তুমি রবে ৮

0
2331
তুমি রবে ৮ . . আজ অবধি নির্বিঘ্নে মাহি কোনো ছেলের দৃষ্টি বরাবর তাকাতে পারেনি। তাদের চাহনি যে তাকে প্রচন্ড অস্বস্তি করে তুলত। কিন্তু আশফির চাহনির মাঝে কেন যেন সে বিশ্বাস আর ভরসা খুঁজে পায়। যে চাহনি খুবই নিষ্পাপ, কোনো লোভ নেই সে চোখে। আছে শুধু গভীরতা। সেখানে যত বেশি তাকিয়ে থাকা যায় তত বেশিই সে গভীরতার মাঝে তলিয়ে যেতে হয়। এর যেন শেষ নেই। আশফি মৃদু কণ্ঠে তাকে বলল, – “ওটা প্রয়োজন।” মাহির দৃষ্টি পূর্বের মতোই স্থির। যেন ঘোরের মাঝে আছে সে। আশফির চাহনিতে তাকিয়েই সে বলল, – “কোনটা প্রয়োজন?” আশফি তখন মুচকি হেসে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে উচ্চস্বরে বলল, – “তোয়ালে।” আশফির হঠাৎ উচ্চস্বরে তোয়ালে বলা শুনে মাহি চমকে উঠল। কপট রেগে সে আশফিকে বলল, – “তো এভাবে কানের কাছে এসে বলার কী আছে? আমি কি কালা?” আশফি মুচকি হাসি ঠোঁটে রেখেই বলল, – “না কালা হবেন কেন! আমি তা কখন বলেছি?” মাহি তোয়ালে হাতে করে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে আশফি পিছু থেকে বলল, – “আরে কোথায় যাচ্ছেন? তোয়ালে তো দিয়ে যাবেন নাকি?” মাহি দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, – “তোয়ালে আমি আপনার জন্য নিইনি। এই যে দেখুন হাতে একটা তোয়ালে। এটা দিশানের জন্য নিয়েছি আমি।” আশফি মাহির কাছে এগিয়ে এসে বলল, – “আমি যেহেতু এখানে চলে এসেছি তাই ওটা আমাকেই দিন। আমি অন্য একটা তোয়ালে দিশানের জন্য নিয়ে যাব।” মাহি জিদ্দি গলায় বলল, – “দেবো না, আপনি খুঁজে নিন। এটা আমি দিশানকেই দেবো।” – “আমি ভেজা গায়ে দাড়িয়ে আছি তো।” – “থাকুন, তাতে আমার কী?” এ কথা বলার পর মাহির নজর হঠাৎ আশফির উরুতে গেল। উরুর ওপর প্যান্টটা কোনোভাবে ছিঁড়ে উরুর সাদা মাংস দেখা যাচ্ছে। মাহি সেদিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। আশফি তার হাসি দেখে বলল, – “অদ্ভুত! হাসছেন কেন আবার?” – “আমার ইচ্ছা হয়েছে আমি হাসছি।” – “আচ্ছা হাসুন। তোয়ালেটা দিন।” – “কেন? উরু ঢাকবেন নাকি?” আশফি নিজের উরুতে তাকিয়ে ছেঁড়া জায়গা দেখে বলল, – “এটা ছিঁড়ল কখন?” – “নিজের প্যান্ট কখন ছিঁড়ল তাও বুঝতে পারেননি?” – “না বুঝিনি। আর এখানে ঢাকার জন্য আমি তোয়ালে চাইব আপনার তাই মনে হলো?” – “হতেই পারে। বিশিষ্ট শিল্পপতির ছেঁড়া প্যান্ট তার এমপ্লয়ি দেখে নিলে সম্মানটা কোথায় যাবে? এটা ভেবেই ঢাকতে চাইছেন আমার দেখার আগে। কিন্তু আমি তো দেখে নিয়েছি।” আশফি বিস্ময়পূর্ণ চোখ করে বলল, – “ও, আচ্ছা!” – “ও স্যরি, আমি তো ভুলে গিয়েছি। আপনি তো আবার লজ্জা কী জানেন না।”
এ কথার পর আশফি হঠাৎ মাহির দিকে এক পা দু পা করে এগিয়ে আসতে শুরু করল। মাহি পিছু হাঁটতে হাঁটতে ভীত কণ্ঠে বলল, – “আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেন? ভুল কী বললাম?” আশফি নীরবে মাহির খুব কাছে চলে এলো। মাহি দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে আশফি তার মাথার ডান পাশে দেয়ালে এক হাত ভর করে আর কোমরে এক হাত রেখে ওর দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। আশফির এখন মূল উদ্দেশ্য মাহির দৃষ্টির সামনে নিজের শরীরকে কেন্দ্রবিন্দু করা। কারণ সে জেনে গেছে এদিকে তার চোখ পড়লে সে না চাইতেও এখানেই আটকে যায়। তৎক্ষণাৎ সেটাই ঘটল। মাহি না চাইতে তার দৃষ্টি পড়ল আশফির হালকা ভেজা শরীরে। শরীরটা তার যেন কেমন শিউরে উঠল তখন। এত কাছ থেকে কোনো পুরুষের শরীর সে আজ অবধিও লক্ষ্য করেনি। তার উপর আশফির খোলা শরীরের প্রতি তার একটা বিশেষ দূর্বলতা কাজ করে। যা সে নিজেও বুঝে না। এখন আবার সেই জিনিসটাই তার এত কাছে। এবার সে নিশ্চিত, তার হার্টবিট থেমে যাবে। আশফি লক্ষ্য করল মাহির নিঃশ্বাস ঘন ঘন পড়ছে। সেটাকে আরও বেশি গভীর করতে আশফি তার মুখের খুব কাছে এসে খুবই আবেগ জড়িত কণ্ঠে ডাকল, – “মাহি!” আর মাহি আশফির মুখে এই প্রথম নিজের নাম এত আবেগি কণ্ঠে শুনে একদম থমকে গেল। চারপাশে তার কী আছে তার কিছুই খেয়ালে নেই। সামনে শুধু একটি মানুষ দাঁড়িয়ে, যে তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সে ক্ষণিকের জন্য সব ভুলে যায়। ক্ষণিক বললে ভুল হবে, তত সময়ের জন্য সে ভুলে যায় যত সময় সে তার সেই গভীর চাহনিতে তাকে আটকে রাখে। আশফি এবার ওষ্ঠকোণে মৃদু হাসি রেখে মৃদু কণ্ঠে বলল, – “আমার লজ্জা কতটুকু আপনি জানতে চান?” মাহি ভড়কে গেল আশফির এ প্রশ্নে। ছিটকে সরে এলো তার থেকে। কপাল কুচকে তার দিকে তাকালে আশফি তার প্যান্টের বোতামের কাছে হাত নিয়ে মুচকি হাসতে হাসতে বলল, – “নাকি দেখতে চান?” তোয়ালেটা আশফির গায়ে ছুড়ে মাহি ছুটে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। অট্টোহাসিতে তখন ফেঁটে পড়ল আশফি। মাহিকে ছুটে আসতে দেখে হিমু তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর জিজ্ঞেস করল, – “কিরে এভাবে ছুটে আসছিস কেন? কী হয়েছে?” মাহি রাগী রাগী মুখ করে বলল, – “নির্লজ্জ লোকের কাছ থেকে ছুটে এলাম।” – “সে আবার কে?” মাহি নীরব থাকল হিমুর প্রশ্নে। . বিকালটা সবাই মিলে দারুণ আমেজে কাটাল। সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে হিমু আর অনিক বিদায় নিলো আর সেই সঙ্গে দিয়াও। তার আর্জেন্ট কল আসার দরুন সে ওদের সঙ্গেই বেরিয়ে গেল। ওরা যাওয়ার পর মাহি বলল, – “আচ্ছা আমিও তবে এখন আসছি।” আশফি তখন সাদা শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল। দিশান তখন বলল, – “আসছি মানে? তো আমরা কি এখানে থেকে যাচ্ছি?” আশফি জিজ্ঞেস করল, – “কী হয়েছে?” – “মাহি বোধহয় একা যেতে চাইছে।” আশফি মাহির দিকে তাকালে মাহি তখন দিশানের উদ্দেশে বলল, – “আমার বাসা তো অনেক দূর। আমাকে পৌঁছে দিতে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে তোমাদের।” আশফি গাড়ির কাছে যেতে যেতে বলল, – “দিশান তোর ফ্রেন্ডকে বল আমরা আমাদের আমানতের প্রতি খুব যত্নশীল। তা সুরক্ষিতভাবে তার মালিকের কাছে হস্তান্তর করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।” এ কথা বলে আশফি গাড়িতে উঠে বসল। আর দিশান তার ভাইকে এই প্রথমবার জটিল বাংলা ভাষায় কথা বলতে দেখে একটু হেসে উঠল। দিশানের পাশে দাঁড়িয়ে ঐন্দ্রী এর সবটাই লক্ষ্য করছে। কিন্তু সে পুরো নীরব। আজ সারাদিন সে সুযোগের অপেক্ষাতে ছিল আশফির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য। কিন্তু তা আর হলো না। আশফি গাড়ি স্টার্ট করে বলল, – “সবাইকে কি এখন কোলে তুলে গাড়িতে ওঠাতে হবে?” দিশান হাসতে হাসতে ভাইয়ের পাশে এসে বসল। তারপর মাহিও উঠে এলো। ঐন্দ্রী মুখটা শুকনা করে মাহির পাশে এসে বসল। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। দিশান আশফিকে বলল, – “আজ কিন্তু আমরা ব্যাপক মজা করেছি ভাইয়া।” – “হ্যাঁ অবশ্যই।” বাংলো ছেড়ে কিছুদূর আসতেই দিশানের ফোনে কল এলো। কথা শেষ করে সে ভাইকে বলল, – “আমাকে সামনে ড্রপ করে দিও ভাই। আমার দুটো ফ্রেন্ড ওয়েট করবে।” – “ওকে।” – “আর হ্যাঁ, মাহিকে আগে ড্রপ করে তারপর তোমরা দুজন টাইম স্পেন্ড করো।” এ কথা বলে দিশান দুষ্টু হাসি দিয়ে ঐন্দ্রীর দিকে তাকাল। আশফি নিশ্চুপ থাকলেও ঐন্দ্রী বলল, – “হ্যাঁ মাহিকে আগেই ড্রপ করা ভালো হবে। ওর পরিবার আবার খুব স্ট্রিক্ট।” আশফি তখন বলল, – “মাত্র বিশ মিনিটের রাস্তা গেলেই তোমার বাড়ি ঐন্দ্রী। আর মাহির বাসায় পৌঁছাতে এখনো প্রায় ঘন্টা দুইয়ের বেশি, যদি জ্যাম না পড়ে। আর জ্যাম পড়লে তো কথাই নেই।” দিশান বলল, – “ওহ তাই তো। আজ তো তাহলে তোমাদের সন্ধ্যা মুহূর্ত মিস গেল।” ঐন্দ্রীর দিকে ঘুরে বলল দিশান, – “মন খারাপ করো না ঐন্দ্রী। পরে কখনো তোমরা দুজন একা লং ড্রাইভে যাবে।” ঐন্দ্রী মুখে কৃত্তিম হাসি টেনে বলল, – “না ঠিক আছে, সমস্যা নেই।” একে একে দিশান আর ঐন্দ্রী তাদের গন্তব্যে নেমে গেল। মাহি এখন আশফির পাশের সিটে এসে বসেছে। তখন থেকে মাহিকে গোঁমড়া মুখ করে বসে থাকতে দেখে আশফি একটা মেল ভয়েজে গান প্লে করল। গানটা ছিল, ‘আকাশ এত মেঘলা, যেও নাকো একলা। এখনি নামবে অন্ধকার।’ মিনিট দুইয়েকের মাথায় মাহির মনটা চাঙ্গা হয়ে উঠল। একটু নড়েচড়ে বসে সে আশফিকে বলল, – “এটা কি একটু খুলতে পারি?” আশফি আড়চোখে তাকিয়ে দেখল মাহি জানালার কাচ দেখিয়ে তা খোলার কথা বলছে। তবুও সে না বোঝার ভান করে মজা করে বলল, – “আপনার জিনিস আপনি খুলবেন। তাতে আমার থেকে পারমিশন নেওয়ার কী আছে?” কথাটা বলে আশফি ঠোঁপ চেপে হাসতে শুরু করল। মাহি রেগে তার উত্তর দিতে গিয়েও দিলো না, যখন দেখল আশফি হাসছে। তার মানে সে মজা করেই বলেছে। মাহি বিনা বাক্যে গাড়ির কাচটা খুলল। বাহিরে তখন হালকা গুরি গুরি বৃষ্টি নামছে। যাকে না নামার মতোই বলে। তবুও মাহি মুখটা একটু জানালার কাছে এগিয়ে এনে কিছুটা বৃষ্টিবিলাসের চেষ্টা করল। আশফি ঘাড় ঘুরিয়ে বারবার তখন মাহিকে দেখছিল। ওকে দেখে তখন তার মনের অনুভূতিটা এমন, “বাহিরে নেই কোনো বৃষ্টির আভাস, তবুও তুমি করছো বৃষ্টিবিলাস। তোমার বৃষ্টবিলাস যে হলো আমার সর্বনাশ!” . জ্যামে বসে পাকা দেড় ঘন্টা সময় ব্যায় হলো ওদের। মাহি এর মাঝে কখন যেন সিটে বসেই ঘুমে তলিয়ে গেছে। আশফি গানের ভলিউম মৃদু করে দিলো তখন। বাহিরে ভালোই বৃষ্টির তেজ। গাড়িতে আলো জ্বেলে ছিল সন্ধ্যার পরই। তন্দ্রাচ্ছন্ন মাহিকে দেখে একবার আশফি ভাবল লাইটটা অফ করে দেবে। কিন্তু তাতে যে মাহির মুখটা অন্ধকারে ডুবে যাবে। তাহলে সে দেখতে পাবে না এই তন্দ্রাবতীকে। স্বার্থপরের মতো নিজের সুবিধাটা ভেবে সে লাইটটা জ্বেলেই রাখল। জ্যামে বসে মাহি ঘুমিয়ে সময় ব্যায় করছে আর আশফি মাহির আদুরে মুখটা দেখে। খুব খুঁটে খুঁটে সে মাহির আদলখানা দেখছিল। সারা সুখে কতগুলো তিল তার সেটাও গোণা হয়ে গেছে। জ্যাম ছাড়তে গাড়িটা ফুল স্পীডে চালাল আশফি। কারণ অলমোস্ট তখন রাত আটটা বাজতে চলেছে। অনেক বেশি লেট হয়ে গেলে মাহির বাসার সবাই টেনশনে পড়ে যাবে। এর মাঝে আশফির দাদা তাকে ফোন করেছিল। তখন সে সত্যিটাই বলেছে কেন এত দেরি হচ্ছে তাদের। আলহাজ তাতে কিছু বলল না তাকে। শুধু বলল সাবধানে পৌঁছে দিতে। অনেক বেশি আদরের নাতনি বলে কথা। মাহির বাসার সামনে এসে আশফি দাঁড়িয়ে আছে প্রায় সাত মিনিট। এদিকে মাহির জাগ্রত হওয়ার কোনো খবর নেই। এক কাত হয়ে সিটে মাথাটা এলিয়ে দিয়ে আশফির দিকে মুখ করে সে ঘুমিয়ে আছে। আবার তার ঘুমন্ত আদুরে মুখটা দেখে আশফির ডাকতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও সে মাহির খুব কাছে এসে আলতো করে মাহির চুলে বিলি কাটতে কাটতে মৃদু কণ্ঠে মাহিকে একবার ডাকল। কিন্তু কোনো সাড়া নেই। সে আবার ডাকল, – “মাহি, উঠবে না?” মাহি তখন ঘুম মিশ্রিত কাতর কণ্ঠে বলল, – “হু।” – “তো ওঠো। চলে এসেছি তো।” মাহি মিটমিট করে চোখ দুটো খুলে তাকাল। তাকিয়ে সে তার খুব কাছে আশফির মুখটা দেখে কিছুক্ষণ থমকে চেয়ে রইল তার পানে। তারপর ঘুম মাখা কণ্ঠে সে বলল, – “এত কাছে এসো না প্লিজ!” আশফির ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। সে প্রশ্ন করল, – “কেন?” – “আগুন জ্বলে ওঠে ভেতরটাতে আমার। নেভানো বড় মুশকিল তা।” আশফির ভীষণ হাসি পেল। কথাটা বলে মাহি একটু চুপ করে গেল। কিন্তু আশফির হাসিমাখা মুখ দেখে সে এবার বলল, – “উফঃ হাসিটা থামাও।” – “এবার হাসিতে কী হলো?” আশফি হাসতে হাসতেই জিজ্ঞেস করল। মাহি তখন ওর হাসিটার দিকে তাকিয়ে বলল, – “আগুনে ঘি ঢালল যে।” আশফি সত্যিই এবার হাসিটা থামাল। মাহির মুখটার খুব কাছে এগিয়ে এসে ওর দিকে চেয়ো রইল তার মায়া জড়ানো চোখে। তার কিছুক্ষণ পর মৃদু স্বরে সে জিজ্ঞেস করল, – “এবার কী হচ্ছে?” মাহি ওর দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলে রইল আরও কিছুক্ষণ। আশফিও একইভাবে দৃষ্টি মেলে রইল তার দিকে। যেন তারা দুজন আজ জেনে শুনে দুজনের অনুভূতির গভীরতায় ডুবে যাবে। মাহি অস্ফুটে বলল, – “এভাবে তাকিও না। হাওয়া বইছে নিভু নিভু আগুনে। যে কোনো মুহূর্তে আগুন সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে আমার।” আশফি এই শেষ বাক্যদুটো শুনে একদমই থমকে গেল। তার আশপাশটাও যেন সে মুহূর্তে থেমে গেছে। মাহির মতো সেও এক কাত হয়ে সিটের সঙ্গে মাথা এলিয়ে মাহির পানে চেয়ে রইল। দুজনে নীরব বাক্যে স্থির চাহনিতে এক অপরকে দেখতে রইল শুধু। আশফিকে দেখতে দেখতে এক সময় মাহি আবার ঘুমিয়ে গেল। মাহি চোখদুটো বুঝতেই আশফি গা ঝারা দিয়ে বসল। পাগলের পাগলামী দেখতে গিয়ে নিজেই পাগল সেজে বসে ছিল। মাহিকে যে বাসায় যেতে হবে কিছুক্ষণের জন্য এ ব্যাপারটায় সে ভুলে গিয়েছিল। এবার সে একটু জোরেই মাহিকে ডাকল। – “মাহি শুনতে পাচ্ছো?” মাহি আশফির আচমকা এমন ডাকে ধড়ফড়িয়ে উঠল। কেমন থতমত কণ্ঠে সে বলল – “চলে এসেছি?” আশফি দৃষ্টি সামনে রেখে বলল, – “হ্যাঁ। আর স্যরি এভাবে ডাকার জন্য। অনেক্ষণ যাবৎ ডাকছিলাম কিন্তু আপনি জাগেননি।” – “ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি আসছি, ধন্যবাদ।” আশফি আর তাকাল না তার দিকে। তার ধন্যবাদে শুধু মাথা নাড়াল। মাহি আর একটুও পেছনে না তাকিয়ে ছুটে বাসার মধ্যে চলে গেল। তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আশফি মুচকি হেসে উঠল। এর মাঝে তারা দুজন দুজনকে তুমি সম্বোধন করেছে। এটা ভেবেও আশফির এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো। তারপর গাড়ি ব্যাক করে সোজা বাসায় চলে এলো সে। রুমে ঢুকে শার্ট খুলতে খুলতে সে ভাবতে থাকল, আজকের দিনটা যে এতটাও সুন্দর কাটবে কে জানত? শাওয়ার নেওয়া শেষে সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নাতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে হঠাৎ মাহির কথাগুলো মনে পড়ল। ঠিক হঠাৎ নয়, মাহির কাছ থেকে আসার পর থেকেই তার মস্তিষ্কে কেবল ওই একটি চেহারা আর ওই শেষ কথাগুলোই ক্ষণে ক্ষণে ঘুরছে ফিরছে। সেগুলো ভাবতেই তার ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠল। নিজের চাহনি আর হাসি দেখতে থাকল সে। তারপর আপন কণ্ঠে সে বলে উঠল, – “ঘুমিয়ে থাকা ওই আদুরে মুখটা যদি মাতাল করে দেয় তবে নেশার কী প্রয়োজন?” আজ আর আশফি অফিসের কোনো কাজ নিয়ে বসল না। হালকা কিছু খেয়ে বেলকনির কাউচে এসে গা এলিয়ে দিলো। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি রাস্তার ল্যাম্পোস্টের আভাতে এত দারুণ লাগছে দেখতে যেন মনে হচ্ছে বৃষ্টির এমন মুহূর্ত সে এর পূর্বে কখনো দেখেনি। হ্যাঁ সত্যিই সে দেখেনি, কারণ তার জীবনে মাহির আগমনের পূর্বে সে এই বৃষ্টির ক্ষণ কখনোই এত বিশেষ নজরে অবলকন করেনি। আজ তার কাছে এই বৃষ্টির ক্ষণই যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুগ্ধকর মুহূর্ত বলে মনে হচ্ছে। ঝুম বৃষ্টির আওয়াজও তার কাছে মধুময় ধ্বনির মতো শোনাচ্ছে। মাঝে মাঝে হালকা মৃদুমন্দ বাতাসও এসে শরীর বুলিয়ে দিচ্ছে। অতিশয় আবেশে চোখদুটো বুজে আসলো তার। এত নিদারুণ অনুভূতি এর পূর্বে কখনো কেন হয়নি তার? হঠাৎ মনের কোণটায় খানিকটা আফসোসের ব্যাথা জেগে উঠল তার। কয়েক মুহূর্তের জন্য যদি তখন সময়টা থেমে যেত, তবে তখনকার ওই তন্দ্রাবতীকে সে দু চোখ ভরে দেখতে পেত। ওদিকে মাহি তার ঘুমের ঘোরে বলা কথাগুলো মনে পড়তেই লজ্জাতে আর নিজের মুখের দিকে তাকাতেও পারছে না। ঘুমের মধ্যে তার এই প্রলাপ করার রোগটা বোধহয় আর কোনোকালেও যাবে না। সারাদিনে মাথার মধ্যে যা চলে ঘুমের মধ্যে তা বকর বকর করে সে। আর আজ এমন জায়গায় এমন কথা বকেছে সে, যার পর সে হয়তো আর কোনোদিনও তার সামনে যেতে পারবে না। আর গেলেও তার চোখের দিকে তাকাতে পারবে না। লজ্জাতে আয়নার সামনে থেকে সরে সে বিছানায় এসে কাঁথার মধ্যে ঢুকে গেল। কাল সে কী করে ওই মানুষটার মুখোমুখি হবে? কী করে সে সারাটাদিন তার অফিসে কাটাবে? ভাবনাগুলো যে বড্ড যন্ত্রণার মাঝে ফেলে দিলো তাকে। . . রাত এগারোটার কাছাকাছি প্রায়। দিশান বন্ধুমহলের আড্ডা ছেড়ে বাসার পথে ফিরছিল। রাস্তার মোড়ে তাকে তার ফ্রেন্ড নামিয়ে দিয়ে গেছে। বেশ ফুরফুরে মেজাজ আজ তার। বিকালটা দিয়ার পিছে লেগে সে ভালোই মজা নিয়েছে। আর যখন জেনেছে দিয়া তার ভাইয়ের প্রতিবেশী তখন থেকে তার মনটা যেন খুশিকে বাক বাক করছে। পকেটে এক হাত পুরে অন্য হাতে ফোন চাপতে চাপতে সে বাসার পথে আসছিল। হঠাৎ একটা গাড়ি এসে তার পিছে দাঁড়াল। গাড়ির আওয়াজ পেয়ে সে পিছে তাকিয়ে দেখার আগেই কেউ একজন দিশানের নাক বরাবর ঘুষি মেরে বসল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সে নিচে পড়ে যেতে ওকে টেনে ধরে গাড়িতে ওঠাল দুটো ছেলে। মুখটা বেঁধে দিয়ে গাড়িতে ফুল সাউন্ডে গান চালিয়ে গাড়ির ভেতরেই তাকে ইচ্ছা মতো তারা ওর চোয়াল, নাক, পেট, পিঠ, কোমর বরাবর কিল ঘুষি মারতে শুরু করল। মারার সময় একজন বেশ বিশ্রী ভাষায় ওকে গালাগাল করে বলল, – “মাদার**, খান** পোলা! খুব আরাম পাইছোস মাহির ফিগার দেখে। তাই কুত্তার মতো ওর পিছে পিছে দৌড়াস। আজকের পর থেকে ক্যামনে দৌড়াস দেখব এবার।” এ কথা বলেই সে আরও একটা ঘুষি মারল। শেষ ঘুষিটা এসে লাগল দিশানের চোখে। আর তখনই তার প্রায় সেন্স হারানোর মতো অবস্থা হলো। গাড়িটা ওরা আবার ঘুরিয়ে ওকে বাসার সামনে ফেলে চলে গেল তারা। দিয়া বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ফোন চাপছিল তখন। নিচে তাকাতে কাউকে রাস্তার মাঝে পড়ে কাতরাতে দেখে দৌড়ে ঘরে ফিরে এলো। সে কি নিচে যাবে নাকি পাশের ফ্লাটের কাউকে ডাকবে এটা ভেবে অস্থির হয়ে পড়ল সে। কারণ বাড়িতে সে আর তার ছোট ভাই দিহান বাদে কেউ নেই। কিন্তু শেষমেশ সে নিজেই যাওয়ার পরিকল্পনা করল। গায়ে ওড়নাটা জড়িয়ে কয়েক মিনিটের ভেতর সে নিচে চলে এলো। দিশানের কাছে পৌঁছাতেই ওকে দেখে আঁতকে উঠে বলল, – “আপনি? এসব কী করে হলো?” দিশান কথা বলার মতো শক্তিটুকু পেল না। তবু বহু কষ্টে অস্ফুটে সে বলল, – “আমাকে একটু হেল্প করুন প্লিজ।” ওকে দেখে দিয়ার হতবুদ্ধি অবস্থায় প্রায়। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি সে এর আগে কখনো হয়নি। ভয়ে সে তুতলিয়ে বলল, – “বলুন কী হেল্প? কাকে ফোন করব বলুন?” – “আমাকে লিফ্ট অবধি একটু নিয়ে চলুন।” দিয়া দিশানকে বহু কষ্টে উঠিয়ে দাঁড় করাল। দিশান ওর কাঁধে হাত ভর করে লিফ্ট অবধি এলো। লিফ্টে ঢুকতেই সে দিয়ার ওপর ঢলে পড়ল। দিয়া লিফ্টের গায়ে হেলান দিয়ে দিশানকে সামলে দাঁড়িয়ে রইল। নয়তলা অবধি এসে দিয়া দিশানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে কলিংবেল চাপল ওদের ফ্লাটের। আশফি এসে দরজা খুলে ভাইকে আহত দেখে তাকে জাপটে ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠল, – “দিশান! এ অবস্থা কেন তোর? কীভাবে হলো?” দিয়া তখন বলল, – “আমি ওনাকে নিচে পড়ে থাকতে দেখেছি শুধু।” আশফি দিশানের হাত কাঁধের ওপর নিয়ে ওকে রুমে আনল। এত রাতে একজন ডক্টরকেই ফোন করলে সে কেবল বাসায় আসতে রাজি হবে। সে হলো আবরার সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মোস্তাকিম রহমান। কিন্তু তাকে ফোন করলে খবর খুব দ্রুত দাদার কানে পৌঁছে যাবে। পরে দেখা যাবে তারাই এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়বে। আশফি রীতিমতো ঘাবড়ে গেল ভাইকে এভাবে দেখে। কিন্তু সে দূর্বল হওয়ার মানুষ তো নয়। চাচাত ভাই শায়খকে কল করল। ঘুম জড়ানো কণ্ঠে শায়খ ‘হ্যালো’ বলে উঠল। আশফি তখন বলল, – “দ্রুত ঘুম থেকে ওঠ। আর এখনি উজ্জলের বাসায় যা। তারপর ওকে নিয়ে সোজা আমার বাসায় চলে আয়।” শায়খ আশফির এমন উতলা কণ্ঠ শুনে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠল। – “কী হয়েছে ভাই? সবকিছু ঠিক আছে তো?” – “না ঠিক নেই। তুই বাসাতে না?” – “হ্যাঁ আমি তো বাসাতেই। কী হয়েছে আগে তাই বলো।” – “দিশান ইনজুরড খুব বাজেভাবে। মনে হচ্ছে কেউ বা কারা ওকে খুব মেরেছে। তুই যা আগে তাড়াতাড়ি।” – “হ্যাঁ যাচ্ছি। কিন্তু উজ্জলের তো যেতে সময় লাগবে। অনেক দূর হয়ে যায় তো।” – “উহ্! আমি ভাবতে পারছি না। কী করব তাহলে এখন?” – “তুমি ওর সারা শরীরে আইসবার ধরো। আমি আমার বন্ধুকে কল করে দিচ্ছি। ও ধানমন্ডি দশে থাকে। তোমার কাছাকাছিই। আর আমিও এখনি চলে আসছি।” – “প্লিজ জলদি কর। বাসায় যেন কোনোভাবেই না জানতে পারে।” – “ওকে ওকে।” ফোনে কথা বলা শেষ করে আশফি দিয়াকে বলল, – “অনেক ধন্যবাদ আপু আপনাকে। আপনি আপনার বাসায় যান। এত রাতে আপনাকে আমাদের বাসা থেকে কেউ বের হতে দেখলে নেগেটিভ কিছু ভেবে নেবে।” – “আপনি একা সামলাতে পারবেন তো?” – “সমস্যা নেই আমি সামলে নেব। আপনি চিন্তা করবেন না।” – “প্রয়োজন হলে ডাকতে দ্বিধা করবেন না।” – “ওকে।” দিয়া যাওয়ার আধ ঘন্টা পর শায়খের ফ্রেন্ড অয়ন এলো। সে একজন মেডিকেলের ডক্টর। আশফি তাকে না চিনলেও সে আশফিকে চিনে। তাই কোনো সৌজন্য ছাড়াই সে ওকে বলল, – “টেনশন করবেন না ভাইয়া, আমি সব দেখছি।” – “অনেক ধন্যবাদ ভাই। এত রাতে কষ্ট করে আসার জন্য।” অয়ন দিশানকে দেখে শুনে একটা ব্যাথার ইনঞ্জেকশন পুশ করে দিলো। আর কিছু মেডিসিন লিখে দিলো। তারপর আশফিকে বলল, – “খুব উইক পয়েন্টে আঘাতগুলো করা হয়েছে। ভেতরে কোনো ক্ষয় ক্ষতি না হলেও সুস্থ হতে সপ্তাহখানেক লেগে যাবে। কারণ শরীরে ব্যাথা হবে প্রচুর।” – “আর কোনো প্রবলেম হবে না?” – “আমার যতটুকু মনে হয় ওকে কোনো ভারী কিছু দিয়ে আঘাদ করা হয়নি। কিল, ঘুষি পড়েছে প্রচুর। তাই সাংঘাতিক কিছুই হবে না। টেনশন করবেন না বেশি।” – “অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।” – “ভাইয়া এতবার ধন্যবাদ দিতে হবে না। আমি এখন আসি তাহলে?” – “হ্যাঁ চলো, আমি তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসছি।” আশফি অয়নকে নিজের গাড়ি করে পৌঁছে দিয়ে এলো। তারপর বাসায় ফিরে দেখল শায়খ দিশানের পাশে বসে আছে। আশফি ওকে বলল, – “অনেক জলদি এসে পড়েছিস।” – “যে স্পীডে চালিয়েছি গাড়ি! দিনের বেলা হলে কী হতো আল্লাহ পাক জানে।” আশফি দিশানকে জাগ্রত দেখে ওর পাশে এসে বসল। দিশানকে বলল, – “কথা বলতে পারবি?” দিশান কপালের ওপর হাত রেখে বলল, – “আমি ওদের চিনি না। কারণ মুখটাও দেখতে পারিনি। বাসার খুব কাছ থেকে ওরা আমাকে ধরেছিল। গাড়িতে ওঠানোর পর আমাকে চেপে ধরে চারজন মিলে তাদের হাতের কিল, ঘুষি মারতে শুরু করল। প্রত্যেকের মুখ বাঁধা ছিল। এর মাঝে আমাকে একজন বাবা-মা তুলে গালাগাল দিয়ে বলল, আমি মাহির ফিগার দেখে কুত্তার মতো ওর পিছে ঘুরি। এরপর থেকে কীভাবে ঘুরব সেটাই দেখবে সে। মানে মাহির সঙ্গে মেশার জন্যই আমার এই ফল।” আশফি হাতের মুঠো শক্ত করে ভাইয়ের কথাগুলো মনযোগ সহকারে শুনল। এরপর আবার দিশান বলল, – “গাড়ির নাম্বারটা লিখে নাও।” আশফি দ্রুত পেন আর পেজ নিয়ে দিশানের থেকে চট করে নাম্বারটা লিখে নিলো। তারপর বলল, – “আমার সন্দেহ সত্য হলে তার জন্ম পরিচয় আমি ভুলিয়ে দেবো। তুই রেস্ট নে। আমি আজ রাতের মধ্যেই সব খোঁজ নেব।” শায়খ তখন বলল, – “কোনো ডায়েরী করবে?” – “আগেই না, তবে তুই তোর ইউনিফর্ম ছাড়া ওদের সার্চ করবি।” আশফি শায়খকে নিয়ে তখনই বের হলো। গাড়ির নাম্বারের মাধ্যমে অনুসন্ধান করল একটি কার ব্যবসায়ী ছেলেকে। তার ইনফরমেশন জোগাড় করল, তার বন্ধুমহলে আছে কে কে তাও খোঁজ করল। যাদের নাম আশিক, ফয়সাল, সোম আর রিমন। এরা ওর সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। যাদের সঙ্গে ও দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায়। সোম নামটা শোনার পর আশফির মাথার তালু অবধি জ্বলে উঠল। মাহির উডবি সোম সম্পর্কে ঐন্দ্রীর বলা বৃত্তান্তের সঙ্গে এই সোমের নেচারের পুরো মিল পেল আশফি। যা আশফি প্রথমেই ডাউট করেছিল দিশানের কথাগুলো শুনে। একটা কারণবশত সোমের সাথে মাহির ওপরও আশফির প্রচন্ড রাগ হলো। মাহির সঙ্গে তো সে বিষয়ে কালই কথা বলবে সে। আর তারপরই সে সোমের ব্যবস্থা করবে। শায়খ সবকিছু ইনফরমেশন পেয়ে বলল, – “তুলে নিয়ে আসি সবগুলোকে।” আশফি মাথার পেছনে হাত দিয়ে মাথা চুলকিয়ে বলল, – “মগজ খুব গরম শায়খ। ওদেরকে পুলিশের আওতায় দিলে আমার মাথা ঠান্ডা হবে না। আর তাছাড়া মেয়েলিপূর্ণ একটা ব্যাপার আছে। এসবের মাঝে আমি তাকে জড়াতে চাইছি না। কারণ এসব ব্যাপার কোর্টে উঠলে মেয়েদের সাত পাঁচ নিয়ে কথা উঠে যায়। খুব ঘোলাটে করে ফেলে ব্যাপারটাকে ওরা। তখন তার চরিত্র সংক্রান্তও কথা বার্তা উঠে আসতে পারে। উকিলের ভাষা তো জানিসই।” – “তো তুমি ওই মেয়ের চিন্তা করে ওদের ছেড়ে দেবে? মেয়ে তো কী হয়েছে? নিজেদের তো আর কেউ না।” – “আমি বললাম না আমি তাকে এই ব্যাপারে জড়াব না? আর কোনো কথা বলবি না। ছেড়ে তো দেবো না কোনোভাবেই ওদের। হাত দিয়েছে কোথায় আর কাকে সে বাবা-মা তুলে গালাগাল করেছে তা দেখাব না?” …………………………….. (চলবে) – Israt Jahan Sobrin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে