তুমি নামক যন্ত্রণা পর্ব-১৬

0
1383

#তুমি নামক যন্ত্রণা
#লেখনীতেঃ হৃদিতা ইসলাম কথা
পর্বঃ১৬ ও বোনাস পার্ট

স্নিগ্ধ, মায়াবী একটা ভোর।কাল রাতের বৃষ্টির জন্য চারপাশটা একটু বেশিই সিক্ত লাগছে।প্রায় দুটোর দিকে বৃষ্টি হয়েছে কাল। মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টির আঁচ পেতেই সোয়া থেকে উঠে বসলাম আমি।উদ্দেশ্য বৃষ্টিবিলাস।মনটা নেচে উঠলো।তবে বিছানার বাইরে পা রাখার আগেই মোবাইলে টুং টাং মেসেজের শব্দ এলো।সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে” এখন যদি একপা ঘরের বাইরে গেছে তো ঠ্যাং ভেঙে রেখে দেব।অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে অসুখ বাধিয়ে বিয়ে পেছনের ধান্দা। তুই খুব ধুরন্ধর মহিলা দেখছি।বেশ ভালোই ফন্দি এটেছিস। বিয়ে পেছনের তবে তা কোনোভাবেই হতে দিচ্ছি না আমি।আমার শাস্তিগুলোর জন্য আর একটু সময় ও নষ্ট করতে চাই না আমি।সো যদি নিজের ঠ্যাং গুলোকে আস্ত দেখতে চাস তবে চুপচাপ শুয়ে পড়।”
মনটা ঝুপ করেই খারাপ হয়ে গেল। বজ্জাত লোকটা টের পেল কি করে? মুখটা লটকে ঠোঁট উল্টে বসে রইলাম আমি।

মিনিট দুয়েকের মধ্যে আবারো টুং করে একটা শব্দ হলো।ফোন হাতে নিতেই মেসেজ পেলাম।”ও আমার বৃষ্টিবিলাসীনি! আর একটু অপেক্ষা! এ বৃষ্টি শুধু তোমার আমার ভালোবাসার,আমাদের অব্যক্ত প্রনয়ের সাক্ষী! আমাদের মিলনের প্রহর।তোমার উষ্ণতায় তপ্ত হৃদয়কে সিক্ত করতেই তার আগমন।অপেক্ষা শুধু একটুখানি অপেক্ষা! এ সময় তোমাকে এভাবে বৃষ্টিবিলাস করতে দেখলে যে আমার পক্ষে নিজেকে বোঝানো দায় হয়ে পরবে! ভিষন কঠিন হবে নিজেকে সামলে নেয়া।আমার অপেক্ষার প্রহর খুব শ্রীঘ্রই শেষ হতে চলেছে।এমনই এক বর্ষনময় রাতে শুরু হবে ভালোবাসার নতুন অধ্যায়, নতুন প্রহর। হয়তো কখনো ঘটা করে বলা হয় নি না বলা কথা,মনের ব্যাথা! অব্যক্ত অনুভুতিগুলোকে ভাষায় ব্যক্ত করা হয়নি।আমিও প্রকাশ চাই! আমিও আমার বৃষ্টিবিলাসিনীকে আমার না বলা মনের কোনে জমানো হাজরো অনুভুতির কথা তাকে জানাতে চাই! সে মুগ্ধ হয়ে শুনবে,মুগ্ধতা নিয়ে দেখবে।সে অপেক্ষায় দিন কাটাতে চাই।”

ব্যাস এটুকু পড়েই মনের মাঝে ঝড়ো হাওয়া বইতে লাগলো।অনুভুতিরা আনন্দে নেচে উঠলো।আমিও চাই! সে প্রকাশ করুক।তার অব্যক্ত অনুভূতির! আমিও চাই তাকে দুচোখ ভরে মুগ্ধতা নিয়ে দেখতে! আমিও চাই আমার শুধুই তাকে শুনতে! তাকে অনুভব করতে! মনের গহীন থেকে! হারাতে চাই তার মাঝে! ডুবে যেতে চাই ওই নীল জলরাশির ধারায়!

.
আমি ঘুম থেকে উঠেই সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করলাম।( এখানে আরাধনা বলতে ইবাদত বোঝানো হয়েছে।শব্দের ভিন্নতা। কেউ উল্টোপাল্টা ভাববেন না।)
ভিজে মাটির স্যাঁতস্যাতে মিষ্টি গন্ধ নাকে লাগতেই ভালো লাগায় ছেয়ে গেল মন।মনের কোনে স্নিগ্ধতারা উকি দিল।মনটা ফ্রেশ লাগছে।শীতল হাওয়া, লাল টকটকে বৃত্তটা গাছপালার ফাঁক- ফোঁকর দিয়ে উকি দিয়ে ধরনীতে আলো বিকিরন করছে,ডালপালার একটু আকটু নড়েচড়ে ওঠা,পাখিদের কলকাকলি সবকিছু মিলিয়ে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ।মাঝে মাঝেই মনে প্রশ্ন জাগে!
আচ্ছা প্রকৃতি এত সুন্দর কেন হবে? আমাকে এত কাছে কেন টানবে? মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে হয় প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যায়। বিলীন করে দেই নিজেকে।

প্রকৃতির এই মুগ্ধতার মোহজাল ভেঙে বেরিয়ে এলাম আমি।রান্নাঘর থেকে দু কাপ চা নিয়ে চলে এলাম রুমের দিকে।দিদুন নামাজ পড়ে নিয়েছে। দুজনে মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম।দিদুন তার আর দাদুর বিয়ের পরে প্রেমের গল্প বললেন।তারা একে অপরকে কতটা ভালোবাসতেন।দাদু ভাই রাগী হলেও কখনো গায়ে হাত তোলেনি।দিদুনকে নাকি ভিষন ভালোবাসতেন
দিদুন একটু রেগে গেলেই খুব করে আদর করে দিতেন।দিদুন আর রেগে থাকতে পারত না।এসবই বলছিলেন। আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম আর কল্পনা করছিলাম সে সব গল্পের মাঝে আমাদের দুজনকে।আমাদের ভালোবাসা ঘন মুহূর্তকে।হারিয়ে যেতাম।হুটহাট দু- তিনবার ফিক করে হেসে উঠেছিলাম।দিদুন অনেক ঠাট্টা করলো এই নিয়ে।পিন্চ করলো।আমি শুধু লাজুক হেসেছি।একসময় ধ্যাৎ বলে ছুটে এলাম নিজ ঘরে।এসে দেখি নীলা আর তিশা আপু বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। সবটাই বৃষ্টির কামাল।বৃষ্টি এলেই ঘুম কাতুরে হয়ে ওঠা এরা দুজন। তিশা আপুর মত নীলাও বৃষ্টিকে পছন্দ করেন না।তাদের মতে বৃষ্টির কোন সৌন্দর্য নেই।বৃষ্টি শুধু ঘুমের আরেক নাম।বৃষ্টি এলেই জমিয়ে ঘুমোনো যায়।রাস্তা ঘাট কাঁদায় স্যাঁত – স্যাঁতে হয়ে যাওয়া,কোথাও বেরোতে না পারা,জামা- কাপরের বিঘীস্তি অবস্থা। কাঁদায় মাখামাখি সবকিছুই বৃষ্টির ফলাফল। তাই বৃষ্টি- বাদল থেকে দুরে থাকাই শ্রেয়। তাদের এসব বক্তব্য শুধু বিরক্তিকর মনে হয় আমার।বৃষ্টি আবার অসুন্দর হয় কি করে? বৃষ্টির পূর্বে উড়ে আসা এক দল মেঘের আগমনে বিশাল আকাশের বুকে শুভ্রতার ছোয়া পেতে পৃথিবী শুভ্রতার রঙে ছেয়ে যায়।বৃষ্টির সৌন্দর্য তো অপরুপ।ঝিরঝিরি বৃষ্টিতে ছোট্ট ছোট্ট ফোটায় গড়িয়ে পড়া বৃষ্টির রুপের বর্ননা না করলেই নয়।মুষলধারে বড় বড় ফোটায় টপটপ করে ঝড়ে ধুপধাপ আওয়াজ সৃষ্টি করে সে আওয়াজও কত শ্রুতিমধুর শোনায়।বৃষ্টির শেষে গাছপালা থেকে শিশির বিন্দুর মত গড়িয়ে পড়া দু- এক ফোঁটা বৃষ্টির পানি।আঙ্গুলে ছুয়ে দিতেই শরীর-ময় শীতল স্রোত বয়ে চলে। ভেজা মাটির মিষ্টি গন্ধ নাকে শুষে নিতেই অন্য রকম ভালোলাগা কাজ করে। আর এসবকিছু সুন্দরের প্রতীক।অবাধ সৌন্দর্যের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে বৃষ্টি। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেলকনিতে গেলাম।রেলিং এ দুহাত রেখে দাড়াতেই চোখে পড়লো বেলকনির ছোট্ট টেবিলের উপর একটা নীল রঙের চিরকুট। এগিয়ে গিয়ে চিরকুটটা হাতে নিয়ে ভাজ খুলতেই চোখে পড়লো অপরুপ সুন্দর হাতের লেখনী। মুখে হাসি ফুটলো আমার তার অবুঝ বায়না শুনে।
চিরকুটে গোটা গোটা অক্ষর লেখা আছে ” শ্যামাঙ্গিনী! এভাবে মুগ্ধ চোখে ওই প্রকৃতির দিকে তাকিয়ো না।আমার ভিষন হিংসে হয় তাদের। তোমার ওই চাওনি আমাকে দিশেহারা করে দেয়।তোমার ওই হাসি আমার বুকে ব্যাথার জন্ম দেয়।জানোতো খুব করে জানতে ইচ্ছে করে ওই প্রকৃতির কাছে তার সৌন্দর্যের রহস্য। আমার শ্যামাঙ্গিনীর হৃদয় কেড়ে নেওয়ার মত সৌন্দর্য যার আছে সেতো আমার জন্য হিংসের কারন হবেই তাই না।আমার তো ইচ্ছে করে ওই প্রকৃতির মাঝে মিশে।ওগো বর্ষনময়ী! তোমার নামের বর্ষন হতে চাই। আমার প্রতিটি ফোটা তোমায় ভেজাতে চাই।সিক্ত করতে চাই।অনুভব করতে চায় তোমায় নিবিড়ভাবে। মিশিয়ে নিতে চায় আমার মাঝে। তুমি তো আমার! শুধুই আমার!তবে তোমার মুগ্ধতা, স্নিগ্ধতা সবটা জুড়ে আমার অধিকার! কেবল আমার! এখন নিশ্চয় তোমার আমাকে পাগল বলে মনে হচ্ছে। জানোতো মাঝে মাঝে আমারও মনে হয়, আমি পাগল! তোমার জন্য পাগল!”

চিরকুটটা পড়ে চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে। এই মানুষটাকে শুধুমাত্র ভুল বোঝে অনেক কষ্ট, অনেক আঘাত দিয়েছি।তার এই নিবিড় ভালোবাসাগুলো চোখে কেন পড়লো না আমার। কেন অনুভব করিনি তাকে! কেন পড়তে পারিনি তার চোখের ভাষা! কেন আড়াল করেছি নিজেকে! কেন তাকে এভাবে পুড়িয়েছি অবাধ যন্ত্রণায়।সত্যি মাঝে মাঝে খুব অপরাধবোধ কাজ করে।একটা মানুষকে প্রায় মৃত্যুর দৌড়গোড়ায় পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আমি। সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া তিনি আমাকে সঠিক বুঝ দান করেছে।

.
উনার কথা অনুযায়ী এখানকার খুব নামী দামি একটা ইভেন্ট মেনেজমেন্টের মেনেজারের সাথে কন্টাক্ট করলেন উনি।উনারা আগেই সব এরেন্জমেন্টস করে রেখেছে।সবার থাকা এবং তৈরি হওয়ার দায়িত্ব উনাদের উপর।এখানে এসে পৌছাতেই আমাকে রেডি করে আমার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে বসিয়ে রাখা হলো।যেহেতু দুটো পরিবার একসাথে তাই দুটো স্টেজই একসাথে সাজানো হয়েছে।তবে দুটো স্টেজের মাঝেই বিস্তর ফারাক। মাঝখানে পর্দা টানানো।সবকিছু হলুদ আর সাদা ফুলে সজ্জিত। সাথে লাইটিং করা।ড্রেসকোড ও সেম।হলুদ সাদা।বরের সেরওয়ানি হলুদ রঙের আর পাজামা সফেদ রঙের।কনের লেহেঙ্গার উপরের অংশ হলুদ আর নিচের অংশ সফেদ রঙের। আর বাকিদেরটাও সেম।অনুষ্ঠানের শুরুতেই আমাকে মাস্ক পরিয়ে আনা হলো।সল্প সময়ের মধ্যেই সাঙ্গীত,মেহেন্দি আর হলুদের আয়োজন করেছে।রুবি আর অলি আমার বন্ধু। ওদেরকে সবটা সেভাবে জানানো হয়নি।তবে ওরা খুব খুশি। নীলা,মাহি তন্নি, অলি আর রুবি এলো আমার ঘরে।ওরা এসে মাস্ক পরিয়ে দিল আমায়। আমি কিছু জিজ্ঞেস করতেই ওরা বললো,
— এত সহজে কি তোকে তুলে দেব ভাইয়ের হাতে।সে তোকে চিনে নেবে।খুঁজে নেবে সবার মাঝে তবেই সে পাবে তোকর বুঝলি।এবার তুই কোন চিটিং করবি না।কাপল হিসেবে যার সাথে পড়বি তার সাথেই ডান্স করতে হবে তোকে।

সবাই লাইন ধরে দাড়িয়ে।আগে সব মেয়েরা দাড়িয়েছে তারপর তাদের ডাকা হয়েছে। সবার ড্রেসের ডিজাইন ও সেম।তাই খুঁজে পাওয়াটা বেশ মুশকিল।ওদের সবার কথা শোনার পর আমিও খুব ইন্টারেস্ট পাচ্ছি।আমিও দেখতে চাই উনি আমায় সবার ভিড়ে খুঁজে পান কিনা।

প্রথমেই উনাকে পাঠানো হলো।উনি আসার পর প্রথমেই সবাইকে না দেখে আমার চোখের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলেন।চোখাচোখি হতেই আমার অস্বস্তি হতে লাগলো।তবুও নিজেকে শক্ত রাখলাম।প্রথমেই হুট করে আমার সামনে দাড়ালেন উনি।বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছে।পরমুহূর্তেই আমাকে ছেড়ে দুপা এগিতো দেখেই আশাহত হলাম আমি।তবে মন খারাপ হওয়ার পূর্বেই তিনি আচমকা সবার মাঝে আমার হাত টেনে ধরলেন।আর তার কাছে টেনে নিলেন।আমার একহাত তার কাধে। উনি একহাতে কোমর আকড়ে কানের কাছে মুখ এনে সবার সামনে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলেন,

— “ওই চোখের মায়ায় পরেছি আমি
যা আর কোথায় নাই,,,,
,,,,,,,হাজার জনের ভিড়ে আমি
শুধু তোমাকেই খুঁজে পাই।”

তার কথা শুন মাথা নিচু করে মুচকি হাসলাম।ভিষন লজ্জা পেলাম।কিন্তু তার এমন ভালোবাসাময় কবিতায় মুগ্ধ হলাম।লোকটার পাগলামির অন্ত নেই।আমি সারাজীবন তার এই পাগলামি গুলোকেই ভালোবেসে যেতে চাই।

শুরু হলো কাপল ডান্স।আমার পরে আহান ভাইয়ার সুযোগ এলো।তবে এখানে অন্য ব্যবস্থা।কয়েকটা চিরকুটে নাম লেখা আছে।যে যার নামের চিরকিট তুলবে তাকে তার সাথেই ডান্স করতে হবে।আহান ভাই নীলার নামের চিরকুট উঠালো তাই কথামত তারা কাপল হিসেবে তার পার্টনারের সাথে নাচ করবে।তন্নির সাথে নাম উঠলো মৃদুল ভাইয়ার।দুজনেই ঝগড়ুটে পার্টি। মৃদুল ভাই আমার ফুফাতো ভাই।স্নোত ভাইয়ের দু বছরের ছোট।আর তন্নি আমার ছ মাসের ছোট।দুই ফুপ্পিদের মাঝে ভিষন ভাব।ছোট ফুপ্পির একটাই মেয়ে তন্নি।আর বড় ফুপ্পির এক মেয়ে এক ছেলে। মৃদুল ভাই আর মিতু।মিতু নবম শ্রেনীর ছাত্রী। বেশ চুপচাপ ধরনের মেয়ে।কথা কম বলে।তবে আমাকে বেশ পছন্দ করে।ভালো স্টুডেন্ট ও বটে।

প্রথমে কাপল ডান্স।তারপর বয়েজ / গার্লস ডান্স প্রতিযোগিতা। যেখানে মেয়েরা জয়ী হলো।একে একে মেহেন্দি আর হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলো।সবাই ক্লান্ত শরীর নিয়ে রেস্ট করতে গেল।সব কিছুর ঝামেলায় বেশ টায়ার্ড থাকায় বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই একপ্রকার ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালাম।উনি আমার সমস্যা বুঝেই তাড়াতাড়ি করে সব মিটিয়ে ফেলতে বললেন।বাড়ির বড়রা এদিকটায় তেমন ছিল না।হলুদের ফাংশনের পর তারা তাদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।হুট করেই বিয়ের মত বিশাল এক দায়িত্বের কাজ সামলানো ভিষন মুশকিলের।খু্ব বেশি মানুষের আয়োজন না হলেও আত্মীয় স্বজন পাড়া- পড়শী অনেকেই ছিল।এত অল্প সময়ে কার্ড বিতরন যতটুকু সম্ভব হয়েছে সবটাই করেছে।বেশিরভাগ কাজ স্রোত ভাইয়াই সামলেছে।তার এমন পাগলামি কান্ড কারখানা দেখে বড়রা তেমন কিছু না বললেও মিটিমিটি হাসছিল সবাই।তবে তার খুশিই যেন সবার কাছে সবথেকে মুল্যবান।তাই কেউ অমত করেনি। তবে আব্বুর মন খারাপটা আমার চোখে ঠিকই পড়েছে।তাই একান্তে আব্বুর সাথে সময় কাটিয়েছি।

.
সকালবেলা ঘুম ভাঙতেই আব্বু আম্মুকে আমার বিছানায় দেখতে পেলাম।আমি ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে বললাম,

— কি হইছে আম্মু? সব ঠিকাছে তো তোমরা এভাবে এখানে?

— সব ঠিকাছে আম্মু।চিন্তা করো না তুমি।আজ তো আমরা ভিষন খুশি। এতদিন মনের মধ্যে সংশয় ছিল।কিন্তু এখন তোমার চোখেমুখে যে খুশির ঝলক দেখতে পাচ্ছি তা আমাদের বলে দিচ্ছে আমরা কোন ভুল করিনি। তুমি খুশি থাকলেই আমরা খুশি।

আব্বুর ভেজা কন্ঠ।হয়তো আমি চলে যাব।সে জন্য ভিতরে কষ্ট পাচ্ছেন। তবে প্রকাশ করতে পারছেন না।পুরুষদের মন পাথর হয় না।তাদেরও কষ্ট হয়।শুধু তারা প্রকাশ করতে পারে না।নিজেকে শক্ত একটা কঠিন খোলসের মাঝ৷ আবৃত রাখে।আমি আব্বুকে জরিয়ে ধরলাম। এই মানুষটাকে খুব ভালোবাসি আমি! খুব! আমার না বলা মনের কথা গুলো কি করে বুঝে যান উনি।এবার আম্মুর চোখদুটো ছলছল করছে।আব্বুর আবারও কাতর কন্ঠে বললো,

–দেখছো কবিতা।আমাদের মেয়ে আজ কত বড় হয়ে গেছে। তার আজ বিয়ে।পর করে দিয়ে চলে যাবে আমাদের। এত তাড়াতাড়ি কেন বড় হয়ে গেলি মা।আমি যে তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।কষ্ট হবে তো তোর আব্বুর।

আমি এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে বললাম,

— আমিও যেতে চাই না আব্বু। তোমাদের সাথেই থাকতে চাই।প্লিজ আমাকে ও বাড়ি পাঠিয়ে দিও না।বড় আব্বুকে বল না তারা যেন এবাড়িতেই থেকে যায়।আমরা সবাই একসাথে থাকবো।

— তা বললে হয় না মা।তুমি এখন ও বাড়ির আমানত।ও বাড়ির লক্ষী।ও বাড়িতে যেতে হবে তো মা।তাছাড়া সবসময় তো আর সেখানো থাকছো না তুমি।আমরা যাবো আর তোমরাও তো আসবে।দুটোই তো তোমার বাড়ি।তুমি জানো তোমার বড় আব্বুর বিজনেস ওখানে।সবটা ছেড়ে এখানে আসা যায় না মা।

— তুমি চিন্তা কেন করছো বলোতো।আমাদের মেয়ে বড় হয়ে গেছে না।এখন সে তার নিজ সংসার সামলাবে। সবাইকে আগলে রাখবে।কি মা পারবি না বল?

আমি এবার আম্মুকে জরিয়ে ধরে বললাম,

— তোমাদের ছেড়ে কি করে থাকবো? কষ্ট হবে না আমার।

— পাগলি মেয়ে আমার। কষ্ট কেন হবে? তোর বড় আব্বু আছে আম্মু আছে।তাদের এখন থেকে বাবা মা বলে ডাকবি।আগের সম্পর্ক ছেড়ে এখন থেকে নতুন সম্পর্কের বাধনে বাধতে চলেছিস তুই।সবাইকে ভালোবেসে আগলে রাখবি।সবার যত্ন করবি।ও বাড়ির সবার ভালো থাকার দায়িত্বটা এখন তোর হাতে।স্রোতকে কখনো আঘাত দিস না মা।ছেলেটা যে বড্ড ভালোবাসে তোকে।লাখে খুঁজলেও ওর মত এত ভালোবাসবে তোকে এমন কাউকে খুঁজে পেতাম না আমরা।ওর খেয়াল রাখবি।

–স্রোত আছে বলেই আমি চিন্তামুক্ত। বুঝেছিস সে জানে আমার আমানত আমি তার হাতে তুলে দিব।আর সে সেই আমানতকে অতি যত্নে আগলে রাখবে।কখনো তার চোখে জল আসতে দেবে না ও।

বাবার স্রোত ভাইয়ার প্রতি এত বিশ্বাস আর ভালোবাসা দেখে ভিষন খুশি হলাম আমি।সে মানুষটাই হয়তো এমন।যাকে ভালো না বেসে পারা যায় না।একটু রাগী তবে আমি মেনেজ করে নেব।

আমাদের মাঝেই পিচ্চু এলো।বললো,

— সব আদর আপিকে দিয়ে দিলে আমার জন্য কি রাখব বল? ওকে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বিদেয় কর তারপর সব রাজত্ব আমার একার।বুঝলে।তাড়াতাড়ি শ্বশুর বাড়ি যাও।আব্বু আম্মুর আদর আমি একাই খাব।

আমি ওর কান টেনে দিয়ে বললাম,

— হাহ! আসছে কই থেকে? আমি দেব তোকে রাজত্ব করতে।এ বাড়িতে আমার রাজত্ব সবসময় থাকবে বুঝলি পিচ্চু।

ও মেকি রাগ দেখিয়ে ঠোঁট উল্টে বললো,

— আবার পিচ্চু

আমরা সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম।এভাবে অতিবাহিত হলো কিছুক্ষন।তারা চলে গেল।সব নিয়ম নীতি মেনে বিয়ের আসরে তিন কবুল বলে বিয়ে হলো আমাদের। সামাজিকভাবেভাবে স্বীকৃতি পেল আমাদের সম্পর্ক। সবাই খুব খুশি।বিয়ে শেষ হলে সেখান থেকেই বিদায় দেয়া হয় আমায়।স্রোত ভাইয়াদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে সবাই।কাজিন গুষ্ঠি আগেই চলে গেছে ও বাড়ি।নীলা আমার সাথেই আছে।বিদায়ের সময় অনেক কান্নাকাটি হলো।খুব কষ্ট হচ্ছিল তাদের ছেড়ে আসতে।আমার কান্নাকাটির জোরে দিদুনও আমার সাথে এলো।ও বাড়িতে বড়রা সবাই।বড় আব্বু আমাদের সাথে এলো।আর বড় আম্মু আগেই চলে গেছে।বাড়ির বউকে বরন করবে বলে।ঘটা করে বরনের আয়োজন করবে বলে।ছোট ফুপ্পিকেও সাথে নিয়ে গেছে।

বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১০ টা বেজে যায়। বরনের সব নিয়ম নীতি মেনে ঘরে তোলা হয় আমাকে।বড় আম্মু জোর করে নিজ হাতে তুলে খাইয়ে দেয়।১১ টার দিকে উনার ঘরে রেখে এলো আমার বজ্জাত কাজিনরা।আমাকে বসিয়ে অনেক হাসি তামাশা করলো ওরা।এদিকে আমি ভিষন ক্লান্ত।অস্বস্তিতে হাসফাস করছি আমি।ভালো লাগছে না কিছু।তবে ওদের আনন্দটা নষ্ট করতে পারি না।তাই মুখ বুজে রয়েছি।কিছুক্ষণ পর দিদুন এসে ওদের ধমকে পাঠিয়ে দিল।কিন্তু ওরা বাইরে দাড়িয়ে রইলো গেল না। উনি আসলে উনার থেকে টাকা আদায় করবে।টাকা ছাড়া বাসরে কিছুতেই ঢুকতে দেওয়া হবে না তাকে। বাইরে হট্টগোল শোনা যাচ্ছে। হয়তো উনি এসে পরেছে।আমি নড়েচড়ে বসলাম।অস্থিরতা ঘীরে ধরেছে আমায়।অস্বস্তিতে ভিতর ভিতর কাঁদা হয়ে যাচ্ছি আমি।টেনশনে হাত-পা মৃদু কাঁপছে। বাইরে থেকে কিছু একটা শোনা যাচ্ছে। ওরা পঞ্চাশ হাজার চাইছে।সকালেও নাকি পঞ্চাশ হাজার নিয়েছে।এরা একেকটা কসাই।আমার জামাইর পকেট খালি করে দিল। এত চিন্তার মাঝেও এই চিন্তা ঢুকে গেল আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে।

কিছুক্ষন পর সব শান্ত হয়ে গেল। ব্যাপারটা কি! কি হলো? উনি কে টাকা দিয়ে দিয়েছেন? এখনি ঘরে ঢুকবেন নিশ্চয়।আমি ঘাবড়ে গেলাম। ভিষন লজ্জা লাগছে।উনার সাথে এক ঘরে একা রাত কাটানো। সবটাই কেমন লজ্জাজনক।লজ্জায় লাল নীল চেহারা নিয়েই আমি ভারি লেহেঙ্গা নিয়ে আস্তেধীরে উঠে বিছানা ছেড়ে নেমে দাড়ালাম। তারপর বেলকনিতে চলে গেলাম।উনার সামনে থাকার সাধ্যি আমার নেই।বেলকনিতে যেতেই চোখ আটকে গেল আমার।বেলকনিটা খুব সুন্দর করে সাজানো।বিভিন্ন রকমের গাছ আছে এখানে।গাছগুলোতে ছোট ছোট মরিচবাতি লাগানো।মাথার উপরে ও জানালার গ্রীলে লতাপাতায় ঘেরা।এবং সবটাই লাইটিং করা।খুব সুন্দর ঝলমলে আলো।একপাশে দুটো বেতের চেয়ার।সাথে ছোট্ট একটা টি- টেবিল।অবসর সময়ে কোন এক বিকালে এখানে বসে বই পড়া আর চা খাওয়াতে খুব সুন্দর একটা সময় কাপানো যাবে।সুন্দর করে ডেকোরেট করা একটা বেলকনি।মন খারাপ হলে এত সুন্দর একটা জায়গায় এলে নিমিষেই মন ভালো হয়ে যাবে। এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই রাতের কালো মেঘে ঢাকা আকাশ চোখে পড়লো।ওই বিশাল আকাশটা ওই মেঘেদের আয়ত্তে। তার দল বেধে ভেসে বেড়াচ্ছ। আমি মুগ্ধ চোখে দেখলাম নিস্তব্ধতায় ঘেরা আধারের নির্মল রুপ।শীতল বাতাস গায়ে মেখে নিলাম।পেছন থেকে কেউ যে ভিষন মুগ্ধতা নিয়ে আমাকে দেখছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই আমার।আমি নিজেকে এই নিশি রাতের মায়াবী আলোতে ডুবিয়ে রেখেছি।হঠাৎ আমার পাশে আমি কারো অস্তিত্ব অনুভব করলাম।ফট করেই চোখ খুলে খানিকটা স্তম্ভিত হলাম।এসব কিছুর মাঝে এতটাই ডুবে ছিলাম যে আর কিছুই মনে ছিল না আমার।উনার চোখে চোখ পড়তেই দেখলাম উনি একদৃষ্টে দেখছেন আমাকে।আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।লজ্জায় নত হলাম।উনি এগিয়ে এসে আমার কোমড় জরিয়ে ধরে কাছে টানলেন।তার স্পর্শে কেঁপে উঠলাম আমি।শরীর মৃদু কাঁপছে।তিনি ললাটে অধর ছোয়ালেন।উনার উষ্ণ স্পর্শ বন্ধ চোখে অনুভব করলাম আমি। উনার দিকে চোখের দিকে তাকাতেই কেমন এক ঘোর লাগানো চাওনি দৃষ্টিগোচর হলো আমার। আমি লজ্জায় মাথা নত করলাম।তিনি ছেড়ে দিলেন আমায়। দুপা পিছিয়ে গেলেন।ওই নেশাক্ত চাওনি আমার উপরই নিবদ্ধ।ঠোঁটের কোনে মিহি অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম হাসিটি হাসলেন।আমি মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে রইলাম ওই হাসির পানে।পৃথিবীতে আর কখনো এত সুন্দর হাসি দেখেছি বলে মনে হলো না।
উনি বললেন,
–বর্ষা! এ কেবল বর্ষনের মৌসুম নয়।এতো ভালোবাসার মৌসুম।প্রেমবক হৃদয়ের জ্বলন্ত দাবানলকে শান্ত করার মৌসুম।আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী এ মৌসুম।তোমার প্রিয় এক মৌসুম।বর্ষনের এ সময় বহু প্রতিক্ষার প্রিয় মানুষটিকে কাছে পাওয়ার সময়।যেমন ধরনী বর্ষনের ছোয়ায় নিজেকে সিক্ত করতে তৎপর তেমনি আমিও বর্ষনের প্রতিটি ছোয়ার মতই তাকে আমার মাঝে অনুভব করতে চাই। সিক্ত হতে চাই তার ছোয়ায়।তার ভালোবাসাময় স্পর্শে।
জানো আজ আমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার পেয়েছি।দ্বিতীয়টি পেতে অবশ্য সময়ের প্রয়োজন।আমার চোখে দেখা পৃথিবীর সবথেকে রুপসী নারী আজ আমার ঘরে।তার সিক্ততায় শীতল ছোয়া পাবে আমার উত্তপ্ত হৃদয়। তার স্নিগ্ধতা আমার জীবন থেকে সকল ঘন কালো মেঘকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।তার থেকে দুরত্বের অনলে ঝলসে যাওয়া এই আমিটাকে তার ভালোবাসার স্পর্শে আবারো রাঙিয়ে দেবে।আবারো সজীবতা এনে দেবে এই মুর্ছা যাওয়া জীবনে।

উনার প্রতিটি কথায় এতদিনের জমিয়ে রাখা প্রগাঢ় অনুভূতির কথা স্পষ্ট প্রমান দিল।উনার কণ্ঠে কেমন এক মায়া।হাজার অনুভূতির মিশ্রনে মিশ্রিত এক মায়া।
তার প্রতিটা কথা বুকে তোলপাড় করলো আমার।পারলাম না নিজেকে ধরে রাখতে।হৃদপদ্মের ছোট্ট খাচায় ধরাস ধরাস করে লাফিয়ে চলা হৃদয় নিয়ে দুপা এগোলাম তার দিকে। আলতো করে তার বুকে মাথা ঠেকালাম।না দেখেও বুঝতে পারলাম তিনি চোখ বন্ধ করে অনুভব করছেন আমাকে।কিছুক্ষন পরেই দুহাতের বন্ধনে পেলাম নিজেকে।ঠোটের কোনে মিহি হাসি ফুটলো।আরেকটু শক্ত করে তাকে জরিয়ে ধরে বললাম,

— ভালোবাসি আপনাকে।ভিষন ভালোবাসি।আমি জানি আপনি বলেননি আর বলবেন ও না তবে আমি বলতে চাই।প্রকাশ করতে চাই।আপনাকে ঘীরে আমার সকল অনুভুতি। অনুভব করতে চাই আপনাকে।আমার অস্তত্বি মিশিয়ে নিতে চাই আপনাকে।

উনি গভীরভাবে জরিয়ে ধরলেন আমায়।আমার মাথায় চুমু খেলেন।তারপর আমার দুগাল তার হাতের মাঝে নিয়ে বললেন,

— বলবোনা ভালোবাসি।শুধুই প্রকাশ করবো।আমার প্রতিটি উষ্ণ স্পর্শ জানান দেবে ঠিক কতটা ভালোবাসি তোমায়।ঠিক কতটা চাই।তোমার অস্তিত্বে নিজেকে বিলীন করতে চাই।আমার আমিকে তোমার মাঝে খুঁজে পেতে চাই।তোমার প্রতিটি নিশ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করতে চাই।তোমাকে একান্তই নিজের করে পেতে চাই।সব দুরত্বের অবসান ঘটাতে চাই।মে আই শ্যামাপরী।

উত্তরে কিছুই বলার ছিল না।সবসময় বলে বোঝাতে হয় না।তার ভালোবাসার পরিধি সীমিত নয়।যা কেবলই চারটে অক্ষর ধারন করতে পারে।তার ভালোবাসা তো ব্যাপক, বিস্তৃত। মানুষটা একটু আলাদা।
তবুও আমি তো তার।শুধুই তার! কখনো কখনো মনের কথা মুখে বলতে হয় না চোখই মনের কথা বুঝিয়ে দেয়। আমি মুচকি হাসলাম শুধু। উনি উনার উত্তর পেয়ে গেলেন। পাজোকোলে তুলে নিলেন আমায়।আমি গলা জরিয়ে ধরে মুখ লুকালাম উনার বুকে।বিছানায় বসিয়ে দিলেন আমায়।একে একে গা থেকে গয়না খুলে নিলেন।চুল খুলে দিলেন।তারপর আবারো কোলে তুলে নিলেন আমায়।সোজা চলে গেলেন।ছাদের দিকে।একেকটা সিড়ি বেয়ে উঠছেন আর আমার বুক দুরুদুরু করছে।ছাদে পৌছানোর কিছুক্ষনের মধ্যেই ঝুম বৃষ্টি নামলো।ভিজে গেলাম দুজনে।খুশিতে নেচে উঠলো আমার মন।তাকে ছেড়ে চঞ্চল কিশোরীর মত দুহাত মেলে ঝুমতে লাগলাম।লাফিয়ে লাফিয়ে বৃষ্টিবিলাস করছি।আর উনি কিছুটা দুরে দাড়িয়ে সেই মুহুর্ত উপভোগ করছেন।উনি আমার দিকে দুপা এগিয়ে এলেন।দুহাতে কোমড় টেনে কাছে আনলেন তার।একদম কাছকাছি আছি দুজনে।দুজনে বিশাল আকাশের দিকে মুখ করে বৃষ্টির প্রতিটি ফোটাকে অনুভব করছি হৃদয় দিয়ে। একে অপরের কপালে কপাল ঠেকালাম।বৃষ্টির ঝড়ে পড়ার শব্দের সাথে দুজনের নিশ্বাস প্রশ্বাসরের শব্দও শুনতে পাচ্ছি।একে অপরে অনুভব করছি। সে সুর তালহীন মোহনীয় শব্দ।হঠাৎ ভিষন বর্জ্রপাতের শব্দে মিশে গেলাম তার বুকের সাথে।উনিও জরিয়ে ধরলেন আমায়।
তার শীতল হাতের শীতলতা কাপিয়ে তুললো আমায়।থরথর করে কাঁপছি আমি।উনি আবারো কোলে তুলে নিলেন।ওয়াশরুমে গিয়ে নামিয়ে দিলেন।হাতে একটা জামা ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

— চেঞ্জ করে নাও। নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।

বলেই বেরিয়ে গেলেন।বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি।আমি কালে রঙের জামা পড়ে ভেজা চুলে বেরিয়ে এলাম।আড়চোখে একবার উনাকে দেখলাম। উনিও কালো রঙের জামা পড়েছেন।ভেজা চুল কপালে পড়ে আছে।শার্টের দুটো বোতাম খোলা বিধায় উন্মুক্ত বুক দৃশ্যমান।লজ্জা পেলাম একটু তবে খুব স্নিগ্ধ লাগছে উনাকে।বাইরে এসে নতমুখে দাড়িয়ে রইলাম।উনি আমার সামনে দাড়িয়ে আমার মুখের সামনে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুজে দিয়ে গালে ঠোঁট ছুইয়ে কাছর আসতে চাইলেই আমি একটু দুরে সরে গেলাম। হেসে উঠলাম।উনিও হেসে এগিয়ে আসছেন আর আমি সমানতালে পিছিয়ে যাচ্ছি।এভাবেই ছোটাছুটি করলাম কিছুক্ষন।একমময়ে আমার হাত আটকে দিলেন পেছন থেকে । হাত টেনে উনার কাছে টেনে নিলেন।উনার বুকের মাঝে পিঠ ঠেকলো আমার।আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।বুক উঠানামা করছে।উনি কানের লতিতে ঠোঁট ছুইয়ে গলায় ঠোঁট ছোয়ালেন।ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিলেন।অন্যরকম শিহরনে হারিয়ে যেতে লাগলাম আমি।উনি প্রায় উন্মাদ।
আমাকে শুইয়ে দিয়ে আমার মুখের উপর ঝুকে রইলেন। গলায় মুখ ডোবাতেই বিছানার চাদর খামচে ধরলাম আমি।উনার পাগলামি বেড়ে চলেছে সময়ের সাথে সাথে।তার প্রতিটি ভালোবাসা আর পাগলামিগুলোতে তাল মেলালাম আমি।সাদরে গ্রহন করলাম তার ছোয়া।এভাবেই পুর্নতা পেল আমাদের ভালোবাসা।স্রোতের #তুমি_নামক_যন্ত্রণা আজ শীতলতার স্পর্শে ছেয়ে গেল।

.
রোদেল ঝিলিক চোখেমুখে পড়তেই চোখমুখ কুচকে এলো বিরক্তিতে।হালকা নড়াচড়া করতেই আটকে গেলাম আমি। বুঝতে পারলাম কারো শক্ত বাধনে আবদ্ধ আমি।আর মানুষটা কে সেটাও ভালো করেই জানি আমি।ঘুমের মাঝেও আলতো হাসলাম।অনুভব করলাম ঘুমের মাঝেও কত শক্ত বাধনে বেধে রেখেছেন উনি।মাথা উপরে তুলতেই উদোম শরীরে সুঠাম দেহী সুদর্শন পুরুষের দিকে চোখ আটকে গেল আমার।তার বন্ধ চোখজোড়ার ফর্সা মুখে ছোট ছোট চাপ দাড়ি তার সৌন্দর্যকে হাজারগুন বাড়িয়ে দিল।কপালের উপর লেপ্টে থাকা চুলগুলোতে ফু দিলাম। উদোম শরীরের লোমহীন বুক নজর কেড়ে নিল আমার।তার বুকের মাঝেই আকিবুকি করতে লাগলাম।আনমনেই হেসে উঠলাম।একটু নড়েচড়ে উঠতেই উনি ঘুম ঘুম মোহনীয় কন্ঠে বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন,

— ঘুমোতে দাও বিরক্ত করো না। অনেকদিন পর শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছি।

বলেই আরো আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরলো আমায়। আমি এবার কৌতুক করে বললাম,

— এবার উঠুন মহারাজ অনেক বেলা হলো।

উনি বিরক্তিতে চ শব্দ করলো। তারপর মুখ কুচকে বললো,

— হোক বেলা।আই ডোন্ট কেয়ার।আমি এখন ঘুমোবো আর তুমিও।একদম নড়াচড়া করবে না।নাহলে পানিসমেন্ট হিসেবে খুব করে আদর করে দিব।

উনার কথায় আমি বিস্মিত। ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে কিঞ্চিৎ ফাক।মন শুধু একটাই কথা বলছে,

— কথা এ তো তার আদর নামক ভয়ঙ্কর পানিসমেন্টে জর্জরিত করতে চাইছে তোকে।এবার তোর কি হবে!

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে