তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৪

0
1744

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৪
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আবির গিটার রেখে ধীর পায়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো৷ অনু আবরিকে এভাবে ওর সামনে দেখে চমকে গেলো৷ লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে মাথা নিচু করে নিলো৷

“কী হলো তুমি এখনো যাওনি কেনো৷
.
ওই আসলে……
.
কী আসলে বলো?
.
আসলে আমার কানের দুল আপনার দরজার কাছে পড়ে গেছিলো তাই নিতে এসেছিলাম৷
.
বাহ মিথ্যা বলতেও শিখে গেছে দেখছি(মন মনে)
.
তারপর?
.
তারপর আপনি চলে আসলেন৷
.
অনু কথাটা বলে সেখান থেকে কেটে পরলো৷ আবির অনুর দিকে একবার তাকিয়ে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলো৷ আর মনে করতে লাগলো আজ থেকে এগারো বছর আগের ঘটনা৷
.
অনুর বয়স তখন দশ বছর আর আবিরের ষোলো বছর৷ অনু যখন পৃথিবীতে এসেছিলো তখন সব চাইতে বেশি খুশি আবিরই হয়েছিলো৷ অনুর প্রতি ওর কেমন জানি টান অনুভব হতো৷ আবির সব সময় অনুর কেয়ার করতো ওর পাশাপাশি থাকতো৷ কাউকে ওর সাথে সহ্য করতে পারতনা তাই সে নিজের বাড়ি ছেড়ে অনুদের বাড়িতে এসে পড়ে থাকতো৷ এতে অনুর অস্বস্তি হতো৷ কারন আবির যতদিন ওদের বাড়িতে থাকত ততদিন আবির ওকে অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দিতনা মিশতে দিতনা৷ অনু ছোটবেলা থেকেই নেগেটিভ মাইন্ডের ছিলো তাই আবিরের এমন ব্যবহার ওর কাছে ভালো লাগত না৷ আবিরকে বিদায় করার জন্য ওকে ক্ষ্যাত,গাইয়্যা বলে অপমান করত৷ আবির অনুর কথায় কষ্ট পেলেও সেসব গায়ে মাখত না৷আরেকদিন অনু ওর রুমে বসে বসে পড়ছিলো৷ আবির তখন ওর কাছেই যাচ্ছিলো ফ্লোরে তেল পড়ে থাকাতে সেটাতে স্লিপ খেয়ে অনুর উপরে পরে যায়৷ অনু চিৎকার করে উঠলো৷তারপর আবিরকে খারাপ নষ্টা এসব বলে অপমান করতে লাগল৷ বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেলে আবিরের বাবা আবিরকে খুব মারেন তারপর ওকে নিউইয়র্কে ওর চাচার কাছে পাঠিয়ে দেন৷

এসব মনে পরতেই আবিরের চোখ পানিতে ভেসে উঠলো৷

“হ্যাঁ ফুপিমনি ঠিক কথাই বলে অনুর ম্যাচিউরিটি একটু বেশিই৷ নাহলে দশ বছরের একটা মেয়ে এভাবে কেনো কথা বলবে৷ সেদিন আমি তোর উপরে ইচ্ছে করে পরে যায়নি তেল ছিলো সেখানে আর তেলটা কে ফেলেছিলে ছোঁয়া৷ হ্যাঁ বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন যে উনার আমাকে বুঝতে ভুল হয়েছে৷ ছোঁয়া চুলে তেল দিতে গিয়ে ফ্লোরে তেল ফেলেছিলো আর আমি সেখানে স্লিপ খেয়েই তোর উপরে পরে গেলাম৷ অনু তোর কী একটুকুও অনুশোচনা হয়না৷
.
হ্যাঁ আমার অনুশোচনা হয়৷ আমার ম্যাচিউরিটি বেশি থাকলেও তখন এতটাও ম্যাচউরিটি ছিলোনা যার উপরে ভিত্তি করে আমি বুঝতে পারব যে আবির আমাকে ভালোবাসত৷ আবিরের বয়স তখন ষোল ছিলো৷ পর্যাপ্ত বয়সেরই ছিলো ও৷আমাকে কারও সাথে মিশতে না দেওয়ার কারন তখন না বুঝতে পারলেও এখন পারছি এসব যে আবিরের ভালোবাসার ইঙ্গিত ছিলো৷ আবিরকে খুব অপমান করেছি কিন্তু তবুও সে আমার পিছু ছাড়েনি কিন্তু শেষে আমি এটা কী করেছিলাম ছিঃ ছিঃ ছিঃ৷না আবির আবিরের জায়গায় ঠিক আছে৷ ও যদি আমার জন্য নিউইয়র্ক গিয়ে দশ এগারো বছর কাটিয়ে আসতে পারে তাহলে আমি কেন ওর থেকে দূরে থাকতে পারবনা৷আবির আমাকে কয়েকটা কথা শুনিয়েছে তাতেই আমার এতো খারাপ লেগেছে আর আমি যে তাকে প্রতিনিয়ত অপমান করে গিয়েছি কতই না খারাপ লেগেছিলো তখন আবিরের৷

চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গরিয়ে পরছে। অনু চোখের জল মুছে কাত হয়ে শুয়ে পরলো৷ দুই মানুষ একই বাড়িতে একজন করিডোরের ওপারে আরেকজন এপারে৷ দুজনের চোখেই ঘুম নেই৷ দুজনই দুজনের কথা ভেবে চোখের জল ফেলছে৷
🍁
সকালে অনু ফ্রেশ হয়ে নাস্তা না করেই ছাঁদে চলে গেলো৷আপাতত প্রকৃতির বাতাস ফিল করার দরকার৷কিন্তু সেখানে গিয়েও অনু বেশিক্ষণ টিকতে পারলোনা আবির চলে এলো৷ অনু আবিরকে দেখে তারাতাড়ি ছাঁদ থেকে নেমে গেলো৷

আদনানঃকী হয়েছে বলতো অনু৷ তোর চোখ মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন৷
.
না ভাইয়া তেমন কিছু হয়নি(নাক টেনে)
.
আদিলঃমিথ্যা বলছিস?
.
না ভাইয়া
.
আদনানঃতাহলে নাক টানছিস কেন
.
এমনি৷

আদিলঃতোকে কেমন অস্বাভাবিক লাগছে৷ কী হয়েছে সত্যি করে বল৷
.
ট্রাস্ট মি ভাইয়া কিছু হয়নি৷
🍁
শ্রাবন সবার জন্য শপিং করেছে৷ অনু বুঝতে পারছেনা শপিং করার মানে৷ তাই সামান্তাকে জিজ্ঞেস করলো৷

সামান্তাঃআজ আমরা সবাই মামার বিয়েতে যাব৷ তোরাও যাচ্ছিস৷ আর এই জন্যেই তোদের আরও দুইদিন রাখা হয়েছে৷
.
অনুঃআমি যাব না প্লিজ৷
.
আরুহিঃকেন যাবিনা৷
.
এমনি৷
.
সামান্তাঃদেখ এমনি বললেই তো হবেনা তোকে যেতে হবে মানে যেত হবেই৷
🍁
অনু একটা পার্পল কালারের মধ্যে পাথরের খচিত জর্জেট শাড়ি পরেছে সাথে হাই হিল জুতা৷ অনুর একটা প্রতিভা খুব ভালো ও শাড়ি পরতে জানে খুব সুন্দর করে৷ এখন যাচ্ছে বাকিদের শাড়ি পড়িয়ে দিতে৷ অনু নিজের চুড়ি ঠিক করতে করতে সামনে এগুচ্ছিলো আবিরওও তখন ব্লেজার হাতে করে শ্রাবনের কাছে যাচ্ছিলো অনুর জুতা ওর শাড়ির কুচিতে পরে যাওয়ার জন্য সে তাল সামলাতে না পেরে আবিরের উপর পরে গেলো৷ আবিরের হাত থেকে ব্লেজার পরে গেছে সে এক হাত দিয়ে অনুর কোমড় চেপে ধরেছে আরেক হাত দিয়ে দরজার কার্নিশ৷ অনু এক চোখ বন্ধ করে আরেক চোখ খুলে আবিরের দিকে তাকালো৷ আবিরকে ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সে চট করে আবিরের থেকে দূরে সরে এলো৷

“আ’ম এক্সট্রিমলি সরি৷ আসলে আমি লক্ষ্য করিনি৷
.
হ্যা যখন তুমি আমার উপরে পরবে তখন কিচ্ছুনা আমি পরলেই তো নষ্ট খারাপ হয়ে যাই৷
.
অনু আবিরের খোঁচা দেওয়া কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো৷ আবিরও ব্লেজারটা তুলে সেখান থকে চলে গেলো৷

“হ্যাঁ আল্লাহ আমার সাথেই কেন এমন হয় যত চাচ্ছি আবিরের সামনে পরবো না তত যেন আরও বেশি ওর সামনে পরছি ধ্যাত৷
🍁
ছোঁয়া সিড়ির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে৷ শ্রাবন ছোঁয়াকে দেখে সিটি বাজাতে বাজাতে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো৷

শ্রাবনঃবাহ্
.
কী (ভ্রু কুঁচকে)
.
সুন্দর লাগে গো আজকে তোমারে,
তুমি আমার মনটা কাইরা নিলে,
.
ধুর এসব কী বলে৷
.
সত্যি তোকে খুব সুন্দর লাগছে৷ এক কথায় অসাধারন৷
.
তোমাকেও এই পাঞ্জাবিতে খুব স্যুট করেছে৷ এক কথায় বিউটিফুল৷
.
যাক অবশেষে ছোঁয়া আমার দিকে একটু নজর দিলো৷
🍁
সামান্তা শাড়ি পরে ফোনে কথা বলছিল। আদনান তখন ওর রুম থেকে পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বেড়োচ্ছিলো সামান্তাকে দেখে এই মুহুর্তে যেনো ও একটা ভ্রমে চলে গেছে৷ সামান্তা আদনানকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফোন কেটে ওর দিকে এগিয়ে গেলো৷
.
এহেম…কী হয়েছে বলোতো তোমার৷ হুম৷
.
নাথিং সামু তোকে খুব সুন্দর লাগছে৷
.
জানি আমি৷ তবে তুমি কী জানো তোমাকে আমার চাইতে আরও কতগুন বেশি সুন্দর লাগছে৷
.
সামান্তা কথাটা বলে মুচকি হেসে চলে গেলো৷
🍁
আদিল রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পারফিউম দিচ্ছে৷ আর আরুহি দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷
.
এত সময় ধরে দাড়িয়ে আছিস কেন৷
.
আমি দেখতে চাই আদিল খানকে আমার পছন্দ করা পাঞ্জাবিতে দেখতে কেমন লাগে৷
.
আদিল পারফিউম ড্রেসিং টেবিলের রেখে মুচকি হেসে আরুহির দিকে এগিয়ে এলো৷
.
ইউ নো হুয়াট আমাকে সব কিছুতেই স্যুট করে৷
.
জানি আমি৷
.
তা কেমন লাগছে৷
.
খুব সুন্দর৷
🍁
গাড়ি ঠিক করা হয়েছে দুইটা৷ একটাতে বড়রা আরেকটাতে ছোটরা৷ অনু গাড়িতে উঠে দেখলো সিট ফুল ওর বসার জায়গা নেই৷

অনুঃএকি আমি কোথায় বসবো৷
.
সামান্তাঃফ্রন্ট সিটে৷
.
অনু সামনে তাকিয়ে দেখলো আবির ড্রাইভিং সিটে বসে আছে৷

অনুঃইম্পসিবল৷ আমি ফ্রন্ট সিটে বসে যেতে পারবনা প্লিজ সামু তুই যা৷
.
পারব না৷
.
সামু,রুহি বেশি ন্যাকা ভালো লাগেনা৷ওর যাওয়া হলে যেন তারাতাড়ি সিটে বসে পরে নাহলে যেন চলে যায়৷আমি টাইম লস করতে পারবনা৷

অনু আবিরের কথা শুনে রেগে গাড়ির দরজা খুলে ধপ করে ফ্রন্ট সিটে বসে গেলো৷আবির অনুর দিকে তাকিয়ে ওর অজান্তেই মুচকি হাসলো৷ আবিরকে হাসতে দেখে বাকিরাও সবাই হেঁসে দিলো৷ সবাইকে হাসতে দেখে আবির ওদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো৷ আবির ড্রাইভিং করছে আর অনুর দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে৷ অনু একবারের জন্যও আবিরের দিকে তাকায়নি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে৷

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷আমি কাল বলেছিলাম যে আমি একদিন পর পর গল্প দিবো৷ তাতে অনেকেই বলেছে আমার নাকি ডিমান্ড বেশি আরও হেনতেন৷ তা একটা কথা না বললেই নয়৷ প্রবলেম তো সবারই থাকে অনেক সময় দেখা যায় মানুষের ব্যস্ততার জন্য তাদের গল্প পড়তে পর্যন্ত সময় থাকেনা৷গল্পের এক পার্ট পড়তে সময় লাগে বড়জোর হলেও পাঁচ থেকে সাত মিনিট আর একটা গল্প লিখতে গেলে দুই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগে৷ এখন বুঝতেই পারছেন আমার কতটা সময় ব্যয় হয়৷ এবার অনেকেই বলবে যে তাহলে আমি কেন গল্প লেখি৷কী করবো গল্প লিখা যে অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে৷তাই গল্পতেও সময় দিই আর লেখাপড়াতেও৷যারা আমার নিয়মিত পাঠক তারা জানে যে আমি বেশি সমস্যায় পরলে তবেই গল্প মিস দেই৷ সপ্তাহে দুদিন মিস দেই কী না ডাউট আছে৷ কিন্তু এখন মিস দিতে হবে৷আজ পড়া কম ছিলো তাই লিখতে পেড়েছি।গল্পের আগে আমার লেখা পড়া৷ সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন৷ আর কেউ আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে মাফ করবেন৷ ]

চলবে…………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে