তুমি আমার পর্ব-১১

0
606

#তুমি_আমার
#Nusrat_Jahan_Bristy
#Part_11

রেহান রাত নয়টায় বাড়িতে ফিরে হাতে অনেক গুলা শপিং ব্যাগ নিয়ে। রেহেলা বেগম ড্রয়িংরুমে বসে সিরিয়াল দেখছিলো। রেহানের হাতে এত শপিং ব্যাগ দেখে রেহেলা বেগম বলে উঠে

–রেহান তর হাতে এত শপিং ব্যাগ কিসের?

রেহান মায়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বলে

–নিশি কোথায় মা?

–আর বলিস না মেয়েটা আসার পর থেকে একটা কথাও ভালো করে বলে নি। কিছু জিঙ্গাস করলে বলে কিছু হয় নি। ওর সাথে কি তুই ঝগড়া করেছিস রেহান।

রেহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বড় বড় পা ফেলে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে চলে যায়। রেহানের মা অবাক হয়ে বলে

–আরে ওদের দু জনের হলো টাকি কিছু জিঙ্গাস করলেই এড়িয়ে চলে যায়।

________

রেহান ঘরে ডুকে দেখে নিশি ঘরে কোথাও নেই। শপিং ব্যাগগুলা টেবিলের উপর রেখে বেলকনিতে যায়। বেলকনিতে গিয়ে রেহান তার কাঙ্গিত মানুষটিকে পেয়ে গেলে। কেমন ঘোমরা মুখ করে আকাশের চাদের দিক তাকিয়ে আছে। রেহান নিশির মায়াবী মুখটার দিকে এক পালক তাকিয়ে নিশি ডাক দেয়। নিশিও রেহানের ডাক শুনে রেহানের দিকে একবার তাকিয়ে আবার অন্য দিকে ফিরে তাকায়। নিশি খুব আভিমান করেছে লোকটার উপর। এভাবে এত গুলা কথা তখন কেন বলল নিশিকে রেহান,, নিশির বুঝি মন খারাপ হয় না। নিশির কোনো সারা না পেয়ে রেহান আবার বলে

–নিশি ঘরে আসো।

এবারও রেহানের ডাক উপেক্ষা করলো নিশি। রেহানের কিছুটা রাগ উঠলো নিশির উপর কিন্তু নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে নিশির দিকে এগিয়ে গিয়ে নিশির হাতটা ধরে রুমে নিয়ে আসলো। কিন্তু তারপরও নিশি একটা কথাও বললো না। রেহান শপিং ব্যাগগুলা নিশির সামনে ধরে বলে

–এগুলা তোমার দেখো পছন্দ হয় কিনা।

–কি এগুলা?

–চেক করে দেখো।

নিশি রেহানের কাছ থেকে ব্যাগ গুলা নেয়। রেহানও সময় নষ্ট না করে ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে ফ্রেস হওয়ার জন্য। নিশি ব্যাগ গুলা চেক করে দেখে সাত আটটার মতো চুড়িদার। এত চুড়িদার আনার মানে কি নিশি ঠিক বুঝতে পারছে না। নিশি একটা চুড়িদার হাতে নিয়ে চেক করে দেখে নিশির সাইজের। নিশি এবার বুঝতে পারে রেহান কেন নিশির বডির সাইজ জানতে চেয়েছিলো। কিন্তু তারপরও রেহান ওয়াসরুম থেকে বের হতে নিশি বলে

–এগুলা কার?

–কার হতে পারে তোমার ধারনা।

–আমার কোনো ধারনা নেই।

–যেহেতু তোমার হাতে আমি পেকেট গুলা দিয়েছি তার মানে তোমার।

–কিন্তু আমি তো এগুলার কিচ্ছু চাই নি।

–আজ থেকে তুমি এগুলাই পড়বে। শাড়ি পড়ার কোনো দরকার নেই।

–কেন? আমি শাড়ি পড়লে কি সমস্যা?

— আমি বলেছি তাই শাড়ি পড়বে না তুমি ব্যাস।

–আপনি বললেই আমাকে পড়তে হবে।

–হে পড়তে হবে কারন আমি চাই না কেউ তোমাকে….. শাড়ি চেইন্জ করে একটা চুড়িদার পড়ে এসো।

–পড়বো না আমি চুড়িদার আমি শাড়িই পড়বো।

–নিশি রাগিও না আমাকে পড়ে এসো।

–আপনার কথায় কে আপনি যে আপনার কথা শুনবো আমি কে হোন আপনি আমার।

এবার রেহানের রাগ উঠে যায় নিশির কথায়। নিশির দু বাহু শক্ত করে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে রেহান। রেহানের গরম নিশ্বাস নিশির মুখের উপর পড়ছে। নিশি রেহানের এমন রাগি চেহারা দেখে শুকনো একটা ডোক গিলে বলে।

–কি করছেন রেহান আমার হাতে লাগছে ছাড়ুন?

–কি বললে তুমি আমি কে তোমার তাই তো। হাতে কলমে বুঝিয়ে দিছি আমি কে হই তোমার।

নিশি কিছু বলতে যাবে তার আগেই রেহান হুট করেই নিশির গোলাপি ঠোট গুলাতে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দেয়। নিশির চোখ গুলা রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো এটা নিশি ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। নিশি রেহানের বুকের উপর দু হাত রেখে রেহানকে সরাতে চাইলে রেহান নিশির উনমুক্ত কোমর ধরে নিজের আরো কাছে টেনে নেয়। রেহান খুব কোমল ভাবে নিশির ঠোটের স্বাদ নিতে ব্যস্ত। আর নিশি বেচারি শকের মাঝে রয়ে গেলো। এক পর্যায়ে রেহান নিশিকে ছেড়ে দিয়ে নিশির কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে জোরে কয়েকটা শ্বাস ছাড়ে সাথে নিশিও জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। রেহান ব্যাকুল কন্ঠে বলে উঠে

–সরি নিশি আমি এমনটা করতে চাই নি তুমিই বাধ্য করলে করতে। আর নেক্সট টাইম আমি কে হই তোমার এটা তোমার মুখে যেন আমি না শুনি এর থেকে আরও খারাপ কিছু করে বসবো কিন্তু‌ আমি আর শাড়ি পড়বে না আজ থেকে আমি চাই না কেউ তোমার দিকে বাজে নজরে তাকাক। তাই চুপচাপ শাড়ি চেইন্জ করে একটা চুড়িদার পড়ো।

নিশি ঠোট কামড়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে সাহস হচ্ছে না রেহানের দিকে তাকাতে। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। রেহানের নিশির দিকে মুচকি হাসি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায় নিশিকে একা রেখে। রেহান যেতেই নিশি ধপ করে বেডে বসে পড়ল। কি হয়ে তার সাথে এটা নিশি কোনো দিন কল্পনাও করে নি রেহান যে রাগের মাথায় এমন একটা কাজ করে বসবে। নিশি নিজের ঠোটে হাতে দিতেই মস্তিষ্ক সারা দেয় রেহানের ঠোট এতক্ষন নিশির ঠোটের সাথে ছিলো “ইস কি লজ্জা”। নিশি দ্রুত ব্যাগ থেকে একটা নীল রঙের চুড়িদার বের করে ওয়াসরুমে ডুকে পড়ে। প্রায় পাচ মিনিট পর নিশি ওয়াসরুম থেকে বের হতেই রেহানের চোখে চোখ পড়ে যায় সাথে সাথে নিশি চোখ নামিয়ে নেয়। রেহান নিশির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত এক বার দেখলো। নিশিকে দেখে রেহান লেপটপে নজর দিলো। রেহান বাইরে থেকে ডিনার করে এসেছে। তাই কাজে লেগে পরেছে প্রজেক্টটা নিয়ে।

নিশিও চুপচাপ শাড়ি আর চুড়িদার গুলা আলমারিতে গুজিয়ে রাখলো। নিশি কি করবে না করবে কিচ্ছু বুঝতে পারছে আসলে রেহানের সামনে নিশি থাকতে পারছে লজ্জায়। চুপচাপ গিয়ে বেডের এক কোনে বসেছে জড়োসরো হয়ে।কেমন হাসপাশ করছে নিশি রেহান নিশির দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। নিশি ওড়না এক কোনা নিজের হাতে মুড়াছে তো আবার খুলছে। রেহান হঠাৎ করেই উঠে দাড়ায়। নিশি অনুভব করতে পারছে রেহান ওর দিকে এগিয়ে আসছে নিশি চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এবার রেহান কি করবে ওর সাথে এটা ভেবে। কিন্তু না রেহান নিশির কাছে না এসে বেলকনিতে চলে গেল। বেলকনিতে গিয়ে রেহান মুখ চেপে হাসছে নিশির এমন অবস্থা দেখে। রেহান নিশির কাছে যেতে চাইছিলো কিন্তু নিশির অবস্থা দেখে রেহান বেলকনিতে চলে আসে। প্রায় দু মিনিট রেহান নিঃশব্দে হাস,, এবার রেহান নিজেকে শান্ত করে ঘরে ডুকে দেখে নিশি আগের জায়াগতেই বসে আছে। এবার রেহান নিশির পাশে দ্রুত পায়ে গিয়ে বসে বলে

–কি হয়েছে নিশি,, এমন করছো কেন? শরীর খারাপ লাগছে।

–না না আমি একদম ঠিক আছি।

–কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে তুমি ঠিক নেই। ডিনার করেছো তুমি।

নিশি মুখে কিছু না বলে মাথায় নাড়িয়ে বুঝায় ও ডিনার করেছে।

–ও তাহলে শুয়ে পড়ো।

রেহান বেড থেকে উঠতেই নিশি বলে উঠে

–আপনার কি কিচ্ছু বলার নেই আমাকে।

রেহান নিশির দিকে ফিরে বলে

–কি বলবো?

–কিছু না।

বলেই নিশি শুয়ে পড়লো। নিশি চায় রেহান ওকে সরি বলুক বিকালে ওসব কথা বলার জন্য। কিন্তু রেহান সরি তো দুরে থাক উল্টা নিশির সাথে এক অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে বসলো। রেহানও বুঝতে পারছে নিশি কিসের কথা বলছে। তাই শব্দ করেই বলে উঠে

–সরি।

রেহানের মুখে সরি কথাটা শুনার সাথে সাথে নিশির মন ভালো হয়ে গেলো। রেহানও আর কোনো কথা না বলে কাজে মনযোগ দেয়।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে