তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-০৪

0
1731

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৪

প্রিয়তাকে আরচোখে একবার লক্ষ্য করে সৌরভ তানিয়াকে বললো;

সৌরভ:-আমি কাজে বাহিরে যাচ্ছি।আসার সময় তোমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসবো কীনা সেটাই জানতে এসেছিলাম।

তানিয়া:-উম,আমার জন্য রেস্টুরেন্ট থেকে নাচোস আর ফালুদা নিয়ে এসো ভাইয়া।তাহলেই হবে।

সৌরভ:-আচ্ছা।আর প্রিয়,তোমার জন্য কী আনবো?

সৌরভের মিষ্টি কন্ঠে প্রিয় ডাক শুনে প্রিয়তার শরীরের লোম খাঁড়া হয়ে গেছে।এত সুন্দর ভাবে কেউ নাম ধরে ডাকতে পারে তা কল্পনাতীত ছিলো তার কাছে।মনে এক অন্যরকম শিহরণ বয়ে গেল যেন প্রিয়তার শরীর জুড়ে।আজ মনে হচ্ছে তার এই নামটা ভীষণ সুন্দর।নইলে এত আদুরে ডাকটা কখনো শুনতে পারতো না সে।প্রিয়তা কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে নিচু স্বরে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-নাহ ভাইয়া আমার কিছু লাগবে না।

সৌরভ প্রিয়তাকে অভয় দিলেও প্রিয়তা লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলো না।সৌরভও আর তাকে বিব্রত না করে চলে গেল।

সৌরভ চলে যেতেই প্রিয়তা যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো।ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো সে।এই শীতের সময়ই সে ঘেমে গেছে একদম।সৌরভকে দেখলে মনে অজানা এক অনুভূতি জেঁকে ধরে যেন।যেটা আগে কখনো হয় নি।এ অনুভূতির নাম কী জানা নেই প্রিয়তার।

প্রিয়তার পাশে তানিয়া বসে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল;

তানিয়া:-তোর হয়েছেটা কী রে?হঠাৎ এরকম আজব আচরণ করছিস কেন?

প্রিয়তা সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে পানির বোতল নিয়ে ছিপি খুলে ঢকঢক করে কয়েক ঢোক পানি পান করলো।তারপর শান্ত হয়ে বসে বললো;

প্রিয়তা:-আমি জানি না আপু।

তানিয়া:-তুই জানিসটাই বা কী?তুই তো এক চিজ,দুনিয়াতে একপিসই আছিস!তোর কখন কী হয় তা বলা দুষ্কর।

প্রিয়তা নিজেকে সামলে নিয়ে আগের রূপে ফিরে এলো।তারপর তানিয়ার টেবিলের ওপর রাখা চকোলেট গুলো ঝাপটা মেরে নিয়ে ভোঁ দৌড় দিলো।তানিয়া হতবিহ্বল হয়ে তাকালো প্রিয়তার দৌড় দেয়ার পানে।যখন বুঝতে পারলো যে তার চকোলেট সব গায়েব তখনই চিৎকার করে বলে ওঠলো সে;

তানিয়া:-প্রিয়ুর বাচ্চাআআআ,আমার চকোলেট দিয়ে দে,আজকে তোকে একবার ধরতে পারলে কিলিয়ে ভর্তা করবো আমি।

প্রিয়তাকে আর পায় কে!সে তো এই মুহুর্তে এই এরিয়া থেকেই ভেগে গেছে।তার টিকিটির নাগাল পাওয়াও বর্তমানে দুষ্কর।

প্রিয়তা উঠোনের দোলনায় বসে বসে আরামসে চকোলেট খাচ্ছে।সৌরভ তাকে যে চকোলেটের বক্স দিয়েছে সেটা সে লুকিয়ে রেখেছে পরে খাবে বলে।এমনসময় সামনের বাসার দুতলার বারান্দা থেকে একটা ইয়াং ছেলে প্রিয়তার উদ্দেশ্যে সিটি বাজাতে শুরু করলো।প্রিয়তা ভ্রু কুচকে সামনে তাকাতেই হ্যাংলা মার্কা ছেলেটাকে দেখতে পেল।প্রিয়তা তাকাতেই ছেলেটা দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠে।প্রিয়তার কুঁচকানো ভ্রু আরও কুঁচকে যায়।ছেলেটা হাই দিলো এবার।প্রিয়তা জোরে বলে উঠলো;

প্রিয়তা:-ওহে বালক,বানরের মতো এভাবে দাঁত কেলিয়ে কাকে ইমপ্রেস করার ট্রাই করছো?

প্রিয়তার কথা শুনে ছেলেটার মুখের হাসি মুছে গেল।সে ভাবে নি প্রিয়তা তাকে এমন কিছু বলবে!তারপরও ছেলেটা মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে ইশারা করে কানে হাত ঠেকিয়ে ফোন নাম্বার চাওয়ার অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করলো।প্রিয়তা সব বুঝেও না বোঝার ভান করে জোরে জোরে বলে উঠে;

প্রিয়তা:-ওহহো,তুমি কানে কালা,অর্থাৎ বয়রা,কিছু শুনো না?আহারে,বেচারা!সো সেড!~জিহ্বা দিয়ে চুকচুক আওয়াজ করে~

প্রিয়তার বলা এমন কথা শুনে এবার ছেলেটা মারাত্মক লজ্জা পেল।ছেলেটার পাশে আরও একটা ছেলে এসে দাঁড়িয়েছে এবার।অপর ছেলেটা ওই হাবার ইশারা আর প্রিয়তার বলা কথা দুটোই প্রত্যক্ষ করলো।সে এসব দেখে হাসতে হাসতে ফ্লোরে পড়ে গেছে।ছেলেটা জোরে কথাও বলতে পারছে না পাছে যদি তার মা শুনে ফেলে এজন্য।সে এবার প্রিয়তাকে ফোন নাম্বার চাওয়ার জন্য দুই আঙ্গুল দিয়ে কান দেখিয়ে ইশারায় হাতে লেখার অঙ্গভঙ্গি করলো।প্রিয়তা এবারও বুঝতে পারলো কিন্তু না বোঝার ভান করে ছেলেটাকে হেনস্তা করার জন্য বললো;

প্রিয়তা:-কী?তুমি ডাক্তারের কাছে যাবে কানের ডাক্তার দেখাতে!টাকা নেই?আচ্ছা ঠিক আছে।আমি ফুফাকে বলে দেবো তোমাকে টাকা দেয়ার কথা,আমি আবার দান খয়রাত করতে পছন্দ করি।ধন্যবাদ দিতে হবে না।আমি এমনিতেই টাকা দান করবো।

ছেলেটা এবার হতাশ হয়ে চেয়ারে বসে পড়লো মাথায় হাত দিয়ে।অন্য ছেলেটা ওকে হেনস্তা হতে দেখে হাসতে হাসতে পেশাব করে দেয়ার মতো অবস্থা।ওরা দুজনেই বেশ বুঝতে পারলো যে মেয়েটি ফাজিলের একসের।কথায় কথায় কীভাবে বেইজ্জতি করে ধুয়ে দিলো বেচারাকে।

প্রিয়তা নিজেই হাসতে হাসতে বাসার ভেতরে চলে গেল।এই ছেলেটা সে আসার পর থেকে খালি তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসে,বেহায়ার ন্যায় চেয়ে থাকে।তাই আজকে সুযোগ বুঝে একবারে টাইট দিয়ে দিলো।শরম থাকলে আর কখনো বান্দরের মতো দাঁত কেলাবে না।

সৌরভ ও আবির প্রায় দুপুর ও বিকেলের মধ্যভাগে বাসায় এলো।সৌরভ নতুন বাইক কিনেছে একটা।আর ওয়ান ফাইভ।ফুল ব্ল্যাক কালারের।ভীষণ সুন্দর দেখতে।ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনও করে এসেছে।বাসায় ঢুকে সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলো সে।একটু টায়ার্ড লাগছে তার।মিসেস মিনা আমের জুস দুই গ্লাস একটা ট্রে তে করে নিয়ে এলেন।আবির বাইকটা গ্যারেজে রেখে অতঃপর বাসায় ঢুকে সৌরভের পাশে এসে বসলো।ট্রে থেকে দুই ভাই দুই গ্লাস নিয়ে জুস খেতে লাগে।মিসেস মিনা জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস মিনা:-বাবা,দুপুরের খাবার খেয়েছিস তোরা?

সৌরভ গ্লাসের জুস টুকু শেষ করে জবাব দিলো;

সৌরভ:-না আম্মু।কাজটাজ সব সেড়ে সোজা বাসায় এসেছি।রেস্টুরেন্টে আবির গিয়ে ডলি ও তানিয়ার জন্য নাচোস,বার্গার আর ফালুদা নিয়ে এসেছে।আর প্রিয়র জন্য কয়েক প্যাকেট আচার।আমি তোমার হাতের রান্না খাবো বলে ইচ্ছে করেই বাইরে খাইনি।

মিসেস মিনা:-আহারে,তাহলে যা বাবা গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আয়।আমি তোদের জন্য খাবার বাড়ি।

আবির:-ওকে চাচি,তুমি সব রেডি করো।আমরা আসছি।তানিয়া আর ডলির জন্য আনা খাবার গুলো আমি দিয়ে আসি।আর তুই প্রিয়তার আচারগুলো দিয়ে আয়।

সৌরভ মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিয়ে বললো;

সৌরভ:-ওকে।

এই বলে দুই ভাই ওঠে দাঁড়ালো বসা থেকে।ডাইনিং পেরিয়ে তারপর রুমে যেতে হয়।সৌরভ ডাইনিং রুমে ঢুকেই দেখতে পেল একটা মেয়ে পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানি পান করছে।মেয়েটা আর কেউ নয় প্রিয়তাই এবং সৌরভ তাকে চিনতে পারলো।

প্রিয়তা সদ্য গোসল করে নিচে এসেছে।তাই চুল ছেড়ে রাখা।সৌরভের চলার গতি শ্লথ হওয়ায় পেছন থেকে আবির আগে আগে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেল।মিসেস মিনাও রান্নাঘরে চলে গেলেন।নিচে আপাতত এই তিনজন ছাড়া আর কেউ নেই।সৌরভ প্রিয়তার লম্বা চুল কয়েক মুহূর্ত মুগ্ধ হয়ে দেখে তারপর সম্বিৎ ফিরে পেতেই নিজের দৃষ্টি সংযত করে নিলো।গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের উপস্থিতির জানান দিলো যেন।প্রিয়তা চমকে পিছন ফিরে তাকালো।সৌরভকে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে মাথায় ওড়না দিলো সে।সৌরভ মৃদু হেসে বললো;

সৌরভ:-দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নেই।আমাদের মহানবী (সাঃ) দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।তাই সবসময় একটা জায়গায় বসে পানি পান করা উচিৎ।

সৌরভের কথা শুনে প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে গেল।আসলে এই হাদিস সেও জানে কিন্তু পালন করতে মনে থাকে না তার।পানির তৃষ্ণা পেলে দাঁড়িয়েই খেয়ে নেয়,খাওয়ার পর তার মনে পড়ে যে এই কাজটা করা ঠিক নয়।

সৌরভের কথার প্রতিত্তোরে প্রিয়তা আমতা আমতা করে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-ইয়ে,মানে,আসলে আমার এই কথাটা কেন জানি মনে থাকে না।

সৌরভ একটু এগিয়ে এসে বললো;

সৌরভ:-মনে রাখতে হবে।এত মনভোলা হলে চলবে না কিন্তু।নবীর সুন্নাত অনুসরণ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ।বুঝতে পেরেছো?

প্রিয়তা:-জী বুঝতে পেরেছি।(নতমুখে)

সৌরভ এবার আরও এগিয়ে এসে একটা মাঝারি আকারের প্যাকেট প্রিয়তার সামনে রাখে।প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকালে সৌরভ সহাস্যে জবাব দেয়;

সৌরভ:-কয়েক রকমের আচার নিয়েছিলাম তোমার জন্য।আমি তো জানি না তুমি কোন আচার গুলো খাও তাই আবির যেগুলো বললো সেগুলো নিয়ে এসেছি।

আচার পেয়ে প্রিয়তা যারপরনাই বিস্মিত ও আনন্দিত হয়েছে।আনন্দের ঠেলায় মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না তার।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোনোমতে উচ্চারণ করলো সে;

প্রিয়তা:-থ্যাংকিউ ভাইয়া,থ্যাংকিউ সো মাচ।

এই বলে প্রিয়তা একদৌড়ে তানিয়ার রুমে চলে গেল।সৌরভ হা হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার যাওয়ার পানে।তারপর আনমনে হেসে উঠলো।মেয়েটা আসলেই বাচ্চা গোছের।

প্রিয়তা আচার দেখলেই খাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যায়।একবার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল সে।সেখানে এক প্রেগন্যান্ট মহিলা ছিল।তো মহিলাটির জন্য অনেক আচার বানিয়ে ও কিনে রাখা হয়েছিলো।কিন্তু প্রিয়তা সেখানে বেড়াতে গিয়ে আচার দেখতে পেয়ে তার আর হুশ ছিলো না।মাত্র দুই দিন থেকে তাদের অর্ধেক আচার সাবাড় করে বাসায় এসেছে সে।বেশি আচার খায় দেখে মায়ের বকুনি,ভাইয়ের হাতে কেলানিও অনেক খেতে হয়েছে।কিন্তু তাও আচার খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে পারে নি আজতক।আর না কখনো ছাড়তে পারবে।এই তো এখন যে আচার গুলো পেয়েছে সেগুলো কালকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।ডেঞ্জারাস আচারখোর।

সন্ধ্যার একটু আগে সৌরভদের ফুপ্পি ওনার ফ্যামিলি সমেত এসে হাজির।সারা ড্রয়িং রুম জুড়ে মেহমানরা গিজগিজ করছে।মিসেস মিনা,মিসেস শিলা ওনাদের পুত্রবধূদের নিয়ে সমানতালে খাতিরযত্নে ব্যস্ত।

সবার মধ্যমণি হয়ে বসে আছে সৌরভ।সৌরভের ফুপ্পি মিসেস জেসমিন সৌরভের পাশ থেকে ওঠছেনই না।সৌরভকে ওনি অনেক আদর করেন সকল ভাতিজা ভাতিজিদের মধ্যে।সৌরভও হাসিমুখে তাদের সাথে আলাপ করছে।প্রিয়তা দূর থেকে শুধু সৌরভকেই লক্ষ্য করছে।একদম আড়ালে থেকে।কেন জানি এই ছেলেটাকে প্রচুর ভালো লেগে গেছে তার।দেখতে যেমন কিউট,আচার আচরণও তেমন কিউট।

প্রিয়তার সব থেকে বেশি ভালো লাগছে এটা দেখে যে সৌরভ তার ফুপাতো বোন জুইকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছে না।জুই বারবার এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে,অকারণে ইমপ্রেস করার জন্য হাসছে,কালার করা চুলগুলো অকারণে নাড়ছে।এসব মোটেও দেখছে না সৌরভ।সে তারমতো ফুপাতো ভাইয়ের সাথে কী একটা প্রসঙ্গে কথা বলছে।সৌরভের কাছ থেকে তেমন একটা পাত্তা না পেয়ে জুই একটু হতাশ হলো।

আজকে থেকে বিয়ে ও ওয়ালিমা পর্যন্ত ওনারা সবাই এখানেই থাকবেন।একদম আটঘাট বেঁধে এসেছে সবাই।কালকে কনে পক্ষের বাড়িতে সবাই যাবে দাওয়াত খেতে।দাওয়াতটা মূলত সৌরভ দেশে আসার উপলক্ষেই।আবিরের সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সে মূলত মিসেস মিনার মামাতো ভাইয়ের মেয়ে।সেই সূত্রে ওরা সৌরভের অতি পরিচিত।

সারারাত কাজিন সমাবেশের মধ্যে চললো সমানতালে আড্ডা ফুর্তি।প্রিয়তাও ছিল তাদের সাথে।প্রিয়তা সাধারণ হলেও একটু আধুনিক টাইপের মেয়ে।যেমন মাথায় তেমন ওড়না থাকে না।বোরকা হিজাব মাঝেমধ্যে পড়ে,কিন্তু সবসময় পড়ে না।এরকম টাইপ।কিন্তু সৌরভকে দেখার পর থেকে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনার চেষ্টায় ব্যস্ত সে।যেমন সবসময় মাথায় কাপড় রাখার চেষ্টা করছে অনবরত।কিন্তু ভুল হয়ে যায় মাঝেমধ্যে।এখন আড্ডার মধ্যেও ওর মাথায় কাপড় আছে।শুধু সে না,ডলি আর তানিয়াও ভদ্র মেয়ের মতো মাথা ঢেকে রেখেছে ওড়না দ্বারা।

সৌরভের ফুপাতো ভাই তুর্য সৌরভেরই সমবয়সী প্রায়।একবছরের ছোট।সে সৌরভকে জিজ্ঞেস করল;

তুর্য:-কী রে ভাই!বিদেশ গিয়ে তো পুরাই চেঞ্জ হয়ে গেছিস?তোর গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি রে?

সৌরভ আরচোখে একবার প্রিয়তাকে দেখে নিয়ে সহাস্য বদনে জবাব দিলো;

সৌরভ:-গার্লফ্রেন্ড নেই আমার।আমি ওসব হারাম রিলেশন পছন্দ করি না।তবে একজনকে বেশ পছন্দ হয়েছে।তাকে পুরোপুরি ভাবে টেস্ট করে যদি দেখি আমার মনমতো সে তবে বিয়ে কনফার্ম।এবং এই মাসেই বিয়ে হবে।

সৌরভের কথা শুনে সবার চক্ষু চড়কগাছ।কেউ কল্পনাও করে নি যে সৌরভের কোনো পছন্দ থাকতে পারে।জুইয়ের চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এই কথা শুনে।প্রিয়তারও হালকা একটু মন খারাপ হয়েছে।তবে অত সিরিয়াস নয় সে।ভালো লাগা আর ভালোবাসায় আকাশ পাতাল তফাৎ।

আবির:-আরে বাহ,তলে তলে এতদূর আর আমরা কিছু জানিই না।কে সেই ভাগ্যবতী মেয়ে?যার ভাগ্যে আমাদের পরিবারের আদর্শ ছেলেটা লেখা আছে?

সৌরভ:-সময় হোক,আমি নিজেই সবাইকে জানাবো।

এই প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে সবাই এবার অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল।বিয়েতে কী কেনাকাটা করবে,কোন মার্কেটে কাপড় ভালো হবে,বিয়ের তথ্য কী কী কিনতে হবে সেসব নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা চললো।অতঃপর সাড়ে এগারোটায় রাতের খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে।আকিলের রুমে তুর্য,ডলির রুমে জুই ও জুইয়ের ছোটবোন পান্না এবং নিচের একটা গেস্টরুমে ওদের মা-বাবা থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সৌরভ আজকেও প্রিয়তার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়েছে।এবং প্রিয়তাও আজকে সৌরভের কথা চিন্তা করেছে ঘুমানোর পূর্বে।দুই প্রান্তে দুইজন মানুষ একে অপরের কথা মনে করে করে রাতটা পার করতে ব্যস্ত।অথচ কেউ জানে না কারও মনের খবর

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে