#তুমি_ছিলে_বলেই২
#পর্বঃ৪(মহাধামাকা পর্ব)
#দিশা_মনি
দিশার বিয়ে উপলক্ষে চারিদিকে সাজ সাজ রব। দিশারও অনেক ভালো লাগছে আজ। অবশেষে তার এতদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। সে তো সবসময় চেয়েছিল কোন বড়লোক পরিবারে রাজকীয় ভাবে তার বিয়ে হোক। অবশেষে তাই হচ্ছে। দিশার খুশি আর ধরে না।
দিশার মনে এখন লাড্ডু ফুটছে। সে অনেক বেশি আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করে চলেছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। কিন্তু ভাগ্যে যে অন্য কিছু ছিল সেটা সে ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি। যদি টের পেত তাহলে বোধহয় এত খুশি হতে পারত না। বরং নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে আফসোস করত!
✨✨✨
স্নেহা ও সোহাগ পৌঁছে গেছে রাজশাহীতে। বর্তমানে তারা খান ভিলার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা সোহাগকে তার পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিচ্ছে। সব শুনে সোহাগ একটা ঢোক গিলে বলে,
“এটা একটু বেশি রিস্কি হয়ে যাচ্ছে না? বাইরে এত এত সিকিউরিটি গার্ড। তাদের চোখ ফাকি দিয়ে কিভাবে..”
“আপনাকে এত চিন্তা করতে হবে না। আপনি আমার কথামতো কাজ করে যান শুধু। আমার সবকিছু ম্যানেজ করা আছে।”
বলেই সে কাউকে একটা ম্যাসেজ করে। এই চৌধুরী ভিলাতেই যে লুকিয়ে আছে এক ঘর শত্রু বিভীষণ। তার সাহায্যেই তো সে সব কাজ উদ্ধার করবে। স্নেহা সেই ঘর শত্রু বিভীষণকে ম্যাসেজ দিয়ে বলে,
“সব কিছু প্ল্যান মাফিক রেডি তো?”
“হুম।”
“বেশ, আমরা তাহলে খান ভিলায় প্রবেশ করছি।”
স্নেহা ও সোহাগ দুজনেই ছন্দবেশে আছে। তারা মূলত পার্লারের লোক সেজে এখানে এসেছে। দুজনে ভেতর ঢোকার সময় সিকিউরিটি গার্ডের বাধার সম্মুখীন হয়। কিন্তু স্নেহা তো আটঘাট বেধেই মাঠে নেমেছিল। তাই তো সে নকল কার্ড বের করে দেখায়। যেটা দেখে সিকিউরিটি গার্ডরা তাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়। খান ভিলায় প্রবেশ করেই রহস্যজনক হাসি দেয় স্নেহা। মনে মনে বলে,
“অবশেষে আমার ২৩ বছরের জীবনে প্রথমবারের মতো খান ভিলায় আমার পা পড়েই গেলো। একবার যখন আমি এখানে এসেছি তখন আমি একা আসিনি। এসেছি ধ্বংস নিয়ে । এই খান ভিলার সকল সুখ আমি ধ্বংস করে দেব।”
স্নেহা ও সোহাগ দুজনেই চলে যায় দিশার কক্ষে। সোহাগ মাস্ক পড়ে থাকায় দিশা তাকে চিনতে পারে না। দিশা তাদের মেকআপ আর্টিস্টই মনে করে। স্নেহা দিশাকে বলে,
“ম্যাম আপনি বসে পড়ুন। আমি আপনাকে সাজাতে এসেছি।”
দিশা চুপচাপ বসে পড়ে। সেইসময় রুমে অন্য কেউ ছিল না। দিশা বসে পড়ে। স্নেহা মেকআপ করানোর নাম করে ক্লোরোফোম মিশ্রিত একটি পাউডার দিশার মুখের সামনে ধরে। যার ফলশ্রুতিতে সে জ্ঞান হারায়৷ সোহাগের ভয় করতে থাকে। সে বলে,
“যদি কেউ জেনে যায়!”
“এই ছেলে? আপনি এত ভিতু কেন? বলছিনা সব ব্যবস্থা করা আছে। কই আপনি আসুন তাড়াতাড়ি।”
স্নেহার ডাক কেউ একজন রুমে প্রবেশ করল। স্নেহা তার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“একে এখান থেকে কিভাবে নিয়ে যাব সেই ব্যবস্থা করেছেন তো?”
সে বলল,
“হ্যাঁ, সব ব্যবস্থা করা আছে। এই বস্তায় ওকে ভড়াও। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।”
সোহাগ ও স্নেহা মিলে দিশাকে বস্তাবন্দি করে। তারপর ঐ ঘরশত্রু বিভীষণ খুবই সন্তপর্ণে দিশাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়। বাইরে এসে কয়েকজন গার্ডকে ডেকে বলে,
“এখানে কিছু আবর্জনা আছে। যাও এগুলো বাইরে ফেলে এসো।”
সিকিউরিটি গার্ডেরা তার কথামতো কাজ করে। কারণ সে এই খান পরিবারেরই এক সদস্য। তাকে অমান্য করার সাধ্যি কারো নেই। দিশাকে আবর্জনা ভেবে তারা বাইরে ফেলে আসে। আর তারপর সোহাগ ও স্নেহা দিশাকে তুলে নিয়ে যায়।
✨✨✨
দিশার জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে আবিষ্কার করে একটা অন্ধকারছন্ন যায়গায়। জ্ঞান ফিরতেই সে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। বলতে থাকে,
“আমি কোথায়? আজ তো আমার বিয়ে? কে এনেছে এখানে আমায়?”
তখনই দিশার সামনে চলে আসে সোহাগ। অট্টহেসে বলে,
“আমি এনেছি এখানে তোমায়। কি ভেবেছিলে তুমি? আমাকে ঠকিয়ে নিজে ভালো থাকবে?”
“সোহাগ তুমি?! ভালো চাইলে আমায় ছেড়ে দাও। নাহলে আমি তোমাকে জেলের ভাত খাইয়ে ছাড়ব।”
সোহাগ আবারো হাসিতে ফেটে পড়ে। তারপর বলে,
“কে কাকে জেলের ভাত খাওয়াবে সেটা তো সময়ই বলে দেবে। তার আগে এই ভিডিওটা দেখ।”
দিশা হতবাক হয়ে ভিডিওটা দেখে। এখানে সোহাগ ও দিশার ঘনিষ্ঠ কিছু মুহুর্ত দেখা যাচ্ছে। সোহাগ দিশাকে হুমকি দিয়ে বলে,
“এই ভিডিও যদি তোমার ফ্যামিলি বা হবু স্বামীর হাতে যায় তাহলে তোমার কি হবে ভেবে দেখ…আর যদি আমি এই ভিডিও অনলাইনে ভাইরাল করে দেই তাহলে…”
“তোমাকে তো আমি..”
“তুমি আমার কিছু করতে পারবে না দিশা। বরং আমি চাইলে তোমার সব মান সম্মান শেষ করে দিতে পারি। এমন হাল করতে পারি যাতে তুমি আর সমাজে মুখ দেখাতে না পারো।”
“কি চাও তুমি?”
“তুমি যদি চাও যে এই ভিডিও ভাইরাল না হোক তাহলে তোমায় আমাকে বিয়ে করতে হবে।”
“কি! তুমি কি করে ভাবলে যে আমি তোমায় বিয়ে করব?!”
“নিজের ভালো পাগলেও বোঝে এখন তুমি ভাবো তুমি কি করবে।”
দিশার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে খুব বাজে ভাবে ফেসে গেছে। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকে সে। অনেক ভেবে বলে,
“আমি তোমার সব শর্তে রাজি। শুধু এই ভিডিওটা যেন কারো হাতে না পড়ে।”
✨✨
খান ভিলায় হুলস্থুল পড়ে গেছে। খান বাড়ির মেয়ে যার আজ বিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এ কথা ঝড়ের বেগে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই কানাঘুষা শুরু করে দিয়েছে। বেশিরভাগই বলছে এই মেয়ের হয়তো অন্য কোথায় চক্কর ছিল তাই সে পালিয়ে গেছে।
এদিকে দিলারা চৌধুরী থেকে থেকে আহাজারি করে চলেছেন। তার মতে, তার মেয়ে পালিয়ে যেতে পারে না। বরং কেউ তাকে তুলে নিয়ে গেছে। দিলারা চৌধুরীকে সামলানোর চেষ্টা করছেন নিপুণ, নিপুণের মা রাহেলা চৌধুরী ও ফুফু খোদেজা চৌধুরী। খোদেজা চৌধুরীর স্বামী মারা যাবার পর থেকে তিনি বাবার বাড়িতে থাকেন। নিজের ভাতিজির নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে তাকে খুব বেশি বিচলিত মনে হচ্ছে না। কারণ তারও মনে হচ্ছে দিশা পালিয়ে গেছে। কারণ দিশা যা দস্যি মেয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া কারো কর্ম নয়। এদিকে দিপ্র ও আলতাফ চৌধুরীকে এখন অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তাদের একাধারে অনুপমের পরিবারকে সামলাতে হচ্ছে। তাদের একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে। আবার দিশার খোঁজও চালিয়ে যেতে হচ্ছে। নিজের মায়ের মতো দীপ্ররও মনে হচ্ছে তার বোনকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে৷ তার এই সন্দেহ গাঢ় হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজের কারণে। কারণ সিসিটিভি ফুটেজে ২০ মিনিটের ফুটেজ গায়েব হয়ে আছে। দীপ্র জানতে পারে সর্বশেষ পার্লারের লোকেরা দিশাকে সাজাতে এসেছিল তাই সে এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়ার জন্য বের হতে যায়।
ঠিক এমন সময় দিশা ফেরত আসে। দিশাকে দেখে দীপ্র ছুটে যায় তার কাছে। গিয়ে বলে,
“কোথায় গিয়েছিলি তুই দিশা? তোর কি বিন্দুমাত্র কাণ্ডজ্ঞান নেই? আজ তোর বিয়ে আর তুই এইভাবে.. ”
সোহাগ দিশার সাথেই এসেছে। সোহাগকে দেখে দীপ্র জিজ্ঞেস করে,
“আপনি কে?”
সোহাগ দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
“তুমি কি আমার পরিচয় সবাইকে দেবে নাকি আমি দেবো?”
দিশা নিচু স্বরে বলে,
“ও সোহাগ। আমরা বিয়ে করেছি।”
দিশার এই নিচু স্বরে বলা কথাটাই খান ভিলায় তাণ্ডব তোলার জন্য যথেষ্ট ছিল। দীপ্র দিশার দিকে অবিশ্বাস্যের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“এসব কি বলছিস তুই?”
এরমধ্যে দিলারা চৌধুরী দিশার ফিরে আসার কথা শুনে ছুটে আসেন৷ দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেন নিজের মেয়েকে। আলতাফ চৌধুরী দিশার সব কথা শুনে ফেলেছেন। তাই তিনি বলে ওঠেন,
“তুমি এদিকে চলে এসো দিলারা। আজকে থেকে এই মেয়ের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। ও আমাদের কাছে মৃত।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨