#তুমি আমার (পর্ব ১৪)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহান রুমের ব্যালকনিতে বসে গিটার বাজাচ্ছিলো, দরজায় কেউ নক করলো রেহান গিটারটা রেখে দরজা খুলে দিলো ওর বাবা দাড়িয়ে আছে।
– বাবা তুমি,ভেতরে এসো।
– বিজি ছিলি তুই? রুমে ঢুকে বললো।
– না বাবা। কেনো বাবা কোনো দারকার?
রেহানের বাবা খাটে বসে রেহানকেও ইশারায় বসতে বললো,রেহান পাশেই বসলো। রেহানের বাবা হাসি মুখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো
– হবু বউমাকে তো আর সামনে থেকে দেখতে পারলাম তাই এখন ছবি দেখতে এলাম,তোর মায়ের থেকে শুনলাম মেয়েটি নাকি খুবই ভালো।
রেহান তো চরম অবাক হলো হা করে চেয়ে আছে নিজের বাবার দিকে। রেহানের বাবা ওর কাধে হাত দিয়ে বললো
– এত অবাক হওয়ার কি আছে মুখ টা বন্ধ কর।
রেহান একটু স্বাভাবিক হয়ে বললো
– আমি ভাবিনি বাবা তুমি এত সহজে আমার পছন্দটা মেনে নিবে!!
– আগে ছবিটা তো দেখা তারপর বাকীটা ভাববো।
রেহান ফোনের থেকে মেঘার একটা ছবি দেখালো। ওর বাবাও খুব পছন্দ হয়েছে। হাসি মুখে বললো
– হুম আমার ছেলের চয়েজ খারাপ না তবে বয়সটা একটু কম যাক ব্যাপার না ওটা।
– বাবা ওকে ভালো লেগেছে তোমার??
– তোর মায়ের থেকে সব শুনেই তো ভালো লেগেছে ছবিটা তো এমনি দেখলাম। শুনলাম ওদের আর্থিক অবস্থা নাকি তেমন সচ্ছল না?
– হ্যা বাবা ঠিকি শুনেছো,এতে কি তোমার আপত্তি আছে?
– তোর মা কি বলছে জানিস,বলেছে সে মেঘাকে ছেলের বউ নয় নিজের মেয়ে করে আনবে বাড়িতে। আমারো সে একি কথা। আর শোন ধনী হোক গরীব হোক আমরা সকলেই মানুষ তাই আমার এতে কোনো আপত্তি নেই।
রেহান হেসে ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরলো
– থ্যাংক ইউ বাবা,থ্যাংক ইউ সো মাচ। তুমি খুব ভালো বাবা।
রেহান ওর বাবাকে ছেড়ে দিতেই ওর বাবা বললো
– আমি তোর মা তোর বড়মা চাইছি মেঘার বাবার সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে রাখতে ভাবছি কালই যাবো। তুই পড়াশুনাটা চালিয়ে যা মেঘার ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলেই তোদের বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো।
রেহান তো আরো অবাক হয়ে যাচ্ছে, ওর বাবা মা যে এত তাড়াতাড়ি ওদের সম্পর্কটা বাধতে চাইবে এটা ও কল্পনাও করে নি।
– কিরে কিছু বলছিস না যে?
– বাবা আমি কি বলবো তোমাদের যেটা ভালো মনে হবে করো।
রেহানের বাবা রেহানের পিঠ চাঁপরে বললো
– হুম তা তো করতেই হবে। আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়।
রেহানের বাবা চলে গেলো। রেহান খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে মেঘাকে কল দিলো।
.
🌿
.
রেহানের রুমের পরেই রাফিনের রুম রাফিন যখন নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো তখনি মেঘা নামটা কানে আসতেই ও দাড়িয়ে পড়লো রেহানের রুমের দরজার সামনে। রেহানের আর ওর বাবার সব কথা শুনেছে। রেহানের বাবা বের হওয়ায় আগেই রাফিন নিজের রুমে চলে যায়। রাফিন দরজা বন্ধ করেই দুহাতে চুল খাঁমচে ধরে বসে রইলো। চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থেকে কাউকে ফোন দিয়ে বললো
– আমি আর বাংলাদেশে থাকতে চাচ্ছি না যত দ্রুত সম্ভব আমার বাহিরে যাওয়ায় ব্যবস্থা কর।
কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে রাফিন ফোন রেখে দিলো।
খাটে হেলান দিয়ে কপালে হাত রেখে বলতে লাগলো
– আমি থাকবো না এ দেশে। এ যন্ত্রনা আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমি চাইলে পারতাম মেঘাকে নিজের করে নিতে কিন্তু আমি তা করবো না কারন মেঘা রেহানকে ভালোবাসে ওকে কোনো ভাবেই কষ্ট দিতে পারবো না আমি।
রাফিনের ফোনটা বেজে উঠলো
– হ্যা বল।
ওপাশ থেকে বললো
– ভাই আপনি একমাসের আগে যেতে পারবেন না,আপনার পাসপোর্ট এ কিছু প্রবলেম আছে।
রাফিন কিছু না বলেই ফোন কেঁটে দিলো। কি করবে এখন ও এটাই ভাবছে। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিলো এ বাড়িতে আর থাকবে না,উঠে দাড়ালো রেহানের বড়মা মানে রাফিনের মায়ের কাছে বলার জন্য যে ও এ বাড়িতে থাকবে না।
.
🌿
.
রাফিন দরজা খুলতেই কারো সাথে জোরে ধাক্কা খেলো,রাফিন পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো। রাফিন রেগে তাকাতেই দেখলো মিতু নিচে পড়ে আছে। মিতু কোমড়ে হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে লাগলো
– ওও মাগো আমার কোমড়টা বুঝি ভেঙেই গেলো গো,এখন আমি হাটবো কি করে!!
রাফিনের প্রচণ্ড রাগ উঠে গেলো মিতুর ন্যাকা কাঁন্না দেখে। রেগে বললো
– এই মেয়ে দরজার বাইরে কি করছিলে তুমি?
– আমার নাম মিতু এই মেয়ে কি হ্যা। আর আমি দরজার বাইরে থাকবো কেনো আমি তো যাচ্ছিলাম এখান দিয়ে আর আপনি….। এটুকু বলে আবারো কাঁন্না জুরে দিলো।
রাফিন জোরে ধমক দিয়ে বললো
– চুপ একদম ন্যাকা কাঁন্না করবে না। উঠো বলছি সামান্ন ধাক্কা লেগে পড়ে কারো কোমড় ভাঙে? বোকা পেয়েছো আমাকে?
নিতু আসলে ব্যাথা পায়নি ও ভেবেছিলো ব্যাথা পাওয়ার কথা শুনলে হয়তো রাফিন একটু হলেও নরম হয়ে কথা বলবে। কিন্তু না ওর ভাবনাতে এক বালতি পানি ঢেলে রাফিন আরো বেশি রেগে গেলো।
নিতু হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
– হাতটা ধরুন।
– কিহ!!
– কানে শুনতে পান না নাকি! বলেছি হাত ধরে তুলুন আমাকে।
রাফিন কিছু না বলে মিতুর হাত ধরে তুললো। মিতু দাড়িয়ে বললো
– আপনি এমন কেনো বলুন তো,আমাকে যেদিন আনতে গেলেন আপনাকে স্বাভাবিক লেগেছিলো। কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকে কেমন যেনো ব্যাবহার করছেন আমার সাথে। কেনো এমন করছেন হুম??
– আমি করো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই।
– আমি তো শুধু জানতে চাইলাম জবাবদিহি করতে বলেছি নাকি!! তবে আজ আমার একটা ধারনা ভুল বলে মনে হলো আর সেটা হলো,আমি ভেবেছিলাম আপনি কথা কম বলেন কিন্তু এখন এটুকু বুঝলাম আপনি আসলে অনেক কথা বলেন বাট কোনো কারনে কথা বলতে চান না আপনি। তাইতো?
রাফিনের মুখটা আবারো গম্ভীর হয়ে গেলো অন্য দিকে তাকিয়ে মিতুকে বললো
– প্লিজ মিতু তুমি আমার সামনে এসো না,অস্বস্তি লাগে আমার।
রাফিন চলে গেলো সেখান থেকে মিতু অবাক হয়ে চেয়ে আছে ওর যাওয়ার দিকে।
.
🌿
.
রেহান মেঘাকে কয়েকবার কল দিলো মেঘা ফোন ধরছে না। রেহান ভাবলো হয়তো বিজি আছে তাই আর ফোন দিলো না। হঠাৎ রেহানের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো
– আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? বাবা যে ওর বাবার সাথে আমাদের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলবে এটা ওকে জানাবো না। পরে যখন জানতে পারবে তখন দারুন সারপ্রাইজড হবে মেঘা। এমন অনেক কিছু ভাবতে ভাবতেই রেহান ঘুমিয়ে পড়লো।
ওদিকে মেঘা ওর বাবা ভাইয়ের সাথে সময় কাটিয়ে রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রেহানের ৩ টা মিসড কল। মেঘা কল দিলো রিং হয়ে চলেছে কিন্তু ধরছে না। মেঘা ভাবলো হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে তাই আর কল দিলো না।
.
রাফিন ওর মায়ের কাছে এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা বলতেই উনি খুব রেগে গেলেন। সে চায় না ওকে দূরে রাখতে। নিজের মা বাবাকে হারিয়ে ওনাকেই নিজের মা বলে জানে তাহলে উনি কি করে পারবে ছেলেকে দূরে সরিয়ে রাখতে। রাফিনকে অনেক বুঝিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলেন উনি।
রাফিন চলে যেতেই মিতু দরজায় দাড়িয়ে বললো
– বড়মা আসবো?
– আরে মিতু,এসো মা। চোখ মুছে বললো।
মিতু এসে বড়মার পাশে বসে বললো
– বড়মা কাঁদছেন কেনো আপনি?রাফিন ও দেখলাম চোখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে গেলো!!
– আমার ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে রে মা,আমি যে ওকে কি বলে শান্তনা দেবো বুঝে উঠতে পারছি না।
– কেনো বড়মা কি হয়েছে। আসার পর থেকেই দেখছি রাফিনের চলাফেরা স্বাভাবিক না সিগারেট ও খেতে দেখেছি।
– কদিন আগেও ছেলেটা ভালোই ছিলো সব সময় হাসি ঠাট্টাতে মেতে থাকতো,আর সিগারেট ওটা তো পছন্দই করতো না।
– তাহলে হঠাৎ এমন পরিবর্তন হলো কি করে??
বড়মা মিতুকে সব কিছু বললো রাফিন ওনার নিজের ছেলে নয় এটাও বলেছে। মিতু সবটা শুনে ওর চোখেও পানি চলে এসেছে।
– বড়মা রাফিন সত্যি খুব ভালো মনের মানুষ কয় জন ছেলে পারে নিজের ভালোবাসাকে ছেড়ে দিতে। অবশ্য এতে তো ওদের কারোই দোষ নেই রেহান ভাইয়া মেঘা একে ওপরকে ভালোবাসে। রাফিন ভালো করেছে ওদের মাঝে থেকে বেড়িয়ে এসে।
– ছেলেটা যে শেষ হয়ে যাচ্ছে,ওকে আবার আগের মত হাসিখুশিতে দেখতে খুব ইচ্ছে করে।
– বড়মা একটা কথা বলার ছিলো।
– কি কথা বলো।
– বড়মা আপনাকে আমি সেই আগের রাফিনকে ফিরিয়ে দিতে চাই সে দায়িত্বটা দিবেন আমাকে??
বড়মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো
– ভালোবাসো রাফিনকে?
– ভালোবাসি কিনা এখনো বুঝতে পারছি না তবে অনেক ভালোলাগে ওকে।মাথা নিচু করে বললো।
বড়মা একটু হেসে বললো
– আমি চেয়েছিলাম রাফিনের জীবনে কোনো মেয়ে আসুক তবে সে যে এত তাড়াতাড়ি আসবে ভাবিনি। আমার মন বলছে তুমি পারবে ওকে ঠিক করে তুলতে।
·
·
·
চলবে…………………..