#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_১২
বাসায় এসেই নিজের রুমে চলে গেল প্রিয়তা।মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে আছে তার।এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে সৌরভের মাথার চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে।রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে।প্রচন্ড অভিমান কাজ করছে মনের ভেতর।সৌরভ আসলেই তাকে কখনো পাত্তা দেয় নি,সেই শুধু বেহায়ার মতো পিছু পিছু ঘুরেছে।
কিছুক্ষণ পর মুসকানের রুমে বই খাতা নিয়ে যাওয়ার ডাক পড়ে তার।নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করে বই খাতা নিয়ে ভাইয়ের রুমে ছুটলো সে।পড়াশোনায় একটু এদিক ওদিক হলে মাথায় গাট্টা খেতে হবে।
🖤
বাসা এখন প্রায় খালিই বলা যায়।ডলি,তানিয়া,আকিল,জুই,পান্না ওরা কেউ বাসায় নেই।ওরা সবাই আবিরের শ্বশুর বাড়ি গেছে আবিরদের সাথে।বাসায় শুধু পরিবারের বড় রা,ভাই ভাবী ওনারা আছেন।গতকালকেও উৎসব মুখর পরিবেশ ছিলো পুরো বাসা জুড়ে,অথচ আজ একদম আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে সবকিছু।পরিবারে এক্সট্রা সদস্য শুধু মিসেস জেসমিন ও ওনার স্বামী।আর কেউ নেই।
সৌরভের মনটা খালি খালি লাগছে।তার কাছে মনে হচ্ছে বাসার পরিবেশ একদম বিরসতায় ছেয়ে গেছে।কারও হাসিমাখা মুখটাকে সে ভীষণ মিস করছে।সারাবাড়ি জুড়ে বিচরণ করা সেই চঞ্চল কিশোরী মেয়েটাকে সে অনেক বেশি মিস করছে।এই একটামাত্র মানুষ চলে গেছে দেখে বাসাটাকে সম্পূর্ণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার কাছে।যাকে সে মিস করছে সে আর কেউ নয়,তারই প্রিয়তমা প্রিয়তা।
সৌরভ ধীরগতিতে হেঁটে হেঁটে নিজের বাবা মায়ের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নক করলো।মিসেস মিনা ভেতর থেকে সাড়া দিতেই সৌরভ ভেতরে প্রবেশ করে।মিসেস মিনা বিছানায় বসে বাটার পান সাজাচ্ছিলেন,ছেলেকে দেখে এক অমায়িক হাসি দিয়ে বললেন;
মিসেস মিনা:-এখানে এসে বস বাবা।
সৌরভ মুচকি হেসে মায়ের সামনে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে সরাসরি শুয়ে পড়লো।মিসেস মিনা সস্নেহে ছেলের মাথায় আদুরে পরশ বুলিয়ে দিতে লাগলেন।স্নেহ মাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন;
মিসেস মিনা:-তোর কী মন খারাপ বাবা?কিছু হয়েছে কী?
সৌরভ:-নাহ আম্মু,আমি ঠিক আছি।কী আর হবে?
মিসেস মিনা:-ওহহ,
দুজনেই চুপ।কয়েক মুহূর্ত নিরবতার পর সৌরভ নিজে থেকেই বললো;
সৌরভ:-আম্মু,,
মিসেস মিনা:-হুম বাবা!
সৌরভ:-আমি তোমায় আগে বলেছিলাম না আমার একজনকে পছন্দ হয়েছে!
মিসেস মিনা:-হ্যা,
সৌরভ:-জানতে চাও না সে কে হতে পারে?
মিসেস মিনা:-না বললে কীভাবে জানবো?তুই আমাদের কাউকেই কিছু জানাস নি।কীভাবে আন্দাজ করি বলতো?
সৌরভ হাসলো মায়ের কথা শুনে।
সৌরভ:-শুনে খুশি হবে কী না এজন্য বলতে সংকোচ বোধ করছি।
মিসেস মিনা:-কোনো সংকোচ করবি না,মায়ের কাছে আবার সংকোচ কীসের?আমার ছেলে যখন পছন্দ করেছে তখন সেরা কাউকে পছন্দ করেছে বলে আমার বিশ্বাস।এখন আমায় সব বলে দে বাবা,মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই।
সৌরভ:-আচ্ছা আম্মু,প্রিয়তাকে তোমার কাছে কেমন লাগে?(জানতে চেয়ে)
মিসেস মিনা:-প্রিয়ু!!তাকে তো অনেক ভালো লাগে।মেয়েটা ভীষণ প্রাণবন্ত।সবার সাথে হেসেখেলে কথা বলে।আমার কাছে ওকে খুব ভালো লাগে।মেয়েটার মধ্যে প্যাঁচগোছ কিছু নেই।যা বলে সোজাসাপ্টা বলে দেয়।স্পষ্টভাষী সাথে অমায়িকও।ও বাসায় আসলে বাসাটা একদম উৎসবমুখর হয়ে যায়।
সৌরভ:-তারমানে ওকে ভালো লাগে তোমার?
মিসেস মিনা:-হ্যা,,কিন্তু হঠাৎ ওর কথা কেন তুললি?(কৌতুহলী কন্ঠে)
সৌরভ:-এই সেই মেয়ে যাকে আমি পছন্দ করেছি।
সৌরভের কথা শুনে মিসেস মিনা বিস্মিত হলেন খুব।ওনি একবারের জন্যও এমন কিছু ভাবেন নি।তারমানে প্রিয়তাকেই মনে ধরেছে তাঁর ছেলের?
মিসেস মিনা:-প্রিয়ুকে তুই পছন্দ করেছিস?প্রিয়ু কী জানে এ কথা?
সৌরভ:-আমি যে তাকে পছন্দ করি সে এ কথা জানে না,তবে ও যে আমায় পছন্দ করে সেটা আমি জানি!
মিসেস মিনা এতক্ষণ ছেলের কথা বিস্ময়ের সহিত শুনলেন।তার ছেলে আর কাউকে নয় প্রিয়তাকে দেখেই ফিদা।অথচ প্রিয়তার চাইতে জুই অনেক সুন্দর আর স্টাইলিশ।
মিসেস মিনা:-প্রিয়ু তোকে বলেছে যে সে তোকে পছন্দ করে?
সৌরভ:-হুম।তবে আমরা কেউই কোনোরকম সম্পর্কে জড়াই নি।আমি ওকে পছন্দ করলেও কখনো ওর দিকে অন্য নজরে তাকাই নি।আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা হালালভাবে সৃষ্টি হোক।এজন্য তোমাদের মতামত দরকার।আমি চাইলেই ওকে বলতে পারতাম যে আমি তাকে চাই।কিন্তু আমি তোমার কথা ভেবে কিছুই বলি নি।কারণ চাই নি তোমার অবাধ্য হতে।যদি তুমি প্রিয়তাকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে না পারো,এই আশংকায়!এখন দেখাে তুমি যা বলবে তাই হবে!তোমার অবাধ্য হবো না আম্মু।
মিসেস মিনা আবেগাপ্লুত হয়ে গেছেন ছেলের কথা শুনে।সৌরভের কপালে চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন;
মিসেস মিনা:-এজন্যই তুই আমার সব থেকে বেশি আদরের রে বাপ।আমার অন্যান্য সন্তানরা হয়তো নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে নিতে পারে,কিন্তু একমাত্র তুইই আমার কথামতো চলিস সবসময়।আমার আদেশ নিষেধের তোয়াক্কা করিস।আমি তোর কানাডা যাওয়ার সময় বাঁধা দিই নি তাই তুই এই সিদ্ধান্তে এগিয়েছিলি,তবে আমি জানি আমি যদি তোকে সেদিন একবার বাঁধা দিতাম তবে তুই জীবনেও কানাডাতে যাওয়ার চিন্তা করতি না।তুই যখন বলেছিস প্রিয়ুকে তোর ভালো লেগেছে,তখন তুই নিশ্চিত থাক,প্রিয়ুকে আমি তোর জন্য এনেই ছাড়বো।কয়েকটা দিন পর যাবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।আমার সোনার টুকরো ছেলেকে তারাও খুশি মনে মেয়ে দেবে,না করার প্রশ্নই আসে না।
সৌরভ:-অনেক ভালোবাসি তোমায় আম্মু।তুমি হচ্ছো আমার বেস্ট আম্মু,কখনো কিছুতে মানা করো না।
মিসেস মিনা প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন;
মিসেস মিনা:-আচ্ছা ঠিক আছে,তুই খেয়েছিস কিছু?
সৌরভ:-নাহ আম্মু।
মিসেস মিনা:-তাহলে আয়,তোর খাবার বেড়ে দিই।
সৌরভ শোয়া থেকে ওঠে বসতেই মিসেস মিনা তাকে আসতে বলে নিচে চলে গেলেন।সৌরভও হাসিমুখে খুশিমনে খেতে চলে গেল।
🖤
এভাবেই কেটে গেছে প্রায় পাঁচ-পাঁচটা দিন।আজকে সৌরভের পরিবার প্রিয়তাদের বাসায় আসবে।কীজন্য আসছে তা বড়রা ইঙ্গিত পেয়েছেন কিছুটা,তবে বিস্তারিত কেউ কিছুই জানেন না।মিসেস প্রমি কাজের মেয়েদের নিয়ে নানারকম রান্না বান্না করতে ব্যস্ত।প্রিয়তা নিজের রুমে বসে বসে বই পড়ছে একমনে।একটু আগে সীমের খোসা ও পেয়াজ রসুনের খোসা ছাড়াতে সাহায্য করে এসেছে তাদের।তাকে দিয়ে যে আর কিছুই হবে না সেটা মিসেস প্রমি ঢের ভালো জানেন।
এই পাঁচদিন,সৌরভ প্রিয়তাকে আর প্রিয়তা সৌরভকে শুধু মিসই করে গেছে।না কেউ কারো দেখা পেয়েছে আর না কেউ কারও সাথে যোগাযোগ করেছে।কিছুই করে নি তবে শুধু অনুভব করেছে একজন আরেকজনকে।কল্পনার জগৎ সাজিয়েছে দুজন দুজনাকে নিয়ে।প্রিয়তা একদিন কলেজে গিয়েছিল শুধু,গিয়ে পড়ার জন্য ইমপোর্টেন্ট কিছু নোট নিয়ে এসেছে,সাথে ফ্রেন্ড মিশির সাথে সবকিছু শেয়ার করে এসেছে।মিশি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে ভাগ্যে থাকলে সৌরভ এমনিতেই তার হবে।
এখন প্রিয়তা নামাজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছে।তাকে এখন আর এ ব্যাপারে কিছু বলতে হয় না।সে নিজে থেকেই এখন নামাজ পড়ে।গান শোনা তুলনামূলক কমিয়ে দিয়েছে।কলেজ থেকে ফেরার পথে কয়েকটা ইসলামিক মোটিভেশনাল বই কিনে নিয়ে এসেছে।দুটো অলরেডি পড়া শেষ।অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছে সে।নিজেকে এখন পালকের মতো হালকা মনে হয় তার।এই যে গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা,এতেই সে অন্য এক প্রিয়তাতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে নিজেকে।
প্রায় বিকেলের দিকে সৌরভরা সবাই হাজির খান মঞ্জিলে।ড্রয়িং রুম জুড়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছে,কথা বলছে নাশতা খাচ্ছে।প্রিয়তাও আছে সবার সাথে।সৌরভের প্রতি চাপা ক্ষোভ তার এখনও কমে নি।তাই সৌরভের দিকে বেশি তাকাচ্ছেও না।কিন্তু সৌরভ বারংবার ঘুরেফিরে প্রিয়তাকেই দেখছে।এ দেখার যেন শেষ নেই।এতদিনের না দেখার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত সে।
হঠাৎ করে মি.শফিক প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন;
মি.শফিক:-তা ভাইজান,মেয়েকে কী বিয়ে দেবেন না?
মি.মুজাফফর:-জ্বী ভাইসাহেব,অবশ্যই দিবো।তবে ছেলের ইচ্ছা তার বোন যাতে হাইয়ার এডুকেটেড হয়,নিজের পায়ে যেন আগে দাঁড়ায় তারপর বিয়ে।তাই মুসকানের কথার ওপর আমিও যাচ্ছি না।পড়বে যখন পড়ুক মেয়েটা সমস্যা নেই।
মি.শফিক:-দেখুন ভাইজান,আমি যা বলি সোজাসাপ্টা বলে দিই।আসলে আমি আমার ছেলে সৌরভের জন্য আপনার মেয়েকে পছন্দ করেছি।পড়ালেখা নিয়ে সমস্যা নেই।প্রিয়ু মা ডলি তানিয়াদের সাথে পড়তে পারবে।আমাদের কারোরই এ নিয়ে অসুবিধা নেই।শুধু আপনার মেয়েটাকে ছেলের বউ হিসেবে নিতে চাই।
এতক্ষণ যাবৎ ওনাদের দুজনের কথা শুনছিলো প্রিয়তা।তবে মি.শফিকের লাস্ট কথাগুলো শুনে যেন কারেন্টের শক খেল সে।ঝট করে তাকালো সৌরভের দিকে,দেখলো সৌরভ তারই দিকে তাকিয়ে আছে।সে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছে।এখনও ঘোরের মধ্যে রয়েছে,বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।
মি.মুজাফফর একবার স্ত্রীর দিকে আর একবার ছেলের দিকে তাকালেন।ওনি আসলে বুঝতে পারছেন না প্রতুত্তরে কী জবাব দেবেন।মুসকান আগের তুলনায় গম্ভীর হয়ে গেছে।মিসেস প্রমি নির্বিকার।এবং প্রিয়তা হতভম্ব।
মিসেস মিনা:-ভাই আপনি তো চেনেন আমার সৌরভকে।ছোট থেকেই দেখে আসছেন।মা হয়ে বলছি,আজতক নিজেই আমি আমার ছেলের কোনো খুঁত খুঁজে পাই নি।ছেলেটা আমার সবসময়েরই সাদামাটা ও স্পষ্টভাষী।গর্ব করে বলতে পারি আমার ছেলে অন্যান্য ছেলেদের আইডল।
মি.মুজাফফর:-না আপা,আমি জানি সৌরভ কেমন ছেলে।আমি আমার মেয়ের জন্য এমন একটা ছেলেই খুঁজি সবসময়।কিন্তু মেয়ের আগে ছেলের মতামতটাকে প্রাধান্য দিতে হবে এক্ষেত্রে।কারণ সত্যি বলতে আমাদের থেকে সবচাইতে বেশি যদি প্রিয়ুর ওপর কারও অধিকার থেকে থাকে তবে তা হলো মুসকানের।ছেলে যদি মেনে নেয় তবে আমার এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই।
মিসেস শিলা:-বাবা মুসকান,রাজী হয়ে যা বাবা।তুই তো চিনিস সৌরভকে!তুই নিজেই তো সবসময় তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকিস!তবে দিবি না প্রিয়ুকে তার হাতে তুলে?আমাদের পরিবারের ছেলেটা সোনার টুকরো ছেলে।এমন ছেলে লাখে একটা মেলে।তুই অমত করিস না বাবা।
মুসকান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সময় লাগিয়ে চিন্তা করলো।তারপর গম্ভীর স্বরে জবাব দিলো;
মুসকান:-মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে তখন বিয়ে তো দিতেই হবে।এবং পাত্র হিসেবে সৌরভ ভাইয়া মন্দ নয় তা আমি জানি।কিন্তু আমার বোনকে আমি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই।আমি চাই সেও নিজের পায়ে দাঁড়াক।যাতে খারাপ কোনো পরিস্থিতিতে সে পড়লেও নিজেকে সামলে নিতে পারে।বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম না এখন।এইচএসসিটাও দেয় নি।এত জলদি বিয়ে,,,
মুসকানের কথাগুলো সবাই বুঝতে পারছে।এবার সৌরভ নিজে কথা বলে উঠে;
সৌরভ:-দেখাে মুসকান,একজন ভাই হিসেবে তুমি এমনটাই চাইবে তা আমরা জানি।শুধু তুমি কেন,একজন ভাই হিসেবে আমারও এমন দায়িত্ব আছে।তবে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো তোমার বোনের পড়াশোনা নিয়ে।বিয়ের পর আমি নিজে তাকে পড়াশোনায় গাইড করবো।আমিও চাইবো আমার বউ পড়াশোনা কমপ্লিট করুক।আর যেহেতু আত্মীয়ের মধ্যে,সেহেতু প্রিয়তার জন্য সেটা আরও সুবিধাজনক হবে।
—➤আপন ফুপ্পি আছেন যে তাকে মায়ের মতো আগলে রাখবে।এবং আমরা প্রিয়তাকে যেভাবে আগলে রাখবো,অন্য কোথাও বিয়ে দিলে হয়তো এমনটা নাও হতে পারে।এমনকি অন্য পরিবার চাইবে তাদের বৌমা সংসারী হোক পড়াশোনা ছেড়ে,বাট আমরা এটা চাইবো না।আমাদের বাসায় ওকে জীবনেও কেউ ফোর্স করবে না ঘরের কাজকর্ম এবং রান্নাবান্না করার জন্য।সে তার ইচ্ছে মতো থাকবে,যেমনটা নিজের বাসায় থাকে।এখন দেখাে মুসকান,তুমি যেটা ভালো বুঝো।পড়াশোনা নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে।এটা তুমি না বললেও আমি চাইতাম।
সৌরভের কথার গুরুত্ব প্রিয়তার পরিবারের সবাই বুঝতে পেরেছে।সৌরভ যে মিথ্যা বলার ছেলে নয় তা সবাই জানে।এককথার ব্যক্তিরা এমনই হয়।প্রিয়তা ধ্যান দিয়ে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে।তার কল্পনা যে এত জলদি বাস্তবে রূপ দিতে চাচ্ছে সৌরভ তা সে স্বপ্নেও কখনো ভাবে নি।বেশি খুশির ঠেলায় অনুভূতিহীন হয়ে গেছে বেচারি।কেউ একটা চিমটি কাটলে হয়তো হুঁশে ফিরে আসতো।
মুসকান বেশ কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে জবাব দিলো;
মুসকান:-আপনাকে আমার বোনজামাই হিসেবে মেনে নিতে কোনো সমস্যা নেই।এখন প্রিয়তা যদি আপনাকে পছন্দ করে,তবে আমরা বিষয়টা নিয়ে সামনে আগাবো।প্রিয়ু?তোর কী মত?সৌরভ ভাইয়াকে কী তোর স্বামী হিসেবে পছন্দ হয়েছে?
মুসকানের কথা শুনে হুট করে প্রিয়তা মারাত্মক লজ্জায় পড়ে গেল।সবার সামনে এমন একটা প্রশ্ন করায় সে শরমে নুয়ে গেছে।
মুসকান:-কী হলো জবাব দে?
প্রিয়তা হুট করে বসা থেকে ওঠে লজ্জা পেয়ে একদৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।যাওয়ার আগে জানিয়ে গেল;
প্রিয়তা:-আমি জানি না।তোমরা যা বলবে তাই হবে।
প্রিয়তার লজ্জা পেয়ে চলে যাওয়া দেখে সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো।মি.সালাম হেসে হেসে বললেন;
মি.সালাম:-মেয়েটা ভারী লজ্জা পেয়েছে।
বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে সবাই কথা বলতে লাগলো।তবে একটা সময় দ্বিমত প্রকাশ করলো মুসকান আর সৌরভ।সৌরভ চায় একসপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করতে,এবং মুসকান চায় প্রিয়তার এইচএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে দিতে।অনেকক্ষণ কথাবার্তার পর সৌরভের কথাই প্রাধান্য পেল সবার কাছে।সৌরভ যুক্তি দিয়ে মুসকানকে কুপোকাত করে দিয়েছে।সৌরভ মুসকানকে কথা দিলো সে নিজে প্রিয়তার এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।সৌরভ যে এতদিন তার প্রিয়তমার থেকে দূরে থাকাটা সহ্য করতে পারবে না।তাই এত তর্কবিতর্ক।
ঠিক হলো সামনের শুক্রবারেই বিয়ে।গায়ে হলুদ,মেহেন্দি অনুষ্ঠান এসব না হলেও বিয়ে সেন্টারেই হবে।কারণ দুই পরিবারের বহু আত্মীয় স্বজন আছে।এবং ওনারা বিয়েতে আসবেনই আসবেন।বাসায় একটা বিয়ের অনুষ্ঠান করার মতো এত জায়গা নেই।তবে বিয়ে সেন্টারে হলেও বিষয়টা একদম নিকটাত্মীয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।এত বেশি ঝুট-ঝামেলা সৌরভ পছন্দ করে না।
সৌরভ নিজেই তার পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু ডিসকাস করলো মুসকানের সাথে।বাকিরা নিরব শ্রোতাদের মতো সবকিছু শ্রবণ করে গেল।সৌরভের অধিকাংশ কথাই মুসকানের পছন্দ হয়েছে তাই মুসকানও সৌরভের প্রতিটি কথায় সায় দিয়েছে।বাকিরা তো সবকিছুতেই একপায়ে খাঁড়া।
মি.মুজাফফর ও মি.সালাম সৌরভকে প্রিয়তার সাথে একান্তে কথা বলার জন্য পাঠালেন প্রিয়তার রুমে।যতই প্রিয়তার রুমের দিকে এগোচ্ছে ততই সৌরভের বুক ধুকপুক করছে অজানা আশংকায়।সে জানে না তাকে দেখে প্রিয়তা কেমন রিয়েক্ট করবে।বহুত কষ্টে নিজেকে ধাতস্থ করে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো সৌরভ।
রুমে ঢুকেই হার্টবিট মিস হলো তার।কোমড় অবধি লম্বা চুল ছেড়ে দিয়ে বুকশেলফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা।শরীরে ওড়না নেই।শরীরে এক অন্যরকম শিহরণ খেলে গেল তার।অদ্ভুত ফিলিংস!
প্রিয়তাও অবাক হয়েছে সৌরভকে হঠাৎ তার রুমে দেখে।সে ভাবে নি সৌরভ এভাবে তার রুমে চলে আসবে।প্রিয়তা দ্রুত একটা ওড়না শরীরে জড়িয়ে নিলো।সৌরভ দরজা হালকা ভিড়িয়ে রাখলো।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো সে।হাসি দেখেই গলে গেছে প্রিয়তা।
সৌরভ এগিয়ে এলো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়।যেন কেউ তাকে সম্মোহন করে রেখেছে।সৌরভ একটা আঙ্গুল প্রিয়তার গালে ছুঁয়ে দিলো।আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো প্রিয়তা।
সৌরভ:-আমার ভার্জিনিটিতে হাত দিয়েছো তুমি,এত সহজে কীভাবে ছেড়ে দিই বলো তো?এজন্যই আজকে এমন সারপ্রাইজ দিলাম।কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?
প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ঢোক গিলে জবাব দিলো;
প্রিয়তা:-খুবই বাজে।এতদিন কষ্ট দিয়ে এখন আসছেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।হুহ করবো না বিয়ে আপনাকে!
সৌরভ আরেকটু এগিয়ে প্রিয়তার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রাখলো।ফিসফিসে কন্ঠে বললো;
সৌরভ:-হুঁশশ,,এমন কথা বলো না।তুমি যেহেতু আমায় ছুঁয়েছো,সেহেতু আমাকে বিয়েও তোমায় করতে হবে।তৈরী থেকো,একসপ্তাহ পর উঠিয়ে নিয়ে যাবো তোমাকে।একদম নিজের করে নিয়ে।তখন কোনো বাঁধা থাকবে না আমার তোমাকে অন্তরঙ্গ ভাবে স্পর্শ করতে।এতদিন তুমি তোমার ভেলকি দেখিয়েছো,বিয়ের পর আমার ভেল্কি দেখতে পাবে।যাকগে,এখন আসি তাহলে।বি রেডি প্রিয়,,
প্রিয়তা তাকিয়েই আছে সৌরভের চোখের দিকে।এ দেখা যেন অফুরন্ত।সৌরভ প্রিয়তার মাথায় আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল।প্রিয়তা তাকিয়েই আছে তার যাওয়ার পানে।এখনও ঘোর ভাঙে নি তার।
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং সবাই গঠনমূলক কমেন্ট করবেন বলে আশা করছি।)
চলবে…