#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৯
“আরে গান না।চৈতির জন্য হলেও গান।ও তো কোনদিন আপনাকে গাইতে দেখেনি!”
চৈতির কথা শুনে শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।চৈতির দিকে মিষ্টি করে হেসে সামনে গিয়ে গিটার নিয়ে দাঁড়ালো।শুভ্রের হাসির কারন খুঁজে পেল না চৈতি। অতঃপর চৈতিকে উদ্দেশ্য করে ইশারায় বলল,
“আমার গাওয়া গানটা আপনার জন্য মিস চৈতি।
কি যেন ভেবে শুভ্র একটা ছেলের কাছে গিটারটা দিয়ে কানে কানে গানের নাম বলে ওকে বাজাতে বলল।শুভ্র যে গিটার বাজাতে পারে না ব্যাপারটা এমন নয়।কিন্তু ওর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে।সেটা চৈতির জন্যই। অতঃপর গিটারটা দিয়ে নিজের জায়গায় বসে পরল।
আমি সেই সুতো হবো
যে তোমায় আলোকিত করে
নিজে জ্বলে যাবো
আমি সেই নৌকো হবো
যে তোমায় পার করে
নিজেই ডুবে যাবো
হবো সেই চোখ
যে তোমায় দেখেই বুঁজে যাবো
হবো সেই সুর
যে তোমায় মাতিয়ে করুণ হবো
হব সেই চাঁদ
যে হয়ে গেলে রাত
তোমাকে আলো দেবে
দিন ফিরে এলে
আবার ফুরিয়ে যাবো
শুধু ভালবেসো আমায়।
পুরোটা গান শুভ্র মুখে গেয়েছে সাথে চৈতি যাতে লিরিক্স বুঝে গানের অর্থ বুঝে সেজন্য পুরো গানটা হাত দিয়ে ইশারা করেও গেয়েছে।চৈতি অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষন।কই কেও তো ওর জন্য এভাবে গান গায়নি!তাহলে শুভ্রই কেন?
” শুভ্র ভাই আপনার মাথায় যে এত বুদ্ধি তা তো আগে জানতাম না!চৈতি যাতে আপনার গানের অর্থ বুঝে সেজন্যই ওকে ডেডিকেট করে গাইলেন তাই না?”
আরশির কথা শুনে শুভ্র চৈতির দিকে তাকিয়ে ওর অবাক,বিস্মিত হওয়া চেহারা দেখতে পেল।এই চেহারা দেখে মাথা নিচু করে হেসে আরশিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমার মাথায় তোর মতো গোবর নাই যে এই সামান্য ব্যাপারটা মাথায় আসবে না।”
শুভ্রের কথা শুনে আরশি মুখ ফুলিয়ে বলল,
“আপনার প্রশংসাও করা যায় না।শুধু পিঞ্চ মেরে কথা বলেন।”
“প্রশংসা করতে যাস কেন?আমি বলছি তোরে?”
খাওয়া দাওয়া শেষে শুভ্র আর চৈতি রওনা দিল বাসার উদ্দেশ্যে।
“আজকে গাড়ি নাই আমার কাছে।আর এত রাতে কিছু পাবো বলেও মনে হয় না।হেঁটে যেতে পারবেন তো?”
চৈতি হেসে বলল,
“আমার হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস আছে।আর আরশির বাসাটা তো এতো দুরেও না যে হেঁটে যেতে পারব না।”
“কিন্তু আপনি তো হিল জুতা পড়ে আছেন।যেতে পারবেন তো?”
“হুম।”
“তাহলে তো ভালোই।”
কিছুক্ষন পর,
চৈতি পাশের একটা বেঞ্চে বসে পরল।চৈতিকে বসে পরতে দেখে শুভ্র অবাক হয়ে বলল,
“কি হলো?বসে পরলেন যে?”
চৈতি এখন শুভ্রকে কি করে বলবে যে তার পায়ের অবস্তা বেহাল হিল জুতা পরে?খুব তো বলেছিল হিল জুতা পরে হাঁটতে পারবে এখন কি হবে?কেন যে বলতে গেল?হিল জুতা পরার অভ্যাস ওর একদম নেই।তাও আবার নতুন জুতা।পায়ের পিছনের দিকটা জ্বলছে খুব।কিন্তু এখন কি বাহানা দিবে?
“বেঞ্চটা অনেক সুন্দর তো তাই বসতে ইচ্ছা হলো।৫ মিনিট বসেই আবার হাঁটা শুরু করব।আপনিও বসুন না।অনেক তো হাঁটলেন।”
শুভ্রও কিছু না বলে চৈতির পাশে বসে পরল।১ মিনিট পার হতেই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
“দাঁড়িয়ে গেলেন যে?কোন সমস্যা?”
“আসলে আমার একটু কাজ আছে।আমি এক্ষুনি আসছি।”
বলেই চলে গেল।চৈতি আরামে বসল।ভালোই হয়েছে।উনার কাজ শেষ হতে নিশ্চয়ই সময় লাগবে।ততক্ষনে আমার পায়ের ব্যাথা একটু কমে যাবে।ভেবেই ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে ফেসবুক স্ক্রলিং করতে লাগল।
কিছুক্ষনের মধ্যেই শুভ্র ফিরে আসল।শুভ্র যে এসেছে তা চৈতি এখনও দেখেনি।ও মোবাইলে মুখ ডুবিয়ে বসে আছে।চৈতিকে মোবাইল চালাতে দেখে শুভ্র কিছু না বলে চৈতির পায়ের কাছে নরমাল স্যান্ডেল জোড়া রেখে দিল।চৈতি এতক্ষনে হুশ আসল।ততক্ষনে শুভ্র ওর পাশেই বসে পরেছে।শুভের দিকে তাকাতেই শুভ্র পকেট থেকে দুটো ওয়ানটাইম বেন্ডেজ বের করে চৈতির হাতে রেখে বলল,
“পায়ের যেখানে জ্বলছে সেখানে বেন্ডেজ লাগিয়ে জুতাগুলা পরে ফেলুন।আর পায়ে বর্তমানে যে জুতা জোড়া আছে তা এই বেগের মধ্যে রেখে দিন।”
চৈতি অবাক হয়ে বলল,
“আপনি জানলেন কি করে আমার পায়ে যে ব্যাথা?আর এখন জুতা কিনতে গেলেনই বা কেন?আমি একটু পরে এমনই হাঁটতে পারতাম।”
“হ্যা এমনিই হাঁটেন আর পরে পায়ে ইনফেকশন বানান!তখন মেবি বেশি ভালো হতো।ঘরে বসে থাকতেন।কলেজে যাওয়া লাগতো না।”
“আমি সেটা বলেননি।”
“হয়েছে।হিল জুতা খুলে স্যান্ডেলগুলা পরেন।আরাম লাগবে।”
চৈতি মাথা নেড়ে পায়ে ব্যান্ডেজ দিয়ে স্যান্ডেলগুলা পরল।সত্যিই আরাম লাগছে এখন।এতক্ষন কি যে লাগছিল।যদিও ব্যাথাটা পুরোপুরি যায়নি।হালকা রয়ে গেছে।
“হাঁটতে পারবেন?”
“হুম।”
“সিউর?আবার জুতার মতো যেন না হয়?”
“সত্যিই হাঁটতে পারব।”
“তাহলে চলুন।এমনেতেই রাত হয়ে গেছে অনেক।আল্লাহই জানে দাড়োয়ার গেট বন্ধ করে দিছে নাকি?তাহলে সারারাত বাহিরে থাকা লাগবে।”
“আমি তো ভুলেই গেছিলাম গেটের কথা।চলুন চলুন।”
হাঁটতে হাঁটতে চৈতি শুভ্রকে জিজ্ঞেস করল,
“আমার মার সাথে আপনার দেখা হয়েছে?”
“হ্যা।অনেক ভালো মানুষ। মিশুকও বটে।আমাকে নিজের ছেলের মতো ভেবে নিয়েছিলেন।ইফতারিও এনেছিলেন।”
“উনি কি আপনাকে আমার সম্পর্কে কিছু বলেছেন বা ইংগিত দিয়েছেন?”
“মানে?”
“মানে উনি কি বলেছেন আমার মেয়েটাকে তোমার কেমন লাগে?অনেক লক্ষী মেয়ে ও। ওর মতো মেয়ে পুরো দুনিয়াতে পাওয়া দুস্কর।একটু কথা বলো আমার মেয়ের সাথে।এরকম কিছু?”
“হ্যা বলেছিলেন তো।আপনি জানলেন কি করে?”
চৈতি কিছু না বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমার মার কথায় কিছু মনে করবেন না।উনি এরকমই।আমার বিয়ে হচ্ছে না দেখে একটু চিন্তায় আছেন।তাই আবোল তাবোল কি কাজ করেন তিনি নিজেও জানেন না।”
“আরে না না।আমি কিছু মনে করিনি।বরং আমার তো উনাকে অনেক পছন্দ হয়েছে।কি সুন্দর বাবা ডাকেন আমায়।আর উনার হাতের বানানো ইফতারি গুলা অনেক মজার ছিল। পুরোটা খেয়েছি আমি।”
চৈতি একটু কেশে বলল,
“ওটা আমার হাতের বানানো ইফতার ছিল।আম্মু বানায়নি।”
“অই একই হলো।সবসময় বাইরের ইফতারি খেয়ে খাবারের উপর থেকে মনই উঠে গিয়েছিল।অনেকদিন পর বাসায় বানানো ইফতারি খেয়েছি।”
“কেন আপনার বাবা মা কোথায়?”
“আম্মু আরশিদের সাথে থাকে।”
“কেন?আপনি থাকেন না কেন ওদের সাথে।”
“অইযে বাসা এসে পরেছে।থ্যাংকস গড গেটে তালা দেয়নি এখনো।”
চৈতির মনে হলো শুভ্র যেন কথাটা এড়িয়ে যেতে চাইছে।তাই আর মাথা ঘামালো না।কাওকে তো সে জোর করতে পারে না।অধিকারও তো নেই তার। তাই মাথা না ঘামিয়ে নিজের বাসায় চলে গেল।শুভ্রও চৈতির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকাতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
“সরি চৈতি আপনাকে আমি সবকিছু শেয়ার করতে পারলেও এই কথাটা শেয়ার করতে পারব না।”
ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লিফট থেকে নেমে নিজের বাসায় চলে গেল।
চৈতি বাসায় যেতেই ওর মা কাছে ডেকে এনে বললেন,
“চৈতি,কালকে তোর একটা রেস্টুরেন্টে একজন ছেলের সাথে দেখা করা লাগবে।”
“কেন?”
“ছেলের নাকি তোকে দেখে অনেক পছন্দ হয়েছে।আমাকে ফোন করে জানালো।তাই তোর সাথে দেখা করতে চাইছে।”
চৈতি রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মা বলে উঠল,
“অই ছেলে তোর সমস্যার কথা জানে।সব জেনে শুনেই দেখা করতে চেয়েছে।দেখ আমিও চাই না অই ছেলের সাথে তোর বিয়ে হোক।শুভ্র ছেলেটাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে।ছেলেটা মাশাল্লাহ সবদিক থেকে পার্ফেক্ট।কিন্তু অই ছেলে আমার বান্ধবীর ছেলে।আমার বান্ধবীকে তো সরাসরি না করতে পারি না তাই না?তুই জাস্ট দেখা করব আয়।পরে এসে বলে দিস তোর ছেলেকে পছন্দ হয়নি।”
“কিন্তু…..”
“প্লিজ!আমার মান সম্মানটার কথা ভাব?”
“আচ্ছা।”
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“শুভ্রের কাছে।উনাকে যেয়ে বলতে হবে তো।নয়তো উনি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেন।”
“আচ্ছা যা।তাড়াতাড়ি আসিস।মানুষ আবার দেখলে খারাপ ভাববে।”
“তাও তো ঠিক।আচ্ছা কালকে বলব নাহয়।কলেজে যাবার সময়।”
“তাই করিস।এখন গিয়ে রেস্ট নে।”
“হুম।”
চলবে…..