তুমি ছিলে বলেই ২ পর্ব-০৫

0
360

#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ৫
#দিশা_মনি

দিশা অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার পরিবারের দিকে। তারা আজ এভাবে তাকে ত্যাজ্য করে দিতে পারল?! রাগী চোখে সে তাকালো সোহাগের দিকে। সোহাগ ইশারায় দিশাকে নিজের সাথে আসতে বললো৷ দিশা তবু ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আলতাফ চৌধুরী দিশার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন তুমি? কি বললাম সেটা শুনতে পাও নি? বেড়িয়ে যাও এখান থেকে। আমার মান সম্মান সব তুমি ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছ। তোমার এখানে থাকার কোন অধিকার নেই।”

দিশা চুপ রইল। তাকালো নিজের মা এবং ভাইয়ের দিকে। যাতে তারা তার সমর্থনে কিছু বলে। কিন্তু কেউ কিছু বলল না। দিশা বুঝল চৌধুরী পরিবারের কাছে এখনো তাদের সম্মানটাই সবথেকে বড়। আর এখানে আলতাফ চৌধুরীর মুখের উপর কেউ কিছু বলবেও না।

দিশার ফুফু খোদেজা চৌধুরী দিশার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“এখানে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে তোর লজ্জা করছে না? একেই তো আমাদের পরিবারের সম্মান মাটিতে মিলিয়ে দিয়েছিস। এখন আবার এসেছিস কেন? আমাদের সবার কাছে এখন তুই মৃত। যা দূর হয়ে যা।”

এটুকু বলেই খোদেজা চৌধুরী এগিয়ে এসে দিশাকে ঠেলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিলেন। দিশা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল। সোহাগ দিশার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে আমার সাথে আমার বাড়িতে চলো। এই রাজপ্রাসাদে তোমার আর ঠাঁই হবে না।”

দিশা চিৎকার করে বলতে লাগল,
“আজ শুধুমাত্র তোমার জন্য আমার এই অবস্থা। তোমায় আমি কোনমতেই ছাড়ব না।”

“কি করবে?”

দিশা শুধু রাগী চোখে তাকালো। তার বাবা-মা তাকে ত্যাগ করেছে। এখন আর তার যাওয়ার কোন যায়গা নেই। এখন তাকে বাধ্য হয়েই সোহাগের সাথে যেতে হবে। তবে সোহাগের জীবন ধ্বংস করার পণ করে নিলো সে।

✨✨✨
চৌধুরী ভিলায় পিনপিতন নীরবতা। আলতাফ চৌধুরী অনুপমের পরিবারের সামনে কিভাবে মুখ দেখাবেন সেটাই ভাবছেন। আজীবন তিনি মাথা উচু করে বেঁচেছেন। কিন্তু আজ তার নিজের মেয়ের জন্য তার মাথা সবার সামনে নিচু হয়ে গেছে। অন্যদিকে দিলারা চৌধুরী সমানে কেঁদে চলেছেন। নিজের স্বামীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি কিছু করতে পারেন নি কিন্তু নিজের মেয়েকে দেওয়া এত বড় শাস্তিও তিনি মানতে পারছেন না। রাহেলা চৌধুরী তাকে সামলানোর অনেক চেষ্টা করে চলেছেন।

আলতাফ চৌধুরী মুখোমুখি হলো অনুপমের। অতঃপর শান্তস্বরে বললেন,
“দিশা অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে। তাই এই বিয়েটা হওয়া সম্ভব নয়।”

অনুপম রেগে বললো,
“বিয়ে হবে না বললেই হলো? আপনি ভুলে যাবেন না মিস্টার চৌধুরী এই বিয়েটা কোন সাধারণ বিয়ে নয় এই বিয়ের উপর আমাদের কোম্পানির সাথে আপনার কোম্পানির আগামী দিনের সম্পর্ক নির্ভর করছে। এই বিয়েটা না হলে আমাদের কোম্পানি আপনাদের কোম্পানিতে কোন ইনভেস্ট করবে না।”

আলতাফ চৌধুরী চিন্তায় পড়ে যান। খান এন্টারপ্রাইজের সাথে চুক্তি না হলে যে তার কোম্পানির অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এমনিতেই শেয়ার বাজারে দরপতন চলছে তার উপর এখন এই চুক্তিটাও যদি না হয় তাহলে অনেক লস হবে। তাই আলতাফ চৌধুরী কোন উপায় খুঁজে পেলেন না। এমন সময় তার বোন খোদেজা চৌধুরী এগিয়ে এসে বললো,
“আমার কাছে একটা উপায় আছে ভাইজান। যাতে সব দিক উদ্ধার হবে।”

আলতাফ চৌধুরী তার বোনের কাছে জানতে চান,
“কি সেই উপায়?”

খোদেজা চৌধুরী বলেন,
“বিয়ে তো দুই পরিবারের মধ্যেই হয়। এখন তোমার মেয়ে দিশার সাথে তো বিয়েটা হলো না। কিন্তু এই বাড়িতে তো আর মেয়ের অভাব নেই। এই যেমন নিপুণ আছে আমার মেয়ে প্রেরণা আছে। তুমি একটু ভেবে দেখ যদি এদের মধ্যে কাউকে…আমার প্রেরণার কিন্তু এই বিয়ে করতে আপত্তি নেই। ছোটবেলা থেকে তো ও মামাবাড়িতেই মানুষ হয়েছে। মামাবাড়ির প্রতি একটা দায়িত্ব কর্তব্য তো আছেই।”

অনুপম সব কথা শুনলো। সে বারকয়েক নিপুণকে দেখেছে। নিপুণকে তার বড্ড ভালো লেগে গেছে। তাই সে বলে,
“আমি আপনার ভাইঝি নিপুণকে বিয়ে করতে চাই।”

অনুপমের কথা শুনে খোদেজা চৌধুরীর মাথায় হাত। কারণ তিনি তো নিজের মেয়ে প্রেরণার সাথে অনুপমের বিয়ের কথা ভেবেছিলেন। যাতে তার মেয়ে রাজরাণী হয়৷ কিন্তু তার সব চাল ভেস্তে গেল। আলতাফ চৌধুরী চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন,
“আমাকে একটু ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

✨✨✨
আলতাফ চৌধুরী এসে দাঁড়িয়েছেন নিপুণের সামনে। নিপুণ আলতাফ চৌধুরীকে দেখে বলল,
“তুমি কি আমায় কিছু বলবে বড় আব্বু?”

“তোর কাছে একটা অন্যায় আবদার করব মা?”

“এভাবে কেন বলছ বড় আব্বু? তুমি আমাকে আদেশ করো।”

“তুই তো জানিস, এই বিয়েটা আমার এবং আমার কোম্পানির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু দিশা যে এমন একটা কাজ করবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। আমার সম্মান, আমার পুরো পরিবারের সম্মান একেবারে ধুলোয় মিশে গেল। কিন্তু এখন আমাদের কোম্পানির ভবিষ্যতও ঝুলে আছে তোর একটা সিদ্ধান্তর উপর।”

নিপুণ অবাক হয়ে জানতে চায়,
“আমার কোন সিদ্ধান্তর উপর তোমার কোম্পানির ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে আছে?”

“অনুপম তোকে বিয়ে করতে চায় নিপুণ। তুই যদি এই বিয়েটা করতে রাজি হোস তাহলে আমাদের কোম্পানি বেঁচে যাবে।”

নিপুণ বিস্ফোরিত চোখে তাকায় আলতাফ চৌধুরীর দিকে। এ কেমন কথা শোনালেন তিনি? নিপুণ যে দীপ্রকে ভালোবাসে। তার পক্ষে কি করে সম্ভব অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়া। কিন্তু তার বড় আব্বুর এই অসহায় অবস্থা, আকুতিও যে তাকে ভাবাচ্ছে। নিপুণ যেন উভয় সংকটে পড়েছে। আলতাফ চৌধুরী বলেন,
“কিরে নিপুণ? কিছু বলছিস না কেন? তোর সিদ্ধান্তের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে মা। দয়া করে একটু ভেবে সিদ্ধান্ত নিস।”

“আমাকে একটু ভাবতে দাও বড় আব্বু।”

আলতাফ চৌধুরী নিপুণের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমার ভরসা আছে তোর উপর। আমি জানি তুই সবদিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিবি।”

এটুকু বলেই তিনি প্রস্থান করেন। আলতাফ চৌধুরী চলে যাওয়ার পর নিপুণ মেঝেতে বসে পড়ে। একটু পড়েই ডুকরে কেঁদে ওঠে মেয়েটা। ভাগ্য আজ তাকে এ কোন অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি ফেলল?

✨✨
চৌধুরী ভিলার অদূরে একটা ক্যাফেতে বসে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে স্নেহা। সাথে আনন্দে গুণগুণ করছে। তার প্রতিশোধের খেলা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আর শুরুতেই সে বাজিমাত করেছে। স্নেহা বলতে থাকে,
“প্রথম ঝটকাটা কেমন লাগল চৌধুরী পরিবারের? এটা তো শুধু ট্রেলার ছিল। আসল মুভি তো এখনো বাকি। তোমাদের চোখের জল পড়া তো সবে শুরু হলো। আমি প্রমিস করছি, তোমাদের সবার এমন হাল করব যে তোমাদের চোখের জলের সমুদ্র তৈরি হয়ে যাবে।”

“হা হা হা হা।”

উন্মাদের মতো হাসতে লাগল সে।

✨✨✨
আলতাফ চৌধুরী অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। অনেকক্ষণ হলো তিনি নিপুণের সাথে কথা বলে এসেছেন। কিন্তু এখনো নিপুণের কোন পাত্তা নেই। তিনি উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। রাহেলা বেগম তার পাশেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। নিজের স্বামীকে কখনো সেভাবে পাশে পান নি তিনি। তার এবং নিপুণের যাবতীয় দায়িত্ব সবসময় আলতাফ চৌধুরীই পালন করে এসেছেন। তাই তিনি এই মানুষটাকে বড্ড শ্রদ্ধা করেন। ওনার বিপক্ষে যাওয়ার সামর্থ্যও তার নেই। তাই আলতাফ চৌধুরী যখন জানালেন পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে এবং কোম্পানিকে বাঁচাতে তার মেয়েকে অনুপমকে বিয়ে করতে হবে তখন তিনি বিনাবাক্যে মেনে নিয়েছেন। তার অমতের তেমন কারণ নেই। অনুপম তো পাত্র হিসেবে খারাপ হয়। অন্যদিকে খোদেজা চৌধুরী মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছেন। দিলারা চৌধুরী সেই যে দিশা চলে যাওয়ার পর নিজেকে ঘরবন্দি করেছেন তারপর থেকে আর ঘর থেকে বের হন নি। আর দীপ্রর তো কোন খোঁজ খবরই নেই।

এরইমধ্যে নিপুণ এসে হাজির হলো সেখানে। পরণে তার বিয়ের জামদানী শাড়ি। একদম কনে সেজেই এখানে উপস্থিত হয়েছে সে। নিপুণ এগিয়ে এলো। মলিন কন্ঠে বলল,
“আমি প্রস্তুত বিয়ের জন্য!”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে