#তুমি নামক সপ্তর্ষি মন্ডলের প্রেমে💖
#মিফতা তিমু
#পর্ব-২০
‘ আপনি একজন ম্যাজিশিয়ান সেটা কি জানেন মিসেস আফরিন? আপনার হাতে না ম্যাজিক আছে। দু মিনিটের মধ্যে আফরার বাবা মা আর আর্যালের বাবা মার মধ্যে ঝামেলা সট আউট করে দিলেন।আপনি আসলেই ম্যাজিশিয়ান। আপনার হাতে জাদু আছে। ‘ আমার বাম হাতটা ধরে কথাগুলো বললেন ডাক্তার সাহেব।
ডাক্তার সাহেব কথাগুলো হেসে হেসে বললেন।কথাগুলো ডাক্তার সাহেবের জন্য সহজ হলেও আমার জন্য একেবারেই সহজ নয়।মাথা ঘুরছে এগুলো শুনে।আবারও উনার কথা শুনে মানসপটে সেই ছেলেটার অস্পষ্ট চেহারা ভেসে উঠছে।সেই একই কথা বারবার কানে বাজছে।মনে হচ্ছে যন্ত্রণায় মাথার তার ছিঁড়ে যাবে।
আমি কথা বলছিনা বলে ডাক্তার সাহেব আমায় ধাক্কা দিলেন।ডাক্তার সাহেবের ধাক্কায় আমি সেই নরকীয় স্মৃতিগুলো ছেরে বেরিয়ে এলাম।ডাক্তার সাহেব কে সেই অস্পষ্ট স্মৃতির ব্যাপারে কিছু বললাম না।শুধু বললাম,
আফরীন: আপনার কেন মনে হলো আমি ম্যাজিশিয়ান?আঙ্কেল অ্যান্টি কে তো আমি আপনার হেল্প নিয়েই বুঝিয়েছি।উনাদের একা বুঝানো আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।
তাহরীম: কারণ আপনি আমায় বলেছিলেন বলেই আফরা আর আর্যালের ব্যাপারে সবটা খতিয়ে দেখেছি।আর রইলো কথা আঙ্কেল আন্টিকে বুঝানোর তাহলে আশি শতাংশ কাজ আপনি নিজেই করেছেন।
আফরীন: বলছেন তাহলে?
তাহরীম: কই শাখ?
আমি ডাক্তার সাহেবের কথায় কিছুই বললাম না,শুধুই হাসলাম।তখন ফরহাদ আঙ্কেল কে বলার পর উনারা আমাদের কথা বুঝলেন আর নিজের ভুলও বুঝতে পারলেন।আর যেহেতু আসল লোক কে বুঝিয়ে ফেলেছি তাই রাহাত আঙ্কেল আর ফাতেমা অ্যান্টি কে বুঝাতেও বেশিক্ষণ লাগলো না।এবার শুধু আর্যাল আর আফরার বিয়ে হলেই বাঁচি।বাকি বাচ্চার কথা ওরা বিয়ের পর বলে দিবে।
‘ আচ্ছা ডাক্তার সাহেব কাল সুশি কে বাড়িয়ে নেওয়ার পর সবাই এমন ব্যবহার করলো যে বিড়াল দেখলে আপনি বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবেন কিন্তু আপনি এমন কিছুই করলেন না।সবার কথা শুনে আমি ভেবেছিলাম আর যাই হোক কাল হয়তো আমার গালে দুই চারটা থাপ্পড় পড়বেই কিন্তু আপনি তো বড়ই ক্যাজুয়াল ব্যবহার করলেন।আপনার এত স্বাভাবিক ব্যবহারের কারণ কি? আমি তো শুনেছি আপনার পেটস পছন্দ না তাহলে? ‘ বললাম আমি।
তাহরীম: একজন আছে যার বিড়াল অনেক পছন্দ।সে আমার অনেক কাছের মানুষ আর তার পছন্দ মানেই আমার পছন্দ।তাই কিছু বলিনি।
আফরীন: ( না অন্য কারোর পছন্দ আপনার পছন্দ না।আমার পছন্দই আপনার পছন্দ আর আমার পছন্দ আপনি পছন্দ করতে বাধ্য কারণ আমি আপনার স্ত্রী ) কে সে?
তাহরীম: যে নেই তার কথা বলে লাভ নেই । অতীত কে আকড়ে ধরে নয় বর্তমান কে নিয়ে বাঁচতে শিখুন।এখন কথা না বাড়িয়ে বাড়ি চলুন।গিয়ে তো আবার সুশি কে খেতে দিতে হবে।
আফরীন: ও হ্যাঁ হ্যাঁ…
তারপর আমরা যেভাবে এসেছিলাম ঠিক সেভাবেই ফিরে গেলাম বাসে করে।বাড়ি পৌঁছতে আমাদের প্রায় আরও আধা ঘণ্টা লাগে। এপার্টমেন্টে এসে লিফট দিয়ে উঠে বাড়ির দরজায় নক করতেই নিহা এসে দরজা খুলে দেয়। নিহা দরজা খুলতেই আমি সুশি কে নামিয়ে দেই আর সুশি দৌড় দেয়।তারপর যখন নিহার দিকে চোখ যায় তখন আমার ভ্রু অটোমেটিকলি কুচকে যায় কারণ নিহা থমথমে মুখে দাড়িয়ে আছে। ব্যপারটা ডাক্তার সাহেবও খেয়াল করলেন তাই বললেন,
তাহরীম: কিরে নিহা মুখটা বাংলার পাঁচের মত করেছিস কেন?
নিহা: সেটা তো ঘরে এলেই বুঝবে। যাদের নিয়ে এত কাহিনী করেছিলে তোমার আর ভাবীর বিয়ের দিন তারাই এসে হাজির।
আমি নিহার কথা শুনে চোখ দুটো ওর দিকে ছোটো ছোট করে তাকাই কারণ ওর কথার মানে কিছুই বুঝিনি।আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাড়ি ঢুকে বসার ঘরের দিকে গেলাম কিন্তু বসার ঘরে গিয়ে যা দেখলাম তারপর আমার সমস্ত ভূমণ্ডল কেপে উঠছে।যাদের দেখেছি তাদের কখনোই আশা করিনি আমি এখানে।
আমি দেখলাম ফিরোজা বেগম আর বাবা খুব সুন্দর ভাবে মিষ্টি হেসে বাবা আর মার সঙ্গে কথা বলছে।বাবা মায়ের থেকে খানিকটা তফাতে বসে তাহসান ভাই আর রিমা ভাবীও কিছুক্ষণ পরপর ওদের কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ না না করে উঠছে।আমি বাবা আর ফিরোজা বেগম কে একেবারেই আশা করিনি এখন।অস্ফুটে আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো ‘ বাবা ‘।
বাবার শ্রবণশক্তি প্রচন্ড তীক্ষ্ণ তাই আমি এত আস্তে বলা সত্ত্বেও বাবার কানে আমার ডাকটা গেলো।বাবা আমার দিকে মুখ তুলে তাকালো।আমায় দেখে বাবার মুখে এক চওড়া হাসি খেলে গেলো কিন্তু সেই হাসি মুহূর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেলো কাউকে দেখে।বাবার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমি আমার পিছনে তাকালাম।পিছন ফিরে দেখি ডাক্তার সাহেব বিস্ফারিত নয়নে তাকিয়ে আছেন বাবার দিকে।আমি মাঝ থেকে সরে গিয়ে ওদের দুজনের মাঝে দাড়ালাম।
আমার কেন জানি মনে হলো দুজনেই তাদের দৃষ্টির মাধ্যমে এক অদৃশ্য সংঘর্ষ করছে।দুজনের তীক্ষ্ণ নজর একে অপরের দিকে।দুজনের মুখেই চাপা রাগ ভেসে উঠেছে।আমি ব্যাপারটা ঘুরানোর জন্য বাবা কে বললাম,
আফরীন: বাবা তুমি এখানে? তুমি এই বাড়ির ঠিকানা কি করে পেলে?
আমার কথায় বাবা অদ্ভুত ভাবে হাসলো।আমার দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বললো,
আনসারী: শুনলাম মেয়ের বিয়ে হয়েছে তাই আর বসে থাকতে পারলাম না,সাথে সাথে চলে এলাম আর আমি কাজী আনসারী।আমি পারিনা এমন কিছু নেই।পেয়েছি কোনোভাবে এই বাড়ির ঠিকানা।
আফরীন: কখন এলে? বাবা একবার বলেও এলেনা।
আনসারী: ভেবেছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দিবো কিন্তু এখানে এসে তো নিজেই সারপ্রাইজ পেয়ে গেলাম। তোর জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি কিন্তু তোর তো আসার নামই নেই। শুনলাম জামাই কে নিয়ে বেড়িয়েছিস আর তোদের এখন ফিরতে ফিরতে দেখ দুপুর দুটো বেজে গেলো।
‘ হয়েছে হয়েছে বাবা মেয়ের কথা অনেক হয়েছে।এখন আমরা সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করি তারপর আফরিন তুই বেয়াই বেয়াইন কে আমাদের ঘরটা ঘুরিয়ে দেখাস।এখন খেতে চলো সবাই। ‘ বললো মা।
মায়ের কথায় আমি আলতো মাথা নেড়ে সায় দিলাম।তারপর আমরা সবাই খেতে বসলাম। নিহা আর ভাবী মিলে বাবা আর ফিরোজা বেগমের আসার উপলক্ষে পোলাও আর গরুর গোশত রান্না করেছে।আমরা খাওয়া শুরু করলাম।খেতে খেতে মা বললো,
মা: বেয়াই বেয়াইন আপনারা কিন্তু আমাদের বাড়িতে সামনে অনুষ্ঠান হবে তখন আসবেন।আর কয়দিন পরেই তাহরীম আর আফরিনের বিয়ের একমাস হবে তাই আমরা একটু খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করবো।
আনসারি: আপনি যখন বলেছেন বেয়াইন তখন আসতে তো হবে বলে বাবা এক অদ্ভুত হাসি দিল। ব্যপারটা আমার বা ডাক্তার সাহেব কারোরই চোখ এড়ালো না।আমি বাবার এমন হাসির কারণ না বুঝলেও ডাক্তার সাহেব অজানা এক কারণে চোখ মুখ শক্ত করে নিলেন।
তারপর আমরা খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই বসার ঘরে জড়ো হলো।আমি বাবা মাকে আমাদের বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি। বাড়ি ঘুরে দেখাতে দেখাতেই হঠাৎ বাবার চোখ যায় সুশির উপর।বাবা ভ্রু দুটো কুচকে বললো,
আনসারি: বিড়াল কেন বাড়িতে?
আফরিন: ও ও হলো সুশি।কাল পেয়েছিলাম রাস্তায় তারপর বাড়ি নিয়ে এলাম।
আনসারি: তোর জামাই কিছু বলেনি বিড়াল দেখে?
আফরিন: কি বলবে? কিছুই বলেনি….
আমার কথা শুনে মনে হলো বাবা রাগ হলো।চোখ,মুখ শক্ত করে মুখে মেকি হাসি টেনে বললো,
আনসারি: তাহলে নিচে চল।
আমি আর বাবা কে ঘাটলাম না কারণ বাবা আর ডাক্তার সাহেব একই ধাঁচের।যখন তখন রেগে যান উনারা। হঠাৎ চোখ গেলো ফিরোজা বেগমের দিকে।উনি ইসারায় কিছু বলার চেষ্টা করছেন।আমি উনার ইসারা বুঝতে পারলাম না।আমরা নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফিরোজা বেগম বললেন,
ফিরোজা: আফরিনের বাবা আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।
ফিরোজা বেগমের কথা শুনে বাবা ভ্রু কুচকে তাকালো ফিরোজা বেগমের দিকে তারপর বললো,
আনসারি: আচ্ছা তাহলে আফরিন কে নিয়ে যাও সাথে।
ফিরোজা বেগম দ্রুত মাথা নাড়লেন আর বাবা নিচে চলে গেলো।আমি ফিরোজা বেগম কে বললাম চলুন বাথরুম দেখিয়ে দি বলে এগিয়ে যেতে নিলাম কিন্তু ফিরোজা বেগম আমার হাত ধরে আমায় আটকে দিলেন।আমি উনার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালে উনি বললেন,
ফিরোজা: আমি তোকে অনেক মেরেছি জানি কিন্তু এখন যা বলছি তা তোর ভালোর জন্য বলছি।আমার কথা ভালো করে শুন নাহলে তোর সংসার ভাঙতে দুই মিনিট সময় লাগবে না।
আমি ফিরোজা বেগমের কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তার দিকে তাকালাম কারণ তার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না।উনি আমাকে আবারও বললেন,
ফিরোজা: দেখ আফরিন তোর বাবাকে তুই যতটা ভালো মনে করিস সে অত ভালো না।তোর বাবা তোর আর তাহরীমের বিয়ে মেনে নেয় নী।তোর বাবা শুধু সুযোগ খুঁজছে।সুযোগ পেলেই তোর আর তাহরীমের সংসার ভেঙে দিবে।আমি নিজে শুনেছি উনাকে বলতে যে উনার যদি তাহরীমকে মারাও লাগে উনি মারবেন কিন্তু তোদের সংসার হতে দিবেন না।
আমার মাথায় যেন বাজ পড়লো ফিরোজা বেগমের কথায়।আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না ফিরোজা বেগমের কথা।আমি চোখ মুখ শক্ত করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আফরিন: আপনি কি পেয়েছেন টা কি?এতদিন আমায় কষ্টে রেখেছেন তাও শান্তি পেলেন না,আর এখন আবার আমার আর আমার বাবার মধ্যে ঝামেলা করতে চাইছেন?আপনি কি মনে করেছেন আমি আপনাকে বিশ্বাস করবো?কখনোই না….
ফিরোজা: কিন্তু আফরিন…
আফরিন: আপনি আমার আম্মুর জায়গা নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু কোনোদিন আম্মু হয়ে উঠতে পারেন নী আর পারবেনও না।তাই আমার আম্মু হওয়ার চেষ্টা করবেন না আর বাবা আর আমার মধ্যে ঝামেলা করার চেষ্টা তো একদমই করবেন না। Stay away from us…. বলেই আমি ধুপধাপ পায়ে নিচে চলে এলাম। ফিরোজা বেগমের কথা শুনে মাথাটা পুরোই নষ্ট হয়ে গেছে।মহিলার সাহস কি করে হয় আমার বাবাকে নিয়ে এসব বলার? মানলাম বাবা আমায় দেখতে পারতো না কিন্তু এখন তো সে একজন বাবা হওয়ার দায়িত্ব পালন করছে তাহলে তার এত জ্বলছে কেন? এসব মহিলাকে আমার ভালো করেই চিনা আছে। উনারা অন্যের সুখ সহ্য করতে পারে না।
আমি নিচে আসার কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরোজা বেগমও নিচে এলেন।নিচে এসে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন কিন্তু আমি তার দিক থেকে আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম।এবার বাবা বললো,
আনসারি: তাহলে ফিরোজা চলো বাড়ি ফেরা যাক। বেয়াই বেয়াইন আজ আসি তাহলে বলে বাবা উঠে দাড়ালো ।
মা: কিন্তু বেয়াই সাহেব এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন? আজকের দিনটা থেকে যান?
আনসারি: না বেয়াইন এমনটা হয় না।মেয়ের শশুর বাড়িতে থাকতে নেই বাবা মায়ের।
বাবার কথায় আর কথা বাড়ালো না কেউ।এবার বাবা আমার দিকে এগিয়ে এসে মাথায় হাত রেখে বলল,
আনসারি: আমার সৌভাগ্য এই যে মেয়ের বিয়ের দিন বিয়েতে থেকে মেয়ের কান্না করা মুখ দেখা হলো না।
বাবার কথা শুনে আমি কাদতে কাদতে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম।সত্যি বলতে আমার এখন আসলেই মনে হচ্ছে আমার বিয়ের পর আমাকে বিদায় করা হচ্ছে।আমি বাবাকে বললাম,
আফরিন: বাবা তুমি থেকে যাও না…
আনসারি: আবার আসবো কিন্তু আজ যে থাকতে পারছি না।তুই তো জানিস আমার কত কাজ থাকে।
আফরিন: সারাজীবনই তো তোমার কাজের কথা শুনলাম। বুড়ো হয়ে গেলেও তোমার কাজ শেষ হবে না।
আমার কথা শুনে বাবা মুচকি হেসে বলল,
আনসারি: চিন্তা করিস না বুড়ো হয়ে গেলে তোর ছেলেকে আমার ভাগের কাজ দিয়ে বারান্দায় বসে তোর সঙ্গে চা খাবো।
বাবার কথা শুনে আমার গাল রক্তিম আভা ধারণ করলো।আমি ভাবতে লাগলাম বাবা আমায় কত ভালোবাসে।ফিরোজা বেগম শুধু শুধুই আমার বাবাকে দোষ দিচ্ছিল, উনার তো কাজই অন্যের সুখে আগুন লাগানো।
বাবা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
আনসারি: চলো ফিরোজা… আসি তাহলে বেয়াই বেয়াইন।
তারপর বাবা সবাইকে বিদায় জানিয়ে ফিরোজা বেগম কে নিয়ে চলে গেলো।
‘ আমার বাবাকে আপনার কেন পছন্দ নয় ডাক্তার সাহেব? ‘
ডাক্তার সাহেব সন্ধ্যাবেলা বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন।আমি খেয়াল করলাম উনার মুড খারাপ থাকলেই সিগারেট খান।তখনই কথাগুলো বললাম আমি।
আমার কথা শুনে চকিতে ডাক্তার সাহেব আমার দিকে ফিরে তাকালেন তারপর বললেন,
তাহরীম: আপনার কেন মনে হলো আপনার বাবাকে আমার পছন্দ না?
আফরীন: আজকে আমি দেখেছি আপনি বাবাকে দেখলেই চোখ গরম করেন।আর আপনি আমাকে হয় আপনি ডাকুন নয় তুমি ডাকুন? দুটোই কেন ডাকেন? যেকোনো একটা ডাকবেন।
তাহরীম: ভুল দেখেছেন,আপনার চোখের ভুল ওটা।আর আমি দুটো ডাকলে কি সমস্যা?
আফরিন: হতে পারে।অবশ্যই সমস্যা, আমি একটা ডাকলে আপনি কেন দুটো ডাকবেন?আপনার কথায় আমি খালি কনফিউজড হই।
তাহরীম: ওকে ফাইন একটা ডাকবো।আজ থেকে আপনি ডাকবো।
আফরীন: আপনি কেন তুমি ডাকবেন।আমি কি আপনার বড় যে আমাকে আপনি ডাকেন?
তাহরীম: আপনাকে আপনিতেই ভালো সাজে।
আফরীন: আপনি চাইলেই তো কবি হতে পারতেন। হুদাই কামে কষ্ট করে ডাক্তার হতে গেলেন।
তাহরীম: ডাক্তার না হলে তো একজন কে পেতামই না।তাই আমার ডাক্তার হওয়াটা সার্থক।
এরপর আর কথা বাড়ালাম না।তারপর আমরা রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে উঠেই রোজকার মত হসপিটালে দৌড় দিলাম।সুশি কে নিহার কাছেই রেখে গেলাম।আজ আবার সুশি নিজ ইচ্ছায় নিহার কাছে চলে গেলো।আমি আর ডাক্তার সাহেব একসাথে গেলেও হসপিটালের কাছে গিয়ে আলাদা হয়ে গেলাম।
ডাক্তার সাহেব আমার পরে ঢুকবেন হসপিটালে।কিন্তু হসপিটালে ঢুকেই দেখলাম সবাই আমার দিকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে বলা বাহুল্য সেই দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্যের হাসি প্রকাশ পাচ্ছে।আমি সবার এই দৃষ্টির মানে বুঝলাম না।আমি নিজের মতো নিজে হাঁটছি।কিছুক্ষণ পর নিজের পিছনে কারোর হাঁটার আভাস পেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম ডাক্তার সাহেব আসছেন আমার পিছন পিছন।
আমাদের কে একসঙ্গে আগে পিছে হাঁটতে দেখে সবার দৃষ্টি যেন আরও অসস্তিকর হয়ে উঠলো।আমি বুঝতে পারছিনা এসব কি হচ্ছে।তবুও আমি এসব পাত্তা না দিয়ে ক্লাসে চলে এলাম।ক্লাসে এসে আমার নির্ধারিত সিটে বসতেই আমার পাশে বসা মিরা উঠে পিছনে চলে গেল।আমি ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি।সবাই আমাকে কেন এড়িয়ে যাচ্ছে সেটাই বুঝতে পারলাম না। একই ভাবে আফরা, আর্যাল, ফারহাজ, ফারাহ, ইরহান ওরাও অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
আমি ওদের কিছু বলবো তার আগেই ক্লাসে ডাক্তার সাহেব প্রবেশ করলেন।এখন উনার ক্লাস।উনি ক্লাসে এসেই সরাসরি পড়ায় মনযোগ দিলেন কিন্তু আজ কেউই উনার পড়ায় মন দিচ্ছে না।সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে ব্যস্ত।এমন সময় ক্লাসে প্রবেশ করলেন হসপিটালের ডিন,ডক্টর ফারহান আর মির্জা আঙ্কেল।
‘ মিস জান্নাতুল আফরিন কাজী আপনাকে কলেজ থেকে রাস্টিকেট করা হচ্ছে ‘ বললেন কলেজ ডিন।
~ চলবে ইনশাল্লাহ্