#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Last_Part
রেহান ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে নিশি দু প্লেট খাবার নিয়ে ঘরে ডুকছে। রেহান ভ্রু কুচকে নিশির দিকে তাকায়। নিশি প্লেট গুলা টেবিলে উপর রেখে রেহানের এমন ভ্রু কুচকানো দেখে বলে
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
–তোমাকে আমি কি বলেছিলাম।
–কি বলেছিলেন?
–বলেছিলাম আমি নিচ থেকে খাবার নিয়ে আসবো তোমার জন্য কিন্তু তুমিই নিয়ে চলে আসলে।
–এক জন আনলেই তো হলো।
–হুমম সেটাই।
–আচ্ছা আপনি বসেন আমি হাত মুখ ধুয়ে আসি।
–ঠিক আছে।
নিশি ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে সোফায় রেহানের পাশে বসে প্লেট হাত নিয়ে খেতে যাবে সাথে সাথে রেহান চিৎকার করে উঠে। নিশি দু চোখের চোখের পাতা ঝাপ্টে বলে
–এভাবে চিৎকার করলেন কেন?
–তুমি তোমার হাতে খাবে না।
–হাত দিয়ে না খেলে খাবো কি করে?
–কেন তোমার স্বামী আছে তো আমি আমার বউকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবো।
নিশির নাক টেনে কথা বলে রেহান। রেহান একটা প্লেট হাত নিয়ে ভাত মাখিয়ে এক লোকমা নিশির মুখের সামনে ধরে
–নাও হা করো।
নিশি চুপচাপ রেহানের হাতে খাওয়া শুরু করে। খাওয়ার এক ফাকে নিশি বলে
–আপনি খাবেন না।
–তোমাকে খাইয়ে নেই তারপর খাবো।
–না এখনেই খাবেন আপনি দাড়ান আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
নিশি অন্য প্লেটটা হাতে নিয়ে ভাত মাখিয়ে রেহানের মুখের সামনে ধরে রেহান মুচকি হেসে নিশির হাতে ভাত খেয়ে নেয়। খাওয়ার এক সময় রেহান দুষ্টুমি করে নিশির আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেয়। নিশি তো বেচারি ব্যাথায় আঁ করে আর রেহান মিটিমিটি হাসতে থাকে। কিন্তু নিশিও ছাড়ার পাএী নয় রেহান ওকে খাওনোর সময় রেহানের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দেয়। নিশি হেসে হেসে বলে
–প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম।
____
খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিশি প্লেট গুলা নিচে রেখে এসে রুমে ডুকে দেখে রেহান কোথাও নেই। নিশি যেই রেহানকে ডাকতে যাবে ওমনি রেহান দরজার সাইড থেকে এসে নিশিকে পাজাকোলে তুলে নেয়। এমন অপ্রত্যাশিত কান্ডে নিশি কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষনে রেহানকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে। নিশি বলে উঠে
–কি হলো হঠাৎ এভাবে কোলে তুলেন কেন?
–আমার বউকে আমি কোলে তুলেছি তাতে তোমাকে কেন আমি কৈফত দিতে যাবো।
–জনাব আপনার বউটা কিন্তু আমিই বুঝলেন।
–হুমম তা তো জানি।
–হুম এবার কোল থেকে নামন।
–না এভাবেই চলো।
–কোথায় যাবো?
–ঘুমাতে।
রেহান নিশিকে বিছানার উপর এনে শুয়েই দিয়ে দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে নিজেও এসে নিশির পাশে শুয়ে পড়ে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই নিশি রেহানের দিকে পিঠ ফিরিয়ে দিয়ে শুয়ে আছে মনের মাঝে আজ অদ্ভুদ অদ্ভুদ সব ভাবনা হানা দিচ্ছে কেন জানি আজকে আর রেহান চিত হয়ে শুয়ে সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে আছে আর কিছু একটা ভাবচ্ছে। রেহান জিভ দিয়ে নিজের ঠোট ভিজিয়ে নিশিকে ডাক দেয়
–নিশি।
–হু।
–আমার বুকে যদি তুমি আজকে ঘুমাও তাহলে কি কোনো প্রবলেম হবে তোমার।
রেহানের এই কথা শুনা মাএই নিশির বুকটা ছেদ করে উঠে কি বলবে রেহানকে এখন নিশি। একদিকে নিশির লজ্জাও লাগছে আবার অন্য দিকে খুব করে চাইছে রেহানের বুকে মাথা রেখে পরম শান্তিতে ঘুমাতে। কিন্তু নিশির শরীরের আজকে যেন এতটুকুও শক্তিই নেই যে রেহানের বুকে এসে মাথা রাখবে। নিশি চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে রেহানের দিকে ফিরতে যাবে এর আগেই রেহানের নিশির বাহু ধরে নিজের বুকের উপর এনে নিশিকে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। নিশি পিটপিট চোখে রেহানের মুখশ্রীর দিকে তাকায়। রেহান মুচকি হেসে নিশির কপালে নিজের ওষ্ট দুটো মিলিয়ে দিয়ে বাকা হেসে বলে
–ঘুমাও ভয় নেই আজকে কিছু করবো না।
নিশি মুচকি হেসে রেহানের বুকে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।
_______
এভাবেই অনেক গুলা দিন কেটে যায় হাসিখুশিতে। আজকে নিশির রেজাল্ট দিবে সকাল থেকে নিশির নাজেহাল অবস্থা রেজাল্টের টেনশনে কি হবে ভেবে। যার জন্য আজকে নিশি রেহানকেও অফিসে পর্যন্ত যেতে দেয় নি। নিশি সারা ঘর পায়চারি করছে টেনশনে আর রেহান বিছানাতে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে নিশির এমন বেহাল অবস্থা দেখে রেহান বলে উঠে
–নিশি তুমি একটু শান্ত হয়ে বসবে প্লিজ।
নিশি ক্ষানিকটা রেগেই বলে উঠে
–কি শান্ত হয়ে বসবো! রেজাল্টের টেনশনে আমার হাত-পা সব ঠান্ডা হয়ে আসছে না জানি কি রেজাল্ট আসবে এটা ভেবে।
রেহান আর কিছু বলে না কারন নিশিকে বলে কোনো লাভ হবে না শুধু শুধু নিজের জবানটা লস করবে তাই বেচারা রেহান চুপ করে নিজের কাজ নিজে করে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষন পর নিশি রেহানের গা ঘেষে বসে ঢোক গিলে বলে উঠে
–আচ্ছা একটা কথা জিঙ্গেস করবো আপনাকে?
–কি কথা বলো?
–না মানে আমার পরীক্ষার রেজাল্ট যদি একটু [আঙ্গুলের ইশারায় বলে] খারাপ হয় তাহলে কি আপনি আমার উপর রাগ করবেন।
রেহান মুচকি হেসে নিশির দিকে ফিরে নিশির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?
–তোমার রেজাল্ট যদি খারাপ হয় তাহলে তুমি যেখানে বসে আছো সেখান তুমি আজকে থেকে শুতে পারবে না।
নিশি রেহানের কথা না বুঝেই বলে উঠে
–ওওও আচ্ছা।
কিন্তু পরক্ষনে রেহানের কথা বুঝতে পেরে চিৎকার করে বলে উঠে
–কি বললেন আপনি? আমার রেজাল্ট খারাপ হলে আমি বেডে শুতে পারবো না।
–না পারবে না।
–আপনি এটা বলতে পারলেন আমাকে।
–হে পারলাম।
রাগে নিশির নাক ফুসছে। নাক ফুসাতে ফুসাতে বলে
–আপনি ভীষন খারাপ একটা লোক। আপনার সাথে কোনো কথা নেই আজকের পর থেকে।
কথাটা বলেই নিশি ঘর থেকে বের হয়ে যায়। নিশি ঘর থেকে বের হতেই রেহান জোরে জোরে হাসতে থাকে
______
নিশির রেজাল্ট ভালোই হয়েছে 4.79 পেয়েছে। কিন্তু নিশি মনে মনে আপসেট হয়ে আছে কারন রেহান নিশির রেজাল্ট জানার পরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সবাই নিশির রেজাল্ট জেনে খুশিই হয়েছে কিন্তু রেহানের হাবভাব দেখে নিশি কিছুই বুঝতে পারছে রেগে আছে নাকি খুশি হয়েছে। নিশি রেহানকে অনেক বার কল করেছে কিন্তু রেহান ফোন ধরে নি।
______
রাত দশটায় রেহান বাড়িতে আসে। রেহান ঘরে ডুকে দেখে নিশি টেবিলে বসে পড়ছে তাই চুপচাপ হাতের ব্যাগটা সোফার উপরে রেখে ফ্রেস হতে চলে যায়।
রেহানের ফ্রেস হয়ে আসার অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে কিন্তু নিশি কোনো কথা বলছে না। রেহানের বুঝতে বাকি নেই যে মহারানী যে রেগে আছে। রেহান গলা পরিস্কার করে বলে
–কি হয়েছে ম্যাডামের এমন গাল ফুলিয়ে বসে আছে না।
কোনো জবাব আসে নি নিশির পক্ষ থেকে।
–কি হয়েছে নিশি রেজাল্টের জন্য কি মন খারাপ তোমার।
এবার নিশি মুখ খুললো
–আপনি কি আমার উপরে রেগে আছেন?
–আমি কেন তোমার উপরে রাগ করবো?
–আমার রেজাল্ট নিয়ে।
–তোমার রেজাল্ট যথেষ্ট ভালো হয়েছে। আমি অনেক খুশি হয়েছি তোমার রেজাল্ট শুনে।
–তাহলে আপনি আমার সাথে কথা বলেন না কেন? আমার রেজাল্ট জানার পর আপনি আমার সাথে কথা না বলেই চলে গেলেন। আপনাকে কত গুলা ফোন দিলাম কিন্তু আপনি একটা ফোনও ধরেন নি।
কথাটা বলার সাথে সাথেই নিশি ফুফিয়ে কান্না করে দেয়। রেহান নিশির কান্না করা দেখে নিশিকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে এনে নিজের কোলে বসিয়ে নিশির কোমড় এক হাতে জড়িয়ে ধরে অন্য হাত নিশির চোখ জল মুজিয়ে বলে
–বিজি ছিলাম তাই ফোন ধরতে পারি নাই। তার জন্য সরি।
–আপনি খুব পচা সবসময় আমাকে কষ্ট দেন।
–এই পচা লোকটার সাথেই তোমাকে সারা জীবন থাকতে হবে।
–ছাড়ুন আমাকে।
–ছাড়বো না আমি আমার বউকে ধরেছি তাতে তোমার কি?
নিশি রেহানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য অনেক মুচরামুচরি করে কিন্তু রেহানের সাথে পেরে উঠে না। নিশি রাগে রেহানের দিকে তাকাতেই নিশির রাগান্বিত চেহারাটা দেখে রেহান শব্দ করে হেসে দেয়।
–একদম হাসবেন না। ছাড়ুন আমাকে না হলে কিন্তু আমি চিৎকার করবো।
–বোকা মাইয়া চিৎকার করলে সকালে উঠে তুমিই লজ্জা পাবে সবার কাছ থেকে।
–পেলে পাবো আপনি আমাকে ছাড়ুন না হলে কিন্তু সত্যিই আমি চিৎকার করবো।
–ঠিক আছে করো।
নিশি চিৎকার করতে যাবে সাথে সাথে রেহান নিশির গাড়টা ধরে নিজের মুখের কাছে এনে নিজের ওষ্টের দ্বারা নিশি ওষ্টদ্বয় গুলা মিলিয়ে দেয়। এমন একটা কান্ডে নিশি কিছুটা চমকে যায় কিন্তু পরক্ষনে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। রেহানের টিশার্টটা খামছে ধরে নিশি। খানিকক্ষন পরে রেহান নিশিকে ছেড়ে দিয়ে নিশির ঠোটগুলা আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিয়ে বলে।
–যত বার চিৎকার করতে যাবে ততবার এভাবে চুপ করিয়ে দিবো তোমাকে মিসেস রেহান রহমান।
–আপনি যে একটা অসভ্য সেটা কি জানেন।
–শুধু মাএ তোমার ক্ষেএে অসভ্য বুঝলে।
–হুমম।
এবার নিশিকে রেহান কোলে তুলে নিয়ে বেডের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। নিশির বুঝতে আর বাকি রইলো না এরপর কি হতে চলেছে তাই লজ্জায় রেহানের বুকে নিজের মুখটা লুকিয়ে ফেলে।
_____
তিন বছর পর নিশি পা দুটো ঝুলিয়ে বসে আছে বেলকনিতে থাকা দোলনাতে। এমন সময় রেহান রুমে এসে দেখে নিশি রুমে নেই। নিশিকে রুমে না দেখতেই পেয়েই রেহান নিশিকে ডাকতে শুরু করে। রেহানের ডাক শুনে নিশি বলে
–এখানে আমি।
রেহানও নিশির ডাক শুনে নিশির কাছে গিয়ে নিশির সামনে হাটুঘেড়ে বসে বলে
–কি করে আমার আব্বুটা।
–ঘুমায়।
–সারাদিন ঘুমায় কেন ও? আমি যখনেই অফিস থেকে আসি তখনেই ও ঘুমিয়ে থাকে?
–ছোট বাচ্চারা ঘুমাবে না তো কি করবে।
–কেন ও ওর পাপার সাথে খেলা করবে।
–বড় হোক তারপর না হয় খেলবে আপনার সাথে।
–কবে বড় হবে ও?
–এই আপনি ছোট বাচ্চাদের মতো কথা বলছেন কেন? এক বাচ্চার বাপ হয়ে আপনি দেখা যায় আরও ছোট হয়ে গেছেন।
–সত্যি কি আমি ছোট হয়ে গেছি বউ। তাহলে এই ছোট ছেলেটার কোলে আমার পুচকি বাচ্চাটাকে দাও তো।
–এই আপনি উঠুন তো উঠে ফ্রেস হোন গিয়ে এই ময়লা হাত নিয়ে আমার ছেলেকে ধরতে আসবেন না আপনি।
–ছেলেকে পেয়ে স্বামীকে তাড়িয়ে দিছো।
–হুম তাড়িয়ে দিছি এবার যান তো।
রেহান হাসতে হাসতে ওয়াসরুম চলে যায়। ফ্রেস হয়ে এসেই নিজের ছেলে রায়ানকে কোলে তুলে নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। রেহানের কথা কি বুঝছে কে জানে যে রায়ান জোরে জোরে হেসে উঠছে। রেহানের পাশে বসেই নিশি ছেলে আর ছেলের বাবার কান্ড গুলা দেখছে আর হাসছে।
এভাবে হাসি খুশি কাঠুক নিশি আর রেহানের জীবন।
_________The End_________