তুমি আমার পর্ব-১১

0
1264

#তুমি আমার (পর্ব ১১)
#মেঘা আফরোজ
·
·
·
রেহানের চোখটা জলে ভরে উঠলো মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
– বড়মা তুমি আমাকে চিনলে কি করে!!
– সেটা পরে বলছি তার আগে বল বড়মাকে ভুলে যাস নি তো??
– তোমাকে কি করে ভুলবো বলোতো আমার মা আর তুমি আমার কাছে আলাদা কেউ নয়। এখন বলোতো কি ভাবে চিনলে?
– সেই ছোট থেকে তোকে আগলে রেখেছিলাম আর তোকে চিনবো না! তোর নীল বর্ণের চোখ আর টোল পড়া গালটা দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি তুই আমার রেহান।

মেঘার মুখে হাসি ফুটে উঠলো বড়মা রেহানকে চিনতে পেরেছে দেখে। আর রাফিন এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

রেহান অভিমানি স্বরে বলে উঠলো
– বড়মা কোথায় ছিলে তুমি এতদিন জানো কত খুজেছি তোমায়। মাও তোমার কথা মনে করে খুব কষ্ট পায়। তুমি এখন আমার সাথে যাবে চলো।
বড়মা একটু হেসে বললো
– কোথায় যাবো?
– কোথায় আবার তোমার বাড়িতে যাবে।
– ওটা আমার বাড়ি নয় রেহান ওটা তোর বাবার বাড়ি যেখানে আমার বা আমার ছেলেমেয়েদের থাকার কোনো অধিকার নেই। চোখের পানি মুছে।
– তুমি এখনো বাবার ওপর রেগে আছো বড়মা! বাবা নিজের ভুল অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে পরে অনেক খুজেছে তোমাদের পায় নি। প্লিজ বড়মা চলো আমার সাথে।
– না রেহান তা হয় না।
রাফিন বলে উঠলো
– মা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না তোমাদের কথা রেহান তোমাকে বড়মা ডাকছে কেনো?
– রিফাতের বাবা আর রেহানের বাবা দুইভাই আমরা সবাই আগে একসাথেই থাকতাম,একটা ভুল বুঝাবুঝির কারনে ৮ বছর আগে আমরা আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম।
রেহান বড়মাকে বললো
– আচ্ছা বড়মা রাফিন কে? আমি তো ছোট থেকেই দেখে এসেছি রিফাত ভাইয়া আর রাইসাকে।
– রাফিন আমার বোনের ছেলে তুই ওকে আগে দেখিসনি কখনো ও ছোট থেকেই আমাকে মা বলে ডাকে ৫ বছর আগে ওর বাবা মা একটা এক্সিডেন্টে মারা যায় তারপর থেকে রাফিন আমার কাছেই থাকে আমাকেই মা বলে জানে।

রাফিন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে মেঘা রেহান দুজনেই তাকালো রাফিনের দিকে। বড়মা হঠাৎ বলে উঠলো
– দেখেছিস আমরা কথা বলেই যাচ্ছি মেঘার দিকে কোনো খেয়াল নেই আমার। মেঘা তুমি নিশ্চই বিরক্ত হচ্ছো তাইনা?
– না আন্টি আমি একটুও বিরক্ত হচ্ছি না বরং আরো ভালো লাগছে আপনি ওনাকে চিনতে পেরেছেন দেখে।রেহানের দিকে তাকিয়ে বললো।
– তুমি রেহানকে চেনো??
মেঘা কিছু বলছে না রেহান নিজেই বললো
– হ্যা বড়মা আমরা একে ওপরকে চিনি।
রেহান ভাবলো……. এটাই সুযোগ রাফিনের সামনে বড়মাকে বলবো মেঘাকে আমি ভালোবাসি। রেহান বড়মার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– বড়মা মেঘাকে তোমার কেমন লাগে?
– খুব ভালো লাগে খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।
– যাক তোমার পছন্দ হয়েছে তাহলে মায়ের ও ঠিক পছন্দ হবে।
রাফিন চোখ বড় বড় করে তাকালো বড়মা বলে উঠলো
– মানে!!
– মানেটা হলো আমি মেঘাকে ভালোবাসি শুধু ভালোবাসি বললে ভুল হবে অনেক বেশি ভালোবাসি ওকে আমি,আর মেঘাও আমাকে ভালোবাসে।
মেঘা একটু হেসে মাথা নিচু করে নিলো। বড়মা রাফিনের দিকে তাকালো। রাফিন একটু হাসার চেষ্টা করে মেঘার দিকে তাকিয়ে বললো
– নীলপরী তুমি রেহানকে ভালোবাসো??
মেঘা মাথা নাড়ালো মানে হ্যা ও রেহানকে ভালোবাসে।
রাফিন বড়মার হাত ধরে বললো
– মা বাড়ি চলো।
বড়মা রাফিনের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রেহানের দিকে একবার তাকিয়ে চলে গেলো।
.
🌿
.
রাফিন চোখ বন্ধ করে বড়মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে,বড়মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো
– রাফিন সেই দুপুর থেকে মন খারাপ করে আছিস দুপুরে খাসনি রাতেও খেলি না,চল তো কিছু খেয়ে নিবি।
– না মা খেতে ইচ্ছে করছে না।
– মেঘাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলি তাইনা?
রাফিন উঠে ওর মায়ের দু হাত ধরে বললো
– আমার সাথে কেনো এমন হয় মা। বাবা মা চলে গেলো আমাকে একা করে মেঘাকে ভালোবাসলাম এখন ওকেও হারাতে হবে।মা মেঘাকে এনে দেবে আমার কাছে?
– কারো ভালোবাসা কখনো কেড়ে নিতে নেই মেঘা রেহানকে ভালোবাসে রেহানও চায় ওকে তুই তো নিজেই শুনলি।
– মেঘাকে যে আমিও ভালোবাসি।
বড়মা রফিনের গালে হাত রেখে বললো
– এক তর্ফা কখনো কিছু হয় না রাফিন মেঘা তো রেহানকে চায় তুই ওকে চেয়েও তো পাবি না। তুই স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরু কর হয়তো তোর জন্য আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।
রাফিন আর কিছু বললো না বড়মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
.
🌿
.
রেহানরা সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে রেহানের মা ওর বাবাকে বললো
– তুমি যদি যাও আপাকে আনতে আপা ঠিক ফিরে আসবে।
– কোন মুখে যাবো বলোতো,ভাবিকি কি ক্ষমা করবে আমায়?
রাফসান বলে উঠলো
– আচ্ছা বাবা সেদিন কি হয়েছিলো বড়মা কেনো চলে গিয়েছিলো?সবটা তো এখনো পরিষ্কার করে বলোনি আমাদের কাছে।
রেহানের বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো
– তোদের বড় চাচ্চু মারা যাওয়ার পর তোদের বড়মা খুবই ভেঙে পড়েছিলো। তোর মা আর আমি ভাবিকে বুঝিয়ে স্বাভাবিক করে তুলেছিলাম সব ঠিকঠাক ভাবে চলছিলো হাসি খুশির মাঝে চলছিলো আমাদের সংসার। একদিন ভোরে আমি বাগানে হাটছিলাম তখন দেখলাম তোর বড়মা মাথায় বড় করে ঘুমটা টেনে এদিক ওদিকে তাকিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলো। ভাবি ওভাবে বের হওয়াতে আমার সন্দেহ হয়েছিলো তাই আমিও পেছনে পেছনে গেলাম। আমাদের বাড়ি থেকে ১০ মিনিট লাগে যেতে একটা ছোট পার্ক ছিলো আমি গিয়ে দেখি ভাবি একটা ব্রেন্ঞ্চে বসে আছে আর তার পাশেই একটা লোক বসা ছিলো যে কিনা সব সময় আমাদের ক্ষতি চাইতো। খুব রাগ উঠে গিয়েছিলো তখন আমি চলে আসি ওখান থেকে। বাড়িতে আসার কিছুক্ষণ পর ভাবি বাড়িতে ফিরেছিলো সেদিন আমি ভাবিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে খুব খারাপ ভাবে অপমান করেছিলাম আর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেছিলাম।
এটুকু বলে উনি থামলো রেহান এগিয়ে এসে বললো
– তারপর কি হলো?
তারপর আর কি আমি অফিসে চলে গিয়েছিলাম এসে তোর মায়ের থেকে শুনলাম ভাবি রিফাত রাইসাকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। ঠিক তার ১২ দিন পর আমার ফোনে ম্যাসেজ আসে তাতে লেখা ছিলো……যাক অবশেষে আপনার সুখি পরিবারকে অসুখি করতে সক্ষম হলাম। সেদিন আপনার ভাবির কোনো দোস ছিলো না আমি ওনাকে হুমকি দিয়ে পার্কে ডেকেছিলাম,আর উনি ভয় পেয়ে চলে এসেছিলো।আর আমি সেই সুযোগটাই নিয়েছি আমি জানতাম আপনি ভোরে বাইরে হাটেন তাই আপনার ভাবিকে তখনি আসতে বলি যেনো আপনি উনাকে ভুল বুঝেন।
ম্যাসেজটা দেখে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো খুব অপরাধী মনে হচ্ছিলো তখন নিজেকে।
পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম সেই লোকটা তোদের বড় চাচ্চুর মারা যাওয়ার পেছনে হাত ছিলো আর আমাদের ব্যবসার ও অনেক ক্ষতি করেছিলো। সব রকম ইনফর্মেশন জোগার করে ওই বদ লোকটিকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।
.
🌿
.
পরেন দিন সকালে রেহান রাফিনের থেকে ওদের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সকলে মিলে এসেছে বড়মাকে ফিরিয়ে আনতে। রেহানের বাবা নিজে ক্ষমা চেয়েছে। তারপর সবাই মিলে বুঝিয়ে বড়মাকে ফিরিয়ে এনেছে। রাফিন আসতে চায়নি ওদের সাথে বড়মা ওকে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে। আজ অনেকদিন পর পুরো পরিবার এক হয়ে আনন্দে মেতে উঠেছে।

রাতে মেঘার সাথে কথা বলতে বলতে রেহান ছাদে এলো, আবছা আলোতে দেখতে পেলো ছাদের এক কোনে কেউ দাড়িয়ে আছে রেহান মেঘাকে বললো
– মেঘা আমি তোমাকে একটু পরে কল ব্যাক করছি।
ফোন কেঁটে রেহান এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারলো রাফিন দাড়িয়ে আছে। রেহান ওর কাধে হাত রাখলো,রাফিন চমকে ঘুরে তাকালো রেহানকে দেখে মুখটা ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো
– রাফিন কাঁদছিস কেনো তুই!!
– ককই কাঁদছি নাতো চোখে হয়তো কিছু পড়েছিলো।
রেহান রাফিনকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো
– মিথ্যা কেনো বলছিস। তুই কি মেঘাকে….
রেহানকে থামিয়ে রাফিন একটু হেসে বললো
– তুই খুব লাকি রেহান মেঘার মত একজনকে পেয়েছিস ভালো রাখিস ওকে।
রাফিন আর ওখানে দাড়ালো না চলে গেলো। রেহান ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
– আমি জানি রাফিন তোর কষ্ট হচ্ছে কি করবো বল আমিও যে খুব ভালোবাসি মেঘাকে।
·
·
·
চলবে……………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে