তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে পর্ব – ২৮

0
1470

#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-২৮

‘ আপনাদের ছেলে যে আমার মেয়েকে এত পরিমাণে অবহেলা করবে সেটা জানা থাকলে যেকোনো উপায়ে হোক আমি আমার মেয়ের বিয়েটা আটকে দিতাম।আমার স্ত্রী যদি আমায় আগে জানাতো এই বিয়ের কথা তাহলে আমি কিছুতেই এই বিয়ে হতে দিতাম না।বিয়ে যখন হয় গেছে তখন কিছু করার নেই কিন্তু ডিভোর্স তো আর করানো অসম্ভব নয়।আমার মেয়ে সুস্থ হলেই আপনাদের ছেলেকে ডিভোর্স দিবে। ‘ ক্ষিপ্ত মেজাজে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামল আনসারী।

আনসারীর কথা শুনে সকলেই আশাহত হলো কারণ এই আধা ঘণ্টায় কমসে কম পঞ্চাশ বার এই একই কথা বলেছে আর যতবার ওকে কেউ বুঝানোর চেষ্টা করেছে ও ততই ওর স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে তাদের কথাগুলো শুনতে নাখোচ করেছে।

‘ শুধু আমার মেয়েটাকে সুস্থ হতে দিন, তারপর তো আপনাদের ছেলের চেহারাও দেখতে দিবো না আমি ওকে। ‘ আবারও ক্রোধান্বিত গলায় কথাগুলো বললো আনসারী।

কথাগুলো বলে বারবার হসপিটালের করিডোরের এখান থেকে ওখানে পায়চারি করছে আনসারী। অজানা আশঙ্কায় তার প্রাণ ওষ্ঠাগত।ফিরোজা কে গম্ভীর গলায় আদেশ করে বললো,
আনসারি: ফিরোজা পানির ব্যবস্থা করো,আমার গলা শুকাচ্ছে।
ফিরোজা বেগম বদমেজাজি স্বামীর গলা শুনে খানিকটা ভয়ার্ত মুখে মাথা নেড়ে পানি আনতে ছুটলেন।কিছুক্ষণ পর একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল নিয়ে এলেন। বোতল টা এগিয়ে দিলেন তার স্বামীর দিকে।আনসারী একবার ফিরোজার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বোতল টা হাতে নিয়ে বোতলের মুখ খুলে গলায় পানি দিলো।অর্ধেক বোতল পানি শেষ করার পর ওর যেন তৃষ্ণা মিটলো।

পানির বোতল আবার ফিরোজার হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবারও পায়চারি করা শুরু করলো। আফরিন কে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ডাক্তাররা ওর চেক আপ করছে।কিন্তু এত দেরি কেন লাগছে সেটাই বুঝতে পারছে না আনসারী।যত সময় বাড়ছে তত মেজাজ গরম হচ্ছে ওর।

কিন্তু আনসারীর রাগের আগুনে ঘি পড়লো যখন ওর চোখ গেলো ওর থেকে খানিকটা দূরে করিডোর দিয়ে দৌড়ে আসা তাহরীমের উপর।রাগে আনসারী হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাতে দাত চেপে পাথরের ন্যায় দাড়িয়ে রইলো।আনসারীর কঠিন দৃষ্টি ফিরোজা বেগমও লক্ষ্য করলেন। স্বামির দৃষ্টি অনুসরণ করে উনিও তাহরীমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন আর তাহরীম কে দেখে ফিরোজা বেগমের মুখে প্রচ্ছন্ন হাসি ফুটে উঠল।এতক্ষণ তাহরীমের জন্যই তো অপেক্ষা করছিলেন।এখন দেখবেন কি করে আনসারী তাহরীম আর আফরিনের সংসার ভাঙ্গে।

তাহরীম দৌড়ে সবার কাছে এলো।ওর পিছন পিছন আরাফাত আর আকাশও এলো।আকাশ কে দেখে ক্রন্দনরত নিহা এগিয়ে গেলো আকাশের দিকে।আরাফাত তাহরীমের পাশে দাঁড়ালো।আরাফাতের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আনসারীর দিকে। তাহরীম ওর মা রহিমা বেগম কে জিজ্ঞেস করলো,
তাহরীম: মা কি হয়েছে? মিসেস আফরিন হঠাৎ সেন্সলেস কেন হয়ে গেলেন?
ছেলের কথা শুনে রহিমা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে অসহায় মুখে বললেন,
মা: আফরিন তুই বাইরে যাওয়ার পর ঘুম থেকে উঠে আমাদের সঙ্গে সন্ধার নাস্তার জোগাড় করছিল।হঠাৎ ওর ফোনে ফোন এলো বলে ও ডাইনিং টেবিলের দিকে ছুটলো। ও যেতে যেতে ফোন কেটে গেলো।
আমি আর রিমা তখন সন্ধার নাস্তা বানাতে ব্যস্ত।অনেকক্ষন হলো কিন্তু আফরিন আসছে না তাই আমি রিমা কে বললাম আফরিন কি করছে দেখে আসতে।আমার কথা শুনে রিমা আফরিন কে দেখতে গেলো কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই রিমার আফরিন বলে চিৎকার কানে ভেসে এলো।আমি দৌড়ে গেলাম রিমার চিৎকারে।

ওখানে গিয়ে দেখলাম আফরিন নিচে অজ্ঞান অবস্থায় পরে আছে।রিমার চিৎকারে তোমার বাবা, নিহা আর তাহসানও ছুটে এলো। আফরিনের মুখে পানি ছিটিয়ে ওর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ওর জ্ঞান ফিরলো না। পরে তাহসান আফরিনের পালস মেশিন দিয়ে চেক করে বললো আফরিনের পালস রেট খুব স্লো,ওকে সোহরাওয়ার্দী তে হসপিটালাইজ করতে হবে।সাথে সাথে তোর বাবা গাড়ি বের করলো।

একটা গাড়িতে আমি, তাহসান আর আফরিন এলাম আর আরেকটা গাড়িতে আমাদের পিছন পিছন রিমা,তোর বাবা আর নিহা এলো। এখানে এসেই সাথে সাথে আফরিন কে অ্যাডমিট করলাম আর বেয়াই বেয়াইন কে ফোন করে জানালাম।খবর পেয়ে উনারা ছুটে এলেন।কিন্তু বেয়াই এসে থেকে বলছেন যে আফরিন সুস্থ হলে ওকে নিয়ে যাবেন,তোদের ডিভোর্স করিয়ে দিবেন।

সব কথা শুনে তাহরীম বললো,
তাহরীম: কে কাকে নিয়ে যাবে, আফরিন সুস্থ হলে কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে।আগে আফরিন সুস্থ হোক তারপর নাহয় আফরিনকেই জিজ্ঞেস করবো উনি কি চান।আমাকে এখন আফরিনের সঙ্গে দেখা করতে হবে বলে তাহরীম আফরিন যেই কেবিনে আছে তার দিকে এগিয়ে গেলো।দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে নিল কিন্তু তখনই ওর পথ আটকে দাড়ালো আনসারী।আনসারী ওর দিকে তাকিয়ে ক্ষিপ্ত গলায় বললো,
আনসারি: আমি বাবা হয়ে এখন পর্যন্ত আমার অসুস্থ মেয়েটার মুখ দেখতে পারলাম না তাহলে বাইরের লোক হয়ে তুমি কি করে ভাবছো যে তুমি আমার মেয়েকে আমার আগে দেখতে পারবে?

আনসারীর কথা শুনে তাহরীমের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল। একেত আফরিন অসুস্থ তার উপর দিয়ে আরাফাতের বলা অসম্পূর্ণ কথাগুলো বারবার ওর মাথায় ঘুরছে।তবুও এই পরিস্থিতিতে ও কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চায়না বলে নিজেকে যথা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রেখে স্বাভাবিক গলায় বললো,
তাহরীম: আমি তো বাইরের লোক নই আঙ্কেল।আমি আফরিনের স্বামী তাই আমার অধিকার আছে ওকে দেখার।আপনি দেখতে পারেন নী ঠিকাছে কিন্তু দেখতে তো আমিও পারিনি তাহলে অন্যের উপর রাগটা আমার উপর কেন ঝাড়ছেন?

আনসারি: স্বামী মাই ফুট…তোমার মত নর্দমার কিট আমার হীরের টুকরো মেয়ের স্বামী হওয়ার যোগ্যতা রাখেনা।তুমি যদি সত্যিকার অর্থে ওর স্বামী হতে না তাহলে ওকে ওভাবে একা ফেলে রেখে যেতে না।তোমার না চাকরি নেই? তাহলে তুমি বাইরে কোথায় গিয়েছিলে? পরনারীর সঙ্গে আইয়াশি করতে?….ক্ষিপ্ত মেজাজে তাহরীমের শার্টের কলার চেপে কথাগুলো বললো আনসারী।

এতক্ষণ সবটা সহ্য করলেও এবার আর তাহরীমের বাবা মা কিছু সহ্য করলেন না। তাহরীমের মা বাজখাই কণ্ঠে বললেন,
মা: এবার কিন্তু আপনি বাড়াবাড়ি করছেন মিস্টার আনসারী।আপনি আমার ছেলের চরিত্রের উপর আঙ্গুল তুলছেন কোন সাহসে?আপনাকে কে বললো ও পরনারীর কাছে গিয়েছিলো?
বাবা: আপনার মত বিদ্বান মানুষের কাছ থেকে এই ধরনের কথা আশা করিনি আমি মিস্টার আনসারী।আপনি সেদিনই তো আমাদের বাড়ি এলেন,আপনি দেখেন নী আমাদের ছেলে আফরিন কে কত ভালবাসে?তারপরও এসব কথা কেন বলছেন? তাহরীম তো রীতিমত চোখে হারায় আফরিন কে…

আনসারি: সে তো কত মানুষই বাইরে দিয়ে কতকিছু দেখায় কিন্তু ভিতর দিয়ে তাদের ভিতর আস্ত একটা অমানুষ থাকে যে অন্য মানুষকে কষ্ট দিতে পছন্দ করে।আপনাদের ছেলেও এমনই নাহলে আমার সুস্থ সবল মেয়েটা হঠাৎ করে অসুস্থ কেন হয়ে গেলো?
ভাইয়ের শশুর বলে এতক্ষণ কিছু বলছিলো না তাহসান কিন্তু এবার বলতে বাধ্য হলো,
তাহসান: আরে আজব তো।একটা মানুষের অসুস্থ হওয়ার পিছনে আরেকজন মানুষের হাত কি করে থাকতে পারে? রোগ কি কেউ জোর করে আনতে পারে?রোগ তো আল্লাহর নিয়ামত।আপনি তখন থেকে একই কথা কেন বলছেন?
আনসারি: মানলাম আমার মেয়ে এমনই এমনই অসুস্থ হয়েছে কিন্তু তোমাদের ছেলের কি কোনো দোষই ছিলনা।সে আমার মেয়েটাকে ফেলে কোথায় গিয়েছিল? আফরিন একা কেন ছিল?

কোথায় গিয়েছিল ও?আর শুনলাম ওর তো চাকরি নেই তাহলে ওর বাইরে এত কিসের কাজ?মানলাম ওর হয়তো কোনো কাজ ছিল কারণ কাজ থাকতেই পারে কিন্তু ওর মত বেকার ছেলের কাছে আমি কেন আমার মেয়েকে রাখবো? ওর মত বেকার ছেলের কাছে থেকে আমার মেয়ে পাবে টা কি? ও কি খাওয়াবে আমার মেয়েকে?

তাহরীম তখন থেকে আনসারীর এই বাজে বাজে কথা সহ্য করছে একমাত্র আরাফাতের কারনে কারণ আরাফাত ওকে চোখের ইশারায় না করেছে কিছু বলতে বা করতে।কিন্তু এবার আর পারলো না। ধাক্কা দিয়ে আনসারীর হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,
তাহরীম: আফরিন আমার বউ তাই ওকে আমি কি খাওয়াবো সেটা আমাকে ভাবতে দিন,আপনার না ভাবলেও চলবে।আর আমি বেকার নই,আমি শুধু চাকরি ছেরে দিয়েছি । আমি এখনও কোনো চাকরিতে ঢুকিনি কারণ আমি চেয়েছিলাম আমি আর আফরিন কিছুদিন একটু আলাদা সময় কাটাব।কিন্তু এখন আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমার লাইফে সবচেয়ে বড় ভুলটা হলো চাকরি না করে বউয়ের সাথে সময় কাটাতে চাওয়া।

এবার আনসারীও ক্ষিপ্ত মেজাজে বললো,
আনসারি: বাহ্ আমার মেয়ে আর আমিই ভাববো না আমার মেয়ে কি খাবে শশুর বাড়িতে?আর তুমি….

‘ এখানে হচ্ছেটা কি? আপনারা হসপিটালে এত ঝগড়া ঝামেলা করছেন কেন?ঝামেলা করার হলে বাড়ি গিয়ে করুন। এখানে তো আরও পেশেন্ট আছে,ওদের প্রবলেম হবে। ‘ বেশি ঝামেলা হচ্ছে দেখে একজন সিনিয়র ডক্টর কথাগুলো বলল।

পরিচিত গলা শুনে তাহরীম আর আনসারী সামনের দিকে দৃষ্টি দিলো আর দুজনেই সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা কে দেখে চমকে উঠলো কারণ সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটা আর কেউ নয় বরং অর্ণব নিজেই। অর্ণবও ওদের দেখে আকাশ থেকে পড়লো। তাহরীম অর্ণব কে দেখে অবাক হলেও আনসারীর ভ্রু কুচকে এলো বিরক্তিতে।

অর্ণব তাহরীম কে হসপিটালে দেখে এগিয়ে এলো যতই হোক এককালের বন্ধু তো ছিল।অর্ণব তাহরীম কে জিজ্ঞেস করলো,
অর্ণব: তুই এখানে কেন?
এইদিকে অর্ণব প্রশ্নটা স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করলেও তাহরীমের মনে পড়লো সেইদিন রাতের সেই স্বপ্নটা আর সাথে সাথে ভয়ে চুপসে গেল।কিছুতেই মুখ খুলতে রাজি হলনা। তাহরীম কিছু বলছে না বলে অর্ণব এবার আকাশ কে জিজ্ঞেস করলো,
অর্ণব: আকাশ তোরা এখানে কেন? কারোর কি কিছু হয়েছে?
আকাশ তো আর তার বসের সপ্নের ব্যাপারে কিছু জানেনা তাই তাহরীমের কিছু বলার আগেই পটরপটর করে বলে দিলো,
আকাশ: আফরিন ভাবী হুট করে সেন্সলেস হয়ে গেছেন তাই উনাকে হসপিটালে নিয়ে আসা হয়েছে।আর ভাবী হঠাৎ অসুস্থ হওয়া নিয়েই বস আর তার শশুর মশাইয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চলছে।

আফরিন অজ্ঞান হয়ে গেছে শুনে অর্ণবের খারাপ লাগলেও ব্যপারটা কে তেমন পাত্তা দিলো না অর্ণব কারণ আফরিনের জন্য চিন্তা করার জন্য ওর স্বামী আছে সেখানে ও আজ বাড়িয়ে কিছু বললে সেটা বাজে দেখায়। ও স্বাভাবিক গলায়ই বললো,
অর্ণব: তো এতে এত ঝামেলা করার কি আছে?মানুষ তো অসুস্থ হতেই পারে। আন্টিম্মু পরিস্থিতি সামলাও আর ডক্টর কি কিছু বলেছে?
এবার তাহরীম খানিকটা শান্ত হলো।বুঝতে পারলো এবার আর ওর বন্ধু ওর কাছ থেকে ওর প্রিয়দর্শিনী কে কেড়ে নিবে না।অর্ণবের কথায় আরাফাত ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বললো,
আরাফাত: না এখনও ডক্টর বের হয়নি তবে…

‘ পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে, আপনারা উনার সঙ্গে দেখা করতে পারেন তবে উনাকে প্রেসার দিবেন না। ‘

আরাফাত কথাটা পুরো শেষ করবে তার আগেই কেবিনের ভিতর থেকে ডক্টর বেরিয়ে এলেন কথাগুলো বলতে বলতে।আরাফাত তাহরীম কে উদ্দেশ্য করে বললো,
আরাফাত: মিষ্টার মেহমাদ আপনি যান, আমার এখন ওর সামনে না যাওয়াই ভালো হবে।

আরাফাতের কথা শুনে তাহরীম আলতো মাথা নেড়ে এগিয়ে গেলো আফরিনের সঙ্গে দেখা করতে কিন্তু আবারও আনসারী ওর পথ আগলে দাড়ালো আর বললো,
আনসারি: তুমি ভিতরে যাবে না।আমি চাই না আমার মেয়ের আশেপাশে তুমি নামক কালো ছায়া থাকুক।ওর জীবনের কালো অধ্যায় তুমি।আমার মেয়ের থেকে একশো হাত দূরে থাকবে তুমি।

তাহরীমের রাগ উপরন্তু বেড়েই চলেছে।এই আনসারী নামক লোকটাকে ও সহ্যই করতে পারেনা তার উপর দিয়ে লোকটা এখন ওকে বারবার আফরিনের কাছে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছে বলে ওর আরও রাগ উঠছে। ও শক্ত চোখে টাকায় আনসারীর দিকে তারপর বলে,
তাহরীম: আপনি আমাকে বলার কে? এজ হার হাসব্যান্ড আমার অধিকার আছে ওর সাথে দেখা করার আর ওর বাবা যেহেতু আপনি সেই অনুযায়ী আপনারও অধিকার আছে ওর সাথে দেখা করার তাই দুজন গেলেই হয়। এর মাঝে ঝামেলা করছেন কেন? আপনি হয়তো ভুলে গেছেন আপনার মেয়ে জান্নাতুল আফরিন কাজী এই তাহরীম মেহমাদের স্ত্রী,আমার শরীয়ত মতে কবুল বলে বিয়ে করা বউ।

তাহরীমের কথার বিপরীতে আনসারী কিছু বলবে তার আগেই ডক্টর বললেন ‘ পেশেন্ট তার বাড়ির লোক বিশেষ করে তার হাজব্যান্ডের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে তাই দয়া করে কেউ কথা বাড়াবেন না। ‘

ডাক্তারের কথায় যেন আনসারী সপ্তম আসমানে থেকে পড়লো।অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ডাক্তারের দিকে।ডাক্তার ওর এহেন দৃষ্টি দেখে অপ্রস্তুত হলো। তাহরীম আনসারীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে কেবিনের দিকে এগিয়ে গেলো।

একে একে সবাই ঢুকলো আফরিনের কেবিনে যদিও ডাক্তার ওয়ার্ন করেছে যেন আফরিন কে প্রেসারাইজ করা নাহয়। তাহরীম কেবিনে ঢুকে দেখল কেবিনের শুভ্র রঙ্গা বেডটাতে শুভ্র রঙের শাড়ি যেটা বাড়িতে পড়েছিল সেটা পরে এক দৃষ্টিতে জানালার দিকে তাকিয়ে বেডের গায়ে হেলান দিয়ে বসে আছে আফরিন। আফরিন কে দেখে সকলে ওর দিকে এগিয়ে গেলো।

ডাক্তার সাহেব আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার বেডের পাশে থাকা টুলে বসে আমার ক্যানুলা লাগানো হাতটা নিজের হাতে তুলে নিলেন।আমি এখনও সেই জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছি। হাতে নোনা পানির অবস্থান অনুভব করতেই শান্ত চোখে মুখ ফিরিয়ে তাকালাম ডাক্তার সাহেবের দিকে।উনি নিশব্দে কাদঁছেন।উনাকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলাম।কেবিনে উপস্থিত প্রত্যেকে আমার তাচ্ছিল্যের হাসি দেখে স্তম্ভিত রয়ে গেলো।ডাক্তার সাহেবও অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।

তারপর আমি চোয়াল শক্ত করে বললাম ‘ বাবা আমি তোমার সঙ্গে কাজী বাড়ি ফিরে যেতে চাই।আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো। ‘
আমার কথা শুনে সকলে চমকে উঠলো আর ডাক্তার সাহেব বাকরুদ্ধ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে ।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে