তুমি ছিলে বলেই পর্ব-০৫

0
540

#তুমি_ছিলে_বলেই
#পর্বঃ৫
#দিশা_মনি

স্নেহাকে হোস্টেলের সামনে পৌঁছে দিয়ে ফিরে গেল অনুপম। অতঃপর স্নেহা গেল তার বান্ধবী প্রজ্ঞার হোস্টেল রুমে। প্রজ্ঞা তখন পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিল৷ স্নেহা রুমে প্রবেশ করে বিছানায় বসে বলে,
“বাহ, আপনি তো দেখছি বেশ পড়াকু হয়ে গেছেন!”

প্রজ্ঞা পড়া থামিয়ে বলে,
“কি আর করবো বল! সারাবছর না পড়লে যা হয়। সামনে পরীক্ষা আর আমার এখনো পড়াই কমপ্লিট হয়নি। তাই তো এখন নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে পড়তে হয়েছে৷ তোর তো মনে হয় বই কমপ্লিট।”

“আমার অবস্থাও খুব বেশি ভালো না রে! আচ্ছা তোকে যে আমি আমার জন্য হোস্টেলে রুম দেখতে বলেছিলাম। তুই দেখেছিস তো?”

“তোর জন্য অনেক ভালো একটা খবর আছে। এখানে আমার যে রুমমেট ছিল সে হঠাৎ করে রুম ছেড়ে দিয়েছে। যার কারণে এখন তুই চাইলে এখানেই থাকতে পারিস।”

“বাহ, তাহলে তো ভালোই।”

“হুম। আমি হোস্টেল অথারিটির সাথেও কথা বলে নিয়েছি। তুই চাইলে আজ থেকেই আমার সাথে থাকতে পারিস।”

“আজ হবে না রে। আজ আমায় বাড়িতে যেতে হবে। বাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনতে হবে। কাল একেবারে সবকিছু নিয়ে আসব।”

“আচ্ছা।”

★★★
হোস্টেলে আজ স্নেহার দ্বিতীয় দিন। গতকালই সব জিনিসপত্র নিয়ে হোস্টেলে উঠেছে সে৷ প্রজ্ঞার সাথেই রুম শেয়ার করে আছে। দুই বান্ধবী মিলে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে৷ স্নেহা সারাবছর মোটামুটি পড়াশোনা করেছে, প্রজ্ঞা বই ছুঁয়েও দেখেনি৷ যার ফলে স্নেহাকে বেশি চাপ নিতে হচ্ছে না৷ আর প্রজ্ঞা তো দম নেওয়ার সময় পাচ্ছে না।

সন্ধ্যাবেলায় প্রজ্ঞা হঠাৎ করে স্নেহার সম্মুখে এসে বলে,
“একটা সাহায্য করতে পারবি রে বোন প্লিজ!”

“কি সাহায্য বল।”

“কি আর বলব দুঃখের কথা! আমার সাথে সাথে আমার স্টুডেন্টেরও পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তুই তো জানিস আমি কয়েকটা বাচ্চাকে টিউশনি পড়াই। পরীক্ষার জন্য তো এখন সবার থেকে ছুটি নিয়ে নিয়েছি কিন্তু আমার এক ছাত্রর এখন পরীক্ষা চলছে। ছেলেটা আবার অংকে একেবারে দূর্বল। কাল ওর গণিত পরীক্ষা। ওর মা বারবার করে বলে দিয়েছে পরে না ফেলেও অন্তত আজকে ওকে পড়াতে যেতেই হবে। এদিকে আমার নিজের পড়ারই বাজে অবস্থা।”

“বুঝলাম। তো এখানে আমি কি করতে পারি?”

“এখন যদি কেউ কিছু করতে পারে তাহলে সেটা শুধু তুই পারবি বোন। তুই আজ গিয়ে ছেলেটাকে আমার বদল পরিয়ে আয় না।”

“এসব কি বলছিস তুই? এটা কিভাবে সম্ভব?”

“কেন সম্ভব নয়? তুই তো অংকে আমার থেকেও ভালো। তাছাড়া তোর এক্সামের প্রিপারেশনও তো অনেক ভালো। আর আমার অবস্থাটা তো তুই বুঝতেই পারছিস। এখন ওকে পড়াতে যাওয়া মানে আমার এক্সামে ডাব্বা মারা নিশ্চিত হওয়া। আবার না গেলেও ওর মা টিউশনিটা বন্ধ করে দেবে। তাহলেও আমার ক্ষতি। তুই তো জানিস আমার ফ্যামিলির অবস্থা। এখানে নিজের হাতখরচ আমাকে নিজেই চালাতে হয়।”

স্নেহা কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভেবে বলে,
“কিন্তু তোর ছাত্রের মা কি তোর বদলে যদি আমি পড়াতে যাই তাহলে সেটা মেনে নেবে?”

“আমি ওনাকে বুঝিয়ে বলব। তাছাড়া একটা দিনেরই তো ব্যাপার। ওনার ছেলে পরীক্ষায় পাশ করলেই হলো। তুই শুধু আজকের দিনটা সামলে নে।”

“ঠিক আছে। তুই ঠিকানাটা দে আমি যাচ্ছি।”

“ওদের বাড়ি বেশি দূরে নয়। তোর ফোনটা দে আমি গুগল ম্যাপে ঠিকানাটা দেখিয়ে দিচ্ছি।”

প্রজ্ঞা স্নেহাকে ঠিকানাটা দেখিয়ে দেয়। স্নেহা আর দেরি না করে রওনা দেয়।

★★★
স্নেহা প্রজ্ঞার দেওয়া ঠিকানা মতো পড়াতে চলে এসেছে। স্নেহা যে ছেলেটাকে পড়াতে এসেছে তার নাম অভিক। ছেলেটা সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে কিন্তু সে গণিতে একেবারেই দূর্বল। অভিককে অংক বোঝাতে গিয়ে স্নেহার নিজেরই অংক ভুলে যাওয়ার জোগাড়। তবুও সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে ছেলেটাকে অন্তত পাস মার্ক নিশ্চিত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। অনেকাংশে সফলও হলো। অভিককে পড়িয়ে চলে আসতে যাবে এমন সময় অভিকের মা তাকে আটকে দিয়ে বলে,
“আপনি প্রথমবার আমাদের বাসায় এলেন। কিছু খেয়ে যান।”

“না, না। তার কোন দরকার নেই।”

“আপনি বসুন তো। আমি এক্ষুনি নাস্তা আসছি।”

স্নেহা আর না করতে পারে না। সে পড়ার টেবিলেই বসে থাকে। অভিকও তার সামনে বসে অংক করে যাচ্ছিল। আচমকা একজন তরুণী সেখানে চলে আসে। মেয়েটি কার সাথে যেন চিৎকার করে কথা বলছে। স্নেহা মেয়েটির দিকে তাকায়। অভিক নিচু কন্ঠে বলে ওঠে,
“উনি হলো আমার খালা। আজ দুপুরেই এসেছে। জানেন ম্যাম, উনি না আজ বোধহয় খুব রেগে আছে। এসেছে থেকেই কেমন রাগী রাগী ভাব।”

স্নেহা ব্যাপারটাকে আর তেমন গুরুত্ব দিলো না। তবে সে এটা বেশ বুঝল অভিক ছেলেটা বেশ সহজ সরল। এক দিনের পরিচয়েই ছেলেটা তাকে একদম আপন করে নিয়েছে।

হঠাৎ করেই একটি চিরচেনা কন্ঠস্বরে স্নেহার কান আটকে যায়। অভিকের খালার ফোনটা হয়তো স্পিকারে দেওয়া। ফোনে যেন স্পষ্ট অনুপমের কন্ঠস্বর শুনল স্নেহা। স্নেহার কেমন জানি খটকা লাগল। অভিকের খালা ততক্ষণে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। স্নেহা হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। অভিক আবারো নিচু গলায় স্নেহাকে বলে,
“খালা মনে হয় আমার হবু খালুর সাথে কথা বলছিল। তাই তো এত রেগে আছেন।”

“তোমার হবু খালুর নাম কি?”

অভিক মাথা চুলকে বলে,
“নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। একবারই শুনেছিলাম। তবে হ্যাঁ, আমার ফোনে খালার সাথে ওনার পিক আছে।”

“পিকটা একটু দেখাতে পারবে?”

“আপনি একটু বসুন। আমি ফোনটা নিয়ে আসছি।”

অভিক ফোনটা নিয়ে পড়ার টেবিলের কাছে আসতে যাবে তার আগেই তার মা তার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলে,
“কাল না তোমার পরীক্ষা আর তুমি এখন ফোন নিচ্ছ। মাইর চিনো মা*ইর? যাও পড়তে বসো।”

“তুমি আমায় ভুল বুঝছ মম। আমি তো আসলে..”

“কোন কথা না। চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসো।”

অভিক চুপচাপ গিয়ে পড়তে বসে৷ অভিকের মা স্নেহাকে খেতে দেয়। স্নেহা খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠে পড়ে। তারপর বিদায় নেয়। রাস্তায় যাওয়ার সময় তার সেই কন্ঠস্বরের কথাই মনে পড়ে। তার মনটা এখনো কেন জানি খচখচ করছে৷ একবার মনে হচ্ছে হয়তো শুনতে ভুল হয়েছে আবার এটাও মনে হচ্ছে সে একদম ঠিক শুনেছে।

স্নেহার এমন ভাবনার মাঝেই হঠাৎ সে লক্ষ্য করে কয়েকটা ছেলে সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ ছেলেগুলো যে সুবিধার নয় সেটা বোঝাই যাচ্ছে। রাতও প্রায় হয়ে গেছে৷ স্নেহা ভয়ে ভয়ে সামনে এগোতে থাকে। এই গলিটা পেরিয়ে মেইন রোডে গিয়ে উঠলেই বাঁচে সে।

তবে বিপত্তি ঘটেই গেল! স্নেহার রাস্তা আটকে ধরল ছেলেগুলো৷ সাথে বিভিন্নরকম নোংরা কথাবার্তা বলা শুরু করল। ভয়ে স্নেহার গলা শুকিয়ে গেল৷ সে কোন কিছু না ভেবে দৌড় দিল। ছেলেগুলোও তার পেছনে দৌড়াচ্ছিল। স্নেহা প্রাণপনে ছুটতে থাকে। হঠাৎ করেই তার সামনে চলে আসে কেউ। স্নেহাকে আগলে নেয়। স্নেহা মুখ তুলে তাকিয়ে বলে,
“নিপুণ আপু আপনি!”

“হ্যাঁ, আমি। কি হয়েছে তোমার? এভাবে ছুটছ কেন?”

“ওরা..”

বলেই পিছনে ফিরে তাকায় স্নেহা৷ ছেলেগুলো তার পেছন পেছন এখান অব্দি চলে এসেছে৷ নিপুণ বলে ওঠে,
“তুমি ভয় পেওনা। এদেরকে তো আমি দেখে নিচ্ছি।”

নিপুণ ছেলেগুলোর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমি ৯৯৯ এ ফোন করে দিয়েছি। পুলিশকে আসতে দে৷ থানায় নিয়ে গিয়ে যখন দুই ঘা দেবে তখন মেয়েদের উত্তপ্ত করা বেরিয়ে যাবে।”

নিপুণের কথা শুনে ছেলেগুলোর চোখেমুখে ভয়ের দেখা মেলে। সকলে প্রায় একই সাথে দৌড়ে পালায়৷ স্নেহা হাফাতে থাকে৷ নিপুণ স্নেহাকে বলল,
“তুমি আমার সাথে চলো।”

স্নেহা নিপুণের সাথে যেতে থাকে। নিপুণ স্নেহাকে নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে পড়ে।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে