#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৬ষ্ঠ_পর্ব
চারু অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।আদনানের ঠোটের কোনে হাসি।কিন্তু আদনানতো অন্য একজনকে ভালোবাসে তাহলে হাসতেছে কেন?নাকি আদনানের মনে অন্যকিছু চলছে?আমজাদ সাহেব আবার বলতে শুরু করেন,
—‘ বিয়েটাতে অনুষ্ঠান করবো না ঘরোয়া ভাবেই হবে। ‘
আদনান কিছু না বলে চুপ হয়ে আছে।কিন্তু চারু মুখ ফুটে বলে,
—‘ বাবা,এটা কেমন সিদ্ধান্ত?আমি রাজি নই।তুমি অন্য যে কোনো ছেলের সাথে বিয়ে দাও তবুও করবো কিন্তু এই বিয়ে করবো না। ‘
চারুর বাবা আমজাদ সাহেব রেগে চারুর দিকে তাকান।চারু খানিকটা ভয় পেয়ে যায়।সাথে সাথে নিচু করে নেয় নিজের মাথাটা।কিন্তু চারু অবাক হচ্ছে এই ভেবে যে আদনান কিছু বলছে না কেন?সে না সেই মেয়েটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে,তাহলে আমাকে বিয়ে করতে চাইছে কেন?আমজাদ তার শেষ কথা বলে চলে যান।তার শেষ কথা ছিল,কেউ রাজি থাকুক আর না থাকুক এই বিয়ে হবেই।আমজাদ সাহেবের পর আদনানের মা ও চারুর মা সেখান থেকে চলে যায়।আদনান ধপ করে বসে পড়ে বিছানায়।চারু লজ্জায় আদনানের দিকে তাকাতে পারছে না।
আদনান মাথা নিচু করে গম্ভীর হয়ে কিছু ভাবছে।সে ইশারায় চারুকে সামনের সোফায় বসতে বলে।চারু তার কথা মতো চুপ করে সোফাটাতে বসে পড়ে।আদনান উঠে গিয়ে লাগিয়ে দেয় দরজাটা।তারপর আবার গিয়ে বসে পড়ে আগের জায়গায়।মুখ তুলে তাকায় চারুর দিকে।একসঙ্গে চারুও তাকায় আদনানের দিকে।চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।চারুকে অবাক করে দিয়ে আদনান হা হা করে হেসে ওঠে।চারু আদনানকে দেখছে আর ভাবছে,পাগল হয়ে গেল নাকি লোকটা।চারু কিছুটা ভয় নিয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় আদনানকে বলে,
—‘ ভাইয়া,আপনি এভাবে হাসতেছেন কেন? ‘
কথাটা শুনে হাসিটা থেমে যায় আদনানের।চোখ লাল করে তাকায় চারুর দিকে।রক্তিম চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায় চারু।আদনান উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে,
—‘ তোর কপালটা সত্ত্যি পোড়া।একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হলো তাকে ভাগিয়ে দিলি।আমার মতে তাকেই তোর বিয়ে করা ভালো ছিল।আর আমি তো তোর মতো নিচু ক্লাসের কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।তাই তোর জন্য কষ্টে হাসি পাচ্ছে।তোর বাবাকে বলে দিস,আমি বিয়ে করতে পারবো না। ‘
চারু ভালো করেই বুঝতে পারছে আদনান তাকে অপমান করলো।তবুও মুখ বুঝে সহ্য করে চারু কোনো কথা বলে না।তার মতে একটা পবিত্র ভালোবাসা পূর্ণতা পাক এটাই বেশি।সে নিচু ক্লাসের মেয়ে নিচু ক্লাসেরই কোনো ছেলেকে বিয়ে করে নেবে।এসব ভাবতে ভাবতে চারু সেখান থেকে বের হয়ে আসে।তারপর রওনা দেয় ছাদের উদ্দেশ্য।ছাদের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ায় যেখানে দাঁড়ালে অত সহজে বোঝা যায় না যে ওখানে কেউ আছে।চারু এক দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে।
এই মুহুর্তে কারো উপস্থিতি টের পায় চারু।মাথা ঘুরিয়ে তাকায় পিছনের দিকে।আদনান একটা ফোন হাতে পায়চারি করছে।মনে হয় মেয়েটাকে ফোন দিতে চাচ্ছে।একপর্যায়ে আদনান ফোনটা কানের কাছে ধরে বলে,
—‘ নিত্তিয়া তুমি কেমন আছো এখন।আমি আজকে রাতেই যাবো। ‘
ওপাশ থেকে কি বলে সেটা শোনার কৌতুহল ধরে রাখতে পারেনা চারু।তখনকার মতো নিঃশব্দে আগাতে থাকে আদনানের দিকে।দাঁড়িয়ে পড়ে একবারে আদনানের পিছে।ওপাশ থেকে বলছে,
—‘ নাহ,প্লিজ তুমি এসো না।বাবা শটগান নিয়ে পাহারা দিচ্ছে।আমার বিয়েটা দিতে না পারলে তার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।তুমি এসো না।তোমার কিছু হলে আমি সত্ত্যিই বাঁচতে পারবো না। ‘
এই বলে ওপাশ থেকে ভেসে আসে ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ।সাথে সাথে কেটে যায় ফোনটা।চারু সেখান থেকে সড়ে পড়ার আগেই আদনান পিছনে ঘোরে।চারু বরফের মতো জমে যায়।আদনান চারুকে দেখে চমকে ওঠে।চারু দৌড়ে পালাতে ধরলে আদনান তার হাতটা ধরে দোলানায় বসিয়ে দেয়।আদনান রেগে তাকায় চারুর দিকে।চারু মাথা নিচু করে ফেলে।
আদনান এবার চারুর মাথাটা ধরে বলে,
—‘ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে কি শুনছিলি?বল তারাতারি? ‘
কথাটা আদনান খানিকটা চিল্লিয়েই বলে।চারু চমকে ওঠে আদনানের গলার আওয়াজে।ভয়ে কাপতে কাপতে বলে,
—‘ মেয়েটার ক-থা ‘
আদনান এবার খানিকটা স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ সব শুনেছিস? ‘
চারু মাথা নাড়িয়ে হা-বোধক উত্তর দেয়।আদনান আস্তে করে বসে পড়ে চারুর পাশে।তারপর চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ হুম আমি ওই মেয়েটাকে ভালোবাসি।নিজের থেকেও বেশি।সেও আমাকে ভালোবাসে।কিন্তু হঠাৎ তার বাবা বিয়ে ঠিক করে।সে পালাতে ধরলে তার বাবা ধরে ফেলে।তারপর একটা ঘরে শিকল দিয়ে বেধে রেখেছে।না জানি কত কষ্ট পাচ্ছে? ‘
এই বলে মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেলে আদনান।চারু কিছুটা ভয় নিয়ে তার হাতটা আদনানের কাধের উপরে রাখে।তারপর আদনানকে সান্তনা দেওয়ার জন্য বলে,
—‘ আজকে তো তাকে আনতে যাবে।আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। ‘
সাথে সাথে আদনান চারুর দিকে তাকায়।তার শুকিয়ে যাওয়া গলাটা দিয়ে বলে,
—‘ কি বুদ্ধি? ‘
চারু এবার আদনানের দিকে ঘুরে বসে।তারপর চারদিকে তাকিয়ে নেয় একবার।তারপর আস্তে করে বলে,
—‘ তুমি যদি তাকে বের করতে যাও তাহলেতো তোমাকে ধরে ফেলবে।তারচেয়ে আমি তার বান্ধবি সেজে যাব।তারপর তাকে বাসা থেকে বের করে আনবো।তুমি বাহিরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবে।আমি তোমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে চলে আসবো। ‘
চারুর এই প্লানটা মনে ধরে আদনানের।তাইতো চারুর পিঠে খুব জোরে একটা মেরে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—‘ ভালো বুদ্ধি বের করেছিস।যা তোদের থেকে আর ৩০০টাকা নিব না। ‘
এদিকে মাইরটা খুব জোরে হওয়ায় পিঠটাতে ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে চারুর।আদনান দোলনা থেকে উঠে চলে যায়।চারু বসে ব্যাথায় হাত দিয়ে মালিশ করতে থাকে।
১০.
অবশেষে চলে আসে কাঙ্খিত সেই সময়।আদনান আর চারু দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটার বাড়ির সামনে।চারু আদনানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।দারোয়ান জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয় নিত্তিয়াদের ফ্লাট কোনটা।দারোয়ানের দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী চারু দরজার সামনে গিয়ে কলিংবেল বাজায়।দরজা খুলে দেয় এক মহিলা।চারুকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ কি চাই? ‘
চারু সাথে সাথে উত্তর দেয়,-‘ নিত্তিয়ার সাথে দেখা করবো।আমার একটা নোট তার কাছে আছে। ‘
মহিলা বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে চারুকে ভিতরে নিয়ে যায়।তারপর একটা দরজার সামনে গিয়ে দরজায় মারতে মারতে বলে,
—‘ নিতি তোর বান্ধবি এসেছে। ‘
সাথে সাথে খুলে যায় দরজা।নীল রংয়ের জামা পড়া একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চারুর সামনে।চারু তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।তারপর দরজাটা লাগিয়ে দেয়।নিত্তিয়ার মা বোকা মহিলা সেখান থেকে চলে যায়।চারু দেখতে পায় ঘরের বিছানার মধ্যে শিকল।নিত্তিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ এই মেয়ে তুমি কে? ‘
চারু সাথে সাথে বলে,–‘ আদনান ভাইয়া পাঠাইছে তোমাকে নিয়ে যেতে। ‘
মেয়েটা সাথে সাথে বলে,’ চলো। ‘
এই বলে সে চারুকে নিয়ে একটা জানলার সামনে আসে।জানালা দিয়ে লাফ দেয় প্রথমে নিতি।তারপর চারু।রোডের ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।চারু আর নিত্তিয়াকে আসতে দেখে বাইকে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।নিত্তিয়া আর চারু দৌড় দেয় আদনানকে লক্ষ্য করে।এই মুহুর্তে একটা ট্রাক চলে আসে তাদের সামনে।আদনান থ মেরে যায়।খুব জোরে একটা চিল্লান শোনা যায়।আদনান দৌড়ে সেখানে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।দেখার চেষ্টা করে কার ক্ষতি হলো।চারু দেহটা পড়ে আছে।তারপাশে নিত্তিয়া।আদনান পরিক্ষা করতে শুরু করে দুজনকে।নিত্তিয়ার আগে চারুকে পরিক্ষা করে।চারুর নার্ভ ধরে সে।তারপর আস্তে করে ছেড়ে দেয়।চারু…
চলবে..ইনশাআল্লাহ