#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি
#writerঃsumaiya_afrin_oishi
#পর্বঃ১০
বাসায় এই প্রথম জোছনা নতুন মেহমান হয়ে এসেছে, সেই উপলক্ষে আফজাল হোসেন ব্যাগ ভর্তি ভালো-মন্দ বাজার করে নিয়ে আসছে।যদিও জোছনা চলে যাবার জন্য অনেক বার উঠেছে, কিন্তু আফজাল হোসেনের জোড়াজুড়িতে থাকেতে বাধ্য হয়েছে। যা দেখে রুমে বসে ক্রো’ধে ঝলসে যাচ্ছে ফাতেমা খানম। এমনিতেই এক উটকো বোঝা দীর্ঘ স্থায়ী হয়ে জুড়ে বসেছে তার সংসারে আবার তার সাথে আরো একটা এসে জুটেছে। আরে ভাই বোনকে দেখতে এসেছিস দেখে চলে যাবি থাকার কি দরকার? সব ভালো ভালো খাবার ধা’ন্দা। জীবনে তো এসব চোখেও দেখে নাই, ফকির মিসকিনের দল! খাবার দেখলে আর হুঁশ থাকে না l বিড়বিড় করে নিজের রাগ মিটাচ্ছে ফাতেমা খানম। যা কান এড়ালো না চাঁদনী’র। চাঁদনী মাএই এসেছিলো শ্বাশুড়ির কাছে, গরুর মাংসটা ভালো রাঁধতে পারে না চাঁদনী।যাতে একটু রান্নাটা দেখিয়ে দেয় তাকে। এসেই রুমের পাশ থেকে এসব শুনতে পেয়ে চোখ দু’টো টলমল করে উঠলো।তার আপাকে নিয়ে এসব বলছে?তার যে সহ্য হচ্ছে না। তবুও মুখ বুঝে হজম করে নিলো, ভিতরে গিয়ে আর ডাকলো না তাকে। মনে মনে আল্লাহ’কে ডাকছে বারংবার যাতে তার আপা এগুলো না শুনে। শুনলে যে ভীষণ কষ্ট পাবে মানুষটা।
.
.
চাঁদনী একা একা নিজের মতো যতটুকু পারছে সেই ভাবে সবকিছু রান্না করে নিলো। আবার রান্না শেষে সব খাবার অন্য পাতিলে ঢেলে, হাঁড়ি পাতিল গুলো ধুয়ে সবে মাত্র রান্না ঘর থেকে বেরিয়েছে। বেলা অনেকটা হয়ে গিয়েছে। পেটে প্রচুর ক্ষিধেও লাগছে তার। আপার সাথে খাবে বলে খেলো না কিচ্ছুটি। আর কিছু না ভেবে দ্রুত গোসল করতে গেলো পুকুরে।
বাড়িটা এখন একদম নিরব। বাড়ির মেয়েরা এখনো আসেনি ভার্সিটি থেকে। আফজাল হোসেন ও মাহিম পুনরায় আবার দোকানে গিয়েছে। জোছনা কাউকে না পেয়ে বসে বসে আসিয়া বেগমের সাথে আলাপ করছে, আর বিকেল হবার অপেক্ষায় আছে। তার উপস্থিতিতে যে ফাতেমা খানম অসন্তুষ্ট সেটা তার চেহারা দেখেই বুঝে গিয়েছে সে।
ফাতেমা খানম এতক্ষণ মাথা ব্যথার নাম করে সুয়ে ছিলো রুমে। রান্না ঘর থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে, রুম থেকে উঁকি দিয়ে দেখলো কেউ নেই। দ্রুত রান্না ঘরে এসে সবগুলো তরকারি টেস্ট করলো। রান্না মোটামুটি ভালোই হয়েছে।
ভেবেছিলো এসব রান্না চাঁদনী পারবে না। তাই এসব স্বামী’কে দেখিয়ে কিছুটা অপমান করতে পারবে সে। তার আর হলো কই! আশাহত হয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। হুট করে কিছু একটা আইডিয়া করে মুচকি হাসলো। আপাতত নিজের পেটেও ক্ষিধে, আর দেরী না করে এক প্লেট ভাত, তরকারি সবার অগোচরে নিয়ে খেয়ে নিলো। তারপর উপর থেকে আবার ভাতগুলো সমান করে রাখলো। যাতে বুঝা না যায় এখান থেকে কেউ খেয়েছে। পরক্ষণে নিজের আইডি অনুযায়ী রান্না ঘর থেকে, লবণ ও মরিচের গুঁড়ো এনে গরু মাংসে মিশিয়ে দিলো। এখন একটু ভাল্লাগে তার! এতো দামের গরুর মাংস তা কি-না বাহিরের মানুষ খাবে।
আর সে তাকিয়ে দেখবে? হাহা! সেও এখন দেখবে কেমনে খায়। ভাবতেই অমায়িক হাসলো। অতঃপর খুশী মনে বেরিয়ে গেলো রান্না ঘর থেকে।
বাড়ির সবাই এসে গিয়েছে ইতোমধ্যে। দুপুরে সবাই খেতে বসেছে। শুধু মিম আসেনি খেতে। ফাতেমা খানমকে ডাকার আগেই এসে নিজ ইচ্ছায় সবার জন্য খাবার বেড়েছে। হাসি মুখে জোছনার প্লেটে কতগুলো মরিচ ও লবণ মিশানো মাংস দিতে নিলো। অমনি জোছনা হাত দিয়ে থামিয়ে মৃদু হেসে বললো,
“আসলে আন্টি আমি গরু মাংস খাই না।”
যা শুনে ফাতেমা খানমের হাসি মুখটা চুপসে গেলো। এটা জানলে কি আর সে এতো দামের মাংস নষ্ট করতো। তার ছোট মেয়েটা কত পছন্দ করে গরুর মাংসটা। পরক্ষণেই চাঁদনী শ্বাশুড়ি’র চুপসে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
কারণ সে ঘটনা আন্দাজ করতে পেরেছে, হঠাৎ এই মানুষটার এতো যত্ন করার কারণ। অতঃপর আশাহত মানুষটাকে আরো একটু জ্বালাতে ফিসফিস করে বললো,
“কাজটা আপনি ভালো করেননি আম্মা। হিতে বিপরীত হলো তাই না? নিজেদের কপালেও জুটলো না।”
ফাতেমা খানম চোখ কটমট করে তাকিয়ে স্বামী’র প্লেটে দিলো মাংস গুলো, কিছু শুনার আশায়। কিন্তু আফজাল হোসেন তার আশার প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়ে চুপচাপ হজম করে নিলো অখাদ্য গুলো। শুধু খেলোই না, ফাতেমা খানমের দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বললো,
“আজ গরুর মাংসটা দারুণ স্বাদ হয়েছে ফাতেমা! নিশ্চয়ই তুমি রেঁধেছো?”
হাসির আড়ালেও কি জানি ছিলো স্বামীর কথায়। যা শুনে শুকনো ঢোক গিললো ফাতেমা খানম।
.
.
বিকেল হতেই জোছনা আপা বিদায় নিয়ে চলে গেলো। চাঁদনী বোনকে বুঝতে দিলো না কিচ্ছুটি। আপা যেতেই হঠাৎ করেই চাঁদনী’র মনটা বিষিয়ে উঠলো। এতক্ষণ কৃত্রিম হাসিটা আর ধরে রাখতে পারলো না। মানুষটা একটা বেলার জন্য থেকেছে, অথচ তার আড়ালে কত কি হলো। ভাবতেই চোখের অশ্রু গুলো গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো মেয়েটার। ভিতর থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
“আপা তুমি আর এসো না এই নীড়ে! তোমাকে করা অপমান যে আমায় ভীষণ যন্ত্রণা দেয়।”
তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান মানুষ আফজাল হোসেন, উনি বুঝতে পারলো চাঁদনী মেয়েটার মন খারাপ। উনি তা দেখে ছেলে-মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বললো,
“সবাই রেডি হয়ে নেও জলদি। আজ বিকেলটা তোমাদের সবাই নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াবো। অনেক দিন হলো কোথাও যাওয়া হয়নি, একদম ঘরবন্দী ভালো লাগেনা।”
ফারিহা, মিম, মাহিম, আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। কিন্তু চাঁদনী’র মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। তা দেখে বাবা পুনরায় বললো,
“কি হলো চাঁদ মা? তুমিও যাও রেডি হয়ে নেও।”
চাঁদনী’র এখন যেতে ইচ্ছে করছে না, এমনিতেই ভীষণ খারাপ লাগছে তার। কিন্তু বাবাকে কিচ্ছুটি বললো না। বিনাবাক্যে চলে গেলো নিজের রুমে।
এই মানুষটার কথা সে কি করে ফেলবে? উঁহু অসম্ভব! এটা তার জন্য অন্যায় হবে, পাপ হবে !
চাঁদনী যাবে শুনে মিমের এতক্ষণের সমস্ত আনন্দ মাটি হয়ে গেলো, তার মুখখানায় আঁধার ঘনিয়ে আসলো। এই খ্যাত মার্কা মেয়েটা তাদের সাথে কি যায়? একদম যেতে ইচ্ছে করছে না তার। তবুও বাবার মুখের উপরে “সে যাবে না” বলার মতো সাহস নেই।
কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই একাএে বেরিয়ে পড়লো, আফজাল হোসেন নিজের বৃদ্ধা মা’কেও সাথে নিলো। আসিয়া বেগম যে ভীষণ খুশী হয়েছে, তা তার মুখের হাসিটাই বলছে। উনি বাচ্চাদের মতো খিলখিল করে হাসছে। শুধু গেলো না ফাতেমা খানম।
.
চাঁদনী বাহিরে পা রাখতেই হঠাৎ তার চোখে পড়লো বাড়ির নামটার দিকে। এতোদিন খেয়াল করেনি সে এটা। গেইটের মাঝখানে চকচক করছে “সুখ নীড়” লেখাটা। বার কয়েক লেখাটা মনেমনে আওড়াল মেয়েটা। মিনিট খানিক পড়ে সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে হেসে, বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
“ওহে সুখ নীড় তুইও আমায় একটু সুখ দিতে পারলি না! দেখ না, আমি কতটা অ’ভা’গী! হাহা! সুখ নীড়ে থেকেও আমি একটু সুখ পেলাম না।”
.
.
বাবা সবাইকে নীলপদ্ম গ্রামের সবথেকে জনপ্রিয় জায়গা “নীল দীঘি” নামক একটি জায়গায় নিয়ে এসেছে। জায়গাটা এতো সুন্দর! এমন দৃশ্য আগে কখনো চাঁদনী দেখেনি। গ্রামের ভিতরে এতো সুন্দর জায়গা হতে পারে তাতো তার কল্পনায়ও ছিলো না। বিশাল বড় বিলের মধ্যখানে বড় একটা দীঘি। মাঝখান দিয়ে সরু লম্বা একটি রোড। যার দুই পাশে সারি সারি কৃষ্ণূচূড়া ও কাঠগোলাপ গাছ। গাছগুলো ভর্তি ফুল, যা রাস্তায় ছড়িয়ে আছে। যা থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রাণ আসছে চারপাশে। দীঘির মাঝখানে বিশাল বড় পাকা ঘাঁট, সাথে বসার জায়গাও রয়েছে। তাতে তাদের মতে অনেকেই দল বেঁধে বসে আছে।
সবথেকে চমৎকার দৃশ্য হলো, দীঘির সমস্ত পানি নীল রঙের। চাঁদনী মনে মনে ভেবে নিলো এজন্যই এ দীঘির নাম নীল দীঘি। চাঁদনী অপলক নয়নে তাকিয়ে আছে সে দিকে। নীল রঙের পানির উপর সূর্যের বিকেলের লাল আভা ছড়িয়ে পড়ছে। দুই রঙ মিলেমিশে চিকচিক করছে। দীঘির চারপাশ জুড়ে রয়েছে বাহারী রঙের গাছপালা। যা থেকে মৃদু মৃদু ঠান্ডা বাতাস শীতল করে দিচ্ছে মানব শরীর। মূহুর্তেই চাঁদনী’র মনটা ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে, বুক ভরে শ্বাস নিলো। তার মনে হচ্ছে সে স্বর্গে প্রবেশ করছে। ঘুরে ঘুরে, মুগ্ধ হয়ে আশেপাশের দৃশ্য গুলো দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। হঠাৎ ফারিহা চাঁদনী’কে নিয়ে ঘাঁটের সিড়িতে বসে পা ডুবিয়ে দিলো। আনন্দে চাঁদনী খিলখিল করে হেসে উঠলো। কতদিন পরে মেয়েটা মন খুলে হাসলো, যা দেখে আফজাল হোসেনের মুখে তৃপ্তির ছাপ। চাঁদনী’র এতো রঙ ঢঙ দেখে মিমের পিওে জ্বলছে, মুখ ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে উঠলো,
“বাপের জন্মে তো এসব দেখে নাই, এখন আর ঢঙ দেখে কে তার হু!”
____________________________
দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে এই ভাবে দুই দু’টো মাস। অথচ এখন অবধি স্বামী নামক মানুষটির সাথে কথা হয়নি, দেখা হয়নি চাঁদনী’র। তবুও রোজ মেয়েটা অপেক্ষা করে মানুষটা একদিন ঠিকই আসবে। এই মানুষেটার জন্য সব কিছু সহ্য করে এখানেই থাকছে চাঁদনী। তবুও রোজ ফাহাদ কে নিয়ে কল্পনায় কতশত আবদার, অভিযোগ করে। অথচ মানুষটা জানেও না, কেউ একজন তার আশায় প্রহর গুনতে থাকে রোজ।
সবকিছু ভালোই চলছিল, হঠাৎ করে আসিয়া বেগম আজ পাঁচ দিন ধরে ভীষণ অসুস্থ। শ্বাস- কাশ বেড়েছে ভীষণ। অবস্থা বড্ড শোচ*নীয়, মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রাণটা বেরিয়ে যাবে। মায়ের কষ্ট দেখে আফজাল হোসেন দিশেহারা হয়ে গিয়েছে, শহরের বড় ডক্টর দেখিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। বৃদ্ধা মহিলা মৃ’ত্যু’শ’য্যা’য় বসে ফাহাদে’র নাম নিচ্ছে বারংবার। তার একটাই আবদার মৃ’ত্যু’র আগে বড় নাতির মুখটা দেখার। এই বড় নাতিটা যে তার ভীষণ ভীষণ আদরের। তার মুখ থেকেইতো সে প্রথম দাদি ডাক শুনেছে। পরিচিত হয়েছে দাদি ডাকের গভীর অনুভূতির সাথে। আদরের বড় নাতিটাকে সে ভুলবে কি করে!
.
.
ফরহাদ বাবা’র সাথে অভিমান করে সবার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে সেই থেকেই। শুধু মাএ অফিসের প্রয়োজনে একটা বাটন ফোন ব্যবহার করছে। যার নাম্বার কেউ জানে না। যদিও আফজাল হোসেন যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ সে। ছেলের অভিমান সম্পর্কে অবগত সে। এ অভিমান নিজ থেকে যখন ভাঙ্গবে, তবেই সেইদিন নিজ ইচ্ছেতেই কথা বলবে ছেলেটা। আফজাল হোসেন ছেলেকে না পেয়ে রোজ নিয়ম করে শুভ্রর থেকে খবর নিতে ভুল করে না। আর ফাহাদও বাবার সাথে শত অভিমান করেও, মাস শেষে বাবার একাউন্টে টাকা পাঠাতে ভুল করে না।
ফাহাদ ভীষণ ভাবে বেছে নিয়েছে একাকিত্বকে। অন্তত এই একাকিত্বটা মানুষের মতো তার সাথে বিশ্বাসঘাত*কতা করবে না। প্রয়োজনের তাগিদে রোজ নিয়ম করেই অফিস করছে। এই অফিসের সময়টুকুই বাহিরে থাকে, অফিস শেষ হতেই রুমে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হয় না ছেলেটা। তবুও মাঝে মাঝে শুভ্র জোড় করে এখানে – সেখানে নিয়ে যায়। অতঃপর সিগারেট আর একাকিত্ব! এইতো বেশ আছে ফাহাদ নামক ছন্নছাড়া ছেলেটা।
রোজকার মতো আজও সকাল সাত টায় অফিসে গিয়েছে ফাহাদ। তার অফিস ছুটি হয় বিকেল পাঁচটায়। ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবে মাত্র বাসায় এসেছে। এসেই রুমে শুভ্রকে দেখে অবাক হলো ফাহাদ। কেননা শুভ্র এতো দ্রুত বাসায় আসে না, পরক্ষণেই চিন্তিত হলো ফাহাদ। কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই শুভ্র ব্যস্ত হয়ে বললো,
“দোস্ত তোর দাদী ভীষণ অসুস্থরে! অবস্থা বেশ শোচনীয়, বারবার তোকে দেখতে চায়।”
যা শুনে ফাহাদে’র এতক্ষণের চিন্ততো মুখটা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো। অতঃপর শার্টের বোতাম গুলো খুলতে খুলতে ঠা’ট্টার সুরে বললো,
“আমাকে বাড়িতে পাঠানোর নতুন টেকনিক তাই না শুভ্র?”
যা শুনে শুভ্র রেগে গেলো। এই খবরটা দিবার জন্য সে অফিস বাদ দিয়ে বাসায় এসেছে আর ছেলেটা তার সাথে ঠাট্টা করছে। কেমনডা লাগে? হুট করে পকেট থেকে মোবাইল বের করে রেকর্ডিং চালু করলো। একটু আগেই আফজাল হোসেন তাকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে। শুভ্র আগেই জানতো, ফাহাদ বিশ্বাস করবে না তার মুখের কথা। তাই বুদ্ধি করে রেকর্ড করে রেখেছো।
রেকর্ডে বাবার করুণ কণ্ঠ স্বর শুনে ফাহাদে’র বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। এই কণ্ঠে কোনো মিথ্যে নেই, সে তার বাবাকে চেনে। শক্ত পোক্ত মানুষটা ভে’ঙে পড়েছে ভিতর থেকে, নিশ্চয়ই তার দাদী অসুস্থ। তার দাদী অসুস্থ, মানে তাকে এক্ষণই যেতে হবে নীলপদ্ম। এই মানুষটা যে তার অতী প্রিয় একজন।
ফাহাদ আর কিছু না ভেবে এই অবস্থায়ই, দ্রুত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
.
.
রাত এখন প্রায় বারোটা বাজে।সুখ নীড়ে আজ সকালে, নতুন মেহমান হয়ে ফারিহা শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ এসেছে।চাঁদনী কিছুক্ষণ আগেই সবাইকে খাবার দিয়ে, আবার সবকিছু গুছিয়ে সুয়ে পড়ছে। আজ অনেক ধকল গিয়েছে তার শরীরের উপর, একটু বিশ্রাম খুব দরকার।
চাঁদনী ছাড়া বাকি সবাই এখনো জেগে আছে। সবাই মিলে আসিয়া বেগমের রুমে বসে আছে। আকস্মিক দরজায় কলিং বেল শুনে চিন্তিতো হলো মানুষ গুলো। এতো রাতে আবার কে? মাহিম গিয়ে দরজা খুলতেই চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
“দাদাভাই তুমি?”
মাহিমের চিৎকার শুনে সবাই বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। সামনে ফাহাদ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভারী অবাক হলো মানুষ গুলো, আবার ভীষণ খুশীও হয়েছে। ফাতেমা খানমতো ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আর যাই হোক ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসে সে। ফাহাদ সবার সাথে কুশল বিনিময় করে দাদির কাছে গেলো। অভিমানের জন্য বাবা দিকে একটি বার তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।আফজাল হোসেনও কিচ্ছুটি বললো না। তবে মনেমনে ভীষণ খুশী হয়েছে, তার ছেলেটা বাড়িতে এসেছে এটাই অনেক।
.
.
ফাহাদ ঘন্টা খানিক সময় দাদির কাছে বসে দাদির এতোদিনে জমানো বিভিন্ন কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। এতদিন পরে ফাহাদ কে দেখে, দাদি যেন অর্ধেক সুস্থ হয়ে গিয়েছে। ফাতেমা খানম এই রাতে নিজেই ছেলের পছন্দের চিংড়ি মাছ রেঁধে ভাত দিয়েছে। ফাহাদ খেয়ে সবে মাত্র নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো। দরজা চাপানোই ছিলো , ভিতরে অন্ধকার।রুমে ঢুকে লাইট জ্বালাতেই দেখতে পেলো চাঁদনী তার রুমে ঘুমাচ্ছে। এতক্ষণে এই মেয়েটির কথা মাথাই ছিলো না তার।এতো রাতে মেয়েটাকে তার রুমে দেখে মেজাজটা বিগড়ে গেল ফাহাদে’র। চিৎকার দিতে গিয়েও দিলো না, বাসায় নতুন মেহমান শুনলে মন্দ বলবে বোনকে।
হঠাৎ রুমে লাইটের আলো চোখে পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো চাঁদনী। আবারও উল্টো পিঠ হয়ে ঘুমিয়ে গেলো। শরীর অধিক ক্লান্ত থাকায় এতক্ষণের কিচ্ছুটি টের পায়নি চাঁদনী। এদিকে রাগে ফুঁসছে ফাহাদ, দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বললো,
“এই মেয়ে?”
কয়েকবার ডাকতেই ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকালো চাঁদনী। আকস্মিক অস্পষ্ট ভাবে ফাহাদ কে দেখে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে উঠলো ,
“উফ্ ফাহাদ আপনি এতো দুষ্ট কেনো গো? দেখছেন না আমি ঘুমাচ্ছি। সারাদিন তো মাথায় ত’ল্লি’ত’ল্লা চেপে বসে থাকেন। এখন আবার স্বপ্নে এসেও আমার ঘুমের বারোটা বাজাচ্ছেন। ফাজিল লোক কোথাকার!”
#চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]