তুমি নামক যন্ত্রণা পর্ব-১২

0
1225

#তুমি নামক যন্ত্রণা
#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা
পর্বঃ১২

–অধিকার চাই তোর তাই তো!

বলেই আমার দিকে দুপা এগিয়ে এলো স্রোত । আমি শুকনো ঢোক গিলে দুপা পিছিয়ে যেতে যেতেই উনি আবারো স্বাভাবিক ভাবেই বললেন,

— পাবি তুই তোর অধিকার। তার আগে…. (কিছুক্ষণ চুপ থেকে)
আমি আমার অধিকারটুকু বুঝে নেই।

উনার এই শান্ত শীতল কন্ঠের ভয়ংকর অস্বাভাবিক কথাটা কর্নপথে প্রবেশ করতেই পুরো শরীর হিম হডে এলো।স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। ততক্ষণে স্রোত আমার একদম কাছে এসে দাড়িয়েছে।আমি নিস্তব্ধতা কাটিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় শুধালাম,

— মা্ মানে…

— মানে!
উনার বলার সাথে সাথেই বেডের সাথে পা বেজে একবারে বিছানার উপর ধপাশ করে পড়লাম আমি।উনি আমার উপর অনেকটা ঝুকে একেবারে আমার মুখের কাছে তার মুখ নিয়ে আসতে ভয়ে চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলি।উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ধীর কন্ঠে ফিসফিসিয়ে বলে,

— স্বামী হিসেবে আমারও তো আমার স্ত্রীর উপর কিছু অধিকার আছে।আমি আমারটা বুঝে নেই তারপর নাহয়….

এর থেকে বেশি কিছু শোনার সাধ্য ছিল না আমার।মেরুদণ্ড দিয়ে এক শীতল হাওয়া প্রবাহিত হলো।শিহরন বইলো শরীর মন জুড়ে।সাথেই মনের মাঝে ভয়ও ঝেকে ধরলো।মানে… উনি চাইছেন টা কি আসলে….তাহলে কি উনি! ছিঃ ছিঃ ভাবতেও কেমন লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।

কথার ভয়ার্ত মুখ দেখে ভিষন মজা পাচ্ছে স্রোত।ঠোঁট টিপে নিজের হাসি আটকানোর চেষ্টা করলো।মায়াবি মুখটিতে তাকিয়ে মনে মনেই বিড়বিড় করলো,

— এ কোন মায়ায় জড়ালে আমায় মায়াবতী! আমকর চারপাশ যে তুমি হীনা শুন্য! ভিষন অসহায়!নিঃস্ব আমি! ইচ্ছে করে পলকহীন ওই মায়াবি মুখশ্রীতে মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি।এ দেখাতেই জনম জনম পার করে দেই।তবুও তো ক্লান্ত হবে না আমি আঁখি জোড়া।

কথার ওই ভয় পাওয়া মায়াবী মুখের আদলে হারিয়ে যাওয়ার আগেই নিজেকে সামলে নিল স্রোত।প্রেয়সীর কপালে ভালোবাসার স্নিগ্ধ মায়াময় পরশ একে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছেকেও সংযত করলো । আচমকাই চোখ চলে গেল কথার গলার নিচে বুকের উপরে কুচকুচে কালো তিলটার দিকে। সেখানে চোখ যেতেই কোন এক নেশায় নেশাগ্রস্ত হয়ে গেল স্রোত।নেশাক্ত চাহনিতে কিছু মুহুর্তের চাহনির পরই ঘোর কাটলো ওর।নিজেকে ধাতস্থ করে যতদ্রুত সম্ভব উঠে এলো কথার উপর থেকে। একপ্রকার হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।কিছু মুহূর্তের জন্যে হলেও কথাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছিলো।কিন্তু ও তো শুধুমাত্র কথাকে ভয় দেখাবে বলেই এসব কিছু বলেছিল তবে।নাহ! নিজেকে সংযত করতে হবে! পাগলামি করলে চলবে না! ওর সাথে আমিও অবুঝ হতে পারি না! আমার ছোট্ট একটা ভুলের জন্য ওর সুন্দর জীবনটা বিষিয়ে তুলতে পারি না।আমি জানি কথা আমাকে ভালোবাসে না।ভালোবেসে এই বিয়েতে রাজি হইনি।শুধুমাত্র দিদুন আর কাকাইয়ের জন্য এই বিয়েতে রাজি হয়েছে ও।আমি এভাবে ওর জীবন থেকে ওর স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নিতে পারিনা।ওকে মুক্ত করে দেব। এই বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন থেকে।

এসব ভাবনার মাঝে বিভোর থেকেই সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো স্রোত।আর আমি কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরও কোন কিছু না ঘটাতেই আস্তে আস্তে চোখ মেলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি।যেইনা একটু চোখ খুলে স্রোতকে দেখতে পেলাম না।অমনি ফট করে চক্ষু যুগল খুলে গেল নিস্ক্রিয় ভাবে।সামনে উনাকে না দেখে অবাক হলাম।

— কোথায় চলে গেলো রে বাবা…..!ধ্যাত, উনাকে আমি জব্দ করতে চেয়েছিলাম।উল্টো উনি আমাকে জব্দ করে চলে গেল।

কথাগুলো বলেই মুখ দিয়ে বিরক্তিকর শব্দ করলো।ওর এখন ভিষন বিরক্ত লাগছে।নিজের উপরই। ওই মানুষটাকে এত ভয় পেলে চলবে! কই সাহস করে বাঘিনীর মত এসেছিল তাকে ভয় দেখাবে আশ্চর্য করবে তা না উল্টো ওর প্ল্যানে জল ঢেলে দিল পাজি লোকটা।

.
আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ দুদিন হতে চললো।তবে এ ঘটনা কারো মনে ভাবান্তর সৃষ্টি করলো না।সবাইকে দিদুনকে নিয়ে ব্যস্ত।আমি আর স্রোত ও।সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে এখন আমার স্বামী তাই তাকে ভাই বলার মত দুর্দান্ত পাপ আমি ইহকালে করতে পারি না।এমনিতেও তাকে ভাই বলে ডেকেছি কতবার ঠিক মনে নেই।হাতে গোনা চার পাঁচ বার হবে।আর সবসময়ই তার থেকে দুরত্ব বজায় রেখেছি।আজ এই দুরত্বই আমার কাল হলো।এতদিন সে এই দুরত্বের আগুনে পুড়েছে আর আজ আমি পুড়ছি।সেদিন তার অনুভুতির বহিঃপ্রকাশ হওয়ার পর থেকেই মন শুধু তার কথাই বলে, তার কথাই ভাবে,সারাক্ষন প্রতি মুহুর্ত শুধু তাকেই দেখতে উদগ্রীব হয়ে থাকে আমার দুটি নয়ন।যখন যেখানেই দেখি অপলকে দেখতে থাকি।আশেপাশে কি হচ্ছে ভুলে তাতে মগ্ন হয়ে পড়ি।বেহায়া চোখদুটো বাধা মানে না।নিজেদের সীমা ছাড়িয়েই যায়।এভাবেই একবার তিশা আপুর চোখে পড়েছিল।তাকে মুগ্ধ নয়নে দুচোখ ভরে দেখছিলাম।ঠিক তখনই আপু বলে ওঠে,

— আমার ভোলাভালা ভাইটাকে এভাবে চোখ দিয়েই গিলে খাবি।

তার এমন লজ্জাজনক কথায় ভিষন অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম আমি।ভিষন অস্থিরতায় ছুটে পালিয়েছিলাম।তবে আজ আপুর চোখে আমার জন্য অজস্র ভালোবাসা, স্নেহ আর মায়া দেখতে পেলাম যা সেদিন ছিল না।তবে বেশ ভালো লাগছে আমার।এ দুদিন উনার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছি, উনার কাছে যাওয়ারও চেষ্টা করেছি।তবে উনি সবসময় ইগনোর করেছেন আমাকে।রাগ হচ্ছিলো খুব।ইগোতে বাধছিল তার একাই কি রাগ আছে নাকি! আমারও আছে আমি এত অপমান সহ্য করবো না! আমি তো পরনারী নই তার স্ত্রী আমি।এতোটা হেলা করার কোন মানেই হয় না চোখের পলকে তুলতুলে নরম মনটা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।ভিষন তেজে জ্বলে উঠে তার ঘরে যেতেই দেখলাম কেউ নেই।আমি এদিক ওদিক হাটাহাটি করে এটা ওটা ঠিক করছিলাম।আগ্রাসী স্রোতকে জব্দ করার তীব্র ইচ্ছেকে মনের মধ্যে লালন করে এক প্রকার উচ্ছলিত হয়েই এসেছি এ ঘরে।
কারন আমি জানতো একটু পরে এ ঘরেই আসবে স্রোত।তাই আগেই এখানে ঘাপটি মেরে বসে রইলাম।আমার খুটিনাটি নেড়ে চেড়ে দেখার মাঝেই ঘরে ঢুকলেন উনি।দৃষ্টি ফোনের মাঝে নিবন্ধ।তার আশেপাশে কে আছে? কি হচ্ছে? কিছুই তার দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।মনে হচ্ছে একেবারে ফোনের মধ্যে ঢুকে যাবে।আমি তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।তবে তার ভাবনন্তর নেই।মনে হচ্ছে তিনি আমাকে দেখতেই পান নি।দেখবেন কি করে ফোনের মধ্যেই তো ঢুকে আছে।রাগ হলো আমার। প্রচন্ড রাগ! রাগটা যেন তার এই অবহেলায় আরো তিরতির করে বাড়তে লাগলো।চোখমুখ শক্ত করে তাকে কিছু বলতে যাবো।তিনি চোখ তুলে না তাকিয়েই বললেন,

— এখানে কি?

— এখানে কি আবার? এখানে আসা যাবে না।

— না! আসা যাবে না!আমার পার্সোনাল স্পেসে আমি কাউকে এলাউ করি না। গো গেট লস্ট ফ্রম হেয়ার!

অপমানে রি রি করে উঠলো শরীর।রাগে গা কাঁপতে শুরু করলো অস্বাভাবিকভাবে।রাগ,ক্ষোভ আর অপমানে চোখ ছলছল হয়ে উঠলো।তিনি এখনও একবারের জন্যও তাকায়নি আমার দিকে।আমি মুহুর্তেই নিজেকে শক্ত করে নিলাম।দুর্বল হলে চলবে না! হাল ছাড়া যাবে না! আমার ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাকে!তাই যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা কররাম।

— কোথাও যাবো না আমি! এখানেই থাকবো।এটা এখন থেকে আমারও ঘর ভুলে যাবেন।আর আপনার পার্সোনাল স্পেস বলতে আমি।কারন আমি এখন আপনার সাথে জরিয়ে সেটা ভুলে যাবেন না।

তিনি ফোনটা পকেটে পুরে বুকে দুহাত গুজে সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
— কি বলতে চাইছিস তুই

— বলতে চাইছি না করতে চাইছি।আমার অধিকার বুঝে নিতে চাইছি।বিয়েটা আপনার ইচ্ছেতে হোক বা না হোক তা জানার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নাই। আমাকে এভাবে ইগনোর করতে পারেন না।আর নাই বা অপমান করতে পারেন।আমি আপনার স্ত্রী।আপনার উপর, আপনার ঘরের উপর, আপনার সবকিছুর উপর একমাত্র আমার অধিকার আর কারো নয়। একথাটা মাথায় রাখবেন।

— তুই তোর অধিকার আদায় করতে চাইছিস?

সন্দিহান কন্ঠে প্রশ্ন করেন।আমি মাথা ঝাকিয়ে জবাব দেই।

— হু।

তারপরই তার সেই ভয়াবহ উক্তি যা শোনা মাত্রই কান গরম হয়ে গিয়েছিল আমার।তবে এত সবকিছুর মাঝে আপনাকে একটা কথা ভিষন ভাবাচ্ছে, যেখানে উনি আমাকে এতটা ভালোবাসেন সেখানে হঠাৎ উনি কেন আমাকে নিজের থেকে দুরে রাখছেন অবহেলা করছেন।কারন কি? কিছুই বুঝতে পারছি না।মাথা ব্যাথা করছে উল্টো। সকালেই দিদুনকে রিলিজ করেছে।সারাদিন তার সাথেই সময় কাটিয়েছে।দিদুনই বলেছে তার মান ভাঙাতে। স্বামীরা রাগ করলে স্ত্রীদের উচিত তাদের মানিয়ে নেওয়া।সেই চেষ্টাতেই এতসব কিছু করা।কিন্তু তিনি তো কোনকিছুকেই গুরুত্ব দিলেন না।শুধু কিছু ভয়ানক অসভ্য কথা বলে গেলেন।হুট করেই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে।দুহাতে মুখ ডেকে নিলাম।সত্যি ভিষন লজ্জাজনক কথা। তবে লোকটা লাগামহীন বেপরোয়া মানুষ।এত ভয়ংকর কথা অকপটে বলে ফেললেন কেমন।একটু বাধলোও না।হঠাৎ অনুভব হলো মাথা ব্যাথা একটু বেশিই হচ্ছে।তাই ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।উনার ঘরেই। উনার বিছানায়।

রাত বারোটা। চারপাশের সবকিছু নিরব নিস্তব্ধ।রাতের এই নিস্তব্ধতায় নিজেকে মিশিয়ে নিতেই এসেছে ও। নিজের সাথে! একান্তই নিজের সাথে একা কিছুটা সময় পার করবে বলে দুরের একটা পাহাড়ে এসেছে ও।পাহাড়টা ওতোটা উঁচু নয় আর।লোকালয়ের থেকে তেমন দুরেও নয়।এখান থেকে প্রায় আধঘন্টা পরই মুল সড়ক।যখন ও এখানে আসে তখন রাত ১০ টা। তবে কোন জনমানব ছিল না।একটা সিগারেট নিয়ে তাতে আগুন ধরালো।সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে ভাবলো কি করছে ও! কেন করছে? এরকমটা করা কি খুব দরকার! মেয়েটা হয়তো কষ্ট পেয়েছে! বাচ্চা মেয়ে ওর অনুভূতিগুলোর প্রকাশ না করার ফল ভোগ করেছে ও।এখানে ওর তো কোন দোষ নেই।ওর রাগের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই যার ফলে ভয় পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল ও! তবে ও তো স্রোতকে ঘৃনা করে! আসলে কি তাই করে! নাকি এসব ও ভাবছে! যদি ঘৃনা করে তবে চুপচাপ বিয়েটা কেন করলো? ছোট আব্বুকে কেন বললো না ও আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। পছন্দ করে না ও আমাকে।ছোট আব্বু তো ভিষন ভালোবাসে ওকে।একবার বললে নিশ্চয় ওর কথা শুনতো। হতোনা এই বিয়েটা!দিদুনের জন্য করেছে এই বিয়েটা! হ্যাঁ, হবে হয়তো! ও তো দিদুনকে খুব ভালোবাসে তাই হয়তে দিদুনের কথা ভেবে স্ক্রাক্রিফাইজ করলো ও।ও তো চলেই গিয়েছিল কথার জীবন থেকে। আর কখনো ফিরবে না।ওকে বিরক্ত করবে না বলেই তো সেদিনের রাতের পর আর ওর কাছে যাওয়ার কথা মাথায় আনেনি।ওর থেকে দুরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রেজিস্ট্র পেপারে সাইন করার পর থেকে কেমন পাল্টে গেছে কথা।অদ্ভুত সব আচরন করছে।ওর সাথে যেচে কথা বলতে চাইছে।যে মেয়ে কিনা আদোতে ওর সামনে কখনো আসতো সে ওর কাছে ঘেষতে চাইছি।অবশ্য সেদিন হসপিটাল থেকে বাড়ি ফেরার পরেই কিছু বলতে চাইছিলো ও।কিন্তু স্রোত শোনেনি।উপেক্ষা করেছে।নিজের সিদ্ধান্তর অটল থেকেছে।তবে আজকাল বড্ড বেশি জ্বালাতন করছে মেয়েটা।সারাক্ষন চোখের সামনে ঘুরঘুর করছে।আজতো ওর ভাবনার সম্পুর্ন বিপরীতে কাজ করেছে।ওর ই ঘরে ঢুকে ওকে শাসাচ্ছে, ওর সাথে জোর গলায় কথা বলছে,নিজের অধিকার চাইছে! হলো কি হঠাৎ তরে ওর? তাহলে কি ও সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিতে চাইছে।সেচ্ছায় নাকি পরিবার আর দিদুনের সুস্থতার কথা চিন্তা করে।আর ভাবতে পারছে না স্রোত কেমন গুলিয়ে যাচ্ছর এলোমেলো হচ্ছে চারিপাশ।ও সিগারেটটা শেষ করে ঘাসের উপর ধপাস করে শুয়ে পড়লো।দুরে কোথাও জোনাকির ঝাঁকের ঝলমল করা আলো দেখা যাচ্ছে। তবে তা স্পষ্ট নয়।আকাশে বড় থালার মতো উজ্জ্বল চন্দ্র।জোস্নাৎর আলোয় আলোকিত ভুবন।চারদিকে মৃদু মন্দ শীতল বাতাস বারবার গা ছুয়ে দিচ্ছে।মনের মাঝের বিষন্নতারা হারিয়ে গেল ওই ঘন কালো আধারের মাঝে৷ প্রায় অনেক্ষন সময় অতিবাহিত হওয়ার পর উঠে চলে ওলো ও।রাত প্রায় ১ টার কাছাকাছি সময়।বাড়ি ফেরা উচিত বলেই স্থান ত্যাগ করলো ও।

মাঝে মাঝে বড্ড আফসোস হয় স্রোতের কেন ও নিজের অনুভুতি প্রকাশ করতে পারে না।ভিতরটা কাউকে দেখাতে বা বোঝাতে না পারলেও প্রিয় মানুষগুলো ওর কষ্টটা ঠিক আন্দাজ করতে পেরেছে।স্রোত জানে দিদুন কেন এভাবে ওদের বিয়েটা দিল।দিদুন তো সবটাই জানতো।এই একটা মানুষকে স্রোত নিজের মনের সব কথা বলে।দিদুন ও চাইতো কথা যেন স্রোতকে ভালোবাসে।তবে কথার স্রোতকে এড়িয়ে চলা।অবহেরা অবমাননা এসব কিছুর ফলে স্রোতের মনের মাঝে যে কষ্ট জমেছে তার আন্দাজ তিনিও কিছুটা করেছিলেন।কারন তিনিও লক্ষ করতেন স্রোত এ বাড়িতে আসলে কথা দরজা বন্ধ করে রাখে।ঘর থেকে বেরোয় না।ওর সামনে আসে না।যখন ও না থাকে তখন সবার সাথে হেসেখেলে আনন্দ করে।যতক্ষণ স্রোত বাড়ির বাইরে ততক্ষণই কথার আচরন স্বাভাবিক থাকে।তিনি ভেবেছিলেন হয়তো লজ্জায় কথা স্রোতের মুখোমুখি হদে চাই না।তাই তিনি বেশি ঘাটেন নাই কিন্তু কিছুদিন ধরেই উনার কোনকিছু ঠিক মনে হচ্ছিল না।স্রোতের মন মেজাজ ভালো দেখতে না।কেমন যেন এলোমেলো আর অগোছালো লাগতো ওকে।স্রোত কথাকে নিয়ে ওর মনের সুপ্ত অনুভুতিগুলো নিয়ে কখনো কারো সাথে খোলামেলা আলোচনা করেন নি।এমনকি বন্ধুরা কেউ জানে না ওর মনে পুষে রাখা কথার জন্য ওর তীব্র ভালোবামার কথা! ওর শ্যামাঙ্গীনির ওকে অবহেলায় ওর বুকের মাঝে তিলে তিলে গড়ে ওঠা কষ্টের কথা।তার থেকে দুরত্বে থেকে সেই দুরত্বের আগুনে পুড়ে একটু একটু করে ছাই হওয়ার কথা! কাউকে বলতে পারেনি ও! তবে যেদিন দিদুন ওকে চেপে ধরেছিল সেদিন স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল।কারন ওর শ্যামাঙ্গিনীকে ওর ভাবনাগুলোকে ও অন্যকারো কাছে প্রকাশ করতে চাইনি।ও চেয়েছিল ওর ভাবনায় ওর শ্যামাঙ্গিনীর সৌন্দর্য তার রুপ লাবণ্য তার লজ্জা রাঙা রুপ।যাকে ও কল্পনায় সাজিয়েছে তাকে ওর ভাবনার প্রেক্ষিতে ওর বর্ননায় অন্য কেউ দেখুক! ওর শ্যামাঙ্গিনী কেবল ওর! তাকে নিয়ে ভাবার অধিকারও কেবল ওর! কল্পনা করার অধিকারও ওর! আর কারোর নেই! কারোর না!

ওদের মাঝে আসলে কি চলছে মান অভিমান নাকি অন্যকিছু সেটা জানার উদ্দেশ্যেই সেদিন কথার সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন । তবে সেদিন রাতে যখন কথাকে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে নিজের ঘরের দরজা দিতে দেখেছিল সেদিন তিনি বুঝেছিলেন।নিশ্চয় কিছু হয়েছে। ছাদে তখন স্রোত একাই মেঝেতে হাঁটু মুড়ে কাঁদতে কাঁদতে নিজের অব্যক্ত অনুভূতিকে ব্যক্ত করছিলো তখনই সবটা বুঝতে পারেন তিনি।তাই তো এভাবেই ওদের বিয়েটা দেন উনি।স্রোত আর কথা দুজনকেই ভিষন ভালোবাসেন তিনি।তাদের জীবনের এই বিপর্যয় তাও আবার একে অপরকে কেন্দ্র করে মানতে পারেন নি উনি।কষ্টগুলো ভিতর ভিতর আরো পীড়া দিচ্ছিলো।কি করবেন? কি করে এদেরকে এক করবেন এই দুশ্চিন্তা ঘীরে ধরেছিল তাকে।স্রোতের অবস্থা তো দিনদিন বেগতিক হচ্ছে।এভাবে ছেলেটাকে কষ্টে দেখতে পারছেন না উনি।এত শত চিন্তা হতাশা আর অস্থিরতার ফলে তার শারীরিক অবস্থা বেগতিক হয়। যার দরুন তিনি হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন।তবে তা ততোটা প্রানঘাতি ছিল না বিধায় এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন উনি।তবে বয়স হয়েছে উনার কখন আল্লাহ তাকে ডেকে নিবেন জানা নেই।তাই এদুটোর চারহাত এক করে দিতে চেয়েছিলেন।যাতে জীবিত থাকা অবস্থায় অন্তত ওদের সুখে দেখতে পারেন।কারন এক সাথে থাকলে আর পবিত্র সম্পর্কের জোরে ওদের মাঝের মান অভিমান শেষ হবে।

রাত প্রায় দুটো।বাড়ি ফিরে সোজা নিজের ঘরে এলো ও।ঘরে এসেই চমকে গেল।বিষ্ফোরিত নয়নে…..

# চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে