অন্যের বরের উপর ডাকা ঢালতে,,,

রোদদদদ(ধমক দিয়ে,,)তুমি যে এমন চিপ মনমানসিকতা ক্যারি করো আমার জানা ছিলো না।।।তুমি জানো,,ও ঠিক কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে?? মেয়েটা সব ছেড়েছুড়ে যে মানুষটার হাত ধরে চলে এসেছিলো,,আজ সেই মানুষটিই মাঝ রাস্তায় তার হাত ছেড়ে দিয়ে,,অন্য একটা মেয়ের নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছে।।।ছিহ্,,,,ভাবতেও ঘৃনা হয় আমার,,একটা মানুষ এতোটা নিচে কি করে নামতে পারে??ভালোবাসা কি ফুরিয়ে যাওয়ার জিনিস??যে সময়ের সাথে সাথে ফিকে হয়ে যাবে??ওই শালাকে হাতে পেলে আমি ওকে খুন করে ফেলতাম,,নেহাৎ মিথি রিকুয়েষ্ট করেছে,,নয়তো ওকে পুঁতে রেখে দিতাম,,

উনি রাগে ফুঁসছেন।।চোখদুটো লাল হয়ে আছে।।।আমি ভয় আর খারাপ লাগা দুটোর সংমিশ্রণে গড়া একটা অনুভূতি নিয়ে বসে আছি।।সত্যি তো,,আপুটা খুবই ভয়ানক পরিস্থিতিতে আছেন,,,আর যায় হোক,,ভালোবাসার মানুষটি থেকে ধোঁকা পাওয়ার মতো কষ্টের আর কিছু হতে পারে না।।।লোকটাকে যদিও আমি দেখিনি,,,তবু ইচ্ছা হচ্ছে উনার সাথে সাথে আমিও তাকে দুই/একটা কিল-ঘুষি দিয়ে দিই।।

আচ্ছা উনার বাবা -মা কোথায়??

নেই,,

আমি বিস্ফারিত চোখে উনার দিকে তাকালাম,,,নেই মানে??

মিথি ওর বাবা-মার অমতে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে।।।শেষ বয়সের একমাত্র মেয়ে ছিলো মিথি,,খুব বেশিই ভালেবাসতেন,,তাই হয়তো ধাক্কাটা সামলাতে পারেন নি,,,সেইদিনই হার্ট আট্যাকে মারা যান ওর বাবা।।তার মাস ছয়েক পরে মিথির মা।।।মিথি বড্ড অন্যায় করে ফেলেছে,,,,তাই হয়তো শাস্তিও পাচ্ছে,,,,

আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম,,,,এই মুহূর্তে কে দোষী আর কে নির্দোষ,,, ভাবতে ইচ্ছা করছে না।।তাই চুপচাপ গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে নিলাম,,,,উনি আবারও বলে উঠলেন,,,

কাল রাতে যখন ব্যাপারটা জানতে পারলাম,,,তখন ভীষন ধাক্কা খেয়েছিলাম,,,মিথি প্রেগনেন্ট জেনেও,,ছি,,শেম অন দেট গাই,,,,তাই তোমাকে বেশি করে পড়তে বলছি।।তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।।।সেল্ফ ডিপেন্ডেট হতে হবে,,,পড়াশোনাটা ছেলেদের থেকে মেয়েদের আরো বেশি প্রয়োজন,,,আমি চাই না তুমি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়ো,,

আমি উনার দিকে অবাক চোখে তাকালাম,,,এই লোকটার মাথায় তাহলে ভালো চিন্তাও আছে।।বাহ,,,শুনে শান্তি পেলাম।।।তাহলে,,,এইজন্যই বুঝি উনি কাল রাতে আমার উপর বই-খাতা টর্চার চালিয়েছেন,,,জামাই আমার এতোটাও খারাপ না,,,উনার গালে একটা কিস করে দিতে ইচ্ছে করছে।।।উনি সামনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন,,হয়তো কিছু ভাবছেন।।আমি ধীরে ধীরে ড্রাইভিং সিটের দিকে এগিয়ে গেলাম,,,উনার খুব কাছাকাছি বসে আছি,,,উনার গালে একটা মিষ্টি চুমু এঁকে দেওয়ার আশায় মুখটা এগিয়ে নিতেই উনি আমার দিকে ফিরে তাকালেন,,,আর আমার ঠোঁট গিয়ে পৌঁছোলো উনার ঠোঁটের উপর।।।আমি এতোটাও আশা করি নি ,,,আনএক্সপেক্টেট এই ব্যাপারটাতে আমাদের দুজনেরই চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।। অবাকের মাত্রা এতো বেশি ছিলো যে,,দুজনের ঠোঁট যে এখনো একে অপরকে ছোঁয়ে আছে সেদিকে খেয়ালই নেই।।।।কিছুক্ষণপর পরিস্থিতিটা বুঝতে পেরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েই উনি রাগী চোখে তাকালো,,,আমিও অসহায় দৃষ্টিতে একবার উনার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলাম,,,আজকে নিশ্চয় উনি আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবেন,,,,ব্যাপারটা কি বিশ্রী,,ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।।এদিকে উনি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছেন,,,উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে উঠলাম,,,

দেখুন,,এবার আমাকে বকলে আমি কান্না করে দিবো।।আমি মোটেও ইচ্ছে করে এমনটা করি নি।।।আপনিই তো হঠাৎ করে আমার দিকে ফিরে তাকালেন,,নয়তো এমনটা কখনো হতো না।।।আমি তো জাস্ট ওই পাশের দোকানের নামটা দেখার জন্য,এগিয়ে গিয়েছিলাম।।।নার্ভাসনেসে কি বলতে যে কি বলছি,,আল্লাহ মালুম,,,তবে কাজ যে হয়েছে সেই অনেক।।।উনি আর কিছু না বলে,,দাঁত কটমট করতে করতে গাড়ি স্টার্ট দিলেন,,আমিও হাফ ছেড়ে বাচঁলাম।।।উনার,সাথে বিয়ে হয়ে জীবনটা মরুভূমি হয়ে গেছে,,,মাঝেমাঝে মরীচিকার দেখা মিললেও,,উনার রাগী চোখের তাপে ওগুলোও হাওয়া হয়ে যায়,,,ধেৎ


রাত ১১ টা বাজে,,,আমি ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে আছি।।শুধু শুধু দাড়িয়ে আছি,,ব্যাপারটা মোটেও তেমন না।।।আমি আসলে শুভ্রকে খুঁজছি।।আমাকে পড়তে দিয়ে সেই ১০ টায় রুম থেকে বেরিয়েছেন,,আর এখন বাজে ১১ টা।।।গত একঘন্টা ধরে মানুষটা হাওয়া।।।বাড়ির প্রতিটি ঘর চেক করে উনার টিকিটির সন্ধান না পেয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।।হঠাৎ মামানিকে দেখতে পেলাম,,,একটা ট্রে তে,,তিন কাপ কফি আর কিছু হালকা খাবার নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগুচ্ছে,,,ব্যাপার কি??সবার ডিনার কমপ্লিট,,এখন এসব কে খাবে??আর কিছু না ভেবে মামানির কাছে চলে গেলাম,,যদি শুভ্রর কোনো খবর পাওয়া,যায়।।

মামানি,,,এসব কার জন্য গো??

সাব্বির আর রোহান এসেছে,,শুভ্রর সাথে ছাঁদে আড্ডা দিচ্ছে,,এগুলো ওদের জন্যই।।।

ওহ,,এই ব্যাপার।।সাহেব তাহলে আড্ডায় মজেছে।।

আচ্চা,,মামানি,,দাও আমি দিয়ে আসছি।।তুমি ঘরে যাও।।

মামানি প্রথমে মানা করলেও একপ্রকার আমার কথা রাখতেই আমার হাতে ট্রেটা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।।আমি মনের সুখে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি।।কিন্তু ছাঁদের দরজার কাছে এসে,,আমার পা যেনো অটোমেটিক থেমে গেলো,,,উনাদের কথাগুলো আমার কানে স্পষ্ট,,,

#চলবে,,,
#তোকে চাই❤
#writer: নৌশিন আহমেদ রোদেলা❤
#part:23


উনাদের গল্পের মূল বিষয় যে আমি,,সেটা বুঝতে বাকি রইলো না।।।উনাদের মুখে “রোদ” নামটা শুনেই থমকে দাঁড়ালাম,,,,

তুই কি রোদকে ভালোবাসিস??

চুপ করে আছিস কেন??সাব্বির যা বলছে তার উত্তর দে,,,

তোরা প্লিজ চুপ করবি??এসব বলতে এতো রাতে এখানে এসেছিস নাকি??(বিরক্ত হয়ে)

তোর যদি তাই মনে হয় তাহলে তাই,,,এখন উত্তরটা দে,,,

হয়তো না।।

হোয়াট??হয়তো??একটা হয়তোর মধ্যে তুই একটা মেয়ের জীবন বেঁধে রাখছিস??(চড়া গলায়)

কিন্তু আমার মনে হয় তুই রোদকে ভালোবাসিস,,নয়তো ওইদিন রাতে আশিকদের ওভাবে পিটিয়েছিলি কেন??আর সাহেলকে ওর পাশে দেখলে তোর রাগই বা লাগে কেন??

ভয়,,,

হোয়াট??(সাব্বির+রোহান)

লাইক সিরিয়াসলি?? যাকে ভালোইবাসিস না তাকে নিয়ে আবার কিসের ভয়???

হারানোর ভয়,,,

ফাজলামো করিস??ভালোবাসিস না আবার হারানোর ভয়,,,সব কিছুর একটা লিমিট আছে,,,,

দেখ শুভ্র,,,আমরা সবাই জানি যে,,সাহেল রোদ কে পছন্দ করে,,তুই ওকে ভালো না বাসলে,,শুধু শুধু মেয়েটাকে ধরে রেখে কষ্ট দিচ্ছিস কেন।।।সাহেল ওকে ভালো রাখবে,,,

পাগল হইছিস তুই??রোদ আমার বউ(চিৎকার করে)

রোহান ভুল কি বলেছে শুভ্র???ওকে ভালোবাসিস না,,,স্ত্রী হিসেবে পুরোপুরি মানতেও পারিস না,,,আবার হারামোর ভয়ও পাস,,এসব কি???এতো টানাপোড়েনের চেয়ে সাহেলের কাছেই কি রোদ ভালো থাকবে না???

না থাকবে না।।কারন আমি থাকতে দিবো না।।

কিন্তু কেনো শুভ্র?

ওকে আমার প্রয়োজন,,,ওকে ছাড়া আমার চলবে না,,,

মানে কি???খুলে বলবি প্লিজ??ভালোবাসিস না আবার বলছিস প্রয়োজন??বলদ মনে হয় আমাদের??(রাগী কন্ঠে)

যা সত্য তাই বলছি।তোরা তো জানিস নিলী মারা যাওয়ার পর আমি কতোটা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম।।।তিন মাসে সাত সাতটা বার সুইসাইড এটেম্প করেছি,,,,হয়তো আরো করতাম কিন্তু তোদের জন্য হয়ে উঠে নি।।।আমার অবস্থা কেমন হয়েছিল তা হয়তো তোরাই ভালো জানিস।।আমার সিচুয়েশনটা হয়তো তোরা বুঝতে পারতি বাট আমার মনের অবস্থাটা।।।প্রতিটি মুহূর্ত দম বন্ধ হয়ে এসতো।।নীলির কথা মনে পড়তেই,, নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাইতো,,,যে মেয়েটাকে একদিন না দেখলে পাগলামো শুরু করতাম,,, সেই মেয়েটাকে নিজ হাতে মাটিচাপা দিয়েছি ভাবতেই শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো।।।তখন মরে যাওয়াটাই আমার কাছে সবচেয়ে শান্তির বলে মনে হতো।।।কেউ শখ করে সুইসাইড করে না,,,কতটা কষ্ট বুকে চেপে তারা এই ডিসিশন নেই সেটা আমি বুঝেছি প্রতিটি মুহূর্তে।।। ভালোবাসাটা ভুলে যাওয়া কি এতোই সহজ???তোদের কাছে হয়তো বিষয়টা অতিরঞ্জিত বলে মনে হয় কিন্তু আমার কাছে নয়।।তোরা ভাবছিস আমি কেনো নীলিমাকে ভুলে যায় না??কিন্তু সত্যিটা হলো আমি ওকে ভুলতেই চাই না।।আরে নীলি কি ওকে ভুলে যাওয়ার জন্য আমাকে ভালোবেসেছিলো??আজ ও নেই আর তাই আমি ওকে নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলবো??ভুলে যাবো??এতোটা নিচ আমি??আমার ভালোবাসাটা কি এতোটাই ঠুনকো??কিন্তু হ্যা,,ভালোবাসাটাই জীবনের সব কিছু নই,,রেসপনসেবলিটি,, ফ্যামিলি অনেক কিছুই জড়িয়ে থাকে এই জীবনটার সাথে।।আমি শুধু নিজেকে নিয়েই পড়ে ছিলাম,,এদিকে যে আমার চিন্তায় মা অসুস্থ হয়ে পড়ছে বুঝতে পারি নি,,,,একদিন বাবা আমাকে এসে বললো,, মা নাকি তিনদিন যাবৎ হসপিটালে এডমিট,, কথাটা শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম।।তিনদিন ধরে মা অসুস্থ আর আমি জানি না???বাবার কাছ থেকে জানতে পারলাম মার অসুস্থ হওয়ার কারনটা আমি।।।আমাকে নিয়ে চিন্তায় মা এতোটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে,,,,ছোট থেকেই মার আদরের ছেলে আমি,,,তাই হয়তো আমার অবস্থাটা মা মেনে নিতে পারে নি।।।আর আমিও পারিনি মার অবস্থাটা মেনে নিতে,,,তাইতো নিজের কষ্টটাতে হালকা পর্দা মেলে দিয়ে হসপিটালে ছুটে গিয়েছিলাম,,,সেটাই ছিলো তিনমাসের মধ্যে প্রথম নিজের ইচ্ছায় ঘরের বাইরে পা ফেলা।।মাকে দেখে বুঝতে পেরেছিলাম,,মাকে বাঁচাতে হলে আমাকে বেঁচে থাকতে হবে আর বেঁচে থাকতে হবে সুস্থভাবে।।।শুরু হলো অভিনয়,,,নিজের সাথেই যুদ্ধ,, প্রতিটি মুহূর্তে নিজের অস্তিত্বটাকেই হারিয়ে ফেলছিলাম।।হঠাৎ করেই বাবা ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করলো।।ডক্টরদের ধারনা মাকে হাসি-খুশি রাখলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবেন,,,আর মাকে খুশি করার এটাই বেস্ট ওয়ে।।।ভাইয়ার বিয়ের দিন হঠাৎই বাবা ডেকে বললেন,,”রোদ কে বিয়ে করতে হবে”।।কথাটা শুনে আমি চরম অবাক হয়েছিলাম,,,ওই বাচ্চা মেয়েটাকে নাকি বিয়ে করবো,,পাগল নাকি বাবা??আমি শুধু নীলিকে ভালোবাসি,,,শুধু শুধু কোনো মেয়ের জীবন নষ্ট করতে যাবো কেনো??,,,কিন্তু সেদিনও আমার যুক্তিটা ব্যর্থ হলো মার করুন চাহনীতে,,,বাবার এককথা,,রোদের মাঝে মার ছায়া আছে,,রোদই নাকি পারবে নীলিকে ভুলিয়ে দিতে।।।কথাটা শুনে প্রচন্ড রাগ লাগছিলো,, ওরা কেনো বুঝতে পারছে না যে আমি নীলিকে ভুলতে চাই না।।।ভেবেছিলাম রোদ হয়তো রাজি হবে না,,,কারন ও তো জানে আমি নীলিকে কতোটা ভালোবাসে।।।কিন্তু এবারও নিরাশ হতে হলো আমাকে,,রোদ বিয়েটা করেই নিলো।।।সব ক্ষোভ,,,কষ্ট,,,সবকিছু রোদের উপরই গিয়ে পড়লো।।ওকে দেখলেই রাগ লাগতো,,কিন্তু বিয়ের পরের দিন ওর বলা কথাগুলো আমাকে নাড়া দিলো,,,সত্যি তো বাচ্চা মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই,,,সেদিন মনে হচ্ছিলো যদি একবার নীলিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে পারতাম,,,বলতে পারতাম প্লিজ ফিরে আসো,,,আমি মরে যাচ্ছি,,দম বন্ধ হয়ে আসছে।।

এটুকু বলে উনি চুপ হয়ে গেলেন,,,আমি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।।উনার প্রতিটি কথা আমার বুকে যেন তীরের মতো বিঁধছে,,,হয়তো উনি কাদঁছেন,,,আমিও কাঁদছি,,জানি না কেনো,, কিন্তু আজ খুব কান্না পাচ্ছে,,খুব।।উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলতে শুরু করলেন,,,,

বাবার কথাটা সত্য ছিলো,,,আমি ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে এসেছি।।এমন নয় যে আমি নীলিকে ভুলে গেছি,,,আশ্চর্যের বিষয় হলো রোদ আশেপাশে থাকলে আমি নীলিকে আরো বেশি করে ফিল করি।।রোদের নিশ্বাসের শব্দে ওর চাহনীতে নীলিমার প্রকাশ স্পষ্ট।।।আমি রোদের চোখে সবার মতো,,আমার জন্য বিরক্তিকর সহানুভূতি দেখিনি,,ওর চোখে সবসময় একটা ভরসা,,, নীলিমার জন্য ভালোবাসা আর সম্মান দেখেছি।।। রোদ সবসময় নীলির প্রতি আমার ভালোবাসাটাকে সম্মান করে,,সবার মতো আমার পাগলামো বা বাড়াবাড়ি বলে মনে করে না,,,ওর সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ও আমাকে রাগিয়ে হোক,,বিরক্ত করে হোক,,হাসিয়ে হোক,,এই ডিপ্রেশন থেকে দূরে রেখেছে।।এতোদিন পর ওর জন্যই আমি প্রথম হেসেছি।।এখনো বড্ড কষ্ট হয়,,,মনে হয় বুক থেকে কলিজাটা কেউ ছিঁড়ে নিচ্ছে,,, কিন্তু রোদের কথায়,,কাজে কষ্টগুলো নীলির সাথে কাটানো সুন্দর স্মৃতিগুলোর কাছে চাপে পড়ে।।।এখন আমি হেল্পলেস,,,রোদকে আমার চাই।।।মা কে বাঁচাতে হলে আমায় বাঁচতে হবে,,আর আমায় বাঁচতে হলে রোদকে আমার কাছে থাকতে হবে।।।জানি আমি স্বার্থপরের মতো কাজ করছি কিন্তু রোদকে হারিয়ে ফেললে হয়তো আমিও হারিয়ে যাবো।।

আরে,,এটা কি ভালোবাসা নয়??

না,,,এটা শুধুমাত্র প্রয়োজনীয়তা,,,

আমি আর দাঁড়ালাম না,,,,আসলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না।।ঝটপট নিচে নেমে রাহেলার কাছে ট্রে টা ধরিয়ে দিয়েই ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম,,,,আজ আমি কাঁদবো,,,অনেক কাঁদবো,,,

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে