তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ৯

0
1582

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা_তিমু
#পর্ব -৯

‘ এই বাড়ির ঠিকানা কোথা থেকে পেলি আফরা ‘ প্রশ্ন বোধক চাহনিতে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম আফরার দিকে।

‘ অর্ণব স্যারের থেকে ‘ বললো আফরা।

প্রশ্ন বিদ্ধ চাহনিতে বললাম,
আফরীন: অর্ণব স্যার!কিন্তু উনি কেন তোকে এই বাড়ির ঠিকানা দিলো?
আফরা: জানিনা কেন দিয়েছে কিন্তু আমরা তো তোর বাড়ির ঠিকানা জানতাম না আর তুইও অনেকদিন ধরে কলেজ যাস না তাই তোর সঙ্গে দেখা হওয়া পসিবল ছিল না।আর তুই তো চিনিস আর্যাল কে। ও সেদিন তোর সঙ্গে ঝগড়া করে আমাদের সিক্রেট সিক্সের সবার ফোন থেকে তোর নাম্বার ডিলেট করে দিয়েছে আর তোর নাম্বার তো আমাদের কারোর মুখস্ত ছিলো না যে ফোন করে ঠিকানা জানবো।তাই অর্ণব স্যার যখন বললেন তখন আমরা কোনোকিছু না ভেবেই উনার কথা বিশ্বাস করে নেই।

‘ তুই আমাকে আগে বল কাহিনীটা কি? অর্ণব স্যারের সঙ্গে কিভাবে দেখা হলো? উনি না কলেজ থেকে রিজাইন নিয়েছেন শুনলাম ‘ অবাক হয়ে বললাম আমি।

আফরা: হুম উনি সেদিন রিজাইন লেটার জমা দিতেই কলেজে এসেছিলেন….

কলেজের বড় মাঠের এক কোনায় বসে আছে সিক্রেট সিক্সের সকলে। আর্যাল রীতিমত কন্টিনিউয়াসলি পায়চারি করে চলেছে আর ক্ষণে খনে নিজের চুল টানছে।ওর এখন নিজের উপর অনেক রাগ উঠছে।ইচ্ছে করছে যেন নিজেকে ধরেই মারে যে কেন সেদিন ঠান্ডা মাথায় আফরিন এর সঙ্গে কথা বললো না।বললে হয়তো আজ এই দিন দেখতে হতো না।

‘ এত লাফালাফি না করে চুপচাপ বস।আমি ভাবছি কি করা যায়। ‘ বললো আফরা।
আর্যাল ধপ করে বসে পড়লো নরম ঘাসের উপর তারপর আফরার গাঁয়ে গা ঘেসে বসে বললো,
আর্যাল: এখন আর দেখে কি হবে? আমার সত্যি বলতে নিজের উপর অনেক রাগ উঠছে।সেদিন আফরিন কে এত কথা শুনিয়ে দিলাম না বুঝেই আবার ওর নাম্বারও ডিলেট করে দিলাম।এখন কলেজেও আসছে না মেয়েটা।ওর সঙ্গে দেখা কিভাবে করবো,একটা পথও তো খোলা নেই।
ফারাহ: এত চিন্তা করিস না আর্যাল।আফরা একটা না একটা উপায় বের করবে।
ইরহান: সেটাই চিল ব্রো। রিলাক্স ইয়ার…

‘ আর কিছু নাহোক আফরিনের বাড়ির ঠিকানা পাওয়া গেলে ভালো হতো। ‘ চিন্তিত হয়ে বললো আফরা।

‘ মিরপুর দশ নম্বর, বাড়ি কৃষ্ণচূড়া, আমতলা জামে মসজিদ। ‘

পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে পিছন ফিরে তাকালো আফরা।এতদিন পর অর্ণব কে দেখে ভীষণ অবাক হলো।শেষবার গোপন সূত্রে জেনেছিল অর্ণব এই হসপিটাল ছেরে দিবে কিন্তু তার কারণ পুরোটাই অজানা।

‘ আপনি ওর ঠিকানা কি করে জানলেন? ‘ প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে কথাটা ছুড়ে দিল অর্ণবের দিকে ফারহাজ।

‘ তোমার আফরিনের ঠিকানা দরজার সেটা বলে দিয়েছি।এখন কি করে পেলাম, কোথা থেকে পেলাম সেটা না জানলেও চলবে। বাই দ্যা ওয়ে তোমাদের বিদায় বলতে এসেছিলাম।আজ রিজাইন করেছি কলেজ থেকে। ‘ বললো অর্ণব।

‘ না গেলে হতো না স্যার ? এত ভালো চাকরিটা ছেরে দিবেন? ‘ বললো ফারাহ।

‘ কখনো কখনো কাছের মানুষদের জন্য অনেক কিছুই স্যাক্রিফাইস করতে হয় ফারাহ। আমিও নাহয় তাই করলাম। অন্তত অপ্রাপ্তির খাতায় পরিবর্তন তো আসবে। ‘ বললো অর্ণব।

এতক্ষণ অবাক হয়ে সবটা শুনছিলাম। আফরার বলা শেষ হতেই আমি অবাক হয়ে বললাম,
আফরীন: এতকিছু হয়ে গেলো অথচ আমি কিছুই জানিনা।আমার অনুপস্থিতিতে উনি কলেজ অব্দি ছেরে দিলেন।

‘ উনার কলেজ ছাড়ার খবরটা কোথা থেকে পেলি? আমাদের ভবিষ্যৎ দুরন্তর জুনিয়র আফরিনের বাবার থেকে? ‘ ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে বললো আফরা।

আফরার কথা শুনে আমার গাল দুটো তে টমেটোর মত লালাভ আবা ছেয়ে যায়।আমি লজ্জায় মুখ নামিয়ে নেই।আমার লজ্জা মিশ্রিত শ্রী দেখে আফরা ‘ ও ‘ করে উঠলো।আমি আড়ালে মিটিমিটি হাসছি।

সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই আমার আর আফরার চোখ গেলো ড্রয়িং রুমের দিকে।মা আর আর্যাল, ফারাহ, ইরহান, ফারহাজ সবাই একেবারে আড্ডায় মশগুল হয়ে আছে।আমি আর আফরা এগিয়ে গেলাম ওদের দিকে।দুজনেই নিঃশব্দে ওদের পিছনে দাড়ালাম কিন্তু এদের তো চোখেই পড়ছি না আমরা। ওরা আড্ডায় বিরতি দিলো তখন যখন মায়ের ফোন বেজে উঠলো।মা ফোন রিসিভ করে কিছুই বললো না শুধু ফোনের ওপাশের মানুষটার কথা শুনে হুম বলে ফোনটা রেখে দিল।

ফোন রাখতেই আমি মায়ের দিকে উৎসুক চোখে তাকালাম।মা বলল,
মা: আফরীন যা বাবা একটু ছাদ থেকে আমার কাশ্মীরি শাল টা নিয়ে আয় ।আমি ওটা আনতে একেবারেই ভুলে গেছি।
মায়ের কথার মাঝে আফরা ফোরণ কেটে বললো,
আফরা: কিন্তু এত রাতের বেলা ওর একা যাওয়াটা কি ঠিক হবে?আমিও যাই ওর সঙ্গে ছাদে?
মা: না মা তোমরা মেহমান। তোমরা শুধু শুধু কেন কষ্ট করতে যাবে। তাছাড়া রাতের বেলা কোথায় এখন তো সবে সন্ধ্যা হলো। আর আফরিন ঠিক পারবে ছাদে গিয়ে শাল নিয়ে আসতে। কিরে পারবি না?
আমি মাকে এমন কথা বলতে শুনে অবাক হলাম কারন কালকেও দেখেছি ছাদে কাপড় রয়ে গেছে বলে ভাবী এই সময় ছাদের কাপড় আনতে যেতে চাওয়ায় মা ভাবিকে কতটাইনা বকলো আর সেই সাথে তাহসান ভাইয়াকে দিয়ে কাপড় আনালো।তবুও মায়ের কথার বিরোধ করলাম না যতই ক্লোজ হোক না কেন উনি দিনশেষে আমার শাশুড়ি মা।

আফরীন:আরে আমি পারবো পারবো এত চিন্তার কি আছে।আমি বরং ছাদে গেলাম। তোরা থাক আমি দুই মিনিটে আসছি বলেই বেরিয়ে গেলাম ছাদের উদ্দেশ্যে।আফরীন বেরিয়ে যেতেই চুপিচুপি পায়ে ঘরে তাহসান,রিমা, নিহা আর আরিদ সাহেবের প্রবেশ ঘটলো।ওদের এভাবে প্রবেশ করতে করতে দেখে সিক্রেট সিক্সের ফ্রেন্ড সার্কেল যেন আকাশ থেকে পড়লো।
আরীদ সাহেব আস্তে করে রহিমা বেগম কে বলেন,
আরিদ: আফরীন ছাদে গেছে?
রহিমা: হ্যাঁ গেছে কিন্তু সব ঠিক আছে তো? সবকিছুর প্রিপারেশন ঠিক করে করেছ?
আরিদ: সব করেছি এখন শুধু আমাদের ছাদে যাওয়ার পালা কারণ সারপ্রাইজটা তো আমরা সবাই একসাথে দিবো।
রহিমা: ঠিক আছে ঠিক আছে তাহলে ছাদে চলো।এই বাচ্চারা সবাই ছাদে চলো। আর্যাল, আফরা তোমরাও চলো।

আর্যাল আফরা ওরা কেউই যেন ঘটনাগুলো হজম করতে পারছে না।প্রথমে এভাবে আফরিন কে ছাদে পাঠানো তারপর বাড়ির লোকেদের আফরীন এর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘরে আসা আর এখন আবার ছাদে যেতে বলা।মন বলছে কোনো একটা ঘাপলা আছে।কোনো না কোনো ঘোট পাকাচ্ছে এরা নাহলে এত চোর চোর ভাব কেন?

আফরীন ছাদে এসে ছাদের যেই সাইডে কাপড় মেলা হয় সেই সাইডে চলে গেলো। আশেপাশে চোখ বুলালো কিন্তু কই কোনো শাল তো নেই।মা তো বললো শাল আছে।হয়তো ছাদের অন্যদিকে দিয়েছে কিন্তু ঐদিকে তো সচরাচর কেউ কাপড় দেয় না।তবুও দেখি যদি পাওয়া যায়।আমি ধীর পেয়ে ছাদের অন্যদিকে এগিয়ে গেলাম কিন্তু অন্য সাইডে তো পুরোই অন্ধকার। একটা কিছুও দেখা যাচ্ছে না অন্ধকারে। তারমানে এখানে শাল নেই।মাকে গিয়ে বলতে হবে।হয়তো মা ঘরেই বারান্দায় দিয়েছে কিন্তু মনে করেছে ছাদে দিয়েছে।

‘ Happy Birthday To You….Happy Birthday To You….Happy Birthday To You Dear Afrin ‘

আমি ছাদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই পিছন থেকে অনেক জন মানুষের একসঙ্গে গলা পেয়ে চমকে উঠে পিছনে ফিরলাম।সাথে সাথে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। পুরো ছাদ ভর্তি ক্যান্ডেলস জ্বালানো আর ছাদের দেওয়াল ঘেঁসে বড় বড় অক্ষরে লিখা Happy Birthday my dear wifey.

মাথাটা যেন একবারে ভনভন করে ঘুরছে।নিজের চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে এ আমি কি দেখছি।আমার সামনে সবাই হাসিমুখে দাড়িয়ে আছে।সবার মাথায়ই বার্থ ডে ক্যাপ।আমি বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে।মা,বাবা, নিহা, তাহসান ভাইয়া আর রিমা ভাবীদের মাঝে কাচুমাচু মুখে মাথায় ক্যাপ পরে দাড়িয়ে আছে সিক্রেট সিক্সের ফ্রেণ্ড সার্কেলের সকলে। সবগুলোর মুখের যা অবস্থা তা দেখে আমার পেটফেটে হাসি আসছে কিন্তু এরকম একটা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে হাসতে পারছিনা।

‘ Happy Birthday To my dearest wife Afrin ‘

ডাক্তার সাহেবের গলা পেতেই চমকে গিয়ে সামনে দিকে ঘুরে তাকালাম।হালকা অন্ধকারে এক ছায়ামূর্তির অবয়ব দেখা যাচ্ছে। ছায়ামূর্তির চেহারা পরিষ্কার দেখা না গেলেও আমি হলফ করে বলতে পারবো মানুষটা ডাক্তার সাহেব। আস্তে আস্তে ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসতেই তার চেহারা পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠলো।

এই মানুষটা কে কত দেখি ততই অবাক হই।একটা মানুষের এত রূপ কি করে হতে পারে? যেই মানুষটা বিগত কয়েকদিন যাবত আমার সঙ্গে কথাই বলেন না সে আজ আমায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।উনার গালে সেই চিরচেনা চমৎকার হাসি।এই হাসি দেখলেই মনের অজান্তে মানসপটে একজনের চেহারা ভেসে উঠে কিন্তু সেই মানুষটার চেহারা আজও পরিষ্কার নয়।ডাক্তার সাহেবের হাসির প্রেমেই তো পড়ছি প্রতি নিয়ত।

আফরীন এর হাসব্যান্ড কে দেখে সিক্রেট সিক্স যেন আকাশ থেকে পড়েছে।তাদের কলেজের এফিশিয়েন্ট প্রফেসর যে তাদের বান্ধবী আফরিনেরই হাসব্যান্ড সেটা ভাবতেই পারেনি তারা।সবাই একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে। আর্যালের মনে পরে আফরীন এর বলা কথাটা যে ওর হাসব্যান্ড কে দেখলে ওর প্যান্ট ফাটবে। কথাটা আসলেই সত্যি। আফরীন এর বর কে দেখে ইতিমধ্যে ওর পেটে গুড়গুড় আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

আর্যাল: আফরীন ঠিক বলেছিলো রে আফরা।আসলেই ওর বর কে দেখে আমার প্যান্ট ফাটবে। পেটে অলরেডি গুড়গুড় শুরু হয়েছে।
আফরা: এটা বল যে তোর খিদে পেয়েছে।
আর্যাল: তাহরীম স্যার যে আফরিন এর হাসব্যান্ড সেটা আগে জানলে এখানে আসতামই না।
আফরা: ব্যপারটা অবিশ্বাসকর।দুজনের মধ্যে বিয়ে কি করে হলো?

‘ ডাক্তার সাহেব আপনি এখানে কেন? ‘ বললাম আমি।

আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেবের মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলেন,
তাহরীম:আমার বউয়ের জন্মদিন আর আমি থাকবো না এটা কি পসিবল?
আফরীন: আজ আমার জন্মদিন?
তাহরীম: মিসেস মেহমাদের মধ্যে হয় নিজের জন্মদিন মনে নেই।আপনার বার্থ সার্টিফিকেট উঠিয়ে আনতে হবে।
আফরীন: আমি সেটা বলছি না।আমার জন্মদিন আপনি কি করে জানলেন?
তাহরীম: কবুল বলেছি কি কোনোকিছু না জেনেই। রেজিষ্ট্রি পেপারে সাইন করার সময় দেখে নিয়েছি বউ কে সারপ্রাইজ দিবো বলে।
আফরীন: সারপ্রাইজ??
তাহরীম: এতসব কি তোমার শশুর শাশুড়ি করেছে?মোটেই না।এতসব প্ল্যানিং প্লটিং করে তোমায় সারপ্রাইজ দিয়েছে তোমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বর এই তাহরীম মেহমাদ।আমার এত খাটাখাটনির রিটার্ন গিফট তোমার থেকে পরে নিবো আগে কাছে এসো বলে আমার হাত ধরলেন।

সাথে সাথে আমার আত্মারাম খাচাঁছাড়া হয়ে গেছে।এসব ডাক্তার সাহেব কি করছেন? এই লোকটা অর্ধেক পাগল আগে থেকেই জানতাম কিন্তু এখন যে পুরো পাগল হয়ে গেছে সেটা হারে মজ্জায় টের পাচ্ছি। হায় আল্লাহ বাচাও আমায় এই পাগল লোকের হাত থেকে।বাবা মা সবার সামনে মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিবে।

আফরীন: কি করছেন কি? হাতটা ছাড়ুন…

‘ আরে তোমাকে আমি রোম্যান্স করার জন্য ডাকছি না… তুমি আমার সঙ্গে এসো… এই যে নাও এবার কেকটা কাটো…’ আমায় নিয়ে একটা টেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে আমার পাশে দাড়িয়ে বললেন কথাগুলো ডাক্তার সাহেব।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি কেকটার দিকে।কেকটা বড়ই অদ্ভুত। কেকের উপর লিখা ‘ শুভ জন্মদিন প্রিয়দর্শিনী ‘ । নামটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে। কোথাও একটা শুনেছি।আমি অবাক হয়ে ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকালাম আর বললাম,
আফরীন: এগুলো আপনি করেছেন?
তাহরীম: কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?
আফরীন: তবে যে আপনি আমার উপর রাগ করেছিলেন।
তাহরীম: রাগ রাগের জায়গায়।আমি স্টিল তোমার উপর রেগে আছি কিন্তু আজ তোমার জন্মদিন তাই আজকের দিনটা রাগ দেখাবো না।কালকের থেকে আবার রাগারাগি স্টার্ট কথাগুলো মুখ ফুলিয়ে বললেন ডাক্তার সাহেব।

উনার বলার ধরন দেখে আমি হেসে দিলাম।মানুষটা আসলেই অদ্ভুত।এই খুশি তো এই রাগী। তাহরীম ভালোবাসার এক অনন্য নাম,যাকে ছোঁয়া কিংবা পাওয়ার সাধ্য আমার নেই।মানুষটা সাত তারার নক্ষত্র আমার জন্য যেটা একেবারে দুর্লভ ।

তাহরীম কে জীবনে এই প্রথম হাসতে দেখেছে সিক্রেট সিক্স।ওর এই দুর্লভ হাসি যেন অনন্য কিছু।যেই প্রফেসর কে ওরা গম্ভীর মুখেও মজা করতে দেখেছে তাকে যে এভাবে হাসতে দেখবে কখনোই ভাবতে পারেনি তারা। তাহরীম আর আফরিন কে একসঙ্গে এত হাসিখুশি দেখে আফরা বিপাকে পড়ে যায়।শুধু বারবার মনে হচ্ছে ওদের এত সুন্দর বিবাহিত জীবনে আফরিন এর কপালে এত সুখ সইবে না।অনেক বড় বিপদের অশনি সংকেত এই সুখ।

‘ এখন কি দাড়িয়েই থাকবে নাকি কেকটাও কাটবে ? ‘ বললেন ডাক্তার সাহেব।

ডাক্তার সাহেবের কথায় সম্বিত ফিরল আমার।আমি ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। এত বছর পর কেউ আমায় জন্মদিনে উইশ করলো।ছোটো থাকতে আম্মু আমায় উইশ করতো আর জন্মদিনের দিন পায়েস রেধে খাওয়াতো।আজ মাও আমায় পায়েস খাওয়ালো।এই মানুষগুলো এত সহজে আমার সঙ্গে মিশে গেছে যে এখন তাদের ছেড়ে যেতেও ইচ্ছে করছে না। ভাগ্যিস আফরা বলেছিলো নয়তো এই মানুষগুলো কে ছেড়ে গেলে হয়তো পরিবারটাকেই হারাতাম।

‘ এই আফরিন কেকটা কাট না। ছেলেটা আমার তোর জন্য কত সারপ্রাইজ প্ল্যান করে তোকে উইশ করলো আর তুই সেই কখন থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভেবেই চলেছিস।কি এত ভাবছিস? ‘ আমার কাধে হাত রেখে কথাগুলো বললো মা।
আমি মুচকি হেসে মায়ের দিকে তাকালাম।সবাই আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে আর অপেক্ষা করছে আমি কখন কেক কাটবো।

‘ কি গো দেবর বউ তুমি বুঝি আমার দেবর কে নিয়ে ভাবছো ‘ বললেন ভাবী।
ভাবীর কথায় আমার গাল রক্তিম আভা ধারণ করলো।আমি কিছু না বলে মাথা নত করে রাখলাম।এবার ডাক্তার সাহেব বললেন,
তাহরীম: এই বউ!

ডাক্তার সাহেবের মুখে বউ ডাকটা শুনে সাথে সাথে মাথা তুলে তাকালাম উনার দিকে।উনার চোখজোড়ায় খেলা করছে দুষ্টুমিপনা।উনি আমায় বললেন,
তাহরীম: তাড়াতাড়ি কেকটা কেটে ফেলতো দেখি।এরপর তোমার বার্থডে গিফট দেখবো।
আমি নিঃশব্দে মাথা নাড়লাম তারপর ফুল আর মোমবাতি দিয়ে সাজানো টেবিল থেকে ডান হাতে ছুরিটা তুলে নিলাম।আমি যখন কেক কাটতে ব্যস্ত তখন ডাক্তার সাহেব পাশ দিয়ে ‘ Happy Birthday To You…. Happy Birthday To You…. Happy Birthday To My Dear Wifey….Happy Birthday To You…’

আমি কেকের পিস নিয়ে প্রথমে মাকে খাওয়ালাম তারপর ভাবী কে।এরপর একে একে সব ফ্রেন্ডদের খাওয়ালাম।এবার পালা এলো ডাক্তার সাহেবের।আমি উনার দিকে কেক এগিয়ে দিয়েও কি মনে করে হাত গুটিয়ে নিলাম।ডাক্তার সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমি আড়চোখে আফরার দিকে তাকালাম। ও আমায় ইসারা করছে যেন ডাক্তার সাহেব কে কেকটা খাওয়াই।আমি ওর ইসারায় হাতটা এগিয়ে দিলাম ডাক্তার সাহেব কে কেক খাওয়াতে।ডাক্তার সাহেব যখন আমার হাত থেকে কেকটা খেলেন তখন উনি পুরোটা খাওয়ার আগেই আমি তড়িৎ গতিতে হাত সরিয়ে নিলাম।ডাক্তার সাহেব শুধুমাত্র কোনমতে হাত দিয়েছিলেন বলে কেকটা পড়লো না।আমার এহেন কাজে ডাক্তার সাহেব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে