তুমি রঙিন প্রজাপতি পর্ব-২৭

0
984

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি
#writer ঃSumaiya_Afrin_Oishi
#পর্বঃ২৭( প্রথম অংশ)

ডান গালে চো’ট লেগে চাঁদনী খানিকটা ছিঁটকে দূরে সরে পড়লো।তবুও মেয়েটার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। মেয়েটা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবিশ্বাস্য চোখে সামনে থাকা পুরুষটির দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো। মনে হচ্ছে, সে দিবাস্বপ্ন দেখছে। তার চোখ কে বিশ্বাস করাতে সত্যি কষ্ট হচ্ছে, এটা কি সত্যিই ফাহাদ? যাকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চাঁদ ভালোবাসলো, সেই মানুষটি আজ তার গায়ে হাত তুললো। মন বলছে এটা তার ভ্রম, এমন তার ফাহাদ নয়। কিন্তু না, চোখ কে কি করে অবিশ্বাস করাবে চাঁদ ? এটা মোটেও কাকতালীয় নয়! এটা সজ্ঞানে ঘটেছে, চরম সত্য! মুহুর্তেই চাঁদের বুক ভারি হলো, চোখ দিয়ে টুপ করে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু কণারা।

তার চোখের সামনে থাকা ছেলেটার রাগে শরীর কাঁপছে বেশ। চোখ দু’টো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। মনে হচ্ছে, এখনই এই চোখ দিয়ে ভ’স্ম করে দিবে মেয়েটাকে। একটা চ’ড় দিয়ে, এতেও শান্তি হচ্ছে না ফাহাদে’র। এমনিতেই মন- মেজাজ বিগড়ে ছিলো তার। এতক্ষণ নিজেকে বহু কষ্টে কনট্রোল রেখেছে সে। পরক্ষণে মেয়েটার অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে এভার আর সহ্য হলো না তার। কত করে বলা হলো, “আমকে একটু একা থাকতে দেও চাঁদ”। তান্মধ্যে মেয়েটা তার মুখের খাবার কেঁড়ে নিলো। সিগারেট তার পছন্দ নয়, তাই বলে কেঁড়ে নিবে? তার তো সিগারেট ভীষণ পছন্দের! এদের ছাড়া চলেছে না তার। বহু শখের প্রেমিকা এরা! ছাড়া কি এতোটাই সহজ?
অন্যের জন্য সে কেনো তার পছন্দের জিনিস ছুঁড়ে ফেলবে? নিজের সাথে এমন অন্যয় ঘুনাক্ষরেও করতে পারবে না ফাহাদ। না প্রশ্নই আসে না!
আপন সবাই ছেড়ে গেলেও এরাতো তাকে কখনো ছাড়েনি। বরং তাকে দিন দিন এদের প্রতি আসক্ত করেছে। এই যে, কত নিঃসঙ্গ রাত, এই সিগারেট তার একাকিত্বের সঙ্গী হয়েছে। কতটা চা’পা কান্না, বুক ফাঁ*টা আ’র্ত’না’দের সাক্ষী হ’য়েছে এরা। চারপাশের হ’তা’শার সাগরে যখন পা’গ’ল-পা’গ’ল লাগতো নিজেকে ততক্ষণাৎ এই সিগারেটের ধোঁ’য়া তাকে শান্ত করতো। এসব কি কম? কই তখন’তো ফাহাদ কাউকে পায়নি, কাউকে না।
আর দু’দিনের কোথাকার কোন মেয়ে এসে তার মাথায় চড়ে বসেছে।
ফাহাদ পুনরায় ফুঁসে উঠলো,লম্বা পা ফেলে এগিয়ে গেলো চাঁদের নিকটে। পুনরায় দ্বিতীয় বার হাত বাড়িয়ে চড় দিতে উদ্যত হলো। অমনি চাঁদ নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে শক্ত করে ধরে ফেললো ফাহাদে’র হাতটি। সে ও এখন আর নিজের মধ্যে নেই। এতক্ষণের কষ্ট গুলো তীব্র করো ক্রধে পরিণত হয়েছে। সে ও চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“খবরদার ফাহাদ! আর একবার আমার গায়ে হাত তোলার সাহস করো না। আমায়, আমায় তুমি কি পেয়েছোটা কি? ভালোবাসি বলে মাথায় চড়ে বসেছো হ্যাঁ? আরে আমি ভুল। আসলে তুমি কারো ভালোবাসা ডিজার্ভ করো না। আসলেই না, একদম না।কথাই আছে না,” সহজে কিছু পেয়ে গেলে মানুষ হিরাকেও কয়লা ভাবতে শুরু করে!” আসলেই। সহজে পেয়ে বসে আছো তো আমাকে, তাই দিন শেষে এতো অবহেলা করতে পারছো। ভালোবাসি বলেই, বেহায়ার মতো তোমার পিছনে পড়ে আছি।”

চাঁদ ফাহাদের হাত এক ঝটকায় ছেড়ে দিলো, তার কণ্ঠ কাঁপছে বেশ, খানিকটা দূরে সরে দাঁড়ালো সে। ফাহাদে’র চোখে চোখ রেখে পরক্ষণে থেমে থেমে বললো,

“আমি খুব বো’কা তাই না বলো…? কারণ ছাড়াই তোমার কাছে শত বায়না নিয়ে হাজির হই। আমি পা’গ’ল, তাই তো দিন শেষে রাতে জমানো সব কথাগুলো তোমাকে বলতে চাই। আমি তোমাকে ভালোবাসি,হয়তো তুমি আমাকে ঘৃণা করো। আমি তোমার মুখের একটি কথা শুনবো বলে অপেক্ষা করি, কিন্তু তুমি নিজের ভালোবাসার বিকল্প মানুষকে খোঁজার জন্য ব্যস্ত থাকো। ভা’ঙা কাঁচ যেমন জোড়া নিলেও দাগ থেকে যায়,তেমনি ভালোবাসার ক’ল’ঙ্কটাও যতই মু’ছার বৃ’থা
চেষ্টা করবে তার প্রভাব জীবনে রয়ে যায়।
আমি ভুল ছিলাম। তবে কি জানো?
“কিছু ভুল মানুষকে কাঁদায়
কিছু ভুল মানুষকে হাসায়,
আবার, কিছু ভুল মানুষকে চরমভাবে ভাবায়।”
কিন্তু সেই ভু’লগুলো উপড়ে ফেলা কখনো আমাদের সম্ভব নয়,আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে যায় জীবনের সাথে।
আমি একাই ভালোবেসেছি, তুমি তো আর ভালোবাসো না আমায়।
একতরফা ভালোবাসা বড়ই বেদনারযা ভেতরটাকে গুড়িয়ে দেয়,বিষণ্নতায় ভুগিয়ে অগোছালো করে দেয়
আমাদের সুন্দর এই জীবনকে।
থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো আজ চিরসুখে,
আমাদের মতো একতরফা ভালোবাসা মানুষগুলো
না হয় একাকী কাঁদবে ধুঁকে ধুঁকে।
অনেক তো নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে আপনার কাছে বেহায়া হলাম আমি। কিন্তু আর না। আজ, আজ তুমি মুক্ত ফাহাদ। ”

থামলো চাঁদ, তার চোখ দু’টো নোনা পানিতে চিকচিক করছে। এইতো মনে হচ্ছে এক্ষুনি গড়িয়ে পড়বে। তবুও ভাঙলো না মেয়েটা। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে দ্রুত অশ্রুকণা গুলো মুছে নিলো। খানিকটা শ্বাস ছেড়ে বারান্দা ছেড়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে পিছনে ঘুরে তাকালো। ফাহাদ নির্বাক, স্হির, জড়বস্তুর ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু তার দৃষ্টি চাঁদনীর পানে। চাঁদ হুট করেই মলিন ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসলো। হাসি মুখেই পুনরায় মৃদু কণ্ঠে আবার বললো,

“তবে কি জানো ফাহাদ?
একদিন আমার কথাও তোমারে খুব ভাবিয়ে তুলবে। মনে পড়বে আমার অহেতুক করা পাগলামি। একটা সময় তুমিও আমারে খুব দেখতে চাইবে। পাগ’লের মতো ছটফট করবে। আকাশ পানে তাকিয়ে লক্ষ তারার ভীরে আমারে খুঁজতে থাকবেন। আমারে তুমি পাবেন না। একটা সময় তুমি ও আমি বিহীন একটা অসুখে ভুগবে। ভীষণ রকমের অসুখ। আমি ছাড়া তুমি অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। আমার শূন্যতাও একটা সময় তোমাকে খুব করে পো*ড়াবে। তোমার বুকের মধ্যেখানে শুন্যতায় হাহাকার করে উঠবে।তখন তুমি বড্ড বেসামাল হয়ে পড়বে। আমাকে ছাড়া তুমি নিজেকে সামাল দিতে পারবেন না।একটা সময় তোমার বিবেক জাগ্রত হবে। তুমি নিজেই ভাববে, হিসেব করবেন আমাকে কতটা অবহেলা করেছেন।
জানো, তো একটা সময় তুমি খুব কাঁদবে আমার জন্য। খুব করে কাঁদবে। আমারে ফিরে পেতে চাইবেন। বেলায় অবেলায় তোমার মন কাঁদবে। তুমি আমাকে ছাড়া স্থির হতে পারবেন না আমাকে ছাড়া শান্ত হতে পারবেন না।একটা সময় আপনি নিজেই বলবেন কেন এত অবহেলা করলাম কেন ভালোবাসলাম না।”

লম্বা দ’ম নিলো চাঁদ। তার বারবার দ’ম আঁটকে আসছে। কথাগুলো দলা পাকিয়ে আসছে। বুকের ভেতরটা গুনে পোকারা একটু একটু করে খাবলে খাচ্ছে যেন। ভিতরটা জুড়ে অসহ্য এক যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কিসের এই যন্ত্রণা? চাঁদ আর ভাবলো না। ভাবতে চায় না কিছু। তবুও এতক্ষণ আঁটকে রাখা চোখের জলটুকু আর ধরে রাখতে পারলো না মেয়েটা। চোখের কার্ণিশ গড়িয়ে অনারব অশ্রুকণারা গড়িয়ে পড়ছে। বারংবার সেগুলো মুছার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে বাকি কথাটুকু বললো,

“তুমি পাবে না তখন আমায় ফাহাদ। তোমার থেকে চলে যাবো বহুদূর। আজ থেকে তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি, যেভাবে ছেড়ে দেয়,অসহায় রাত সূর্যের আলোর কাছে অন্ধকার ধরে রাখার চেষ্টা।তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি যেভাবে ছেড়ে দেয় সদ্য বিধবা নারী তার নাকফুল কিংবা রঙিন শাড়ি। যেভাবে বেকার যুবকটি চাকরির আসা ছেড়ে দিলো এই যুগে ভালো ফলাফলের সার্টিফিকেট নয়, মোটা অংকের ঘুষ দিতে পারাটা যোগ্যতার। তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি সেই বেকার যুবকের মতো।
তোমাকে ধরে রাখতে গিয়ে ছেড়ে এসেছি যেভাবে ছেড়ে এসেছি শৈশবের খেলনা, কৈশোরে দুরন্তপনা।তোমাকে ফেলে এসেছি, যেভাবে ছুড়ে ফেলে দেয় ক্যান্সারের রোগী তার জীবন মৃত্যুর দোয়ারে।যেভাবে ফেলে আসে মানুষ আপনজনের লা’শ কবরে।”

কথা শেষ করে দ্রুত পায়ে কাঁদতে কাঁদতে, নিজের রুমে চলে গেলো মেয়েটা। ভুলেও একবার আর পিছনে ঘুরে তাকালো না।
চাঁদ যেতেই সজ্ঞানে ফিরলো ফাহাদ। এতক্ষণ যেন সে কোনো এক গোড়ের মধ্যে আঁটকে ছিলো। কৃষ্ণকলির কান্নারত মুখটা দেখে তার মস্তিষ্ক স্বাভাবিক হলো। স্বাভাবিক হতেই মাথায় এলো, রাগের মাথায় কতবড় এক জঘন্য কাজ করেছে সে। কাপুরুষ সে!হুট করেই অজানা এক হারানোর ব্যথায় হৃদয়টা পু’ড়ছে তার। ক্ষণে ক্ষণে চাঁদের কথা গুলো কানের কাছে বাজছে।
ফাহাদ নিজের চুল দুই হাত দিয়ে খামচে ধরেলো। এতবড় ভুল কি করে করলো সে? এই হাত দিয়ে সে একটা মেয়েকে আঘাত করেছে। যে মেয়েটা তার অর্ধাঙ্গিনী, তার বাঁম পাঁজরের অংশ। তাকে আঘাত করেছে সে। এতোটা অধ’পত’ন হয়েছে তার! ছিহ! নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে আজ। ফাহাদ চুল ছেড়ে দেয়ালের সাথে নিজের হাতে শক্তি ঘু’সি দিলো কয়েকবার। হাত ছিলে গিয়েছে, অনামিকা আঙুলটা ফে*টে মুহূর্তেই গলগল করে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। সেদিকে কোনো হুঁশ নেই ছেলেটার।
নিজেকে বড্ড পা’গ’ল পা’গ’ল লাগছে! কি করে এই মুখ নিয়ে চাঁদের মুখোমুখি হবে ফাহাদ? নিজের উপর আরো এক ধাপ ঘৃণা জমলো। অ’নুত’প্ত ফাহাদ,অ’নু’তপ্ত অনুশো’চনার দহনে শরীর ঝলসে যাচ্ছে তার। সত্যিই সে কারো ভালোবাসা ডিজার্ভ করে না! পরক্ষণে লম্বা দ’ম নিয়ে হেলেদুলে বারান্দায় ছেড়ে বাহিরে চলে গেলো ছেলেটা।
.
.
ঘড়ির কাঁটায় সময় দুইটা ছুঁই ছুঁই। সুখ নীড়ের পরিবেশ এখনো বড্ড শান্ত। কিছুক্ষণ আগে এতবড় এক ঘটনা ঘটেছে, তবুও এখন অবধি কেউ টের পায়নি। কেননা, সেই সময় দাদি ছাড়া বাসায় কেউ ছিলো না। দাদি বয়স্ক, এমনিতেই কানে কম শুনে। বাবা ও মাহিম মসজিদে গিয়েছে নামাজের জন্য। মিম এখনো ভার্সিটিতে, ফাতেমা খানম পুকুরে গোসলের জন্য গিয়েছিলো৷ যার ফলে, এসব কেউ টের পায়নি।
চাঁদ সেই থেকে রুমের দরজা আঁকিয়ে, বিছনায় মুখ ডুবিয়ে এতক্ষণ অঝোর ধারায় কেঁদেছে। এখন নিজেকে একটু হালকা লাগছে, কান্নার বেগ কমে গিয়েছে। এতক্ষণ কান্নার ফলে, মাথাটা ভার হয়ে আসছে। বসার ঘরে বাবার কণ্ঠ শুনে, পরক্ষণেই বিছনা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো চাঁদনী। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে বেরিয়ে আসলো ততক্ষণাৎ। গায়ে জড়ানো সুতোর ওড়নাটার এক কোণ দিয়ে মুখ মুছে নিলো।
না এই রুমে আর এক মুহূর্তও নয়। চাঁদ দরজা খুলে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো বাবা’র রুমের নিকট। রুমের দরজা খোলাই রয়েছে।

আফজাল হোসেন মাএই নামাজ শেষ করে এসেছে। গায়ের সাদা পাঞ্জাবিটা খুলে বিছানায় বসেছে সবে। তান্মধ্যে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চাঁদ মৃদু কণ্ঠে বললো,

“আব্বা আসবো?”

আফজাল হোসেন মুচকি হেসে বললো, “এসো মা।”

চাঁদনী ভিতরে যেতেই আফজাল হোসেনের খেয়াল করলো মেয়েটাকে অস্বাভাবিক লাগছে। চোখ মুখ ফুলে ফেঁপে একাকার। পরক্ষণেই উনি বিচলিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“তোমার এ অবস্থা কেনো চাঁদ মা? তুমি কি অসুস্থ? ”

চাঁদনী মলিন হেসে বললো, ” আমি ঠিক আছি আব্বা। তবে আপনার কাছে কিছু চাওয়ার ছিলো।”

বাবা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, “কি চাও মা?”

কোনো বনিতা ছাড়াই স্বাভাবিক ভাবেই চাঁদ বলে উঠলো, “আমি মুক্তি চাই আব্বা। এই বাসা, এই মানুষগুলো থেকে মুক্তি, চিরতরে মুক্তি চাই।”

“এসব কি বলছো মা? কি হয়েছে তোমার? কেউ কিছু বলছে তোমায়? আমাকে বলো কি হয়েছে মা?”

“এখানে আমার যথার্থ সম্মানের অভাব রয়েছে আব্বা। যেখানে নিজের সম্মানের ছিটে ফোঁটাও নেই সেখানে কি করে থাকি। তবুও আমি ধৈর্য ধরছি, ভেবেছি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি ভুল আব্বা। একটা মেয়ে যে মানুষটাকে ঘিরে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে চায়, সেই মানুষটা আমাকে বা’জে ভাবে ভে’ঙে দিয়েছে। যার সাথে বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছি, তার প্রতি মনে ঘৃণা পুষে রেখে কি করে তার সঙ্গে থাকি? আমি পারবো না আব্বা। আমি এবার এই ফানুশের মতো সম্পর্ক থেকে দূরত্ব বাড়াতে চাই।
আমি অনেক সহ্য করেছি আব্বা। মানুষের এতটুকু ভালোবাসা পেতে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি ব্যর্থ, আমি আর পারছি না আব্বা। ক্লান্ত আমি। আমি কারো কিছু নয়। মুক্তি চাই এখান থেকে, মুক্তি করে দিতে চাই আমাকে অসহ্য করা মানুষগুকে। অনেক তো হলো আব্বা, এবার আমি নিজের আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই আব্বা।”

“দেখো মা তোমার কি হয়েছে আমি জানি না। তবে বলবো, তুমি কি বুঝে শুনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছো মা?”

“জ্বি আব্বা। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল।”

চাঁদের কাঠকাঠ জবাব শুনে আফজাল হোসেন খানিকটা সময় চুপ করে রইলো। যে মেয়েটা এতোদিন সবার এতো অবহেলাসহ এতকিছু মুখ বুঝে সহ্য করে এসেছে কিন্তু কখনো কোনো অভিযোগ করেনি। সেই মেয়েটা যে আজ মুখ ফুঁটে মুক্তি চাইছে, নিশ্চয়ই ভীষণ আ’ঘা’ত পেয়েছে। নিজের সন্তানের স্বার্থে আর কত অবিচার করবে মেয়েটির প্রতি। এতদিনের নিজের স্ত্রী, সন্তানের কাঠিন্য আচরণের কম বেশি তার অবগত।
কি করা উচিত বাবা’র?এই মেয়েটাও বা কোথায় যাবে একা একা?
উনি কপালে ভাজ ফেলে, নিজের সাথে কিছু একটা হিসাব নিকাশ করে খানিকক্ষণ পরে কোমল কণ্ঠে বলে উঠলো,

“চাঁদ মা! আমি কখনো তোমায় ছেলের বউয়ের নজরে দেখিনি মা। তোমাকে আমি এই বাড়িতে আমার আরেকটা মেয়ে করে এনেছিলাম। কিন্তু বাবা হিসাবে আমি ব্যর্থ! অস্বাভাবিক পরিস্থিতির জন্য আমি তোমাকে তোমার যথার্থ সম্মান দিতে পারিনি। এজন্য আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি মা। তবে বাবা হিসেবে বলবো, আরো একবার ভেবে দেখো মা। তোমার বয়স অল্প, হুট করে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া কি ঠিক হবে মা?”

“আপনি আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে অপরাধী করবেন না আব্বা। আমি আপনাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করি। আপনি আমার জন্য যতটুকু করেছেন আমি আজন্ম কাল আপনার কাছে ঋণী। এই জীবনে আমি আপনার অবদান কখনো ভুলবো না।
তবে আমি আর আপনার কথা রাখতে পারলাম না। আমি দুঃখিত !”

এতক্ষণ এক দমে কথা গুলো বলে মাথা নত করে নিলো চাঁদ। ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘ শ্বাসের শব্দ হলো। চাঁদ মাথা তুলে তাকালো। পুনরায় নম্র কণ্ঠে আবারও বললো,

“সবার এতো অবহেলা নিয়ে বাঁচা যায় না আব্বা। মাঝে মাঝে দূরে চলে যেতে হয়! দূরে চলে যাওয়াটা জরুরী ! দূরে না গেলে মানুষ গুলোকে গুরুত্ব বোঝানো যায় না। মাঝে মাঝে নিজেকে আড়াল করে মানুষ গুলোকে টের পাইয়ে দিতে হয়, বুকের কতটা গভীরে কষ্ট জমে গেলে মানুষ দূরে চলে যায়!”

পরক্ষণে আফজাল হোসেন বিনা বাক্যে চাঁদের সিদ্ধান্ত মেনে নিলো। না নিজের সন্তানের জন্য আর নয় অবিচার। মেয়েটার ও ভালো থাকার অধিকার রয়েছে। কমতো সহ্য করেনি সে।
তবে নিজের কু’লা’ঙ্গা’র ছেলের জন্য ভিতরে ভিতরে আফসোস হয়। খাঁটি হিরে পেয়েও মূল্য দিলো না।
অতঃপর সিদ্ধান্ত হলো, চাঁদ এখন কয়েকটা দিন জোছনা আপার বাসায় থাকবে৷ পরে একটা না একটা ব্যবস্হা হবে। যত যাই হয়ে যাক, আফজাল হোসেন এই মেয়ের দায়িত্ব নিবে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাবা বুঝে নিয়েছে, আত্মসম্মান সম্পুর্ণ চাঁদ কারো দয়া নিবে না। তার অগোচরেই না হয় বাবা দেখাশোনা করবে মেয়েটার।
তার মেয়ে যখন ভেবেছে যাই হয়ে যাক, বাবা হয়ে কি করে অসহায় মেয়েটাকে একা ছাড়বে?
.
চাঁদকে রেডি হতে রুমে পাঠিয়েছে বাবা। যদিও সে এভাবেই খালি হাতে যাবে বলে জে’দ ধরে ছিলো। কিন্তু বাবা বুঝিয়ে শুনিয়ে বলেছে, শুধু তার দেওয়া জিনিস গুলো যেন নিয়ে যায়। এই মানুষটার কথা অবাধ্য হতে পারেনি চাঁদ। বিনাবাক্য জায়গা ত্যাগ করলো।
বাবা,রুমে বসে ঝিমাচ্ছে, মেয়েটার জন্য তারও কষ্ট হচ্ছে। একদিকে নিজের সন্তানের জন্য। এই কয়মাসে নিজের ছেলের অনেক পরিবর্তন লক্ষ করেছে সে। তার ছেলেটা রাগী, জে’দি । রাগের মাথায় হয়তো আ’ঘাত করেছে মেয়েটাকে। তার ফাহাদের চোখে চাঁদের জন্য ভালোবাসা দেখেছে সে। একগুঁয়ে ছেলেটার ভালোবাসা মিথ্যা হতে পারে না। বাবা ভিতরে ভিতরে চায়, তার পাগল ছেলেটা আসুক সব মিটমাট করুক। আদতে কি ঠিক হবে সব? জানে না সে। তবুও বাবা অপেক্ষা করছে।

.
বাসার পরিবেশ এখন বেশ থমথমে। ইতোমধ্যে বাসার সবাই ব্যাপারটা জেনে গিয়েছে। বাবা-মা থমথমে মুখ করে বসে আছেন। এতো কিছুর পর ও ফাহাদ’কে কোথাও দেখে যাচ্ছে না। ছেলেটা কোথায় কেউ জানে না।
চাঁদনী চলে যাবে শুনে দাদি কান্না কাটি করছে।
নিজের রুম ছেড়ে লাঠি ঠুকঠুক করে চাঁদনী’র অতী নিকটে আসলো, চাঁদ কাপড় ভাজ করছিলো। তান্মধ্য বৃদ্ধা একটি কণ্ঠ থেকে ভা*ঙা ভা*ঙা শব্দে বাক্য উচ্চারণ হলো,

“তুই চইলা যাইবি বোন?”

চাঁদের হাত থেমে গেলো, বৃদ্ধা মহিলাকে কাঁদতে দেখে তার মায়া হলো। পরক্ষণে চাঁদ নিজেকে সামলে নিলো, দাদির চোখের জলটুকু নিজের ওড়নার আঁচল দিয়ে মুছে দিলো, চামড়া ভাঁজ করা কপালটায় টুপ করে এক চুমু দিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,

“কেঁদো না দাদি। আমি নিরুপায় দাদি। এছাড়া আমার কি বা করার বলো?
জোর করে যেমন কখনো কাউকে গুরুত্ব বোঝানো যায় না। তেমনই ধরে-বেঁধেও কাউকে কোনদিন আপন করা যায় না। কারো উপর চাপ তৈরি করলে ভালোবাসা নয় বরং ঘৃ’ণাটা দিনকে দিন তীব্র হতে থাকে, দূরত্ব বাড়ে।
ভালোবাসা, মায়া, টান এগুলো মন থেকে আসতে হয়।ধরে-বেঁধে কিংবা চাপ দিয়ে এসব আদায় করা যায় না। তোমার আকুলতা কারো মনে হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য দয়া জাগাতে পারে; কিন্তু ভালোবাসা জাগাবে না।। হাত পাতলে যেটা পাওয়া যায় সেটা দান, উপহার নয়। আর দানে পাওয়া ভালোবাসাটা ভালো রাখে কম, ক’ষ্ট দেয় চারগুণ।”

থামলো চাঁদ টুপ করে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো মেয়েটার গাল বেয়ে। বৃদ্ধা দাদিও কাঁদছে। চাঁদ লম্বা ভাবে নাক টেনে নিজের কান্না আঁটকে নিলো। দাদির গাল ছুঁয়ে পুনরায় আবার বললো,

“জানো দাদি, কারো অপ্রিয় হয়ে বাঁচা যায় কিন্তু কারো অবহেলা পেয়ে বাঁচা যায় না। কারো জীবনে আমি তার প্রথম পছন্দ নাই হতে পারি, তবে আমাকে অবহেলা করার অধিকার তার নেই। কিন্তু আমার নিয়তি দেখো? আমি সবার থেকে অবহেলা পেতে পেতো আমি ক্লান্ত। আর সহ্য হচ্ছে না এমন অবহেলা। ব্যাস অনেক তো হলো। এবার কারো অবহলেয় নয় আগ্রহে থাকবো । যদি আগ্রহ ও রুপ নয় অবহেলায়, তবে নিজেকে নিয়ে বাঁচবো। কারো কাছে অপশন হয়ে থেকে অবহেলিত হবার দরকার নেই। ছোট্ট এক জীবনে এতো ঝামেলা, এতো অশান্তি দরকার কি!এখন একটু শান্তিতে একটু সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারলেই হলো। ব্যাস!”

মুহুর্তেই দাদিকে ছেড়ে নিজের কাপড় গুলো প্যাক করছে চাঁদ। চাঁদের আবেগী কথা শুনে, আবেগে আপ্লুত হয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠলো দাদি। এই মেয়েটির জন্য তার ভীষণ মায়া হয়।
এতক্ষণের সব কিছু ভুলো চাঁদের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো নিজের নড়বড়ে হাতটা দিয়ে। চাঁদ সাথে সাথে মাথা নত করে নিলো। দাদি কান্নারত মায়াবী কণ্ঠে বলে উঠলো,

“তুই চইলা চাইছ না চাঁদ। মনে অভিমান পুঁইষা রাখতে নাই বোইন। স্বামী-স্ত্রী এক সঙ্গে থাকলে এমন হয় মাঝে মাঝে। আমার ফাহাদ এতো টা ও খারাপ নয় বোইন। ও হয়তো রাগের মাথায় একটা ভুল করেছে চাঁদ। ওরে ক্ষমা কইরা দে বোইন। আমার নাতিটা তোরে পাইয়া নতুন একটা জীবন পাইছে। ও তোরে মেলা ভালোবাসে। শেষবারের মতো ওর জীবনডা তুই ভালোবাসা দিয়ে রাঙাইয়া দে চাঁদ। আমি জানি তুই ওরে মেলা ভালোবাসো তয় আর একবার নিজেরে ভা’ই’ঙ্গা……”

দাদির কথা শেষ হবার আগেই চাঁদ থামিয়ে দিলো। তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,

অনেক হয়েছে দাদী অনেক, এবার চুপ হলে খুশী হবো। আমি, আমি ভালোবাসা প্রকাশ করে দেখেছি,
কেউ আমার ভালোবাসার মূল্যায়ন করে নি।
আমি অভিমান করে দেখেছি,কেউ আমার অভিমান ভাঙা’তে আসে নি,আমি কা’ন্না করে দেখেছি,
কেউ আমার কান্না’য় শান্তনার বানী শোনায় নি,আমি হারি’য়ে গিয়েও দেখেছি,কেউ আমার খোঁজ নেয় নি।
আমি বুঝেছি, আমি দেখেছি, আমি শিখেছি – নিজেকে “নিজের” ভালো থাকার কারন হতে হবে,
নিজেকে’ই “নিজের” হাসির কারন হতে হবে,ক’ষ্ট গুলোকে আ’ড়াল করতে হবে, ভালোবাসার প্রকাশ কমিয়ে দিতে হবে,অভি’মান করা ছে’ড়ে দিতে হবে।

আমি সব আশা ছেড়ে দিয়েছি। হারি’য়ে না গিয়ে “নিজেকে “এমন করে গড়তে হবে যাতে অবহে’লা করা মানুষ গুলো আফসো’স করে আমাকে নিয়ে।
এই নি’ষ্ঠুর’তম পৃথিবীতে নিজেকে কঠি’ন করে গড়ে তুলবো।”

মুচকি হাসির ভিতরে চাঁদের বলা কাটকাট কথা গুনে দাদি আর টু শব্দ ও করল না।ছলছল নয়নে বিনাবাক্যে নিজের রুমে চলে গেলো।
চাঁদ অতী কষ্টে যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। সে হাসলো, ক্ষণে ক্ষণে তাচ্ছিল্য ভরা হাসি যেন মুখ থেকে সরছে না।
.
.
মিনিট পাঁচেক সময় পেরোতেই এরিমধ্যে কোথা থেকে যেন ফাহাদ বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। ছেলেটাকে বড্ড বিষণ্ণ লাগছে, ডান হাতটায় র’ক্তে মাখোমাখো। সেগুলো অতি অবহেলা আবার শুকিয়ে গিয়েছে। লম্বা চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে, মায়াবী চোখ দু’টো ফুলে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তবে কি সে সবার আড়ালে কেঁদেছে? হয়তো!
এলোমেলো পায়ে ফাহাদ বসার ঘরে পা রাখতেই বাবা মুখ ফুরিয়ে নিলো তার থেকে। ফাহাদ কিঞ্চিৎ চমকালো! থমকানো!
বাড়ির ভিতরে সবার মাঝে কেমন গা-ছাড়া থমথমে ভাব। ফাহাদে’র বুক কেঁপে উঠলো অজানা ভয়ে। আচ্ছা তার চাঁদ পাখি ঠিক আছে তো? চাঁদের কথা মাথায় আসতেই পরমুহূর্তেই দ্রুত পায়ে নিজের রুমে আসলো। খানিকটা দূর থেকে চাঁদকে দেখে স্বঃস্তি পেলো ফাহাদ। বুক ভরে লম্বা শ্বাস ছাড়লো ছেলেটা। তবে এই প্রশান্তি বেশি ক্ষণ রইলো না।
নত মুখে ধীর পায়ে যখন রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো, মনে হচ্ছে সব কিছু অস্বাভাবিক। কিচ্ছু ঠিক নেই।
আড় চোখে চাঁদকে বোরকা পরিহিত দেখে অদ্ভুত ভাবে বুকটা কাঁপলো তার। ধাপ করে বিছনায় বসে পড়লো ফাহাদ। ফাহাদ’কে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো চাঁদ। এই মানুষটার মুখোমুখি হবার কোনো ইচ্ছে ছিলো না তার। এই মানুষটার সাথে আর এক মুহুর্তে ও নয়।পরমুহূর্তে দ্রুত হাতে হিজাব বাঁধার চেষ্টা করছে সে। এমন একটা ভাব ধরলো, মনে হচ্ছে রুমে কেউ নেই।
ফাহাদ এলোমেলো দৃষ্টিতে মিনিট খানিক সময় পরখ করে নিলো চাঁদ কে। তার তীক্ষ্ণ মস্তিষ্ক মুহূর্তেই ধরে ফেললো, চাঁদ কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভাবতেই বুকের বাঁ-পাশটায় চিনচিন ব্যথা অনুভব হলো ছেলেটার।
পরমুহূর্তে উঠে দাঁড়ালো সে, একটু এগিয়ে গেলো চাঁদের দিকে, কিন্তু ওই মায়াবী মুখটার দিকে তাকানোর সাহস হলো না তার। ফ্লোরে দৃষ্টি রেখে, নিজের ভিতরে অ’নু’ত’প্ত দ্বিধা চাপা রেখে মৃদু কণ্ঠে বললো,

“তুমি কই যাচ্ছো চাঁদ?”

চাঁদ নিরুও্যর। হিজাবের শেষ পিনটা লাগিয়ে নিলো, খাটের কোণে থাকা নিজের কাপড়ের ব্যাগ দুটো নিয়ে তড়িঘড়ি করে বাহিরে যাবার জন্য পা বাড়ালো। ফাহাদ দ্রুত পায়ে দরজার সামনে দাঁড়ালো। চাঁদ বিরক্ত প্রকাশ করলো। কণ্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,

“সরে দাঁড়াও ফাহাদ। আমাকে যেতে দেও।”

“তুমি, তুমি এভাবে কই যাচ্ছো চাঁদ? ”

“তোমাকে চিরতরে মুক্তি দিয়ে চলে যাচ্ছি। আর কখনো এই বেহায়া মেয়েটাকে তোমার সহ্য করতে হবে না।” স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো চাঁদ।

চাঁদের এই স্বাভাবিক কথাগুলো যেন তী’রের মতো বিঁ’ধ’ল ফাহাদে’র বুকে। তার কলিজা মো’চ’ড় দিয়ে উঠলো ক্ষণে ক্ষণে।

চলবে…….

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পর্বঃ২৭( শেষ অংশ)

ফাহাদ এলোমেলো চোখে খানিকক্ষণ চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো, এরিমধ্যে চাঁদ বারকয়েক ফাহাদ’কে উপেক্ষা করে বাহিরে যাবার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু শক্ত পোক্ত পুরুষটিকে উপেক্ষা করে যেতে পারছে না কিছুতেই। ফাহাদ এখনো আগের ন্যায় দরজা আঁটকে দাঁড়িয়ে আছে, পূর্ণ দৃষ্টি তার চাঁদের দিকে। যাওয়ার জন্য মেয়েটার কত তাড়া! ফাহাদ ভিতর থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো,অপরাধীর ন্যায় নত কণ্ঠে বলে উঠলো,

“তুমি কোথাও যাবে না চাঁদ। থেকে যাও না! যেতে হলে আমিও তোমার…. ”

ফাহাদে’কে থামিয়ে দিয়ে চট করে চাঁদ বলে উঠলো,

“আমি বিদায় হলেই তো তুমি খুশী, তবে যাওয়ার বেলায় কেনো বারংবার আটকাচ্ছো?”

“আমি মোটেও খুশী নয় চাঁদ পাখি । জীবনের শেষ অবধি আমি তোমাকে চাই চাঁদ! আমি, আমি তখনকার ব্যবহারের জন্য লজ্জিত চাঁদ। আমি ভীষণ দুঃখিত! আর একটি বার সুযোগ দেও আমায়। তুমি আমার হয়ে থাইকা যাও চাঁদ। আমি নিজেকে শুধরে নিবো কথা দিচ্ছি। সব ভুলে আমাকে, একটিবার ক্ষমা করো প্লিজ!”

ফাহাদে’র এসবে আজ কেনো জানি চাঁদের রাগ লাগছে। লোকটা তাকে কি পেয়েছে? যখন যা ইচ্ছে হবে তাই করবে? সে কি ননের পুতুল! সবাই শুধু প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। না আর নয়! পরক্ষণেই চাঁদ কঠিন মুখ করে বলে উঠলো,

“না চাইতে যারে পাওয়া যায়, তার মূল্য কয়জনই বা বুঝে। যদি বুঝতে তাহলে অনেক আগেই বুঝতে আমায়। অনেক হয়েছে ফাহাদ আর নয়। আমি তোমার অনেক অবহেলা সহ্য করেছি কিন্তু, আর পারছি না। আমি এবার মুক্তি চাই ফাহাদ, মুক্তি চাই সমস্ত অবহেলা থেকে! আমার পথ ছাড়ো, না হয় খুব খারাপ হবে।”

ফাহাদে’র এতে কোনো হেলদোল নেই। এমন একটা ভাব ধরলো, সে যেন চাঁদের কথা শুনতেই পায়নি। সে হঠাৎ করেই চাঁদ কে এক হাতে জড়িয়ে নিলো, চাঁদকে কিছুটা ভিতরে চেপে অন্য হাতে দরজা লক করার চেষ্টা করছে। মিনিটের মাঝেই সফল ও হলো। আকস্মিক আ’ক্র’ম’নে চাঁদ হতভম্ব, কিন্তু সে দমে গেলো না। চাঁদ ছুটতে চাইছে, যা দেখে ফাহাদ এবার চাঁদকে দুই হাতে আগলে ধরে, জড়ানো কণ্ঠে বলে উঠলো,

“আমি তোমায় এতো সহজে ছাড়ছি না চাঁদ পাখি। যাওয়ার জন্য এতো তাড়া কেনো তোমার কৃষ্ণকলি! আমায় তুমি এতো সহজেই ছাড়তে চাইছো চাঁদ? পারবে ছেড়ে থাকতে, কষ্ট হবে না?
হুহ্, জানি তোমার কষ্ট হবে।
আমার ও ভীষণ য’ন্ত্র’ণা হচ্ছে পাখি, তোমাকে করা আঘাত আমায় য’ন্ত্র’ণা দিচ্ছে। আমি তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না চাঁদ। আমাকে ক্ষমা করো প্লিজ। দরকার হলে আমাকে আ’ঘাত করো, তবুও ছেড়ে যাওয়ার কথা মুখে এনো না।
মানুষ মাএ ভুল করে তাই না চাঁদ বলো? আমিও ভুল করেছি। এইবারের আমাকে একটা সুযোগ দেও! প্লিজ চাঁদ পাখি! আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি আমার সৃষ্টিকর্তা দেওয়া বিশেষ উপহার। জানো চাঁদ? আমার এই এলোমেলো বিষন্ন জীবনে রঙিন প্রজাপতি হয়ে এসেছো। আমি তোমাকে হারাতে চাই না বউ।
এ্যাই চাঁদ? দেখে, আমার এই বুকে মাথা রেখে কান পেতে শুনো।
এ্যাই তুমি শুনতে পাও?
আমার এই বুকের প্রতিটা হৃদ ক্রিয়া বলছে, তার তোমাকে ভীষণ প্রয়োজন।”

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে থামলো ফাহাদ। তার কণ্ঠ আকুলতা, প্রিয় জনকে হারানোর ভয়ে চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রু কণা গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে। কিন্তু নিজের দুর্বলতা অন্য’কে দেখাতে নেই। কেউ দেখার আগে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে জলটুকু খুউব গোপনে মুছে নিলো ছেলেটা।
হাতের বাঁধন আগলা হয়েছে কিছুটা,তান্মধ্যে চাঁদ সুযোগ বুঝে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। ফাহাদে’র আবেগি কথায়ও তার মন বিন্দু মাএ গলেনি।বরং নিজেকে ছাড়িয়ে কিছুটা সরে দাঁড়ালো সে।
ফাহাদ আর বাঁধা দিলো না, অপরাধীর ন্যায় নতমুখে দাঁড়িয়ে রইলো।
পরক্ষণেই ওপাশ থেকে মেয়েলী তাচ্ছিল্য কণ্ঠে শোনা গেলো,

” তোমার জীবনে আমি কেউ না ফাহাদ। আমি শুকনো পাতার মতো আমাকে চাইলে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়। তোমার জীবনে আমি ধুলোর মতো। আমাকে চাইলে আবর্জনার মতো ঝেড়ে ফেলা যায়।
আমি অপ্রয়োজনীয় কাঠপেন্সিল। যাকে কেউ রেখে দেয় অভ্যাসে কিংবা নিছক শৌখিনতায়।
আমি কারও আকাশ হতে পারিনি, হতে পারিনি কারও প্রিয় কাঠগোলাপ। আকাশে জুড়ে ঝলমলে জ্বলতে থাকা ধ্রুব তারা হতে পারনি কারও জীবনে। হতে পারিনি ভোরের প্রথম শিশির কিংবা কারও পূর্ণিমার চাঁদ। আমি কারও ভালোলাগার বৃষ্টি হতে পারিনি। ছুঁতে না পারা মানুষটাকে বাতাস হয়ে ছু্ঁয়ে দিতে পারিনি। আমি কিচ্ছু না! আমি বেড়ে উঠেছি অপ্রয়োজনীয় মূল্যহীন আগাছার মতো। আমাকে যেই চেয়েছে সেই পেয়েছে, শুধু আমি যাদেরকে চেয়েছি তাদেরকে আমি পাইনি। আমি অনেকেই হারিয়েছি, আমাকে কেউ হারায়নি! হারানোর মতো মূল্যবান কেউ ছিলামও না কখনও। আমি তোমার কেউ না। কিচ্ছু না!”

ফাহাদ নতমাথা তুলে তাকালো চাঁদনীর মুখোপানে। এতোটা কঠিন কথা শিখেছে মেয়েটা। সে কি বুঝে না তার বলা কথায় র’ক্ত’ক্ষ’রণ হচ্ছে ফাহাদ নামক ছেলেটার ব*ক্ষে। কিন্তু অদ্ভুত! মেয়েটা হাসছে, তার কণ্ঠ স্বাভাবিক, ভীষণ স্বাভাবিক। এই মেয়েটাকে আজ বড্ড অচেনা লাগছে তার কাছে।
ফাহাদ কতকিছু বলতে চাইছে কিন্তু তার শব্দ ঝুলি এই মুহূর্তে শূন্য। মুখ থেকে একটা শব্দ বের হচ্ছে না। শুধু বিস্মিত চোখে মেয়েটির পরিবর্তন গুলো দেখছে।
এইটুকু সময়ের মধ্যে মেয়েটা কতটা বদলে গেছে। তবে কি নারী এতো দ্রুতই বদলায়?
মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ছেলেটার, অসহায় মুখ করে চেয়ে রইলো শুধু।
তান্মধ্য পুনরায় হাসলো চাঁদ এবার একটু শব্দ করেই হাসলো। সহসায় চমকালো ফাহাদ, অকারণে মেয়েটার হাসির কারণ বুঝে উঠলো না।
তার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে চাঁদ মুখের হাসিটা মিলিয়ে নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

“জানো কি প্রিয়? আমি একবার নয়, বহুবার তোমার সাথে থাকবো বলে নিজের আ’ত্মসম্মান ধুলোয় মিশে যেতে দিয়েছি৷ সবকিছুর বিনিময়ে চেয়েছি, যাক তবুও সম্পর্কটা থাক।
সবকিছু সহ্য করতে করতে একপর্যায়ে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো, তাই চুপ থেকেছি।
কিন্তু আর পারি নাহ্…।
ভালোবাসার সম্পর্কে কেবল নীরবে ভালোবাসলেই টিকে না, এরজন্য অনেক ত্যা*গ স্বীকার করতে হয়।
কিন্তু তুমি চাও সবকিছু আমিই করি, আর যদি ভালোবাসায় সবকিছু আমিই করি, তবে আমি আমাকে ভালোবাসলেই তো পারি!”

একটু দ’ম নিলো চাঁদ। পরমুহূর্তেই অন্য পাশ ফিরে বলে উঠলো,

“গেলাম তবে নিজেকে ভালো রাখার সংগ্রামে।”

আর এক মুহূর্তে ও দাঁড়ালো না চাঁদ, না পুনরায় তাকালো ফাহাদের দিকে। লম্বা পা ফেলে দরজা খুলতে উদ্যত হলো। তান্মধে হাতে টান খেলো। ফাহাদ ঝড়ের গতিতে এগিয়ে এলো মেয়েটার মুখোমুখি। চাঁদের ডান হাতটা নিজের মুঠোয় আবদ্ধ করে, অসহায় মুখে বলে উঠলো,

“সব ভুলে আমায় আর একটা সুযোগ দেও চাঁদ পাখি। আমার হয়ে থেকে যাও না চাঁদ বউ!”

“আমি তো থাকতেই চেয়েছিলাম
ধরে রাখতে পারলে না?শত গোলাপের মাঝে ভালোবাসার চিঠলুকিয়ে দেয়া অন্যের প্রেমিক তুমি।
অথচ তোমাকে পেয়েও পেলাম না আমি। আমার হাত ধরে একজীবন,আমার হয়ে থেকে যেতে পারলে না তুমি।চোখের মায়া বাড়বে বলে
কাজলের কৌটা উপহার দেয়া অন্যের প্রেমিক তুমি, কিন্তু আমার চোখের কাজল হয়ে আর থেকে যেতে পারলে না। বাকিটা জীবন একসাথে কাটাবো বলে
আমিতো তোমার হয়েই ছিলাম।তুমি কেনো আমার হয়ে থাকতে পারলে না।
একটু ভালোবাসা দিতে পারলে না কেনো আমায়?
এভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে, দু চোখের জল জড়িয়ে ,
এক পৃথিবী যন্ত্র’ণা দিয়ে না হারালে, খুব বেশিই কি ক্ষতি হয়ে যেতো? একবার আমার হয়ে থেকে যেতে পাড়তে না?”

তারমধ্য ফাহাদ অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো, চাঁদ…!

চাঁদ তাকালো না অবধি ফাহাদে’র দিকে। নিজের হাতটা খানিকটা ঝাঁকিয়ে ছাড়িয়ে নিলো। যার ফলে ফাহাদে’র কা*টা র’ক্তা’ক্ত হাতটায় চো’ট লেগে যায় , কিন্তু ফাহাদ টু শব্দটি ও করলো না। মুখ বুঝে হজম করে নিলো আ’ঘা’তটি। শরীরের এই আঘাত তো সামান্য, এর থেকেও তার ভিতরটা জ্ব’ল’ছে বড্ড। প্রিয় হারানোর শোকে ছেলেটার হৃদয়খানী নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে!
এরিমধ্যে বসার ঘর থেকে বাবা’র কণ্ঠে শোনা গেলো,

“চাঁদ মা হয়েছে তোমার? আর কতক্ষণ, গাড়ি চলে এসেছে।”

অসময়ে বাবার এমন আচরণ আগুনে ঘি ডালার মতোন, মন’ক্ষু’ন্ন হলো ফাহাদ।মনে হচ্ছে বাবাও তাকে তাচ্ছিল্য করে জানান দিচ্ছে, “তোর বউ চলে যাচ্ছে।”
ইতোমধ্যে চাঁদ ছিটকানি খুলে বাহিরে বের হয়েছে।

ফাহাদ নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে অসহায় লাগছে।মুখ খুলে বলতে না পারা টাও অনেক কষ্টের। কথা জমে থাকার পরেও তা বলতে না পারা কিংবা বোঝাতে না পারার অনুভূতিটা যে বড্ড বিড়ম্বনার সেই সাথে য’ন্ত্র”ণার!
এই যে ফাহাদে’র কতকিছু বলার বাকি, কিন্তু সে নিজের অনুভূতি বুঝতে বারংবার ব্যর্থ।

তার ভাগ্যে কেনো কারো ভালোবাসা জুঁটে না? কেনো বারবার ভালোবাসা পেয়েও হারাতে হয় তাকে? সে কি কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য নয়? সত্যিই কি তাই? না-কি সে আগলে রাখতে জানে না?
নিজের মস্তিষ্ক এই মুহূর্তে অচল হয়ে গিয়েছে ছেলেটার। এসব কোনো প্রশ্নের জবাব জানা নেই তার। মেয়েটার এতো কঠিন কথায় তার ভিতরটা ক্ষ’ত’বি’ক্ষ”ত হচ্ছে। তার বুকের বাঁপাশটা বড্ড বেসামাল লাগছে, চিনচিন করছে অজানা ব্যথায়।
কিন্তু ছেলেটা এই মুহুর্তে নিরুপায়, নির্বোধ। এতকিছুর পরেও মুখ ফুৃঁটে পুনরায় কিছু বলার সাহস ও হচ্ছে না তার।
তবে কি সে প্রিয় জনের যাওয়া তাকিয়ে দেখবে? মানতে পারছে না ফাহাদ, পুনরায় বেহায়া হয়ে মলিন কন্ঠে ডাকলো,

“চাঁদ….? একবার শুনবে চাঁদ?”

কি নিদারুণ অসহায়ত্ব সে কথা। এই মুহূর্তে কঠিন হওয়া মেয়েটাও উপেক্ষা করতে পারলো না সেই কণ্ঠ। নিজের অজন্তেই পিছনে ঘুরে তাকালো চাঁদ, ফাহাদ এলোমেলো পায়ে পুনরায় মেয়েটার মুখোমুখি হলো। চাঁদের চোখের দিকে কিয়াৎক্ষণ চেয়ে মৃদু কণ্ঠে বললো,

“চলেই যাবে চাঁদ? ”

“হু।” ফাহাদে’র দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বললো চাঁদ।

“ভালোবাসো না আমায়?”

“বাসি..! ভালোবাসলেই যে, তার সাথে জনম জনম থাকতে হবে এমনতো কোনো নিয়ম নেই।
রঙ্গিন স্বপ্ন তো অনেকেই দেখে। আমিও না হয় দেখেছিলাম! সবার তো আর সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়া লোকদের তালিকায় না হয় নিজেকে মানিয়ে নিলাম!”

“এতো কঠিন কথা শিখেছো চাঁদ? ”

“আসি।”

“আচ্ছা আর একটু শুলো?”

“আবার কি?”

“শোনো? আমি না,নিজেকে ঠিক কারো কাছেই বোঝাতে পারিনি!ভুল বুঝে কেউ দূরে সরে গেলেও,আমি নিজেকে কখনোই প্রমাণ করতে পারিনি!
কেউ তীব্র ভাবে আ”ঘাত দিলেও আমি বলতে পারিনি;”আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে!”
বুকের ভেতর হু হু করে কেঁদে উঠলেও,আমি কখনো চিৎকার করে কাঁদতে পারিনি!দাঁতে দাঁত কামড়ে সব সহ্য করে ফের উঠে দাঁড়িয়েছি। পাশে থাকার কথা বলে কেউ চলে যেতে চাইলেও,তাকে আটকাতে পারিনি!চিৎকার করে বলতে পারিনি;”এভাবে চলে গেলে যে আমি বড্ড একা হবে যাবো!”
অসহায়ের মতো তাকিয়ে শুধু চলে যাওয়া দেখেছি!
অথচ বুকের ভেতর কতটা কান্না জমে বুকটা ভীষণ ভারী হয়ে আছে,কখনোই তা কাউকে দেখাতে পারিনি! কতটা নিঃসঙ্গ হয়ে কেঁদেছি, অথচ কাউকে আমি বোঝাতে পারিনি!
পৃথিবীতে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারাটাও যে একপ্রকার আত্মতুষ্টি!নিজের অনুভূতি কিংবা নিজেকে প্রমাণ করার দৌড়ে আমি নিতান্তই ব্যর্থ!
এক নারীতে আসক্ত থেকেও আমি চরিত্রহীনের উপাদি পেয়েছি অবলীলায়!প্রেম-কামনা এক মানবীর মাঝে লুকিয়ে রেখে,আমি হয়েছি দু*শ্চরিত্র-ল*ম্পট!
তবুও বোঝাতে পারিনি;”আমি বড্ড ক্লান্ত”!
কেন জানি একটু আলিঙ্গন পেতে ইচ্ছে করে খুব!
আলিঙ্গনে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রমে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে;”সত্যিই আমি কিচ্ছু চাইনা,নিজের অনুভূতি কিংবা নিজেকে প্রমাণ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আর!আমি খারাপ–খুব খারাপ।তবুও একটিবা–শুধু একটিবার খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে প্লিজ? প্লিজ ধরবে?”

এক নিশ্বাসে আবদারের সুরে কথাগুলো বলে ফাহাদ পুনরায় দৃষ্টি রাখলো মেয়েটির চোখে। এতটুকু আশা নিয়ে একটা আলিঙ্গণের আশায় বুক পেতে রেখেছে। কিন্তু মেয়েটার চোখে চোখ পড়তেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো মেয়েটা। দুই কদম সামনে এগিয়ে,
অন্য দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে উঠলো,

“তোমাকে নিয়ে বাঁচার খুব ইচ্ছে ছিলো। ইচ্ছে ছিলো পৃথিবীর সব নিয়ম ভে’ঙে আমরা একটা সুখের সংসার গড়বো।তোমার সব দুঃ’খে ক’ষ্টে ছায়া হয়ে পাশে থাকবো, যেমনটা ছিলাম তোমাকে স্ব-চোক্ষ না দেখে কতগুলো মাস। কিন্তু আমার তো সেই ভাগ্য নেই প্রিয়, তুমি মানুষটা খুবই দামী, তুমি আমার কল্পনায় বেশি সুন্দর বাস্তবে তুমি শুধুই মরিচী’কা। আমি তোমায় ধরে রাখতে চেয়েছিলাম বহুবার বহুভাবে, কিন্তু তুমি আমায় ছে’ড়ে গেছিলে, কখনো পেতে চাওনি বা চেষ্টাও করোনি। যদি কখনো চলে যাই দূর-বহুদূর, তবে খুঁজোনা আমায়। মা’য়া তো অনেক দিয়ে গেলা প্রিয়, আর মায়া বাড়িও না।
ভালো থেকো, আমার না হওয়া প্রিয় মানুষটা!”

চাঁদ দ্রুত পায়ে চলে গেলো বসার ঘরে। ফাহাদ বুকে হাত বেঁধে, আশাহত হৃদয়টা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অসহায় দৃষ্টিতে মেয়েটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মুহূর্তে তাকিয়ে দেখা ছাড়া তার কিচ্ছু করার নেই। হুট করে চাঁদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আপন মনে বিড়বিড় করে ফাহাদ বলে উঠলো,

“কেউ আমাকে বুঝলো না।ভেবেছিলাম তুমি অন্তত বুঝবে, কিন্তু না! শেষ পর্যন্ত তুমিও ব্যা’র্থ হলে।
আর এটাই আমার ঠুনকো জীবনে সবচেয়ে বড় আফ’সোস হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
.
.
চাঁদ আসতেই বাবা উঠে দাঁড়ালো। সময় নষ্ট না করে, চাঁদকে নিয়ে বাসার বাহিরে চলে গেলো। পিছনে পিছনে মাহিম ও কয়েকবার থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো। কিন্তু তার কথায় কি আর থাকবে চাঁদ। ভালোবাসার মানুষটিই আঁটকে রাখতে পারলো না, সেখানে মাহিম..!

চাঁদ সত্যিই চলে যাচ্ছে তা দেখে দাদি কেঁদে উঠলো শব্দ করে। ফাতেমা খানম একদম চুপ চাপ। এ-সবে তার কোনো হেলদোল নেই যেন।
ফাহাদ দৌড়ে বসার ঘরে আসলো। চাঁদের যাওয়ার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।মেয়েটা যত এগোচ্ছে, মনে হচ্ছে তার কলিজা ছিঁ*ড়ে যাচ্ছে, দ’ম আঁটকে যাচ্ছে।
এতো নিষ্ঠুরতম প্রিয়তমা তার! একটি বার কি ক্ষমা করা যেতে না তাকে?
না,না! ফাহাদ আর সহ্য করতে পারলো না। তার কৃষ্ণকলির চলে যাওয়া স্ব-চোক্ষে তাকিয়ে দেখার সাহস হলো না ছেলেটার।
দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সে, অশান্ত হৃদয়টা এতটুকু শান্তির আশায় পুনরায় দৌড়ে মায়ের কাছে গেলো।
ফাতেমা খানম বসার ঘরে চেয়ারে বসা ছিলেন। ফাহাদ হুট করে হাঁটু গেঁড়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে