তুমি নামক যন্ত্রণা পর্ব-০৫

0
1213

#তুমি নামক যন্ত্রণা
#লেখনীতেঃ হৃদিতা ইসলাম কথা
পর্বঃ৫

— ভালোবাসা একটা সুক্ষ্ম অনুভূতি।যা প্রথমে মনের মাঝে ভালোলাগার সৃষ্টি করে।তারপর ধীরে ধীরে সে ভালোলাগা ভালোবাসায় রুপান্তর হয়।ওই মানুষটির ভালোবাসা, কেয়ারিং গুলো মনের মাঝে জায়গা করে নেও।অজান্তেই তার প্রতি একটা ভালোলাগাটা ভালোবাসা হয়ে ওঠে।সে মানুষটার প্রতি অনুভূতিটা সময়ের সাথে সাথে প্রগাঢ় হতে থাকে।

আমি ভালোবাসা মানে এটুকুই বুঝি।কারন এর বেশি তো উপলব্ধি করতে পারিনি।কিন্তু তোর ভাইয়াকে নিজের মত করেই ভিষন ভালোবাসি।তবে সবার কাছে ভালোবাসার বর্ননা বা ভালোবাসার মানে এক হয়না।একেক জন একেক ভাবে অনুভব করে। তোর ভাইয়ার প্রতি ভালোবাসাটা হুট করে আসেনি।ধীরে ধীরে এসেছে।তবে তার বর্ননা সে আমাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছে।

ভালোবাসা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা আত্মার সম্পর্কে সাথে জরিয়ে যায়।প্রিয় মানুষটির প্রতি তীব্র আসক্তি জন্মে।তাকে ছাড়া এক মুহূর্তে কাটানো মৃ*ত্যু সম যন্ত্রণা অনুভবের সমান হয়।সে আশেপাশে থাকলে সবকিছু ভালো লাগে।

— আপুইইইই গোঅঅঅ! তুমি তো দেখছি ভাইয়ার প্রেমে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছে।বাহ! বাহ!

— পাকনি বুড়ি একটা।তুইও বুঝবি যেদিন তুই কাউকে ভালোবাসবি।ভালোবাসার অনুভুতি টা যেমন সুখের তেমন দুঃখের ও।একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।তোর ভাইয়ার সাথে ঝগড়া কমই হয়।অবশ্য ঝগড়াটা আমিই শুরু করি।তবে রাগ করে যখন কথা না বলি।যখন তাকে অনুভব করি।তখন বুঝি আমি ঠিক কতটা তাকে ভালোবাসি।আসলে দুরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়। প্রিয় মানুষটির অভাব বুঝতে শেখায়।তবে সময় থাকতে ভালোবাসাকে আকড়ে ধরতে হয়।সময় ফুরিয়ে গেলে হাজার হাতরে বেড়ালেও তা খুঁজে পাওয়া যায় না।সত্যি- কারের ভালোবাসা কখনো হারায় না!তবে চাপা পড়ে যায় তীব্র অভিমানের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে যায়!তাই তাকে চাপা পড়তে দিতে নেই! আবদ্ধ হতে দিতে নেই।তাকে নিজের মাঝে বিলীন করে নিতে হয় নতুবা তার মাঝে নিজেকে বিলীন করতে হয়।

— সত্যি আপু তোমার মত করে কখনো এভাবে ভাবিনি।আর ভাবতেই বা যাবো কেন? আমাকে তো কেউ ভালোই বাসে না।আচ্ছা আপু ভাইয়া যেমন তোমাকে ভিষন ভিষন ভালোবাসে! ঠিক তেমনভাবে আমাকে ভালোবাসার জন্য ও কি কেউ আসবে কখনো?

— কেন আসবে না ঠিক আসবে! তোর মতো মিষ্টি মেয়ে কোন খুউউব ভাগ্যবান পুরুষই পাবে।যে তোকে শুধু ভালোবাসবে না।যত্ন করে আগলে রাখবে তার বক্ষপিঞ্জিরায়।

— কে জানে কবে আসবে সে!

দুহাটু মুড়িয়ে মুখ গোমরা করে বললাম।তিশা আপু একগাল হেসে আমার গাল টেনে দিয়ে বললো,

— দেখবি সময় মতো ঠিক চলে আসবে।বা হয়তো এসেছে।তুই জানিস না।সময় হলে জানতি পারবি। বুঝতে পেরেছিস।তখন তাকে চিনে নিবি।

— সত্যি বলছো আপু! সে আসবে!

— অবশ্যই আসবে।

বলেই কথা তিশার আপুর বুকের মাঝে ঝাপিয়ে পড়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম ওকে। আমার মাঝে কেমন ভালোলাগা কাজ করছে।কখনো এসব নিয়ে ভাবিনি আমি।কারো সাথে কথা ও বলিনি।ভালোবাসা, অনুভূতি, প্রিয় মানুষটির প্রতি তীব্র অভিমান, অভিযোগ এসব সম্পর্কে আজ প্রথম কারো সাথে এত কথা বললাম।এখন আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরছে।কবে? কখন? কিভাবে? সে মানুষটা আমার সামনে আসবে!আচ্ছা, আমি কি চিনে নিতে পারবে! নাকি না বুঝে হারিয়ে ফেলবো! কি করে চিনবো তাকে! আপু তো বললো সবার ভালোবাসা এক না! তাহলে!

.
কেটে গেছে ৬ দিন।এই ছদিন বেশ ভালোই দুরত্ব বজায় রেখেছি আমি।তবে যতসব উদ্ভট ঘটনার সময়ই তার সামনে পরতে হতো আমাকে।এইতো সেদিন গোধূলির ঠিক আগ মুহূর্তে আপু আর আমি ছাদে ছিলাম।আমি প্রকৃতিতে ডুব দিয়েছে সে অনেকক্ষণ। গোধুলির সময় টা আমার ভিষন প্রিয়।আলো আধারের মিলন সেতু এই গোধুলির। সুর্য অস্ত যাবে যাবে ভাব। পশ্চিমে হেলে পড়েছে বেশ অনেকটাই।নিভু নিভু হলুদরঙা আভা মিলিয়ে যাওয়ার জোগাড়।হঠাৎ দেখলাম ছাদে কেউ নেই।বুঝলাম আপু ফোনে কথা বলতে বলতে হয়তো নিচে চলে গেছে। এই সময়টা মন দিয়ে উপভোগ করছিলাম বলে হয়তো বিরক্ত করতে চায়নি।কি জানি কি হলো হঠাৎই দমকা হাওয়া এসে মন প্রান শীতল করে দিল।একটু জোরেই বাতাস বইছিলো।দুহাত মেলে তাকে প্রানপনে আপন করে নিজের মাঝে শুষে নিচ্ছিলাম। ঠিক তখনই ওড়না ফুরুৎ করে ওড়ে গেল।চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি।ব্যাটা বজ্জাত ওড়নাটা ফাকি দিল আমায়।গিয়ে পড়লো একদম স্রোত ভাইয়ার বেলকনির রেলিং এর ওপর।এমনিতেই গায়ে ওড়না নেই তার উপর শীতল হাওয়া। গা হীম হয়ে আসার জোগাড়।রেলিং ধরে নিচের দিকে স্রোত ভাইয়ার বারান্দার রেলিং এ অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছি।এসময় ভাইয়া নিশ্চয় তার রুমে থাকবে না।এই ভর সন্ধ্যা বেলা তার বাড়িতে থাকার কথা নয়। সকালে ব্রেকফাস্ট করার পর তো তাকে আর দেখলাম না।হয়তো কাজে গেছে।এটাই মোক্ষম সুযোগ।যেই ভাবা সেই কাজ।ওড়না আনার উদ্দেশ্যে পিছন ঘুরতেই কারো বুকের সাথে বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। আমার সামনে অবস্থানরত মানুষটি বিশাল দেহী একজন পুরুষ। তার কাছে আমি চুনোপুটি।তাই মাথাটা গিয়ে ঠেকলে ঠিক তার প্রসস্ত ইস্পাত দিয়ে গঠিত শক্ত বুকের মাঝে। আচমকা ঘটনাটি ঘটাতে ব্যাথা ও পেলাম খুব।মুখ থেকে “আহ” শব্দ উচ্চারন হলো।আমি দুপা পিছিয়ে কপাল ডলতে ডলতে মাথা তুলে তাকাতেই থমকালাম।স্রোত ভাইয়া স্বয়ং আমার সামনে পাথরের মুর্তির মত দাড়িয়ে।

স্রোত একদম অপলকে তাকিয়ে আছে কথার মুখের দিকে ।গোধূলির লালাভ আলো চোখেমুখে আচড়ে পড়ছে তার সাথে এলোকেশ। আরো মাতাল করা স্নিগ্ধ চোখ।খোলা চুলগুলো হাওয়ার বেগে উড়ে এসে চোখেমুখে পড়ছে।আর স্রোতের ভেতরে এক অদৃশ্য ভয়াবহ ঝড় তুলে দিচ্ছে।এই এলোকেশীর রুপের মুগ্ধতায় হারিয়ে যেতে চাইছে।ওর চোখে চোখ পড়তেই ওর মনে হলো ওই বাচ্চা বাচ্চা নিষ্পাপ মুখশ্রীতে রাজ্যের মায়া ছড়িয়ে আছে। ওই চোখে চোখ পড়তেই মনে হলো এ মুখে যেন সব লজ্জারা এসে ভর করছে।ওই লজ্জারাঙা মুখে হাজার বার খু*ন হতে চায় ও।লালচে রঙে কেমন রাঙা বতী মনে হচ্ছে ওর কাছে কথাকে।যেন কোন সদ্য ফুটন্ত রক্তজবা ওর সামনে তার প্রানবন্ত চমৎকার ঐশ্বর্য মন্ডিত রুপ নিয়ে দাড়িয়ে। চাক্ষুষ এমন গোধূলির রুপের আদলে অপরুপ রূপবতী তরুণীর দেখা যেন এই প্রথম বার পেল সে।স্রোত মহাশয়ের মনে হতে লাগলো। ও আজকের পুর্বে এমন রুপবতী নারী অনেক দেখেছে তবে এই তরুনীকে যেন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সুন্দরি রমনী বলে মনে হচ্ছে।

উনার চাহনি দেখে মনে হচ্ছে উনি বেশ গম্ভীর ভাবনায় মত্ত।মনে হয় কোনো ঘোরে আছেন উনি।তবে কেন জানি আমি ভিষন লজ্জা পেলাম। অকারনেই! এর কোনো মানে হয়! না হয় না!লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমার! কিন্তু এভাবে একধ্যানে তাকিয়ে থাকার কি আছে?উনি কি এমন ভাবছেন? আচ্ছা আমাকে নিয়ে ভাবছেন নাতো? আমাকে নিয়েই বা কেন ভাববেন? কি ভাববেন?

মনের মাঝে হাজারো প্রশ্ন উকি দিল।নিজের ভাবনা চিন্তার ধরন দেখে আমি নিজেই বিস্মিত হলাম। তারপর সব চিন্তা ভাবনা ছুটিতে পাঠিয়ে উনার এভাবে আচমকা আমার সামনে প্রকট হবার দায়ে দু চারটে কঠিন কথা শোনাতে ইচ্ছে হলো। নিজের মন বাঞ্চনা পূর্ণ করার উদ্দেশ্য গলা খাকারি দিয়ে যেইনা কিছৃ বলবো।আচমকাই মনে হলো উনি ধ্যানচ্যুত হলেন।ভ্যাবাচেকা খেয়ে কিছুক্ষণ আমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখলেন।তারপর হুট করেই দুপা এগোলো আমার দিকে।আমিও সয়ংক্রিয়ভাবে দুপা পিছিয়ে গেলাম।কড়া কথা শোনানোর চিন্তা ভাবনার ছুটে পালালো।মনের মাঝে ভয় যেন ভিড় জমালো।ভয়ে ভয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে আটকে আটকে বললাম,

— আপনি এগোচ্ছেন কেন ভাইয়া?

— তুই পেছনে কেন যাচ্ছিস?

— আমি এগিয়ে আসছেন বলেই আমি পিছিয়ে যাচ্ছি।

— আমি এগিয়ে আসলেই তোকে পিছিয়ে যেতে হবে।

আমি এবার রেলিং এর কাছে চলে এসেছি।রেলিং এ আরেকটু পা পেছনে দিলেই হয়তো পড়ে যাবো।তার আগেই উনি আমার ডান হাতটা খপ করে ধরে একটানে তার কাছে নিয়ে এসে পিছন থেকে দুহাত বেধে দিলেন।সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হলো কিচ্ছু বুঝে উঠতে পারলাম না।মান্ধাতার আমলো ঢিলা মস্তিষ্ক পরিস্থিতি বুঝতে সময় নিল।আমি পরিস্থিতি বুঝে উঠতেই ছোটাছুটি শুরু করলাম। তবে বিপরীত মানুষটা অপারগ! একচুলও নড়াতে পারলাম না।রাগ হলো আমার।মেজাজ টা মনে হলো একটু চটলো।আমার মনে হলো নিজেকে আরেকটু সাহসী প্রমান করা দরকার।তাই চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলাম। ভেতরের ভয়টাকে কাটানোর চেষ্টা। তারপর একটু জোর গলায় বলেই ফেললাম।

— ভাইয়া দেখুন।

— যা দেখার তা তো দেখতেই পাচ্ছি। নতুন করে আর কি দেখাতে চাস।

চোখ আকস্মিক আকাড়ে বড় হয়ে গেল। নিজের দিকে চোখ পড়তে আমি নিজেই লজ্জায় চোখ বুঝে নিলাম।ইশশ! মনেই ছিল না।গায়ে ওড়না নেই।ছিহঃ ছিহঃ এই অবস্থায় ভাইয়ার সামনে ছিলাম আমি আর উনি আমাকে দেখছিলেন।তাও ওভাবে! ছিহঃ মান ইজ্জত সব জল ছাড়াই ধুয়ে গেল আমার।হুট করেই সেদিনের কথা মনে পড়লো। রাগে দুঃখে অপমানে সেদিন নিজের বিধ্বস্ত অবস্থার কথা মনেই ছিলনা।হয়তো সেজন্যই ভাইয়া ওভাবে বলেছিল।অখচ আমি তাকে কত বাজেই না ভেবেছি।সব কিছু বুঝে উঠতেই নিজের গালে নিজেকেই কষে দুটো চড় লাগাতে ইচ্ছে হলো।
ইচ্ছেটাকে দুর্দমনীয় রেখে কিছু বলবো তার আগে উনার রাগী কন্ঠে শুনতে পেলাম।

— এই অবস্থায় ছাদে কেন এসেছিস তুই?
উনার রাগী কন্ঠে অন্তরাত্মা কেপে উঠলো আমার।তবে ভুলটা আমারই।ভাবতেই ভিষন অনুশোচনা হলো আমার।অনুরোধী কন্ঠে বললাম,

— প্লিজ ভাইয়া আমাকে বকবেন না।আমি ইচ্ছে করে কিছুই করিনি।ওড়না ছাড়া ছাদেও আসেনি। আসলে ওই যে….ওই!

–কি ওই যে ওই যে করছিস?

আমি নিচু কন্ঠে শুধালাম।
— আমার ওড়নাটা হাওয়ার বেগে নিচে পড়ে গেছে।তাই ওটাকে আনার জন্যই যাচ্ছিলাম।

— কোথায় ওটা?

— আপনার বারান্দার রেলিং এর উপর।

উনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমাকে ছেড়ে দিলেন।কিন্তু পেছনে ঘুরার সাহস পাচ্ছি না।উনি বুঝতে পারলেন আমার অবস্থা। হয়তো সেজন্যই তার গায়ের জ্যাকেটা আমার গায়ে জরিয়ে দিলেন।আর পিছন থেকেই আমার ভিষন কাছে এসে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,

— আর যেন কখনো ভুল করেই এভাবে আমার সামনে আসবি না।নাহলে নিশ্চিত কোন অঘটন ঘটে যাবে।তার জন্য সম্পুর্নভাবে কতৃপক্ষ দায়ী হবে। আমি নই।

বলেই আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন।আর আমার দুর্বল মস্তিষ্ক তার ভয়ানক কথার অর্থ খুজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।তবে কোন কুল কিনারা করতে পারলো বলে মনে হলো।এক পর্যায় তারা সচকিত হলো।স্নায়ুতন্ত্র সচল হলো।পিছনে ফিরে তার চলে যাওয়া দেখলাম।তারপর রুমে চলে গেলাম।

.
শুধু সেখানেই থেমে ছিলনা অঘটন গুলো। আপুর সাথে শপিং এ গিয়ে আমার একটা উইন্ড চাইম ভিষন পছন্দ হলো। তাই সেটা কিনে আনলাম। আমার জন্য বরাদ্দ করা ঘরটিতেই তা লাগানোর প্রচেষ্টায় চেয়ার নিয়ে উপরে উঠলাম। কখন যে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেললাম বুঝতে পারলাম না।যখন তখন পড়ে গিয়ে যা তা একটা অবস্থার হওয়ার আগেই আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলাম।পরমুহুর্তেই হাওয়ায় ভাসার আভাস পেলাম।একটা শক্ত পুরুষালি দেহের সাথে আটকে আছি আমি আর সে তার দুহাতের বাধনে আগলে রেখেছে।ভয় কাটিয়ে চোখ মেলতেই দেখতে পেলাম অনাকাঙ্ক্ষিত এক মুখ।সে কখনো আমার কাছে আকাঙ্ক্ষিত নয়।কিভাবে যেন সবসময় তার সামনেই এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে যায় আমি।করুনা হয় আমার নিজের উপর।ভিষন মায়া হয় আমার। এই অদ্ভুত, গম্ভীর, রাগী মানুষটাই কেন এভাবে আমার এতোটা কাছে চলে আসে তার স্পর্শে অন্যরকম শিহরন অনুভব হয় কেন?
লজ্জা আর ভযে কুকড়ে গেলাম আমি। মাথা নিচু করে নিতেই তিনি ছেড়ে দিলেন আমায়।আগ্রাসী কন্ঠে বললেন,

— ছোটবেলার মত এখনও বুঝি আমার কোলে চড়ার ইচ্ছে জাগে।তা জাগতেই পারে।তুই বলতে পারিস আমাকে!আমি মাইন্ড করবো না!বরং আদর করে কোলে তুলে নেব।

উনার এমন খাপছাড়া কথায় গা শিরশির করে উঠলো।
রাগ নিয়ে নিজে নিজেই বিড়বিড় করলাম।

–এই লোক তো আচ্ছা বজ্জাত।সময় সুযোগ বুঝে ঠিক কথা শোনাতে ওস্তাদ।আর কিসব বললো, ছিছি! আমার উনার কোলে চড়ার শখ।হুহ! আমি ছোট থাকতে উনার কোলে চড়তাম।তাই বলে এখন তার কোলে চড়তে চাই। কি করে ভাবলেন উনি! উদ্ভট মানুষ আর তার উদ্ভট চিন্তাভাবনা।তার থেকেও ভয়ঙ্কর তার কথা বার্তা।একদম লাগাম ছাড়া।এই লোককে ব্ইরে থেকে দেখলে কেউ বলবে না।এই লোক এইরকম নস্টোলজি টাইপের কথাবার্তা বলতে পারে।এনার তো ঘাড় মটকে দেয়া দরকার।ইইই…
দাঁত কিড়মিড় করলাম।ইচ্ছে করছে বজ্জাতটার চুল টেনে ছিড়ে ফেলি।কোলে কেন চড়বো।একবারে তার ঘাড়ে চেপে বসে তার ঘাড় মটকে দেব।

এভাবেই কাটতে লাগলো দিন।তার থেকে যতই দিরে থাকতে চেয়েছি ততটাই তার কাছে চলে এসেছি।ইচ্ছাকৃত নয়। পরিস্থিতি এনে দিয়েছে। কিভাবে এই এক সপ্তাহ কেটে গেল টেরই পেলাম না।প্রিয় মানুষগুলোর সাথে সময় গুলো খুব দ্রুতই কেটে যায়।তাদের যেন ইয়ত্তা পাওয়া যায় না। তিশা আপুর সাথে এ কদিনে আরও ঘনিষ্ঠ হডে উঠলাম।আপু আমাকে তার লাভ স্টোরি বললো আমি আগ্রহ নিয়ে শুনলাম।ভাইয়া কখনো নাকি তাকে ভালোবাসি বলেনি।তবে তারা দুজনেই বুঝতে পেরেছিল। তারা একে অপরকে ভালোবাসে।তাই দুজনের সম্পর্কটা এভাবেই এগিয়েছে। আজ ওদের এঙ্গেইজমেন্ট আবার তার আগে আপুর বার্থডে সেলিব্রেশন হবে।এটা নাকি রোহান ভাইয়ের ইচ্ছে। সে তিশা আপুর এই পৃথিবীতে তার হয়ে যেদিন এসেছে সেই দিনই সে তাকে নিজের জীবনের সাথে জরিয়ে নিতে চায়।তবে এখন শুধু এঙ্গেইজমেন্ট হবে।বিয়ের জন্য আরও দুবছর অপেক্ষা করতে হবে।ভাইয়ার প্রজেক্টের কাজটা বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে যেখানে দুবছরের প্রজেক্ট। কাজটা মেষ হলে ভাইয়ার সফলতা আকাশচুম্বী হবে।তাই তারা দুজনেই অপেক্ষা করবে।এমনিতেই তারা নিজের মন প্রান একে অপরের নামে লিখে দিয়েছে।এখন শুধু শরিয়ত মোতাবেক আপন করে পাওয়া।ভালোবাসা থাকলে অপেক্ষা ম্যাটার করেনা।তীব্র ভালোবাসাটা কখনোই অপেক্ষার প্রহরে ফিকে হয়ে যায় না।তা বেড়ে যায় বহুগুনে।

আজ আপুর বার্থডে।আপু ঘুমিয়ে পড়েছে ১১ টা বাজেই।তবে আমার চোখে ঘুম নেই। আমি রাতভর পাইচারি করছি।ক কাপ কফি খেয়েছি জানা নেই।আপু ঘুমাতেই আমি আমার প্ল্যান মোতাবেক কাজ শুরু করলাম।আমার সাথে যোগ দিল।রোহান ভাইয়া।আপুকে ঠিক রাত বারোটায় বড়সড় একটা সারপ্রাইজ দেব।কারন ভাইয়ার কাল সকালে আসার কথা ছিল।তবে তার কাজ সম্পুর্ন হওয়ায় উনি আজই ব্যাক করেছেন।এটা তিশা আপুকে জানাতে বারন করেছি।প্ল্যানে স্রোত ভাইয়াকে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল না।তবে পরে ভাবলাম।আপু সবাইকে একসাথে পেয়ে ভিষন খুশি হবে।তাই শুধু আমরাই না।আব্বু আম্মু দিদুন আর আপুর হবু শ্বশুড়বাড়ির সব লোকজন মিলে প্লযান মোতাবেক কাজ করলাম।ঠিক ঘড়িতে যখন বারোটা বেজেছে তখনই আপুকে সারপ্রাইজ দিলাম ।

আপু ভিষন অবাক।হঠাৎ করে এরকম কিছু আশা করেনি হয়তো।কেননা বারোটা পর্যন্ত আমাদের সাথেই ছিল।আমরা স্বাভাবিক ছিলাম। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল।আপুর রুমটাকেও যতটুকু সম্ভব ডেকোরেট করেছি।অন্ধকার ঘরে আর কতটুকুই বা সম্ভব।
তবে আপু ভিষন খুশি ছিল।একদম কান্নাই করে দিয়েছে রোহান ভাইয়াকে দেখে। করবেই তো এতদিন পর তাদের দেখা। তাদের ভালোবাসা এরকমই একজন অপরজনকে ভালোভাবে বোঝে।আপুর রিলেশন পাঁচ বছরের।আর এর মধ্যে ভাইয়া বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরেই ছিল।আউট অফ কান্ট্রি থাকার পরও তাদের ভালোবাসা কমেনি একবিন্দুও।

#চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে