#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৭তম_পর্ব
আদনান চারুর দিকে ঘৃণিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।চারু কয়েকবার আদনানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও প্রতিবারই ব্যার্থ হয় সে।আদনান নিশ্চুপ হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকে।চারু এবার কান্না করতে করতে সোফায় বসে পড়ে।সে আদনানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে।কত বড় ভুল করেছে সে।সত্ত্যি একটা ইডিয়েট আমি।এভাবে নিজে নিজেকে গালি দিতে থাকে চারু।
একপর্যায়ে চারু তার সামনে থাকা কাচের গ্লাসটা মেঝেতে ফেলে দেয়।হঠাৎ এরকম শব্দে মাথা তুলে পিছনে তাকায় আদনান।চারু একটা কাচের টুকরো তুলে নিজের হাত কাটছে।আদনান সেদিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়।চারু ছলছল চোখে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান আস্তে করে চারুর হাত থেকে কাচের টুকরোটা নেয়।চারু কিছু বলতে ধরলে আদনান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
—‘ কিছু বলা লাগবে না।নিজের ক্ষতি করে কি লাভ? ‘
চারু ছলছল চোখে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ দেখেন আমার কোনো দোষ নাই।আমি তাকে…’
চারুর কথাটার ইতি টানতে দেয় না আদনান।সে চারুর কোনো কথা না শুনে বিছানায় গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ে।চারু নিজের রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।রক্ত দিয়ে হাতের মধ্যে লেখে আদনান।তারপর কান্না করতে করতে সোফায় সুয়ে পড়ে চারু।ঘুমিয়ে যায় সেখানেই।
এদিকে আদনান বিছানায় শুয়ে আছে কিন্তু ঘুম আসছে না চোখে।আজকে এই দিনটা সে আলাদা ভাবে উদযাপন করতে চায়।আজকের দিনটাতে সে একজনকে আপন করে নিবে।একেবারে নিজের করে নিবে।
আদনান বারবার মোবাইলের ঘড়ি দেখতে থাকে।অস্থির হয়ে আছে সে,কখন ১২টা বাজবে।একপর্যায়ে তার অপেক্ষার সময় ফুরিয়ে যায়।ঘড়ি জানান দেয় ১২টা বেজে গেছে।আদনান লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।আস্তে করে সে চারুর চোখটা বেধে দেয়।গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন চারু এসবের কিছুই বুঝতে পারেনা।আদনান আস্তে করে চারুকে কোলে তুলে নেয়।চারু একবার চোখের পাতা খুলে সব অন্ধকার দেখে আবার চোখের পাতা বন্ধ করে নেয়।চারু ঘুমের ছায়াতলে থাকার কারনে বিষয়টা নিয়ে তত মাথা ঘামায় না।আদনান লিফ্টে করে সোজা উঠে যায় হোটেলের ছাদে।এবার সে চারুকে দাঁড় করিয়ে দেয়।
মুহুর্তের মধ্যে চারুর চোখের ঘুম ছুটে যায়।চারু একটান দিয়ে খুলে ফেলে নিজের চোখের বাধন।পটা-পট ফুটে ওঠে লাল-নীল-হলুদ রংয়ের ফটকা।জ্বলে নানা রংয়ের লাইট।চারু মাথা তুলে উপরে তাকায়।জোৎনা রাতের চাঁদের আলো এসে পড়ছে তার গায়ে।এমন সময় কেউ একজন বসে পড়ে তার সামনে।হাতে একটা ফুলের তোড়া।চারু হালকা আলোয় আদনানকে বেশ ভালোভাবেই চিনতে পারে।
আদনান নিজের হাতে থাকা ফুলের তোড়াটা চারুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
—‘ প্রিয়তমা,
স্রষ্টার সৃষ্টি এই ধরনীতে সবাই কিছুদিনের জন্য এসেছে।একদিন সবাই চলে যাবে সবার মায়া ত্যাগ করে।কিছুক্ষনের এই সময়ে সবাই চায় আনন্দ-উল্লাসের মধ্যে থাকতে।আমি ব্যাতিক্রম কেউ নই।আমি সারাটা জীবন আনন্দ-উল্লাস করে কাটাতে চাই,তবে একা নয়।আমি আমার সারাজীবনের সাথি হিসেবে তোমাকে চাই।নিচের এই সমুদ্র ঢেউ যেমন আজীবন থাকবে,তেমনি তুমি আজীবন আমার রিদয়ে থাকবে।পুর্ব আকাশে সুর্য ওঠে এটা যেমন সত্য,তেমনি আমার ভালোবাসাও সত্য।স্রষ্টার এই নিয়ম গুলোকে যেমন কেউ পাল্টাতে পারবে না।তেমনি আমার ভালোবাসাকেও কেউ পাল্টাতে পারবে না একমাত্র আল্লাহ বাদে।আমি আমার এই ছোট্ট খানিকক্ষনের জীবনে তোমাকে পাশে চাই।তুমি কি আমার পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবে??? ‘
এইসব কথা বলে চারুর দিকে তাকায় আদনান।চারু কান্না করতে করতে আদনানকে জড়িয়ে ধরে।আদনানও আজ কোনো প্রকার দ্বিধা ছাড়া জড়িয়ে ধরে চারুকে।চারু আদনানকে জড়িয়ে ধরে নিজের চোখের অশ্রু বিসর্জন দিতে দিতে বলে,
—‘ আমি জানতাম আমার সত্ত্যিকারের ভালোবাসা কখনো মিথ্যা হবে না।আমি তোমার এই খানিকক্ষনের জীবনের সঙ্গী হতে রাজি।তবে আল্লাহর কাছে আমার একটাই চাওয়া একসঙ্গে যেন আমাদের মৃত্যু হয়।আমি কখনো তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। ‘
আদনান চারুর নাকে সাথে নিজের নাক লাগিয়ে বলতে শুরু করে,
—‘ এই চাওয়াটা আমারও।একজনকে হারিয়ে বেঁচে আছি।আরেকজন হারিয়ে পারবো না।আল্লাহর কাছে একটা চাওয়া মৃত্যু যে আমাদের এক সঙ্গে হয়। ‘
এই বলে আদনান চারুর ঠোটের সাথে নিজের ঠোট মিশিয়ে দেয়।এতদিনের তৃষ্ণার্ত চারু আর আদনান দুইজনেই নিজের তৃষ্ণা দুর করার চেষ্টা শুরু করে।
২৯.
‘ চারু এবার ঘুমানো দরকার।কালকে সকালে উঠে ঘুরতে যাব ‘
চারু নিজের নিজের তর্জনী আঙ্গুল আদনানের ঠোটের উপর রেখে খানিকটা ফিসফিসিয়ে বলে,
—‘ কোলে নিয়ে যাও না প্লিজ! ‘
আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে কোলে তুলে নেয় চারুকে।চারু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে আদনানের গলাটা।আদনান চারুর সাথে দুষ্টমি করতে করতে রুমে পৌছে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পড়ে।চারু আদনানের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে।আদনানও ঘুমিয়ে যায় চারুর সাথে।
পরেরদিন সকাল বেলা দুজনেই একসাথে বাহিরে বের হয়।প্রথমে তারা একটা রেষ্টুয়েন্টে যায় ব্রেকফাষ্ট করতে।ব্রেকফাষ্ট করার সময় চারু হঠাৎ আদনানের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
—‘ তুমি কিভাবে এত আয়োজন করলে কালকে ‘
আদনান মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলতে শুরু করে কাহিনী গুলা।ছেলেটা এসেছিল আদনানের সাথে কথা বলতে।আদনান বের হয়ে দেখে চারু ছেলেটার সাথে কথা বলছে।চারু এখনো আদনানকে দেখেনি।কিন্তু আদনান প্রথম থেকে সব দেখেছে।সে চারুকে সন্দেহ করেনি,সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এরকম ব্যবহার করেছে।আর সেই ছেলেটাই সব সাজিয়েছে বুঝলে।
চারু আদনানের প্রত্যেকটা কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শ্রবন করে।তারপর মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে,
—‘ বাদ দাও।আমি যে সাঁতার পারিনা তাহলে সাগরে নামবো কেমনে ‘
চারুর কথা শুনে আদনান চুপ করে থেকে কিছুক্ষন ভাবে।তারপর সে কোনো কথা না বলে উঠে দাঁড়ায়।চারুও নিজের খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ায়।আদনান বিল পরিশোধ করে চারুকে নিয়ে বের হয়।তারা দুজনে সিদ্ধান্ত নেয় আজকে সমুদ্রে নামবে না বরং চারদিকের সব ঘুড়ে ঘুড়ে দেখবে।প্লান অনুযায়ী তারা দুজনে ঘুরতে থাকে চারদিকে।
চারু এক জায়গায় গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।একজন বুড়া লোক কিছু কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই তাকে ঘিরে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।চারু আদনানকে নিয়ে সেখানে যায়।বুড়াটা চারুর দিকে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে ইংরেজিতে কি যেন বলে?চারু বুঝতে পারেনা।চারু একটা কাগজ তুলে নেয়।কাগজটা খুলতেই এক আজব কথা লেখা উঠে…
চলবে..