তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ৮

0
1615

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-৮

‘ এই দিন দুপুরে বাড়িটা কে ভুতুড়ে বাড়ি মনে হচ্ছে কেন? ও মা…সবাই কোথায় গেছে? ‘ বললাম আমি।

আমার কথায় মা রান্নাঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে বললো,
মা: তোর বাবা তো ব্যাংকের কাজে গেছে আর তাহরীম তো হসপিটালে গেছে।বাকি রইলো তাহসান,রিমা আর নিহা।তাহসান আর রিমা রিমার বাপের বাড়ি গেছে আর নিহা ওর কোন বন্ধুর বাড়ি গেছে বললো।
মায়ের কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।আমি মন খারাপ করে বললাম,
আফরিন: তারমানে আজ বাড়িতে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই? বাবা তো বিকেলের আগে আসবে না আর ডাক্তার সাহেব তো রাতে আসবেনা। নিহা কখন আসবে গো মা?
মা:আমরা একাই তো যথেষ্ট,আবার কেউ লাগে নাকি।দুই মা মেয়ে পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখতে দেখতে খাবো।আজ পায়েস আর বিরিয়ানি রেধেছি।তুই খেয়ে আমায় বলবি বলে কত সাধ করে রাধলাম।ভাবলাম দুজনে টিভি দেখতে দেখতে খাবো আর নিহা আসতে আসতে তো সেই সন্ধ্যা হবে।তোর বাবাও সন্ধার আগে ফিরবে না।
আফরীন: তাহলে তো ভালই দুজনে মিলে আজ অনেক মজা করবো।প্রথমে দুপুরের খাবার খাবো তারপর সন্ধার নাস্তায় আমি ভেজিটেবল রোল বানাবো সেই সাথে পপকর্ন।দুজনে মুভি দেখতে দেখতে খাবো। রোল আর পপকর্ণ চলবে?

মা: চলবে মানে দৌড়বে।চল আগে খেয়ে নেই।খেয়ে তারপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বিকালের নাস্তা বানাতে লেগে পরবো।আমি মায়ের কথায় সায় দিলাম।সত্যি বলতে মায়ের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাব জেনে আমার খুব ভালো লাগছে।ছোটোবেলায় তো সেরকম করে মাকে পেলামই না।আর যাও বা ফিরোজা বেগম এলেন,উনি তো আমায় মেরেই কুল পাননা।

আমি আর মা বিরিয়ানি খেতে খেতে টিভিতে মুভি দেখলাম।একটা মুভি হচ্ছিল ‘ বেবিস ডে আউট ‘ ওটাই দেখলাম। মুভিটা বরাবরের মতই আকর্ষণীয়।যতই দেখি ততই দেখতে ইচ্ছা করে। চোরগুলোর করুন পরিনতি দেখে আমরা তো হাসতে হাসতেই মাটিতে গড়াগড়ি খেলাম।খাওয়া দাওয়া শেষে সব গুছিয়ে রেখে মায়ের ঘরে চলে এলাম।মা বলেছে কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে গল্প করবে তারপর উঠে বিকালের নাস্তা তৈরি করবে।

মায়ের বিছানায় শুয়ে আছি।শুয়ে থাকতে থাকতে মনে হলো ডাক্তার সাহেব কে একটা কল দেওয়া যাক।আজকাল ডাক্তার সাহেব কে এক পলক না দেখলেই তাকে দেখার জন্য মনটা আনচান।বারবার ইচ্ছা করে তাকে দেখি।এই এখন যেমন ইচ্ছা করছে এক লাফ দিয়ে উনাকে দেখতে চলে যাই কিন্তু চাইলেই তো সম্ভব না।

মা ঘরে আসলেন বাটি হাতে।আমি ইসারায় জিজ্ঞেস করলাম বাটিতে কি।কিন্তু মা বললো নিজেই যেন দেখে নেই।আমি মায়ের হাত থেকে বাটি নিলাম আর গন্ধ শুকে বুঝলাম পায়েস বানিয়েছে মা। আহ চাষীর পোলাওর চাল, হায় পোলাওর চালের সুগন্ধে তো আমি এখনই হার্ট এ্যাটাক করবো।এতটা ভালো লাগছে না যে কি বলবো।সেই কবে খেয়েছি পায়েস মনেও নেই।আগে মা প্রায়ই করে খাওয়াতো কিন্তু ফিরোজা বেগম তো কোনোদিনই খেতে দেয়নি।

মা আমায় ইসারায় বললো টেস্ট করতে।আমি বিনয়ী হেসে এক চামুচ মুখে নিলাম।পায়েস মুখে দিতেই থমকে গেলাম।এই স্বাদ আমার বড্ড চেনা। উত্তেজিত হয়ে হরবরিয়ে মুখে দিতে লাগলাম। পুরো বাটির পায়েস শেষ করে শেষ চামুচ মুখে দিয়ে চোখটা আবেশে বন্ধ করে নিলাম।চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু বেরিয়ে আসছে।কিন্তু এই অশ্রু দুঃখের নয় বরং পরম সুখী হওয়ার অশ্রু।

মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। বাটিটা বিছানায় রেখে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।মায়ের শাড়ির পেটের কাছের দিকটা আমার চোখের জলে ভিজে যাচ্ছে তবুও মা আমায় আটকালো না।আমি কিছুক্ষন মাকে জড়িয়ে ধরে এভাবেই নিঃশব্দে কাদলাম। মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের গায়ের ওম নিচ্ছি।মায়ের গায়ে কেমন মা মা গন্ধ,আসলে মা তো তার গায়ে মায়ের গন্ধ থাকবেই।

‘ আর কত কাদবী আফরীন? এত কাদলে তোর চোখের নিচের কালি পড়বে আর তখন তোর ডাক্তার সাহেব বলবে যে আমি নাকি তার বউ কে কাদিয়েছি। ‘ বললো মা।

শত দুঃখের মাঝেও এই মানুষদের ছোটো ছোটো মজা আমায় হাসিয়ে দেয়।আমি ঠোঁট কামড়ে হেসে দিলাম।মা আমায় হাসতে দেখে বললো,
মা: তুই এখানে বস।আমি বাটি রেখে এসে তোকে তোর বর আর তাহসান, নিহার ছোটবেলার ছবি দেখাবো।
আমি নিঃশব্দে মাথা নাড়লাম।মা বাটি রেখে ঘরে এলো।বিছানার নিচ থেকে একটা ছোটো ট্রাংক বের করলো। ধুলোবালির আস্তরণ পড়েছে সেই ট্রাঙ্কে।মা একটা কাপড় দিয়ে সেটা মুছে ট্রাংক টা খুলল। ট্রাংক খুলতেই আবিষ্কার হলো ট্রানকের ভিতরে থাকা হাজার জিনিস। নিহার জামা, তাহসান ভাইয়া খেলনা,ডাক্তার সাহেবের বল আরও কত কি।মা সবগুলো কে সাইড করে একটা বের করলো।

এলবামটি খুলে আমায় দেখাতে লাগলো কে কোনটা।ছোটোবেলায় ডাক্তার সাহেব কত দুষ্ট ছিলেন।সেই ছোটো থেকে খেলা শেষে রোজ নাকি মারামারি করে ঘরে ফিরতেন।উনার নাকে ব্যান্ডেজ করা একটা ছবি দেখে আমার সেকি হাসি বলে বোঝাতে পারব না।মা আমায় উনার দুষ্টুমি গুলো বলতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর আমি তো পারলে মায়ের উপর পড়ে যাচ্ছি।এরপর মা আমায় আরও কত ছবি দেখালো।

হুট করে মায়ের ফোন বেজে উঠলো।মা উঠে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে ফিরে এসে আমায় বলল,
মা: আফরীন তুই ছবিগুলো দেখ আমি কথা বলে আসছি।এরপরে আমার আর আমার বোনের ছবি আছে। আমাদের ছোটবেলার ছবি আছে তুই দেখিস।

আমি নিঃশব্দে মাথা নাড়লাম।মা ফোন কানে নিয়ে হ্যাঁ বলো বলতে বলতে চলে গেলো অন্য ঘরে।আমি পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগলাম।মায়ের আর মায়ের বোনের বেশ কিছু ছবি আছে।তাদের ছোটো থেকে কৈশোরে পা রাখা বেশ কিছু ছবি।আমি সেগুলো দেখতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ি।এক সময় ছবি দেখতে হঠাৎ একটা ছবি চোখে পড়ে যায়।ছবিতে থাকা মায়ের পাশের মানুষগুলো যে মায়ের ভাই বোন বিশ্বাস হচ্ছে না।

চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে ছবিতে থাকা মানুষটা কে দেখে।মানুষটা মায়ের বোন কি করে হতে পারে? সে যদি মায়ের বোনই হয় তাহলে ডাক্তার সাহেব আমার সম্পর্কে কি হন? মায়ের পাশে থাকা মানুষ গুলো কে দেখে যেন আমার মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে।এক মুহুর্তে পায়ের তলার মাটি সরে গেছে মাত্র একটা ছবি কে দেখে।ছবিটার এত ক্ষমতা যে এক লহমায় আমার আশেপাশে থাকা সবকিছু বদলে দিল।

‘ কিরে ছবিগুলো দেখলি? ‘

মায়ের কথায় মায়ের দিকে মুখ তুলে তাকালাম।মায়ের মুখে সেই চিরচেনা হাসি যার হাসির সঙ্গে ছবির মানুষটার হাসির মিল আছে। মাকে দেখেই মনে হতো সে আমার খুব চেনা,কাছের কেউ কিন্তু আমার সেই ভাবনাই যে সত্যি হয়ে দাঁড়াবে সেটা কস্মিনকালেও ভাবিনি।মায়ের হাসি যে তার হাসি। রহস্যময়ী সেই রমণী যার রহস্য আজও সমাধান করতে পারলাম না।না পারারও কারণ আছে।হুট করে যেই মানুষ হারিয়ে যায় তার হারিয়ে যাওয়ার কারণ কি কখনো খুঁজে বের করা যায়?

‘ কিরে কি হয়েছে? ‘ আমার কাঁধে হাত রেখে আবারও বললো মা।আমি স্মিত হেসে বললাম,
আফরিন: কিছু না। তা তোমার মুখে এত বড় হাসি কি কারণে শুনি?
মা: সময় হলে বুঝতে পারবি
আফরীন: মানে?
মা: বললাম তো সময় হলে বুঝবি।এখন অনেক খোশ গল্প হয়েছে।আর গল্প করতে হবে না।দুজনে মিলে আসরের নামাজটা পরে রান্নাঘরে যাই।
এবারও আমি নিঃশব্দে সায় দিলাম। ছবিটার ব্যাপারে কিছু বললাম না।দরকার কি একটা অযাচিত কথা বলে সম্পর্কের মোড়গুলো ঘুরিয়ে দেওয়ার।বেশ তো আছি মা মেয়ে হয়ে।

তারপর আমি আর মা মিলে নামাজটা পরে ফেললাম। নামাজ পড়ে কোমরে দুজনেই আঁচল বেধে নিলাম কারণ এবার সংসার নামক সমরাঙ্গণের আসল যুদ্ধ রান্নায় নামতে চলেছি।

টিং টিং টিং… হঠাত কলিং বেলে আমাদের রান্নাঘরে যাওয়ার ভাবনায় ছেদ পড়ল।মা কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।আমি মায়ের হতভম্ব দৃষ্টিতে অবাক হলেও কিছু বলার অবকাশ পেলাম না কারণ ততক্ষণে আরেকবার কলিং বেল বেজে উঠেছে।

আমি আর কিছু না ভেবেই দরজা খুলতে এগিয়ে গেলাম।দরজা খুলতেই ওপাশের মানুষ গুলোকে দেখে বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে উপনীত হলাম।আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ফারহাজ, ইরহান, ফারাহ, আফরা আর আর্যাল।আমায় শাড়ি পরিহিতা নববধূ সাজে দেখে সকলে যেন আকাশ থেকে পড়েছে।হয়তো আমায় এই বেশভূষায় এক্সপেক্ট করেনি।

‘ তোর বিয়ে হয়ে গেছে! এটা তোর শশুর বাড়ি! ‘ চরম পরিমাণে অবাক হয়ে বললো আর্যাল😳😳

বাকিরাও যেন আমায় এই সাজে হজম করতে পারছে না।কাঠের পুতুলের ন্যায় শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে বড় বড় রসগোল্লার সাইজ চোঁখ করে।মা আর্যালের কথা শুনে হয়তো বুঝতে পেরেছিল ওরা আমার বন্ধু তাই এগিয়ে এসে মুচকি হেসে বললো,
মা: না তো এটা ওর শশুর বাড়ী হবে কেন? এটা ওর বাপের বাড়ি।তোমরা নিশ্চয়ই ওর বন্ধু। এসো না ঘরে এসো।ভেতরে এসে বসো।

মায়ের কথায় সকলের সম্বিত ফিরলো। ওরা গোলগোল চোখেই ভিতরে এলো।আমি দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। পাঁচজন এক সিরিয়ালে বড় সোফাটায় বসলো।মা আমাদের জন্য নাস্তা আনতে রান্নাঘরে চলে এলো।ওরা এখনও বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাহ অবাক হয়ে বললো,
ফারাহ: তোর বাপের বাড়ি মানে? তোর সৎমা ফিরোজা বেগম না অনেক অত্যাচারী ছিল তাহলে এত ভালো কি করে হয়ে গেলো?আর সবথেকে বড় কথা ফিরোজা বেগম হলে তো এতক্ষণে ওই মহিলা আমাদের জুতোর বারি দিয়ে বের করত।

মাকে ফিরোজা বেগম মনে করে ফারার বলা কথায় বিরক্ত হয়ে তাকালাম ওর দিকে। ফারাহ চুপ করে গেল। ইরহান বললো,
ইরহান: বইনা তুই কিছু বল।আমার মাথায় তো কিছুই ঢুকে না।তুই এভাবে শাড়ী পরে বউ সাইজা,তোর সৎ মা হুট করে এত ভালো হয়ে গেলো। মানে এসব কী? সৎ মা মানুষ কি করে হলো?কি জাদু করেছিস?

এবার মেজাজটা পুরাই গরম হয়ে গেলো।চোখ গরম করে তাকিয়ে দাত চেপে বললাম,
আফরীন: কানের নিচে থাপ্পড় না খাইতে চাইলে মুখটা বন্ধ কর বেয়াদব।উনি আমার সৎ মা না শাশুড়ি মা আর আমার বিয়ে হয়েছে এক সপ্তাহ আগে।

‘ What! তোর বিয়ে হয়ে গেছে তাও এক সপ্তাহ আগে আর আমরা আজ জানলাম! ‘ জোরে বলে উঠলো আর্যাল, ফারাহ, আফরা, ফারহাজ,ইরহান।

আমি চোখ গরম করে তাকালাম।সবগুলো আবার বসে পড়ল। ফারহাজ আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে বললো,
ফারহাজ: আফ্রু তুই বিয়ে করে নিয়েছিস আর আমরা জানিও না।একবার বিয়ের দাওয়াতও দিলি না।
আফরীন: আমি মনে হয় নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করছি? বিয়ে তো জোর করে দিয়েছিল।
আর্যাল: হোয়াট তোর বিয়ে জোর করে দিয়েছে? তুই খুশি নেই? তুই এখনই আমাকে বল তোর বর কোথায়।মেরে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে দিবো শালার।
আফরীন: এই চুপ আমি একবারও বলেছি আমি সুখে নেই? তাহলে উল্টাপাল্টা বকছিস কেন আর তুই আমার বর কে শালা বললি কোন সাহসে? আমার বর কে দেখলে তোর প্যান্ট ফেটে যাবে আবার এসেছিস শালা বলতে।
আর্যাল: কে তোর বর?
আফরীন: সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে থাকার সাহস থাকলে থেকে যা যদি আমার বর কে ফেস করার সাহস থাকে।থাকলেই দেখতে পারবি।
ইরহান: আর কেউ থাকুক না থাকুক আমি থাকবো।আমি দেখতে চাই আমার বেবিটা কোন রাজপুত্তুর কে বিয়ে করেছে।
আফরীন: আস্তে বল মা আছে।

‘ কই দেখি দেখি সবাই ঝটপট খেয়ে নাও তো। এসে থেকে একটা দানাপানিও পড়েনি পেটে।কিছু বানানো ছিলনা তাই দেরি হলো আনতে। ‘ হাতে নাস্তার প্লেট হাতে ড্রয়িং রুমে ঢুকলো মা।

আফরীন: মা তুমি একা একা করতে গেলে কেন? আমায় ডাকতে।আমি আসতাম তোমায় হেল্প করতে।কথা ছিল দুজনে মিলে বানাবো কিন্তু তুমি কথা রাখলে না।
মা: কথা তো কত কিছুই থাকে কিন্তু সব কথা তো রাখা যায় না।কই তোমরা একটু খেয়ে দেখত কেমন হয়েছে? আসলে বয়স হয়েছে তো তাই এখন আর তেমন কিছু এফোরট দিয়ে করতে পারিনা।

আফরা: আমরা আসাতে আপনি যে আমাদের এত সমাদর করছেন সেটাই আমাদের সৌভাগ্য।
ইরহান: অ্যান্টি এত ভালো হয়েছে না যে কি বলবো।প্রশংসা করার জায়গায়ই খুঁজে পাচ্ছিনা।এই এই তোরা বসে আছিস কেন? তোরাও খা….
ইরহানের কথা শুনে সাথে সাথে ওর মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,
আফরীন: তোর খাবার দেখলেই লাফিয়ে পড়ার অভ্যাস কবে যাবে?
ইরহান: আমি যতদিন না চাইবো।

মা: আঃ আফরিন কি করছিস কি।ওকে খেতে দে।তোমরা বসে আছো কেন তোমরাও খাও।
মায়ের কথায় আর্যাল, ফারহাজ, আফরা আর ফারাহ সৌজন্য হেসে নাস্তা গুলো মুখে তুললো আর মায়ের প্রশংসায় পুরো ঘরটা ভরে উঠলো।
খাওয়া দাওয়া শেষে তখন আমি আর মা সবার সঙ্গে গল্প করতে ব্যস্ত এমন সময় আফরা বললো,
আফরা: আফরীন তোর সাথে একটু কথা আছে।

আফরার কথা শুনে আমি ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম আর মা বললো,
মা: আফরীন তুই ওকে নিয়ে মিড টেরেসে যেতে পারিস।
মায়ের কথায় মাথা নাড়লাম।

‘ নাটক করে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বন্ধুত্ত্ব ভাঙার কারণ কি জানতে পারি? ‘ বললো আফরা।
আমরা এখন বর্তমানে মিড টেরেস এ দাড়িয়ে আছি।আমি ঠোট কামড়ে কান্না সংবরণ করে বললাম,
আফরীন: সবার থেকে দূরে যাওয়ার প্রচেষ্টা।
আফরা: সেটাই বা কেন চাইছিস?
আফরীন: যার হাত ধরে জীবনটা নতুনভাবে শুরু করেছি,যাকে নিয়ে হাজার দিবারাত্রির স্বপ্ন দেখেছি,যাকে নিয়ে সংসার সপ্নের জাল বুনেছি সেই যে অন্য কারোর সেখানে অন্যরা তো ক্ষণিকের মায়া।

আফরীন এর কথায় বিপাকে পরে গেলো আফরা।আফরীন এর হাসব্যান্ড কে এখনো দেখেনি ঠিকই কিন্তু মানুষটা নিশ্চই এতটা খারাপ নয় নাহলে আফরিন নিশ্চই সেই বেপারে বলতো। তবুও এরকম একটা পরিস্থিতিতে বন্ধু কে কি বলবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।
আফরা: যদি সম্পর্কে ভালোবাসা আর বিশ্বাস না থাকে তবে সেই সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া উচিত।সম্পর্কটা তো আগেই শেষ হয়ে গেছে,এবার নাহয় হাতে কলমে শেষ করে দে।
আফরীন: সেটা পারব না বলেই তো সব ছেড়ে যাওয়ার পথে হাঁটা দিয়েছি। তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সাধ্য যে আমার নেই।
আফরা: আলাদা হয়ে গেলে তো কয়েক বছর পর এমনিতেই সম্পর্ক ভেঙে যাবে আর উনি আরেকজন কে বেছে নিলে?
আফরীন: তবুও তো মনে প্রাণে আজীবন তার স্ত্রী হয়ে থাকবো আর রইলো কথা কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়ার তাহলে সে তো অনেক আগেই বেছে নিয়েছে।
আফরা: সবারই একটা না একটা অতীত থাকে আর সেটা তারও আছে। তারমানে এই নয় যে অতীত আকড়ে থাকতে হবে। অতীত আকড়ে থাকলে বর্তমান আর ভবিষ্যতের ধ্বংস অনিবার্য। বর্তমান কে বেচেঁ থাকার যোগ্য করে তোল তাহলেই ভবিষ্যতে বাঁচতে পারবি।তার মনে নিজের জন্য জায়গা কর।তার হৃদয়ে নিজের নাম লিখিয়ে দে।তার প্রথম ভালোবাসা তার জায়গায় আর তুই তোর জায়গায়।অন্যের জায়গা কেড়ে নয় নিজের জায়গা করে তাকে জিতে নে।হয়তো তোর ভালোবাসায় তার প্রথম ভালোবাসা ফিকে পড়তে পারে কিংবা প্রথম ভালোবাসার মানুষের থেকেও বেশি তোকে ভালোবাসতে পারে। হু নোজ? পালিয়ে গিয়ে নয় উপস্থিত থেকে লড়াই কর।সবসময় পাশে পাবি আমায়।

কথাগুলো আমায় এক অন্যরকম সাহস দিলো।মনে হলো আমিও নতুন করে ডাক্তার সাহেবের মনে আমার জন্য জায়গা বানাতে পারী।তার প্রেয়সীর জায়গা কেড়ে নয় নিজের জন্য জায়গা করে তাকে জিতে নিবো।কথাগুলো ভাবতেই অজান্তে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে