তুমি দর্পহরন পর্ব-৩৪+৩৫+৩৬

0
140

#দর্পহরন
#পর্ব-৩৪

“আপা, আমি খুব রাগ করলাম। আপনি আমাকে একদমই ভুলে গেছেন। আগে সকাল বিকাল ফোন দিয়ে এটা সেটা আবদার করতেন আর এখন তিনমাস পার হয়ে যায় আপনি আমার একটা খবর নেন না। আমি কি পুরনো মানুষ হয়ে ভুল করেছি?”
সালিম সাহেব প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় আকুতি জানায়। প্রধানমন্ত্রী মৃদুস্বরে হাসে-“সালিম, তুমি শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝতেছ। তোমার উপর আমি কেন রুষ্ট হবো? যদি রুষ্ট হইতাম তাহলে কি তোমাকে পাশে বসাইতাম?”
সালিম সাহেব কথা খুঁজে পায় না। নেত্রী থেমে থেকে বললো-“কিন্তু এটাও ঠিক আমি তোমার কাজে রুষ্ট হয়েছি। এতো বেশি অভিযোগ ছিল তোমার বিরুদ্ধে। সবাই বলতো আমার আশকারায় নাকি তুমি এতো সাহস পেয়েছ। তাই বাধ্য হয়ে নতুন কাউকে তোমার জায়গায় দিয়েছি। কি জানো, বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম হিংস্রতা পছন্দ করে না। অতিরিক্ত দূর্নীতি, ক্ষমতায়ন এসবে তাদের এলার্জি আছে। সেই মতো চলার চেষ্টা করো।”
সালিম সাহেব খুশি হয়ে গেলো-“আপা, আপনি একদম চিন্তা করবেন না। দেখবেন আপনাকে অভিযোগের কোন সুযোগ দেব না।”
“সুযোগ না দিলে ভালো সালিম। রাগীব ছেলেটা অল্প বয়স হলেও বেশ গুছিয়ে কাজ করে। সবচেয়ে বড় কথা ও ক্লান্ত হয় না। দেখোনা এতো বড় সম্মেলন গেলো কোন ধরনের কোন অনু্যোগের সু্যোগ রাখেনি। আর এই তিনমাসে একটা অভিযোগ আসেনি তাকে নিয়ে। কাউকে সু্যোগই দিচ্ছে না।”
প্রধানমন্ত্রী মুগ্ধ চোখে রণকে দেখলো। সে তখন মাইকে ঝাঁঝালো বক্তব্য দিচ্ছে। লোকের তুমুল করতালিতে কান তালা লেগে যায় সালিম সাহেবের।
“এখান থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এক্সপ্রেসওয়ে নির্মান হবে সালিম। আর এটা কোন বিদেশি কোম্পানি করবে না। চন্দ্রানীকে তো দেখেছ। ও এসব নিয়ে পড়ালেখা করেছে। ভাবছি ওকে আর রাগীবকে এ কাজের জন্য কনসাল্টেন্ট নিয়োগ দেব। দু’জনেরই প্রচুর এনার্জি। ভালো ভাবে পরিদর্শন করে কাজ করাতে পারবে।”
“জ্বি আপা।”
ক্ষীনকন্ঠে উত্তর দিলো সালিম সাহেব। বক্তব্য দেওয়ার জন্য নাম ঘোষণা হতেই নেত্রী উঠে গেলো। সালিম সাহেব টের পেলো কিছুক্ষণ পর একের পর ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে নেত্রী ওরফে প্রধানমন্ত্রী। বারবার আকারে ইঙ্গিতে এটাই পরিস্কার করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন এলাকায় নেতা হিসেবে রণর জুরি মেলা ভার। সামনে একপ্রেসওয়ে নির্মান হবে তারপর বন্দরকে আর্ন্তজাতিক মানের বন্দর হিসেবে তৈরি করা হবে, একটা আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানি এখানে ইনভেস্ট করতে চায়। এসবের পুরো কৃতিত্ব রাগীবের। সে এলাকার যোগ্য নেতা হিসেবে নিজেকে প্রমান করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

প্রশংসা বানী শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা সালিম সাহেবের। এলাকার লোকের উচ্ছ্বাস দেখার মতো। প্রাবনের মতো লোক আসছে। সালিম সাহেব শুকনো চোখে জনস্রোতে তাকালো৷ সোহেল সামনের দিকেই দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে তাকাতে দেখে হাত নাড়লো। সালিম সাহেব সে হাত দেখতে পেলো কিনা বোঝা গেলোনা। পাশ থেকে বিভিন্ন মন্তব্য কানে আসছে তার। মেজাজ খারাপ হচ্ছে। গত তিন মেয়াদে ইব্রাহিম পরিবার কি কি জুলুম করেছে সে বিষয়ে টুকরো টুকরো সংলাপ কানে আসছে। কেউ কেউ বলেই দিলো নেত্রী আর ইব্রাহিম পরিবারের কাউকে নমিনেশন দেবে না। নতুন মন্ত্রী ভালো কাজ করতেছে তাকেই রাখবে। মেয়র হিসেবেও নতুন কাউকে দেবে। সালিম সাহেবের পর আর কেউ নাইও যে ভালো নেতৃত্ব দেবে। কাজেই ইব্রাহিম পরিবার শেষ, ওদের রাজনৈতিক জীবন শেষ। এসব শুনে সোহেলের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল সোহেলের মধ্যে।

পরের আধাঘন্টায় নেত্রী যখন ব্যবসায়ীদের সাথে মিটিং করলো তাতে রণ এলাকার নেতা হিসেবে নিরঙ্কুশ সাপোর্ট পেয়ে গেলো তখন সালিম সাহেবও চমকে গেলো। তাকে কথা দেওয়া মানুষগুলোও যখন রণর দিকে ঝুঁকে গেলো তখন সে সত্যিই হতাশ হয়ে গেলো। ভ্যাবাচ্যাকা দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো। বাপের নাজেহাল অবস্থা দেখে সোহেল ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিলো। ওর ইচ্ছে করছে এখনই ছুটে গিয়ে রণর মাথা ফাঁটিয়ে দিতে। এর জন্য সব ঝামেলা পাকছে। ওদের ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে রণ। আজ ওর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। অদূরে বসে থাকা বাবাকে দেখে নিলো চোরা চোখে। চারপাশে তাকায়, তারপর ধীরে ধীরে মিটিং স্থল থেকে বেড়িয়ে গেলো।

*****

শুভ্রা হতবিহ্বল অবস্থায় আছে। জলির অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে তখনই চেচামেচি করে তন্ময়কে বিদায় করেছে। হাসিখুশিকে কাছের হাসপাতালে ফোন করে এম্বুলেন্স পাঠানোর কথা বলে নিজেকে রণর নাম্বারে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মিহির কিংবা রাজীবের নাম্বার নেই তার কাছে। ছুটে এসে হাসিখুশির কাছে জানতে চাইলো, মিহির বা রাজীবের নাম্বার আছে কিনা। মিহিরের নাম্বার পাওয়া গেলো। কিন্তু মিহিরও ফোন ধরছে না। মাঝে মাঝে তার নাম্বারও আনরিচেবল বলছে। হাসিখুশি এরইমধ্যে ওদের মামাকে খবর দিয়েছে। জলিকে দ্রুত কাছেরই এক হাসপাতালে নেওয়া হলো। প্রতিমন্ত্রীর মা বলেই হয়তো দ্রুত চিকিৎসা পেলো জলি। আপাতত আইসিইউতে রাখা হয়েছে তাকে।

এদিকে একঘন্টায় রণ আর মিহিরকে ফোন দিতে দিতে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে শুভ্রা। মাঝে বাবার নাম্বারেও চেষ্টা করেছে কিন্তু পায়নি। হঠাৎ কি ভেবে শরীফকে ফোন লাগায় শুভ্রা-“ভাইয়া, আব্বা কই?”
শুভ্রার ভয়ার্ত কন্ঠ শুনে শরীর উদ্বিগ্ন হয়ে বললো-“আব্বা সমাবেশে গেছে। কি হইছে শুভ্রা? এমন লাগছে কেন তোর গলা?”
“ভাইয়া, সর্বনাশ হয়ে গেছে। তন্ময় ভাই বাসায় আসছিল। উল্টা পাল্টা বলে গেছে আব্বার নামে। আজকে বলে আব্বা ওর কিছু করবে।”
শরীফের কিছুটা সময় লাগলো শুভ্রার কথা বুঝতে। ও অবাক হয়ে বললো-“কাকে কি করবে?”
শুভ্রা অস্থির হয়ে চেচিয়ে উঠলো-“তোমাদের বোন জামাইকে।”
শরীফ হেসে দিলো-“ধ্যাত, তুই এইসব বিশ্বাস করছিস কেন? আব্বা এইসব কিছু কেন করবে? তন্ময় নির্ঘাত তোকে ভয় দেখিয়েছে। কিন্তু ও তোর বাসায় গেছে কেন?”
“সে অনেক কথা ভাইয়া। তন্ময় ভাইয়া যে কি করেছে আজ। আমার শাশুড়ী এখন আইসিইউতে।”
শরীফ আঁতকে উঠলো-“কি বলছিস এসব? কি করে কি হলো?”
“সে অনেক কথা ভাইয়া। আমি ভাবছি উনি জানলে কি হবে। আমার খুব ভয় করছে ভাইয়া। কি করবো বুঝতে পারছি না। এদিকে ওনাকে অনেকক্ষণ ধরে ফোন দিয়ে বন্ধ পাচ্ছি। কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। ভাইয়া, তুমি কি একটু দেখবে কি অবস্থা?”
শুভ্রা হড়বড়িয়ে কথা বলে গেলো। শরীফ তাকে আশ্বস্ত করলো-“আমি দেখছি শুভ্রা। কোন প্রয়োজন হলে আমাকে বলিস। এখন কে আছে হাসপাতালে? আমি আসবো?”
“তুমি আমাকে ওর খবরটা দাও ভাইয়া। আন্টির জ্ঞান ফিরলেই ছেলেকে দেখতে চাইবে।”
“আচ্ছা, দেখছি আমি। তোকে জানাব।”
তবুও শুভ্রার মনটা খচখচ করছে। আজ হলো তাতে তার একদম মাঝ দরিয়ায় হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা। তন্ময়ের ঘটনা রণ জানতে পারলে কি করবে সে জানেনা। মায়ের এমন অবস্থা দেখলে রণর কি প্রতিক্রিয়া হবে ভাবতেই গায়ে জ্বর চলে আসতে চাইছে শুভ্রার। আবার তন্ময়ের কিছু হলে জলি তাকে কি করবে সে জানেনা। জলির কাছে বিয়ের আর্জি নিয়ে এসেছিল একদিন। মানুষটা তার আর্জি মন্জুর করেছিল। আজ যদি তার কারণে তার ছেলেটার কিছু হয়ে যায় তাহলে জলির সাথে নজর মেলাতে পারবেনা আজীবন। ভীষণ অস্থিরতায় ডুবে রইলো শুভ্রা। পুরোটা সময় সে আনমনে পায়চারি করে গেলো।

*****

অঘটনটা ঘটলো নেত্রী গাড়িতে চড়ার মুহূর্তে। মুখে কাপড় বেঁধে কেউ একজন এগিয়ে আসলো। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে অস্থিরতা তৈরির জন্য কয়েকটা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালো। হুট করে একটা হুড়োহুড়ি শুরু হলো। নেত্রীকে তার নিরাপত্তা বহর ঘিরে ধরে গাড়িতে তুলে রওনা দিয়ে দিল। রণ ছিলো ঠিক তাদের পেছনে। পরের গাড়ি বহরে ঢাকা থেকে আগত মন্ত্রী আর দেশি বিদেশি আমলারা যাবে। সবার মধ্যে একটা অস্থিরতা শুরু হয়ে গেলো। রণ পরিস্থিতি বুঝে নিতে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। মিহির সহ কয়েকজন ওকে ঘিরে আছে। মিহির ফিসফিস করলো-“ভাই, তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠেন।”
রণ মাথ দুলিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দিলশাদ সাবধান করার পরেও আক্রমনের লক্ষ যে সে হতে পারে সেটা তার মাথায় ছিলো না। নেত্রীকে নিয়ে বিচলিত হয়ে ছিলো রণ। তার অসাবধানতার সু্যোগ নিলো সোহেল। ছোট একনলা স্বয়ংক্রিয় পিস্তলটি লোড করে খানিকটা আড়াল বেছে নিয়ে রণ বরাবর তাক করলো। তারপর চুক চুক করে আফসোস করলো-“বোনটার জন্য কষ্ট লাগতেছে। কিন্তু বাপের উপরে কিছু নাই। ক্ষমতার উপরে কোন সম্পর্ক নাই। আমার ভবিষ্যতের জন্য তোমার মরা জরুরি। টাটা বাইবাই।”
কিছুক্ষণ বাদে পরপর দু’টো গুলির আওয়াজ এলো।

চলবে—
©Farhana_য়েস্মিন

#দর্পহরন
#পর্ব-৩৫

সোহেল গুলিবিদ্ধ। বুকের ডান পাশে একটা গুলি আর বা কাঁধে একটা গুলি লেগেছে তার। হাসপাতালে আনতে আনতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। সোজা অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়েছে। পুরো হাসপাতাল জুড়ে সাংবাদিক আর পুলিশে গিজগিজ করছে। কি ঘটেছে সে সম্পর্কে কেউ পরিপূর্ণ অবগত না হলেও প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান পন্ড করার অভিযোগ আসবে অনুমান করা যায়। আর এটা মোটেও যা তা ব্যাপার নয়। সবমিলিয়ে একটা হুলুস্থল অবস্থা। সালিম সাহেব হতচকিত হয়ে এক কোনে বসে আছেন। তিনি এখনো ঘোরে আছেন। ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না কি ঘটেছে আর ঘটছে। সোহেল কেন ওখানে গেলো আর কেনইবা ওর উপর গুলিবর্ষণ হলো। পুরো বিষয়টা তার কাছে একটা ধোঁয়াশা। তিনি মাঝে মাঝেই হতবিহ্বল দৃষ্টি মেলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখছেন আর চুপ মেরে যাচ্ছেন।

দু’টো ঘন্টা এভাবেই কাটলো। অবশেষে অপারেশন শেষে ডাক্তাররা বেরিয়ে এলো। জানা গেলো আটচল্লিশ ঘন্টার অবজারভেশনে রাখতে হবে সোহেলকে। রোগীর সিভিয়ার ব্রিডিং হয়েছে এখনো হচ্ছে। ব্লাড বন্ধ করা যাচ্ছে না কিছুতেই। দুই দিনের মধ্যে রোগী রেসপন্স করে কিনা দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। সালিম সাহেব চুপচাপ সব শুনলেন। আবারও জায়গায় যেয়ে বসলো। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে পুরো সালিম পরিবার হাসপাতালে উপস্থিত। মোর্শেদ বুঝে পাচ্ছে কি বলে ভাইকে শান্তনা দেবে। আজ সালিমের সাথেই ছিলো মোর্শেদ। হঠাৎ কাজ পড়ে যাওয়ায় সে চলে আসে। এরমধ্যে কি এমন হলো যে সোহেল এই কাজ করবে? এদিকে সাংবাদিকরা পাগল হয়ে আছে ইব্রাহিম পরিবারের সাথে কথা বলতে। নেত্রীর দীর্ঘদিনের মিত্র ইব্রাহিম পরিবারের সাথে কি এমন হলো যে এইরকম নাশকতার পরিকল্পনা হয়? রংচং মাখিয়ে নানা রসালো খবর করতে লাগলো টিভি চ্যানেলগুলো। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ঘটনাটি টক অফ দা টাউন হয়ে গেলো।

*****

রণ মত পাল্টে ঢাকায় না ফিরে এলাকায় ফিরলো। তার বিহ্বল ভাব এখনো কমেনি। একটু ধাতস্থ হওয়া দরকার। এই অবস্থায় মায়ের কাছে যাওয়া ঠিক হবে না। মা সবসময় সাথে আসতে চায়। কাল অনেকবার বলার পরও আনেনি। এখন এসব শোনার পর কি বলবে তাই ভাবছে। তাছাড়া এখানে কিছু হিসেব মেলাতে হবে। কি ঘটেছে সেটা জানতে হবে। নেত্রীকে জবাব দিতে হবে, কথা গোছাতে হবে। রণ পায়চারি করলো ঘরে। সে সালিম সাহেবকে যতটা বুঝেছে তাতে এতটুকু জানে, নেত্রীর ব্যাপারে আপোষ করবে না। তাই নেত্রীর অনুষ্ঠানে তারই ছেলে হামলা করবে এটা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য মনে হবে না। হয়তো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এটা মানতে চাইবে না। তাহলে কি বোঝা যায়? কেন এমনটা করবে সোহেল? তাকে খারাপ বানানোর একটা পরিকল্পনা হতে পারে। সে নেত্রীর আসার ব্যাপার ঠিকঠাক হ্যান্ডেল করতে পারেনি সেটা প্রমানের চেষ্টা হতে পারে। যাতে তাকে নেত্রীর কাছে ব্যর্থ প্রমান করা যায় এবং এই কারনে তার মন্ত্রীত্ব চলে যায়। কিন্তু এটাও খুব স্ট্রং যুক্তি মনেহচ্ছে না। সে প্রতিদ্বন্দি, তাকে হারাতে অনেক কিছু করতে পারে সালিম সাহেব। কিন্তু নেত্রীর জানের উপর দিয়ে নয়। যুক্তি পাল্টা যুক্তি দিয়ে নিজেকে খন্ডন করলো রণ। অনেক ভেবে ফোনটা হাতে তুলে নিলো-“কোথায় আছিস তুই?”
“নিচে আছি ভাই।”
ওপাশে দিলশাদের বিস্মিত স্বর। রণ ডাকলো-“উপরে উঠে আয়। কথা আছে।”
এলাকায় থাকলে দিলশাদকে সাথে সাথে রাখে রণ। আজও ছিলো। দরজায় আওয়াজ হলো-“ভাই, আসবো?”
“আয় দিলশাদ, বোস।”
চেয়ারে বসার ইশারা দিলো। দিলশাদ অবাক হয়ে বসলো-“হঠাৎ ডাকলেন যে? কি হইছে?”
রণ দিলশাদকে দেখলো মন দিয়ে। তারপর আচমকা প্রশ্ন করে বসলো-“আজকের ঘটনা খুলে বলতো কি হয়েছিল?”
“আমি তো কিছু বুঝলাম না ভাই। হুরোহুরিতে আপনার সাথে চলে আসলাম।”
রণ মাথা নাড়ে-“উহু, অনেক ভেবে দেখলাম আমি। নেত্রী আছে এমন অনুষ্ঠানে সালিম সাহেব হামলা করবে এটা কাউকে মানাতে পারবোনা। কেউ বিশ্বাস করবে না।”
“কিন্তু আপনাকে বদনাম করার জন্য করতে পারে। ওই লোক সব করতে পারে আপনি জানেন।”
দিলশাদ উত্তেজিত হয়ে উঠলে রণ হাসলো-“সেটাও ভেবেছি জানিস? এমনটা করতে পারে আমিও বিশ্বাস করি কিন্তু নেত্রী যেখানে থাকবে সেখানে উনি এমন কিছু করতে দেবেন না৷ নেত্রীর প্রতি উনি বিশ্বস্ত চিরকাল এটা স্বয়ং নেত্রীও স্বীকার করে।”
দিলশাদ চুপ করে রইলো। রণ বললো-“তোকে কে সাহায্য করেছে দিলশাদ? আমি জানি কাজটা তোর। তবে তুমি একা না আরও কেউ ছিলো সাথে। আমি জানি সোহেল হলো বারুদ। বারুদে একটু ঘষা দিলেই কাজ হয়। এই ঘষাটা কে দিয়েছে জানতে চাই।”
দিলশাদ ধরা পড়া গলায় মিনমিন করলো-“ফাহিম।”
রণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো-“তুলতুলের ভাই!”
দিলশাদ হ্যা বোধক মাথা নাড়ে। রণ চুকচুক করলো-“কাজটা করার জন্য টাইমিংটা ঠিক বাছিসনি। এমন একটা অনুষ্ঠানে এসব না করলেও পারতি। নেত্রী নিজেই মানবে না। আর সালিম সাহেব যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবেছিস? গোটা শহর জ্বালিয়ে দেবে। ছেলেকে কতটা ভালোবাসে সেটা টের পেয়েছিস? তার ছেলের যদি কিছু হয় তাহলে উনি কি করবে আমি ভাবতেই পারছিনা।”
দিলশাদ ভয় না পেয়ে সিনা টানটান করে বললো-“ভাই, ওনাকে আর ভয় পাই না। আর সোহেল সত্যি সত্যি আপনাকে গুলি করতো। এক সেকেন্ড দেরি হলে গুলিগুলো আপনার বুকে বিঁধতো।”
রণ চুপ করে রইলো দেখে দিলশাদ হাসলো-“আপনের বিশ্বাস হয় না তাই না? ভাবছেন, আপনি বোনজামাই আপনাকে এইরকম করবে কেন? ওরা খুব খারাপ ভাই। ওদের কাছে সম্পর্কের মুল্য নাই। ক্ষমতার চাইতে বড় কোন সম্পর্ক নাই। আমার কাছে ভিডিও আছে। দেখেন নিজের চোখে।”
দিলশাদ মোবাইল এগিয়ে দিলো। রণ দেড় মিনিটের ভিডিওটা দেখলো মন দিয়ে। তারপর মোবাইল ফিরিয়ে দিলো দিলশাদকে-“পুলিশের তরফ থেকে একটা মামলা কর। সমাবেশে নাশকতার চেষ্টা মামলা। আর ফাহিমকে সাবধানে থাকতে বলিস কয়েকটা দিন। কেউ যেন ঘুনাক্ষরেও টের না পায়। সালিম সাহেব অবশ্যই মাঠে নিজের লোক নামাবে সত্য জানার জন্য। দোয়া কর সোহেল যেন বেঁচে যায়।”
“মনেহয় না বাঁচবে।” দিলশাদের চেহারা কঠিন-“অনেকদিনের জমানো ক্ষোভ ভাই। সামান্য অংশ দেখানোর সুযোগ পেয়েছি। আর…”
মিহির হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো-“ভাই, খালাম্মা হাসপাতালে।”
রণ চেচিয়ে উঠে দাঁড়ায়-“কিহহ?”
মিহির মাথা দুলায়-“আপনের ফোন অন করেন। ভাবি ফোন দিতে দিতে পাগল। আমি কেবল দেখলাম।”
রণর হাত কাঁপছে। মায়ের কি হলো? কাঁপা হাতে ফোন অন করতেই টুংটাং ম্যাসেজ আসতে শুরু করলো। মামার ফোন পেলো সাথে সাথে। রিসিভ করে তিরিশ সেকেন্ড কথা বলে ‘আমি আসছি’ বলে ফোন কাটলো।

*****

জলির সব টেস্ট করে দেখা গেলো রিপোর্ট সব নরমাল আছে। মাত্রাতিরিক্ত চিন্তায় প্রেশার ফল করেছিল তাই মাথা ঘুরে পড়ে গেছিল। তবুও ডাক্তার একদিন অবজারভেশনে রাখতে চাইলে জলি থাকলো না। রণ মাকে বোঝাল কিন্তু জলি অটল। রণকে সুস্থ দেখে সে জেদ করে বাড়ি ফিরে এলো। মা বোনকে সাথে নিয়ে একসাথে রাতের খাবার খেলো। শুভ্রার দিকে তাকালো না খুব একটা।

ওদিকে রণকে সুস্থ দেখে বেশ স্বস্তি পেলো শুভ্রা। মনটা ভীষন হালকা লাগলো তার। তন্ময় তাহলে তাকে ভয়ই দেখালো? কিন্তু এতো বিশ্রি রকমের ভয় কেন দেখালো তাকে? মনটা খচখচ করছিলো তার। সে রণর আশপাশে ঘুরঘুর করছিল আর ভীষণ ভয়ে ভয়ে জলি আর হাসিখুশিকে দেখছিল। কখন না জানি তন্ময়ের কথা বলে দেয়। আর তন্ময়ের কথা শোনার পর রণ কি করবে? শুভ্রার ভালোলাগাটুকু গায়েব হয়ে যায়।

মাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রণ নিজের ঘরে এলো। শুভ্রা চা হাতে রণর পিছুপিছু এলো। রণ কাপড় নিতে নিতে আড়চোখে শুভ্রাকে দেখলো-“ধন্যবাদ।”
শুভ্রা থমকে যায়-“কেন?”
রণ পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো-“আমার মাকে সময়মতো হাসপাতালে নিয়েছেন সেজন্য। হাসিখুশি বলেছে আপনার কথা।”
শুভ্রা মনে মনে সিটিয়ে গেলো। রণ খানিকটা এগিয়ে এসে শুভ্রার সামনে দাঁড়ায়। মায়াময় চাহুনি নিয়ে শুভ্রাকে দেখলো। ওর এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে ইচ্ছে করে রণর। শুভ্রা আতঙ্কে মাথা নিচু করে থাকে। রণ ওর চিবুক ধরে মুখটা উপরে তুলে নরম গলায় বলে-“খুব টেনশনে ছিলেন তাই না?”
রনকে হতবুদ্ধি করে দিয়ে শুভ্রা ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো-“তন্ময় ভাই যখন আপনার উপর হামলার কথা বললো আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি জানেন। ভেবেছিলাম আপনাকে হারিয়ে ফেলবো। পাগলের মতো ফোন দিচ্ছিলাম আপনাকে। এদিকে মা তন্ময় ভাইয়ের কথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। আমার অবস্থাটা বুঝুন এবার।”
শুভ্রার চিবুক থেকে রণর হাত নামে, চোয়াল শক্ত হয়, হাত মুঠি হয়। শুভ্রা রণর দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। ও বুঝে গেলো খুব ভুল করে ফেলেছে আজ। যে ভুলের কোন ক্ষমা নেই।

চলবে—
©Farhana_য়েস্মিন

#দর্পহরন
#পর্ব-৩৬

তুলতুল যখন সোহেলের খবর পেলো ওর মন চাইলো খুশিতে জোরে একটা চিৎকার দিতে। এতো আনন্দ হচ্ছিল ওর মনের মধ্যে। পরক্ষণেই মনে পড়লো মায়ের কথা। মা বলেছিল, কারো বিপদে খুশি হতে নেই। তুলতুল তাই কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে রইলো। ওর পাশে রিমা বসে বিলাপ করছে। আর মিনু তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। তুলতুলের বিরক্ত লাগছিল। রিমাকে মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত লাগে তুলতুলের। সোহেল মোটেও ভালো ছেলে না। সে যে শুধু তুলতুলের সাথে খারাপ আচরণ করে তা না। বরং সে সুযোগ পেলে প্রায় সবার সাথে খারাপ আচরণ করে। এমনকি রিমার সাথেও। রিমা কোন কথা বললে গুরুত্ব দেয় না। উল্টো খাবার দাবার বা অন্য কোন ব্যাপারে জোর করলে রিমাকে ঝাড়ি দেয়। মা হিসেবে ন্যনতম সন্মান রিমাকে দেয় না। রিমাও কেন যেন ছেলেকে কিছুই বলে না। এই যে তুহিন নামে লোকটা আছে তাকেও মাঝে মাঝে খুব বাজে ভাষায় গালিগালাজ করতে শুনেছে। শরীফ ওর বড় ভাই তাকেও গোনায় ধরে না। সোহেল একমাত্র সালিম সাহেবের সামনে নরম থাকে। তুলতুলের ধারণা, সালিম সাহেবকেও গোনায় ধরতো না সোহেল যদি না তিনি অঢেল ক্ষমতার অধিকারী হতেন। বাপকে হয়তো সেই কারণেই কিছুটা ভয় পায় সোহেল। তা না হলে বাপের সাথেও এমন করেই কথা বলতো। তুলতুল দুঃখ ভরাক্রান্ত চেহারা বানিয়ে চোখ মোছার অভিনয় করে উঠে এসে নিজের ঘরের দুয়ার দিলো।

দরজা বন্ধ করেই লাফিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে কিছুক্ষণ পুরো বিছানা গড়াগড়ি খেলো তারপর সিলিংয়ের পানে চেয়ে থাকলো অনেক সময়। সে মনে মনে চায় সোহেল এই ঘরে আর না ফিরুক। অনিচ্ছায় প্রতিরাতে তাকে সোহেলের মনোরন্জন আর না করতে হয় যেন। ভীষণ ক্লান্ত লাগে তার। এই বন্দী জীবন থেকে সে মুক্তি চায়। আবার পড়াশোনা শুরু করতে চায়। খোলা হাওয়ায় শ্বাস নিতে চায়। আর এসব করতে চাইলে সোহেলকে ম*রতে হবে। সোহেল বেঁচে থাকলে এসব স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না। হতে পারে সোহেলে উল্টো তাকেই মেরে ফেললো। শিউরে উঠলো তুলতুল। তার বেঁচে থাকার জন্য হলেও সোহেলকে ম*রতে হবে। সে মনে মনে প্রার্থনা করলো সোহেল যেন এই যাত্রায় মা*রা যায়।

*****

সালিম সাহেব শরীফকে ডাকলো-“আম্মাকে খবর দিছোস? ফোন দে ওরে।”
শরীফ মাথা নাড়লো। তাকে দ্বিধান্বিত দেখায়। তন্ময়ের কথা বাবাকে বলবে কিনা ভাবছে। সালিম সাহেব ছেলের দিকে তাকালো-“কি হইছে তোর? কি ভাবতেছোস?”
শরীফ সালিম সাহেবের কাছে এগিয়ে এলো-“আব্বা, শুভ্রাকে এখন না জানাই।”
সালিম সন্দেহ নিয়ে তাকায়-“কেন? জানাবি না কেন? কি সমস্যা? আর ও তো এমনিতেও জানব। হুদাই জানাবি না কেন? ওর ভাই এইদিকে মরতেছে আর ও জানবো না?”
শরীফ মিনমিন করলো-“ঝামেলা অন্য জায়গায় আব্বা।”
“কোন জায়গায়? কি সব কস?”
সালিম সাহেব চাপা গলায় হুঙ্কার দিলো। শরীফ ভয় পেয়ে বললো-“আজকে তন্ময় গেছিল ওর শশুরবাড়ি। ওইখানে যায়া ভেজাল লাগায়া আসছে।”
“কি ভেজাল লাগাইছে?”
এবার খানিকটা নিভু নিভু শোনায় সালিম সাহেবের গলা।
“ও শুভ্রাকে বলছে, আপনেরা নাকি রণকে মা*রার চেষ্টা করবেন। এখন এইটা তো সত্যি কথা দেখা যাচ্ছে। সোহেলের ভিডিও বের হইছে। কে জানি ভিডিও কইরা ছাড়ছে। সেখানে দেখা যাইতেছে সে শুভ্রার জামাইকে গুলি করার চেষ্টা করতেছে। এখন ওরে কি বলবো তাইলে। ওর জামাই যদি সত্যটা জানে তাইলে কি হবে ভাবছেন?”
সালিম সাহেব হতবাক-“সত্যি বলতেছিস? দেখা দেখি ভিডিওটা। আমি তো কিছুই বুঝতেছি না। সোহেলকে আজকের অনুষ্ঠানে যাইতেই মানা করছিলাম। ও কখন গেলো কি করলো আমি কিছু জানি না। আর তন্ময় এইসব কথা কেন কইছে শুভ্রাকে? ও কেমনে জানলো? সোহেল কি ওরে কিছু কইছিল? কইলো ও ঠেকাইলো না কেন? আমি তো কিছুই বুঝতেছি না?”
“আমিও বুঝতেছিনা। এখন যদি শুভ্রা এই কথা জামাইকে কয় তাইলে তো আরও বিপদ। সোহেলকে এইবার জেলে যাওয়া কেউ ঠেকাইতে পারবে না।”
শরীফের কথায় সালিম সাহেবের শরীর খারাপ লাগতে শুরু করে। সে রেগে চাপা গলায় দাঁতে দাঁত চেপে গর্জন করলো-“হা*রা*ম*জাদা পোলা, নিজে তো ডুববো সাথে আমাগো পরিবাররে ডুবাইবো। আমার রাজনৈতিক জীবনটাও শেষ করবো। কি যে করমু ওরে নিয়া।”
নিরবতা নেমে এলো দু’জনার মধ্যে। শরীফ হঠাৎ করে বলে উঠলো-“ওরা সব জাইনা শুভ্রারে না ফেরত পাঠায়।”
সালিম সাহেব চমকে উঠে ছেলের দিকে তাকায়।

*****

“বাহ, আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র বেশ ভালোই চলছে দেখা যাচ্ছে। পুরো পরিবার মিলে মিশে আমাকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছেন।”
রণর কথায় শুভ্রার শরীর কেঁপে উঠলো থরথর। সে অসহায় চাহুনি দিয়ে রণর দিকে তাকালো। রণ ওকেই দেখছে একনজরে। ওর চেহারায় ক্রোধ আর ঘৃনার মিশেল। শুভ্রার হৃদয়টা যেন চুরমার হয় সে দৃষ্টি দেখে। সে কাতর গলায় বললো-“সত্যি বলছি আমি কিছু জানতাম না। আর তন্ময় ভাইকে আমি অনেকবার মানা করেছি এখানে যেন না আসে। কিন্তু ভাইয়া শুনছে না। প্লিজ আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না।”
রণ রাগে ফেটে পড়লো-“ভুল বুঝবোনা? লাইক সিরিয়াসলি? কেন ভুল বুঝবোনা শুনি? আপনি আপনার বাবাকে আমার বিষয়ে আপডেট দেননি? আপনার বাবা আপনাকে বলেনি আমার ব্যাপারে আপডেট দিতে? বলুন?”
শুভ্রা মুক হয়ে গেলো। তার বুকের মধ্যে ধরাস ধরাস আওয়াজ হচ্ছে। এসব কি বলছে রণ! সে কি করে জানলো বাবার সাথে কি কথা হয়েছে তার? সে কম্পিত কন্ঠে জানতে চাইলো-“আপনি কি বলছেন এসব?”
রণ হাত ঝাড়লো। শুভ্রার দিকে এগিয়ে এসে হিসহিসিয়ে উঠলো-“মিথ্যে বলেছি? বলুন মিথ্যে বলেছি?”
রণর এমন রণমুর্তি দেখে শুভ্রা ভয় পেয়ে গেলো। কোন কথা জোগাল না মুখে। রণ রাগে ছটফট করছে-“এক ভাই আমাকে মারার জন্য বন্দুক তাক করে। আরেক ভাই আমার বোনের দিকে নজর দেয়। আর আমার বউ হয়ে যিনি এসেছেন তিনি তার বাবার হয়ে আমার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করছে। কি সৌভাগ্য আমার। আচ্ছা একটা কথা বলবেন?”
শুভ্রা রণ দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার সাহস হলো না তার। রণ বললো-“আজ আমার কিছু হলে আপনি নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন?”
শুভ্রা স্বজোরে মাথা নাড়লো। রণ হাসলো-“আমি জানি আপনি ভীষণ খুশি হতেন। কিন্তু একবারও আমার মা আর বোনদের কথা ভেবেছেন? আমি না থাকলে ওদের কে দেখবে? আপনার হয়তো তেমন কিছু যাবে আসবে না। আবার নতুন করে জীবন সাজাতে পারবেন। কিন্তু ওদের জীবনটা থমকে যাবে। বাবা চলে যাওয়ার পর আমিই ওদের জীবন। আমি না থাকলে ওরাও থাকবে না হয়তো। কিন্তু এসব আপনার মতো মোটা মাথার মানুষ বুঝবে কি করে?”
শুভ্রা কেঁদে দিলো-“সত্যি বলছি আমি এসব কিছু জানতাম না। আমার বাবা এমন কিছু কখনোই করবে না। এতো নিচে সে নামবে না কখনোই।”
রণ হাসলো-“আপনার বাবা তো মহান মানুষ। কোন কিছু করতে পারে না। শুনুন, আপনি এককাজ করুন, আপনার বাবার বাড়ি ফিরে যান। এই সংসার, বউ এসব খেলা বন্ধ করুন। চারদেয়ালের ভেতর আপনার আমার সম্পর্ক কি তা নতুন করে বলার দরকার নেই আর। আমি নিজেকে নিয়ে ভাবিও না। এই সম্পর্ক থেকে আমি কখনো বেশি কিছু পাওয়ার আশা করিনি। শুধু মায়ের খাতিরে বিয়েটা করেছিলাম। কিন্তু সেই মা আর বোনরাই যদি ভালো না থাকে, তাদের জীবনের হুমকি আসে তাহলে এই বিয়ে টিকিয়ে রেখে লাভ কি। আপনার প্রতিশোধ পূরণ হলে এবার দয়া করে আমাদের মুক্তি দিন।”
রণ করজোড়ে মিনতি করলো। শুভ্রা এতোক্ষণ কাঁদছিলো এবার কেবল হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তার হুট করে ভীষণ রাগ হয়ে গেলো। সে এগিয়ে গিয়ে রণর গেন্জির গলা মুচড়ে ধরলো-“কেন মুক্তি দেব? কেন আমার থেকে মুক্তি চাই আপনার? যেন চন্দ্রানীকে বিয়ে করতে পারেন? কি ভেবেছেন আমি কিছু বুঝবো না? আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেবেন, তারপর নিজে নাটক বানিয়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে আমাকে আপনার জীবন থেকে বিদায় দেবেন। আর আমি অসহায় মেয়ে সেজে আপনার সব সিদ্ধান্ত মেনে বাপের বাড়ি ফিরে যাব? নো মিস্টার রণ, আমাকে এতোটা বোকা ভাববেন না। আমাকে অপহরণ করে আপনি এই খেলা শুরু করেছিলেন এর শেষ আমি করবো। আমার পরিবারকে আপনি ধ্বংস করতে চাইছেন আমার পরিবার না।”
রণ হতভম্ব। শুভ্রার আচমকা আক্রমণে সে দিশেহারা বোধ করছে। শুভ্রা ওর চোখে চোখ রেখে শাসালো-“আমার কাছ থেকে এতো সহজে মুক্তি নেই আপনার। কি ভেবেছিলেন, সালিম সাহেবের কন্যাকে অপহরণ করে নির্বাচন জিতে যাবেন তারপর আয়েস করবেন সারাজীবন? আর বদনামের ভয়ে সালিম সাহেব চুপচাপ সব হজম করবে? এই শুভ্রা তা হতে দেবে না কখনোই। আমাকে যেহেতু সিড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছেন তাই আমাকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সহ্য করার জন্য তৈরী হোন। বাকী আর কেউ আসবে আপনার জীবনে। কেউ না মানে কেউ না।”

চলবে—
©Farhana_Yesmin

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে