#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ১০
#দিশা_মনি
দীপ্র রেগেমেগে চলে এসেছে স্নেহার সাথে দেখা করতে। স্নেহা তখন নিজের হোস্টেল রুমে বসে পড়ছিল। এই সময় দীপ্রকে দেখে সে স্বাভাবিক ভাবেই ভীষণ অবাক হয় এবং দীপ্রকে শুধায়,
“ভাইয়া আপনি হঠাৎ!”
দীপ্র সোজা স্নেহার সামনে এসে দাঁড়ালো তারপর স্নেহাকে চড়া গলায় বলতে থাকে,
“নিপুণকে তুই এই কেসের মধ্যে জড়িয়েছিস তাই না?”
স্নেহা অবাক হওয়ার মুখ করে বলে,
“আমি কেন নিপুণ আপুকে কেসের মধ্যে জড়াবো? উনি তো নিজেই প্রজ্ঞার হয়ে কেস লড়তে চেয়েছেন।”
“চুপ। একদম চুপ। আমি কিছু বুঝিনা ভেবেছিস?”
“ভাইয়া, আপনি শুধু শুধুই এত ওভার রিয়্যাক্ট করছেন। নিপুণ আপু একজন স্বাধীন মানুষ। উনি কেন শুধু শুধু আমার কথায় প্রভাবিত হবেন? হ্যাঁ, এটা ঠিক আমি ওনার কাছে প্রথমে সাহায্য চেয়েছিলাম সেটা শুধুমাত্র প্রজ্ঞাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্তই। এরপর বাকিটা সব ওনার ইচ্ছা ছিল।”
দীপ্র ভীষণ রেগে গিয়ে স্নেহার পড়ার টেবিলের সামনে থাকা চেয়ারটা তুলে ছু’ড়ে ফেলে। স্নেহা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। দীপ্র স্নেহাকে হুমকি দিয়ে বলে,
“যদি এই কেসে জড়িয়ে আমার নিপুণের কোন ক্ষতি হয় তাহলে কিন্তু আমি তোকে ছাড়ব না।”
“ভাইয়া! আপনি আমাকে কেন দোষ দিচ্ছেন? আমি তো এটাই জানি না, আপনি এবং আপনার পরিবারের সদস্যরা কেন সবসময় আমার সাথে এমন করেন? আমি তো আপনাদের কোন ক্ষতি করিনি।”
“তোর অতীত সম্পর্কে আমি সব জানি। তাই এসব নাটক একদম করবি না। অবশ্য তোর ফ্যামিলি ব্রাকগ্রাউন্ড দেখে তোর থেকে আর বেশি কি আশা করা যায়।”
“মুখ সামলে কথা বলুন। আমার পরিবারের বা আমার কোন খারাপ ইতিহাস নেই।”
“আছে কি নেই সেটা একটু খোঁজ নিয়ে দেখ। আর যেটা বললাম মাথায় রাখিস। নিপুণের গায়ে সামান্য কোন আঁচড় পড়লেও তোকে অনেক বড় ফল ভোগ করতে হবে।”
এটুকু বলেই দীপ্র বিদায় নেয়। দীপ্র চলে যাবার পর স্নেহা দীপ্রর বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। কোন অতীতের কথা বলছিল দীপ্র? তাহলে কি অতীতের এমন কোন সত্য আছে যার জন্য তাকে সবাই এত অপছন্দ করে।
★★★
প্রজ্ঞাদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে রাজীব চৌধুরীর পাঠানো কিছু লোক। তারা বর্তমানে পারভেজ ইসলামকে ঘিরে ধরেছেন৷ তাদের সবার প্রধান মোহাম্মদ আলী হুমকির সুরে বলেন,
“ভালো চাইলে রাহাত চৌধুরীর নামে কেস উঠিয়ে নিন। নাহলে কিন্তু পরিণাম ভালো হবে না।”
পারভেজ ইসলাম বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে বলেন,
“কি করবেন আপনারা? মে**রে ফেলবেন আমাদের? তো মা*-* রুন। আমার মেয়েটার জীবন তো ঐ রাহাত চৌধুরী নষ্ট করেই দিয়েছে এখন শুধু আমাদের জীবনটাই বাকি আছে। সেটাও নিয়ে নিন। কিন্তু আমি কিছুতেই পিছু হটব না।”
“আপনাকে ভালোয় ভালোয় বললাম শুনলেন না। এর পরিণাম ভোগ করতে প্রস্তুত থাকবেন। এই তোরা সবাই চল।”
বলেই তিনি নিজের দলের সকল লোককে নিয়ে বেরিয়ে যান। ওরা চলে যেতেই মনিরা খাতুন পারভেজ ইসলামের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
“এটা কি ঠিক হলো? ওনারা যদি এখন সত্যিই আমাদের ক্ষতি করে দেন?”
“আমাকে আর এসব ভয় স্পর্শ করে না মনিরা। প্রতিনিয়ত নিজের মেয়েটাকে চোখের সামনে গুমড়ে মরতে দেখছি। একজন বাবার কাছে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে বলো?”
মনিরা খাতুন দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। নিজের মেয়ের এই পরিণতি যে তাকেও ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে।
★★★
রাজীব চৌধুরী একের পর এক ফোনকল করেই চলেছেন৷ নিজের ছেলেকে জেল থেকে বের করে আনার কোন সুযোগই তিনি বাদ রাখছেন না। রুদ্র চৌধুরী আজ সংসদ অধিবেশন থেকে সরাসরি বাড়ি ফিরলো। রুদ্র চৌধুরীকে দেখেই রাজীব চৌধুরী বিরক্তির চোখে তাকালেন। রুদ্র নিজের বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য দিনরাত এত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছ বুঝি?”
রাজীব চৌধুরী বললেন,
“তো কি করব? তোমার মতো হাত পা গুটিয়ে বসে থাকব? তোমার নিজের ভাইয়ের প্রতি কোন দায়িত্ব কর্তব্য না-ই থাকতে পারে, তুমি ওর কথা নাই ভাবতে পারো কিন্তু আমাকে তো নিজের ছেলের কথা ভাবতে হবে।”
“তুমি আমাকেই ব্লেইম করছ?”
“করবো না তো কি? তুমি নিজের ভাইকে নিজের হাতে পুলিশে তুলে দিয়েছ। তোমার কাছে তো নিজের ভাইয়ের থেকে জনসেবাই বড়।”
রুদ্র আচমকা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। তাকে হাসতে দেখে রাজীব চৌধুরী ভ্রু কুচকে বললেন,
“এসব হাসছ কেন? আমি কি কোন মজার কথা বলছি?”
“তুমি কিভাবে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সেটাই ভাবছিলাম। তুমি তো দেখছি রাজনীতির ” র”ও বোঝোনা।”
“মুখ সামলে বলো। তুমি যখন জন্ম নেওনি তখন থেকেই আমি রাজনীতি করি। তাই আমাকে তোমার রাজনীতি শেখাতে আসতে হবে না।”
“ওহ, তাই বুঝি? কিভাবে আইওয়াশ করতে হয় তুমি কি সেটা জানো না? সাপকে মা*রলেই তো শুধু হবে না আব্বু। সাপকে এমনভাবে মা*রতে হবে যেন লাঠি না ভাঙে।”
“এত কথা না ঘুরিয়ে যা বলার স্পষ্ট করে বলো।”
“তুমি টিভিটা অন করো তাহলেই সব বুঝতে পারবে।”
রাজীব চৌধুরী টিভি অন করতেই দেখতে পান নিউজ চ্যানেলগুলোতে ব্রেকিং নিউজে দেখাচ্ছে যে, রাহাত চৌধুরীর উপর থেকে কেস তুলে নিয়েছে পারভেজ ইসলাম। সাথে তিনি এও বলছেন যে, তার মেয়েকে সেদিন রাহাত চৌধুরী কিছু করে নি। রাহাত চৌধুরীর কিছু বন্ধুরা এই অঘটন ঘটিয়েছিল জন্য তার মেয়ে রাহাতকে সন্দেহ করেছিল। কিন্তু আসলে রাহাত নির্দোষ। এমনকি যেদিন মেয়েটির সাথে এই ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিন রাতে রাহাত রাজশাহী শহরে ছিলই না, সে ছিল কক্সবাজারে। সেই প্রমাণও নাকি পুলিশের হাতে আছে। এখন সবাই প্রশ্ন তুলছে কেন একজন এমপির ভাইকে এভাবে কোন ভ্যালিড প্রমাণ ছাড়া গ্রেফতার করা হলো।
নিউজ দেখে তো রাজীব চৌধুরীর মাথা ঘুরে গেল। তিনি অবিশ্বাস্য চোখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন,
“এটা কিভাবে সম্ভব? ঐ লোকটাকে দমানোর আমি কত চেষ্টা করেছি কোন কিছুই তো কাজ হয়নি৷ তাহলে তুমি কিভাবে এটা সম্ভব করলে?”
“এটাই তো রাজনীতির কূটকৌশল আব্বু। এরজন্য আমায় বেশি কিছু করতে হয়নি। প্রথমে কিছু লোককে পাঠিয়েছি ওদের বাড়িতে যারা প্রজ্ঞার মাথায় ব*ন্দুক ধরে তাকে তুলে নিয়ে এসেছিল। তারপর আমি নিজে পারভেজ ইসলামকে ফোন করে বলেছি যদি নিজের মেয়েকে জীবিত ফেরত চান তাহলে যেন কেসটা তুলে নেন। এরপর বাকিটা তো দেখতেই পাচ্ছ।”
“ব্রাভো মাই সান! ব্রাভো। তোমার মাথায় যে এত বুদ্ধি জানতাম না। তুমি তো নিজের বাবাকেও ছাড়িয়ে যাবে। একদিকে নিজের ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে জনগণের সামনে মহান সাজলে, নিজের ভোটব্যাংক বাড়ালে। আবার সুকৌশলে নিজের ভাইকেই জেল থেকে বের করে আনলে।”
রুদ্র চৌধুরী গর্বের সাথে বুক ফুলিয়ে বলে,
“দেখেলে তো তোমার ছেলের ক্ষমতা।”
★★★
পারভেজ ইসলাম কেসটা তুলে নিয়েছেন এটা জানতে পেরেই নিপুণ বারবার তাকে ফোন করে চলেছে। কয়েকবাএ ফোনটা কে*টে দিয়ে অবশেষে তিনি রিসিভ করেন। নিপুণ বলে “আঙ্কেল নিউজে এটা কি দেখাচ্ছে? আপনি কেসটা কেন তুলে নিয়েছেন? প্রজ্ঞা তো নিজের মুখে বলেছিল যে ঐ রাহাতকে দেখেছে। ঐ ছেলেটাই তো…”
“এই ব্যাপারে আমি আর কথা বলতে চাইনা। তুমি আমাদের অনেক সাহায্য করেছ এজন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু এখন আর এই বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ব্যাপারটা মিটিয়ে নিলে ভালো হয়।”
“কিন্তু আঙ্কেল…”
পারভেজ ইসলাম ফোন কে’টে দেন। নিপুণের ভীষণ সন্দেহ হয় ব্যাপারটা নিয়ে। তার মনে হতে থাকে হয়তো পারভেজ ইসলামকে এমনটা করতে বাধ্য করা হয়েছে। তাই সে প্রত্যয় করে বলে,
“আসল সত্য আমি সবার সামনে আনবোই। তার জন্য যা করা দরকার আমি করবো। কিন্তু প্রজ্ঞাকে ন্যায়বিচার পাইয়ে না দিয়ে শান্তিতে নিঃশ্বাস নেব না। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিরা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে বারবার এভাবে বেঁচে যেতে পারে না।”
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨