তুমি রবে ১৪
.
.
আশফিকে এমন তড়িঘড়ি করে ছুটে আসতে দেখে দিশান আর মাহি এক সঙ্গেই চমকে তাকাল আশফির দিকে। দিশান অনেকটা নাটকীয়ভাবে বিস্ময় মুখ করে চেয়ে ওকে বলল,
– “ভাইয়া কী হয়েছে? কোনো সমস্যা? এভাবে ছুটে এলে যে?”
দিশানের প্রশ্নে আশফির কিছুটা হতবুদ্ধি অবস্থা। সে কিছু না বলে একবার মাহির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে লিফ্টে ঢুকে গেল। দিশান আর মাহিও ঢুকল তারপর। লিফ্ট চতুর্থ তলা না পৌঁছানো অবধি আশফি বাঁকাদৃষ্টিতে ওদের দুজনকে লক্ষ্য করতে থাকল। আগের তুলনায় দিশান খুব বেশিই যেন মাহিকে অ্যাটেনশন দিচ্ছে। আর মাহিও, মুখটা নিচু রেখে দিশানের কথাই মুচকি মুচকি হাসছে। আশফির কাছে তার ভাইয়ের অ্যাটিটিউড খুবই পরিচিত। মেয়ে পটানোর প্রথম স্টেপ মেয়েদের সঙ্গে জোকারের মতো হাসি তামাশা করে কথা বলা। আর সেটা এখন সে মাহির ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করছে। সে বুঝতে পারছে না রাগটা মূলত তার কার ওপর হচ্ছে। কিন্তু তা যে অত্যাধিক পরিমাণ হচ্ছে তা সে বুঝতে পারছে।লিফ্ট থেকে বেরিয়ে আশফি হনহনিয়ে হেঁটে তার কেবিনে চলে গেল। বেলা দশটা অবধি সে বহুকষ্টে রাগকে সংযত রেখে তারপর মাহিকে ডেকে পাঠাল।
মাহি দরজাতে নক করলে আশফি তাকে ভেতরে আসার পারমিশন দিয়ে সরাসরি বলল,
– “এত সময় লাগে আসতে?”
মাহি তাজ্জব বনে গেল। সে বলল,
– “সময় লাগল কোথায়? আসার পথে খুশি ম্যামের সাথে কথা বলেছি তাও তো এক মিনিটও হয়নি।”
আশফি বুঝতে পারল সে তার পার্সোনালিটির বাহিরে চলে আসছে। এমন ধরনের আচরণ তো সে তার কোনো এমপ্লয়ির সঙ্গে করে না। আবার মাহির দিকে তাকিয়েও সে কথা বলতে পারছে না। এক অবর্ণনীয় বিশ্রী পরিস্থিতির মাঝে পড়তে হচ্ছে তাকে। এবার সে মাহির দিকে তাকাল। দেখল মাহিও দৃষ্টি নিচে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। অপ্রতিভ অবস্থা তারও। এই পরিবেশটাকে খুব দ্রুতই স্বাভাবিক করে তুলতে হবে তাকে। সে দাঁড়িয়ে গতকালকের প্রজেক্ট ফাইল হাতে নিয়ে বলল,
– “আসুন আমার সাথে।”
মাহি প্রশ্ন করল,
– “কোথায়?”
আশফি যেতে পথে থেমে বলল,
– “আজকের কনফারেন্সে আপনি প্রেজেন্টশন দেবেন। পারবেন না?”
– “কিন্তু স্যার এটা তো খুশি ম্যামের….”
– “আমি আপনাকে বলছি যেহেতু আপনাকেই করতে হবে। পারবেন কি না সেটা বলুন?”
– “চেষ্টা করব।”
– “এটাই এনাফ।”
কাগজগুলোর ফাইল মাহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে কনফারেন্স রুমের দিকে যেতে থাকল তারা। রুমে পৌঁছানোর মিনিট দুইয়ের মাথায় খুশি এসে তার পূর্বের আচরণ বজায় রেখে রুমে ঢুকল। এবার আশফি তাকে আর কিছু বলল না তার এই হুড়মুড়িয়ে ঢোকার জন্য। তাকে দেখে সে আনোয়ারকে বলল,
– “খুশি ম্যামের লেটারটা আর তার অ্যাডভান্স সেলারি রেডি করেছেন?”
– “জি স্যার, সব রেডি।”
– “দিয়ে দিন ওনাকে।”
খুশি বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারল আশফির কথা শুনে। সে আশফির কাছে দাঁড়িয়ে বলল,
– “স্যার আমার ছেলেটা খুব অসুস্থ ছিল তাই হঠাৎ করেই দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। আমি তো দরখাস্ত….”
আশফি তার কথা থামিয়ে বলল,
– “আমি আপনার কাছে আপনার অ্যাবসেন্টের ব্যাপারে কোনো কৈফিয়ত চাইনি। আপনি সবসময়ই নিজের কাজের অর্ধেকটা আপনার এমপ্লয়িদের কাঁধে চাপিয়ে দেন। এর আগেও আমি আপনাকে সাবধান করেছি বহুবার। আপনি তা শোনেননি। এবার আমাকে এই স্টেপটা নিতে বাধ্য করেছেন আপনি। একজন নতুন কর্মীর ওপর আপনি আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টের কাজ কী করে চাপিয়ে দিলেন আমি সেটা ভেবেই স্তব্ধ। যে কাজটা আরও দশদিন আগে আপনার কমপ্লিট করার কথা ছিল।”
– “স্যার ভুল হয়ে গেছে। আর একটা সুযোগ দিন। এভাবে মাসের মাঝামাঝিতে এসে আমাকে বের করে দিলে সংসার চালাতে পারব না আমি। কারণ আমার হাজবেন্ড থাকেন না আমার সঙ্গে।”
– “দেখুন এসব ব্যক্তিগত কথা আমি শুনতেও চাই না আর জানতেও চাই না। আর মাসের মাঝামাঝি বলেই আমি আগামী মাসের ফুল সেলারি দিয়েছি আপনাকে। আপনি আসতে পারেন।”
আশফি আনোয়ারকে ইশারা করল খুশিকে নিয়ে যেতে। খুশির আকুতি মিনতি দেখে মাহির প্রচন্ড কষ্ট লাগল। ইচ্ছে করল আশফিকে বলতে যেন সে খুশিকে ফায়ার না করে। কিন্তু তা তো বলা সম্ভব নয়।
কনফারেন্স রুমে দিশান, আশফি, মাহি, মিলি আর ইন্ডিয়া থেকে আগত তিনজন এ প্রজেক্টের শেয়ারহোল্ডার। আশফি শুরুর দিকে এই নতুন প্রজেক্টের কিছু হিন্টস বর্ণনা করে মাহিকে ইশারা করল প্রেজেন্টশন করতে। প্রচন্ড নার্ভানেস মুখ করে সে উঠে দাঁড়াল। প্রজেক্টরের সামনে দাঁড়িয়ে থমকে থাকল কিছুক্ষণ সে। আশফি লক্ষ্য করল মাহির হাত পা কাঁপছে। আশফি তার দিকে তাকিয়ে মুখটা শান্ত করে সে মাহিকে চোখের ইশারায় সাহস দিলো। সে চোখদুটো থেকে মাহি নিজের মাঝে সাহস সঞ্চয় করে শুরু করল তার প্রেজেন্টশনের কাজ। আশফি মাহিকে এ কাজের দায়িত্ব অর্পণ করেছে এ কারণেই, সে গতকাল খুব মনোযোগীভাবে কাজটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছিল। তাই সবথেকে সুন্দর প্রেজেন্টশন কেউ যদি করতে পারে তো সেটা মাহিই। আর আজকে এর মাধ্যমে তার যোগ্যতাও প্রমাণ হয়ে যাবে।
মাহি প্রজেক্টের কাজগুলোকে সবার সামনে যেভাবে প্রেজেন্ট করেছে তার প্রেজেন্টশন শেষে আশফি ছাড়া প্রত্যেকে হাতে তালি দিয়ে তাকে অভর্থ্যনা জানাল। অশোক সাহা উঠে দাঁড়িয়ে আশফির সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বলল,
– “প্রজেক্টের প্ল্যানিংগুলো সত্যিই দারুণ লেগেছে আমাদের। তাহলে আগামী মাস থেকেই কাজটা শুরু করি আমরা।”
আশফিও হেসে বলল,
– “অবশ্যই।”
একে একে তিনজনই আশফি আর দিশানের সাথে হাত মেলাল। এর মাঝে ইন্দ্রনীল রায় যে আশফির মতোই একজন ইয়াং বিজনেসম্যান, সে মাহির সঙ্গে এসে হাত মেলাল। এই ব্যাপারটা আশফির কাছে দৃষ্টিকটু না লাগলেও মাহির পা থেকে মাথা অবধি খুঁটে খুঁটে দেখা তার চাহনি দেখে আশফির মেজাজ বিগড়ে গেল। দিশান লক্ষ্য করল ভাইয়ের দৃষ্টি। তারপর সে ইন্দ্রনীলকেও লক্ষ্য করল। অনেকটা জঘন্য দৃষ্টিতেই সে মাহির শরীরের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে তার সঙ্গে। এক পর্যায়ে সে তার পকেট থেকে তার ভিজিটিং কার্ড বের করে মাহির হাতে ধরিয়ে দিলো। কানের কাছে কনিষ্ঠা আর বৃদ্ধা আঙুল তুলে তাকে ফোন দেওয়ারও ইশারা করল। ব্যাপারটাতে মাহি তখন কিছুটা অপ্রস্তুবোধ করছিল। আশফির এগোনোর পূর্বেই দিশান গিয়ে ইন্দ্রনীলকে বলল,
– “স্যরি আসলে একটু দরকার ছিল ওনাকে আমার।”
– “হ্যাঁ শিওর।”
দিশানের আগমনে মাহিও যেন অনেকটা স্বস্তি পেল। আর আশফির মাথাও তখন ঠান্ডা হলো। দিশান মাহিকে নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
লাঞ্চ টাইমে ঐন্দ্রী অফিসে ঢুকল। মুখটা তার খুব মলিন। ভেতরে ভেতরে সে আশফিকে না পাওয়ার চিন্তাতে একদম ভেঙে পড়ছে। তার জীবনে সে বহু ছেলের প্রপোজাল পেয়েছে। কখনো কারো প্রেমের জালে সে জড়ায়নি। যেদিন সে তার বাবার কাছে আশফির ছবি দেখেছিল সেই মুহূর্ত হতেই সে আশফির প্রতি এক মিষ্টি অনুভূতি অনুভব করেছে। এক পর্যায়ে তা আজ ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। মাহি তখন তার ডেস্ক গুছিয়ে লাঞ্চে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আনমোনা হয়ে ঐন্দ্রীকে হাঁটতে দেখে মাহি তাকে পিছু থেকে ডাকল।
– “কেমন আছিস ঐন্দ্রী?”
ঐন্দ্রী পিছু ঘুরে মাহিকে দেখে ম্লান হেসে বলল,
– “এইতো ভালো।”
– “তোকে দেখে মনে হচ্ছে তুই সিক। ঠিক আছিস তো?”
– “হ্যাঁ ঠিক আছি। আমি একটু তোদের বসের সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। তোর সঙ্গে পরে কথা বলছি দোস্ত।”
মাহি ঐন্দ্রীর দিকে তাকিয়ে স্থির চাহনিতে বলল,
– “ওকে।”
মাহির মনে হলো ঐন্দ্রী প্রচন্ড আপসেট কোনো ব্যাপারে। তাই বেশি কিছু জানতে চাইল না সে। এর মাঝে দিশান আর আশফি কেবিন থেকে বেরিয়ে একসঙ্গে হেঁটে আসছিল করিডোরে। ঐন্দ্রীকে দেখে দুজনেই থমকে গেল। তার অবস্থা সত্যিই চোখে লাগার মতো। দিশান তার কাছে এসে বলল,
– “এ কী অবস্থা তোমার ঐন্দ্রী?”
ঐন্দ্রী মুখটা মলিন করে আশফির দিকে চেয়ে বলল,
– “দশটা মিনিট সময় হবে তোমার ভাইয়ের? কিছু কথা বলতাম।”
দিশান আশফির দিকে ঘুরে তাকাল। মাহিও দূরে দাঁড়িয়ে ওদের লক্ষ্য করছিল।
আশফি ঐন্দ্রীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– “লাঞ্চ করে এসেছো?”
ঐন্দ্রী নজর কফিমগে রেখে কফিটাতে স্পুন ঘুরাতে থাকল শুধু। তারপর বলল,
– “আশফি তুমি আমাকে কিছু কথার ডিরেক্টলি অ্যান্সার দেবে?”
– “বলো।”
– “তুমি আমাকে পছন্দ করো?”
আশফি জিজ্ঞেস করল,
– পছন্দ বলতে ঠিক কী হিসেবে?”
– “অ্যাস অ্যা লাইফ পার্টনার।”
– “আমি আমার লাইফ পার্টনার কখনো তার শুধু বাহিরের সৌন্দর্য দেখে বাছাই করব এমনটা নয় কিন্তু। আর তুমি এমন একটা মেয়ে যে সবকিছুতেই পারফেক্ট আমার পরিবারের কাছে। হ্যাঁ তুমি সত্যিই পারফেক্ট একটা মেয়ে যাকে লাইফ পার্টনার হিসেবে যে কেউই চুজ করবে।”
– “তাহলে আমার ক্ষেত্রে সমস্যাটা কোথায় তোমার?”
– “সমস্যা তোমার নয় ঐন্দ্রী, সমস্যা আমার। আমি আমার জীবনের সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত নেব, সেখানে আমার মন স্থির নয ঐন্দ্রী। কেন স্থির নয় তা আমি জানি না। আর এই স্থিরহীন মনে তোমাকে গ্রহণ করে পরবর্তীতে সম্পর্কটাকে তিক্ততায় পরিণত করতে চাই না। আর তাই আমি সময় চেয়েছি শুধু। আমার মনটাকে আর পাঁচজন সাধারণ পুরুষের মতো সাংসারিক জীবনটাকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত করতে চাই। আর এই সমযটাই আমার খুব প্রয়োজন।”
– “বুঝেছি। আমাকে তবে অপেক্ষা করতে হবে তাই তো?”
– “আমি তো একবারও বলিনি আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে তোমায়। তুমি আমার থেকেও বেটার অপশন বা তোমার মনের মতো কাউকে পেলে তুমি অবশ্যই তাকে গ্রহণ করতে পারবে।”
– “একটা মেয়ে তোমার জন্য কতটা পাগল তা তুমি তার কথা আর আচরণে অবশ্যই বুঝতে পারো। তাহলে তুমি এ কথা কী করে বলতে পারো আমাকে? ওকে, আমি তবে অপেক্ষা করব আশফি। আমার কোনো আপত্তি নেই। ভেবেছিলাম হয়তো আমি আসার পূর্বে বা আমার পরই তোমার জীবনে কেউ চলে এসেছে। তার জন্য হয়তো তুমি আমাকে….। কিন্তু এমন কিছুই নয। তবে আমি অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। আর কাল থেকে আমি তোমার অফিসেও জয়েন করছি আবার।”
আশফি নীরবে মাথা নাড়াল শুধু।ঐন্দ্রী তার ঠোঁটের অংশ লাল দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
– “তোমার ঠোঁটে কী হয়েছে?”
এ প্রশ্নে আশফির এবার সত্যিই অপ্রতিভ অবস্থা। সে একটু আমতা আমতা সুরে বলল,
– “ধাক্কা খেয়েছিলাম।”
– “কীভাবে?”
– “আ! আসলে…রাতে…”
এটুকু কথা তুতলিয়ে বলে সে থেমে গেল। কথাগুলো সত্য বলা যে তার পক্ষে সম্ভব না তা সে জানে। এদিকে মিথ্যাও সে সাজিয়ে বলতে পারে না। জিহ্বার ডগা দিয়ে সে ঠোঁটদুটো একটু ভিজিয়ে নিলো। কথগুলো সে কী করে বলবে এটা ভেবেই তার অস্বস্তি হচ্ছে। এ প্রশ্নের মুখোমুখি যে তাকে কোথাও না কোথাও হতে হবে তা সে জানলেও কিন্তু তার নিজের অবস্থা এমন বেহাল হবে তা সে ভাবেনি। মাহি যদি তার গার্লফ্রেন্ড হতো তাও সে বলতে এতটা ভাবত না। ঐন্দ্রী আশফির এমন সংকোচজনক মুখ দেখে তার মনে হলো সে যেন বিরাট লজ্জাজনক একটি প্রশ্ন করেছে তাকে।
– “আশফি? কোনো সমস্যা?”
– “না কোনো সমস্যা না। আসলে কাল রাতে ঘুম চোখে ওয়াশরুমে ঢুকে দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিলাম। আর তারপর ঠোঁটটা কেটে গিয়ে এই অবস্থা।”
ঐন্দ্রী হেসে উঠল আশফির কথাতে। হাসতে হাসতে বলল,
– “এমনটাও সম্ভব তোমার দ্বারা?”
আশফি তার কথার কোনো উত্তর দিলো না। একবার মাহির দিকে তাকাল সে। মাহিও তখন আশফির দিকেই তাকিয়ে ছিল। ওর নজরে তার নজর পড়তেই দ্রুত দৃষ্টি প্রস্থান করে নিলো সে।
মাহি আর দিশান দূরের একটি টেবিলে বসে লাঞ্চ করছিল। আর মাহির আড়দৃষ্টি তখন বারবার ওদের ঘুরে ঘুরে দেখছিল। মাহি বুঝতে পারে না, ওদের দুজনকে যখন ও খুব কাছাকাছি দেখে তখন একটা অত্যাধিক অজ্ঞেয় পীড়া বোধ করে সে। চেয়ে দেখতে পারে না ওদের সেই কাছাকাছি থাকার দৃশ্য। তার উপর কাল রাতের ঘটনা যেন কোনোক্রমেই একটা মুহূর্তের জন্য তার মাথা থেকে সরছে না। এ অবস্থায় বহু কষ্টে সে লাঞ্চ অবধি অফিস করেছে। কিন্তু এখন আর মনে হচ্ছে না সে সারাবেলা কাটাতে পারবে। লাঞ্চ শেষে সে আশফির কেবিনে এলো। আশফি তাকে দেখে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে দৃষ্টি ফিরিযে নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “কী প্রয়োজন বলুন?”
– “অফিসটা আমি আজ সারাবেলা করতে পারব না স্যার। কিছুটা অসুস্থ বোধ করছি। ছুটিটা এখন পাওয়া যাবে কি?”
আশফি এবার মাহির দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলল। বলল,
– “আমি তো দেখতে পাচ্ছি আপনি সুস্থ আর স্বাভাবিক।”
কথাখানা শুনে মাহির অসহ্য পরিমাণ রাগ হলো। কিন্তু তা অপ্রকাশ্য রেখে বলল,
– “স্যার অসুস্থতা সবসময় বাহিরের চেহারায় প্রকাশ পায় এমনটা তো নয়। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি অফিস আওয়ার শেষেই বের হবো।”
কথাগুলো বলে মাহি আর এক মুহূর্ত দাঁড়াল না। একে তো রাগ তার উপর বিব্রতবোধ। আশফির দিকে তাকিয়ে কথা বলার সময় সে লক্ষ্য করেছিল তার নিচের ঠোঁটের এক পাশ বেশ লাল। মাহির ভাবনা হতে থাকল এটা গতকাল রাতে তার ভুলের কোনো অংশ কি না। যদি তাই হয় তবে এবার সে এই মরমে মরেই যাবে। অনেক কষ্টে নিজেকে ধাতস্থ রেখে সে এত সময় তার অফিসে বসে কাজ করেছে। কিন্তু এ দেখার পর তো তার ছুটে পালাতে ইচ্ছা করছে এখান থেকে।
অফিস আওয়ার শেষ করে মাহি বাহিরে দাঁড়িয়ে উবারের জন্য ওয়েট করছে। দিশান তখন এসে বলল,
– “হেই সুন্দরী!”
মাহি পিছু ফিরে দিশানকে দেখে একটা হাসি দিলো। দিশান বলল,
– “বাসায় ফিরবে এখন?”
– “হ্যাঁ। তুমি কোথাও যাচ্ছো না কি?”
– “হ্যাঁ আমাদের ওই বাংলোতে যাব একটু। ফটোশ্যুট চলছে তো, একটু দেখেশুনে আসতে হবে।”
– “ফটোশ্যুট?”
– “ভাইয়ার নিউ বিজনেসের মডেলিংয়ের ফটোশ্যুট চলছে বাংলোতে।”
– “আমাদের এই কম্পানির কথা বলছো?”
– “না না, এটা তো আমাদের বাবার বিজনেস আমাদের সামলাতে হচ্ছে। আর ভাইয়া নিজে একটা বিজনেস ওপেন করেছে স্বর্ণের। কোহিনূর পার্ল। গোল্ডের বিজনেসে একদমই নতুন আমাদের এই কালেকশনগুলো। তুমি চলো ঘুরে আসবে আমার সঙ্গে। বাংলোটাও এখন ফুল কমপ্লিট আর ফটোশুটের জন্যও বেশ দারুণভাবে অ্যারেজ্ঞমেন্ট করা হয়েছে। গেলে তোমার মনটাই ফুরফুরে হয়ে উঠবে।”
– “আজ থাক দিশান। অন্য কোনোদিন যাব।”
– “আরে শ্যুট কি প্রতিদিনই হবে? চলো চলো, তুমি তো শুধু বাড়ি, অফিস আর ভার্সিটি। এর বাহিরেও কখনো কখনো বের হতে হয় ডিয়ার।”
– “প্লিজ দিশান ছেড়ে দাও আজ। কথা দিচ্ছি, অন্য একদিন ঘুরব।”
দিশান মুখটা গম্ভীর করে বলল,
– “তুমি আমাকে খুব খারাপ কিছু ভাবো তাই না?”
– “দিশান এমন কিছুই নয়। এরকম হলে তো তোমার সঙ্গে কথাই বলতাম না।”
– “তাহলে যাবে না কেন?”
মাহি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
,- “আচ্ছ চলো। তুমি যে এতটা ইমোশনালও হতে পারো জানা ছিল না।”মাহির উবার এসে হাজির। দিশান আর মাহি এক সঙ্গে উঠে বসলো। এরপর মাহিকে বলল,
– “কোনো ইমোশনাল নয় ডিয়ার। একটু নাটক করলাম আর কী!”
দিশান হেসে উঠল আর মাহিও তখন ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
বাংলোতে এসে দিশান সবকিছু দেখে আশফিকে কল করল। আশফি রিসিভ করতেই সে বলল,
– “ভাইয়া একবার তোমার আসা জরুরি।”
– “আমি মাত্র চেঞ্জ করলাম। আমাকে আসতে হবে কেন?”
– “অ্যারেজ্ঞমেন্টটা আমার ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। মাহিকে জিজ্ঞাসা করলাম, ওর কাছেও কেমন যেন লাগছে। তুমি এসে দেখলে ব্যাপারটা ভালো হবে।”
– “ওয়ান সেকেন্ড, মাহি মানে? মাহি কি তোমার সঙ্গে?”
– “হ্যাঁ আমরা একটু দখিনা বাতাস উপভোগ করতে এসেছি তোমার বাংলোতে। এখানে আসলে মুডটা খুব রোমান্টিক হয়ে যায় না!”
শেষ কথাটা বলে দিশান ঠোঁট চেপে হেসে উঠল।আশফি ফোনটা কেটে সেটা ঠাস করে বিছানাতে ফেলল। এবার তো ওর দুজনের ওপরই সমান রাগ চড়ে উঠেছে। ক্লোজেট থেকে নেভি ব্লু শার্ট আর ব্ল্যাক কালার প্যান্ট বের করে গাড়ির চাবি নিয়ে দ্রুত পরে মোবাইল আর ওয়ালেট পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বেরিয়ে পড়ল। আধ ঘন্টার পথ পঁয়তল্লিশ মিনিটে এসে পৌঁছানোর জন্য মেজাজ আরও বেশি নষ্ট হয়ে গেল। মাহি আর দিশান তখন পুলে পা ডু্বিয়ে বসে হেসে হেসে দুজন গল্পে মশগুল। আশফি ক্রুদ্ধ চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে মাহিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– “বাহ্! এখন আর তার অসুস্থবোধ হচ্ছে না।”
আশফি ওখানে দাঁড়িয়েই দিশানকে কল করল। দিশান ভাইয়ের কল পেয়ে নজর পিছু আসতেই ভাইকে দেখে উঠে দাঁড়াল। ওরা দুজন এসে আশফির কাছে এলো। মুহূর্তেই মাহির মুখটা তখন চুপসে গেছে। সেটাই আশফি খেয়াল করল। তাই সে মাহির দিকে সরু চোখে তাকিয়ে দিশানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– “ডিস্টার্ব করে ফেললাম না কি?”
– “আরে কী যে বলো! ডিস্টার্ব হবো কেন? তুমি একবার তোমার মডেল তনুজার থেকে ঘুরে এসো।”
আশফি চাপা রাগ রেখে বলল,
– “আর তোমরা?”
– “আমরাও তো আসছি।”
এমন মুহূর্তে দিশানের কল এলো। সে কিছুক্ষণ বেশ সিরিয়াস মুখ করে ফোনের ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনল। তারপর ফোন কাটতে সে আশফিকে বলল,
– “আমাকে যেতে হবে ভাইয়া। সৌরভ ওর গার্লফ্রন্ড নিয়ে ভেগে এসেছে। ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে আমাদের।”তারপর মাহিকে বলল,
– “তোমাকে সঙ্গে নিয়ে এসে একা ছেড়ে যেতে হচ্ছে ডিয়ার।”
ভাইকে এবার বলল,
– “ভাইয়া তুমি প্লিজ একটু কষ্ট করে লিফ্ট দিও।”
– “এভাবে অনুরোধ করার কী আছে? দেবো না কেন?”
দিশান ওদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আশফি তখন বলল,
– “একটু লেট হবে আমার। অপেক্ষা করতে সমস্যা আছে?”
মাহি মাথানিচু করে বলল,
– “না।”
– “চলুন ওখানে যাই।”
ফটোশ্যুটটা হচ্ছে একজন বাঙালী নারীর বধূবেশে তার গহনা দ্বারা সজ্জিত কিছু মুহূর্ত। কিন্তু তনুজা সে শাড়ীর বদলে বর্তমান ফ্যাশনেবল একটি লেহেঙ্গা পড়ে ফটোশ্যুট করছে। যেটা এই ডেকোরেশন আর তার আশফির সিলেক্ট করা থিমের সঙ্গে একদমই ভিন্ন আর বেমানান। সে ফটোগ্রাফারকে থামতে বলে কস্টিউম ডিজাইনার আরিফকে বলল,
– “আরিফ তোমাকে তো বলেছিলাম বেনারসির লাল শাড়ীতে ফটোশ্যুট হবে। সবুজ ঘাসের সঙ্গে লাল বেনারসি শাড়ী। তুমি এটা কি কস্টিউম দিয়েছো?”
আরিফ তনুজার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার পূর্বে তনুজা বলল,
– “মিঃ আশফি আরিফের দোষ নেই। আসলে আমার কাছে মনে হয়েছে এখনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই কস্টিউমটাই বেটার হবে। আর তাছাড়া আমি শাড়ীতে কমফোর্ট ফিল করি না, বেনারসিতেও আমার অ্যালার্জি।”
তনুজার শেষ কথা শুনে মাহির কিছুটা হাসিই পেল। আশফি তনুজাকে বলল,
– “বেনারসিতে অ্যালার্জি? ঠিক আছে তবে অন্য কোনো শাড়ীর ব্যবস্থা করছি।”
– “আমি কিন্তু বলেছি আমি শাড়ীতে কমফোর্ট ফিল করি না।”
– “আশ্চর্য! আপনি তো আর সারাবেলা পরে বসে থাকবেন না। আর তাছাড়া আপনার এত অসুবিধা দেখতে গেলে তো আমার থিমটাই পাল্টে যাবে।”
তনুজা এবার ঘাসের ওপর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
– “দেখুন, আমি কোনো কোম্পানিতে অ্যাম্বাসেডরের কাজ করলে সেখানে আমার সুবিধাই আগে দেখা হয়। আর আপনার থিম কেন পাল্টাবে? শুধু শাড়ীর বদলে ল্যাহেঙ্গা। এই ব্যাপারটাই বেশি ফ্যাশনেবল।”
– “আমি এখানে ফ্যাশনেবলটা হাইলাইট করছি না ম্যাম তনুজা। আমার এখানে মূল থিম বাঙালিয়ানা। আর বাঙালী বলতে আমরা শাড়ীটাকেই বুঝি। আপনার ল্যাহেঙ্গাকে নয়। তাই শ্যুটটাও হবে শাড়ীতেই।”
– “কিন্তু আমি যদি কমফোর্ট ফিল না করি তবে শ্যুটটা কী করে করব?”
– “দুই ঘন্টার জন্য আপনার আরামে বেশি ব্যাঘাত ঘটবে না ম্যাম। আপনি চেঞ্জ করে আসুন প্লিজ।”
– “সম্ভব নয়। আমি শ্যুট করলেই এই কস্টিউমেই করব।”
এবার আশফির এতক্ষণ বেঁধে রাখা রাগের লাগাম ছুটে গেল তনুজার ত্যাড়ামিতে। আশফি বলল,
– “কিন্তু আমি তো এভাবে শ্যুট নেব না।”
– “আপনি কিন্তু বেশিই পেচিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপারটাকে। আমাকে নিয়ে যারা কাজ করেছে তারা আমার সুবিধাই আগে দেখেছে।”
– “আপনার সুবিধা আমি অবশ্যই দেখব। তাই বলে ইললজিক্যাল ব্যাপার তো আমি গ্রহণ করতে পারব না আমি।”
– “তাহলে আমার পক্ষেও শ্যুটটা করা সম্ভব নয়।”
– “ওকে ফাইন, তাহলে আসতে পারেন।”
মাহি অবাক হলো আশফির ডিসিশনে। সে নিচুস্বরে আশফিকে বলল,
– “কী করছেন আপনি? এতে তো আপনারই লস হবে।”
আশফি ওকে বলল,
– “তাই বলে তার হাতে পায়ে ধরেও রাখব না।”
এরপর তনুজাকে বলল,
– “আর হ্যাঁ, আমি আপনাকে ডিল থেকে বের করিনি। আপনি চলে যাচ্ছেন। তাই পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।”
– “আপনি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? আপনি জানেন আমি কাদের সঙ্গে কাজ করেছি? আপনি তাদের পায়ের আঙুলের কাছেও যেতে পারেননি।”
– “হ্যাঁ আমি জানি আপনি কাদের সাথে কাজ করেছেন। আর আমার তাদের পায়ের আঙুলের কাছেও যাওয়ার ইচ্ছা নেই। গেলে আপনাকেই যেতে হয়। আর আমি কোনো হুমকি দিচ্ছি না। আইনীভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ডিলপেপাড়েই ছিল আমি তার কথাই বলছি।”
আরিফকে এবার বলল,
– “আরিফ তুমি তোমার লোকজনকে নিয়ে এখন যাও। আর কোনো শ্যুট হবে না।”
– “স্যার ব্যাপারটা ভেবে দেখুন। আমাদের মাস দুইয়ের মাঝেই বিজ্ঞাপন রেডি করতে হবে।”
মাহিও আশফিকে বলল,
– “উনি ঠিকই বলছেন। ক্ষতিটা আপনারই হবে। তার চেয়ে আপনারা স্যরি বলে ব্যাপারটা মিমাংসা করে নিন।”
আশফি চেঁচিয়ে মাহিকে বলল,
– “আপনার থেকে সাজেশন নিতে হবে আমি কী করব?”
আরিফকেও চেঁচিয়ে বলল,
– “তোমাকে কী বললাম? কোনো শ্যুট হবে না। সবাইকে এখান থেকে নিয়ে যাও।”
আশফির এমন আচরণে মাহি প্রচন্ড অপমানবোধ করল। সবাই একে একে বিদায় নিলো। এরপর মাহিও আর দাঁড়িয়ে থাকল না। সে যেতে গেলে আশফি তাকে পেছন থেকে বলল,
– “আপনাকে কখন যেতে বলেছি আমি?”
মাহি চড়া কণ্ঠে উত্তর দিলো,
– “আমি এখানে কারো এমপ্লয়ি নই যে কারো অনুমতি গ্রহণ করে আমাকে যেতে হবে বা থাকতে হবে।”
এই বলেই মাহি বেরিয়ে গেল বাংলো থেকে। রাগ ধরে না রাখতে না পেরে আশফি চেয়ারে লাথি মেরে বসল। প্রায় দশ মিনিটের মাথায় আশফির কাছে দিশানের কল এলো। রিসিভ হওয়ার পর ওপাশ থেকে দিশান বেশ উতলা কণ্ঠে বলল,
– “ভাইয়া মাহিকে তুমি একা ছেড়েছো কেন?”
আশফি রাগীস্বরেই জিজ্ঞেস করল,
– “আমি ছাড়িনি সে নিজেই চলে গিয়েছে। কেন তোমাকে কী বলেছে সে?”
দিশান ওপাশ থেকে যা বলল তা শোনা মাত্রই আশফি ফোনটা কান থেকে নামিয়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল বাংলো থেকে।
……………………………….
(চলবে)
– Israt Jahan Sobrin
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.