তুমি আমার ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
1918

#তুমি_আমার_ভালোবাসা
#পর্ব_৮
#লেখিকা_Munni_Akter_Priya
.
.

ফাহাদ সকাল সকাল অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। তার কারণটাও প্রিয়া।
প্রিয়া অফিসে আসে ১০ মিনিট আগে। প্রিয়াকে আসতে দেখেই ফাহাদ মনে মনে বলে,
“এই মেয়েটাকে দেখার জন্য আমি ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে অফিসে এসে বসে আছি আর মহারাণী আসলো মাত্র ১০ মিনিট আগে!”
ফাহাদ লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা শুরু করলো প্রিয়াকে। কারণে-অকরাণে প্রিয়ার আশেপাশে ঘুরঘুর করছে। একটু পরপরই নিজের রুমে ডাকছে। এই ফাইল, ঐ ফাইল প্রিয়াকে দিয়ে ঘাটাচ্ছে সামনে বসিয়ে। আর সেসময়টুকুই আড়চোখে প্রিয়াকে দেখছিল ফাহাদ। প্রিয়া বিষয়টা খেয়াল করলেও প্রথম কয়েকদিন মনের ভুল বলে এড়িয়ে চললো। কিন্তু বিষয়টা এখন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। অফিসের প্রায় অনেকেই বিষয়টাকে নিয়ে কানাঘুষা করছে। প্রিয়া একদিন ফাহাদকে বললো,
“স্যার একটা কথা বলবো?”
“হ্যাঁ শিওর।”
“আপনি আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন কেন?”
“সেকি? আমি কখন আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখলাম?”
“দূর থেকে কোনো ছেলে ফলো করলে সেটা মেয়েরা বুঝতে পারে, আর আপনি এত কাছ থেকে আমায় দেখেন সেটা আমার চোখে পড়বে না?”
“তার মানে বলতে চাইছেন আমরা কাছাকাছি থাকি?”
“এমন কখন বললাম আমি?”
“বলেননি?”
“না।”
“আচ্ছা বেশ! তা কে বললো আমি আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি?”
“বলতে হবে কেন? আমি নিজেই দেখেছি।”
“তার মানে আপনিও আমায় লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেন?”
“মোটেও না।”
“না দেখলে জানলেন কি করে যে আমি তাকাই?”
“চোখ পড়ে যায়। তাছাড়া অফিসের অনেকেই বিষয়টা নিয়ে খুব মাতামাতি করছে।”
“আপনার খারাপ লাগে তাতে?”
“অবশ্যই। যেখানে আমি কোনোভাবেই ইনভলভ্ নই সেখানে আমাকে নিয়ে কোনো কানাঘুষা হোক সেটা আমার একদম পছন্দ নয়।”
“ওকে ওকে রিলাক্স! এত রেগে যাচ্ছেন কেন?”
“আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার।”
“কি বুঝতে পারছি না আমি?”
“আপনি কিছুই বুঝতে পারেন না।”
“আমি অনেক কিছুই বুঝি। বরং আপনিই বুঝেন না।”
“ধ্যাত! আপনার সাথে কথা বলা আর কলাগাছের সাথে কথা বলা একই কথা।”
প্রিয়া রাগ করে চলে গেলো। আর ফাহাদ হেসে দিলো।
“মেয়েটাকে এতদিন চুপচাপ স্বভাবের মনে হলেও বেশ রাগ আছে দেখা যাচ্ছে।”

তার পরেরদিন থেকেই প্রিয়া অফিসে আসা বন্ধ করে দেয়। একদিন,দুইদিন করে পেড়িয়ে যখন সময়টা এক সপ্তাহে চলে যায় তখন ফাহাদের মনে ভয় ঢোকা শুরু করে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না। তবে কি প্রিয়া চাকরীটা ছেড়ে দিলো! ভালোবাসা পাওয়ার আগেই কি হারিয়ে গেলো! নাহ্! এসব কিছুই ভাবতে পারছেনা ফাহাদ। এক অজানা ভয় মনের মধ্যে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে।
ফাহাদ অফিস থেকে প্রিয়ার নাম্বার জোগার করে ফোন দেয়। কিন্তু অদ্ভুত! ফোন নাম্বারটা বন্ধ। হলো কি মেয়েটার। এবার ফাহাদের মনটা উতলা হয়ে পড়লো। কি করবে না করবে কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
রুমের মধ্যে একা একা পায়চারী করছিল। ফাহাদের মা এসে বললো,
“কি হয়েছে তোর? কয়েকদিন ধরেই তোকে অস্থির দেখাচ্ছে।”
ফাহাদ মায়ের হাত জড়িয়ে ধরে বললো,
“মা, আমি বোধ হয় প্রিয়াকে হারিয়ে ফেলেছি।”
“মানে? কি হয়েছে?”
“আজ সাতটা দিন হয়ে গেলো প্রিয়া অফিসে আসেনা। কোনো খোঁজখবরই নেই। ফোন নাম্বারটা পর্যন্ত বন্ধ।”
“এত চিন্তা করিস না বাবা। হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে।”
“চিন্তা তো আমি করতে চাইনা মা। কিন্তু ওর অনুপস্থিতি কেন যেন আমায় বেশিই টেনশনে ফেলে দিচ্ছে। এক মুহুর্তে কাউকে এত ভালোবাসা যায় এটা আমি বিশ্বাসই করতাম না যদি না আমার সাথে হতো।”
“আল্লাহ্ সহায় আছে। খারাপ কিছু হবেনা দেখে নিস।”
“যদি সত্যিই হারিয়ে ফেলি?”
“ধুর পাগল! হবেনা এমন কিছু। তোর ভালোবাসা তুই ফিরে পাবি। ওর কোনো ফ্রেন্ডকে চিনিস না?”
“আমি তো তেমন করে কিছুই জানিনা ওর ব্যাপারে। শুধু জানি ওকে ভালোবাসি। এখন এটা ভালোবাসা নাকি আকর্ষণ এটা বোঝার জন্য নিজেই নিজেকে সময় দিচ্ছিলাম। আর এরমধ্যেই এই ঘটনা ঘটে গেলো। তবে ওকে অফিসের একটা মেয়ের সাথে বেশিই মিশতে দেখি। নাম মেবি পৃথা।”
“তাহলে ওকে জিজ্ঞেস করলেই তো পারিস।”
“তাইতো! এটা তো আমার মাথায়ই আসেনি। টেনশনে মাথা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো। কালই অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো।”
“পাগল ছেলে আমার। আচ্ছা শোন, মৃন্ময় এসেছে আজ।”
“কি বলো? কখন এসেছে?”
“বিকালে এসেছে। একটু আগে বাহিরে গেলো।”
“ওহ।”
মৃন্ময় আর ফাহাদ খালাতো ভাই। দুজনের সম্পর্ক শুধু ভাইর’ই নয় খুব ভালো বন্ধুও ওরা।
কিছুক্ষণ পরই মৃন্ময় ফোন দেয় ফাহাদকে।
“হ্যালো ফাহাদ।”
“হ্যাঁ বল।”
“অফিস থেকে ফিরেছিস?”
“আরো আগেই। তুই কোথায়?”
“বাহিরে আছি। আসছি এখনই।”
“আচ্ছা আয়।”
ফোন রেখে কপালে হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে ফাহাদ। মনটা খুব অস্থির। যতক্ষণ না প্রিয়ার কোনো খোঁজখবর পাবে, প্রিয়াকে একটা নজর দেখতে পারবে ততক্ষণে পর্যন্ত শান্তি পাবেনা ফাহাদ। মলিন মুখে ঘরে প্রবেশ করে মৃন্ময়। মৃন্ময়কে দেখেই উঠে বসে ফাহাদ।
“কিরে মৃন্ময় শরীরের এই অবস্থা কেন তোর?”
“আর শরীর! শরীরে মন-প্রাণ না থাকলে কি শরীর ঠিক থাকে?”
“মানে?”
“একজনকে খুঁজছি। মনটা তার কাছেই।”
“কে? রিমি?”
“আরে না। আমার সেই প্রেয়সী।”
“যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছিল?”
“হ্যাঁ। ওকেই তো আমি ভালোবেসে প্রেয়সী বলে ডাকতাম।”
“চুপ কর শালা! তুই যেই কাজটা করেছিস মেয়েটার সাথে এরপরও কোন মুখে বলিস ভালোবাসার কথা?”
“আমি জানিরে ভাই। খুব বেশি ভুল করে ফেলছি। কিন্তু কি করবো বল? ওর থেকে দূরে গিয়েই তো ভালোবাসাটা উপলব্ধি করতে পেরেছি।”
মৃন্ময়ের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফাহাদ। ভালোবাসা বুঝি এমনই। দূরে গেলেই ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করা যায়।
“তো কোথায় খুঁজছিস তাকে?”
“পৃথিবীটা গোল। একটা সময় ঠিকই পেয়ে যাবো।”
“ছবি আছে? থাকলে দেখা।”
“উঁহু! ছবি না। আমার প্রেয়সীকে সামনে এনে দেখাবো। দেখবি কত সুন্দরী সে!”
“তাই? ছবি না দেখালে নাই। আমারও এত ইন্টারেস্ট নেই অন্য কাউকে দেখার। তবে তোর প্রেয়সী যত সুন্দরীই হোক না কেন, আমার দেখা সেই সাদা পরীর মত সুন্দর নয়।”
“সাদা পরী কোথায় পেলি তুই? আর কথাবার্তা এমন কেন?”
“কেমন?”
“কেমন যেন প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।”
“ওরে এটা প্রেম নয়! ভালোবাসা। কিন্তু আমারও যে তোর মত দশা।”
“কেন? কি হয়েছে?”
“হারিয়ে ফেলেছি পরীটাকে।”
“কিভাবে?”
“নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে। ভালোবাসার কথা জানানোর আগেই পাখি ফুড়ুৎ। এখন তোর মতই দেবদাস হয়ে খুঁজছি।”
“হায়রে কপাল! দুই ভাইয়েরই ফুডা কপাল বুঝলি। আল্লাহ্ যে কবে পাইয়ে দিবে তাদের।”
“আশা ছাড়ছিনা। ভালোবাসার টানে হলেও খুঁজে বের করবোই।”
দুজনে গল্প করতে করতে শুয়ে পড়লো। রাতে খেলোও না। খাবে আরকি! দুজনেরই তো খুশিতে পেট ভরে গেছে। ভালোবাসার মানুষের কথা মনে পড়লে নাকি অদ্ভুত এক ভালোলাগা তৈরি হয় আর তখন খাওয়ার প্রয়োজন হয়না। পেট আপনাআপনি ভরে যায়। সে রাতে দুই ভাই মিলে জম্পেশ আড্ডা দিয়েছে। দুজনের আড্ডার মানুষটাই তাদের ভালোবাসা।
মানুষটা এক, অনুভূতিগুলো আলাদা। যেটা জানেও না দুই ভাই। কিজানি কি আছে কি কপালে!
.
.
পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে অফিসে গেলো ফাহাদ। অফিসে গিয়েই আগে পৃথাকে খুঁজলো। পৃথা তখনো অফিসে আসেনি। তাই তোয়াকে বলে রেখেছিল পৃথা আসলে জানাতে।অফিসে আসার পর পৃথার আর যাওয়া লাগেনি। ফাহাদই এসে পড়েছে। এই নিয়ে ১০ বার আসা-যাওয়া হয়ে গেছে। পৃথাকে দেখেই এগিয়ে গেলো ফাহাদ। পৃথা বললো,
“স্যরি স্যার। আমি এখনই যাচ্ছিলাম।”
“না সমস্যা নেই। আসলে একটা কথা জিজ্ঞেস করার জন্য ডেকেছিলাম।”
“জ্বী স্যার বলুন।”
“আসলে…”
ফাহাদ আমতা আমতা করতে লাগলো। অবশেষে সব লাজ-লজ্জা কাটিয়ে বলেই ফেললো,
“প্রিয়ার কি হয়েছে? অফিসে কেন আসছেনা?”
পৃথার চেহারায়ও চিন্তিত ভাব আসলো। মলিন মুখে বললো,
“জানিনা স্যার। অনেকবার ফোন করেছি। ফোন বন্ধ পেয়েছি বারবার। আর ওর বাড়িও চিনিনা আমি।”
“ওহ।”
ফাহাদ চলে যাচ্ছিলো। আস্তে আস্তে সব আশার আলোই যেন নিভে যাচ্ছিলো। হুট করেই পৃথার মুখে শুনতে পেলো,
“প্রিয়া!!”
ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে পেছনে তাকালো। হার্টবিট বেড়ে গিয়েছে ফাহাদের। প্রিয়া এসেছে। ফাহাদের মত খুশি মনে হয় আর কেউ নেই আজ। পরক্ষণে আবার রাগও হলো। এতদিন কষ্ট দেওয়া! এর শাস্তি তো পেতেই হবে।”
ফাহাদের পিএ তোয়াকে ডেকে বললো,
“প্রিয়াকে আমার রুমে পাঠিয়ে দাও।”
“ওকে স্যার।”
কিছু সময় পর প্রিয়া ফাহাদের রুমে যায়। আজ কিছুই বলছেনা প্রিয়া। ফাহাদ ভেবেছিল সেদিনের মত হয়তো বাচ্চামো করবে, বকবক করবে কিন্তু এমন কিছুই করেনি প্রিয়া। শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো চঞ্চলতা নেই। আগের থেকে শুকিয়ে গিয়েছে, চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। অজানা ভয়ে বুকে মোচর দিয়ে উঠলো ফাহাদের। কি হয়েছে প্রিয়ার!…..

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে