#তেমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ১০ ( বোনাস পার্ট)
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)
সকালে হালকা রোদ চোখে পড়ায় ঘুম ভেঙে গেল আরোহির।কালকে ইহানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছিল সে। ইহানের কথা মনে পড়তেই চারিদিকে দেখল আরোহি।না ইহান নেই। তাহলে কি ইহান ফেরে নি।তখনই ওয়াশ রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো ইহান।পরনে শুধু একটা টাওজার।খালি গায়ে এই প্রথম ইহানকে দেখল আরোহি।লজ্জায় নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে।এত দিন এ বাড়িতে এসেছে কখনো ইহানকে খালি গায়ে দেখে নি। তারাতাড়ি চিৎকার করে বলে উঠল,
“এই আপনার জামা কোথায়? এভাবে খালি গায়ে আছেন কেনো?”
কথাগুলো অন্য দিকে ফিরে বলল আরোহি।ইহান কোনো কথা না বলে চুপচাপ গায়ে একটা টি শার্ট জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। ইহানের এমন ব্যাবহারে অবাক হয়ে গেল আরোহি। আর ইহান বাড়ি বা ফিরল কখন। এসব ভাবতে ভাবতে ফ্রেশ হয়ে ঘরে এসে দেখল আয়ান জেগে গেছে।আয়ানকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে ইহান ড্রয়িং রুমে বসে আছে।আরোহি জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ও করতে পারছে না। আর ইহান যেন আরোহিকে দেখতেই পাচ্ছে না এমন একটা ভাব। ভ্রু কুচকালো আরোহি।মনে মনে ভাবল,
“হঠাৎ এই ছেলের হলো কি?এত দিন তো নিজে থেকে কথা বলত আর আজ যেন আমাকে দেখতেই পাচ্ছে না। ”
আরোহি কিছু না বলে ঘরে চলে গেল। এমনকি সকালের খাবার ও ইহানের ঘরে বসে খেল।ইহান ও দেখল আরোহির বিষয় টা।তবে কিছু বলল না।মেয়েটা তো চায় না সে (ইহান) আরোহির সামনে থাকুক।ঠিক মতো কথা ও বলে না তাহলে তার থেকে দূরত্ব রাখাই ভালো।কালকে রাত ২ টায় ইহান বাড়ি ফিরেছে।অফিসের কাজ বেশি ছিল ইহানের। তার ওপর রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম ছিল। সব মিলিয়ে রাত ২ টা বেজে গিয়েছিল। তবে ফিরে দেখল আরোহি ঘুমাচ্ছে।এটা দেখেই ইহানের একটু খারাপ লেগেছে।ইহান ভেবেছিল হয়তো আরোহি জেগে থাকবে।তবে এমনটা হয় নি।তা ও খারাপ লাগাটা নিয়ে এত মাথা ঘামালো না ইহান।কিন্তু আজ সকালে যখন আরোহি ইহানকে দেখল সে একটাবার জিজ্ঞেস না করল না সে কাল রাতে কখন ফিরেছে।বরং আরোহি তার জামা নিয়ে পড়ে ছিল। তাই তো অভিমানে কথা বলল না ইহান।সে থাকুক তার মতো।
সারাটাদিন ইহান বাড়িতেই ছিল। কারন আজ শুক্রবার। ইহানের অফিস বন্ধ। কিন্তু সারাদিনের মধ্যে ইহান আরোহিকে যথেষ্ট এভোয়েড করেছে। যদি ও ওরা কথা বলত না সে রকম। তবে এতটা এভয়েড করতো না ইহান।কিন্তু আজ একদম ব্যাতিক্রম। সন্ধ্যার সময় ইহান একটু বাইরে গেল।এদিকে আরোহি ইহানের সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তু পারছে না।আর ইহান ও যে আরোহিকে এভয়েড করছে সেটা ও বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।কাল রাতে ইহান কেন আসতে দেরি করেছিল সেটা আরশি বেগম এর কাছ থেকে শুনেছে আরোহি।তবে ইহান এমন কেন করছে সেটা বুঝতে পারছে না।তবে আরোহি এটুকু বুঝতে পারছে তার আড়ালে অনেক সত্যি লুকিয়ে আছে। যেটা জানা আরোহির জন্য খুব দরকার। তবে সেটা কি করে। এটাই ভাবছে আরোহি।
৮ টার দিকে বাড়ি ফিরে এলো ইহান। তবে নিজের ঘরে গেল না।ড্রয়িং রুমেই থাকল।আরোহি সুযোগ খুঁজছ ইহানের সাথে কথা বলার।
কিন্তু ইহান সে সুযোগ দিচ্ছে না।রাগ টা আস্তে আস্তে বাড়ছে আরোহির।কিন্তু প্রকাশ করছে না।রাতে সকলে এক সাথে খেতে বসল সবাই। আয়ান লতা বেগমের কাছে থাকায় আরোহি ও খেতে বসে গেল।তখনই ইহানের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসলো কেউ ঠিক করে খেয়াল না করলে ও আরোহি খেয়াল করল সেটা।ইহান তাড়াতাড়ি করে খাবার টা খেয়ে নিল।লতা বেগম এর কাছ থেকে আয়ানকে নিয়ে ঘরে চলে গেল ঘুমানোর উদ্দেশ্য। সকলের কাছে বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে উপস্থাপন করল ইহান কিন্তু আরোহির মনে কেন জানি ইহানের এই ব্যাবহার সন্দেহ জনক মনে হলে।খাওয়া শেষ করে আরোহি ঘরে চলে গেল।কিন্তু ঘরে ঢোকার সময় দেখল দরজা বন্ধ। অবাক হলো আরোহি। ইহান কি তাকে ঘরে ঢুকতে দেবে না নাকি।রাগের সাথে কিছু অভিমান ও ভর করল আরোহির বক্ষ পিঞ্জিরাতে।দরজায় ধাক্কা দিতে গিয়ে ও দিলো না আরোহি। ধীর পায়ে জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো। উদ্দেশ্য বন্ধ ঘরে ইহান কি করছে সেটা দেখা।তবে জানালার কাছে এসে যে এমন কিছু দেখবে এটা আশা করেনি আরোহি।ইহান আয়ানের সামনে ফোন ধরে আছে।যতদূর মনে হচ্ছে ভিডিও কলে কেউ আছে। কিন্তু কে আছে।আর আায়নকে এভাবে কে দেখতে চায়বে।নানা রকম প্রশ্ন এসে আবার ও ভীড় করল আরোহির মাথায়। তবে আরোহি আরো বেশি অবাক হলো যখন ইহান ফোনটি নিজের দিকে নিয়ে বলে উঠল,
“রাফসান আয়ান ঘুমিয়ে গেছে। আজ এতটুকু থাক।আর তেমার যখনই আয়ানকে দেখতে মনে চাইবে তুমি এ বাড়িতে চলে আসবে।আর না হয় আমাকে বলে দেবে আমি ভিডিও কলে দেখিয়ে দেব।রাখছি এখন। তেমার ভাবির হয়তো খাওয়া এতক্ষণে হয়ে গেছে।যে কোনো সময় দরজায় নক করতে পারে।”
ইহানের কথাতে আরোহি স্পষ্ট বুঝতে পারল খাওয়ার সময় রাফসান ম্যাসেজ করেছিল যে কারণে ইহান তাড়াতাড়ি করে খাবার খেল। কিন্তু আরোহির মাথায় একটা জিনিস ঢুকছে না।রাফসান কেনো আয়ানকে দেখতে চাইবে আর ইহান ও সেটা এলাও করছে কি ভাবে?
একটু পরেই ইহান ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।আরোহি ততক্ষণে জানালার কাছ থেকে সরে গিয়েছে। দরজা খুলে দিয়ে ইহান সোফায় এসে শুয়ে পড়ল ঘুৃূমানোর উদ্দেশ্যে।তবে আরোহি এসে সোফার পাশে দাড়িয় থাকল।ইহান একটু অবাক হলো আরোহির এমন কাজে কিন্তু কিছু বলল না।চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকল।ইহান আরোহিকে দেখে ও না দেখায় আরোহির রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। সোফায় শুয়ে থাকা ইহানের টি শার্ট এর কলার ধরে উঠে বসালো ইহানকে। আরোহির এমন হঠাৎ আক্রমনে ইহান ঘাবড়ে গেল।নিজেকে বাচাতে গিয়ে হেঁচকা টান দিলো আরোহিকে।ফল স্বরূপ আরোহি ইহানের বুকে গিয়ে পড়ল।আরোহির সারা শরীর দিয়ে যেনো কারেন্ট বয়ে গেল।এই প্রথম আরোহি ইহানের এত কাছে।নিজের কাজে নিজেই ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল ইহান। এমন কিছু হবে কেউই সেটা আশা করেনি। হঠাৎ হওয়া এমন ঘটনায় দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেল।উঠে বসল দুজনেই। তবে সারাদিন ইহানের করা ইগ্নোরের কথা মাথাতে আসায় আরোহি আবার ও ঘুরে বসল ইহানের দিকে।কাটকাট গলায় প্রশ্ন করে উঠল,
“আমাকে এভাবে ইগ্নোর কেনো করছেন?”
আরোহির প্রশ্ন শুনে হাসল ইহান।জোরে নয় তবে ব্যাঙ্গ করে। বলে উঠল,
” আমি তেমাকে ইগ্নোর করার কে? আমি তো একটা খারাপ মানুষ। আমার সাথে দূরত্ব বজায় রাখা টা ভালো নয় কি?”
ইহানের কন্ঠে স্পষ্ট অভিমান। সেটা বুঝল আরোহি তবে কোনো সহানুভূতি দেখালো না।বরং বলে উঠল,
” খারাপ মানুষের মতে কাজ করলে তো মানুষ খারাপ ভাববেই।আর দূরত্ব সেটা তো অনেক আগেই তৈরি হয়েছে। ”
ইহানের দৃষ্টি স্বাভাবিক।যেন আগে থেকেই জানতো আরোহি এমন কিছু বলবে।ইহান বলে উঠল,
” সবই যখন জানো তাহলে নতুন করে কিছু জানার নেই নিশ্চই।যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।মাঝরাতে আয়ান জেগে গেলে ঘুমাতে পারবে না কিন্তু। ”
তাচ্ছিল্য হাসল আরোহি।ব্যাঙ্গ করে বলে উঠল,
” এই কেয়ার গুলো আপনার বউ মায়ার জন্য ছিল, তাই না? আজ তার জায়গায় আমি আছি বলে আমাকে এই কেয়ার দেখাচ্ছেন। ”
ইহান শান্ত কন্ঠে বলল,
“কেয়ার তো থাকবেই। যতই হোক সে আমার সন্তানের মা। তাকে তো কেয়ার করা অবশ্যই লাগতো।শুধু আফসোস সে নেই।”
ইহানের এই কথাতে ভয়ঙ্কর রেগে গেল আরোহি। দ্বিতীয় বারের মতে ইহানের টি শার্টের কলার চেপে ধরল আর ঝাঁঝাল কন্ঠে বলে উঠল,
“এত কেয়ার থাকলে ডিভোর্স কেনো দিতে চেয়েছিলেন তাকে? সেটা ও সে প্রগনেন্ট জানা স্বত্তেও। বলুন, কেনো ডিভোর্স এপলাই করেছিলেন?
আরোহির কাছ থেকে এমন প্রশ্ন আশা করেনি ইহান। হতভম্ব হয়ে গেল ইহান। কি উত্তর দেবে এখন ইহান।সত্যি টা বলে দেবে কিন্তু সেটা কি বিশ্বাস করবে আরোহি।বদলাবে কি নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ইহানের প্রতি।তখনই
চলবে,