#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি
#writerঃsumaiya_afrin_oishi
#পর্বঃ৮
সকালের মিষ্টি রোদগুলো ধীরগতিতে তীব্র উষ্ণতা ছড়িয়ে দিচ্ছে ধরণীর বুকে। বেলা বাড়ছে যত, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোদের প্রখর তেজ। সূর্যের তীব্র উওাপে, মানবজীবন করে তুলছে ওষ্ঠাগত। প্রখর তৃষ্ণার্ত একটি দুপুর। ঘড়ির কাঁটায় এখন বারোটা ছুঁই ছুঁই। অথচ এই গরমকে একদম উপেক্ষা করে, নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে মগ্ন চাঁদনী। ফাতেমা খানম মাএ বাসায় আসলো পাশের ঘর থেকে। রান্না ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখলো, এখনো রান্না হয়নি দুপুরের জন্য। মুহুর্তেই তার মেজাজ বিগড়ে গেলো। ধুপধাপ পা ফেলে, তিব্র ক্রো’ধ নিয়ে চাঁদনী’র রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
” দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে, এখনো রান্নার খবর নাই তার। ফকিন্নি’র বাচ্চা করছে টা কি সারাক্ষণ ? শুধু বসে বসে আমার ঘরের অ’ন্ন’ধ্বং’স করছে! যতো ফকির মিসকিন সব আমার ঘরে।”
বিড়বিড় করে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে আরো এক বস্তা গা’লি দিলো ফাতেমা খানম। রুমের দরজা চাপানোই ছিলো, উনি না ডেকে শরীরের সমস্ত রাগ নিয়ে কাঠের দরজাটা ধা’ড়া’ম মার্কা শব্দ করে খুলে দেখতে পেলো, চাঁদনী হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কি সুন্দর আরামে ঘুমোচ্ছে। যা দেখে রাগে, হিংসায় উনার পিওে জ্ব*লছে। ঠাস করে ফ্যান অফ করে দিলো। না এতেও শান্তি পেলো না, পরক্ষণেই টেবিলের উপরে থাকা এক গ্লাস পানি ছুঁড়ে মারলো মেয়েটির গায়ে।
আকস্মিক দরজার এমন শব্দ, গায়ে শীতল পানি পড়তেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো চাঁদনী। চোখ ডলতে ডলতে, আশেপাশে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখতে পেলো শ্বাশুড়ি তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী মনে মনে ফাঁকা ঢোক গিললো। সে বুঝতে পারলো না তার হঠাৎ এতো রেগে যাওয়ার কারণ।কি করছে সে? আবার, কোনো বিপদ হলো না তো তার অজান্তে? আর সেই বা কখন ঘুমালো? দিক বেদিক শূন্য হয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই শুনতে পেলো শ্বাশুড়ি তীক্ষ্ণময়ী ঝাঁঝালো কণ্ঠ।
“এই যে মহারাণী! বলি কি বেলা কয়টা বাজে হ্যাঁ? দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে আর আপনি রান্না না করে, রুমে এসে আরাম করে ঘুমোচ্ছেন। রান্নাটা তোর কোন মা এসে করে দিয়ে যাবে হারাম’জা’দি?”
চাঁদনী এবার বুঝতে পারলো তার এতো ক্রো’ধের কারণ। প্রতিনিয়ত ক’ষ্ট পেতে পেতে একসময় ক’ষ্টগুলোকে আর ক’ষ্ট বলে মনে হয় না। রোজ-রোজ সবার কথা শুনতে শুনতে নতুন করে আর কারো কথা গায়ে লাগে না। তেমনই চাঁদনী নামক মেয়েটিও আজ আর শ্বাশুড়ির কথায় কিছু মনে করলো না। কারণ সে-তো এগুলো নতুন শুনছে না, এসবে সে অবস্থ। চাঁদনী বরং আ’ড়’মো’ড় ভেঙে হাই তুলে খানিকটা মুচকি হাসলো। তারপর শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বললো,
“আমার একটা মা তো আমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে আম্মা। মাঝে মাঝে এই ‘মা’টা এসে রান্না করে দিলে কিন্তু মন্দ হবে না।”
ফাতেমা খানম খানিক অবাক হলো মেয়েটির এহেন কথায়। উনি যেমন ভেবে ছিলো গ্রামের অসহায় মেয়ে, নিশ্চয়ই সহজ সরল, বোকা হবে। এ মেয়েতো মনে হচ্ছে পুরো উল্টো। এই মেয়ের সাহস কতো তার মুখের উপরে কথা বলছে! মুহুর্তেই উনি চোখ কটমট করে কিছু বলতে অগ্রসর হবে অমনি চাঁদনী বিছানা থেকে নেমে শ্বাশুড়ি’র হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে রসিকতা করে বললো,
“আহা আম্মা! এতো রাগ শরীরের জন্য মোটেও ভালো না। এমনিতেই শুনলাম আপনি হাই প্রেশারের রোগী। যে গরম পড়ছে আর তারমধ্যে আপনিও এভাবে রেগে আগুন হয়ে আছেন। দুই আগুন মিলে যদি বি’স্ফো’র’ণ ঘটে তাহলে কি স’র্ব’না’শ হবে ভেবে দেখছেন? তার থেকে আপনি বরং বসে কিছুক্ষণ ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস খেয়ে মাথা ঠান্ডা করুন। আমি বরং ফ্রেশ হয়ে আসি।”
বলেই চাঁদনী তাকে জোড় করে বিছানায় বসিয়ে ফ্যান চালু করে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ফাতেমা খানম সেদিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো,
“শ’য়’তা’নে’র বা’চ্চা! খুব বাড় বেড়েছিস তাই না? ফের আমার সাথে লাগদে আসলে একদম এই বাসা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাহির করে দিবো।”
চাঁদনী বোধ হয় শুনলো না। ওপাশ থেকে কোনো জবাব আসলো না। এরিমধ্য আফজাল হোসেন হাগ দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“ওদিকে কিসের শব্দ হচ্ছে বউ মা? ফাতেমা কি হয়েছে তোমার? কার সাথে এতো চেঁচামেচি করছো?”
হঠাৎ স্বামীর কণ্ঠে শুনে ভড়কে গেলো ফাতেমা খানম। উনি খেয়ালই করেনি আফজাল হোসেন আজ বাসায়। আর কিছু না বলে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। আফজাল হোসেন কারো কোনো সাড়া না পেয়ে এসবে আর মাথা ঘামালো না।
.
.
চাঁদনী ফ্রেশ হয়ে শ্বাশুড়ির রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো উনি সুয়ে আছে। পরক্ষণেই চাঁদনী দুষ্ট হেসে, গলার স্বর খানিকটা উঁচু করে শ্বশুরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে উঠলো,
“আম্মা? ও আম্মা? বড় আপা বললো বাবা নাকি বিরিয়ানি ভীষণ পছন্দ করে। বাবাতো আজ বাসায়, চলুন আমরা বউ শ্বাশুড়ি মিলে বাবার জন্য বিরিয়ানি রান্না করি। কি বলেন বাবা?”
আফজাল হোসেন বসার ঘরেই ছিলেন। উনি চাঁদনী’র কথা শুনতে পেয়ে উচ্ছাসিত হয়ে বলে উঠলো,
” অবশ্যই মা দারুণ আইডিয়া। অনেক দিন হলো বিরিয়ানি খাওয়া হয় না আমার। ফাতেমা যাওতো বউ মা’কে একটু সাহায্য করো।”
রাগে ফুঁসছে ফাতেমা খানম, চাঁদনী’কে যদি পারতো চিবিয়ে খেয়ে ফেলতো উনি। কিন্তু স্বামীর জন্য তাও সম্ভব নয় এখন। মনে মনে কতগুলো গালি দিতে ভুললেন না। উনি রুমে বসে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো চাঁদনী’র পানে। চাঁদনী সেদিকে পাওা না দিয়ে বাঁকা হেসে ফিসফিস করে বললো,
” কি হলো আম্মা? আসুন। আসুন। একটা কথা শুনুন? আমিও এ বাড়ির বউ। কোনো কাজের লোক না আপনাদের।এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে, একা সব সামলাতে কষ্ট হবে আমার। আমায় একটু সাহায্য করুন। না হয় কিন্তু, এই যে আপনি আমাকে একটু আগে পানি ছুঁড়ে মারলেন। কথায় কথায় আমাকে গালমন্দ করেন। এগুলো বাবা’কে বলে দিবো।”
এই কয়দিনে চাঁদনী বুঝে গিয়েছে তার শ্বশুরকে উনি কোনো কারণে ভীষণ ভয় পান। চাঁদনী যেন মোক্ষম জায়গায় মোক্ষম কথা বললো। একমাত্র এই একজন মানুষই উনার দুর্বলতা। উনি খুউব ভালো করে জানে আফজাল হোসেন অন্যাকে কখনো প্রশ্রয় দেন না। এসব যদি তার স্বামী জানতে পারে তার কপালে দুঃখ আছে। এই বয়সে এসে সবার সামনে অপমানিত হবার কোনো ইচ্ছে নেই তার। যা করার বুদ্ধি দিয়ে করতে হবে। যে চোখে ছিলো এতক্ষণ ক্রো’ধ, প্র’তি’হিং’সা, এখন সেই চোখে ভয়। ফাতেমা খানম ভীতু চোখে একবার চাঁদনির এদিকে তাকালো, যার অর্থ খবরদার বলো না। মুহুর্তেই সোয়া থেকে উঠে সুড়সুড় করে রান্না ঘরে গেলো। আর মনে মনে অন্য ছক কষলো। চাঁদনী ও বিজয়ী হেসে তার পিছু পিছু ছুটলো।
_________________________
প্রকৃতি জুড়ে চারদিকে সন্ধ্যার নিকাষ কালো আঁধার ছড়িয়ে দিয়ে জানান দিচ্ছে দিনের পরিসমাপ্তি। এই আঁধার যেন শূন্যতার চাদর জড়িয়ে, এক যুবকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে বিষাদে’র দল। সুখ ছেড়ে যাবার গল্প কোথাও লুটিয়ে পড়ছে অবেলায়। চারদিকে প্রগাঢ় একাকিত্ব, বুকে তিব্র হা’হা’কা’র, তার রাজ্যের প্রতিটি দেয়ালে দেয়ালে যেন লেখা, ভালো না থাকার কবিতা। এমন একটি সন্ধ্যায় ফাহাদ সদ্য গোসল করে, রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। চোখ দু’টো এখনো ফোলা ফোলা, ফর্সা মুখটা কেমন যেন মলিনতার ছাপ। পরনে ট্রাউজার, গায়ে পাতলা একটি টিশার্ট। এলোমেলো বড় বড় ভেজা চুল থেকে টপটপ পানি পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে শরীর। সেদিকে কোনো হুঁশ নেই তার। এতক্ষণ স্লিপ পিল খেয়ে সারা বিকেল ঘুমেই ছিলো সে, সবেমাত্র উঠেই গোসল সেরেছে। রুমে মন টিকছে না, শুভ্র সাথে থাকলে তার এতো একাকিত্ব অনুভব হয় না। কিন্তু ছেলেটা অফিসে এখনো, ফাহাদে’র অফিস ছুটির জন্য বাসায়ই থাকতে হয়। এখনো দুইদিন অবসরে আছে সে। এই অবসরেও নিজেকে একদম গুটিয়ে চারদেয়ালের মাঝে নিজেকে বন্দি করে রাখে পুরুষটি। কি করবে সে? তার যে জীবনের সমস্ত ছন্দ হারিয়ে গিয়ে, মিয়ে গেছে ধোঁয়াশার মতো। এ জীবনে শুধু এক আকাশ সমান হতাশা ছাড়া, অন্য কোনো কূলকিনারা যে খুঁজে পায় না সে। একবুক বিষন্নতা বুকে চেপে, পুরনো অভ্যাস অনুযায়ী তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো খানিক সময় আকাশের পানে। কিছুসময় অতিবাহিত হলো এভাবেই। আকাশও আর এখন ভালো লাগেনা তার। হুটকরে পকেটে থেকে একটা সিগারেট বের করে লম্বা কয়েকটি টান দিলো। আহ্ এখানেই যেন তার পরম শান্তি। নিজের কষ্ট গুলো ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিবার ব্যার্থ চেষ্টা। একটা,দুইটা এভাবে তিনটে সিগারেটের নিকোটিনের ধোঁয়া উড়িয়ে নতুন একটি ধরাতেই কেউ ছোঁ মেরে কেড়ে নিলো হাতের জ্বলন্ত সিগারেটটি। হঠাৎ কারো এমন আচরণে ভীষণ ক্ষু’ব্ধ হলো ফাহাদ। তিব্র মেজাজ নিয়ে কিছু বলতে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো শুভ্র দাঁড়িয়ে আছে। ফাহাদ রাগ করে কিছু বলতে গিয়েও বললো না, তবুও গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
“কি সমস্যা শুভ্র?”
“সমস্যাতো আমার না বুঝলি। সমস্যা তো তোর। সারাদিন তো মনে হচ্ছে কিছুই খাওনি। আর রুমে এসে সেই থেকে দেখছি একটার পর একটা সিগারেট খেয়েই খাচ্ছিস।”
শুভ্র সোজাসাপটা উত্তর শুনে ফাহাদ বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
“তোর ইচ্ছে হলে তুইও খা। তবুও আমাকে ডিস্টার্ব করিস না। যা এখন থেকে, তুই তোর কাজ কর গিয়ে। আমায় একটু একা থাকতে দে শুভ্র। প্লিজ!”
“এভাবে বলছিস কেনো দোস্ত? সারাদিন তো একা একাই থাকিস, আর কত একা থাকবি তুই? জীবন কি এতো সহ…..।”
শুভ্র বলতে পারলো না আর, তাকে থামিয়ে দিয়ে ফাহাদ অপর দিকে মুখ করে বললো,
“শুভ্র…..
জানো?মানুষ না,একা হতে চায় না!
তবুও কেন মানুষ একা হয়ে যায়,বলতে পারিস?
প্রাণী হয়ে জন্মেছি জানি,এ দেহে প্রাণের স্পন্দনটুকু দিব্যি টের পাই!সেকেন্ডে সেকেন্ডে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেখি,সামান্য ব্যথায় কাতরায় উঠি বলেই বুঝতে পারি,আমারও যে প্রাণ আছে।
তবে মানুষ হতে পেরেছি কিনা,জানি না!
জানিস তো?
বনের পশু-পাখীরাও না,একাকিত্বকে ভয় পায়,ওরা একা থাকতে চায় না!সঙ্গীহারা কোনো আহত পাখির চোখ দেখেছো কখনো?দেখোনি হয়তো।
চোখে জল কেমন ছলছল করে!
সঙ্গী হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে আকাশে উড়ে বেড়ায় দিকবিদিক!ওদের ব্যথা কেউ বুঝে না–কেউ না!
আর আমিতো মানুষ!
আচ্ছা শুভ্র….
তুইসঙ্গী হারানোর ব্যথা বোঝিস?
জোড়ার পাখি যখন পথ হারিয়ে ফেলে,তখন আর নীড়ে ফেরা হয় না তাদের–নীড়ে ফেরার তাড়া আর থাকে না!দু’জন দুদিকে বাসা বাঁধে, নতুন কোনো সঙ্গীর সাথে জোড়া বেঁধে হয়তো সব ভুলে যায়!
মানুষ তো আর পাখি নয়,তবে কেন সব ভুলে যায়– বলতে পারো?
মানুষরা না,একা থাকতে ভয় পায়!
তবুও কেন মানুষ বারবার একা হয়ে যায়?
ভুল বুঝে,অভিমানে–আক্ষেপে,ঘৃণায় কিংবা শোকে;মুঠো ভর্তি প্রেম নিয়ে,মানুষ কেন ছেড়ে যায়?বলতে পারো?
মানুষরা না সহজে ম*রতে চায় না,তবে বেঁচে থাকতেও যে বারবার ম*রে যায়!একাকিত্বে কিংবা সঙ্গী হারানোর শোকে;মানুষ বারবার বেঁচে থেকেও যেন মৃ*তপ্রায়!
শুভ্র…..
মানুষ কেন একা হয়ে যায়? আমি যে আর পারছি না দোস্ত! বেঁচে থেকে ধুঁ’কে ধুঁ’কে ম’রা’র থেকে নিজ হাতে একেবারে জীবনটা শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।
থামলো ফাহাদ। কি করুণ কণ্ঠ তার, কণ্ঠে যেন হাজারো আক্ষেপ, না পাওয়ার গল্প। চোখ দু’টো চিকচিক করছে ছেলেটার। প্রিয় বন্ধুর কষ্ট উপলব্ধি করে অপর বন্ধুর বক্ষেও যেন তীব্র ব্যথা হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে
বললো,
” পুরুষ মানুষদের এতো সহজে ভে’ঙে পড়তে নেই ফাহাদ। তুই তো এতো অবুঝ নয়। আরে এতো কষ্ট পাওয়ার কি আছে হ্যাঁ? ভাগ্য যেখানে নিয়ে যাবে, সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়। তারপর চারদিকে তাকা, ভালো করে দেখ, আর নিজেকে মানিয়ে নে। নিজেকে বল, এটা তোর নিয়তি, এখানেই থাকতে হবে, এখানেই বাঁচতে হবে। সুতরাং কাঁদা যাবে না, মন খারাপ করা যাবে না, আর যদি ভালো থাকা সম্ভব না হয় তাহলে অভিনয় করে হলেও যন্ত্রণার মধ্যে আল্লাহর জন্য বাঁচবি, তবুও বেঁচে থাকতেই হবে!”
.
.
দুজনই বারান্দা থেকে রুমে এসেছে মিনিট দশেক হলো। ফাহাদ সেই থেকে চুপচাপ বসে আছে। এরিমধ্যে শুভ্র রান্না ঘর থেকে খাবার নিয়ে এসেছে দু’জনার জন্য। ফাহাদের সামনে একটা প্লেট রেখে বললো,
“নে খাওয়া শুরু কর।”
আমার ক্ষুধা নেই। তুই খেয়ে নে।”
ফাদের কথার বিপরীতে কিচ্ছুটি না বলে, নিজের প্লেট থেকে ভাত মেখে ফাহাদে’র মুখের সামনে ধরে বললো,
“হা কর।”
শুভ্র’র বাচ্চামো দেখে মলিন হাসলো ফাহাদ। ছেলেটা যে,সে না খেলে খাবে না জানে সে। তাই কিছু না বলে খেয়ে নিলো ভাতটুক। অতঃপর নিজের প্লেট নিয়েই দুই বন্ধু এক সাথে খেয়ে নিলো।
ইতোমধ্যে চারপাশে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঢাকার শহরে কৃত্রিম আলোয় আলোকিত চারপাশ। ফাহাদ, শুভ্র দুই বন্ধু হাতে হাত রেখে রাস্তার পাশ ধরে হাঁটছে। হাঁটতে হাঁটতে একটা পার্কে এসেছে তারা। যদিও ফাহাদের প্রথমে অমত ছিলো। কিন্তু শুভ্র জোড় করে নিয়ে এসেছে। সারাদিনের সো’র’গো’ল থেমে গিয়ে জায়গাটা একদম নিরিবিলি। একটা বেঞ্চিতে দু’জন পাশাপাশি বসে টুকটাক কথা বললো। হঠাৎ শুভ্র উঠে গিয়ে টঙ্গের চায়ের দোকান থেকে দুটো চা নিয়ে এসে পুনরায় বসলো। সেও যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ফাহাদ একটু ভালো থাকুক, সকল ডি”প্রে’শ’ন কাটিয়ে একটু শান্তি নিয়ে বাঁচুক ছেলেটা। তাইতো প্রায় সময়ই নিজের অবসরের সময়টুকু ফাহাদে’র সাথে কাঁটায়। দুজনার চা খাওয়া শেষ হতেই ফাহাদের ডান হাতটা নিজের মুঠোয় আবদ্ধ করে নরম কণ্ঠে বলে উঠলো শুভ্র,
“মানুষের জীবন ভীষণ অদ্ভুত ফাহাদ। জীবন খাতার কিছু পাতা হারিয়ে গেলে, জীবন থেমে থাকে না। জীবন তার আপন গতিতে চলতেই থাকে। তাই থাকুক না কিছু না পাওয়া, তা নিয়ে আ’ফ’সো’স করে জীবনটাকে অ’স’হ্য মনে করতে নেই ফাহাদ।
না পাওয়াটুকু নিয়ে আক্ষেপ না করে,তার থেকে বরং আমাদের পাওয়াটুকু নিয়ে স’ন্তুষ্ট অনুভব করা উচিত। তাহলে আর মানসিক শান্তির অভাব হবে না। আর হ্যাঁ জানিসতো, জীবনে যদি মানসিক শান্তি থাকে, তবে শত অভাব, অন’টন, দুঃখ, এমনকি প্রিয় মানুষজন ছেড়ে যাওয়ার ডি”প্রে’শ’নও, জীবন যু’দ্ধে কিছুতেই আর এই মানুষগুলো কে টলাতে পারবে না। নিজেকে নিজেই ভালো রাখতে হবে।”
[ কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ! ]