#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_12
রেহান আজ সকালে একটু তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট না করেই অফিসে চলে যায়। নিশির ঘুম ভাঙ্গে সাড়ে সাতটায়। ছোট ছোট চোখ দিয়ে সারা ঘর নজর বুলিয়ে রেহানকে খোজার চেষ্টা করছে। যখন বুঝতে পারলো রেহান ঘরে নেই তখনেই চট করে শুয়া থেকে উঠে বসে। আসলে নিশি ঠিক রেহানের সামনে পড়তে চাইছে না। রাতের ওই ঘটনার পর থেকে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে রেহান সামনে থাকতে।
নিশি চট করে উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিচে নামে। নিচে গিয়েও রেহানকে খুজছে নিশি। কিন্তু রেহান নিচেও কোথাও নেই। এমন সময় রাহি নিশির কানের কাছে এসে বলে
–কি নিশু আপু ভাইয়াকে খুজছো তাই না।
নিশি ভয় পেয়ে রাহির দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে
–না মানে আসলে ওনাকে সকাল থেকে দেখছি না।
–আসলে ভাইয়া অনেক সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট না করেই অফিসে চলে গেছে। কি ইমর্পোটেন্ট মিটিং আছে নাকি।
–ওও।
–হুমম এবার চলো ব্রেকফাস্ট করে নিবে।
ব্রেকফাস্ট শেষ করে নিশি ঘরে চুপচাপ বসে আছে। একাএকা থাকতে একদমেই ভালো লাগছে না নিশির। রাহি থাকলে গল্প করা যেতো কিন্তু রাহিও কলেজে চলে গেছে। হঠাৎ করেই নিশির মনে পড়ে ওর তো ভার্সিটির জন্য কোচিং করতে হবে কিন্তু ও তো এখানকার কিছুই চিনে না। তাই রেহেলা বেগমের রুমে আসে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য নিশি
–মামনি আসবো।
–আরে নিশি আয় ভেতরে এর জন্য আবার অনুমতি নেওয়ার কি আছে।
–আসলে মামনি একটা কথা বলার ছিলো তোমাকে।
–কি কথা বল?
–আসলে আমি ভার্সিটির কোচিং করতে চাইছি কিন্তু এখানকার কোন কোচিং ভালো আমি তো জানি না। তাই তোমার কাছে জানতে এলাম।
–ওও এই ব্যাপার এটা রেহানকে বলেই তো পারতি। আমি কি ওতোসতো বুঝি নাকি এই বিষয়ে।
–ওনি তো ব্যস্ত তাই তোমাকে বললাম।
–আচ্ছা রেহান আসুক রাতে ওর সাথে কথা বলবো এই বিষয়ে।
–আচ্ছা মামনি।
নিশি আবারও নিজের ঘরে চলে আসে। সারাটা দিন নিশির একাএকাই কাটে।
_______
রাত নয়টা রেহান বাড়ি ফিরে। ফ্রেস হয়ে ডিনার করতে বসেছে রেহান। তার মাঝে রেহেলা বেগম বলে
–রেহান নিশির জন্য একটা ভালো কোচিং দেখে ওকে ভর্তি করে দে।
–কোচিং এ কেন?
–আরে ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার জন্য তো কোচিং তো করতে হবে নাকি।
–আচ্ছা কালকে বিকালে নিয়ে যাবো।
রেহান চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে যায়। রাত এগারটায় নিশি রুমে এসে দেখে রেহান লেপটপ নিয়ে কাজ করছে। নিশি চুপচাপ বেডের এক কোনে এসে বসে। হাসফাস করছে নিশি রেহানকে একটা প্রশ্ন করার জন্য কিন্তু পারছে না। হঠাৎ করেই রেহান নিশির দিকে তাকাতেই দুজনের চোখে চোখ মিলে যায়। নিশি সাথে সাথে অন্য দিকে ফিরে তাকায়। এই চোখের দিকে নিশি তাকাতে পারে কেমন জানি অদ্ভুত লাগে রেহানের চোখ। রেহান উচ্চস্বরে বলে উঠে
–কিছু বলবে তুমি নিশি?
নিশি ঢোক গিলে রেহানের দিক ফিরে বলে
–আসলে কালকে কোচিং এ ভর্তি হতে যাবো তাই তো।
–হে।
–কোচিং এ ভর্তি হলে তো অনেক টাকা লাগবে তাই না।
–হে লাগবে।
–কত টাকা?
–তুমি জেনে কি করবে? [ভ্রু কুচকে]
–বারে আমি কোচিং এ ভর্তি হবো আর আমি জানতে চাইবো না কত টাকা লাগবে।
–না জানার কোনো দরকার নেই আর জেনেই বা কি করবে?
–কি করবো মানে আমায় বাবাকে জানতে হবে না কত টাকা লাগবে।
–তোমার বাবাকে কেন জানাতে হবে?
–কেন বাবার কাছ থেকেই তো টাকাটা এনে কোচিং এ ভর্তি হতে হবে নাকি।
রেহান ভ্রু জোড়া কুচকে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে নিশির দিকে। নিশি রেহানের এমন ভাবে তাকানো দেখে ঢোক গিলে বলে
–এভাবে তাকিয়ে আছেন?
–তুমি কি গাদা!
–কিহ বললেন আপনি আমি গাদা? আমি গাদা হতে যাবো কেন?
–গাদা বলেই তো এমন একটা গাদা মার্কা কথা বলতে পেরেছো।
–কি এমন বলেছি যে আমি গাদা হয়ে গেলাম আপনার চোখে।
–তুমি এখন তোমার বাবার কাছে টাকা চাইবে তাই তো।
–হুম চাইবো।
–না চাইবে না!
–কেন চাইবো না? বাবার কাছে টাকা না চাইলে কার কাছে চাইবো আপনার কাছে।
–হে আমার কাছেই চাইবে টাকা।
–মানে।
–মানেটা খুব সোজা তুমি এখন আমার দায়িত্বে আমার স্ত্রী হয়ে আছো তাই তোমার সব চাহিদা আমিই পূরন করবো তাই নয় কি।
–তার মানে আপনি টাকা দিবেন কোচিং এ ভর্তি হওয়ার।
–হুম। তাই তোমাকে এসব টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না কোচিং এ ভর্তি হওয়ার পর ভালো করে পড়বে আর ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে মনে থাকবে।
–হুম।
–এবার চুপচাপ ঘুমাও আর আমাকে একটু শান্তিতে কাজ করতে দাও।
নিশি রেহানের দিকে একটা ভেঙ্গচি কেটে উঠে ঘরের বাইরে যেতে যাবে তখনেই রেহানের ডাকে থেমে যায়।
–এই রাতবিরাতে কোথায় যাচ্ছো এখন তুমি?
–ছাদে যাচ্ছি।
–এত রাতে ছাদে কেন?
–এমনি জোৎস্না বিলাশ করতে যাচ্ছি।
–ঠিক আছে যাও। বেশি দেরি করো তাড়াতাড়ি আসবে।
_____
বারটা বাজতে চললো কিন্তু নিশির এখনও ছাদ থেকে ঘরে আসার নাম নেই। রেহান এক রাশ বিরক্ত নিয়ে বলে উঠে
–এই মেয়েটা একটুও শান্তি দিবে না আমাকে এখনও ছাদে গিয়ে বসে আছে। মনে কি একটু ভয় নেই এই রাতে ছাদে গিয়ে বসে আছে।
রেহানও ছাদে যাবার উদ্দেশ্য ঘর থেকে বের হয় পা। সিড়ি বেয়ে ছাদের দরজার কাছটায় আসতেই রেহানের পা জোড়া ধমকে যায় সামনের দোলানাতে বসে থাকা ঘুমন্ত নিশিকে দেখে। মাথাটা দোলনার এক পাশে ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে। এই মেয়ে দোলনাতে ঘুমিয়ে গেছে এভাবে। চাদের আলোতে নিশির মায়াবী মুখটা ফুটে উঠেছে, বাতাসে চুল গুলা উড়ছে, ওড়নার শেষের অংশটা বাতাসে দোলছে, মুখের সামনে ছোট ছোট আবাধ্য চুল গুলা কপালে আছড়ে পড়ছে।
রেহান দু হাত বুকের মাঝে বেধে ছাদের দরজায় হেলান দিয়ে এক নজরে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে আর ঠোটের কোনে মিষ্টি হাসি। কিছুক্ষন নিশির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিশির দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে গিয়ে নিশির পাশটায় বসে। বা হাত উঠিয়ে নিশির চোখে মুখে পড়ে থাকা চুল গুলা কানের দিকে গুজে দেয়। রেহানের স্পর্শ পেয়ে নিশি নড়ে উঠে মাথাটা দোলনা থেকে পড়ে যাবে সাথে সাথে রেহানের নিশির মাথাটা ধরে নিজের বুকে এনে রাখে। নিশিও রেহানের বুকে কিছু একটা খুঁজে মাথাটা এলিয়ে দেয় আরও গভীর ভাবে। রেহান নিশির এমন বাচ্চামো দেখে হেসে দেয়।
রেহান অনেকক্ষন যাবৎ নিশিকে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। কিন্তু রাত গভীর হয়ে যাচ্ছে এবার ঘরে ফিরে যাওয়া দরকার। রেহান নিশির দিকে পূর্ন নজরে একবার তাকিয়ে নিশির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে নিশিকে পাজা’কোলে তুলে নিয়ে ছাদ নেমে যায়। দিনদিন মেয়েটা রেহানকে ওর দিকে আকৃষ্ট করছে হয়তো কোনো একদিন রেহান আর নিজেকে কন্ট্রোল নাও করতে পারে হারিয়ে যেতে পারে নিশি নামক মেয়েটার মাঝে। এখন শুধু কিছুটা সময়ের অপেক্ষা।
রেহান নিশিকে ঘরে এনে শুয়েই দেয়। নিশি এক হাত দিয়ে রেহানের কলার চেপে ধরে রেখেছে আর কি বিরবির করছে। রেহান নিশির মুখের কাছে এসে কান পেতে শুনতে পায় নিশির বলা অস্পষ্ট কিছু কথা।
#চলবে