তুমি গহীন অনুভব পর্ব-০১

0
1410

#তুমি_গহীন_অনুভব
#সূচনা_পর্ব
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

তুমি কি করে একটা বোবা আর গ্ৰামের মেয়েকে বিয়ে করতে পারলে। যদিও দেখতে সে সুন্দরী তাই বলে তুমি তাকে বিয়ে করবে?

ইশতিয়াক চৌধুরীর এ কথা শুনে ফুয়াদ আইজান চৌধুরী অবাক হয়ে বলল,,

ও গ্ৰামের মেয়ে ঠিক আছে বাবা। কিন্তু আপনাকে কে বলল ও বোবা?

কে আবার বলবে মেয়েটাই তো হাত ইশারা করে দেখালো ও এখন কথা বলতে পারছে না।

ফুয়াদ আইজান মেয়েটার দিকে তাকালো মেয়েটা ওর দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনি চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরবে এটা দেখে ফুয়াদ আইজানের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ও যে কাউকে কথা দিয়েছে এই রমনীকে সে কষ্ট পেতে দেবে না। ও কি তবে কথা রাখতে পারবে না। ও ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,,

বাবা ও কথা বলতে পারে। ওর গলায় একটু সমস্যা হয়েছে ও দু দিন কথা বলতে পারবে না। আর এমনিতেও ও অনেক অসুস্থ হাটতেও পারবে না। তাই ওকে কোলে করে নিয়ে এসেছি আসলে ওর একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল। শরীরের কিছু জায়গায় আঘাত পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি ও আবার কথা বলতে পারবে।আর হাটতেও পারবে।বাকি রইল গ্ৰামের কথা গ্ৰামের মানুষ কি মানুষ না। নাকি আপনারা শহরে থাকেন বলে গ্ৰামের মানুষ কে মানুষ বলে মনে করেন না। তবে জানেন তো এই শহরের স্বার্থপর মানুষের থেকে গ্ৰামের মানুষেরা অনেক ভালো।

শেষের কথা গুলো আইজান রেগে বলল ইশতিয়াক চৌধুরী ওর রাগ বুঝতে পেরে বলল,,

আমি গ্ৰামটাকে ওভাবে মিন করি নি তুমি ভুল বুঝছো আমাকে। আসলে তোমাকে কতোবার বিয়ের কথা বললাম তুমি বিয়ে করলে না তাই। অথচ এই মেয়েটাকে এভাবে বিয়ে করে আনলে?

আমি এ বিষয়ে আর কাউকে কোন কৈফিয়ত দেব না। এমনিতেও আমি কাউকে কৈফিয়ত দেই না শুধু মাত্র আপনারা আমার পরিবার তাই এগুলো বললাম। আমি জানি কোনটা আমার জন্য ঠিক আর কোনটা আমার জন্য ভুল। আর মা তুমি আমার জন্য আর ওর জন্য রুমে খাবার পাঠিয়ে দাও। আমরা দুজনেই অনেক ক্লান্ত।

বলেই ফুয়াদ আইজান মেয়েটিকে কোলে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। বাকিরা কেউ কিছু বলার সুযোগই পেল না। এমনিতে ফুয়াদ আইজান রাগী। এ বাড়ির কোন কিছুতেই ও তেমন ভাবে থাকে না। আজ আইজান এর কাকাতো বোন তিশার আংটিবদল এর অনুষ্ঠান ছিল। কয়েকদিন পরে বিয়ে হবে। (এবার ঘুরে আসি এতক্ষন কি নিয়ে কথা হচ্ছিল সেটা নিয়ে।)

ফ্ল্যাশব্যাক,

দীর্ঘ দুই মাস পর ফুয়াদ আইজান চৌধুরী বাড়ি ফিরলো তাও একটা মেয়েকে কোলে নিয়ে। ফুয়াদ আইজান চৌধুরী পেশায় একজন সি আই ডি অফিসার। বডি হাইট মিডিয়াম ফর্সা গায়ের রং। চৌধুরী বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান ছিল যদিও ফুয়াদ আইজান চৌধুরী এ বিষয়ে কিছু অবগত নয়। বাড়িতে ঢুকে সবাইকে দেখে অবাক হয় ফুয়াদ। তাই মেয়েটাকে ঘরে না নিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়। সবাই অবাক চোখে মেয়েটার আর ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে ছোট খাটো ভালো রকমের একটা অনুষ্ঠান চলছিল সেটা ফুয়াদ বুঝতে পারলো। ফুয়াদ আইজান চৌধুরী এর বাবা ইশতিয়াক খান রাগী মুখ করে এগিয়ে এসে আইজানকে জিজ্ঞেস করল,,

মেয়েটা কে ফুয়াদ? আর তুমি একটা মেয়েকে এভাবে কোলে নিয়ে কি করে আনতে পারলে?

তখন আইজান শান্ত স্বরে বলল,,

আমি ওকে বিয়ে করেছি।

এ কথা শুনে যেন সকলের ওপর একটা বাজ পড়ল। যে ছেলেকে নাকি এক বছর যাবৎ কত বলেও বিয়ে করানো গেল না সে ছেলে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করেছে বিষয়টি ঠিক যেন কারো হজম হচ্ছে না।সব ভাবনা চিন্তা রেখে ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

মানে! বিয়ে করেছো? আর আমাদের কিছু জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না। মেয়ের নাম কি?কোথায় থাকে? আমরা তো কেউ কিছু জানিনা হুট করে একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছি বললেই বিয়ে হয়ে গেল।

তখন ফুয়াদ আইজান বলল,,

ওর নাম ইরজা আজরিন। আমি দুই মাস আগে যে কেসটার জন্য গ্ৰামে গিয়েছিলাম ওখান থেকেই আমি ওকে বিয়ে করে এনেছি।

ফুয়াদ আইজান আরো কিছু বলবে তার আগেই একটা কল আসে ওর ফোনে ও ফোনটা নিয়ে ওখান থেকে চলে যায়। মেয়েটা মাথা নিচু করে বসে আছে তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোন অনুভূতিহীন মানবী। কেউ কিছু বলছে না সবাই মেয়েটাকে খুতিয়ে খুতিয়ে দেখছে। সেটা দেখে মেয়েটা অস্বস্তি বোধ করছে কিন্তু কিছুই করার নেই। কিছু মানুষের তো রাগ ও হচ্ছে মনে হচ্ছে মেয়েটাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এ বাড়ি থেকে বের করে দিতে কিন্তু এত মানুষের জন্য চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার অবস্থা বুঝতে পেরে আইজানের মা আয়েশা চৌধুরী আজরিনের কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বলল,,

তোমার বাড়ি কোথায় মা? আমার ছেলের সাথে তোমার কিভাবে বিয়ে হলো।

আজরিন কিছু বললো না শুধু আয়েশা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইল। তখন পাশ থেকে একজন বলল,,

এই মেয়ে কথা বলছো না কেন তুমি বোবা নাকি তোমাকে তো উনি জিজ্ঞেস করছে উত্তর দিচ্ছো না কেন বেয়াদব কোথাকার?

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

আহ হা এটা কিরকম ব্যবহার করছো! ও বোধহয় ভয় পাচ্ছে। আচ্ছা মা তুমি ভয় পেয় না আমার ছেলে তোমাকে বিয়ে এনেছে এখন বলো তো তোমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো?

এ কথা শুনে আজরিন অসহায় চোখে আয়েশা চৌধুরীর দিকে তাকালো। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। ও শুধু হাত দিয়ে দেখালো সে এখন কথা পারছে না। এটা দেখেই সকলে ধরে নিল ইরজা আজরিন নামক মেয়েটি বোবা।

বর্তমান,,

ফুয়াদ আইজান আজরিন কে ঘরে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,,

সরি বাইরে আপনাকে তুমি বলার জন্য। আসলে নিজের বিয়ে করা বউকে আপনি বললে তারা অন্য কিছু ভেবে নিতো। তাই বললাম আপনি কিছু মনে করবেন না। আর বাইরে যা হলো তার জন্য ও দুঃখিত।

আজরিন ফুয়াদের কথা শুনেও কিছু বললো না। তার দৃষ্টি অন্য দিকে। ফুয়াদ আইজান ওর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বলল,,

ওখান থেকে ফোন দিয়েছিল সবাই ঠিক আছে এখন আর কোন চিন্তা নেই। আপনার ভাইরা আর বোন সেখানে ঠিক মতো পৌঁছে গেছে। চিন্তা করবেন না।

এ কথা শুনেও আজরিনের কোন ভাবান্তর নেই। কিছুক্ষণ পর সে ফুয়াদকে ইশারা করে বলল ওয়াশ রুমে যাবে।গোসল করবে এখন ফ্রেশ হবে। ফুয়াদ আইজান ওর কাবার্ড থেকে একটা লং কুর্তি,ওরনা আর প্লাজু এনে দিল। এটা দেখে আজরিন তো অবাক একটা ছেলের কাবার্ডে মেয়েদের জিনিস। অবাক হলেও কিছু বলার উপায় নেই কারন দুদিন ও কথা বলতে পারবে না। আইজান ওর অবস্থা দেখে বুঝতে পারলেও কিছু বললো না। ফুয়াদ আইজান আজরিনকে সাহায্য করলো। আর বলল,,

কোন কিছু দরকার পরলে দরজার টুকা দিবেন!

আজরিন মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। আইজান দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে আছে। যদি ওর কিছু প্রয়োজন হয়। তখনি আয়েশা চৌধুরী খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করলেন আর ওকে ওয়াশরুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,,

কিরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?

আসলে মা যদি ওর কিছু প্রয়োজন পড়ে তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।

ও আচ্ছা!

আয়েশা চৌধুরী ছেলের কাছে এসে ওর গালে হাত দিয়ে বলল,,

আইজান সবকিছু ঠিক আছে তো? না মানে তুই হুট করে এসব মানে আমি কিছু,,

মা এতো টেনশন করো না। তুমি তো তোমার ছেলেকে চিনো তোমার ছেলে কি কখনো ভুল করতে পারে।

উঁহু আমার ছেলে কোন ভুল করতেই পারে না।তবে,

তবে কি মা?

আমাকে ফোন করে জানাতে পারতি একবার!

সিচুয়েশন ছিল না বলার। তবে তোমাকে একটা কথা বলি এই মেয়েটাকে দেখছো ওর এখন আমাকে খুব প্রয়োজন। ও আজ ওর পরিবার ছেড়ে আমার সাথে এসেছে আর এটাও বলি এই মেয়েটা তোমার ছেলের কাছে অনেক ইমপোর্টেন্ট ।

হুম বুঝতে পেরেছি!

তখনি আজরিন দরজা খুলে দেখে ফুয়াদ আর ওর মাকে। আজরিন ভালো করে ওরনা দিয়ে মাথা ঢাকে।আর ইশারা করে ওর হয়ে গেছে। তা দেখে ফুয়াদ আজরিন কে কোলে তুলে এনে বিছানায় বসিয়ে দেয়। তারপর বলে,,

মা তুমি ওকে খায়িয়ে দাও ততক্ষনে আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

তখন আজরিন ইশারা করে বললো,,

আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি এখন খাবো না আমার খিদে নেই!

আমার অনেক দেরি হবে ততক্ষন পর্যন্ত তোমার অপেক্ষা করতে হবে না। মা তোমাকে খায়িয়ে দিবে। তোমার এখন হাত দিয়ে খেতে হবে না।আর আমি ভালো করেই জানি তোমার খিদে আছে কি নেই।

আমার ব্যাথা তো পায়ে হাতে তো না তাহলে?

আমি বলেছি তাই! মা তুমি ওকে খায়িয়ে দাও।

আয়েশা চৌধুরী এতক্ষন ওদের দেখছিলেন। উনি বললেন,,

ফুয়াদ তুই যা আমি ওকে খায়িয়ে দিচ্ছি।

ফুয়াদ চলে গেল ওয়াশরুমে ও জানে ওর মা যখন বলেছে তাহলে ওকে খায়িয়েই ছাড়বে। ও যাওয়ার পর আয়েশা চৌধুরী আজরিন কে বলল,,

চুপচাপ খেয়ে নাও মা নাহলে তোমার হাজবেন্ড খুব রাগ করবে। আমার ছেলের হুটহাট রেগে যাওয়ার অভ্যাস আছে।

তখন আজরিন ইশারা করে বলল ‘উনি আসুক একসাথে খাবার খাবে। একথা শুনে আয়েশা চৌধুরী খুশি হলেন। তাই তিনি কিছু বললেন না। ছেলের আসার অপেক্ষা করতে লাগলেন।

আয়েশা চৌধুরী মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকালো কি মায়াবী মুখ দেখতে অতিরিক্ত ফর্সা না হলেও সৌন্দর্যের কমতি লাগছে না। চোখ দুটো যেন কথা বলে। মেয়েটাকে যখন তিনি ফুয়াদের কোলে দেখেছিলেন তখন তার পরনে ছিল একটা কালো বোরকা আর হিজাব। মুখে কোন প্রসাধনী ছিল না। তবে মেয়েটাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। আরো কিছু ভাবতে ভাবতে ততক্ষনে ফুয়াদ ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসেছে। তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

আয় তাড়াতাড়ি বোস তোর বউ তোকে ছাড়া খাবে না।

এ কথা শুনে আজরিন একটু লজ্জা পেল সাথে ফুয়াদ ও তখন ফুয়াদ বলল,,

আমি তো বললাম আমার লেট হবে।

আচ্ছা সেসব বাদ দে এখন বোস খেয়ে নে।

হুম! আচ্ছা মা তাহলে তুমি যাও আমিই ওকে খায়িয়ে দিচ্ছি।

না থাক তুই খা আমি আমার নতুন মেয়েকে খাওয়াচ্ছি।

একথা শুনে আজরিন ওনার দিকে তাকালো।আয়েশা চৌধুরী মুচকি হেসে আজরিনের মুখের সামনে এক লুকমা খাবার ধরলো তা দেখে আজরিনের চোখ ছলছল করে উঠলো। আজরিন আয়েশা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। আয়েশা চৌধুরী আজরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,

কি হলো মা আমার হাতে খেতে ইচ্ছে করছে না বুঝি!

আজরিন একটু খাবারটা গালে নিল আর ওর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। তা দেখে আয়েশা চৌধুরী ব্যস্ত হয়ে বলল,,

কি হলো মা কষ্ট হচ্ছে নাকি? এমনিতেও তুমি অসুস্থ।

আজরিন মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বুঝালো তার কষ্ট হচ্ছে না। অতঃপর খাওয়া শেষ হলে আয়েশা চৌধুরী বললেন,,

ফুয়াদ তুই কি এখন রুমেই থাকবি নাকি নিচে যাবি?

কেন? আর আজকে কিসের অনুষ্ঠান ছিল?

এমনিই। তোকে ফোন করা হয়েছিল কিন্তু তুই তো দুদিন ধরে ফোনই তুলছেলিস না কয়েকদিন আগে বলেছিলাম না আজ তিশাকে আংটি পড়াতে আসবে তুই মনে হয় ভুলে গেছিস।

হুম কাজের চাপে ভুলে গেছি। আমি এখন নিচে নেমে গাড়ি থেকে ওর ওষুধপত্র নিয়ে আসবো। আর আজকে রুমেই থাকবো কাল সবার সাথে কথা বলবো। তুমি সবাইকে বলে দিও।

আচ্ছা ঠিক আছে।

বলেই আয়েশা চৌধুরী বেরিয়ে গেলেন। এতক্ষণ আজরিন সবকিছু দেখছিল। হুট করে ফুয়াদ আজরিনের পা ধরলো তা দেখে আজরিন হকচকিয়ে উঠলো। ফুয়াদ বলল,,

যা ভেবেছিলাম তাই । আপনি ঠিক ব্যান্ডেজটা ভিজিয়ে ফেলেছেন। আপনার পায়ে ক্ষত টা কতোটা গভীর সেটা আপনি জানেন তো। আপনার পায়ে গুলি লেগেছিল।যদিও সেটা ছুঁয়ে বেরিয়ে গেছে। তাহলে এই ভুল টা কি করে করতে পারলেন। আপনি তো আবেগী নন আপনি তো বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারেন। তাহলে হুট করে এত ভেঙে পড়েছেন কেন? আমি তো আছি আপনার সাথে।

আজরিন এ কথার কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ও ফুয়াদের হাত সরিয়ে দিল। ওর দৃষ্টি দেয়ালের দিকে। ফুয়াদ কোন কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল গাড়ি থেকে আজরিনের ওষুধপত্র আনতে হবে। নিচে নামতেই সকলকে দেখতে পেল সবাই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে। ও সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়ি থেকে সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এলো।তখন ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,,

ফুয়াদ তোমার সাথে কথা আছে।

আজকের বিষয় টা নিয়ে কাল কথা হবে। আশাকরি সকলে বুঝতে পেরেছেন।

তোমার বোনের আংটি বদলের অনুষ্ঠান ছিল। যদিও অনুষ্ঠান তোমরা আসার আগেই শেষ হয়ে গেছে তবুও তোমার বোনের প্রতি তোমার কি কোন দায়িত্ব নেই।

বললাম তো এ সম্পর্কে কাল কথা হবে। আমি জানি আপনাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে সেগুলোর উত্তর আমি কাল দিব।

তখন আয়েশা চৌধুরী বললেন,,,

ফুয়াদ তুই রুমে যা। মেয়েটা একা আছে।

ফুয়াদ কিছু বলল না। তখন ফুয়াদ এর বোন ফায়জা বলল,,

ভাইয়া আমি একটু ভাবির সাথে কথা বলবো আমি আসি তোমাদের রুমে।

না এখন ও অসুস্থ কাল ওর সাথে দেখা করিস।

আচ্ছা।

ফুয়াদ রুমে চলে গেল। তখন ফুয়াদের ফুফাতো বোন মলি বলল,,

মামা ফুয়াদ একটা আনকারচাল্ড গাইয়া মেয়েকে বিয়ে করে আনলো আর তুমি কিছুই বললে না।

তখন ইশতিয়াক চৌধুরী বললেন,,

ফুয়াদ বললো তো কাল এ বিষয়ে কথা বলবে।

বলেই বড়রা সকলে ওখান থেকে চলে গেল। তারপর মলি আবারো বলল,

আমি নিশ্চিত মেয়েটা ওকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে। গ্ৰামের মেয়েদের ভালো করে চেনা আছে ওরা বড়লোকদের ছেলেদের দেখলেই ফাঁসিয়ে বিয়ে করে নেয়।

তখন ফায়জা বলল,,

বাহ তোমার তো দেখি ভালো অভিজ্ঞতা আছে গ্ৰামের মেয়েদের নিয়ে। না জেনে শুনে একজন মানুষের নামে যা ইচ্ছে তাই বলছো। তুমি তো আর ভাবির সম্পর্কে কিছু জানো না তাইনা তাহলে কথা বলছো কেন?

বাহ তোর দেখি ঐ উরে এসে জুড়ে বসা মেয়েটার ওপর খুব টান তৈরি হয়েছে তার হয়ে ওকালতি করছিস আর ভাবিও বলছিস।

এখানে টানের কি দেখলে মলি আপু। যা ফ্যাক্ট তাই -ই তো বললাম। না জেনে কারো সম্পর্কে কথা বলা আমাদের উচিত নয়।

এই যা তো আমাকে একদম জ্ঞান দিতে আসবি না।

ফায়জা ওখান থেকে চলে গেল। তখন মলিও নিজের বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল।

________________

ফুয়াদ রুমে ঢুকেই দেখতে পেল আজরিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। ফুয়াদ এসে বলল,,

মিস ইরজা উঠুন ওষুধ খেয়ে নিন। আর পায়ের ব্যান্ডেজটা করতে হবে তো!

আজরিন চোখ খুলে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো। এটা দেখে ফুয়াদ বুঝতে পারলো আজরিন কিছু করতে চাইছে না। তাই ফুয়াদ বলল,,

অন্যকে ভালো রাখতে গেলে আগে নিজেকে ভালো থাকতে হবে। যা হয়েছে তাতে আমাদের কারো হাত ছিলো না। তাহলে আপনি নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছেন। আপনি কি আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছেন এভাবে আমাদের বিয়েটা হওয়ার জন্য।

আজরিন চোখ খুললো আর ফুয়াদকে দেখালো কাগজ আর কলম দিতে ফুয়াদ কাগজ আর কলম এনে দিল। আজরিন কলম দিয়ে লিখতে লাগলো।

কিছু মানুষকে আমরা জীবন থেকে হারাতে চাইনা, তবুও তারা হারিয়ে যায়‌। আবার হুট করেই আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কিছু সম্পর্কে জড়িয়ে যাই।কিছু সম্পর্ক হয় ক্ষনিকের বাতাসের মতো এসে দিয়ে পাখির পালকের মতো ফেলে যায় অনুভূতি গুলো !কিছু মানুষকে কয়েক মুহুর্তে খুব আপন মনে হয়! আশাকরি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন। হুম যা হলো তাতে আমাদের হাত নেই তবে কি বলুন তো আমরা চাইলেও সবকিছু আমাদের হাতে থাকে না বা মেনে নিতে পারিনা। তাই জন্যই তো প্রিয়জনরা কখনো কখনো অপ্রত্যাশিত ভাবে জীবন থেকে হাড়িয়ে যায়।তবে আপনি পাশে আছেন তো এই কঠিন সময়টা নাহয় দুজনে একসাথে কাটিয়ে নিলাম। আপনার হাত যখন ধরেছিলাম তখন আপনি কি বলেছিলেন আমায় আমার কিন্তু মনে আছে কিন্তু আপনি হুট করে অপরিচিত দের মতো ব্যবহার করছেন সেটা আমার মানতে একটু অস্বস্তি হচ্ছে। আপনার সাথে দু মাসের পরিচয় নয় সেটা কিন্তু আপনি জানেন তবুও আপনি এমন ভাবে সবকিছু উপস্থাপন করছেন যেন কাল আমাদের পরিচয় হলো। এখন বেশি কথা না বলে আমার ওষুধ গুলো দিন আর পায়ের ব্যান্ডেজটাও করুন আপনি সবসময় একটু বেশি ভাবেন মিস্টার আইজান।নেহাৎ আমার কথা বলা বারন নাহলে বলতাম বুঝতে পারলেন। আসলে আমার ভালো লাগছে না মনে হচ্ছে জ্বর আসছে তাই কিছু বলিনি আপনাকে।

আজরিন সবটুকু লিখে ফুয়াদের হাতে ধরিয়ে দিল। ফুয়াদ সবটুকু পড়ে মুচকি হাসলো। না সে এই রমনীকে ঠিক চিনেছিল তবে শেষের টুকু পড়ে সে ব্যস্ত হয়ে আজরিনের কপালে হাত রাখলো সত্যি জ্বর এসেছে কিন্তু একটু রাগ ও হলো এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কেন গোসল করল। তারপর ওষুধ খাওয়ালো পায়ের ব্যান্ডেজ ও করে দিল। ব্যান্ডেজ করার সময় আজরিন একটু আওয়াজ করেছিল বাকিটা নিরবে সহ্য করে নিয়েছে। সবকিছু হয়ে গেলে ফুয়াদ বলল,,

ইউ নো মিস ইরজা আপনি আপনার নামের মতোই স্ট্রং। ইরজা অর্থ শক্তিশালী আর আপনিও অনেক শক্তিশালী।

এ কথা শুনে আজরিন একটু হাসলো। আর আবার লিখলো,,

আপনি বললেন না নিজে ভালো না থাকলে অন্যকে ভালো রাখতে পারবো না। তেমন নিজেকে না ভালোবাসতে পারলে অন্য কাউকে ভালোবাসা যায় না নিজেকে ভালোবাসতে হবে,নিজেকে ভালো রাখতে হবে
যতই যাই হয়ে যাক, নিজেকে ভালো রাখতেই হবে!কারন আমার খুশি আমার ওপর নির্ভর করে। জীবনে যাই হয়ে থাকে না কেন আমি যদি নিজেকে খুশি বা সুখী ভাবি তাহলে দুনিয়ার কারো সামর্থ্য নেই আমাকে অসুখী বা অখুশি করার। বাস্তবতা সহজে নিতে পারলে নিজেকে আরো শক্তিশালী করতে পারবো। আমার বাবা ভাইয়েরা আমাকে বাস্তবতা মেনে নিতে শিখেয়েছে।

লিখতে লিখতে আজরিনের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরল। আজরিন হাত দিয়ে তার মুছে ফেলল। তারপর লেখাটা ফুয়াদের দিকে এগিয়ে দিল।আর চোখ বুজে শুয়ে রইলো। ফুয়াদ লেখাটা পড়ে আজরিনের দিকে তাকালো তারও খারাপ লাগছে আজরিন যেমন ওর প্রিয়জন কে হাড়িয়েছে তেমন সেও তো তার ফ্রেবারিট একজন কে হাড়িয়ে ফেলেছে। না ও ওর শুভ্রপরীকে আর কষ্ট পেতে দেবে না। ও গিয়ে আজরিনের মাথাটা কোলে নিল কারন সে জানে এখন আজরিনের মাথাটা একটু আলতো করে টিপতে হবে নাহলে সে ঘুম আসবে না। এটা সে জানে এটা শুধু জ্বরের সময় করতে হয়। আজরিন কিছু বললো না চোখ বন্ধ করে করে নিল। ফুয়াদ কিছুক্ষণ পর দেখলো আজরিন ঘুমিয়ে পড়েছে তা দেখে সে আজরিনের কপালে একটা চুমু দিল আর বলল,,

তুমি আমার শুভ্রপরী তোমাকে যেদিন প্রথমবার দেখেছিলাম তখন তুমি শুভ্র রঙ পড়েছিলে আমিও থমকে গিয়েছিলাম সেই শুভ্ররঙে তোমার শুভ্রতায়‌। সেদিন তোমাকে পরীর মতো লাগছিল তাই তো তোমাকে শুভ্রপরী বলে ডাকি।যদিও সেটা তোমার অগোচরে তবুও মনে হয় তুমি সব জানো। তোমায় আর কোন কষ্ট পেতে দেব না। যা হওয়ার হয়ে গেছে তোমার সাথে বা তোমার পরিবারের সাথে করা সকল অন্যায়ের শাস্তি দিব তাদের। অনেক ভয়ানক শাস্তি।

আর তোমাকে এক নতুন সুখের রাজ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব শুভ্রপরী! যেখানে শুধু তোমার রাজত্ব থাকবে।

ফূয়াদ মুচকি হাসলো। ও নিজেও ক্লান্ত তাই একহাত দিয়ে আজরিনকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো। যদিও আজরিনের গায়ে জ্বর আছে তবে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে।হয়তো ওষুধের জন্য রাতে হয়তো বারতে পারে।

এদিকে ওরা দুজন ঘুমালেও চৌধুরী বাড়ির সকলের যেন ঘুম চলে গেছে। কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না ফুয়াদ আইজান চৌধুরীর মতো একজন ইনট্রোভার্ট রাগী ছেলে এরকম হুট করে একটা গ্ৰামের মেয়েকে বিয়ে করতে পারে। সব প্রশ্নের উত্তর তো একমাত্র ফুয়াদ -ই দিতে পারবে তাই সকলে সকালের অপেক্ষা করতে লাগলো।

অতঃপর,,,

~চলবে ,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে