#গল্পের_নাম_তুমি_আসবে_বলে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৬
তাসিফ ভাই আমার পাশে দাড়িয়ে বললেন,
~ফাহাদের খালাতো বোন তুমি।তোমার নাম ফিহা
right.
আমি মুচকি হেসে বললাম,
~জ্বী ভাইয়া
তাসিফ ভাই বললেন,
~তাসিফ বললে বেশি খুশি হতাম।
আমি বললাম,
~আপনি তো বয়সে আমার বড় তো
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সে বললেন,
~ধরো আমি তোমার বন্ধু আর বন্ধু কে তো নাম ধরে ডাকাই যায়।
আমি হেসে বললাম,
~ঠিক আছে আপনাকে তাসিফ বলেই ডাকবো।
তাসিফ হেসে বললেন,
~তোমাকে সুন্দর লাগছে শাড়িতে।
আমি বললাম,
~ধন্যবাদ।
তাসিফ বললেন,
~খালামণিকে তো দেখলাম না
আমি বললাম,
~মা মনে হয় ওইদিকটায় আসলে সে মেহমানদের সাথে কথা বলছে।
তাসিফ বললেন,
~প্রিয়ার বিয়ের পর আমাদের বাসায় তুমি আসবে।
আমি বললাম,
~চেষ্টা করবো আসার।
তাসিফ বললেন,
~তোমার সাথে আমার আজ প্রথম দেখা তুমি যেদিন আমার বাসায় গিয়েছিলে সেদিন আমি একটু বাহিরে গিয়েছিলাম তাই দেখা হয়নি।তুমি আবার রাগ করোনি তো?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে ফায়াজ ভাই এসে আমার পাশে দাড়িয়ে বললেন,
~রাগ করার কী কারণ আছে ওতো আপনার সাথে আজই পরিচিত হলো।
ফায়াজ ভাইয়ের কথা শুনে তাসিফ হেসে বললেন,
~এটা একদম ঠিক বলেছো ফায়াজ।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~আমি সবসময়ই ঠিক কথা বলি।
তাসিফ ভ্রুকুচকে বললেন,
~তুমি কী রেগে আছো? ফায়াজ।
ফায়াজ ভাই চোখ বন্ধ করে জোড়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে বললেন,
~অনেক গরমে মাথাটাও গরম হয়ে গেছে।
ফিহা আমার সাথে একটু আয় মা ডাকে
বলেই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন। আর তাসিফ আমাদের দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।
ফায়াজ ভাই আমাকে একটা কর্ণারে নিয়ে গেলেন যেখানে কোনো মানুষ নেই।সেখানে নিয়ে গিয়ে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন,
~ওই হুতুমপেঁচার সাথে কী কথা বলছিলি?
তাসিফের এই ভাবে অপমান শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম,
~কী বলছেন সে আমাদের আত্মীয় হয়।
ফায়াজ ভাই আমার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরে বললেন,
~একদম ওর জন্য দরদ দেখাতে হবে না তাসিফ তাসিফ বলে ডাকাও শুরু হয়ে গেছে।একদম ওর আশেপাশে যাতে না দেখি।
আমি অবাক হয়ে তার কথা শুনছি এবার আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম নিজের সব শক্তি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে ফায়াজ ভাইকে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
~আপনি ইদানীং অনেক করছেন নিজের সব লিমিট ক্রস করছেন আমার সাথে যদি একবারও এমন ব্যবহার করেছেন আমি সরাসরি খালামণিকে বলে দিবো।
এতটুকু বলে ফায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি সে হাত দুটো মুষ্টি বদ্ধ করে লাল চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি চোখ মুছে বললাম,
~আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি আর কোনো scene create করবেন না।
বলেই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম আশেপাশে মাকে খুজতে লাগলাম। আমি বাসায় চলে যাবো ভালো লাগছে না একটু আগে যেতেই দেখি মা দাড়িয়ে আছে
আমি মায়ের কাছে গিয়ে বললাম,
~মা আমি বাসায় চলে যাবো।
মা বললো,
~তুই পাগল হয়েছিস অনুষ্ঠান একটু পর শেষ হয়ে যাবে আমাদের সাথেই যাবি আর কোনো কথা না।
মায়ের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে আমি একপাশে চেয়ারে বসে পরলাম মলিন মুখে চারদিকে চোখ বুলাতে থাকলাম।
অন্যদিকে ফায়াজ সেন্টারের বাহিরে এসে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছে
~ভালোবাসি কিন্তু বলতে এতো ভয় কেন?আমার এই ভয়টা ওকে আমার থেকে দূর করে দিবে।আজ যখন ওকে অন্যকারো সাথে হেসে কথা বলতে দেখলাম আমার শরীরের সব রক্ত টগবগ করে উঠলো।মেয়েটা আমাকে বুঝে না আমার চোখ পরে কী সে বুঝেনা কতোটা ভালোবাসি তাকে।ভালোবাসায় এতো যন্ত্রণা কেন?
ফায়াজের চোখের কোণ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো।কাউকে ভালোবাসলে নিজের মনের কথা বলে দেওয়া উচিত সময় থাকতে সব সেই মানুষটিকে আগলে নেওয়া দরকার নাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে সেই মানুষটি হয়তো দূরে চলে যাবে অথবা আপনিই তার পাশে আর থাকলেন না।
ফায়াজের ফোন হঠাৎ বেজে উঠলো সে পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখলো তার মায়ের ফোন।ফায়াজ চোখের পানি মুছে সে ফোন রিসিভ করেই বললো,
~মা কী হয়েছে?
ফায়াজের মা তার কন্ঠ শুনে বললেন,
~কী হয়েছে?তোর গলা এমন লাগছেন কেন?
ফায়াজ বললো,
~কেমন লাগছে?সেসেব ছাড়ো কেন ফোন করেছো?
ফায়াজের মা বললেন,
~অনুষ্ঠান তো শেষ আমরা সবাই বাসায় চলে যাবো তুই চলে আসিস বাসায়।
ফায়াজ বললো,
~ঠিক আছে মা।
অনুষ্ঠান শেষে আমরা বাসায় এসে যে যার রুমে চলে আসলাম।ফায়াজ ভাইকে আমি কোথাও দেখিনি
আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকলাম রুমের ভিতর মা আর খালামণি ঘুমিয়ে পরেছে বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছে।আমার চোখে ঘুম নেই ফায়াজ ভাইয়ের সাথে রাগের মাথায় এভাবে কথা বলাটা ঠিক হয়নি। আমি বারান্দা থেকে বের হয়ে রুমের দরজা খুলে রান্নাঘরে যাবো পানি খেতে তখনই কারো সাথে আমার ধাক্কা লাগলো আমি সামনে তাকিয়ে দেখি ফায়াজ ভাই দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে আমি মাথা নিচু করে তাকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিবো তখনই সে আমাকে বললেন,
~এক গ্লাস পানি দে তো।
আমি বিনাশব্দে এক গ্লাস পানি এনে তাকে দিতেই সে গটগট করে সব পানি খেয়ে বললেন,
~রাত ৩.৪০ তুই জেগে আছিস কেন?
আমি বললাম,
~পানি খেতে এসেছি।
ফায়াজ ভাই বললেন,
~পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পর।
আর কিছু না বলে সে তার রুমে চলে গেলো।আমি পানি না খেয়ে রুমে এসে বিছানায় শুয়ে পরলাম কালকে বিয়ের অনুষ্ঠান অনেক কাজ।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি সকলে মহা ব্যস্ত আমিও কাজে টুকটাক হাত লাগাচ্ছি হঠাৎ রুপা আপু এসে বললেন,
~ফিহা মেহেদী লাগাবে বাটা মেহেদী।
আমি বললাম,
~আচ্ছা।
তারপর মেহেদী লাগিয়ে আমরা সব মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছি তখনই সুজন এসে সবার গালে হলুদ লাগিয়ে দিলো যেই না আমাকে লাগাতে যাবে তখনই আমি ভো দৌড় সুজন আমাকে বললো,
~ফিহা আপু আমার থেকে বাচবেনা তুমি তোমাকে তো হলুদ লাগিয়েই দিবো।
আমি বললাম,
~লাগিয়ে তো দেখা।
আমি দৌড়াচ্ছি তখনই আমার দুহাত কারো বুকে গিয়ে ঠেকে সে আমার কোমড় পেচিয়ে ধরে আমাকে নিচে পরা থেকে বাচিঁয়ে ফেলে।আমি চোখ পিট পিট করে খুলে দেখলাম ফায়াজ ভাই আমাকে ধরে রেখেছেন তার সাদা শার্টে আমার মেহেদী লেগে গেছে।আমাকে চোখ খুলতে দেখে সে আমাকে সোজা করে দ্বার করিয়ে দিলেন। ফায়াজ ভাইয়ের শার্ট মেহেদীতে মাখামাখি আমার পিছে সুজন এসে দাড়িয়ে ফায়াজ ভাইয়ের অবস্থা দেখে সে ভয়ে ভো দৌড়। আমি একবার ফায়াজ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম সে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি বললাম,
~ভাইয়া সরি।ইচ্ছে করে করিনি।
ফায়াজ ভাই কিছু না বলে একদম আমার কাছে চলে আসলেন তার গরম নিশ্বাস আমার মুখে এসে পরছে।ফায়াজ ভাই ঠান্ডা গলায় বললেন,
~এভাবে বাচ্চাদের মতো কেন দৌড়াদৌড়ি করছিস?ব্যাথা পেলে কী হতো?
আমার কানের পিছে চুলগুলো গুজে কথাটা বললেন।আমি বললাম,
~সুজনের জন্য
ফায়াজ ভাই বললেন,
~এরকম করিস না বিয়ে বাড়িতে ব্যাথা পেলে কেউ সেবা করতে বসে থাকবে না।
আমি বললাম,
~খেয়াল রাখবো।
বলেই আমার রুমে চলে আসলাম।
রাতে আমরা সবাই বিয়ের জন্য রেডি হয়ে গেলাম আমি ফায়াজ ভাইয়ের দেওয়া শাড়িটা পরিনি।ফাহাদ ভাইয়ের বরযাত্রা নিয়ে আমরা একটুপরই বের হবো আমরা।খালামণি তো বার বার তাড়া দিচ্ছে প্রিয়া ভাবির বাসা থেকেও অনেকবার ফোন এসে পরেছে। কিছুক্ষন পর আমরা বরযাত্রা নিয়ে বের হয়ে পরলাম সবাই গাড়িতে বসে পরলো আমি যেই বসতে যাবো ফায়াজ ভাই আমার হাত ধরে বললেন,
~আমার সাথে যাবি এই গাড়িতে দুজনের জায়গা হবে না।
বলেই আমাকে তার সাথে নিয়ে আসলেন
চলবে
(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)