#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০২
তানিয়ার রুমে ট্রে হাতে প্রবেশ করলেন মিসেস শিলা।বিছানায় নিথর হয়ে শুয়ে থাকা মেয়েটির দিকে এগোলেন তিনি।মেয়েটি আর কেউ নয়,ডাইনিং রুমে বহুল আলোচিত ব্যক্তি এবং আকিলের মতে সেই ঝিঁঝিঁ পোকা প্রিয়তা খান।মোমের মতো ফ্যাকাশে হয়ে আছে তার মুখটা।যেন মুখে এক ছটাকও রক্ত নেই।জ্বরের কারণেই মূলত এমনটা হয়েছে।মিসেস শিলা ট্রে টা সেন্টার টেবিলের ওপর রেখে পাশে বসলেন।
প্রিয়তা খুব মায়াময়ী ও চঞ্চলতায় ভরপুর একটি মেয়ে।আহামরি ফর্সা ও সুন্দরী না হলেও ওর মুখের আদলটা ভীষণ মায়াবি এবং গায়ের রঙ হলুদ ফর্সা।নজরকাঁড়ার মতো গড়ন তার।তার চোখ জোড়া হরিণীর মতো টানা টানা না হলেও বড় বড় এবং গোল গোল।মিশমিশে ঘন কালো চোখের পাপড়ি।ভ্রু যোগল জোড় নয় তবে ধনুকের মতো বাঁকানো ও ঘন।পুরু হালকা গোলাপি ও খয়েরি মিশ্রণের ঠোঁট জোড়া মুখের সাথে মানিয়েছে বেশ।ঠিক থুতনি বরাবর কালো একটা তিল যেন ওর সৌন্দর্য্যটা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।চুল গুলো বেশ লম্বা তার।একদম কোমড় ছাড়িয়ে গেছে।ঘন কালো তবে একদম স্ট্রেইট নয়।প্রাকৃতিক ভাবে কিছুটা ঢেউ খেলানো।তাতে তাকে অনেক কিউট লাগে দেখতে।
মিসেস শিলা আস্তে করে প্রিয়তার গালে,মাথায়,কপালে হাত বুলিয়ে আদুরে কন্ঠে ডাকতে লাগলেন;
মিসেস শিলা:-প্রিয়ু,ও প্রিয়ু!মা আমার,ওঠ মা,দুপুরের খাবার খাবি।প্রিয়ু!
হালকা ভাবে নড়ে ওঠে প্রিয়তা।পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায় মিসেস শিলার দিকে।ম্লান হাসি উপহার দিলো ফুপ্পির দিকে তাকিয়ে।ওঠার চেষ্টা করলো সে কিন্তু পারলো না।মিসেস শিলা তাকে ধরে তোলে বসালেন।চুল এলোমেলো হয়ে আছে তার।একদম বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে তাকে দেখে।মিসেস শিলা প্রিয়তার এলোমেলো চুলগুলো প্যাঁচিয়ে নিয়ে হাত খোঁপা বেঁধে দিলেন।কপালে আর গলায় হাত দিয়ে দেখলেন গরম হয়ে আছে।মিসেস শিলা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠেন;
মিসেস শিলা:-কেন তুই এসব অকাজ করে বেড়াস বল দেখি?খালি আমার জন্য টেনশন বাড়াস।কী দরকার ছিলো কালকে বৃষ্টিতে ভেজার?আর এই জ্বর বাঁধানোর হে?তুই কী এখনো বাচ্চা রয়েছিস নাকি যে নিজের ভালোমন্দ বুঝিস না।এখন তোর বাপকে আমি কী জবাব দিবো?এসব শুনলেই তো কাজটাজ সব ফেলে দৌড়ে আসবে।এই কিছুক্ষণ আগে তোর ভাই মুসকান ফোন দিয়েছে।ফোন দিয়েই আগে তোর কথা জানতে চাইলো।কি আর বলবো,,বলেছি তুই তানিয়াদের সাথে লেনে হাঁটতে গিয়েছিস।জ্বরের কথা শুনলে সে তোকে আর আস্ত রাখবে না।তাও তোর কোনো শিক্ষা হয় না।কেন এত দুষ্টামি করিস বল?আর কখন বুঝবি তুই?বয়স তো কম হলো না!
এতক্ষণ ধরে মিসেস শিলার লম্বা বয়ান শুনলো প্রিয়তা।চেহারায় কোনো ভাবান্তর নেই তার।মিসেস শিলার কথা শেষ হওয়ার পর সে বললো;
প্রিয়তা:-এত টেনশন করো না তো ফুপ্পি।জানোই তো আমার জ্বর ওই ভালুকের জ্বরের মতো।এই আসে এই যায়।কালকে জ্বর ওঠেছে তারমানে আজকেই ভ্যানিশ হয়ে যাবে।শুধু একটুখানি দুর্বল লাগছে শরীর এই যা!তাও ঠিক হয়ে যাবে ডিম আর দুধ খেলে।এখন তুমি আমায় খাবার আর ঔষধ খাইয়ে দিয়ে যাবে,খাওয়া শেষে আমি শাওয়ার নিবো।তারপর জম্পেশ একটা ঘুম দিয়ে উঠবো আর সন্ধ্যা পর।ব্যস,জ্বর বাবাজী হাওয়া হয়ে যাবে।এরপর তোমাদের সবাইকে জ্বালাতে চলে আসবে ইট’স মি ইয়োইয়ো প্রিয়ু।ওকে?
জ্বর নিয়েও ফাইজলামি করতে ছাড়লো না প্রিয়তা।মিসেস শিলা হেসে ফেললেন ওর কথা শুনে।ট্রে থেকে ভাতের প্লেটটা নিয়ে তরকারি দিয়ে মাখিয়ে একনলা ভাত প্রিয়তার মুখে পুরে দিয়ে বললেন;
মিসেস শিলা:-তোকে নিয়ে আর পারি না।যাকগে,এখন এইসব খাবার খেয়ে শেষ করবি।মুখটা শুকিয়ে আমসি হয়ে গেছে মেয়েটার একদিনেই।মনে থাকে যেন আজকে যদি জ্বর না সাড়ে,তাহলে তোর একদিন কী আমার যতদিন লাগে!আজকে সবার সাথে ডিনারে উপস্থিত থাকবি।বুঝেছিস?
প্রিয়তা কোৎ করে মুখের খাবার টুকু গিলে নিয়ে বললো;
প্রিয়তা:-খুব বুঝেছি।শুধু ডিনার কেন,সন্ধ্যার নাশতার সময়ও উপস্থিত থাকবো।
একটু থেমে জানতে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো সে;
প্রিয়তা:-আজকে না তোমাদের বাসায় কোন মেহমান আসার কথা?
মিসেস শিলা প্রিয়তার মুখে আরেক নলা ভাত পুরে দিয়ে জবাব দিলেন;
মিসেস শিলা:-মেহমান কাকে বলছিস?ও তো এবাড়িরই ছেলে।তোর বড় আন্টির ছেলে সৌরভ।
মিসেস শিলার কথা শুনে মনে পড়তেই জিভে কামড় দিয়ে বললো সে;
প্রিয়তা:-উপস সরি,মনেই ছিলো না আমার।সৌরভ ভাইয়া, তাই না!আমার তো ভাইয়া ডাকা উচিৎ কী বলো ফুপ্পি?
মিসেস শিলা:-মাঝেমধ্যে অদ্ভুত কথা বলিস তুই।তোর ডলি আর তানিয়া আপ্পির ভাইয়া হয়,তাহলে তোর হবে না আজব?আবিরের সমবয়সী হলো সৌরভ।জানিসই তো!
প্রিয়তা:-হ্যা জানি তো।তারপরও জিজ্ঞেস করে শিওর হয়ে নিলাম।তানু আপ্পি বললো আবির ভাইয়ার বিয়ের পর পরই নাকি ওনি বিয়ে করবেন।শুনেছি দেশে আসার আগে জব কনফার্ম করে এসেছেন।সামনের মাসের একতারিখ থেকে জয়েনিং।এখন শুধু বিয়ে করার বাকি।
মিসেস শিলা:-হ্যা।ভালো মেয়ে পেয়ে গেলে এ মাসেই বিয়ে হয়ে যাবে।একটা মেয়েকে পছন্দ হয়েছে তোর বড় আন্টির।আজকে বোধহয় মেয়েটার ছবি দেখাবেন তিনি সৌরভকে।আমিও দেখেছি মেয়েটার ছবি।সুন্দরী আছে মেয়েটা।নাম লিপি না কী যেন মনে নেই।তোর বড় আঙ্কেলের বন্ধুর মেয়ে হলো সে।এখন দেখা যাক সৌরভের পছন্দ হয় কী না!
প্রিয়তা:-পছন্দ হবে নে।আহ পরপর দুই দুইটা বিয়ে খাবো ভাবতেই আমার খুশিতে লাফাতে ইচ্ছা করছে।উফফ কী যে মজা হবে।খাবো আর ছবি তুলবো।বিয়েতে অনেক সুন্দর করে সাজবো আমি।আমাকে দেখে কেউ চোখ ফেরাতেই পারবে না।
খুশিতে চোখের তারা নেচে উঠে প্রিয়তার।তবে প্রিয়তার খুশিতে পানি ঢেলে মিসেস শিলা বলে উঠেন;
মিসেস শিলা:-এত খুশি হয়ে লাভ নেই।আনন্দ ফুর্তি শুধু আবিরের বিয়েতেই করতে পারবে তাও লিমিট অনুযায়ী।সৌরভের বিয়েতে তো তাও হবে না।সে একদম সাদামাটা ভাবে বিয়ে করবে।এককথায় ঘরোয়াভাবে।যেখানে কোনো গেট ধরাধরি হবে না,জুতা চুরি হবে না,কোনো ফটোগ্রাফার ভাড়া করে আনা হবে না।ফটোগ্রাফার আকিল আর আবির হবে।বাইরের কোনো মানুষ তার বউকে দেখুক তা সে পছন্দ করে না।বউ পর্দানশীল এবং ধার্মিক হতে হবে।এতদিন তোর বোনেরা নায়িকার মতো চলাফেরা করেছে।এখন থেকে দেখে নিস বোরকা ছাড়া ঘর থেকেই বের হবে না।তার কারণ সৌরভ এসব মোটেই পছন্দ করে না।তোকেও সাবধান করছি,ওর সামনে মোটেও বেয়াদবের মতো আচরণ করবি না আর সবসময় মাথায় ওড়না দিয়ে রাখবি।মনে থাকবে?
মিসেস শিলার হুশিয়ার বানী শুনে প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বললো;
প্রিয়তা:-আচ্ছা ফুপ্পি,ঠিক আছে।মনে থাকবে।
প্রিয়তাকে খাওয়ানো শেষ করে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে মিসেস শিলা বসা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে বললেন;
মিসেস শিলা:-এখন আমি যাই রে।তোর ফুফা আমাকে খুঁজবে।তোর কোনো কিছু প্রয়োজন হলে তানিয়াকে বলিস কেমন?আর তুই গোসল করতে পারবি তো মা?যদি তোর মাথা ঘুরে?
মিসেস শিলার উদ্বেগ দেখে প্রিয়তা ওনাকে আশ্বস্ত করে বললো;
প্রিয়তা:-তুমি মোটেও চিন্তা করো না ফুপ্পি।আমার শরীর এখন ঠিক আছে।বেশি সময় লাগবে না গোসল করতে।বড়জোর ১০ মিনিট।গোসল করার পর শরীর আরও ঝরঝরে হয়ে যাবে।তখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবো।
মিসেস শিলা:-তারপরও।তুই কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা মোটেও লক করবি না বলে দিলাম।আমি তানিয়াকে কিছু সময়ের জন্য রুমে পাঠাচ্ছি।তুই গোসল না করা পর্যন্ত রুমে থাকবে সে।তাহলে এখন আমি যাই।ওকে পাঠিয়ে দিই গিয়ে।ততোসময় পর্যন্ত তুই অপেক্ষা কর।
এই বলে মিসেস শিলা এঁটো থালাবাসন গুলো ট্রেতে তুলে রেখে হাতে নিয়ে নিচে চলে গেলেন।প্রিয়তা একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেললো।সে বললেও এখন তিনি কিছুই শুনবেন না।একমাত্র ছোট ভাইয়ের একটামাত্র মেয়ে ওনার আদরের ভাইঝি বলে তাকে তিনি অত্যাধিক ভালোবাসেন।নিজের মেয়ের থেকেও বেশি আদরের ও চোখের মণি সে।ছোট বলে আরও বেশি ভালোবাসে সবাই।সবার আদরে আদরে একদম বাঁদর হয়ে গেছে সে।
মিনিট পাঁচেক পর তানিয়া রুমে এলে প্রিয়তা ওয়াশরুমে গেল শাওয়ার নিতে।প্রায় ১০ মিনিট পর গোসল সেড়ে রুমে এলো সে।চুল টুল ঝেড়ে মুছে তানিয়ার সাথে কিছু টুকটাক কথা বলে বিছানায় শুয়ে পড়লো।তারপর তানিয়া চলে গেলে সেও ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল।
✨
খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুসময় গল্প গুজব করে সৌরভ নিজের রুমে চলে এলো রেস্ট নিতে।রুমে এসে দেখলো বাংলাদেশে আসার আগে কার্গো করে পাঠানো দশটা লাগেজ রুমের এককোণে সিরিয়ালি রাখা হয়েছে।কানাডা থেকে আসার সময় সাথে করে আরও ১২ টা ছোটবড় অনেকগুলো লাগেজ নিয়ে এসেছে সে।কার্গো করে যেগুলো পাঠিয়েছে সেগুলো একান্তই তার।এই লাগেজগুলোতে আছে তার হবু বউয়ের যাবতীয় সব জিনিস।বিয়ের লেহেঙ্গা,শাড়ি,থ্রি পিস,জুতা,অর্নামেন্টস,মেকআপ,আর মেয়েদের প্রয়োজনীয় সব জিনিসে ঠাঁসা ৮ টা লাগেজ।আর বাকি ২ টায় নিজের জন্য কাপড় চোপড়।সাথে করে যেগুলো নিয়ে এসেছে সেগুলো পরিবারের সবার জন্য।
সৌরভের রুমটা পুরোপুরি আধুনিক স্টাইলের।বিশাল বড় রাউন্ড বেড তার দুপাশে ২ টা সেন্টার টেবিল রাখা।একটা স্টাইলিশ ড্রেসিং টেবিল ও তার সামনে একটি টুল।দুইটা বিশাল বড় আলমারি,একটা ওয়্যারড্রোব,বসে পড়ার জন্য একটা টেবিল দুটো চেয়ার,বই রাখার একটা ছোটখাটো শৌখিন বুকশেলফ,শো-পিস ও ফুলদানি সাজিয়ে রাখা হয়েছে দেয়ালের সাথে লাগোয়া শেলফে।বসার জন্য আছে সোফা এবং বিনব্যাগ।মোটকথা সব আধুনিক আসবাবপত্র দিয়ে সৌরভের রুমটা আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো হয়েছে।যা বিগত ৬ বছর আগে ছিলো না।সে কানাডা যাওয়ার পর একতলা বাড়ি থেকে ডুপ্লেক্স বাসা তৈরী করা হয়েছে।সবকিছু বলতে গেলে নতুন সংযোজন করা হয়েছে।
মুগ্ধ হয়ে সারা রুম ঘুরে দেখলো সৌরভ।রুমটা তার অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে।যাইহোক,এটলিস্ট তার হনে ওয়ালা বিবি খুব খুশি হবে এত সুন্দর রুম দেখে আর রুমের ডেকোরেশন দেখে।মনে মনে ভাবতে লাগলো সৌরভ যে কেমন মেয়ে তার বউ হবে!ঠিক কোন টাইপের মেয়ে তার লাগবে!সুন্দর হোক বা কালো হোক,শর্ত একটাই মুখের গড়ন মায়াবী হতে হবে,যেন তৃষ্ণার্থের মতো বারবার দেখতে মন চাইবে,অবশ্যই পর্দানশীন ও মার্জিত হতে হবে!চঞ্চল প্রকৃতির,হ্যা একটু চঞ্চল টাইপের হতে হবে তবে বেয়াদব হলে চলবে না!এত বেশি স্টাইলিশ হবে না সবসময় নর্মাল লুকে থাকবে!পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে!
আর হ্যা সাংসারি হতে হবে,রান্না বান্না সব কাজ জানা থাকতে হবে এবং অবশ্যই স্বামী পরায়না হতে হবে।স্বামীর কথা মতো চলতে হবে,স্বামীর সব আদেশ নিষেধ মানতে হবে,মুখে মুখে তর্ক করা চলবে না,স্বামীকে সদা হাসিখুশি ও সন্তুষ্ট রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।ব্যস এটাই সৌরভের চাওয়া।কিন্তু এমন মেয়ে কই পাবে সে?যে সর্বগুনে গুণান্বিত?কল্পনাতেই একমাত্র এরকম মেয়ে পাওয়া যায়।বাস্তবে নয় এটা সৌরভ জানে।তারপরও মনে একটা আশা তার,সে খুব ভালো একটা মেয়েকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে পাবে।
সৌরভকে তার আম্মু বলেছেন অবশ্য একটা মেয়ের কথা।এখন দেখা যাক ওকে সৌরভের পছন্দ হয় কি না।পছন্দ হলে কথাবার্তা আগাবে নয়তো এখানেই স্টপ।মন থেকে পছন্দ না হলে তো সে জোর করে ভালো লাগাতে পারবে না।আর ভালো লাগার মতো কোনো মেয়ে আজতক সৌরভের চোখেই পড়ে নি।পড়বে কী না তাও সন্দেহ।এসব ভাবতে ভাবতেই সৌরভ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টে রুমে এসে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসতে চাইছে তার।শেষমেশ ঘুমিয়েই পড়লো।লং জার্নিতে বেচারা একদম হাঁপিয়ে গেছে।
✨
প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় সৌরভের ঘুম ভাঙলো।তারপর হাতমুখ ধুয়ে নিচে চলে আসে সে।ড্রয়িং রুম জুড়ে যেন মেলা বসেছে আজকে।মেলার আসর যেন তুঙ্গে উঠলো সৌরভ ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করায়।টি টেবিলের ওপর হরেক রকমের নাশতা সাজিয়ে রাখা।সৌরভ একবাটি নুডুলস নিয়ে আবির আর আকিলের মাঝখানে গিয়ে বসলো।ওরাও নাশতা খাচ্ছে।
তখনই মিসেস মিনা হাতে করে কয়েকটা ফটোগ্রাফ নিয়ে এলেন।লিপি নামক মেয়েটার ছবি।ছবিগুলো সৌরভের হাতে দিলেন তিনি।সৌরভ নুডুলস খেতে খেতে ছবিগুলো সব ভালো করে খুঁটিয়ে দেখলো।সৌরভের মতে,মোটামুটি সুন্দরী বলা চলে মেয়েটাকে।তবে নাকটা মোটা আর চ্যাপ্টা যেন কেউ ঘুষি মেরে নাকটা বোচা করে দিয়েছে।ভ্রু প্লাক করা চিকন করে।এই একটা জিনিস সৌরভ মোটেই পছন্দ করে না,ভ্রু প্লাক করা।মেয়েরা কেন যে এই হারাম কাজটা করে এবং কী যে মজা পায় ভেবে পায় না সৌরভ।জাস্ট বিরক্ত লাগে তার।এবং মেয়েটার চেহারা দেখে কেন জানি মনে হলো তার যে মেয়েটা একটু অহংকারী টাইপের।যার কারণে মেয়েটাকে ভালো লেগেও লাগেনি তার।
দেখা শেষে মিসেস মিনার হাতে ছবিগুলো তুলে দিলো সৌরভ।মিসেস মিনা কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলেন;
মিসেস মিনা:-মেয়েটাকে দেখে কেমন লাগলো তোর বাবা?
সৌরভ কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনই চোখ গেল তার সামনের দিকে।এবং চোখ জোড়া ওখানটাতেই আটকে গেল।মুখ দিয়ে আর টু শব্দও বেরোলো না।মনের মধ্যে একঝলক ঝোড়ো হাওয়া মাতামাতি করে গেল।এরকম ফিলিং লাইফের ফার্স্ট টাইম হলো তার।সৌরভের কাছে মনে হলো কোনো এক অপ্সরা এসে দাঁড়িয়েছে ড্রয়িং রুমের দোরগোড়ায়।ঐ কাজলে আঁকা চোখ চোখ দুটো যে মারাত্মক সর্বনাশ করে ফেললো তার।মেয়েটির ঠোঁটের কোণে লেপ্টে থাকা মুচকি হাসি দেখে সৌরভের মনে হলো তার ক্ষেত্রেও হয়তো লাভ এট ফার্স্ট সাইট জিনিসটা আজ ঘটেছে।
প্রিয়তা আজ একটা কালো লং ফ্রক ও কালো প্লাজু পড়েছে।সাথে মাথার ওপর কালো জর্জেট ওড়না আলতো ভাবে প্যাচিয়ে রাখা।চোখে গাঢ় করে কাজল এঁকেছে সে সাথে ঠোঁটে লিপবাম।ব্যস এতেই সৌরভ ক্রাশ খেয়ে গেছে।প্রিয়তা হাসিমুখে ড্রয়িং রুমের ভেতরে ঢুকে তানিয়ার পাশে গিয়ে বসলো।আকিল প্রিয়তাকে দেখে ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো;
আকিল:-এই রে,আমাদের ঝিঁঝি পোকা চলে এসেছে সবার কানের পর্দা ফুটো করতে।
জ্বলন্ত চোখে আকিলের দিকে তাকালো প্রিয়তা।কিন্তু কিছু বললো না।প্রিয়তাকে চিনতে সৌরভের একটু বেগ পেতে হয়েছে।অনেকদিন পর দেখেছে তো তাই।মিসেস শিলা প্রিয়তার কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর নেই।হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন তিনি।তারপর রান্নাঘরে ছুটলেন প্রিয়তার জন্য দুধ আর ডিম আনতে।মিসেস মিনা হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন;
মিসেস মিনা:-কীরে মা তোর জ্বর কমেছে?
প্রিয়তা হাসিমুখে মাথা ঝাকিয়ে বললো;
প্রিয়তা:-হ্যা বড়আন্টি, কমেছে।
মিসেস মিনা:-যাক আমি তো দুশ্চিন্তায় ছিলাম তোর জন্য।ও হ্যা ওই যে তোর সৌরভ ভাইয়া।আর সৌরভ এ হলো আমাদের প্রিয়ু মনি।
মিসেস মিনা হাসিমুখে দুজনের পরিচয় করিয়ে দিলেন।সৌরভ তখনও তাকিয়ে আছে প্রিয়তার পানে।প্রিয়তা সৌরভের দিকে তাকিয়ে সালাম দিয়ে বিনীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো;
প্রিয়তা:-কেমন আছেন ভাইয়া?
সৌরভ সালামের জবাব দিয়ে হাসিমুখে উত্তর দিলো;
সৌরভ:-আলহামদুলিল্লাহ,ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?শুনেছি তোমার নাকি জ্বর এসেছে?
প্রিয়তা:-জি আমিও ভালো আছি।আর জ্বর এসেছিলো ঠিকই কিন্তু ঠিকতে পারে নি।জ্বরও আমাকে ভয় পায়।
সৌরভ তার কিউট দাঁত বের করে হাসলো প্রিয়তার কথা শুনে।মিসেস শিলা ছোট একটা ট্রে তে করে দুধ আর ডিম সেদ্ধ নিয়ে এলেন।প্রিয়তা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে একঢোকে অর্ধেক সাবাড় করে ফেললো।প্রিয়তার কথার বিপরীতে আকিল জবাব দিলো;
আকিল:-তোকে শুধু জ্বর কেন,যমদূতও ভয় পায়।তোর যা রাক্ষুসী চেহারা,শাঁকচুন্নি মার্কা চোখ,পেত্নী মার্কা চুল আর জ্বিন মার্কা চলাফেরা।বাপরে,সত্যিকারের ভুতেরাও তোকে দেখলে ভয়ে পালাবে।
আকিলের কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে প্রিয়তা।রাগে ফুসফুস করছে সে।এখন যদি সৌরভ না থাকতো তাহলে নির্ঘাত আকিলের চুল আর একটাও মাথায় থাকতো না।সৌরভকে দেখিয়ে আকিলকে হুমকির স্বরে বললো সে;
প্রিয়তা:-শুধু ওনি বেয়াদবি পছন্দ করেন না বলে আজকে তুই বেঁচে গেলি।নয়তো আজকে তোর হাড্ডি গুড়ো গুড়ো করতাম আমি।
প্রিয়তার হুমকি দেয়া দেখে হেসে উঠলো সবাই।সৌরভ মুচকি হাসলো শুধু।
চলবে…