#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৭
একমনে প্রিয়তাকে নিয়ে চিন্তা করছে সৌরভ।বিয়ে করলে প্রিয়তাকেই করবে ভেবে রাখলো।কারণ যাকে পছন্দ হয়েছে তার সাথে নির্বিঘ্নে সুন্দরমতো সংসার করা যাবে।দুজনের একটা টোনাটুনির সংসার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করাই যায়!
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেল সৌরভ।তারপর গোসল করে ড্রয়িং রুমে চলে এলো সে।
🖤
প্রিয়তা নিজের রুমে বসে লজ্জায় লাল নীল হতে হতে শেষ।এত লজ্জা কেন যে লাগছে বুঝতে পারছে না সে।সে এত সহজে কোনো কিছুতে লজ্জা পায় না।ভাবতেই অবাক লাগছে যে,ডানপিটে দুষ্টু মেয়েটা এখন লজ্জাবতীও হয়ে গেছে।সৌরভের কথা ভাবলেই এখন প্রিয়তার গাল দুটো ব্লাশিং হয়ে যায়।ছেলেটা যে এই কয়েকটা দিনে তার মন চুরি করে নিয়েছে!
এ-সব ভাবার মধ্যেই তানিয়া রুমে এসে প্রিয়তাকে ডেকে নিচে চলে গেল।প্রিয়তাও নিজেকে ঠিকঠাক করে নিচে চলে আসে।এসেই মুসকানকে দেখতে পায় সে।প্রিয়তার বড়ভাই হলো মুসকান।মুসকান আর এক বছর পর সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার হয়ে যাবে।
প্রিয়তা মুসকানকে অনেক ভয় পায়।তার ভাইটা যে আগুনের গোলা।রাগ তার নাকের ডগায় থাকে।প্রিয়তার ব্যাপারে তো সে হাই লেভেলের কড়া।প্রিয়তা দুষ্টামি করলে মুসকান তাকে ধমকেই সাইজ করে দেয়।মুসকানের সাথে প্রিয়তার মা মিসেস প্রমিও প্রিয়তাকে শাসনে রাখেন।প্রিয়তা সবকিছুতে একমাত্র সাপোর্ট পায় তার বাবা মি.মুজাফফরের কাছে।হাজার দুষ্টামি করলেও বাবার কারণে সে সবসময় পার পেয়ে যায়।বাবার একমাত্র আদরের আহ্লাদী রাজকন্যা বলে কথা!
প্রিয়তা ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো;
প্রিয়তা:-কখন এলে ভাইয়া?
মুসকান কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো;
মুসকান:-এই তো কিছুক্ষণ আগে।কী অবস্থা তোর?পড়ালেখা থেকে তো পার পেয়ে গেছিস মনে হয়!কল দিলে রিসিভ করিস না,ফোন কোথায় থাকে তোর?(জিজ্ঞাসু কন্ঠে)
প্রিয়তা:-ইয়ে মানে ভাইয়া,খেয়াল করি নি আসলে।
মুসকান:-তা খেয়াল থাকবে কী করে!সারাদিন তো টইটই করে ঘুরিস।কেউ যে ফোন দিতে পারে তা তো মনে থাকে না।
এই বলে একটা পলিথিনের প্যাকেট এগিয়ে দিলো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা হাত বাড়িয়ে নিলো তা।প্যাকেটের ভেতরে চিপস,চকোলেট,জুস আরও হাবিজাবি কী যেন।
মুসকান:-একা একা খাস না।ডলি,তানু,জুই,পান্না ওদেরকেও দিস।
প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বললো;
প্রিয়তা:-আচ্ছা দিবো নে।আম্মু আব্বু এলেন না কেন ভাইয়া?
মুসকান:-ওনারা কালকে আসবেন।আজকে আব্বুর হসপিটালে ইমারজেন্সি ছিলো।তাই আব্বুর জন্য আম্মুও আসতে পারেন নি।
প্রিয়তা:-ওহহো।
সৌরভও কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে মুসকানকে জিজ্ঞেস করলো;
সৌরভ:-তা তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে মুসকান?
মুসকান:-আলহামদুলিল্লাহ,ভালোই চলছে।তা ভাইয়ার জবের ব্যাপারটা কী হলো?
সৌরভ:-কানাডায় থাকতেই কনফার্ম ছিলো সবকিছু।জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে জয়েনিং।
মুসকান:-ওহহ।
একমুহূর্ত নিরবতা।তারপর আকিল মুসকানের পিঠে আলতো ভাবে চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করলো;
আকিল:-যাবি আজ কোথাও বেড়াতে!অনেকদিন হলো কোথাও ঘুরতে যাই না।
মুসকান:-আজকে এমনিতেই আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল সবাই মিলে মৌলভীবাজার যাবো।তুই চাইলে এড হতে পারিস আমাদের সাথে।
আকিল:-আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।
মিসেস মিনা:-কী রে আকিল?এখন ঘুরতে গেলে বিয়ে বাড়ির কত কাজ বাকি সেসব করবে কে?
আকিল:-আরে বড় আম্মু চিন্তা করো না।আমরা চলে আসবো তো!আজকে থেকে মুসকানও আমাদের সাথে থাকবে।তো হাতে হাতে সব কাজ হয়ে যাবে।কীরে মুসকান কিছু বল?
মুসকান:-হ্যা আন্টি।আমি আজকে থেকে এখানেই থাকবো।কালকে আব্বু আম্মুও চলে আসবেন।চিন্তা করবেন না,সবকাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করবো আমরা।
মিসেস মিনা:-আচ্ছা ঠিক আছে।কালকে কিছু কেনাকাটা করতে যেতে হবে মার্কেটে।কালকে কিন্তু কোথাও যেতে পারবি না বলে রাখলাম।
আকিল এবং মুসকান একসাথে আচ্ছা বলে উঠলো জবাবে।হঠাৎ করে প্রিয়তা টাকা চাইলো মুসকানের কাছে।বললো;
প্রিয়তা:-ভাইয়া আমাকে টাকা দিয়ে যাও।
মুসকান:-টাকা দিয়ে কী করবি তুই?এই না খাবার জন্য কতকিছু কিনে আনলাম!
প্রিয়তা:-দাও না ভাইয়া প্লিজ।আমার একটু দরকার আছে।
মুসকান কী মনে করে জেরা করা ছাড়াই পকেট থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো;
মুসকান:-এই নে।খালি উল্টাপাল্টা খাতে খরচ করবি,তো তোর খবর আছে।
প্রিয়তা দাঁত কেলিয়ে হেসে জবাব দিলো;
প্রিয়তা:-নাহ ভালো কাজেই খরচ করবো।
কিছুক্ষণ পর আকিল আর মুসকান বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো মৌলভীবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে।সৌরভ আর আবির শুধু বাসায় আছে।
আবিরের শ্যামলি ও শুকরিয়া মার্কেটে নিজের ৩ টা দোকান আছে।একটা ছেলেদের কাপড় চোপড়,একটা মেয়েদের কাপড় চোপড় এবং একটা কসমেটিকস ও অর্নামেন্টসের বিরাট দোকান।এই শো রুম গুলো চালানোর জন্য আলাদা করে মানুষ রাখা আছে।আবির শুধু মাঝেমধ্যে তদারকি করে,হিসাব নিকাশ চেক করে ও প্রতিদিনের টাকা নিয়ে আসে।ব্যস আর তেমন একটা কাজ নেই তার।
আকিল শাহজালাল ইউনিভার্সিটির অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।ডলি এবং তানিয়া এমসি কলেজের স্টুডেন্ট।ডলি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে এবং তানিয়া বিবিএ ফার্স ইয়ারে।
সৌরভ আর আবির বসে বসে গল্প করছে।ডলি, তানিয়া,জুই ও পান্নাও আছে সেখানে।প্রিয়তা আবিরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে প্রিয়তা আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে;
প্রিয়তা:-আবির ভাইয়া,চলো না আজকে মেলায় যাই আমরা।আমি আমার ভাইয়ার কাছ থেকে ৫০০ টাকা রেখেছি।আমার কাছে আগের আছে ১০০০ টাকা।টুকটাক কিছু কিনেই চলে আসবো।প্লিজ যাই চলো।
আবির:-কীসের মেলা রে?(ভ্রু কুঁচকে)
ডলি:-ভাইয়া ও বানিজ্য মেলার কথা বলছে।
সৌরভ:-বানিজ্য মেলা কবে শুরু হলো?
তানিয়া:-এই তো ভাইয়া কিছুদিন আগে।
প্রিয়তা:-প্লিজ ভাইয়া প্লিজ প্লিজ চলো না।সারা আপুকেও আসতে বলবো।প্লিজ মানা করো না।
জুই:-বাপরে প্রিয়ু কী চালাক!আবির ভাইয়া যদি রাজি না হয় এজন্য আগে ভাগেই সারা আপুর নাম বলে দিসে।(হেসে দিয়ে)
সৌরভ আর আবির হেসে ফেললো প্রিয়তার বুদ্ধি দেখে।সৌরভ মুচকি হেসে বললো;
সৌরভ:-যাওয়াই যায়।বুদ্ধিটা মন্দ হয় না।তবে আমার একটা শর্ত আছে।এই শর্ত মানলে তবেই মেলায় নিয়ে যাবো তোমাদের সবাইকে।
প্রিয়তা যেন লুফে নিলো সৌরভের শর্তটা।না শুনেই বললো;
প্রিয়তা:-যেকোনো শর্তেই রাজি আমি ভাইয়া।আমার কোনো প্রবলেম নেই।
তানিয়া:-আগে শুনি ভাইয়ার শর্ত কী!
পান্না:-হ্যা ভাইয়া বলো।
সৌরভ:-তোমাদের সবাইকে ঢোলাঢালা বোরকা ও বড় হিজাব পড়তে হবে।মোটকথা পর্দা করে যেতে চাইলে তবেই নেয়া হবে নয়তো না।মেলায় কতরকমের কত মানুষ আসে।ঝামেলাপূর্ণ পরিবেশ।আমি এরকম একটা পরিবেশে তোমাদেরকে বেপর্দায় নিয়ে যাবো না।নাও চয়েস ইজ ইউরস।কী করবে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাও।
প্রিয়তা নিঃসংকোচে জবাব দিলো;
প্রিয়তা:-আমি রাজী ভাইয়া।আপনি না বললেও আমি বোরকা পড়েই যেতাম।
ডলি এবং তানিয়াও সায় জানিয়ে জবাব দিলো;
ডলি:-ডান।
তানিয়া:-আমিও রাজী।
পান্না:-আমারও কোনো অসুবিধা নেই ভাইয়া।
সবাই রাজী হলেও জুই একটু নাখোশ নাখোশ করতে লাগলো।সে আসলে বোরকা ছাড়া সবসময় চলাফেরা করে।সবাই তো আর সমান নয়।জুই ও তেমনই ব্যতিক্রম।জুই আমতা আমতা করে বললো;
জুই:-বোরকা পড়ে না গেলে হয় না সৌরভ ভাইয়া।আমি আসলে বোরকা পড়তে কম্ফোর্ট ফিল করি না।বোরকা ছাড়া লং ড্রেস বা গাউন হলে চলবে না?
সৌরভ:-আসলে দেখাে তোমাদেরকে আমি জোর করছি না।তবে একটা কথা কী জানো তো?মেয়েরা হলো মণিমাণিক্যের মতো দামী সম্পদ।এবং মণিমুক্তাদি মানুষ সবসময় লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রাখে।কারণ বলা যায় না কখন কে তা চুরি করে নিয়ে যায়।তেমনি মেয়েদের অন্যতম সুরক্ষা ব্যবস্থা হলো গিয়ে পর্দা।যে মেয়ে যথাযথ পর্দা করে সেই মেয়ে ওই লুকায়িত মণিমুক্তাদির সমতুল্য।সে সব ধরনের কলুষতা থেকে মুক্ত থাকে।ওই মেয়েটির ওপর আল্লাহর রহমত থাকে।আল্লাহ তায়ালা কিন্তু সকল মেয়েদের জন্য পর্দা ফরজ করেছেন।পবিত্র কোরআনে ও হাদিসসমূহে মেয়েদের পর্দার কথা ও পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে।তা পড়লেই তোমরা বুঝতে পারবে।আমি তোমাদের ভালো চাই তাই এই কথাগুলো বলছি।আমি এজ এ বড়ভাই তোমাদেরকে জাস্ট উপদেশ দিচ্ছি।এখন আমার কথা শুনলে তোমরাই লাভবান হবে,আবার না শুনলে তোমাদেরই লস।
জুই এবার বিরস মুখে জবাব দিলো;
জুই:-আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে।আমি রাজি।
সৌরভ:-গুড।তবে আমার ভয়ে নয়।আল্লাহর ভয়ে এই আদেশটা পালন করো।পরকালের ওপর ভয় রাখো।জোর জবরদস্তি নয়।নিজের ভালো নিজেরই বুঝতে হবে।মেয়েদের এত স্টাইলিশ ভাবে বাইরে বের হতে নেই।আমি কী বোঝাতে চাচ্ছি আশা করি তোমরা তা বুঝতে পেরেছো।
সবাই মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।প্রিয়তা মুগ্ধ হয়ে গেছে সৌরভের কথা শুনে।মনে মনে ঠিক করে ফেললো আজকে থেকে সবসময় পর্দা করবে।আর কোনো অবহেলা নয় এ ব্যাপারে।পরকালের শাস্তির বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।পরিপূর্ণ মুসলিমাহ হয়ে বাঁচতে হবে।তবেই না আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে।
আবিরের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে প্রিয়তার।
আবির:-বানিজ্য মেলায় রাতে যেতে খুব মজা লাগে।আমরাও নাহয় রাতে যাই।
সৌরভ সাথে সাথে নাকচ করে দিলো প্রস্তাবটা।
সৌরভ:-নাহ রাতে না।রাতের বেলা মেয়েমানুষ সাথে নিয়ে যাওয়াটা সেফ না।সারাকেও মামা রাতের বেলা বেরোতে দেবেন না তাই আমরা কিছুক্ষণ পর দুপুরের খাবার খেয়েই বেরিয়ে যাবো।এবং শেষ বিকেলের দিকে বা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবো।
সৌরভের কথায় যুক্তি আছে তাই তার কথা সবাই বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নিলো।আবির জুইকে বললো তূর্যকে ফোন করে আসতে বলতে।জুই বসা থেকে ওঠে চলে গেল তূর্যকে কল করতে।
আজকে বয়োজ্যেষ্ঠরা সবাই আত্মীয় স্বজনদেরকে দাওয়াত দিতে গিয়েছেন তাই বাসায় প্রায় কেউ নেই।মিসেস মিনা ও মিসেস শিলা পুত্রবধূদেরকে সাথে নিয়ে দরকারী সব জিনিসের লিস্ট করছেন রুমে বসে।মিসেস জেসমিন দূরের আত্মীয় স্বজনদেরকে ফোনকলে দাওয়াত করছেন।সবাই কাজে ব্যস্ত শুধু সৌরভরা বাদে।
দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়েই মিসেস মিনার কাছ থেকে পারমিশন আদায় করে সবাই মেলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।তূর্য দুটো সিএনজি নিয়ে এসেছে আসার সময়।একটা সিএনজিতে সৌরভ,প্রিয়তা ও জুই ওঠে বসলো।অন্য সিএনজিতে তূর্য,ডলি,তানিয়া,পান্না ও আবির বসলো।সবাই ঠিকঠাক মতো বসতেই সিএনজি চালক গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
আজকে প্রত্যেকটা মেয়েই বোরকা পড়েছে।জুই বাদে বাকি সবাই সৌরভের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে পর্দা করেছে।জুই একটু স্টাইলিশ বেশি তাই তার নিজেকে একটু অন্যরকম লাগছে আজ।কেমন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত টাইপের।
🖤
মেলার সামনে থামতেই একটা প্রাইভেট কারের সামনে সারা ও তার বোন জারাকে দেখা গেল।আবির গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সারার দিকে এগিয়ে গেলো।তূর্য সৌরভের দায়িত্বে সব মেয়েদেরকে রেখে সে টিকেট কাটতে চলে গেল।সারা আর জারাকে নিয়ে ওদের কাছে এলো আবির।সারা আর জারা সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।তূর্য টিকিট নিয়ে আসতেই সবাই লাইন ধরে মেলায় ঢুকলো।
প্রিয়তা সৌরভের পাশাপাশি হাঁটছে।মেলায় প্রচুর ভিড়।তানিয়া আর ডলি একসাথে হাঁটছে।জারা আর জুই একসাথে,সারা আবির একসাথে ও পান্না এবং তূর্য একসাথে হাঁটছে।সবাই জোড়ায় জোড়ায় ঘুরছে।প্রিয়তা নিজে যেচেই সৌরভের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাঁটতে লাগলো।সৌরভ একবার হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো কিছু বললো না।আসলে প্রিয়তা অন্য কিছু মিন করে হাত ধরে নি।এতদিন মেলায় আসলে বা কোথাও শপিং করতে গেলে সবসময় বাবা,মা,ভাই,ফুপ্পি অথবা ফ্রেন্ডের হাত ধরে হাঁটতো।আজও অভ্যাসবসত সৌরভের হাত ধরেছে।
প্রিয়তা চুড়ির দোকান দেখে চুড়ি কেনার জন্য পাগল হয়ে গেল।ওর দেখাদেখি বাকি মেয়েরাও চুড়ি নুপুর ওসব মেয়েলি জিনিস চুজ করতে লাগলো।সৌরভ প্রিয়তার পাশেই দাঁড়িয়ে।আবির সারাকে চুড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে হাতে।সবাই সবার পছন্দসই চুড়ি কিনছে।প্রিয়তা কয়েক ডজন চুড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে একা একা কালার চুজ করতে পারছে না।সৌরভ তাকে হেল্প করলো।সৌরভ বেছে বেছে সুন্দর কালারগুলো চুজ করে দিলো তাকে।
প্রিয়তা অনেক গুলো চুড়ি কিনলো।ভেলভেট চুড়ি একবক্স,রেশমি চুড়ি ৬ ডজন,কাঠের চুড়ি ৪ টা,রেসিনের চুড়ি ২ টা মেটাল চুড়ি ২ ডজন।সাথে ২ জোড়া নুপুর নিলো।২ জোড়া কানের দুল কিনলো।এগুলো কেনার পর প্রিয়তা পার্স থেকে টাকা বের করতে নিলে সৌরভ আটকে ফেললো তাকে।প্রিয়তা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখতে পেল সৌরভ নিজের মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দোকানির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।প্রিয়তা হা হয়ে গেছে সৌরভের এমন কর্মে।হায় হায় করে বলে উঠে;
প্রিয়তা:-ভাইয়া এটা কী করলেন আপনি?আমার কাছে তো টাকা ছিলো।আপনি কেন দিতে গেলেন?
সৌরভ জবাব না দিয়ে ডলি ও তানিয়ার চুড়ি কেনার টাকাও দিলো।বাকি মেয়েরার জিনিস কেনার টাকা আবির আর তূর্য দিয়েছে।সৌরভ প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে জবাব দিলো;
সৌরভ:-সৌজন্যতার খাতিরে দিই নি।তানিয়া আর ডলির মতো তুমিও আমার কাছে ইমপোর্টেন্ট।মনে আছে,ছোটবেলায় তুমি আমার কাছে এসে বায়না ধরতে তোমাকে এটাসেটা কিনে দেয়ার জন্য।আমাদের বাসায় এলে তো আমার কোল থেকে আর নামতে চাইতে না।এতটাই পছন্দ করতে আমায়।তখন যদি কতকিছু কিনে দিতে পেরেছি তবে আজ কেন পারবো না।আর তুমিই বা এত কেন সংকোচ বোধ করছো?বি নরমাল ওকে!জানো তো,,কেউ ভালোবেসে কিছু দিতে চাইলে তা গ্রহণ করতে হয়!
সৌরভের মিষ্টিস্বরে বলা কথা গুলো শুনে প্রিয়তা পুরো গলে গেল যেন।সৌরভের দিকে তাকিয়ে ঝলমলে হাসি উপহার দিলো সে।সৌরভ প্রিয়তার প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে একহাতে প্রিয়তার হাত ধরে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো।সবাই বিষয়টা স্বাভাবিকই নিয়েছে।কারণ প্রিয়তা সবার চেয়ে ছোট এবং আদরের একজন সদস্য।সবাই যে তাকে বেশি প্রায়োরিটি দেয় তা প্রত্যেকেই জানে।
এভাবেই সারা মেলা চষে বেড়ালো ওরা।সাথে যার যা পছন্দ হয়েছে তা-ই কিনে নিয়েছে।প্রিয়তা সৌরভকে একটা ঘড়ি আর মানিব্যাগ গিফট করলো নিজের টাকা দিয়ে।সৌরভ তা সাদরে গ্রহণ করলো।বাসার সদস্যদের জন্যও টুকটাক কিছু কেনা হয়েছে।আবির,সৌরভ আর তূর্য মিলে মেয়েদেরকে একটা করে ওয়ানপিস কিনে দিলো।তারপর সবাই একসাথে ফুচকা চটপটি খেলো।দুজন দুজন করে নাগরদোলায় দোললো।সাথে বিভিন্ন এংগেলে ফটো তোলা তো বাধ্যতামূলক আছেই।
প্রচুর হাসি ঠাট্টা ও আনন্দ ফুর্তির মাধ্যমে ফুরুৎ করে দিন কেটে গিয়ে সন্ধা হয়ে তারপর রাত নেমে এলো ধরনীর বুকে।অতঃপর সবাই রওয়ানা দেয় বাসার উদ্দেশ্যে।আবির সারা আর জারাকে পৌঁছে দিতে তাদের সাথে গেল।প্রিয়তা সারাটাদিন সৌরভের হাতে হাত রেখে হেঁটেছে।সৌরভের সাথে সে একদম ফ্রি হয়ে গেছে।দুজন দুজনকে বেশ ভালো করেই চিনেছে আজ।একজন আরেকজনের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে অবগত হয়েছে।
আজ তাদের মধ্যে প্রচুর আলাপ হয়েছে।কথায় কথায় সৌরভের কেমন মেয়ে পছন্দ তা জেনেছে প্রিয়তা।তন্মধ্যে বেশ কয়েকটা গুণ তার মধ্যে নিহিত।চাইলে বাকিগুলোও নিজের আয়ত্ত্বে করে নিতে পারবে প্রিয়তা।সৌরভও প্রিয়তার গুণগুলো জেনে নিয়েছে গল্পের ছলে।সৌরভের মনে এই ছিলো যে সে প্রিয়তাকে একটু ভালো করে বাজিয়ে দেখবে।তার মনমতো হতে পারার গুণ প্রিয়তার মধ্যে আছে তা সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে।মনে মনে কিছু প্ল্যান করে নিলো সৌরভ।
চলবে…