#তুমি_এলে_তাই
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৮
“অহ আচ্ছা।আপনি জানলেন কি করে আরশি যে আমার বান্ধবী? ”
“আগে জানতাম না।আপনি তো বলেছিলেনই আপনার বান্ধবীর জম্মদিন।হঠাত আপনাকে দেখে বুঝলাম আরশিই আপনার বান্ধবী যার কথা আপনি বলছিলেন।আন্দাজ করেই বলেছি।”
“বাহ,আপনার ধারনাশক্তি ভালো তো।”
“সবাই বলে।”
ওদের কথা শেষ হতেই আরশির আগমন ঘটল।আরশিকে দেখেই চৈতি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।
“সকালের ঘটনার দুঃখিত।আমার অইসময় অই কথাগুলা বলা উচিত হয়নি।আমি যদি জানতাম তুই কষ্ট পাবি তাহলে কোনদিন কথাগুলা বলতাম না।”
আরশি চৈতির কাছে এসে কাধে হাত রেখে বলল,
“ইট’স ওকে।তুই যখন এসেই পরেছিস তাহলে আগের কথাগুলা সব ভুলে যা।আমারও বুঝা উচিত ছিল তোর জন্য এখানে আসাটা কঠিন।অবুঝের মতো আবদার করেছিলাম।সেই অবুঝের আবদার পুরন করার ধন্যবাদ।বাই দা ওয়ে,শুভ্র ভাই আর তুই কথা বলছিলি।চিনিস তোরা একে অপরকে?”
“হুম,একই এপারমেন্টে থাকি আমরা।”
আরশি ভ্রু কুচকে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
“শুভ্র ভাই, আপনি তো সাইন ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে পারতেন না।কবে থেকে শিখলেন?”
শুভ্র মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“ইয়ে মানে…কয়দিনই হলো।সহজই তো!আমার আগে থেকেই ইন্টারেস্ট ছিল শিখার।”
“কই আগে তো জানতাম না যে আপনি ইন্টারেস্ট ছিলেন এই ভাষা শিখায়?জানলে তো আমিই শিখাই দিতাম।”
শুভ্র চোখ পাকিয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেন?মানুষের কি ইন্টারেস্ট পরে জম্মাতে পারেনা?”
“পারে।বাট হুট করেই…..”
শুভ্রের চাহনি দেখে আরশি শুকনো ঢুক গিলে বলল,
“আমাকে আম্মু মনে হয় ডাকছে।আমি গেলাম।তোরা কথা বল।আর চৈতি শুন তুই একটু ওয়েট কর।আমাদের পার্টিটা ছাদে হচ্ছে।সব কাজিনরা মিলে সাজাচ্ছে।একটু দেরি হবে।আর হ্যা রাতের খাবার খেয়ে যাবি শুধু কেক খেলেই হবে না।”
“কিন্তু বেশি রাত হলে…. ”
“শুভ্র ভাই দিয়ে আসবে।উনিও আজকে থাকবে না এখানে।জাস্ট আমার জম্মদিনের জন্যই এসেছেন।তোরা একসাথে যাস খেয়ে দেয়ে।”
বলেই আরশি চলে গেল।
“আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?”
শুভ্রের বলা কথায় মাথা নাড়ালো চৈতি।
“আপনার জম্মদিন কবে?জাস্ট ইচ্ছা হলো আরকি।”
“জম্মদিন?”
“হুম।”
“জানিনা তো!”
শুভ্র অবাক হয়ে বলল,
“জানেন না মানে?আপনি আপনার জম্মদিন জানেন না কবে?আগের বার কত তারিখে পালন করছিলেন জম্মদিন?”
“পালন করিনি তো!”
“এর আগের বার?”
“আগেরবারও না।”
শুভ্র হেসে বলল,
“মজা করছেন আমার সাথে?আপনার মনে হয় বলার ইচ্ছা নাই।আচ্ছা বলা লাগবে না।”
“আমি মিথ্যা কথা বলছিনা।সত্যিই জানিনা আমার জম্মদিন কবে?তবে বার্থ সার্টিফিকেটে লিখা আছে আমি এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ জম্মেছি। তবে শুনেছি ওটা নাকি কমিয়ে দেওয়া।আমার আসল বার্থ ডেট আমি জানি না।”
শুভ্র অবাক হয়ে বলল,
“আপনি কোনদিন আপনার জম্মদিন পালন করেননি?”
“নাহ৷ ”
“কেন?না মানে সবাই তো জম্মদিন পালন করে।আপনার পরিবার কি ধার্মিক? যেহেতু জম্মদিন পালনে নিষেধ আছে। এজন্য কি তারা জম্মদিন পালন করেন না?”
“নাহ।আমার জম্মটাকে আমার মা শুভ মনে করেন না।একে তো আমি জম্মালাম বোবা,কালা হয়ে আবার আমার জম্মের সময়ই বাবা অফিস থেকে আসার পথে রোড এক্সিডেন্টে মারা যান।সব মিলিয়ে আমার জম্মটাকে আমার মা অশুভই ভাবেন।তাই জম্মদিন পালন করেন নি। জানেন ছোটবেলায় যখন দেখতাম সবার মা বাবা ওদের সন্তানদের জম্মদিন পালন করছে তখন আমিও অপেক্ষা করতাম কবে আমিও সবার মতো জম্মদিন পালন করব।কিন্তু অই অপেক্ষাটা অপেক্ষাই রয়ে গেল বাস্তব হলো না।আমি একদিন আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম সবার জম্মদিন পালন হয় আমারটা কেন হয় না?আম্মু আমার গালে দুইটা চড় দিয়ে বলেছিলেন সবাই তোর মতোন না।সবাই জন্মগ্রহণ করেছে ভাগ্য নিয়ে আর তুই কোনকিছুই নিয়েই জন্মগ্রহণ করিস নি। তোর মুখে আর দ্বিতীয়বার যেন না শুনি জম্মদিনের কথা।সেদিন থেকে আর কোনদিন সাহস করিনি জম্মদিন নিয়ে কথা বলার।এখন বড় হয়ে বুঝতে পারছি আম্মু কেন কোনদিন জম্মদিন পালন করেননি।আসলে আমি জম্মদিন পালনের যোগ্যই না।”
বলেই চুপ করে রইল।শুভ্র এক দৃষ্টিতে চৈতির দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা যে এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে,ওর মধ্যে যে এত কষ্ট,অপমান রয়েছে তা সে কাওকে বুঝতেই দেয়নি?কই এতদিন ধরে মিশছে ও চৈতির সাথে একবারও তো আন্দাজ করতে পারে নি।
“সরি।অনেক বেশি কথা বলে ফেলেছি মনে হয়। বিরক্ত হলে দুঃখিত।”
“ইট’স ওকে।”
এর মধ্যেই আরশি এসে শুভ্র আর চৈতিকে ছাদে যেতে বলল।সব কাজ শেষ।শুভ্র চৈতিকে নিয়ে ছাদে চলে গেল।চৈতি আশেপাশে তাকাতেই মন খারাপ ভালো হয়ে গেল।চারদিকে লাইট জ্বলমল করছে।রাতের অন্ধকারের মাঝে পুরো ছাদটা যেন আলোতে আলোকিত হয়ে আছে।তার পাশাপাশি বেলুন তো আছেই। ছাদেএ মাঝখানেই টেবিল রাখা।আর তার উপর ইয়া বড় একটা কেক রাখা।যথারীতি আরশি কেক কেটে প্রথমে চৈতিকে কেক খাওয়ালো।আরশির বাবা মা এসব অনুষ্ঠান পছন্দ করেন না তাই তারা আসেন নি।তবে তাদের জন্য কেক আলাদা করে রাখা হয়েছে।কেক কাটা শেষে চৈতি বেসিনে গেল হাত মুখ ধুতে।সারা মুখে কেকের ক্রিম লাগানো। আরশিই লাগিয়েছে।হাত মুখ ধুতে ধুতে ধুতেই একটা কম বয়সী ছেলে আসল।দেখে মনে হয় 7 বা 8 এ পড়ে।
“তুমি নাকি কানে শুনতে পাও না?আচ্ছা একটা পরীক্ষা নিয়ে দেখা যাক।যেহেতু তুমি কানে শুনতে পাওনা সেহেতু তোমার কানের কাছে চিৎকার করলেও তোমার অসুবিধে হবে না তাই না?কারন তুমি তো শুনতেই পাও না।”
চৈতি কিছু বুঝে উঠবার আগেই ছেলেটা তার বন্ধুদের নিয়ে চৈতির কানের কাছে জোরে জোরে চিৎকার করা শুরু করল।
“কি হচ্ছে এখানে?”
শুভ্রের ধমকানি শুনে ছেলেটার সব বন্ধু ভয় পেয়ে দৌড়ে চলে গেল।
“কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
ছেলেটা আমতা আমতা করতে করতে বলল,
“মজা করছিলাম।”
“মজা?এটা তোদের কাছে মজা মনে হচ্ছে?একটা মানুষকে কষ্ট দিয়ে তোরা মজা নিচ্ছিস?স্কুলে এসব শিখানো হয় তোদের?”
“জীবনে বোবা কালা মানুষ দেখিনি তো তাই সামলাতে পারলাম না।দেখতে চাইছিলাম উনি সত্যিই শুনতে পারেন কিনা।”
শুভ্র চিৎকার দিয়ে বলল,
“আরাফ!”
শুভ্রের চিৎকার শুনে আরাফ ভয়ে কেঁপে উঠল।
“ইচ্ছা করছে তোর গালে দুটা চড় মারি।একটা মানুষকে নিয়ে এসব কথা বলতে তোর বিবেকে বাধল না?মানুষটা কি ইচ্ছা করে এমন হয়েছে?আজকে উনার বদলে যদি তুই এমন হতি? তোর কানের পাশে যদি কেও চিৎকার করতো তাহলে কি করতি?শুকরিয়া কর তোর এই অবস্তা হয়নি দেখে।আর কোনদিন এমন করবি না।যদি দেখি তাহলে সত্যি সত্যি তোরে দুটা চড় মারতে আমার হাত কাঁপবে না।আপুকে সরি বলে যা।”
“কিন্তু ও তো শুনতে পাবে না। বলে কি হবে?”
“সেটা তোর জানার বিষয় না।তোকে সরি বলতে বলেছি বলবি।”
“সরি আপু।”
চৈতি কিছু না বলে মলিন হাসল শুধু।
চৈতিকে হাসতে দেখে আরাফ অবাক হয়ে গেল।তাহলে কি মেয়েটা শুনতে পেয়েছে ওর সরি বলাটা।ছোট্ত মাথায় কিছু বুঝল না সে।মাথা নিচু করে চলে গেল।শুভ্র একটা জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলালো।অতঃপর চৈতির দিকে চেয়ে ইশারায় বলল,
” ঠিক আছেন আপনি?”
চৈতি মাথা নাড়লো।
“কিছু মনে করবেন না।ছোট মানুষ বুঝতে পারে নি।তাই এমন একটা কাজ করে ফেলেছে।”
“আমি কিছু মনে করি নি।”
“ধন্যবাদ। শুনে ভালো লাগল।”
কিন্তু শুভ্র চৈতির চোখের কোণায় পানি দেখে বুঝল মেয়েটা কি পরিমান কষ্ট পেয়েছে।আচ্ছা সবাই এমন কেন?কেও উনাকে কেন বুঝতে চায় না?নিজের জম্মদাতা মাও না?আচ্ছা সবাই ওকে কষ্ট দিয়ে কি মজা পায়?এমন একটা মেয়েকে কষ্ট কি করে দিতে পারে?ও তো কোনদিন দিতে পারবে না।বুক কাঁপবে ওর।এসব ভেবে একটা শ্বাস ফেলে শুভ্র বলল,
“চলুন ওখানে গান হচ্ছে।”
“গিয়ে কি হবে?আমি তো গান শুনতে পারবনা।”
চৈতির কথায় বুকের মাঝে ধক করে উঠল।মেয়েটা এত কঠিন কথা কি করে বলতে পারে?
“গান শোনা লাগবে না।গিয়ে জাস্ট বসে থাকবেন তাহলেই হবে।চলুন।”
চৈতি কিছু না বলে শুভ্রের পিছুপিছু হাঁটতে লাগল।গিয়ে দেখল সবাই মাদুর পেতে বসেছে।সামনেই গিটার রাখা। একটা ছেলে গান গাচ্ছে।চৈতিকে দেখেই আরশি হাত নাড়িয়ে বলল ওর পাশে বসতে।চৈতি গিয়ে আরশির পাশে বসল।
“শুভ্র ভাই,আপনিও তো গান গাইতে পারেন। গান না একটা?”
“না না।অনেক দিন গান গাইনা ভুলে গেছি সব।”
“আরে গান না।চৈতির জন্য হলেও গান।”
চৈতির কথা শুনে শুভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।চৈতির দিকে মিষ্টি করে হেসে সামনে গিয়ে গিটার নিয়ে দাঁড়ালো।শুভ্রের হাসির কারন খুজে পেল না চৈতি। অতঃপর চৈতিকে উদ্দেশ্য করে ইশারায় বলল,
“আমার গাওয়া গানটা আপনার জন্য মিস চৈতি।গানটাকে অনুভব করুন।”
সবাইকে অবাক করে দিয়ে…..
চলবে…..