তুমি বৃষ্টি হয়ে নামলে পর্ব-০৩

0
1785

#তুমি_বৃষ্টি_হয়ে_নামলে
#পর্ব_৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনুঃআপনি!!আপনি এখানে কী করেন৷ তাও এতো রাত্রে৷
.
আবিরঃসেম কুয়েশ্চন তো আমারও আপনি এখানে কী করেন৷
.
আমি এখানে কী করি মানে৷ এটা আমার মামার বাসা৷ এখানে আমি থাকবো না তো কে থাকবে৷
.
সিরিয়াসলি!!এটা আমার নিজের বাসা এখানে আমি থাকবোনা তো কী আমার ভুত থাকবে নাকি৷
.
আপনার বাসা মানে৷ কী নাম আপনার৷
.
আবির রায়হান চৌধুরী নামটা নিশ্চয় শুনেছেন৷
.
আপনি আবির৷ কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব৷
.
কেন সম্ভব নয়৷ তা আপনার নামটা কী?
.
আমার নাম….. না কিচ্ছু না৷
.
অনু দৌড়ে নিচে চলে গেলো৷ আবির অনুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো৷
🍁
ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই৷ অনু বারবার আবিরের দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে৷ আবির ব্যাপারটা বুঝে পিছন ফিরে বসলো

অনুঃবাহ এতো এটিটিউড৷ অবশ্য এটিটিউড থাকারই কথা৷ (মনে মনে)
.
আবিরের মাঃঅনু আমরা সবাই গল্প করছি তুমি কিছু বলছনা যে৷
.
এমনি মামী ভালো লাগছেনা৷
.
অনুর মা চা মুখে দিতে দিতে বললেন,,,

“তা ভাবি ছেলে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন কবে৷
.
আবির যদি হ্যাঁ বলে দেয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ্৷
আবির যখন বাহিরে ছিলো তখন ওর জন্য একের পর এক মেয়ে দেখতাম আমি৷ আর সবগুলো মেয়েরই ফটো কালেক্ট করে রেখে দিয়েছি৷ দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি৷

আবিরের মা হাতে করে কতগুলো ফটো এনে সেগুলো সেন্ট্রার টেবিলে রাখলেন৷

“ভাবি দেখেন তো মেয়েগুলো কেমন৷অনু, ছোঁয়া তোমরাও দেখ৷

অনু শুধু আবিরের দিকে তাকাচ্ছে৷ ওর যেন বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে এটা আবির৷ আবির কিচ্ছু বলছেনা আরও মুচকি হেঁসে ফোন টিপছে৷ হয়তো আবিরও বিয়েতে রাজী তাই৷অনু মন খারাপ করে ছবিগুলো হাতে নিলো৷

অনুঃসবাই খুব কিউট মামী৷ আমার সবাইকেই খুব ভালো লেগেছে এক কাজ করো সবাইকেই তোমার পুত্র বধু করে বরং নিয়ে আসো৷

অনুর কথা শুনে সবাই হেঁসে দিলো৷ কিন্তু আবির অনুর এই কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললো৷

আবিরের মাঃসবাই কিউট হলেও তোমার চাইতে কিন্তু কিউট না৷
.
অনুঃকি যে বলো না মামী৷এরাই কিউট৷ এই দেখ সাদা ড্রেস পরা মেয়েটা কিন্তু বেশ কিউট একে মানাবে৷

আবির এবার রেগে সোফায় ফোন ছুড়ে মেরে দাঁড়িয়ে গেলো৷

আবিরঃলিসেন!!!!আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো সেটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ আর এই ব্যাপারে কেউ ইন্টারফেয়ার না করলেই আমি সব চাইতে বেশি খুশি হবো৷তাই আমার বিয়ের বিষয় দয়া করে আমার উপরে ছেড়ে দাও কারও নাক গলানোর দরকার নেই(অনুর দিকে তাকিয়ে)
.
অনু আবিরের কথা আর ওর তাকানো দেকে চোখ নামিয়ে নিলো৷

আবিরের মাঃআবির এতে রাগ করার কী আছে৷ বসো বলছি৷ জাননা বড়দের সামনে উঁচু গলায় কথা বলতে নেই৷ এত রাগ আসে কোথায় থেকে তোমার৷
.
আবির ওর মায়ের কথায় সোফায় বসে গেলো৷ অনুর চোখে অজান্তেই পানি চলে এসেছে৷ কোন রকমে চোখের পানি আড়াল করে মেকি হেঁসে মামীর দিকে তাকালো৷
.
আবিরের মাঃতা নাজনীন তুমি কবে তোমার বাচ্চা কাচ্চাদের বিয়ে দিচ্ছো৷
.
আমার বাচ্চারা সবাই বিয়ের বয়সের৷ ছোঁয়া আর অনু তো জমজ বোন,আর আদিল আর আদনান ওরাও জমজ৷ওদের ম্যাচিউরিটি হলেও কিন্তু ছোঁয়ার অনুর চাইতে ম্যাচিউরিটি কম৷ তাই আমি চাচ্ছিলাম অনুর বিয়েটা আগে দিয়ে দিতে৷
.
অনুঃএসব কী বলছো তুমি মা৷ এসব কথা কোথায় থেকে আসছে৷ প্লিজ এখন এসব থাক না৷ আমরা কী বিয়ে নিয়ে ডিসকাস করতে এসেছি নাকি৷ এসব পরেও বলা যাবে৷ আর দেখো ছোঁয়ার ম্যাচিউরিটি কিন্তু এতটাও কম নয় যতটা তুমি মিন করছো৷
.
শ্রাবন হাতে দুটো চিপসের প্যাকেট নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে আসতে আসতে বললো,,,

শ্রাবনঃফাইনালি ছোঁয়ার তাহলে বিয়ে হচ্ছে৷ তাইতো ছোঁয়া৷
.
ছোঁয়াঃমুটেও না৷মা কী বললো শুননি৷ আমার এখনো ম্যাচিউরিটি হয়নি৷
.
শ্রাবনঃহ্যাঁ এটাইতো আমার সব চাইতে বড় সমস্যা৷ (মিনমিন করে)
.
ছোঁয়াঃকিচ্ছু বললে শ্রাবন ভাইয়া৷
.
না।আর তোকে না বললাম আমাকে ভাইয়া না ডাকতে৷ ভাইয়া ডাকলে কেমন যেন লাগে৷
.
ভাইয়া কে তো ভাইয়াই ডাকবো৷ তা কেন না করছো ভাইয়া ডাকতে?
.
এমনি৷ এই নে তোর জন্য চিপস এনেছি৷
.
ব্যাপার কী আমার জন্য আনলে আর কারও জন্য তো আনলে না হুম৷
.
তুই যেমনটা ভাবছিস তেমনটা না৷ শুনলাম তুই নাকি চিপস খেতে ভালোবাসিস তাই তোকে দিলাম।না খেলে দিয়ে দে আমি চিপস সামান্তাকে দিয়ে দিচ্ছি৷
.
জীবনেও না৷
.
আবিরের মা অনুর মায়ের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,,

আবিরের মাঃরাত বারোটা হয়ে গেছে বাচ্চাদের খিদে পেয়েছে বোধ-হয়৷ কিন্তু আদনান আর আদিল কোথায় ওদের তো অনেক্ষন যাবত দেখছি না৷
.
অনুর মাঃহ্যাঁ তাইতো৷ অনু ওদের ফোন লাগা তো৷
.
হ্যাঁ মা৷
.
অনু আদনানের ফোনে কল দিলে কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ করলো৷

আদনানঃহ্যাঁ অনু বল৷
.
কোথায় তোমরা৷
.
এইতো একটু বাইরে এসেছি কোনো সমস্যা হয়েছে কী৷
.
না৷ ডিনার করতে আসো৷
.
আচ্ছা৷
.
অনুর মাঃকী বললো
.
আসছে৷
.
আবিরের মা আর অনুর মিলে খাবার ভেরে টেবিলে রাখছে৷

আবিরঃমা আমি রুমে যাচ্ছি আমি ডিনার করবো না
.
আবিরের মাঃসে কী কেনো করবেনা আবির
.
আমার খিদে নেই৷
.
আবির একবার অনুর দিকে তাকিয়ে হনহনিয়ে রুমে চলে গেলো৷
.
অনুঃবুঝতে পেরেছি আমি থাকলে সে খাবারই খাবেনা কাল সকালেই আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি৷আবির এতটা ঘৃনা করে আমাকে। (মনে মনে)
.
মাঃকী রে অনু তোর আবার কী হলো খেতে আয়৷
.
অনু মাথা নাড়িয়ে টেবিলে গিয়ে বসলো৷
🍁
আরুহির রুমে এসে পায়চারি করছে অনু৷কারন কিছুক্ষণ আগেই আবিরের মা বাবা বলে দিয়েছে অনুরা যাতে আরও দুইদিন থাকে৷অনু পায়চারি করছে আর আরুহির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে৷ কার সাথে এত সময় ফোনে কথা বলছে কে জানে৷
অনু শেষমেশ বিরক্ত হয়ে আরুহির কান থেকে ফোনটা ছো মেরে নিয়ে নিলো৷

অনুঃএটা তো নাম্বার৷ কারও নামও সেভ করা নেই৷ কার সাথে ফোনে কথা বলছিলি রুহি সত্যি করে বলতো৷
.
আমার এক কলেজ ফ্রেন্ড ঝুমার সাথে কথা বলছিলাম
.
সত্যি তো (সন্দেহের চোখে তাকিয়ে)
.
হ্যাঁ রে বাবা৷
.
ফোনটা রেখে দিয়েছে তা নাহলে আজ সত্যিটা ফাঁস হয়ে আসতো৷
.
ধুর ঘুমা তো৷
🍁
রাত একটা৷ অনু শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কিছুতেই ঘুম আসছে না তার৷

অনুঃধুর সামান্তা আর ছোঁয়ার কাছে যাই এই আরুহির পাশে ঘুমালে চোখে ঘুমও আসবে না৷যাই গিয়ে দেখি ওই বান্দরনি দুইটা কী করছে৷
.
অনু রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷আরুহির রুম থেকে সামনের রুমের ডানপাশের রুমটাতে গিয়ে সোজা ঢুকে পরলো৷গরম বেশি লাগার কারনে আবির তখন সবেমাত্র শাওয়ার সেরে রুমে আসছিলো। এতে রাতে অনুকে দেখে সে ঘাবড়ে গেলো৷ অনুও আবিরকে দেখে জিভে কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো৷

আবিরঃকারও রুমে আসতে গেলে নক করে আসতে হয় সেটাও কী জানোনা তুমি৷
.
স্যরি স্যরি আমি জানতাম না এটা আপনার রুম৷
.
জানতে না৷ নাকি ইচ্ছে করেই এসেছো৷আর এই রুমকে অন্য কারোর রুম ভাবার কী আছে। তুমি সব সময় দেখেছ যে আমি এই রুমেই ঢুকি৷ যেহেতু আমি এই রুমে আসি তখন নিশ্চয় এটা আমার রুমই হবে৷
.
আমি ফলো করিনি অতটা৷
.
আবির এবার অনুর কাছে গিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো৷

“কেনো আসো তুমি আমার আশেপাশে?আমি যে তোমাকে একটুকুও সহ্য করতে পারিনা৷ আমি অনেক কষ্টে নিজেকে ঘুছিয়ে নিয়েছি৷শুধু মাত্র তোমার জন্য৷তাই নেক্সট টাইম আমার আশেপাশে আসবেনা বলে দিলাম৷
.
অনু এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো৷ আবির এমন ভাবে ওকে চেপে ধরেছে যেন এখুনি হাত একেবারে ভেঙে যাবে৷ আবির অনুর চোখে পানি দেখে ওকে ছেড়ে দিলো৷

যা বললাম তা যেন স্মরণ থাকে৷নাও গেট আউট ফ্রম হেয়ার৷
.
আপনি খুব খারাপ খুব৷ আমি বললামই তো যে আমি জানতাম না এটা আপনার রুম৷ জানলে কখনো আসতাম নাকি৷
.
অনু চোখ মুছে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।আবির কপালে হাত দিয়ে সোফায় বসলো
.
তখন ওর সাথে এমন বিহেভ না করলে পারতাম৷ কিন্তু আমারই বা কী করার ছিলো ওকে কাছে দেখলে যে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা৷
.
আবির নিজের মুড ঠিক করার জন্য গিটার হাতে ব্যালকনিতে গেলো৷

আমি পারিনি তোমাকে আপন করে রাখতে
আমি পারিনি তোমাকে আবার আমার করে রাখতে৷

তুমি বুঝনি আমি বলিনি তুমি স্বপ্নতে কেনো আসনি
আমার অভিমান তোমাকে নিয়ে সব গিয়েছি৷ (২)

গানে গানে সুরে সুরে কতো কথা বলেছি তোমাকে
তুমি বুঝনি বুঝনি……

আবির গান গেয়ে ওর রুমের দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো কারও ছায়া দেখা যাচ্ছে৷ রুমে আবছা আলো থাকায় ছায়াটা যেন আরও প্রকট ভাবে দেখা যাচ্ছে৷ আবির মুচকি হেঁসে ওর গিটারের দিকে তাকালো৷আগেও অনু এমন করত এখনও করে৷আগে আবিরের সাথে যখন রাগ করত তখন আবির ওর রুমে এসে গিটার বাজাতো,গান গাইতো৷ আবির জানে ওর গান শুনলে অনুর মন ভালো হয়ে যায়৷ আজও আবির এই জন্যেই গান গেয়েছে৷ ও জানতো অনু ওর গান শুনার জন্য আসবে৷ ওর ধারনাই সত্যি হলো৷

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে