#তোকে_খুব_ভালোবাসি
#পর্ব_৪
#জাফিরাহ_জারিন
নিজের রুমে বসে আছে রিদি।চোখ থেকে তার অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে।রিদির চোখের পানি যেন থামার নামই নিচ্ছে না।থামবেই বা কি করে আজ যে রিদি তার জীবনের সবথেকে বড় সত্যিটা জেনেছে।এতবছর ধরে যাকে রিদি মা বলে জেনে এসেছে,যার এত অত্যাচারের পরেও তার প্রতি শ্রদ্ধা,সম্মান দেখিয়ে এসেছে সেই মানুষটা তার আসল মা না।যাকে সে মা বলে জেনে এসেছে সে তার সৎ মা। এমনকি রিদির একটি সৎ বোনও আছে।নিজের জীবনের এরকম সত্যি জানার পর কে ঠিক থাকতে পারে।
ফ্ল্যাশব্যাক,
রিদি তার মা বাবার রুমের দিকে যাচ্ছে তার বাবার সাথে গল্প করতে।রুমের দরজার সামনে যেতেই রিদি শুনতে পেল তার মা বাবা কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে।রিদি তাই আর রুমে না গিয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শুনতে লাগল।
বাবা: রিদির সাথে এমন কেনো করছো তুমি??
মা:কি করেছি আমি??
বাবা: তুমি জানোনা তুমি কি করেছ??রিদি আমাকে না বললেও কিন্তু আমি জানি যে তুমি রিদির সাথে ঠিক কি রকম ব্যবহার করো।
মা:যা করি ঠিকই করি। তোমার ওই অপয়া মেয়ের সাথে এরকমই করা উচিৎ।
বাবা:মিনতি!!!ভুলে যেও না যে আমি তোমাকে এখানে রিদির মা হিসেবে এনেছি।
মা: অপয়া বলব না তো কি বলব।জম্মের সময় নিজের মাকে খেয়েছে আর তারপরে আমার মেয়েটাকে খেয়েছে।ওই মেয়েতো অপয়াই।
আর বেশি কিছু শোনা সম্ভব হয় নি রিদির পক্ষে।সে তখনই সেখান থেকে দৌড়ে নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দেয়।
বর্তমান,
রিদি: আচ্ছা জম্মের সময় আমার মা মারা গিয়েছে সেটা নাহয় বুঝলাম।কিন্তু আমার যে একটা বোন ছিল তার কি হয়েছে??আর কিছু হওয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক??
এই প্রশ্ন মাথায় আসার সাথে সাথে রিদি উঠে দাঁড়াল। এখন মাত্র একজনই আছে যে তার এই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।রিদি হাটতে হাটতে স্টাডি রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তার ধারণা ঠিক।রিদির বাবা এখন স্টাডি রুমে আছে।
রিদি: আসব বাবা??
বাবা: আরে আয়।এতে পারমিশন নেওয়ার কি আছে??
রিদি: বাবা আমার কিছু প্রশ্ন ছিল।আশা করি তুমি সত্যি বলবে।
বাবা: বল মা।
রিদি: আমার যে বোন ছিল তার কি হয়েছিল?? আর সে এখন কোথায়??
রিদির বাবা নিজের মেয়ের থেকে এই প্রশ্নটা একদমই আশা করেন নি।কিন্তু একদিন না একদিন তো তাকে রিদিকে সব সত্যি বলতেই হতো।হয়ত সেই দিনটা আজ।
বাবা:আজ তোকে সব সত্যি বলব মা।আমি তোর থেকে তোর অতীত লুকিয়েছি।এরপর রিদির বাবা বলতে শুরু করল।
অতীত,
রিদির জম্মের সময় রিদির মা মারা যায়।রিদি বড় হওয়ার সাথে সাথে তার মায়ের প্রয়োজন বাড়তে থাকে।তাই রিদির বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন।রিদির বয়স যখন ৩ বছর তখন রিদির একটা বোন হয়।রিদি তার বোনকে খুব ভালোবাসতো।রিদির বয়স যখন ৫ বছর আর রিমির ( রিদির ছোট বোন) বয়স যখন ২ বছর তখন তারা সবাই মিলে একটা পিকনিক স্পটে ঘুরতে গিয়েছিল।রিদির বাবা ও মা বসে ছিল আর রিদি ও রিমি খেলতে খেলতে নদীর পাড়ে চলে গেছিল।হঠাৎ করেই রিমি পা পিছলে নদীতে পড়ে যায়।রিদি তাকে বাঁচাতে পারে নি।বাচাবেই বা কি করে?? রিদির নিজের বয়সই তো তখন ৫ বছর। রিদি সেখানে বসে কান্না করতে থাকে।রিদির কান্না শুনে যখন সবাই সেখানে আসে এবং বুঝতে পারে যে রিমি নদীতে পড়ে গেছে তখনই রিদির মা তাকে থাপ্পড় মারে।এরপর থেকেই রিদি উপর শুরু হয় তার সৎ মায়ের অত্যাচার।রিদির বাবা এসব সহ্য করতে না পেরে বিদেশে চলে যান।কিন্তু এটাই তার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল।উনি রিদিকে নিজের সাথে নিয়ে যান নি।
বর্তমান,
রিদির বাবার চোখে পানি।রিদি কান্না করছে।
রিদি: মা ঠিকই বলে।আমার জন্যই আজ আমার বোন বেচে নেই।
রিদির বাবা: না রে মা। তোর এতে কোনো দোষ নেই।
রিদি তার বাবার কথা না শুনেই সেখান থেকে দৌড়ে চলে আসে।
______________________________________
রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে রিদি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।উদ্দেশ্য তার ক্যাফেতে যাওয়া।নিধিকে সেখানে আসতে বলেছে রিদি।এই নিধিই একমাত্র মানুষ যে কিনা সবসময় রিদির সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে।যদিও মেয়েটা সবকিছু নিয়েই আনসিরিয়াস থাকে তবুও কিভাবে যেন রিদির সব সমস্যার সমাধান নিধির কাছে থাকে।নিধিকে রিদি কোনো অংশে নিজের আপন বোনের থেকে কম মনে করে না।নিধির মা বাব নেই।সে ছোট বেলা থেকে একটা অনাথ আশ্রমে বড় হয়েছে।রাস্তা দিয়ে আজকে সকাল থেকে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভাবতে ভাবতে হাটছিল রিদি।হাটতে হাটতে যে কখন রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছে রিদি খেয়ালই করে নি।পিছের থেকে একটা ট্রাক দ্রুতবেগে আসছে।ট্রাকটি অনেকবার হর্ণ দিলেও তা রিদির কানে যায় নি।ট্রাকটি চেস্টা করেও থামাতে পারে নি ট্রাকের ড্রাইভার।ট্রাকটি রিদিকে ধাক্কা মেরে তার উপর দিয়ে চলে যায়।ট্রাকটি চলে যাওয়ার সাথে সাথে রাস্তায় ভিড় জমে।সেখানকার লোকেরা রিদিকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়।একজন লোক যে রিদির মোবাইলটি পেয়েছিল সে রিদির মোবাইলে লাস্ট যে নাম্বারটি ছিল সেটাতে ফোন দিয়ে বলে রিদিকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে।সেই ব্যাক্তিটি যেন দ্রুত হসপিটালে আসে।রিদির মোবাইলে লাস্ট নাম্বারটি ছিল নিধির।রিদির এক্সিডেন্ট এর খবর পেয়ে নিধি দ্রুত হসপিটালে আসে।নিধির পক্ষে হসপিটালের একা সামলানো সম্ভব নয়।তাই নিধির কাউকে দরকার।এই মুহুর্তে নিধির মাথায় একটাই নাম আসছে আর সেটা হলো শুভ।নিধি দ্রুত শুভকে কল করে এবং রিদির কথা জানায়।রিদির এক্সিডেন্ট এর কথা শুনে পাগলের মত হসপিটালে ছুটে আসে শুভ।তার সাথে নিরবও আসে।
(নিরব হচ্ছে শুভর চাচাতো ভাই।নিরব আর শুভ সমবয়সী। নিরবের বাবা-মা আমেরিকায় থাকে আর নিরব দেশে শুভদের সাথে থাকে।)
শুভ যেভাবে ছুটে এসেছে তা দেখে যে কেউ বলতে পারবে যে শুভ রিদিকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।
শুভ: রিদি কোথায় নিধি??
নিধি:ও….ওটিতে।
শুভ দেখল ডক্টর ওটির থেকে বের হচ্ছে।শুভ দ্রুত ডক্টরের কাছে গেল।
শুভ: রিদি কেমন আছে??
ডক্টর: দেখুন উনার অনেক ব্লাড লস হয়েছে।আমরা যথাসাধ্য চেস্টা করছি উনাকে বাচানোর।বাকিটা আল্লাহ্র ইচ্ছা।
শুভ এইকথা শুনে ধপ করে পাশে থাকা চেয়ারে বসে পরে।রিদির কিছু হলে যে শুভ ঠিক থাকতে পারবে না।তখনই একজন নার্স দৌড়াতে দৌড়াতে আসে আর ডক্টরকে বলে,
নার্স: ডক্টর তাড়াতাড়ি চলুন।মিস রিদি কেমন যেন করছে।এটা শুনে ডক্টর দ্রুত ছুটে যায়।আর নিধি,নিরব,শুভর মনে এক অজানা ভয় এসে ভর করে।
চলবে………….