তুমি রঙিন প্রজাপতি পর্ব-১৩+১৪

0
889

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি

#writerঃsumaiya_afrin_oishi

#পর্বঃ১৩

মিম কণ্ঠে তাচ্ছিল্যতা এনে বলে উঠলো, এদের মতো গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েদের কিছু বলে লাভ নেই দাদা।এরা ভালো করেই জানে কিভাবে ছেলেদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে ব’শ করতে হয়।”

স্বামী স্ত্রী’র কথার মধ্যে অন্য কারো নাক গলানোটা একদমই পছন্দ নয় চাঁদনী’র। মিমের এহেন কথা শুনে চাঁদনী’র ভীষণ রাগ হচ্ছে। কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সংযত রেখে তাকালো ফাহাদে’র দিকে, আর অপেক্ষা করতে লাগলো ফাহাদের উওরের আশায়।পরক্ষণে ফাহাদও তাকালো চাঁদনী’র দিকে,এই প্রথম ভালো ভাবে লক্ষ করলো মেয়েটাকে। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা নীল ও সাদার মিশ্রণে সুতি একটা থ্রিপিস পরিহিত, লম্বা চুলগুলো মাঝখান দিয়ে সিঁতি করে বেণুনা করা,কোনো কৃতিমতার ছিঁটে ফোটাও নেই তার মাঝে। এই সাধারণত্বের মাঝেও শ্যাম বর্ণের মেয়েটাকে ভীষণ মায়াবী লাগছে। এ যেন সাধারণের মাঝেও অসাধারণ কেউ। ফাহাদ শুকনো ঢোক গিললো, কেনো জানি মেয়েটার প্রতি একরাশ মুগ্ধ কাজ করছে তা। এটাই বোধহয় সৃষ্টিকর্তা প্রদাও হালাল সম্পর্কে’র রহমাত। চাঁদনী তার দিকে তাকিয়ে ছিলো তাই পরমুহূর্তেই দু’জনার দৃষ্টি বিনিময় হলো। ফাহাদ দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে চোখেমুখে গম্ভীরতা টেনে বোনের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,

“এগুলো কেমন ব্যবহার মিম? গায়ে পড়ে তর্ক করতে আছিস কেনো? এখনে আমিতো আছি তাই-না? আমার সাথে কথা হচ্ছে, যা বলার আমিই বলতে পারবো। খামোখা তোকে এসবে জড়াতে হবে না, পুনরায় যেন এসব না শুনি। তুই এখান থেকে যা, দশটা ওভার হয়ে গিয়েছে। তুই গিয়ে ভার্সিটিতে……”

ফাহাদ শেষ করতে পারেনি মুখের বাক্য, তার আগেই মিম তেলে বেগুনে জ্বলে বলে উঠলো,

“বাহ্! বাহ্ দাদা বাহ্! একদিনেই বউয়ের হয়ে সাফাই করছো তুমি। এই মেয়ের জন্য আমায় ধমকাচ্ছো? এক রাতেই এই মেয়ে তোমায় ব’শ করে ফেলছে! না জানি কয়দিন গেলে এই মেয়ের কথায় আমাদের বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেও। আমার দাদাও এখন বউ পাগলা! হাহা! এদিন ও দেখার বাকি ছিলো।”

“মিম…..?”

উচ্চ স্বরে বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ফাহাদ , মুহুর্তেই রাগটা তড়তড় করে বেড়ে গেলো, রাগে কাঁপছে শরীর, এই মেয়ে এতো বাড় বেড়েছে মুখে যা আসছে তাই-ই বকছে। নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে মিমের গালে এক থাপ্পড় দিতে হাত বাড়াতেই চাঁদনী দৌড়ে এসে মিমকে সরিয়ে দিয়ে, ফাহাদে’র হাত ধরে ফেললো। ব্যস্ত হয়ে অনুরোধের স্বরে বলে উঠলো,

“এই কি করছেন আপনি? প্লিজ শান্ত হন ফাহাদ!

ফাহাদ বোনের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে গমগম আওয়াজে বলে উঠলো,

” সাবধান মিম! নিজের লিমিট ক্রস করিসনে। এত বাড়া বেড়েছিস তুই এখন আর বড়ছোট মানছিস না। মুখে যা আসছে তাই বলছিস, তুই’তো ভুলেই গেয়েছিস আমি তোর বড় ভাই। মিনিমাম সম্মানে’র ছিটেফোঁটাও তোর মধ্যে আমি দেখছি না আমি।”

দাদা’কে এভাবে রাগতে দেখে মিম প্রত্যুওরে আর কিচ্ছুটি বললার সাহস পেলো না। সবার অগোচরে চাঁদনী”র দিকে একবার রক্তিম চোখে তাকিয়ে, একপ্রকার দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। যাদেখে মিনমিন কণ্ঠে আবারও বললো চাঁদনী,

“এভাবে না বললেও পারতেন আপনি, বুঝিয়ে বললেই হতো।”

“তোমার কাছ থেকে এখন শিখতে হবে কি ভাবে বলতে হবে। ধমক দিয়ে বললো ফাহাদ।”

এরিমধ্যে ফাহাদে’র চিৎকার, চেঁচামেচি শুনে ছুটে আসলো ফাতেমা খানম ও ফারিহা। চাঁদনী ফাহাদে’র হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। মা ছেলেকে এভাবে রাগতে দেখে ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হয়েছে ফাহাদ? এতো রেগে গেলি কেনো বাবা?”

“কি হয়েছে তোমার ছোট মেয়েকে জিজ্ঞেস করো মা। ওর এতো সাহস হলো কি করে আমার মুখেমুখে তর্ক করা’র?”

“থাক বাবা ছোট্ট মানুষ বুঝেনি। তুই রাগ করিসনে বাবা।”

“তোমার এই বাড়াবাড়ি রকমের আহ্লাদের জন্যই দিনদিন এতোটা বি-পথে গিয়েছে মেয়েটা। যখন শাসন করার সময় ছিলো তখনই তোমার এই আহ্লাদ। কিচ্ছুটি বলাও যায় না তোমার জন্য। ও এখনো এতে ছোট না মা। এখনো সময় থাাকতে মেয়েকে সামলে নেও।”

বলেই হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো ফাহাদ। ফাতেমা খানম বারকয়েক পিছনে পিছনে গিয়ে ডেকেও পেরে উঠলো না ছেলের সাথে। চাঁদনী’র বড্ড খারাপ লাগছে, কতশখ করে তার পছন্দের খাবার গুলো তৈরি করলো। অথচ লোকটি কিচ্ছুটি না খেয়েই চলে গেলো বাহিরে। তার জন্যই খেতে পারলো না মানুষটা, সে যদি তার সামনে না আসতো তাহলে এতকিছু তর্ক, বাড়াবাড়ি হতো না ভাই-বোনের মধ্যে। আর ফাহাদও খেতে পারতো। ভাবতেই এতক্ষণের আনন্দটুকু হারিয়ে মুখটা মলিন হয়ে গেলো মেয়েটার।
এরিমধ্যে ফারিহা প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালো চাঁদনী’র দিকে।
যার অর্থ, এখানে কি হয়েছে ভাবী? ভাই এতো রেগে গেলো কেনো?

চাঁদনী কিছু একটা বলতে যাবে এর মধ্যেই আবার মিম এসে হাজির। ভাইয়ের সাড়া শব্দ না পেয়েই মূলত রুম থেকে বাহির হয়েছে। ছুটে গিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে ন্যাকা কান্না করে বললো,

“বউয়ের দর্শন পেতে না পেতেই, দাদা পাল্টে গেছে আম্মু। এই মেয়ের জন্য (চাঁদনী’কে ইশারা করে) তোমার ছেলে আমার গায়ে হাত তুলছে।”

মিমের এমন মিথ্যা নাটক দেখে চাঁদনী তাজ্জব বনে গেলো। এখন যে মা-মেয়ে তাকে বিভিন্ন কথা শুনিয়ে দিবে বুঝতে পেরে আর এক মুহূর্ত দেরী না করে বিনাবাক্যে দাদির রুমে চলে গেলো সে। এসব শুনে চুপচাপ থাকার মতো মেয়েতো আর সে নয়। দেখা যাবে উত্তর দিতে গিয়ে আরেক ঝামেলা পাকাবে এরা। এখন বাসায় বাবা ও নেই যে ভয়ে ভয়ে চুপ থাকবে। বাবা ও মাহিম দোকানে, এখন বাসায় তাদেরই রাজাত্ব্য চলবে। তার থেকে বরং এগুলো এড়িয়ে চলাই শ্রেয় বলে মনে হলো চাঁদনী’র।
.
.
দুপুর প্রায় দুটো’র কাছাকাছি। ফাহাদ মাএই বাসায় এসেছে। এসেই “মা” বলে কয়েকবার ডাকলো। সকালে যে রাগ করে চলে গেলো তার ছিটেফোঁটাও নেই এখন। চাঁদনী দুপুরের জন্য খাবার সাজাচ্ছিল ফাহাদ কে দেখে মুহূর্তেই মনটা খুশী হয়ে গেলো। চাঁদনীও চাপা স্বরে ফাহাদ’কে শুনিয়ে শুনিয়ে মা’কে ডাকলো,

“শ্বাশুড়ী….? শাশুড়ী গো? তাড়াতাড়ি বের হোন আপনার বাবু এসেছে। দ্রুত খাবার দিন তাকে।”

যা শুনে ফাহাদ কিড়মিড় করে বললো,

“আমাকে ব্যা’ঙ্গ করা হচ্ছে তাই না? তোমাকে তো আমি….”

বলেই চাঁদনী’র দিকে তেড়ে আসলো ফাহাদ, চাঁদনী খিলখিল করে হেসে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। এরিমধ্য মা রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। মা’কে দেখে থেমো গেলো ফাহাদ। একটা চেয়ার টেনে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,

“মা ভাত দেও। ভীষণ ক্ষুধা লাগছে।”

ফাতেমা খানম মুচকি হেসে পরম যত্নে ছেলেকে ভাত বেড়ে দিচ্ছে, ফাহাদও খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। মা এটা সেটা দিচ্ছে। দূর থেকে চাঁদনী তা দেখে বক্ষ থেকে একটা ভারি দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসলো। ইশ তার মা যদি তার কাছে থেকে যেতো, তাহলে তাকেও এভাবে যত্ন করে খাওয়াতো। প্রতি বেলা খাবারে’র খোঁটা’র বদলে মায়ের হাতে তৃপ্তি করে খাওয়া যেতো। আহ্ কত বছর মায়ের হাতে পরম যত্নের সহিত খায়নি সে।

নিজের ইমোশনাল কে ভিতরে সংযত রেখে, চাঁদনী রান্না ঘর থেকে সবেমাত্র বেরিয়ে আসলো।তার হাতে একটা তরকারির বাটি। বাটিটা শ্বাশুড়ি’র হাতি দিয়ে মৃদু কণ্ঠে বললো,

“শ্বাশুড়ি এই নিন বেগুন ভাজি, আপনার ছেলেকে বেশী বেশী খাওয়ান যাতে আর বাড়ি থেকে চলে না যায়। এতোদিন তো আমায় কথা শুনিয়ে বলতেন, আমার জন্য আপনার ছেলে বাড়ি-ঘর ছেড়েছে। এখন তো এসেছে, এবার যেন আর যেতে না পারে।”

ফাহাদ অদ্ভুত দৃষ্টিতে একবার তাকালো মেয়েটার, পুনরায় আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। এমন একটা ভাব যেন খাওয়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই তার। এসব কিচ্ছুটি তার কানে যাচ্ছে না। ফাতেমা খানম আশায় ছিলো ছেলে নিশ্চয়ই কিছু বলবে। ছেলের এমন গা-ছাড়া ভাব দেখে পরক্ষণেই উনি র’ক্তি’ম চোখে তাকালো চাঁদনী’র দিকে, অতঃপর কটমট কণ্ঠে বললো,

“দেখছিস বাবা শয়তানের বাচ্চার মুখে কিচ্ছু আটকায় না। এই মেয়ের সবকিছুতে বড্ড বাড়াবাড়ি করছে। নিজে বসে বসে তিন বেলা খাচ্ছে আর আমার ছেলেকে খাবার নিয়ে উস্কানি দিচ্ছে। অ’প’য়া একটা জুটেছে! আমার সুখের সংসারে অশান্তি’র কারণ হয়ে এসেছে।”

চাঁদনী এসব শুনেও কিছু বললো না আজ। চুপচাপ জায়গা ত্যাগ করে দাদীর জন্য খাবার নিয়ে গেলো তার রুমে। ফাহাদ মায়ের এমন কথা শুনে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলে উঠলো ,

“মা আমি খাচ্ছি দেখতে পাচ্ছো? খাবার সময় এতো কথা বলো না। একটু খেতে দেও শান্তিতে।”

আর বাইরে কিছু বলতে গিয়েও বললো না ফাহাদ। তবে বুঝতে আর বাকি রইলো না, তার মা-মিম চাঁদনী’কে ভালো চোখে দেখছে না। ফাহাদ দ্রুত খাওয়া শেষ করেই, কিছুক্ষণের মধ্যে দাদী’কে নিয়ে নীলপদ্ম গ্রাম ছেড়ে উপশহরে বড় ডক্টরের কাছে নিয়ে গেলো।

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি

#writerঃSumaiya_Afrin_Oishi

#পর্বঃ১৪

দাদীর অসুস্থতার কথা বলে, ফাহাদ অফিস থেকে দীর্ঘ পনেরো দিনের লম্বা এক ছুটি নিয়েছে।
ফাহাদ আজ বাড়িতে এসেছে তিনদিন গত হলো। বড় ডক্টর দেখানোর পর থেকে দাদী আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ হয়েছে। সময়টা এখন বিকেল। আকাশের মস্ত বড়ো সূর্যটা অনেকটা লাল বর্ণের কিরণ ছড়িয়ে দিচ্ছে গোধূলিতে। ফাহাদ দাদী’কে বাড়ির আশেপাশে খোলা জায়গায় নিয়ে আসলো একটু হাঁটাহাটির জন্য। সারাদিন ঘরবন্দী হয়ে থাকলে এমনিতেই মানুষে’র শরীর-মনে বিষন্নতায় ঘিরে ধরে। বাহিরে ফুরফুরে বাতাসে আসিয়া বেগমে’র বেশ ভালো লাগছে। নাতির হাত ধরে গুটি-গুটি পায়ে কিছুক্ষণ হাঁটলো। বয়সের কারণে এইটুতেই হাঁপিয়ে গিয়েছে বৃদ্ধা মহিলা। তা দেখে ফাহাদ দাদিকে ধরে নিয়ে বাগান বাড়ির কাঠের একটা বেঞ্চিতে বসলো। দাদি বুক ভরে শ্বাস নিলো কিছুক্ষণ, তারপর ফাহাদে’র এক হাত নিজের মুঠোয় আবদ্ধ করে মিহি কণ্ঠে বললো,

” হুন ভাই?জীবনে কহনো কারও লগে কোন অভিযোগ, কষ্ট পুষে রাখবার উচিৎ না। জীবন নামক গল্পটা হুট করে কখন থাইমা যায় তা আমরা কেউ জানি না। তাই সবাইরে ক্ষমা করে দিয়ে হাসি মুখে জীবনটা কাটানো উচিৎ। হ্যাঁ অনেকেই তোমারে ঠকাইছে, কষ্ট দিয়েছে, অবহেলা করেছে, আঘাত দিয়েছে। তবুও তাদেরকে ক্ষমা করে দেও। ক্ষমার চেয়ে নিঃস্বার্থ প্রতিশোধ আর কিছুই নাই।”

ফাহাদ কিছুটা আন্দাজ করতে পারলো কেনো এসব দাদী তাকে বলছে। কিন্তু তবুও অবুঝের মতো কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি শুরু করলে তুমি? হঠাৎ এসব কথা কেনো বলতেছো দাদী?”

“হুনো দাদুভাই তুমি তো আর অবুঝ না। ভালো-মন্দ সবকিছু বুঝবার পারো। তুমি জানো? উপরওয়ালা
আমগো জন্য যা কল্যাণকর,আমগো জীবনে হেইডাই ঘটায়!এইডা নিয়ে কখনো মন খা’রাপ করতে নেই,জীবনে কোনো কিছু না থাকলে কি হয়েছে?জীবনডা তো আর চিরস্থা’য়ী নয়!
এই এক জীবনে কেউ রইবো জীবনে,
কেউ রইবো মনে!কেউ আবার মনে থাকবে জীবনে নয়,কেউ জীবনে থাকবে মনে নয়!এইডা নিয়ে ক’ষ্ট কিংবা দুঃ’খ পাওয়ার দরকার নেই,
শুধু এইডা মনে রাখবা সৃষ্টিকর্তা যা করেন সবার ভালোর জন্য করেন।যা আমগো জন্য কল্যাণকর সেটাই জীবনে ঘটে যেমন আগে ঘটেছে,এখন ঘটছে, সামনে ও ঘটবে!আর এগুলো মাইনা নেয়ার নামই জীবন। মাইনা নিয়ে চলতে শিখো যা ঘটছে,
যা ঘটবে জীবনে। আগে তোমার জীবনে কে ছিলো, কে না ছিলো এডা নিয়ে কিছু যায় আসে না। এহন বর্তমানে তুমি যেমনেই হোক বিয়া করছো। ঐ দিন থাইকা তোমার কাঁধে পুরোপুরি তোমার বউয়ের দায়িত্ব আইয়া পরছে আপনা-আপনি। তোমার থাইকা এমন আচার-আচরণ আমগো জন্য আশাহত। তুমি যদি তার দায়-দায়িত্ব না পালন করো উপরওয়ালার কাছে নিশ্চয়ই জবাবদিহি করন লাগবো। হুনো ভাই? তোমার বাপরে ভুল বুইঝো না। হেয় তোমার লাইগা আসল হীরা আইনা দিছে। আমি মানুষ চিনতে ভুল করি না। হের চোখে তোমার জন্য আমি ভালবাসা, টান দেখছি। ছোটকাল থাইকা কষ্ট পাইতে পাইতে বড় হইছে হেয়, মাইয়াডাও একটা ভরসার স্থান দরকার। এই মানুষগুলো বড্ড ভালোবাসার কা’ঙা’ল হয়। এগোরে একটু আগলাইয়া রাখতে পারলে, এরা নিজের সবটা দিয়ে দিবে তোমার জন্য। আমি বলি কি ভাই। তুমি তার যত্ন নেও, দেখবা তোমার কখনো মানসিক শান্তির অভাব হইবো না। মাইয়াডা মেলা ভালো। তুমি সব মাইনা নেও ভাই!”

এতক্ষণ আস্তেধীরে একদমে কথা গুলো বলে থামলো দাদী। একদমে এতো কথা বলার ফলে শ্বাসটা বেড়ে গিয়েছে, তবুও নাতির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। ফাহাদও এতক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে শুনলো দাদির বলা প্রত্যেকটা কথা। সবইতো সত্যি বলছে দাদী। কিন্তু সে কি করবে? একবার একজনকে বিশ্বাস করে, ভীষণ ভালোবাসেও বাজে ভাবে প্রতারিত হয়েছে ছেলেটা। সারাজীবন একসাথে থাকবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া মেয়েটাও চলে গিয়েছে অযুহাত খুঁজে। শুধু চলেই যায়নি, নিয়ে গেছে সেই সাথে ছেলেটার ভালো থাকা। মেয়েটা যে দীর্ঘদিন তার আবেগ ভালোবাসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বিপর্যস্ত ভাবে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে মৃ’ত্যু’র মুখে। মুখ’থু’ব’ড়ে পরা র’ক্তা’ক্ত হৃদয়টা নিয়ে অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো, অদ্ভুত ব্যথায় কাঁতরিয়েছে, নির্ঘুম কত রাত ছটফট করছে। কই তক্ষণ’তো কেউ এসে তার কাঁধে হাত দিয়ে বলেনি, কেমন আছো তুমি? কষ্ট পেওনা আমিতো আছি। বাবা-মা তারাও ছিলো না। মা হচ্ছে উদাসীন স্বভাবের তার এসবে কোনো কালে খেয়াল ছিলোনা, বাবা সংসারের বোঝা সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত ছিলো, দাদী দাদা’র শোকে কাতর ছিলো। কারণ সে সময়ই দাদা মা’রা গিয়েছিল। একমাত্র রুদ্র ছাড়া কেউ তার পাশে ছিলো না। সবাই যার যার মতো ছিলো, কেউ তার খোঁজ রাখেনি। সবাই তাকে উপহাস করেছে, প্রয়োজনে যার যতটুকু ব্যবহার করে আবার ছুঁ’ড়ে ফেলেছে। কেউ কাছে এসে তার কষ্টগুলো অনুভব করেনি, কেউ কাছে ডেকে ভালোবাসেনি। সেই থেকেই তো সে ছন্নছাড়া, বদমেজাজি, নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সব জায়গা থেকে। এখন তো সে বেশ আছে। তবে আবার কেনো এই মেয়েটা হুট করে তার জীবনে জড়ালো? কি করবে সে? দায়িত্বশীল হবে, বিশ্বাস করবে মেয়েটাকে? কিন্তু কিভাবে?
একবার ঠকে যাওয়া হৃদয় নিয়ে কি করে অন্য কাউকে বিশ্বাস করবে, ভরসা করবে? যদি আবার তাকে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে তখন যে আর ফাহাদ নামক ছেলেটার পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু অবশিষ্ট থাকবে। না! না! আর কাউকে বিশ্বাস করবে না সে। লোকে যা বলে বলুক, তাতে তার কিচ্ছুটি না।
এমন হাজারটা ভাবনা মাথায় এসে জট বাঁধছে ছেলেটার। আবার নিজেই উওর খুঁজছে, দিচ্ছে।
এমনো হাজারো ভাবনায় মশগুল যখন ফাহাদ, হুট করে দাদীর শ্বাস রুদ্ধ কাশি’র শব্দে ধ্যান ফিরলো তার। তড়িঘড়ি করে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ব্যস্ত হয়ে দাদীকে জিজ্ঞেস করলো,

“কষ্ট হচ্ছে দাদী? চলো চলো ভিতরে যাই।”

“তেমন কিছু হয়নাই ভাই, বয়স হইছে তাই এইডা কিছু না । তুই বসতো।”

ফাহাদ শুনলো না দাদীর কথা, একপ্রকার জোর করে বাড়ির দিকে নিয়ে আসলো তাকে। এখানে থাকলে যে দাদী তাকে এটা-সেটা বলে খোঁচাবে তা তার ঢের জানা আছে। ফাহাদ এগুলো সূক্ষ্ণ ভাবে এড়িয়ে দাদীর হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো। মনেমনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আনমনে বললো,

“এই শহরে সুখী বলতে কোনো মানুষ নেই।
এই শহরে সুখ নামক সেই শব্দটা আর নেই, মুছে গিয়েছে চিরতরে।
সুখে আছি, সুখে থাকি, অভিনয় করি বেশ!
বাস্তবতায় পাইনা কোথও খুঁজে একটু সুখের রেশ।
এই শহরে আমার কোনো প্রিয় মানুষ নেই।
এই শহরে আমি কারো প্রিয় মানুষ নই।
প্রিয় শব্দটার সাথে তাইতো বহুকাল পরিচিতি নেই!
প্রিয় অপ্রিয়’র খেলায় আমি এক ছন্নছাড়া!
আমার এই আমিটা ছাড়া দিনশেষে আপন আর কেউ নেই।”
.
.
গোধূলির আকাশের সূর্যমামা ডুবে গিয়েছে।ধরণীর বুকের চারপাশটা আবছা অন্ধকার। ইতোমধ্যে মাগরিবের আযান দিয়ে দিয়েছে। চাঁদনী ভর সন্ধায় ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যা বিলাস করছে। তার মাথার উপর দিয়ে একঝাঁক পাখি কিচিরমিচির শব্দ করে নিজেদের নিড়ে ফিরছে।
কিছু একটা ভেবে কিছুক্ষণ সেদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা। অতঃপর বিড়বিড় করে বললো,

“এই যে পাখিদের আকাশে সন্ধ্যা নামলে অথবা মেঘ জমলেই পাখিরা বাড়ি ফেরার পথ খোঁজে। অথচ আমার আকাশে এতো মেঘ, কই আমাকে কে বুঝে? দিনশেষে এইভাবে কেউ তো আমার নিড়ে পথ খুঁজে না।”

মিনিট খানিক সময় অতিবাহিত হতেই দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো চাঁদনী, বুক ভরে তপ্ত শ্বাস ছাড়লো চাঁদনী। না চাইতেও তার চোখ দু’টো পরিচিত একটা মুখ খুঁজে চলছে। আশেপাশে বার কয়েক তাকিয়েও দেখা মিললো না সেই মুখটার। দাদিকে রুমে দিয়ে সেই যে বাহিরে হলো ঘর থেকে লোকটা, এখনো ফিরেনি। প্রকৃতি জুড়ে আবছা আলোটাও ধীরে ধীরে তলিয়ে নিকাষ কালো আঁধারে’র রুপ ধারণ করছে। চাঁদনী আর না দাঁড়িয়ে রুমে এসে নামাজ পড়ে নিলো। এরিমধ্যে মায়ের রুমে ফাহাদে’র উপস্থিতি টের পেয়ে মৃদু হেসে রান্না ঘরে চলে গেলো চাঁদনী। ফাহাদে’র সাথে তার সম্পর্ক আগের ন্যায়ই। এরপরও মানুষটার উপস্থিতি অদ্ভুত এক শান্তি খুঁজে পায় চাঁদনী।
এখন অবধি তাদের সম্পর্কটার কোন উন্নতি দেখা যায়নি। চাঁদনী কাছাকাছি থাকতে চাইলেও ফাহাদ বরাবরের মতো এড়িয়ে চলে তাকে। লোকটা সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকে, তার মনে কি চলছে বুঝে উঠতে পারে না মেয়েটা। তবুও চাঁদনী তার দায়িত্ব যথাসম্ভব পালন করার চেষ্টা করে। এইযে, এই কয়দিনে দেখে আসছে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ফাহাদ একটা কফি খায়, তার উপস্থিতি টের পেয়েই নিজ দায়িত্ব কফিটা তৈরি করতে গেলো চাঁদনী।
.
.
ফাহাদ মাএ রুমে আসলো। রুম একদম ফাঁকা, কোথাও কেউ নেই। যা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো, কারণ এই সময়টা চাঁদনী রুমেই থাকে। আজ গেলো কই মেয়েটা? আনমনেই বলে উঠলো ফাহাদ। নিজের অজান্তেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রুমে চারপাশে চোখ বুলিয়ে খুঁজলো যেন। না নেই রুমে। আর কিছু না ভেবে দ্রুত তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমের ঢুকলো ফাহাদ। লম্বা একটা সওয়াল দরকার তার। শহরে থাকা অভ্যাস অনুযায়ী এই সময়টায় একটা গোসল না দিলেই নয়।

চাঁদনী সবাইকে সন্ধ্যার নাস্তা দিয়ে সবেমাত্র ফাহাদে’র জন্য এক কাপ কফি নিয়ে নিঃশব্দে রুমে প্রবেশ করলো। সাথে সাথে তার চোখ আটকে গেলো সদ্য গোসল করা সুদর্শন পুরুষটিকে দেখে। ফাহাদ খালি গায়ে, পড়নে শুধু একটা ট্রাউজার, বড়সড় চুলগুলো থেকে টপটপ পানি গড়িয়ে পড়ছে, ফর্সা শরীর বিন্দু বিন্দু পানির কণা গুলো চিকচিক করছে। মাএ গোসলের ফলে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে তাকে, চেহারা জুড়ে অদ্ভুত এক মায়াবী আভা লেপ্টে আছে। প্রিয় পুরুষের এমন ভ’য়ং’ক’র সৌন্দর্য যেন মা’দ’ক’তা মতো টানছে কিশোরী মেয়েটাকে। বারংবার ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে এই সৌন্দর্য! মুহূর্তেই বক্ষ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে মেয়েটির, বুকের বাঁ পাশটায় চিনচিনে অদ্ভুত এক ব্যথা অনুভব হচ্ছে। নিজেকে সামলে চাঁদনী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে ফাহাদ কে। ছেলেটার চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে, চাপ দাড়ি গুলো অযত্নে বড় হয়ে আছে, চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল, ফর্সা মুখটায় গুটি কয়টা ব্রণ যা লালচে হয়ে আছে, ঠোঁট গুলোতে সিগারেটে’র পোড়া কালচে কালো দাগ। তবুও যেন দুনিয়ায় সমস্ত সৌন্দর্য তার মধ্যে খুঁজে পাচ্ছে চাঁদনী। তার সামনে থাকা লোকটা যেন, দুনিয়ায় সবথেকে অপূর্ব সৌন্দর্যের অধিকারী!
এর আগেও তো কত সুন্দর লোক দেখেছে সে, কই এমন অদ্ভুত অনুভূতি তো কারো জন্য হয়নি । তবে এখন কেনো এমন হচ্ছে? লোকটাকে ভালোবাসে বলে তাই কি এমন হচ্ছে? নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো চাঁদনী।পরমুহূর্তেই ভিতর থেকে উওরটা হ্যাঁ বোধক। চাঁদনী হাসলো খানিক, মুগ্ধ কণ্ঠে বলে উঠলো,

“অপূর্ব!”

আকস্মিক এমন কথায় থমকে গেলো ফাহাদ। এতোক্ষণ ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে মনযোগী হয়ে কিছু একটা খুঁজছিলো সে, যার ফলে চাঁদনী’র উপস্থিত খেয়াল করেনি। হুঁশ ফিরতেই দেখলো চাঁদনী তার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। তার ভীষণ লজ্জা লাগছে এমন খালি গায়ে, একটা মেয়ের সামনে থাকতে। তড়িঘড়ি করে বিছনা থেকে তাওয়াল পেঁচিয়ে নিলো শরীরে। যা দেখে মুচকি হেসে চাঁদনী বলে উঠলো,

“আমিই তো, আমার কাছে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে জান?”

ফাহাদ চোখ কটমট করে তাকালো, চাঁদনী তা দেখে মুখের হাসিটা আরো একটু লম্বা করে, কফিটা পাশের টেবিলে রাখলো। গুটি পায়ে এগিয়ে এসে ফাহাদে’র গালে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে বললো,

“আপনি ভীষণ সুন্দর ফাহাদ! আপনার এই অদ্ভুত সৌন্দর্য আমায় এলোমেলো করে দিচ্ছে।”

ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে সরু চোখে দেখছে চাঁদনী’কে, এই স্পর্শ তার কেনো জানি ভীষণ ভালো লাগছে। সে রেগে যেতে গিয়েও পারলো না। বরং চাঁদনী’র হাতটা ধরে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,

“তুমি একটু বেশীই বলছো মেয়ে, আমার থেকে কত সুদর্শন পুরুষ রয়েছে ধরণীতে।”

“জানেন মানুষ যখন কাউকে ভালোবাসতে শুরু করে, তখন তার সৌন্দর্য দ্বিগুণ হতে শুরু করবে। সে যতই অসুন্দর দেখতে হয় না কেনো তার কু’ৎ’সি’ত রুপেও আপনি মুগ্ধতা খুঁজে পাবেন। চারপাশে এতো এতো মানুষ থাকতেও ঐ নিদিষ্ট একটা মানুষের সঙ্গ পেতে চাইবেন। সারাক্ষণ তাকে ঘিরে থাকতে ইচ্ছে হবে। আপনার চোখের সামনে মানুষটাকে সাজিয়ে ইচ্ছে হবে। এটাই হয়তো ভালোবাসার ম্যাজিক। তেমনি আমার দু’চোখ জানে আমার কাছে আপনি কতটা কিউট। আপনি যেমনটাই হন না কেনো, আমার কাছে আপনি বেস্ট। মৃদু হেসে বললো চাঁদনী। ”

“আমাকে নিয়ে ভেবোনা মেয়ে, চোখ থেকে ঘুম হারিয়ে যাবে, হাজারো স্বপ্ন ভীড় জমাবে ও দুচোখে!
আমি এভাবেই একা ভালো থাকি,আমার একলা ফাগুন কাটে নিদারুণ সুখে। দূরে থাকো আমার থেকে, না-হয় বিরহের উ’ওা’পে ঝলসে খা’ক হয়ে যাবে!”

কথা শেষ করেই ফাহাদ চট করে দূরে সরে গেলো। চাঁদনী সেদিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বললো,

” আমার থেকে এতো দূরে দূরে থাকেন কেনো ফাহাদ? একবার কাছে এসে দেখুন না সবটা দিয়ে আগলে রাখবো। জানেন, দূরে গেলেও ফিরে আসা যায়, এমন একটা গল্প হলে কেমন হয়!
জ্বরের আরামে ঘুম এসে যায়,কপাল ছুঁয়ে দেখার সেই মানুষটা আমি হতে চাই।
চলুন না আমরা আবার নতুন করে গল্প সাজাই
অল্প অল্প করে স্বপ্ন গুছাই, দূরে গেলেও ফিরে আসা যায়..! আপনিও একবার আসুন। বলুন আসবেন? ”

ফাহাদ নিরুওর, চুপ হয়ে অন্য দিক ঘুরে শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলো। চাঁদনী হতাশ চোখে তাকিয়ে রইলো সে দিকে। ফাহাদ একদম গম্ভীর, তার মনে কি চলছে বুঝার দুঃসাহস নেই চাঁদনী’র। কিছুক্ষণ চাঁদনী একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। মিনিট পাঁচেক সময় অতিবাহিত হলো এভাবে। দু’জনই চুপচাপ। হঠাৎ ফাহাদ নিরবতা ভাঙে দুপদাপ পায়ে কফির মগটা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে সামনের বারান্দায় চলে গেলো। চাঁদনীও আর কিছু না ভেবে আশাহত মনটা নিয়ে বিছানায় বসে পড়লো। কেনো জানি অজানা কারণে তার আজ ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করে।
ফাহাদ বারান্দায় এসে কফি চুমুক দিতেই মনে হলো ঠান্ডা শরবত খাচ্ছে। তবুও এটাই শেষ করে মিনিট খানিক সময় একাকী নিরবে সময় পার করে রুমে আসলো। চাঁদনী সুয়ে আছে মন খারাপ করে। ফাহাদ আড় চোখে বার কয়েক চাঁদনী’র দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটার চোখে পানি চিকচিক করছে। তারও খারাপ লাগছে হুট করেই। কিছু একটা ভেবে চাঁদনী’র পাশেই দূরত্ব রেখে বসলো ফাহাদ। যা দেখে অবাক হয়ে চাঁদনী হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো। ফাহাদ এবার সরাসরি চাঁদনী’র দিকে তাকিয়ে বললো,

” শোনে মেয়ে? চোখের পানি ঘোলাটে হবার আগেই মুছে ফেলো, যার জন্য ঘোলাটে করবে তার কাছ থেকে আড়াল করো। চোখের পানি ঘোলাটে হলে সবাই দেখবে কিন্তু যার জন্য হবে সেটা কেউ দেখবে না। চোখের জল সে তো আড়ালেই সুন্দর! সচ্ছ পানি সবাই দেখবে, কিন্তু ঘোলাটে পানির ভার কেউ নিবে না।”

[ কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ ]

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে