#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১২
#দিশা_মনি
স্নেহা অনুপমের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়। স্নেহাকে দেখামাত্রই অনুপম নাটক শুরু করে দেয়। সে কান্নার অভিনয় করে বলতে থাকে,
“আমার সব শেষ হয়ে গেল স্নেহা। এখন মনে হয় আমাকে জেলে যেতেই হবে।”
স্নেহা অনুপমের কাধে হাত রেখে ভরসার বাণী দিয়ে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না। আমি আছি তো তোমার পাশে। আমি কিছুতেই তোমায় জেলে যেতে দেব না।”
“কি করতে পারবে তুমি স্নেহা? তুমি তো আর আমাকে ১৫ লাখ টাকা দিতে পারবে না। তাইনা?”
“পারব।”
“কি? কিন্তু তুমি এত টাকা কোথায় পাবে?”
“আমার আব্বু আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা রেখেছেন আমার নামে। আমি সেটাই নাহয় তোমাকে দিয়ে দেব।”
“এসব তুমি কি বলছ স্নেহা? আমি কিভাবে এই টাকা নিতে পারি? এটা তো তোমার টাকা।”
“আমার আর তোমার কি? আমার ভবিষ্যৎ তো তুমিই অনুপম।”
“কিন্তু…”
“কোন কিন্তু না। তুমি অপেক্ষা করো আমি আজকের মধ্যেই ব্যাংক থেকে টাকাটা তুলে এনে তোমাকে দিয়ে দেব।”
“কিন্তু তোমার আব্বু কি এটা মেনে নেবেন?”
“আব্বুকে এখন কিছু জানাবো না৷ টাকাটা যেহেতু আমার নামে আছে তাই আমি একাই তুলতে পারব। আর তোমার এই সমস্যাটা মিটে গেলে তুমি নিশ্চয়ই টাকাটা আবার ফেরতও দিতে পারবে?”
অনুপম ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
“হ্যাঁ, কয়েক মাসের মধ্যেই আমি টাকাটা ফেরত দিতে পারব।”
“তাহলে তো হয়েই গেল। তুমি আর চিন্তা করো না।”
“তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দেব।”
“তোমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না অনুপম। আমরা তো একে অপরকে ভালোবাসি। নিজের ভালোবাসার মানুষের জন্য যদি এটুকুই করতে না পারি তাহলে আর কিসের ভালোবাসা?”
অনুপম স্নেহার হাতটা আলতো করে স্পর্শ করে বলে,
“আমি নিশ্চয়ই জীবনে খুব ভালো কোন কাজ করেছিলাম যার জন্য তোমাকে নিজের প্রেমিকা হিসেবে পেয়েছি। তুমি সত্যি অনেক ভালো স্নেহা।”
স্নেহা বলে,
“কি যে বলো না তুমি! আচ্ছা, চলো তাহলে আমরা ব্যাংকের উদ্দ্যেশ্যে বের হই।”
“হ্যাঁ, চলো।”
★★★
নিপুণ প্রজ্ঞার অনেক খোঁজ করেছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। রুদ্র চৌধুরী প্রজ্ঞাকে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে সেটা এখনো তার অজানাই রয়ে গেছে। নিপুণ ক্লান্ত হয়ে নিজের বাড়িতে ফিরতে যাচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার ফোনে দীপ্রর কল আসে। নিপুণ চটজলদি ফোনটা রিসিভ করে। নিপুণ ফোনটা ধরতেই দীপ্র নিপুণের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“কেমন আছ নিপু? আমাকে কি একটুও মিস করছ না?”
দীপ্রর কন্ঠে অভিমান স্পষ্ট। নিপুণ ভালোই বুঝতে পারল সেটা। তবে সে এত সহজে গলার মেয়ে নয়৷ তাই তো বেশ শীতল কণ্ঠে বলল,
“মিস করা উচিৎ ছিল বুঝি?”
“আমি তোমার সাথে এই দূরত্ব আর বজায় রাখতে পারব না নিপু। আমি তোমাকে ভীষণ মিস করছি।”
“দূরত্ব তো তুমিই তৈরি করেছ।”
“তুমি শুধু আমারই দোষ দেবে? তোমার কি কোন দোষ নেই?”
“না৷ আমার কোন দোষ নেই। আমি নিজের দায়িত্বের সাথে কখনো কম্প্রোমাইজ করব না।”
“বাট এখন তো সব সত্যটা প্রমাণিত হয়ে গেছে। কেসটা যে ফেক ছিল তা তো এখন পরিস্কার।”
“সবসময় আমরা যা দেখি তা সত্য হয়না দীপ।”
“উফ, এসব সত্য মিথ্যা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাইনা। আমি জাস্ট তোমার সাথে একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে চাই।”
“ঠিক আছে। তাহলে কাল সকালে আমরা দেখা করছি।”
“কাল কেন? আজ কি অসুবিধা?”
“কালকের দিনটা তোমার মনে নেই? কালকের দিনটা যে আমাদের জন্য অনেক স্পেশাল।”
“কাল তো ৪ঠা ডিসেম্বর। কালকে কিভাবে স্পেশাল…ওহ মনে পড়েছে এই দিনই তো আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল।”
“যাক। মনে আছে তাহলে। কাল সকালে আমরা গ্রান্ড রেস্টুরেন্টে দেখা করব। ওখানে কিছু স্পেশাল মুহুর্ত কাটাতে চাই তোমার সাথে।”
“আমি ওয়েট করব।”
এভাবেই তাদের দুজনের কথোপকথন চলতে থাকে।
★★
স্নেহা ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা তুলে নিয়ে অনুপমের হাতে সেই টাকা তুলে দিয়ে বলে,
“এই নাও। তোমার সব সমস্যার সমাধান এখানে।”
এতগুলো টাকা দেখে অনুপমের চোখ চকচক করতে থাকে। সে বলে,
“তোমাকে অনেক ধন্যবাদ স্নেহা। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার টাকা শোধ করার চেষ্টা করব।”
“এত তাড়াহুড়ো করতে হবে না। তোমার যখন সুবিধা তুমি তখন ফেরত দিও।”
“আচ্ছা, আমি তাহলে এখন আসি? টাকাগুলো ঐ ব্যাংকে জমা দিতে হবে”
“হ্যাঁ, এসো।”
“পরে আবার দেখা হবে।”
বলেই অনুপম বিদায় নেয়। যেতে যেতে টাকাগুলোর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপাত্মক স্বরে বলে,
“এই জন্মে আর দেখা হবে না আমাদের। বোকা মেয়ে স্নেহা। অবশ্য এমন বোকা মেয়ে আছে জন্যই আমার প্রতারণার ব্যবসার এত রমরমা। এখন আমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই রাজশাহী শহর থেকে বিদায় নিতে হবে। তার আগে ঐ রিমি মেয়েটার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। বোকা মেয়েটা ভেবে নিয়েছে আমি ওকে বিয়ে করব। কিন্তু ও তো আর জানে না আমার আসল উদ্দ্যেশ কি। আজ ওকেও একটা মিথ্যা বিপদের কথা বলব। ওর পরিবার তো বিয়ের জন্য অনেক গহনা তৈরি করেছে। এবার সেই গহনাগুলো হাতিয়ে নিয়ে এই শহর থেকে একেবারে পগারপার হয়ে যাব।”
বলেই শিষ বাজাতে বাজাতে চলতে লাগল অনুপম।
★★
স্নেহা থেকে থেকে অনুপমকে ফোন করে চলেছে কিন্তু তার ফোন সুইচ অফ বলছে। স্নেহার এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। অনুপম তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে থেকে তার ফোন বন্ধ বলছে। স্নেহার মন কেমন জানি কু গাইছে। তার বারবার মনে হচ্ছে অনুপমের আবার কোন বড় বিপদ হলো কিনা।
এরইমধ্যে স্নেহার ফোনে নিপুণের ফোনকল এলো। স্নেহা ফোনটা রিসিভ করতেই নিপুণ বলে,
“তুমি কি এখন ফ্রি আছ? তোমাকে অনেক জরুরি কথা বলার আছে স্নেহা। যা তোমার জানা খুব প্রয়োজন।”
“হ্যাঁ, বলুন।”
“শোনো, ব্যাপারটা তোমার জন্য অনেক সেনসিটিভ হবে তাই শান্ত হয়ে সবটা শুনবে। নিজেকে প্রস্তুত করে নাও সেভাবেই।”
“আমি প্রস্তুত আছি।”
“তোমার বয়ফ্রেন্ড অনুপম একটা ফ্রড। ও মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। কয়েক বছর আগে, আমার কাছে একটি মেয়ে ওর নামে প্রতারণার মামলা করেছিল। সেবার ওর সব অপরাধ প্রমাণিত হলে ওর কারাদণ্ড হয়েছিল পরে ও জামিনে বেরিয়ে যায়। এজন্যই অনুপমকে প্রথম দেখে আমার চেনা লাগছিল কিন্তু আমি কিছু মনে করতে পারছিলাম না। আজ আবার ঐ মেয়েটির সাথে দেখা হয়েছিল৷ পরে ওনার সাথে কথা বলেই আমার সব মনে পড়ে।”
স্নেহায় পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায়৷ নিপুণের বলা কথাগুলো তাত পুরো জীবনকে যেন এক নিমেষে বদলে দিল। স্নেহার চোখ অশ্রুতে পরিপূর্ণ। এত বাজেভাবে ঠকে গেল সে!
“হ্যলো, স্নেহা। শুনতে পাচ্ছ আমার কথা। তুমি ঐ অনুপমের ফাঁদে পা দিও না। ঐ প্রতারকের সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দেও।”
স্নেহা কান্নায় ভেঙে পড়ল।
“তুমি কাঁদছ কেন স্নেহা কি হয়েছে?”
“যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে আপু। ঐ প্রতারক আমার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।”
“কি?! এটা তুমি কি বলছ?”
“আজ দুপুরেই ও আমাকে বলছিল ওর ১৫ লাখ টাকার দরকার। আমি কিছু না ভেবেই..”
“এতটা বোকামি কিভাবে করলে তুমি স্নেহা? ওহ শিট! আমার উচিৎ ছিল তখনই তোমাকে অনুপমের ব্যাপারে সবটা কিন্তু তুমি এত তাড়া দেখালে যে..”
“সব আমার ভাগ্যের দোষ আপু। আমি কিভাবে এমন করলাম? এটা আমার বাবার কত কষ্টের টাকা ছিল। এখন আমি বাবাকে কিভাবে মুখ দেখাব?”
“তুমি চিন্তা করো না। আমি দেখছি কি করা যায়।”
নিপুণ ফোনটা কে’টে দেয়। স্নেহা কাঁদতেই থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨