#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৫
#জাফিরাহ_জারিন
গভীর চিন্তায় মগ্ন শুভ।কিন্তু তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সে রিদিকে নিয়ে নয় বরং অন্যকিছু নিয়ে চিন্তায় আছে।নিরব সেটা খুব ভালোমতোই বুঝতে পারছে।
নিরব:কিরে শুভ, কি এত চিন্তা করছিস তুই??
শুভ: ডক্টরের বলা কথাগুলো।
নিরব:কোন কথা??
শুভ নিরবের দিকে একবার তাকালো।তারপর আবার রিদির কেবিনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করল,
ফ্ল্যাশব্যাক,
নার্স যখন এসে ডক্টরকে ডেকে নিয়ে গেল তার কিছুক্ষন পরে ডক্টর রিদির কেবিন থেকে বাইরে এসে বলল,
ডক্টর: পেশেন্টের অবস্থা খারাপ।ইমারজেন্সি ব্লাড লাগবে।যেভাবেই পারেন রক্তের ব্যবস্থা করুন।
শুভ:ব্লাড গ্রুপ কি??
ডক্টর: এ পজিটিভ।
নিধি: আমার ব্লাড গ্রুপও এ পজিটিভ। আমি ওকে ব্লাড দেব।কিন্তু আপনি যেভাবে পারেন ওকে বাচান।
ডক্টর: ঠিক আছে।আপনি ওনার সাথে যান।সিস্টার ওনাকে নিয়ে যান।
নার্স: আপনি আমার সাথে আসুন।
এরপর নিধি রিদিকে রক্ত দেয়।রক্ত দেওয়ার পর রিদির অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।প্রায় ১ ঘন্টা পর ডক্টর এসে শুভকে নিয়ে যায়।বলে যে তার শুভর সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।এরপর তারা ডক্টরের কেবিনে যায়।
শুভ: এমন কি কথা ডক্টর যে আপনি সবার সামনে না বলে আমাকে কেবিনে ডেকে আনলেন??দেখুন আপনার যা করার হয় করুন।কিন্তু আমার রিদির যেন কিছু না হয়।
ডক্টর: দেখুন আপনি প্যানিক হবেন না।আমি এখন যে কথাগুলো বলব সেগুলো মন দিয়ে শুনুন।
শুভ: বলুন।
ডক্টর: আচ্ছা রিদিকে যেই মেয়েটা রক্ত দিল সেই মেয়েটা রিদির কি হয়??
শুভ: ওরা দুইজন বেস্টফ্রেন্ড।
ডক্টর: গুড।তাহলে এবার আপনি এই রিপোর্টটা দেখুন।
শুভ সেই রিপোর্টটা নিলো এবং পড়তে শুরু করল।পুরো ফাইলটা পড়ে শুভ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে।
শুভ: কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব??
ডক্টর: আমিও ঠিক সেটাই ভাবছি।আর সে জন্যই আপনাকে এখানে আনলাম।আপনিই বলুন যে ওরা যদি শুধুমাত্র বেস্টফ্রেন্ড হয় তাহলে ওদের ডিএনএ কিভাবে মিলতে পারে??এটা শুধু তখনই সম্ভব যখন ওরা আপন দুই বোন হবে।আমার যা বলার ছিল আমি বলে দিয়েছি।এবার বাকিটা আপনার হাতে।
এই বলে ডক্টর কেবিন থেকে চলে গেল।
বর্তমান,
নিরব সবকিছু শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে।শুভর মত তার মাথায়ও এখন একই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।হঠাৎ কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে পিছনে ঘুরে তাকায় নিরব আর শুভ।পিছনে ঘুরে দেখে নিধি দাঁড়িয়ে আছে আর নিচে ভাঙা মগের টুকরা পড়ে রয়েছে।তার মানে নিধি তাদের সব কথা শুনে নিয়েছে।এই মুহুর্তটার জন্য যেন একদমই প্রস্তুত ছিল না নিরব আর শুভ।আসলে নিরব আর শুভ কালকে থেকে অনেক দৌড়াচ্ছে রিদির জন্য।তাই নিধি তাদের জন্য কফি এনেছিল।কিন্তু নিরব আর শুভ কাছে আসতেই সে শুনতে পায় যে তারা কিছু নিয়ে আলোচনা করছে।আর আলোচনার টপিক হচ্ছে রিদি আর নিধি।তাই নিধি সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে থাকে।তাদের পুরো কথা শোনার পর নিধি যেন স্তব্ধ হয়ে যায়।নিধির হাত কাঁপতে শুরু করে আর তার হাত থেকে কফির মগ পড়ে যায়।
____________________________________
রিদির বাবাকে ঘিরে বসে আছে নিধি,শুভ আর নিরব।রিদির বাবা কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।রিদির বাবা অন্তত এতটুকু বুঝেছেন যে শুভ নামক ছেলেটা তার মেয়েকে প্রচন্ড পরিমাণে ভালোবাসে।এই কথাটা রিদির বাবা এই ২ দিনে অনেক ভালোমতো বুঝে গেছেন।আর নিধি তো রিদির বেস্টফ্রেন্ড। তাই রিদির বাবা ভাবলেন ওদেরকে সব সত্যি বলে দেওয়া উচিৎ। তাই রিদির বাবা ওদেরকে সব সত্যি বললেন।সব সত্যি শুনে তিনজনই অবাক।রিদির জীবনে যে এত বড় একটা অতীত আছে তা সবার কল্পনার বাহিরে ছিল।রিদির বাবার মুখে সবকিছু শোনার পর সবাই অন্তত এতটুকু বুঝে গেছে যে ডক্টরের কথা আর রিদির অতীতের সম্পর্ক কি। এখন শুধু সিউর হওয়া বাকি।সেটার একমাত্র উপায় হচ্ছে নিধি যে আশ্রমে বড় হয়েছে সেখানে যাওয়া।
______________________________________
একটি বড় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিরব,নিধি,শুভ।বাড়িটি দেখতে পুরোনো জমিদার বাড়ির থেকে কোনো অংশে কম নয়।গেটের সামনে বড় করে লিখা আছে “শান্তির নীড় অনাথ আশ্রম”।ওরা তিনজন সেখানে গেল।আশ্রমের ম্যানেজার বাগানে দাঁড়িয়ে ছিলেন।তিনি নিধিকে দেখেই চিনে ফেললেন।নিধি “বাবাই” বলে দৌড়ে গিয়ে লোকটিকে জড়িয়ে ধরল।ম্যানেজারও নিধিকে জড়িয়ে ধরল।দুইজনের চোখেই পানি।শুভ আর নিরব শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিরব দর্শকের মত দেখছে।
নিধি: বাবাই আজকে আমি তোমাকে যা জিজ্ঞাসা করব সত্যি করে উত্তর দিবে।
ম্যানেজার: কি প্রশ্ন মা??
নিরব: নিধিকে আপনি কিভাবে পেয়েছিলেন??
ম্যানেজার যেন এই প্রশ্ন আশা করে নি।
শুভ: দেখুন,দয়া করে সত্যি কথা বলবেন।আমরা নিধির সত্যিটা জানতে চাই।ওকে আপনি কিভাবে পেয়েছেন এই প্রশ্নেত উত্তরের সাথে অনেকগুলো জীবন জড়িয়ে আছে।তাই দয়া করে মিথ্যে বলবেন না।
ম্যানেজার: বেশ তবে বলছি।আসলে আজ থেকে ১৩ বছর আগে আমি সেদিন এই আশ্রমের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে একটা পার্কে গিয়েছিলাম।তখন আমি নদীর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি দেখতে পাই যা নদীর তীরে একটা বাচ্চা পড়ে আছে।কাছে গিয়ে চেক করে দেখি বাচ্চাটি বেচে ছিল।পরে আমি সেই বাচ্চাটিকে নিয়ে আসি এবং ওকে এখানেই বড় করে তুলি।সেই বাচ্চাটি আর কেউ নয় বরং নিধি ছিল।
শুভ,নিরব,নিধি সবার চোখে জল।এটা কস্টের নয়,খুশির জল।হঠাৎ করে নিধির মোবাইলে কল আসে।নিধি কল রিসিভ করে।অপরপাশ থেকে কিছু একটা বলে আর নিধি বলে যে সে আসছে।এই বলে নিধি কল কেটে দেয়।
নিরব: কার ফোন ছিল??
নিধি:হসপিটাল থেকে ফোন দিয়েছিল।
শুভ: কি বলল??
নিধি: বলল যে রিদির সেন্স ফিরেছে।আমাদের যেতে হবে।
এরপর তারা ম্যানেজারকে বিদায় দিয়ে চলে গেল।
হসপিটালে,
রিদির এইমাত্র জ্ঞান ফিরল।রিদি নার্সের সাহায্য নিয়ে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসল।তখনই নিধি দৌড়াতে দৌড়াতে কেবিনে প্রবেশ করল আর এসেই রিদিকে জড়িয়ে ধরল।
রিদি: আরে আস্তে জড়িয়ে ধর।মেরে ফেলবি নাকি আমাকে??
নিধি:একটা থাপ্পড় মারব।আর একবার যদি মরার কথা বলিস।উপস সরি,ছোট বোন হয়ে বড় বোনকে কিভাবে মারব??
রিদি:মানে??
—মানেটা আমি বলি।
রিদি তাকিয়ে দেখে শুভ দাঁড়িয়ে আছে।রিদি শুভকে আশা করে নি।যদিও রিদি চেয়েছিল যে শুভ হসপিটালে আসুক তাকে দেখতে।রিদি প্রশ্নসূচক দৃস্টিতে শুভর দিকে তাকিয়ে ছিল।শুভ তা বুঝতে পেরে রিদির কাছে এগিয়ে এল এবং সব ঘটনা খুলে বলল।রিদি সব শুনে কাদতে কাদতে বলল,
রিদি:তার মানে নিধিই আমার ছোট বোন।
শুভ:হুম।
রিদি নিধিকে জড়িয়ে ধরল।রিদি আর নিধি দুজনেই কাঁদছে। আর শুভ আর নিরব তাদের কান্ড দেখে হাসছে।দুজনে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে।মনেই হচ্ছে না যে তারা হসপিটালে আছে।মনে হচ্ছে তারা নিজেদের বাসায় বসে গল্প করছে। ডক্টর বলেছে যে রিদি এখন সুস্থ আছে।কালকে ওকে রিলিজ দেওয়া হবে।
পরের দিন,
আজকে রিদিকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে।রিদিকে নিয়ে নিধি বাড়িতে যাবে।শুভ আর নিরব ওদেরকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে আসবে।রিদির মা বাবাকে নিধির ব্যাপারে এখনও কিছু জানানো হয় নি।বাড়িতে গিয়ে ওনাদেরকে সবকিছু খুলে বলবে।রিদি আর নিধিকে বাড়িতে ছেড়ে শুভ আর নিরব চলে গেল।রিদিদের বাসায় ড্রইংরুমে বসে আছে রিদি,নিধি ও তাদের বাব মা। কিভাবে তাদেরকে সবকিছু বলবে সেটা বুঝতে পারছে না রিদি আর নিধি।অবশেষে রিদি বলতে শুরু করল।রিদি প্রথম থেকে শুরু করে সব ঘটনা তাদেরকে বলল।রিদির বাব মা তো অবাক।রিদির বাবা উঠে এসে নিধিকে জড়িয়ে ধরল।নিধিও তাকে “বাবা” বলে জড়িয়ে ধরল।
রিদির মা: তুই আমার রিমি?? আয় মা।
নিধি:খবরদার তুমি আমাকে মা বলবে না।এতদিন তুমি আপুর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছো।আগে রিদির কাছে ক্ষমা চাও।ও যদি ক্ষমা করে দেয় তবেই আমি তোমাকে “মা” বলে ডাকব।অন্যথায় নয়।
রিদির মা রিদির দিকে করুন দৃস্টিতে তাকাল।সত্যিই তো।এতদিন মেয়েটার উপর কম অত্যাচার করে নি সে।রিদির মা রিদির কাছে গিয়ে বলল,
রিদির মা: এতদিন তোর উপর কম অত্যাচার করি নি।যদিও আমি ক্ষমার অযোগ্য।তবুও পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস।
রিদি: এসব কি বলছো তুমি?? তুমি আমার মা।
রিদির মা রিদিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।নিধিও এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরল। অবশেষে রিদির সব কস্ট দূর হলো।নিধিও একটি পরিবার পেল।
চলবে…………….