তুমি নামক যন্ত্রনা পর্ব-০৭

0
1169

#তুমি নামক যন্ত্রনা
#লেখনীতেঃহৃদিতা ইসলাম কথা
পর্বঃ৭

ভয়ে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে।আমার হাত পা অস্বাভাবিক ভাবে থরথর করে কাঁপছে। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা।কিন্তু সামনের মানুষটার হুশ নেই।সে একইভাবে ছেলেগুলোকে পি*টি*য়ে যাচ্ছে। একেকটার অবস্থা ভিষন খারাপ।হাত, পা, মাথা,ঠোঁট কেটে র*ক্ত পড়ছে।কিন্তু সে মানুষটি নির্বিকারভাবে চারটে ছেলেকে পি*টা*চ্ছে।এতক্ষণ হাতে মারলে এখন ওদেরকে মাটিতে ফেলে ইচ্ছে মতো আঘাত করছে।ভয়ংকর দেখাচ্ছে তাকে।চোখদুটো ভিষন লাল বর্ন ধারন করেছে।যেন ওই চোখের আ*গু*নে ভ*স্ম করে দেবে সব।ছেলেগুলোর অবস্থা ভিষন খারাপ দুটো অলরেডি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।তারপরও মা*র*ছে।আমি কিছু বলতে পারছি না।বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।জীবনে কোনদিন এরকম কোন কিছুর সম্মুখীন হতে হয়নি।খুব বেশি ভযে মুখে হাত চেপে ফুপিয়ে কাঁদছি।যখন ওদের মারার পর র*ক্তা*র*ক্তি অবস্থা হয়েছিল।ছাড়াতে গিয়েছিলাম।তবে ওনার চোখ আর রাগের সামনে টিকতে পারিনি।ভিষন রাগে ছুড়ে মে*রে*ছিলেন আমায়।

এইতো ঘন্টাখানেক আগের কথা,
ভাইয়া হিরোদের মত গিটার বাজাতে বাজাতে এন্ট্রি নিল।তারপর সুন্দর একটা গান গাইলো আপুকে নিয়ে।
গানের মাধ্যমে তার মনের সকল অনুভূতি ব্যক্ত করলো।আপুর চারপাশে ঘুরে ঘুরে গান গাইলো।গান গাওয়া শেষে আপুর সামনে হাটু গেড়ে বসে তাকে প্রোপোজ করলো।আপু খুশি মনে হাত এগিয়ে দিল।তার চোখেমুখে খুশি উপচে পড়ছে। তারপর কেক কাটা হলো।আপুকে সবাইকে কেক খাইয়ে দিল। খাওয়া দাওয়ার পরে সবাই গিফট দিল আপুকে।এরপর শুরু হলো পার্টি।একজন এনাউন্স করলো আপু আর ভাইয়াকে কাপল ডান্স করতে হবে।তারা দুজন কাপল ডান্স করলো।আরো কয়েকজন কাপল এলো তাদের সাথে।স্রোত ভাইয়ার খালাতো বোন ও বোন জামাইরা ও আছে।মিউজিক শুরু হলো সবাই ডান্স করছে।আমি এককোনে দাড়িয়ে ডান্স দেখছি।হঠাৎ চোখ পড়লো স্রোত ভাইয়ার উপর। দেখলাম স্রোত ভাইয়া ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।ভয় পেলাম খানিকটা।এই লোকের এই ভয়ানক চাহনিই যথেষ্ট কারো প্রা*ন নেওয়ার জন্য। তার এমন দৃষ্টির মানে বোধগম্য হলো না আমার।না বুঝে চোখমুখ কুচকে তাকিয়ে আছি আমি।বোঝার চেষ্টা করছি।তবে ধুর! আমার মান্ধাতার আমলে ঢিলা মস্তিষ্ক যেন পন করেছে। আমি চাইলেও বুঝবো না।না বোঝার ভান করবো।তোকে ঝাড়ি খাওয়াতে আমার বেশ লাগেরে কথা! বেশ লাগে! হতাশ হলাম আমি।আমারই মস্তিষ্ক আমার সাথে বেইমানি করে। তখনই অনুভব করলাম এই মস্ত বড় পৃথিবীতে কেউ আমার না।আমি একা ভিষন একা।ঝুপ করেই মনে আষাঢ়ের মেঘেরা ভিড়ে করলো।

এই ঝাকঝমকপুর্ন পরিবেশ বিষাক্ত লাগতে লাগলো।একা থাকতে ইচ্ছে হলো।না জানে কোন বিপত্তি আবার আমার ঘাড়ে চড়লো বলে।বাগানের যে দিকটায় মানুষজন নেই সেখানে চলে এলাম।একটা বেঞ্চ পাতা আছে। তাতে ধপ করে বসে পড়লাম।ভাবছি! আমি এমন কি করলাম যার জন্য স্রোত ভাইয়া আমার উপর ক্ষেপে আছে।ঠিক সে সময় আমার পাশে এসে বসলো পিচ্চু।ও আজ স্রোত ভাইয়ার পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচড পাঞ্জাবি পড়েছে।তবে রঙ ভিন্ন।কাঁচা হলুদ রঙের পাঞ্জাবিতে এই বজ্জাত পিচ্চুটাকে বেশ লাগছে। আমি একবার ওকে দেখে আবারো থুতনিতে হাত রেখে গভীর ভাবনায় মগ্ন হলাম।ও একটু ভাব নিয়ে বসে বললো,

— এখানে কি করছিস আপু? আম্মু তোকে ডাকছে।

আমি বিরক্ত হলাম বললাম,

— কই আমি তো শুনলাম না।

— কারন তুই কালা হয়ে গেছিস আপু ডাক্তার দেখা।নাহলে এমন হবে। বিয়েতে এসে বর তোর কালা হওয়ার নিউজ পেলে বিয়ে আর তোকে দুটো ফেলেই চম্পট মারবে।তাই আগে ভাগেই ডাক্তার দেখিয়ে নে।নইরে কপালে বর জুটবে না তোর।

বলেই হনহনিয়ে চলে গেল ও।আমি ওর যাওয়ার পানে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।৯ বছরের একটা বাচ্চা সে কি ভাবটাই না নিলো আমার সাথে। আবার কথাও শুনিয়ে গেল।ওর কথার বিপরীতে আমি বলার কিছুই খুজে পাই না।ওর আর আমার সম্পর্ক আদায় কাচকলায়।এইটুকু পিচ্চি টা জন্মের পর থেকেই জ্বালিয়ে খায় আমায়।কারো কোলে ও হিসু করবে না।অথচ আমি কোলে তুললেই হিসু করে দিত।তখন থেকেই আমরা একে অপরের শত্রু। যাকে বলে অঘোষিত শত্রুতা আর অদৃশ্য যুদ্ধ চলে আমাদের মাঝে। পিচ্চুর উপর এক বালতি ভরতি রাগ নিয়েই মার কাছে গেলাম।

ফাংশনে তাকে খুঁজে যাওয়ার সময় আবার আমার বজ্জাত বিচ্ছু ভাইটার সাথে দেখা হলো ও বললো,

— কোথায় যাচ্ছিস তুই আপু? আম্মু তো বাড়ির ভিতরে।

ওর কথা বিশ্বাস স্টেজের ওইদিক না গিয়ে তাই বাড়ির ভিতরে গেলাম।সবজায়গা খুঁজতে লাগলাম।মনে হচ্ছে না বাড়ির ভিতরে কেউ আছে।পরে ভাবলাম হডতো আম্মু রুমে আছে তাই সেদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ আলো নিভে গেল।হতচকিত হয়ে গেলাম আমি। এরমধ্যেই কেউ আমার লেহেঙ্গার ওড়না মুঠোয় পুরে পেছন থেকে টান লাগালো।দুপা পিছিয়ে গেলাম তৎক্ষনাৎ। গিয়ে ঠেকলাম কারো প্রসস্থ বুকের মাঝে।বিদ্যুৎ খেলে গেল আমার সারা শরীরে।চট জলদি সেখান সরে আসতে চাইলে বুঝতে পারলাম সে আমার পেটের কোথাও তার এক আঙুল স্পর্শ করে রেখেছে।আর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

— সবাইকে তোর ফর্সা পেট দেখানোর খুব ইচ্ছে তাই না।তাই এভাবে পেট দেখিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।এসব সামলাতে না পারলে পরেছিস কেন? তোকে তো তখনই বলেছি যে এসব চেঞ্জ করে নিচে আসবি।আমার বারন কেন শুনলি না।

আস্তে অথচ ভিষন ভয়ানক আর ধারালো কন্ঠস্বর শুনে আমার বুঝতে বাকি নেই মানুষটি আসলে কে?এখন বুঝতে পারছি।ওই সময় ওভাবে ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে কেন তাকিয়ো ছিল।তবে আমার তার এমন আচরনে বেশ রাগ হলো।তাই রাগ নিয়ে ঝাঝালো কন্ঠে বললাম,

— সবসময় কিছু না জেনে না বুঝেই বকাঝকা করেন আমায়।আমি ইচ্ছে করে করিনি ওটা অজান্তেই সরে গেছে।আর এসব ড্রেস আমি পরিনা।শুদুমাত্র আপু খুশি হয়ে পরতে বলেছিল বলেই পড়েছি।আমি ঠিকমতো আটকে বেরিয়েছি কিন্তু কখন এমন হলো বুঝতে পারিনি।

— বুঝতে পারিস নি মানে কি? নিজের খেয়াল রাখতে পারিস না।সব ঠিক আছে কিনা দেখে রাখতে পারিস না।

— আমি কি জানতাম এমন কিছু হবে।আমার চোখ কি ওদিকে গেছিলো।এক……এক মিনিট। আপনি কি করে দেখলেন ওটা।তারমানে আপনি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। আমাকে দেখছিলেন তাও ওভাবে…..
ছিহঃ ছিহঃ স্রোত ভাইয়া। আপনার নজর এত খারাপ।আপনি মেয়েদেরকে ওই নজরে ওভাবে দেখেন।ছিহঃ ছিহঃ আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি আপনি এরকম একজন খারাপ মানুষ হবেন।দিদুন তো কত প্রশংসা করে আপনার।আপনি এই আপনি সেই! আপনি মেয়েদের দিকে তাকান না নম্র ভদ্র ছেলে।এই তার নমুনা। আপনি মেয়েদের শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।তাও আবার কোথায়….ছিহঃ বলতেও বাধছে আমার।

আমি একদমে গড়গড় করে সব বলে ফেললাম।এতগুলো কথা একসাথে বলে বেশ হাপিযে গেছি।একটু শ্বাস ছেড়ে নিশ্বাস নিতে যাবো তৎক্ষনাৎ স্রোত ভাইয়া হাত টেনে ঘুরিয়ে তার বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন।এবার দুহাত ভিষন শক্তভাবে ধরে আছে।ভিষন ব্যাথায় ” আহ” শব্দ করে উঠলাম।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোড়ামুড়ি করছি।এভাবে এই অবস্থায় দম বন্ধ লাগছে আমার।স্রোত ভাইয়ার কাছে অনেকবার থাকলেও এবারের মত কখনোই ছিলাম না।আমার মাঝে নুন্যতম দুরত্ব নেই।একদম তার বুকের মাঝে আটকে আছি।এমন স্পর্শে চোখে জল চলে এলো আমার।উনি দাঁতে দাঁত চেপে তেজি গলায় বললো,

— তুই কি আমাকে দুশ্চরিত্র বলছিস নাকি প্রমান করতে চাইছিস।তোর যদি তাই মনে হয় তবে হ্যাঁ আমি দুশ্চরিত্র। মেয়েদের দিকে বাজে নজরে তাকাই তোর দিকেও ওই নজরে তাকিয়েছে।চাইলে আরও অনেক কিছুই করতে পারি।তবে তুই কিছুই করতে পারবি না।কিচ্ছু না! মাইন্ড ইট! আমি আমার কোন কাজের জন্য কাউকে সাফাই দেই না! তোকে তো একদমই না।

বলেই ছুড়ে মারলেন আমায়।আমার চোখ থেকে জল পড়ছে।উনি হনহনিয়ে প্রচন্ড রাগ নিয়ে চলে গেলেন।আর আমি কাঁদতে কাঁদতে বাইরে ছুটে এলাম।ছুটতে ছুটতে বাড়ির বাইরে রাস্তায় চলে এসেছি।ছুটেই চলেছি! ছুটেই চলেছি!থামার নাম নাই! কোথায় যাচ্ছি? কেন যাচ্ছি? জানি না! শুধু এইটুকু জানি আমি এখানে থাকবো না। কিছুতেই থাকবো না।কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে রাস্তায় হাটু গেড়ে বসে পড়লাম।স্রোত ভাইয়া কি করে পারলেন আমাকে ওতগুলো কথা শোনাতে। তাও এত জঘন্য কথা। আমিতো ইচ্ছে করে কিছু করিনি।সবসময়! সবসময় আমার সাথে এমন করেন উনি।কেন করেন এমন? আমার বুঝি কষ্ট হয় না।এই মানুষটা আমার জীবনে আসার পর থেকে, পরিচয় হওয়ার পর থেকে পুরো জীবনটাই বদলে গেছে আমার।বিষিয়ে গেছে।বিষাক্ত অনুভূতিতে ছেয়ে গেছে শরীর মন।খানিকক্ষণ কাঁদার পর অনুভব করলাম আমার আশেপাশে কেউ আছে।চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম পেলাম। চারটা ছেলে।কুচকুচে কালো গায়ের রঙের। দেখতে পুরাই গাজাখোর। কেমন হেলেদুলে ঢলে পড়ছে।মনে হচ্ছে নেশা করেছে।গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বেরচ্ছে। আমি নাকে হাত দিলাম।উঠে দাড়িয়ে ফিরে আসার জন্য পা বাড়াতেই দেখলাম। চারজন ঘিরে ধরেছে আমায়।আমার চারপাশে ঘুরছে।আমি মধ্যে খানে বন্দি।ভয়েরা ঝেকে বসলো মনে।আজ কি তবে কোন অঘটন ঘটে যাবে আমার সাথে! আমি তবুও সাহস হারালাম না।ভয় পেয়েছি তা প্রকাশ করলাম না।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলাম।

আমি গলার স্বর খাদে ফেলে বললাম,
— যেতে দিন আমায়।

— কেন মামনি চলে যাবে কেন? আমরা আছি তো! একা একা কোথায় যাবে আমাদের সাথে চলো।

কথাটা বলেই বিদঘুটে হাসি হাসল।আরেকটা ছেলে বললো,

— তোমার সব কষ্ট দুর করে দেব।আমাদের সাথে চলো যা চাই তাই পাবা।অনেক মজা করবো তোমার সাথে।

বলেই বিশ্রী হাসলো। আমি কেঁদেই চলেছি।সবাই আমাকে খারাপ কথা বলে।আমি কি এতটাই খারাপ।কি এমন খারাপ করেছি আমি। সবাই আমাকে নিয়ে এত বাজে কথা বলছে।ভিতরে ভিতরে রাগ হলো আমার।তাদের এমন জঘন্য কথা শুনে রাগটাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে উগড়ে দিলাম।তেজি কন্ঠে বললাম,

— একদম বাজে কথা বলেবে না আমাকে নিয়ে।

আমার কথা শুনে অন্য আরেকটা ছেলে বললো,

–সালা দেখছোস নি কি ঝাল মাইয়াডার। এইডারে দিয়া তো সেই মজা হইবো।

কথাটা বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সবাই।আরেসজন বললো,
— হ রে। এরে তো লওয়া যাইতে হইবো।এই চল আমাগো সাথে।

বলেই আমার হাত ধরতে চাইছিলো তখনই কেউ এসে ওই হাতটা মুচড়ে দিলো।আমি একবার হাতের দিকে তাকিয়ে তারপর হাতের মালিকের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দৃষ্টিপাত করলাম। স্রোত ভাইয়া। ভিষনভাবে রেগে আছে।চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

উনি হাতটা মুচড়ে দিতেই ছেলেটা গগনবিদারী চিৎকার দিল।বাকিরা গর্জন দিয়ে উঠলো।

–ওই কে রে তুই,? আমাগো শিকার আর শিকারির মাঝখানে আইছোস! ভালোই ভালোই চইলা যা।নয়তো তোরে মা*ই*রা লা*শ পুইতা দিমু কেউ টের পাইবো না।বুঝলি।
যা ফুট এইখান থাইকা।

স্রোত ভাইয়া কিছু না বলেই লা*থি মা*র*লো কথা বলতে থাকা ছেলেটাকে ছিটকে গিয়ে দুরে পড়লো।
আর হাত ধরে থাকা ছেলেটার হাতটা শক্ত করে আবারো মুচড়ে দিল।মটমট করে উঠলো।সে চিৎকার করছে।অন্য হাত প্রতিহত করার চেষ্টা করতেই।সেটাকেও একই রকম ভাবে দুই- তিনটা মোচড় দিল।তার এমন মা* র দেখে বাকি দুজন বেশ ভয় পেল।ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।এ*টা*ক করবে কি করবে না দিদ্বাদন্দে ভুগছে।এক পর্যায়ে দিধাদন্দ্ব কাটিয়ে এ*টা*ক করলো।স্রোত ভাইয়া একহাতে ওই ছেলেটার দুহাত ধরে একটাকে লা*থি মা*রলো। অপরটাকে ঘু*ষি মা*রলো।দুটোই কুপোকাত।এরপর তিনজন একসাথে ছুটে এলো।ওটার দুহাত ধরে রেখেই বাকিগুলোকে আচ্ছামত মা* র লাগালো।এক সময় তাদের হাল বেহাল করে ছাড়লো।তারপর রাস্তার একপাশের থেকে একটা লোহার রড তুলে নিয়ে মা*রতে লাগলো।ভয় পেয়ে ঘাবড়ে গেলাম আমি।হডতো ছেলেগুলোকে মেরেই ফেলবে।আটকাতে গেলে আমাকেই ধাক্কা দিল।তবে নিজেকে সামলে নিয়েছি।

এই ছেলেগুলোর থেকেই বেশি ভয় এখন আমার স্রোত ভাইয়াকে লাগছে।মানুষ এতটা হিং*স্র আর নৃ*শং*স কি করে হতে পারে। আধঘন্টা একটানা মা*র খাবার পর সব কটা যখন জ্ঞান হারালো। উনি লোহার লম্বা রডটা ছুড়ে ফেললেন।মনে হচ্ছে উনার রাগ এখনো মেটেনি।পা দিয়ে দু চারটে লা*থি মারলেন।তারপর আমার দিকে ফিরে চাইলেন।তার চোখমুখ দেখে আমার আত্মা বেরিয়ে যাওয়ার অবস্থা। আমি উনাকে দেখে দুপা পিছিয়ে গেলাম।উনি তেড়ে এসে আমার হাত ভিষন শক্ত করে চেপে ধরে পিছনে মুড়িয়ে ধরলেন।ব্যাথায় প্রান ওষ্ঠাগত। মনে হচ্ছে হাড় মাংস সব আলাদা হয়ে যাবে।ভিষন যন্ত্রণায় বেশ জোরে কেদে দিলাম আমি।তবে তার কোন ভাবাবেগ নেই।তিনি সেভাবেই আমাকে ধরে নিজের কাছে এনে তেজি কন্ঠে বললেন,

— কেন এসেছিস এখানে বল?বাড়ি থেকে কেন বেরিয়েছিলি?কাউকে কিছু না বলে পার্টি থেকে হুট করে গায়েব হয়ে গেলি কেন?বল!

তার ভিষন ভয়ানক চিৎকার আর হাতের ব্যাথার কারনে চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলাম।এসব কিছু সহ্য করতে না পারে নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলাম।গিয়ে পড়লাম স্রোত ভাইয়ার বুকে।আর কিছু মনে নেই আমার।

অপরদিকে কথার জ্ঞান হারানোর পর স্রোত কিয়দক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। ও কি করছিলো বুঝতে পারে।হুশ ফিরে ওর।কথা যে ভিষন ভডে জ্ঞান হারিয়েছে তা বুঝতে পেরে নিজের ওপর রাগে ফেটে পরে ও।ভিষন রাগে ওর কোন জ্ঞান ছিল না যে ও কি করছে।ও কথাকে আঘাত করছে তা এতক্ষণে বুঝতে না পারলেও এখন ও বুঝতে পারছে।আর তা বোঝার সাথে সাথেই ও ওর ধরে রাখা হাতে কথাকে আগলে নেয়।অন্য হাতে ওর গালে হালকা বাড়ি মারে যাতে ওর জ্ঞান ফিরে।তবে না কাজ হচ্ছে না।ভিষন ভয় পেয়েছে মেয়েটা।এতক্ষণের সবকিছু নিজের চোখে দেখার পর ওর জ্ঞান হারানোটা অস্বাভাবিক কিছু না।তবে এতক্ষণ যে জ্ঞান হারায়নি সেটাই অস্বাভাবিক।ওকে একহাতে আগলে ছেলেগুলোর দিকে তাকালো।ছেলেগুলো ওভাবেই পড়ে আছে।একপলক ওদেরকে দেখে ও কাউকে একটা কল করে। তারপর কথাকে কোলে তুলে নেয়।আর ফিরে যায় নিজ গন্তব্যে।বাড়ির পিছন দিকের গেইট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে কথার রুমে চলে যায়। সেখানে গিয়ে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওর মাথার পাশে বসে পড়ে।ডক্টরকে কল করলে সে বলে যদি ভয় পেয়ে থাকে তবে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে চিন্তার কিছু নেই।ও কথাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষন করে যে কথা কোথাও ব্যাথা পেয়েছে কিনা।কিন্তু না ব্যাথা পাইনি। ওকে বিশ্রাম নিতে দেওয়া প্রয়োজন।
ওর গায়ে ভালো করে কাথা টেনে দিয়ে বেরিয়ে গেল।বাইরে যাওয়া প্রয়োজন। দরজার কাছে এসে থমকে গেল।পিছন ফিরে একপলক দেখে নিল ওকে। এই মেয়েটার মাঝে এমন কি আছে? যা ওকে এতটা টানে।এি পিচ্চি মেয়েটার জন্য রাতারাতি ওর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে সারাক্ষণ ই দেখতে ইচ্ছে করে।ছুতে ইচ্ছে করে। কাছে থাকলে ভিষন ভালোলাগায় ছেয়ে যায় ওর মন।আর দুরে গেলে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় হৃদয় নামক যন্ত্রটা।কেন এমন হয় ওর? কেন? তাহলে কি আপু ঠিকই বলে কারো মায়ায় জরিয়ে গেলে তাকে ছাড়া ভালো থাকা যায় না।তবে আমিও কি ওর মায়ায় জরিয়ে গেলাম।কারন ওর সাথে দেখা হবার পর থেকে ভালো থাকতে পারছি না আমি! কিছুতেই না! অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে আমায়।ভিতরটা ভিষন ভাবে জ্বলে পুড়ে যখন ও নিজেকে আমার থেকে আড়াল করার চেষ্টা করে।দুরে থাকার চেষ্টা করে।রাগ আর ভালোলাগা দুটোই কাজ করে।ওর আমার প্রতি রাগ, অভিমান,অভিযোগ সব ভালো লাগে।বাচ্চাদের মত গাল ফুলানো,নাক ফুলানো, ঠোঁট কামড়ানো।ভয় পেলে মুখটা চুপসে যাওয়া।ওর বাচ্চামো! সবকিছুতে আটকে গেছি আমি।নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ওর মাঝে।এতদিনে এতটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছি এই মেয়েটাকে আমার চাই! একান্তই নিজের করে চাই! ওকে ছাড়া ভালো থাকা বড় দায়! হঠাৎ ঝড়ের মত এসে আমার হাসিখুশি জীবনটাকে যন্ত্রণায় ভরিয়ে দিলে।যন্ত্রণা! #তুমি_নামক_যন্ত্রণায় আক্রান্ত আমি।

.
স্রোতের বাইরে যেতেই কথার মা প্রশ্ন করলো,

— স্রোত বাবা কথা কোথায়? দেখেছো ওকে? মেয়েটা খুব জ্বালাতন করে আমায়।পার্টিতে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।কোথায় চলে গেল।

— কোথায় আর যাবে ছোট আম্মু বাড়িতেই আছে।হয়তো ভালো লাগছে না বলে নিজের ঘরে চলে গেছে রহিমা খালা বললো ওকে ওর ঘর যেতে দেখেছে।তুমি চিন্তা করছিলে বলে আমি ওর খোঁজ নিয়েছি। ও ঘরেই আছে। ঘুমোচ্ছে।

— হঠাৎ ঘুমোচ্ছে! ওর আবার কি হলো! এত জলদি তো ও ঘুমায় না।

— পার্টিতে ছিল এত লোকজনের ভিড়ে ।তাছাড়া সারাদিন এটা ওটা নিয়ে ছুটে বেরিয়ছে হয়তো ক্লান্ত তাই ঘুমোচ্ছে। তুমি চিন্তা করো না।একটু রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।

ইনিয়ে বিনিয়ে কথাগুলো কোনরকমে বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল ও।কাউকে জানতে দেয়া যাবে না আজকের ঘটনার কথা।কেউ সঠিকটা বুঝতে চাইবে না উল্টো ঝামেলা বাড়বে। তাই বিষয়টা এগিয়ে গেল স্রোত।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে