#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৩
প্রিয়তার কথা শুনে আকিল আবারও জিহ্বা দিয়ে চুকচুক শব্দে ব্যঙ্গ করে বলে উঠে;
আকিল:-আহারে,এতো ভুতের মুখে রাম নাম।সৌরভ ভাইয়ার ভয়ে কেঁচো হয়ে গেছে বেচারি প্রিয়ু।
আকিলের কথা প্রিয়তা গায়েই মাখলো না।বরং শয়তানী হাসি হেসে রসিয়ে রসিয়ে আকিলকে ব্ল্যাকমেইল করতে লাগলো সে;
প্রিয়তা:-ফুফা জানো তোমার ছেলে কী করেছে?কী রে বলদ,বলে দেই বাকিটুকু?
আতঙ্কিত দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকালো আকিল।শয়তান মেয়েটা যদি এখন তার সব গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয় তার বাবার কাছে তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।কেলো হয়ে যাবে তবে।এদিকে মি.সালাম কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন;
মি.সালাম:-বলো মামণি,কী করেছে আমার ছেলে?
প্রিয়তা কিছু বলার পূর্বে আকিল তড়িঘড়ি করে বলে উঠে;
আকিল:-কিচ্ছু হয় নি আব্বু।কিচ্ছু করি নি আমি।ও হুদাই এসব বলছে,আমাকে বকা খাওয়ানোর জন্য।প্রিয়ুর বাচ্চা,তোকে কাল ক্যাটবেরি চকোলেট এনে দিই নি আমি হে?~রেগে গিয়ে~
প্রিয়তাও পাল্টা তেজ দেখিয়ে বললো;
প্রিয়তা:-বিশ টাকা দামের মাত্র কয়েক ২টা চকোলেট দিয়ে খোঁটা দিচ্ছিস তাই না?তোকে বলেছিলাম আমার জন্য তেঁতুলের আচার আনতে।এনেছিলি তুই?
আকিল:-বললাম না খুঁজে পাই নি।এজন্য আনি নি।আচ্ছা যা কালকে নিয়ে আসবো।
প্রিয়তা:-আগে প্রমিজ কর।
আকিল:-ওকে প্রমিজ।
প্রিয়তা:-ঠিক আছে যা,এবারের মতো মাফ করে দিলাম।আশা করি আরেকবার আমার সাথে লাগতে আসলে দশবার চিন্তা করবি।হ্যা ফুফা যা বলছিলাম,আমাদের আকিল অনেক ভালো একটা ছেলে,সে কিছুই করে নি আমি এমনিতেই এসব বলছিলাম।
ওদের দুজনের খুনসুটি দেখে হেসে উঠলো সবাই।আকিল বেচারা মুখ গোমড়া করে বসে আছে।একটুর জন্য তার গার্লফ্রেন্ডের খবর লিক করে নি প্রিয়তা।নয়তো সে যেই পাঁজি ও বিপজ্জনক মেয়ে,সারা এলাকার লোকজনকে বলে বেড়াতো যে আকিলের গার্লফ্রেন্ড আছে।
এদিকে সৌরভ বারবার আরচোখে প্রিয়তাকে লক্ষ্য করছে।সে তাকাতে চাইছে না তারপরও বেহায়া চোখ দুটো শুধু ওদিকেই যাচ্ছে।সৌরভ নিজের মনকে বারবার বুঝ দিচ্ছে যে এভাবে বেগানা কোনো মেয়ের চেহারা দেখাটাও পাপ।এটা ঠিক নয়।তাও মনটা যে কেন কথা শুনছে না জানে না সৌরভ।সে এর আগে কখনো কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকায় নি।এই চব্বিশ বছর জীবনে কোনো মেয়েকেই তার প্রিয়তার মতো এত ভালো লাগে নি।প্রিয়তা তো আহামরি সুন্দরী নয় তারপরও মনে হচ্ছে প্রিয়তার থেকে সুন্দরী কোনো মেয়ে যেন সে এর আগে কখনো দেখে নি।মনের মধ্যে একটা গান বাজছে শুধু তার।
“মায়াবি চোখে
চোখে চোখে চোখ পড়েছে।”
উফফ,অসহ্য অনুভূতি।
মিসেস মিনার কথা শুনে সৌরভ বাস্তবে ফিরে এলো।সৌরভকে লক্ষ্য করে তিনি জিজ্ঞেস করলেন;
মিসেস মিনা:-তা বাবা,লিপির ছবি তো দেখলি।কেমন লাগলো মেয়েটাকে?তোর কী ওকে পছন্দ হয়েছে বাবা?
সৌরভ প্রিয়তার দিকে একপলক তাকিয়ে মিসেস মিনাকে সোজাসাপটা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে দিলো;
সৌরভ:-না আম্মু,আমার পছন্দ হয় নি।
মিসেস মিনার চেহারা ফ্যাঁকাশে হয়ে গেল সৌরভের নাকোচ করা দেখে।মেয়েটাকে ওনার কাছে ভালো লেগেছিলো।মি.সালাম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন;
মি.সালাম:-সেকি রে!এত সুন্দর মেয়েকে তোর পছন্দ হয়নি?মেয়েটা দেখতে শুনতে তো বেশ ভালোই।
সৌরভ শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো;
সৌরভ:-তারপরও চাচ্চু।আমার মোটেও পছন্দ হয় নি।এত আল্ট্রা মডার্ন মেয়ে আমার কোনোকালেই পছন্দ না।এমন হলে আমি কানাডা থেকেই মেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসতাম।
হৃদয়:-আচ্ছা ঠিক আছে।তোর পছন্দ যখন হয় নি তাহলে অন্য কোনো মেয়ে দেখা যাক।মেয়েদের তো আর আকাল পড়ে নি দুনিয়ায়।
মি.শফিক:-ঠিকই বলেছো।আমার ছেলের যখন পছন্দ হয় নি তখন এই টপিক বাদ।আর হ্যা বাবা,তোর কোনো পছন্দ থাকলে দ্বিধা করিস না।ঝটপট বলে দিস।বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তোর আব্বুর।
সৌরভ কিছু বললো না শুধু মৃদু হাসলো।
কিছুক্ষণ পর সৌরভের কথায় আবির আর আকিল একটা একটা করে সবগুলো লাগেজ নিয়ে এলো।এই মুহূর্তটা আসার সাথে সাথে প্রিয়তা উঠে দাঁড়ালো চলে যাওয়ার জন্য।কিন্তু তানিয়া হাতে ধরে আটকে ফেললো তাকে,যেতে দিলো না।জোর করে আবার বসিয়ে দিলো। প্রিয়তা ভাবছে সে যতই তাদের আত্মীয় হোক না কেন,এই মোমেন্টটা একান্তই তাদের পরিবারের।এই মুহূর্তে প্রিয়তা তাদের জন্য বাইরের মানুষ।
প্রিয়তা অস্বস্তি বোধ করছে খুব।কারোদিকে তাকাচ্ছে না সে।ফোন হাতে করে নিয়ে আসায় ভালোই হলো,প্রিয়তা মনযোগ সব মোবাইলের ওপর ঢেলে দিলো।সৌরভ বহুকষ্টে প্রিয়তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে মন দিলো।
ট্যাগ দেখে নিয়ে আবিরের হাতে দুই টা লাগেজ ধরিয়ে দিলো সৌরভ।একটা আবিরের জন্য একটা তার হবু বউ সারার জন্য।আকিলকে একটা,তানিয়া এবং ডলির জন্য বড় একটা,বড়ভাই হৃদয় এবং তার স্ত্রীর জন্য একটা,মেঝোভাই আবিদ ও তার স্ত্রীকে একটা,বাবা মায়ের একটা,চাচা চাচীর একটা ও ভাতিজা ভাতিজি দুজনের জন্য মাঝারি আকারের একটা লাগেজ না খুলেই বিতরণ করলো সৌরভ।দেশে আসার আগে প্রচুর কেনাকাটা করেছে সে।কোনোকিছু কিনতে বাদ যায় নি।এক্সট্রা যে দুইটা লাগেজ ছিলো একমাত্র সেগুলো খুললো সে।
পিচ্চি দুইটার জন্য দুটো আইপ্যাড,আকিল,ডলি ও তানিয়ার জন্য তিনটা আইফোনও এনেছে সৌরভ।তাদেরকে সেগুলো দিলো।গিফট পেয়ে সবাই খুশি।সবাইকে একবক্স করে চকোলেট দিলো সৌরভ।প্রিয়তাও বাদ গেলো না।সবাইকে একটা করে ফেস টাওয়েল,শাওয়ার জেল,সাবান ও শ্যাম্পু একটা করে দেয়া হলো।আত্মীয় স্বজনদের জন্যও এখান থেকে বেশ কিছু জিনিস রাখা হয়েছে।
সবাইকে সবকিছু দেয়া হলেও শুধুমাত্র প্রিয়তাকে একটা চকোলেট বক্স,টাওয়েল,শ্যাম্পু,শাওয়ার জেল ও সাবান ছাড়া আর কিছুই দেয়া হয় নি।তাই সৌরভ বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেল।ফিরে এলো মিনিট দশেক পরই,হাতে একটা শপিং ব্যাগ নিয়ে।সোজা প্রিয়তার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ব্যাগটা তার কোলের উপর রাখলো।প্রিয়তা প্রশ্নবোধক চাহনিতে সৌরভের দিকে তাকালো।সৌরভ প্রাণখোলা চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বললো;
সৌরভ:-এখানে কিছু কাপড় চোপড়,বোরকা,হিজাব ও মেকআপ বক্স এবং জুতা আছে তোমার জন্য।
প্রিয়তা অবাক হলো ভীষণ সৌরভের কাজ দেখে।মনে মনে খুশিও হলো খুব।তার কথা তো এটলিস্ট মনে আছে সৌরভের।ঝলমলে একটা হাসি উপহার দিলো প্রিয়তা সৌরভের দিকে তাকিয়ে।প্রিয়তার হাসির ওপর চোখ আটকে রইলো তার।এতসুন্দর হাসির জন্য যেন জীবনটাও দিয়ে দেয়া যায়।সাংঘাতিক হাসি মেয়েটার।একদম মন কেঁড়ে নেয়ার মতো ক্ষমতা আছে এই হাসিতে।যা গভীর ভাবে দাগ কেটে গেল সৌরভের হৃদয়ে।
প্রিয়তা:-থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।আমার কথা যে আপনার মনে ছিলো এটাই অনেক।
সৌরভ:-মেনশন নট।~মুচকি হেসে~
প্রিয়তার জন্য সৌরভ কিছুই আনে নি কানাডা থেকে।প্রিয়তা নামের যে কেউ ছিলো তা সে ভুলতে বসেছিলো।প্রিয়তা যে এত বড় হয়ে গেছে তাও সে জানতো না।দেখেছে তো সেই পিচ্চিকালে।প্রিয়তাকে দেয়া জিনিসগুলো সব সৌরভের হবু বউয়ের জন্য আনা ছিলো।কিন্তু প্রিয়তার জন্য কিছু আনে নি দেখে সেখান থেকে এগুলো দিয়ে দিলো প্রিয়তাকে।শুধুমাত্র প্রিয়তার হাসিমুখটা দেখবে বলে।কেন এমন করলো তা সে নিজেও জানে না।পুরোপুরি সম্মোহিত হয়ে গেছে সে প্রিয়তার প্রতি।
সবাই খুশি হলো সৌরভের কাজ দেখে।সবাই আবার আড্ডায় মশগুল হয়ে গেল।এবার প্রিয়তা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে।মানুষের সকল কিছুতে খুঁত ধরা প্রিয়তার একটা বাজে অভ্যাস।কিন্তু আজ সৌরভের খুঁত ধরতে সে ব্যর্থ।ছেলেটা যেমন সুদর্শন সুপুরুষ,তেমনি ভালো ও খোলা মনের অধিকারী।পৌরুষদীপ্ত উজ্জ্বল চেহারায় কেমন একটা আলাদা মায়া জড়িয়ে আছে।চোখেমুখে তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার ছাপ স্পষ্ট।তাকে দেখলেই আলাদা একটা শ্রদ্ধা জাগে মনে।দেহের গড়ন বলিষ্ঠ এবং লম্বা চওড়ায় ফিটফাট।চেহারায় সম্ভ্রান্ত ও গাম্ভীর্যতার ভাব।দেখলেই বোঝা যায় যে চ্যাংড়া পোলাপাইন নয়,সত্যিকার অর্থে পুরুষ।কেন জানি প্রিয়তারও ভীষণ ভালো লেগে গেল সৌরভকে একলহমায়।
সবাই মিলে আনন্দ ফুর্তির সহিত রাতের ডিনার সেড়ে নিলো।তারপর আরও কিছুক্ষণ গল্প গুজব শেষে যে যার রুমে চলে গেল ঘুমাতে।
প্রিয়তার শরীর অনেক দুর্বল হয়ে আছে।তাই সে বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে গেল।শুধু ঘুমাতে পারলো না সৌরভ।প্রিয়তার হাসি,তার কাজল মাখা চোখ জোড়া সৌরভের রাতের ঘুম হারাম করে নিয়েছে।বারবার প্রিয়তার হাসিখুশি চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠছে তার।ওই কাজল রাঙা চোখ দুটি কী যে জাদু করেছে সৌরভকে তা সে বুঝতে পারছে না।
সৌরভ বিয়ে বহির্ভূত প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী নয়।সে বিয়ের পরবর্তী প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করে।সে হয়তো পুরোপুরি রূপে একজন খাঁটি ইমানদার হয়ে ওঠে নি তারপরও ইসলামের সব আদেশ নিষেধ মানার চেষ্টা করে।তেমনি সে বুঝতে পারে যে বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা হারাম কাজ।এসব করা ঠিক নয়।তাই তো প্রেম করা হয়ে ওঠে নি এত বছরেও।তার ইচ্ছা যাকে ভালো লাগবে তাকেই ডিরেক্ট বিয়ে করে নিবে।এখন ভালো তো একজনকেই লেগেছে।তবে কী তাকেই বিয়ে করে নিবে?
এত দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সৌরভ।মাথা ধরেছে তার।সারাদিনের ক্লান্তি এখন জেঁকে ধরেছে তাকে।তাই ফোনে ফজরের ওয়াক্তের জন্য এলার্ম সেট করে ঘুমিয়ে গেল সে।প্রিয়তাকে নিয়ে রাতে স্বপ্নও দেখলো সে।সে এক মধুর স্বপ্ন।যা শুধু স্বপ্নতেই সুন্দর।
প্রায় সাড়ে চারটায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙলো সৌরভের।চারিদিকে ফজরের আযানের মধুর ধ্বনি ভেসে আসছে।সৌরভ ঘুম থেকে ওঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে এসে নামাজ আদায় করে নিলো।তারপর আবারও বিছানায় গিয়ে ঠাস করে ঘুমিয়ে পড়লো।ঘুমের রেশ পুরোপুরি কাটে নি তার।
সৌরভ অনেক ভালো একটা ছেলে।তার মধ্যে অনেক ভালো গুণ নিহিত।সে অনেক সুন্দর কোরআন তেলাওয়াত করতে পারে।ছোটবেলার সেই ভালো অভ্যাসগুলো এখনও রয়ে গেছে তার মধ্যে।কানাডায় গিয়েও নামাজ কালাম ছাড়ে নি।মদ খাওয়া ও পার্টি থেকে নিজেকে দূরে রাখতো সবসময়।সেখানে দুয়েকজন ইসলামিক স্কলারের সাথে তার অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো।মাঝেমধ্যে সেখানকার মসজিদে শখের বশে ও ইমামের অনুপস্থিতিতে নিজেও ইমামতি করেছে।অনেক ভালো ভালো রেকর্ড আছে তার।আজ পর্যন্ত একটাও খারাপ বা বাজে স্বভাবের ধারেকাছেও যেতে দেখে নি কেউ তাকে।সে ছোটবেলা থেকেই ও এরকম।তাই তো পরিবারের ও আত্মীয় স্বজন সবার মধ্যে তার কদর অনেক বেশি।এলাকায়ও একজন ভালো ও আদর্শ ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলো।আরও অনেক গুণ রয়েছে তার মধ্যে তা আস্তে আস্তে প্রকাশ পাবে।
প্রায় সকাল সাড়ে দশটায় সৌরভের ঘুম ভেঙে গেল।শরীরের আড়মোড়া ভেঙে বিছানা ছেড়ে লাগেজ থেকে নতুন কাপড় চোপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে গেল সে।একদম শাওয়ার নিয়ে তবে বেরিয়ে এলো।টাওয়েল দিয়ে চুল ভালো করে মুছে চিরুনি দিয়ে আঁচড়ে চুলে জেল লাগালো সে।হাতে পায়ে লোশন ও মুখে জেন্টস ক্রিম মেখে শরীরে পারফিউম লাগিয়ে জুতা পড়ে হাতে ঘড়ি লাগিয়ে একদম ফিটফাট হয়ে নিচে নেমে এলো সে।
নাশতা করা শেষে সৌরভ আবিরের সাথে বাইরে যাবে বাইক,সিম ও টুকটাক প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কিনতে।
ডাইনিং টেবিলে শুধু আবির,আকিল ও ডলি বসে নাস্তা করছে।মহিলারা রান্নাঘরে ও বাকিরা যে যার কাজে চলে গেছে।তানিয়া আর প্রিয়তা সাতসকালে নাশতা করে লেনে হাঁটতে গিয়েছিলো,এই ঘন্টাখানেক আগে বাসায় এসে নিজেদের রুমে গেছে।
সৌরভ ওদের সাথে বসে খোশগল্প করে করে নাশতা করতে লাগলো।আহ,নিজেদের বাড়ির খাবার এবং মায়ের হাতের রান্নার স্বাদই আলাদা।তৃপ্তিসহকারে খাবার খাচ্ছে সে।আলুর পরোটা ও কষা গরুর মাংস।সাথে আছে আলুভাজি।গরম গরম ধোঁয়া ওঠা দুধ চা।উফফ,,ভীষণ সুস্বাদু।
আজকে বিকেলের দিকে তাদের বাসায় মেহমান আসবে।সৌরভের ছোট ফুফু ও ওনার পরিবারের লোকেরা।সৌরভ দেশে এসেছে বিধায় সেই উপলক্ষেই উনাদের আসা।
সৌরভ নাশতা করা শেষে আবারও নিজের রুমে ফিরে এলো।ফোন নিতে ভুলে গেছে তাই।রুম থেকে ফোন নিয়ে তানিয়ার রুমে গেল সে।তানিয়ার রুমের কাছে আসতেই স্পিকারে গানের সাউন্ড পেল।দরজা হাট করে খোলা।রুমের দরজায় প্রথমে নক করলো সৌরভ।কিন্তু স্পিকারের সাউন্ডের ফলে তানিয়া বা প্রিয়তা দুজনের কেউই শুনলো না।তাই সৌরভ তাদের সারা না পেয়ে রুমে ঢুকে গেল।এমন সময় প্রিয়তা তিড়িং বিড়িং করে গানের তালে তালে লাফাতে লাফাতে পড়বি তো পড় গিয়ে সৌরভের গায়ের ওপর।
সৌরভ যদি এখন না ধরতো তাহলে টেবিলের কোণার সাথে লেগে মাটিতে পড়ে নির্ঘাত কোমড় ভেঙে হাড্ডি দু টুকরো হতো প্রিয়তার।ডান্স এর ড ও চেনে না,হুদাই লাফালাফি করে।ওর এমন ডান্স করা দেখলে লোকে ওকে পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাববে না।তানিয়া তো ওর নাচ দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি করছিলো।কিন্তু এমনসময় সৌরভকে দেখতে পেয়ে তানিয়া জলদি করে স্পিকার বক্স অফ করে দিয়ে বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো।
সৌরভ প্রিয়তাকে আগলে ধরে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তা পড়ে যাচ্ছিলো ভেবে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছে।কয়েক মুহূর্ত পরে যখন বুঝতে পারলো যে সে পড়ে নি,কেউ তাকে ধরে রেখেছে তখন সে ঠাস করে চোখ খুললো।সৌরভের চেহারা নজরে আসতেই প্রিয়তার আত্মরাম খাঁচা ছাড়া হয়ে গেল যেন ভয়ে আর লজ্জায়।এই একটু আগে গায়ের থেকে ওড়না খুলে ঢিল মেরে তানিয়ার ওপর ছুঁড়ে ফেলেছে প্রিয়তা।ওর শরীরে ওড়না নেই কথাটা মাথায় আসতেই ঝট করে সৌরভের হাত থেকে নিজেকে ছুটিয়ে দ্রুত তানিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওড়না নিয়ে নিজেকে ভালো করে আবৃত করে নিলো প্রিয়তা।
সৌরভ এতক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো।যতই মেয়েটাকে ভালো লাগুক না কেন,তাই বলে এভাবে একজন পরনারীর দিকে সে বেহায়ার দৃষ্টিতে তাকাতে পারে না।তাও মেয়েটা ওড়না ছাড়া ছিলো।সৌরভ খুবই ইতস্তত বোধ করছিলো।সে এভাবে ঢুকে পড়ায় যে প্রিয়তা অস্বস্তি বোধ করছে তাও বুঝতে পারলো সে।প্রিয়তার দিকে একপলক তাকিয়ে তানিয়ার দিকে তাকালো সৌরভ।তানিয়া গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল;
তানিয়া:-ইয়ে ভাইয়া কিছু বলতে চাও তুমি?মানে কোনো দরকার?
সৌরভ আমতা আমতা করে জবাব দিলো;
সৌরভ:-একচুয়ালি,,আ’ম সরি!নক করেছিলাম বাট তোমরা কেউ শুনো নি।
তানিয়া:-আরে নাহ ভাইয়া,সরি বলছো কেন?ইট’স ওকে।
প্রিয়তা লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না সৌরভের দিকে।দাঁত দিয়ে নখ কাটতে লাগলো সে লজ্জায় নত হয়ে।
চলবে…